#তবুও_মনে_রেখো। [০৭]
১৯,
পিকনিক স্পটে রাহনাফদের বাড়ির ছোট বড় সকলেই উপস্থিত। বড়রা একপাশে বসে গল্প করছে। ছোটরা মিলে রান্না করছে আর গল্প করছে। আলিহান ও রাহনাফ দুজনেই রান্নার কাজে হাত লাগিয়েছে। মৌ তাদের সাহায্য করছে, রাহি আর মেহেরকে দেওয়া হয়েছে খাবার সাজানের কাজে। মেহের কাজ করছে কম ভাবছে বেশী। রাহি অনেক্ষন যাবৎ লক্ষ করছে মেহেরের অন্যমনস্কতা কিন্তু কিছু বলছে না।
রান্নার কাজ শেষ হলে সবাই ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর একসাথে বসে গল্প আড্ডায় খাওয়া শেষ করে। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই গল্প করতে থাকে রাহনাফ তখন একটা জরুলি কাজে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। এই সুযোগে মেহের আলিহান আর মৌকে বলে,
” তোমাদের একটা কথা জিগ্যেস করি?”
আলিহান মেহেরে দিকে তাকিয়ে বলে,
” ইয়েস শালি সাহেবা।”
” এমন কোন জিনিস যেটা খেতে মিষ্টিও না টকও না ঝালও না আবার তেতোও না।”
মেহেরের কথা শুনে আলিহান মৌয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবে। মৌ ভ্রু কুঁচকে আলিহানের দিকে তাকায়। আলিহান প্রশ্ন করে,
“এই জিনিসটা কে খেতে চেয়েছে আমার ভাই।”
“হুম। বলোনা কি এমন জিনিস।”
আলিহান শুকনো কাশি দিয়ে বলল,
” তোমার বোনকে জিগ্যেস করো এটা আবার তোমার বোন খেতে খুব পারদর্শী।”
মৌ বোকা বোকা চোখে আলিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমি আবার কি খেতে,, অমনি চমকে উঠে মৌ বলল,
” এটা তুই বুঝতে পারিসনাই মেহু।”
“তোরা কিসের কথা বলছিস।”
মৌ মেহেরের মাথায় চাপড় মেরে বলল,
“চুমু, চুমুর কথা বলছে রাহনাফ।”
“চুমু,, লজ্জা মাথা নুইয়ে নিলো মেহের। তারপর উঠে অন্য দিকে চলে যায়। মৌ বলে,
“আরে কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
আলিহান বলে,
“ওকে যেতে দাও। ওদিক আমার ভাই খাবারটা খাওয়ার জন্যে ছটফট করছে।”
আলিহানের শেষ কথা শুনে মেহেরের লজ্জারাঙা মুখে হাসি ফুটে উঠে।
সবার থেকে আড়ালে গিয়ে মেহের রাহনাফকে কল করে। প্রথমবার রিং হওয়ার পরেও কল রিসিভ করেনা রাহনাফ। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার সাথে সাথে কল রিসিভ হলো। মেহের বলল,
“কোথায় আপনি?”
” আমার রুমে। কেন বলতো?”
” আপনার খাবারের সন্ধান পেয়ে গেছি।”
“বলতো কি?”
“আগে এখানে আসেন।”
“কেন খাওয়াবে নাকি?”
