#তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_1
?
.
.
নিজের কেবিনে বসে রোগীর ফাইল চেক করছে ড. সাইমান সাদি। একজন সার্জন। হঠাৎ বাইরে কোলাহলের জন্য তাকে বাধ্য হয়ে কেবিন থেকে বের হতে হলো। সবাই কেমন ছুটাছুটি করছে যা দেখে অটোমেটিক সাদির ভ্রু কুঁচকে এলো। পাশে থাকা একজন নার্সকে জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারলো একজন পেশেন্ট, খুব গুরুতর অবস্থা! তার মেয়েই হবে হয়তো, সবাইকে পাগল করে নিচ্ছে!
.
সাদির নার্সের কথা শুনে একটু এগিয়ে গেলো দেখার জন্য! কিন্তু একটুর জন্য মেয়েটাকে দেখতে পায় নি। সে তার মাকে নিয়ে ইসিজি ল্যাবে টেস্টের জন্য নিয়ে গেছে। সাদিও আর বিষয়টা নিয়ে ভাবে নি। ইতিমধ্যে চারপাশটা বেশ নিরব হয়ে গেছে৷ তারমানে এই একটা মেয়ে পরিবেশটার পুরো বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল! সাদি মনে মনেই একটু অবাক হলো! তারপর নিজের কেবিনে গিয়ে আবার কাজ করতে লাগলো!
.
অন্যদিকে মেয়েটা ইসিজি ল্যাব থেকে বেরিয়ে তার ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—ভাইয়া তুই এসেছিস ভালো হয়েছে। একা একা সামলাতে পারছিলাম না। তুই বরং আম্মুর সাথে থাক। আমি রিপোর্টটা ইমার্জেন্সি দিতে বলেছি। কিছুক্ষন পর পেয়ে যাবো। আপাতত বাইরে থেকে কিছু নিয়ে আসি। প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে!
রাকিবঃ আচ্ছা! নিয়ে আয়। আমি আছি। আর এখানে আমার এক জুনিয়র ভাই আছে তার সাথে একটু কথা বলবো! তুই আয় আগে।
—আচ্ছা!
.
সাদি কেবিনে কাজ করছিল। একটুপর তাকে রাউন্ডে যেতে হবে। এর মধ্যেই দরজায় কেউ নক করলো! সাদি তাকে ভিতরে আসতে বলে। আগন্তুক ব্যাক্তিকে দেখে সাদির মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো।
সাদিঃ আরে! রাকিব ভাই? এখানে কিভাবে?
রাকিবঃ আসলে আমার আম্মু অসুস্থ! হার্টের পেশেন্ট। আজ অনেক অসুস্থ হয়ে পরায় এখানে আনা হয়েছে।
সাদিঃ ভাই আপনি নিজেই তো একজন হার্ট সার্জন তাহলে এতো গুরুতর অসুস্থ কিভাবে হলো! মানে আগে বুঝতে পারেন নি?
রাকিবঃ(এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে) আমার আম্মু অনেক চাঁপা স্বভাবের। তাও তো সুমু বুঝতে পেরেছিল! নয়তো কি যে হতো!
সাদিঃ সুমু কে?
রাকিবঃ ওর কথা তোমাকে কোনদিন বলা হয়ে ওঠে নি। সুমু তো ডাক নাম। আমার বোন। নাম সুমাইয়া ইসলাম মিম। ভালোবেসে সুমু ডাকা আরকি! আর ও নিজেও একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। এবার সেকেন্ড ইয়ার। ছুটিতে বাসায় এসেছিল। আর জানোই তো আমি বরাবরের মতোই ব্যস্ত থাকি। তোমার ভাবীকেই সময় দিতে পারি না।
সাদিঃ হুম বুঝলাম! তা ভাই আপনি চা বা কফি কিছু নিবেন?
রাকিবঃ নাহ! ধন্যবাদ।
এর মধ্যেই রাকিবের ফোনে সুমুর ফোন আসে।
রাকিবঃ হ্যাঁ সুমু বল! রিপোর্ট পাইছিস?
