তবু আছি কাছাকাছি (Doctors love) Part-36

0
3024

#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_36
?
.
.
সাদি রুমের সামনে দাঁড়িয়ে সেই থেকে সুমুকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু সুমু কোন সাড়া দিচ্ছে না।

সাদিঃ সুমু জান! সরি! প্লিজ দরজাটা খুলো!

সাদির মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গেলো। সুমু উল্টাপাল্টা কিছু করছে নাতো! কিছুক্ষনের মধ্যেই সুমু দরজা খুলে বাইরে আসলো। সুমু পড়নে ট্র‍্যাকিং এর সব জামা কাপড়। হাতে একটা ব্যাগ! বের হয়ে সাদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু হালকা করে কুঁচকালো। তারপর বাঁকা একটা হাসি দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। সাদি সুমুর এমন রুপ আগে দেখেনি। মুখ হা করে ছিলো সুমুকে যেতে দেখেই হুশ ফিরে, সুমুর কাছে দৌড়ে গিয়ে সুমুর হাত ধরতেই সুমু আহ করে ওঠে। সাদি আঁতকে উঠে হাত ছেড়ে আবার হাত উঠিয়ে দেখে সুমু হাতে জখম। এটা সুমুর বদ অভ্যাস। রাগ কমানোর জন্য নিজের হাত কামড়াবে। আর আজ অনেকটা জখম দেখেই সাদি বুঝতে পারছে সুমু অনেক রেগে আছে। সাদি ওখানেই কান ধরে বসে সুমুর দিকে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলছে,

সাদিঃ এত্তোগুলা সরি! প্লিজ ক্ষমা করে দাও! আর জীবনেও কোন মেয়েকে ধারে কাছে ঘেষতে দিবো না। আর তোমাকে অপমান করার কোন সুযোগ তো দিবোই না। সরি সরি সরি,,,, প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দাও!

সুমু এক ভ্রু কুঁচকে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। সুমু একবার নিজের চারপাশে দেখলো। তারপর আবার সাদির দিকে তাকালো। সাদির তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
সুমু একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

—পাগল নাকি লোকটা? রিডিকিউলাস!

বলেই সাদির পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। সাদি অবাক হয়ে দেখছে। সুমুর আচরণ দেখে অবাকের শীর্ষে পৌছে গেছে। সাদি উঠে আবার সুমুর পিছে হাটা ধরলো। একা একা কই না কই যাবে।

সুমু হোটেল থেকে বেরিয়ে একটা সিএনজি তে চেপে বসলো। সাদি দৌড়ে এসে সুমুর পাশে বসে পড়লো। সুমু অন্যপাশে ফিরে হালকা হেসে দিলো। পরক্ষণেই কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সাদির দিকে। সাদি তা দেখে একটা ঢোক গিলল।

—মামা! সামনের ডানপাশের রেস্টুরেন্টের পাশে রাখেন।

সিএনজি পৌছাতেই সুমু নেমে ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে থাকে। সাদি তাড়াতাড়ি টাকা দিতে নিলেই সুমু বাধা দেয়।

সাদিঃ সুমু তুমি দাঁড়াও আমি দিচ্ছি টাকা!

—(ভ্রু কুঁচকে) এই যে মিস্টার! আপনি কেন আমার ভাড়া দিতে যাবেন। আমারটা আমিই দিতে পারবো।

সাদি দেওয়ার আগেই সুমু ড্রাইভারকে তার ভাড়া দিয়ে দেয়। সাদি নিজের টা দিয়ে সুমুর পিছন পিছন যায়। সুমু রেস্টুরেন্টে গিয়ে একটা টেবিলে পায়ের উপর পা তুলে বসে। একটা ওয়েটার আসলে পা নামিয়ে সোজা হয়ে বসে। তারপর লোকটিকে জিজ্ঞাসা করে,

—নাজমুল কাকা নেই?