“যাদি বলি হ্যাঁ।”
“সবার সামনেই।
“এই না না। হবে না।”
” তাহলে আমার রুমে চলে আসো। আমার কাজ ও আর,,,
মেহের কল কেটে দেয়। লজ্জায় তার বুকের ভেতরটা উঠানামা করছে। দুহাতে মোবাইল চেপে ধরলো। এখন লজ্জা পেয়ে কি হবে। সে যা করেছে তার জন্যে তো শাস্তি তাকে পেতেই হবে। লম্বাশ্বাস নিয়ে চলে যায় রাহনাফের কাছে।
হ্যারির সাথে কথা বলে কল ডিসকানেক্ট করে ল্যাপটপ রেখে ওয়াশরুমে যায় রাহনাফ। কিছুক্ষণ পর মেহের আসে রাহনাফের রুমে। এই নিয়ে তৃতীয় বার সে এই রুমে।হাসিমুখে রুমের চারদিকটা দেখতে থাকে সে।ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ আসছে। মেহের বুঝতে পারলো রাহনাফ এই মুহূর্তে ওয়াশরুমে আছে তাই খুব মনোযোগ দিয়ে রুমে চারদিকে দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকায় মেহের। সাদা টাওয়াল গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে আসছে রহনাফ। শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। মাথার চুলগুলো ভিজে লেপ্টে আছে কপালের সাথে সেখান থেকে পানি পড়ছে তার মুখে। মেহের নিষ্পলক তাকিয়ে রইল রাহনাফের উন্মুক্ত শরীরের দিকে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মেহেরকে দেখে হাসি ফুটে উঠে রাহনাফের মুখে। মেহেরকে তার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকতে দেখে আরো দুপা এগিয়ে মেহেরের কারো কাছে যায়। মেহের তখনো রাহনাফের দিকে তাকিয়ে। মেহেরকে নিজের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাহনাফ মৃদু হেসে মেহেরের দিকে ঝুকে ওর মুখে ফু’দিয়ে কপালে পরে থাকা চুলগুলো উড়িয়ে দেয়। চমকে উঠে মেহের। দ্রুত উল্টোদিকে ঘুরে চোখ বন্ধকরে নেয়। রাহনাফ স্মিত হেসে বিছানায় থাকা টাওজার পরে নেয়। ট্রিশার্ট গায়ে গলিয়ে নিতেই বলে,
“এখন এদিকে ঘুরেন মেডাম।”
মেহের চোখ খুলে পিছনে ঘুরে রাহনাফকে দেখে মৃদু হাসে। রাহনাফ কয়েকপা এগিয়ে এসে মেহেরের কোমড় জড়িয়ে ধরে,
” তখন ওভাবে হা করে কি দেখছিলে?”
“কই কিছুনা তো। আমি কিছু দেখেনি তো।”
“কিছুই দেখনি?”
“না তো।”
“আচ্ছা।
“হুম।”
রাহনাফ মেহেরকে ছেড়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করে বলে,
” কফি বানতে পারো?”
মেহের মাথা নিচু করে জবাব দেয়, “না।”
রাহনাফ মেহেরের দিকে একপলক তাকিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। মেহের চলে যায় বারান্দায়। কিছুক্ষণ পর রাহনাফ হাতে দুকাপ কফি নিয়ে রুমে আসে। রুমের ভিতর মেহেরকে দেখতে না পেয়ে রাহনাফ বারান্দায় চলে যায়। মেহের তখন একমনে আকাশ দেখছিলো। বিকালের নরম রোদ এসে পরছে মেহেরের মুখে যার কারনে ঝলঝল করছে মেহেরের মুখখানা। রাহনাফ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মেহেরের মুখের দিকে। মেহের আকাশের দিকেই তাকিয়ে বলল,
” এভাবে তাকিয়ে থাকবেননা রাহনাফ।”
” কেন?”
কফির মগ বাড়িয়ে দেয় রাহনাফ। মেহের মগ হাতে নিয়ে বলে,
” ওমন চোখে তাকাবেন না দয়াকরে। ওই চোখ যে আমার হৃদয় কে ঝলসে দেয়।”
রাহনাফ হাসে। মেহেরের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
” মানুষ নাকি একবারই প্রেমে পড়ে, এটা সত্য হতে পারেনা। কারন আমি যতবার তোমার দিকে তাকায় ততবারই তোমার প্রেমে পড়ি মেহুরানি।”
১৯,
সময়ের সাথে সাথে জীবনও যেন নেই থেমে, সময় যেন জীবনের স্পন্দন। সময় চলে তার নির্দিষ্ট গতিতে ঘন্টা মিনিট সেকেন্ডে ।কারো জীবন হয়তো চলে অবহেলায় সময়ের সাথে।আবার কারো চলে তীব্র সচেতনতায়।