—হ্যাঁ পেয়েছি৷ ভাবী হসপিটালে আম্মুর কথা শুনে একটু অসুস্থ হয়ে গেছে। তুই একটু জলদি গিয়ে ভাবীকে নিয়ে আয়!
রাকিবঃ(কিছুক্ষন ভেবে) তুই এখানে সামলাতে পারবি?
—হ্যাঁ পারবো! তুই যা।
.
ফোনটা কেটে সাদিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
রাকিবঃ তোমার ভাবী অসুস্থ হয়ে পরেছে৷ তাই যেতে হচ্ছে, তুমি একটু খেয়াল করো।
সাদিঃ অবশ্যই ভাই! কয় নাম্বার কেবিনে আছে আন্টি?
রাকিবঃ ৩০৪!
সাদিঃ আচ্ছা ভাই! ভাবীর খেয়াল রাইখেন!
রাকিবঃ আল্লাহ হাফেজ!
.
রাকিব বের হওয়ার পর প্রায় ১০ মিনিট পর সাদি রাউন্ডের জন্য বের হয়। ওয়ার্ড চেক করে রিসেপশনের দিকে আগাতেই দেখে একটা মেয়ে খুব মনযোগ দিয়ে কোন রিপোর্ট দেখছে, সাধারণ একটা থ্রি পিস পড়া, মাথায় ঘোমটা দেওয়া কিন্তু তাতে সে তার ওই লম্বা বেনুনিটা সম্পুর্ন ঢাকতে পারে নি যা তার কোমরের অনেক নিচ পর্যন্ত পরে রয়েছে আর বাতাসের তালে তালে একটু একটু দুলছে! মুখের দুইপাশে কিছু চুল পড়ে রয়েছে অগোছালো ভাবে। ভ্রু জোড়া খানিক কুচঁকে আছে, যেন সে কিছু বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত। সাদি মেয়েটাকে দেখে ওখানেই তার পা থেমে আছে। এগোতে পারছে না কিছুতেই৷ যেন তার পাও এই মেয়ের এইরকম অদ্ভুত সৌন্দর্য দেখে সামনে যেতে চাইছে না।
.
মেয়েটা রিপোর্ট নিয়ে রিসেপশনিস্টকে একটা ধন্যবাদ দিল যার শব্দ সাদির কানে না গেলেও ঠোঁটের ওই আলতো নাড়ানো যেন তার মন ছুঁয়ে গেলো।
.
এর মধ্যেই সাদির ঘোর কাটলো এক নার্সের ডাকে!
নার্সঃ স্যার! স্যার!
সাদিঃ হুম!
নার্সঃ স্যার! ওই কেবিনের পেশেন্ট বেশ হাইপার হয়ে যাচ্ছে! আপনি একটু আসুন!
সাদি এবার নড়েচড়ে ওখান থেকে পেশেন্টের কাছে গেলো, যদিও যাওয়ার তার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না। সাদি রোগীর কেবিনে গিয়ে তার ট্রিটমেন্ট শুরু করলো কিন্তু তার মাঝেও বারবার ওই মেয়ের মুখটা ভেসে উঠছে। যতবারই মুখটা ভেসে উঠছে ততবারই সাদির ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠছে।
.
সাদি তার কাজ সেড়ে রওনা হলো ৩০৪ নম্বর কেবিনের উদ্দেশ্যে। সে রুমে গিয়ে দেখলো একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা বেডে শুয়ে আছে। সাদি সঙ্গে সঙ্গে চিনে ফেলল। বেডের পাশে গিয়ে মহিলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কিছুক্ষন বসতেই একজন নার্সকে এই কেবিনের দায়িত্ব দিল। তারপর বেরিয়ে আসার জন্য দরজার দিকে অগ্রসর হতেই খেয়াল করলো তার হাত ধরে আছে মধ্যবয়স্ক মহিলাটি। তাই দরজার দিকে ঘুরেও আবার মহিলাটির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল।
.
অন্যদিকে সুমু কেবিনের দরজা খুলতেই চমকে উঠলো!
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..❤