সাদি ভাবে রেস্টুরেন্টে এসে মানুষ জিজ্ঞাসা করে এই ডিস নেই? বা ওই ডিসটা আছে? আর সুমু জিজ্ঞাসা করছে নাজমুল কাকা নেই? এটা কি কোন ডিস?

ওয়েটারটা হালকা হেসে বলে,

–হ আছে। আইঁ ডাইক্কা দিতেছি!

কিছুক্ষন পর একজন বয়স্ক লোক বেরিয়ে এসে সুমুকে দেখে হেসে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,

নাজমুল কাকাঃ কেমন আছো সুমাইয়া মা!

— আলহামদুলিল্লাহ কাকা! আপনি কেমন আছেন?

নাজমুল কাকাঃ আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। ইনি কে মা? তোমার স্বামী নাকি?

—(একটা শ্বাস ছেড়ে) দুর্ভাগ্যবশত!

নাজমুল কাকা হাসতে শুরু করলেন সুমুর কথা শুনে।

নাজমুল কাকাঃ সুমাইয়া মা! তুমি এখনো আগের মতোই আছো।

—কিন্তু কাকা তুমি কিন্তু আগের চেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গেছো।

সাদি এখানে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

—কাকা! খুব ক্ষিধে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি তোমাদের স্পেশাল ডিস নিয়ে আসো তো।

নাজমুল কাকা হেসে চলে যাবে তার আগে সুমু বলল,

—কাকা! এক মিনিট। তুমি আগে এই ব্যাক্তিকে বলে যাও যে এতো সুন্দর শুদ্ধ ভাষায় কি করে কথা বললে?

নাজমুল কাকাঃ রাগ করছো স্বামীর সাথে?হাহা! তোমার কাকী এখনো আমার সাথে এমনই রাগ করি বসে থাকে। যাইহোক! আমি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলি কারন ঢাকায় আমি পাঁচবছর কাজ করেছি তাই শিখেছিলাম।

নাউমুল কাকা যেতেই সুমু আবার বসে পড়ে। সাদিও তার পাশে বসে পড়ে। সাদি হালকা হাসলো। সুমু তার মনের কথা বুঝতে পারে তবুও তার সাথে কথা বলবে না। তাই এই পদ্ধতিতে সাদির প্রশ্নের জবাব দিলো। সাদি আর সুমু রেস্টুরেন্টে খেয়ে উঠে পড়ল। এখানেও সুমু একইভাবে টাকা দিলো। সুমু পুরোদমে ইনগোর করছে সাদিকে যা সাদি হারে হারে টের পাচ্ছে। হানিমুনে এসে কোথায় বউয়ের সাথে রোমান্স করে দিন কাটাবে তা না, নিজের ভুলের জন্য এখন অবহেলিত হচ্ছে। হাহ!

সুমু আর সাদি পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে চলেছে! আজকে সব ঠিক থাকলে তারা সাজেক যেত! কিন্তু সাদির ভুলের জন্য তারা পাস টাইম পার করে ফেলল। তাই আজও হোটেলেই থাকবে। পাহাড়ের মাঝ বরাবর একটু জংগলের মতো আছে। জায়গাটা বেশ শুনশান। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সুমু থেমে গেলো। সাদিও সামনে সুমুকে দাঁড়াতে দেখে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

সাদিঃ কি হয়েছে সুমু?

সুমু সাদির কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে দৌড় দিয়ে জংগলের ভিতর এগিয়ে গেলো। গিয়ে যা দেখলো তাতে সুমুর রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছিলো। একটা মেয়েকে তিনজন কাপুরুষ তাকে রেপ করার চেষ্টা করছে! মেয়েটা যথাসাধ্য নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে! কিন্তু ওই জানোয়ার গুলো কোন কথাই শুনছে না!

—ওই জানোয়ারের দল! একা একটা মেয়েকে পেয়ে ভোগ করছিস? সাহস থাকে তো আমার সামনে আয়! কুত্তার বাচ্চা!