বড় বড় সাফল্যের অপরিহার্য চাওয়া হল কাজে একাগ্রতা ও এককভাবে সবকিছু পরিচালনা করা। প্রফেসর খাইরুল মামুন হক ছোটবেলা থেকেই একটা স্বপ্ন দেখেছেন সেই স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলেছেন অবিরাম। তবে সাফল্য পাওয়ার আগেই তাকে হোচট খেয়ে পড়ে যেতে হয়েছে তবে তিনি থেমে থাকেননি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তার নির্দেশেই রাহনাফ একটা ল্যাব তৈরী করছে। যেখানে তিনি আবার রিসার্চ শুরু করবেন। পুরো বিশ্বকে দিবেন এক নতুন চমক। না এবার আর তিনি কোন ভুল করবেন না। এবার ল্যাবে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে থাকছে রাহনাফ অপরদিকে নাসায় একই গবেষণা চলছে। সেখানে কাজ করছেন হ্যারি হাওয়েল মেন্ডেলিনা ও ঋতুরাজ বর্মা। এরা সবাই এক সময় প্রফেসর খাইরুল মামুন হকের প্রিয় স্টুডেন্ট ছিল এবার তাদের দিয়েই তিনি রিসার্চ করাবেন। এদের নিয়ে টিম গঠন করার পিছনে খায়রুল মামুনের আরো একটা কারণ আছে। রিসার্চ এর মাঝপথে যদি তার কিছু একটা হয় কিংবা তিনি মারা যান তাহলে যেন তারা এই গবেষণাটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং পুরোপুরি সাফল্য পায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল যেন পুরোপুরি দূষণমুক্ত করতে পারে। তার তৈরি করা এই নিউক্লিয়ার মডিফায়ার ট্রী যেদিন পৃথিবীর বুকে সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠবে তখন পৃথিবী সত্যিই এক বিস্ময়কর জিনিস দেখবে। গাড়িতে বসে এসব ভাবছিলেন খাইরুল মামুন। সবাই মিলে আজ গ্রামে যাচ্ছেন যেখানে সৈয়দা মাহবুবা আরো দিন তিনেক আগে থেকেই আছেন। তিনি তার গ্রামে একটা এনজিও তৈরি করেছে যেখানে অসহায় মহিলাদের আত্মউন্নয়নের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সৈয়দা মাহবুবা এখন গ্রামেই থাকেন। গ্রামে থেকে তিনি তার এনজিওর কাজ সম্পন্ন করলেন। আগামি কাল এনজিও উদ্বোধন করা হবে। তাই সবাই মিলে গ্রামে যাচ্ছেন। গাড়ির পিছনের সিটে বসে আকাশ পাতাল ভেবে চলেছেন খাইরুল মামুন, রুপা তার কাধে মাথা রেখে এক হাত জড়িয়ে দুচোখ বন্ধ করে রেখেছে। ড্রাইভ করছে রাহনাফ, পাশের সিটে বসে আছে মেহের। মেহের জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখছে। রাহনাফ ড্রাইভ করার ফাঁকেফাঁকে আড় চোখে দেখছে মেহেরকে। অপর গাড়িতে আলিহান ড্রাইভ করছে ওর পাশের সিটে বসে মৌ ঘুমাচ্ছে পিছে বসে আছে রাহি আরুশি আর আরুশির ভাই আয়ান। মাসখানেক হলো আরুশির পুরো পরিবার দেশে ফিরছে। তাদের দেশে ফিরে আসার কারন আয়ান। আয়ানের সাথে রাহির বিয়ের কথা চলছে। ছোট বেলা থেকেই তাদের বিয়ে কথা পাকা হয়ে আছে। রাহি কানে হেডফোন গুঁজে সিটে হেলান দিয়ে রবিন্দ্রনাথের “যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই ভাটে” গান শুনছে। আরুশি আর আয়ান কিছু নিয়ে কথা বলছে।
রবিনকে রুমে দিয়ে ক্লান্ত পায়ে নিজের রুমে আসলেন সৈয়দা মাহবুবা। মেডিকেল রিপোর্ট ও প্রেসক্রিপশন টেবিলের উপর রেখে ওয়াশরুমে যান ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে আবার রবিনের মেডিকেল রিপোর্ট দেখতে থাকেন। হাত কাঁপছে সৈয়দা মাহবুবার। ছোট বেলার বন্ধু রবিন যে সব সময় তার পাশে থেকেছে সেই বন্ধুটা এমন মরণপণ রোগ বাধিয়েছে টেরও পাননি সৈয়দা মাহবুবা। বেশ কয়েকদিন হলো সৈয়দা মাহবুবা রবিনকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসছে। রবিনের শরীরের অবস্থা দিন দিন আরো জটিল হচ্ছে তাইতো আজ তাকে নিয়ে জেলা সদর হসপিটালে গিয়েছিলেন। সেখানেই এক ডক্টর রবিনের হাতের নাড়ি টিপে চোখ উল্টে দেখে একজন অঙ্কলজিস্ট বিশেষজ্ঞ দেখানোর কথা বলে। সৈয়দা মাহবুবা রবিনকে নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞর সাথে দেখা করেন। তিনি কিছু টেষ্ট দেন যেগুলো থেকে ঠিক করা হয় রবিনের আসলে কোন রোগ হয়েছে। কম্পিত হাতে কাগজগুলো গুছিয়ে আলমারিতে রাখেন সৈয়দা মাহবুবা। তারপর খাইরুল মামুনকে কল করেন,
” কোথায় আছিস তোরা? আর কতক্ষণ লাগবে পৌঁছাতে?”
” এইতো আর পনেরো মিনিট।”
” সবাই ঠিক আছে? মৌ তো গাড়িতে উঠলেই অসুস্থ হয়ে পরে।”
” মৌ আমাদের গাড়িতে না। আলিহানের সাথে আছে।”
” সাবধানে আয় রাখাছি।”
” আচ্ছা।”
কল কেটে রান্নাঘরে যান সৈয়দা মাহবুবা। এক কাপ রং চা করে আবার নিজের রুমে আসেন। কাল থেকে তার এনজিও চালু হবে। কত কাজ বাকি। এখনো অনেকের নাম রেজিস্টার করা হয়নি। সৈয়দা মাহবুবা রেজিস্টারের খাতা নিয়ে বিছানায় বসেন। এমন সময় বড় সাহেব আসেন তার রুমে। বড় সাহেবকে দেখে সৈয়দা মাহবুবা একগাল হেসে বলেন,
“বাবা আপনি? আসুন আসুন।”
বড় সাহেব রুমে এসে সৈয়দা মাহবুবার পাশে বসেন।
বলেন,
” কাজ করছিস?”
” হ্যাঁ বাবা। আপনি কিছু বলবেন?”
” নারে মা। খাইরুলদের সাথেই শহরে ফিরে যাবি?”
” হ্যাঁ। ওখানে তো আমার একটা চাকরি আছে। এবছরটা করবো তারপর একেবারে চলে আসবো।”
“এখন কার উপর এনজিও র দায়িত্ব দিতে চাস?”
” বড় ভাই আর ভাবি সামলাবেন।”
” তোর যেটা ভালো মনে হয় সেটাই কর।”
সৈয়দা মাহবুবা বড় সাহেবের দিকে তাকান। বড় সাহেব দৃষ্টি নিচু করে বলেন,
” আমাকে ক্ষমা করে দিস মা। আমি তোর জিবনটা গুছিয়ে দিতে পারলাম না।”
” এসব কেন বলছেন বাবা?”
” নওশাদ যে এমন প্রতারণা করবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনাই।”
” সেটা আমার ভুল ছিলো বাবা। নওশাদকে আমি পছন্দ করেছিলাম আপনি শুধু আমার পছন্দের মূল্যায়ন করেছেন।”
” বাবা হিসাবে আমার উচিৎ ছিলো তোর জন্যে একজন সঠিক জিবনসাথী বেছে নেওয়া।”
“এটা আমার ভাগ্য বাবা আপনার কোন ভূল নেই।”
বড় সাহেবের বলতে ইচ্ছে করলো,
“আমার ভুল আছেরে মা। তুই না হয় ভালোবাসায় অন্ধ ছিলি আমি তো ছিলাম না। তাহলে আমি এত বড় ভুল কি করে করলাম।”
মুখে কিছুই বলতে পারলেন না শুধু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন সৈয়দা মাহবুবার মুখের দিকে।”
খাইরুল মামুন যখন বাড়িতে পৌঁছায় ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে ধরণীর বুকে। চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। ধরনী ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে নিকষ কালো অন্ধকারে। যেন কালো রংয়ে গহনায় মুড়ে নিয়েছে নিজেকে। বাড়িতে এসে সবাই যে যার রুমে চলে যায়।এতটা রাস্তা জার্নি করে সকলে ক্লান্ত।
রাতের খাবার খাওয়ার পর সব ছোটরা মিলে উঠোনে বসে গল্প জুড়ে দেয়। আলিহান সেখানে আয়ানের সাথে রেদওয়ানের পরিচয় করিয়ে দেয় রাহির হবু বড় হিসাবে। রাহির হবু বর কথা শুনে কয়েক মিনিট স্তব্ধ হয়ে থাকে রেদওয়ান। তারপর প্রশ্ন করে,
“রাহির হবু বর মানে?”
আরুশি বলে,
“আপনি দেখছি বাংলা বুঝতে পারেন না।”
” মানে!”
“রাহি ওয়িল মেরি মাই ব্রাদার, বুঝলেন।”
” কবে ঠিক হলো?” আড় চোখে রাহির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল রিদওয়ান। মৌ বলল,
“ওদের বিয়ে ছোটবেলা থেকেই ঠিকঠাক।
” আচ্ছা, জানা ছিল না আমার।”
রাহির দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রেদওয়ান বলল ”
“তোমরা কথা বলো আমি আসছি।”
এই বলে সেখান থেকে চলে যায় রেদওয়ান। রেদওয়ান চলে যাওয়ার পর রাহি মনে মনে বলে,
“আমার বিয়ে হয়ে যাবে এটা মানতে পারছেন না তাই চলে যাচ্ছেন তাইনা রেদওয়ান। আমিও মানতে পারছি না। শুধু একবার মুখে বলুন না, আপনি আমাকে ভালোবাসেন আমি সব ঠিক দিবো।”
রেদওয়ান এর চলে যাওয়ার পর রাহি ঘুমের অজুহাতে এখান থেকে চলে আসে।
ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে রেদওয়ান। মাথায় এখনো বেজে চলেছে আলীহানের বলা রাহির হবু বর কথাটা। রাগে চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে রেদওয়ানের। বিয়ে! কিছুদিন পর বিয়ে! আগে থেকে সব ঠিকঠাক আর রেদওয়ান কিচ্ছু জানতে পারলো না। এমন একটা মেয়েকে নিজের মন দিয়ে বসলো।মনে মনে সব ভাবতে দেয়ালে জোরে ঘুসি মারে যার ফলে হাত কেটে যায়। সেখান থেকে সামান্য রক্তও পড়ে। জোছনার আলো রেদোয়ানের কেটে যাওয়া হাতটা দেখতে পেলনা রাহি। ধীর পায়ে রেদওয়ানের পাশে দাঁড়ালো।বলল,
“পালিয়ে এলেন।”
রেদওয়ান আকাশের দিকেই দৃষ্টি রেখে বলল,
“পালাবো কেন?আমি কি চোর নাকি ডাকাত যে পালাবো। ”
“সেটাই। তাহলে চলে এলেন যে।
“এমনি। ”
“আমাকে ভালোবাসেন?”
“না।”
“মিথ্যে বলছেন?”
” তাহলে সত্যিটা তুমি বলো?”
” আপনি আমাকে ভালবাসেন। ”
” বললাম তো না।”
“তাহলে আইয়ানকেই বিয়ে করবো।”
“এমনটাই তো হওয়ার কথা।”
“আপনি খুব জঘন্য একটা মানুষ।ঠিক আপনার শরীরের এই পোশাকের রঙের মত বিষাক্ত। সত্যি বিষাক্ত লাগছে আমার আপনাকে।”
“হুম জানি সেটা। আসক্ত হওয়ার জন্য তো আয়ান আছেই।”
রেদওয়ানের উপর অভিমান করে রাহি ছাদ থেকে চলে যায়। রেদওয়ান হাতে থাকা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সেটা নিচে ফেলে দেয়। ধোয়াগুলো উপরে উড়িয়ে দিয়ে বলল,
“যদি হাড়িয়ে যাই কোন অজানায়,
দেখিতে না পাও আমায় তোমার ছায়ায়।
বিষণ্ণ মনে আকাশপানে চেয়ে, ভাবছো আমি কোথায়?
তবুও মনে রেখো আমি আছি তোমার অন্তরায়।”
আমি ভালোবেসে যাব তোমায় অমলিন
তোমার স্মৃতি সুগন্ধি হয়ে থাকবে আমার সাথে চিরদিন।
সমাপ্তি
#মাহফুজা আফরিন শিখা।