লোকগুলো সুমুর দিকে ফিরে বিভৎস হাসি দিয়ে একজন আরেকজনকে ঠেলা দিয়ে বলে,

–মামা! দেখ! মালডা কি জোস! ট্রিপে আওয়াডাই সার্থক!

পিছনে সাদিকে দেখে আবার বলে,

–দেখ! আবার বডিগার্ড লইয়া আইছে!হাহাহা!

সুমুর ঠান্ডা মাথায় বলল,

—আরে কুত্তারবাচ্চার দল! তোদের জন্য আমি একাই যথেষ্ট! আর ডাক্তারসাহেব! মেয়েটাকে এই ওড়নাটা দিয়ে কভার করে দিন! আজ একটু হাত সাফ করি!

সাদি বাঁকা হেসে ওড়নাটা নিয়ে মেয়েটির কাছে যায়। এদিকে বখাটেগুলো আবার গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বলে,

–দেখ কাপুরুষের মতো গেলোগা!

সুমু এক বিভৎস হাসি দিয়ে ব্যাগের সাইট পকেট থেকে একটা ধাড়ালো ছুড়ি বের করলো তা দেখে বখাটে গুলো হাসছে। সুমু আপন মনে নিজের কাজ করছে। ছুড়িটা দিয়ে পাশে একটা লম্বা চিকন গাছ দেখতে পেয়ে গোড়া থেকে গাছটা কাটা শুরু করলো। বখাটেগুলো এগিয়ে আসতে নিলেই সুমু তাড়াতাড়ি গাছটা কেটে তার ডালটা হাতে নিয়ে ইচ্ছামতো পিটাতে লাগলো। একটা বেশি কাছে এগিয়ে সুমুকে ধরতে নিলেই সুমু পিছন দিক থেকে তার জুতোর শক্ত পার্ট দিয়ে লোকটার মেইনপার্টে লাত্থি দিলো৷ সাথে সাথে লোকটা মাটিতে শুয়ে পড়ে আর্তনাদ করতে লাগলো। সুমু সময় না দিয়ে সাথে সাথে আবার একই জায়গায় জোরে আঘাত করতেই লোকটা বেহুশ হয়ে গেলো। বাকি দুইটাকে এমন পিটুনি দিয়েছে যে একটার পায়ের হাটুর দিকটা ভেঙে গেছে! আর একজনের মাথা পাথর দিয়ে ফাটিয়ে দিয়েছে। সুমুর কাজ শেষ হতেই মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেছে। মেয়েটা কান্না করছে!

—কান্না করো না। আমরা কি ঠিক সময়ে আসতে পেরেছি?

মেয়েটা ভয়ে কাঁপছে। তাও অনেক কষ্টে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। সুমু মেয়েটাকে নিয়ে একটা পাথড়ের উপর বসিয়ে তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিলো। সাদি বখাটেগুলোর কাছে গিয়ে দেখে ওই জানোয়ারগুলোর গুরুতর অবস্থা বানিয়ে দিয়েছে সুমু।

সাদিঃ সুমু! কি করছো! এগুলারে হাসপাতালে না নিলে নিশ্চিত মরবো!

—সুমু যেমন চিকিৎসা দিতেও পারে তেমনি মরণের ব্যবস্থাও করতে পারে।

সাদি আর সুমু মেয়েটাকে কিছু ওষুধ কিনে দিয়ে তার বাড়ি পৌছে দিলো। আর পুলিশদের খবর দিলে তারা এসে ওই তিন জানোয়ারকে নিয়ে যায়। সুমু এক প্রকার থ্রেট দিয়ে বলছে যেন বখাটেগুলো বের না হতে পারে! যদি বের হয় তাহলে কিছু ক্ষমতা সুমুও দেখাবে! এভাবেই দিনটা কাটলো সাদি আর সুমুর।

.
চেয়ারে বাধা একটা মেয়ে জোরে জোরে চিৎকার করছে, তাই বাধ্য হয়ে সামনের ব্যাক্তি মেয়েটার চোখের সাথে তার মুখটাও বেধে দিলো।

,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে