তবুও তুমি পর্ব-০১

0
2871

#তবুও_তুমি💖
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#পর্ব_০১

আমার বাসর ঘরে বধূ বেশে দাঁড়িয়ে আছি সামনে আমার আর বর্ষনের কিছু ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার সদ্য বিবাহ করা স্বামীর(রোদ) মুখ লাল হয়ে গেছে রেগে এটা দেখে।
আমার হাত পা সমানে কাঁপছে।
বাসর ঘরে এ কেমন উপহার পেলাম আমি।
রোদ আর সহ্য না করতে পেরে সামনে থাকা টিভি আমার দিকে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।
হাতের কাছে থাকা ছবির ফ্রেম টা তার উপর।
আমি কানে হাত দিয়ে পিছিয়ে এলাম।
তখনি আমার গালে তীব্র ভাবে আঘাত পড়লো।
আমি ছিটকে পড়লাম,
–যেখানে কোন ছেলের সাথে মেলা মেশা বন্ধ ছিল সেখানে অন্য একটা ছেলের সাথে এতো ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের সাহস কি করে হলো।
(চিৎকার করে)
সাথে আমার গলা চেপে ধরলো।
তার চিৎকার এ আমার হৃদয় কেঁপে উঠলো।
আমাকে দেখে রোদ আমার হাত ধরে তুলে তার সামনে দাঁড় করালো,
–কি হলো বল উত্তর দিচ্ছিস না কেন?
বল তোর মুখ বন্ধ কেন?
কিসর জন্য এখন তোর মুখ বন্ধ?
(চিৎকার করে)
আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে মুখে কোন কথা নেই। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।
এই মনে হয় গেলাম আমি।
তার প্রতিটা কথায় আমি বার বার কেঁপে উঠছি।
–কাঁদছিস কেন? এই কাঁদছিস কেন?
তুই তো কাঁদার জন্য এমন করিস নি।
তবে তুই কাঁদছিস কেন তোর তো সুখের সময় গেছে না ওর সাথে।
আমাকে ছেড়ে দিলো।
আবারও চিৎকার করে কথাটা বলে পাশে থাকা কাঁচের ফুলদানি টা ভেঙে দিলো । আবারও বিকট শব্দে আমি আমার কান চেপে ধরলাম
এবার রোদের হাত অনেকটা কেটে গেল।
ওর হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
–আমার অনুপস্থিতিতে তোর পাখনা গজিয়েছিল না রে।
তাই এসব করলি। সমস্যা নেই তোর পাখনা কাটার ব্যাবস্থা আমি করছি, তুই চিন্তা করিস না আমাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তির জায়গা আমি হতে দিবো না।
কথাটা বলে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও উল্টো দিক ফিরে বাইরে চলে গেল।
ওকে থামানোর মত অবস্থা আমার নেই।
আমি ভাঙা কাচের টুকরোর মধ্যে বসে কাঁদতে লাগলাম।
এগুলো কি হলো আমার সাথে।
কিছই বুঝতে পারছি না এই ভিডিও টা কে দিলো।
রোদ নিশ্চিত সব শেষ করে দিবে।
ও সব তছনছ্ করে দিবে।
ওর ভয়ানক রুপের কথা ভাবলেই অন্তর আত্মা কেঁপে উঠছে।
আমি ছোঁয়া, পুরো নাম ‘ছোঁয়াক্ত ছিন্তি’।
অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি।
আমার মা বাবা নেই এতিম আমি।
একটা আন্টির বাসায় বড়ো হয়েছি।
সময়ের সাথে সাথে আমার দায়িত্ব ভদ্রমহিলা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে সেও না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
তার বাড়িতেই থাকতাম আমি।
আমার সামনে যে ছিল আমার স্বামী “রোদ চৌধুরী “। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ।
উনি আমার জীবনে এসেছে আরও ৫ বছর আগে যখন আমি ক্লাস ১০ এ পড়ি।
তখন থেকে আমার জীবনে আমার বাবা আর সে বাদে কোন ছেলের অস্তিত্ব আসে নেই বললে চলে।
গত ১ বছর সে একটা কাজে বাইরে ছিলেন।
তার দেশে আসার ১ দিন পরই হুট করে আমাকে ১ দিনের মধ্যে বিয়ে করে তার ঘরে তুলে এ বিষয়ে আমার কোন মত জানার প্রয়োজন কেউ মনে করে নি।
ধরে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিলো।
আমার আর বর্ষনের সম্পর্ক টা কিছুটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
উনি ১ বছরের জন্য বাইরে চলে গেলে কি করে কি হয়ে গেল সত্যি করে আমি এক বারও ভাবি নি যে উনি জানলে কি হবে।
একে তো ছিল পাগলের মতো এখন আরও হলো।
উফ আর কিছু ভাবতে পারছি না সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
,
,
,
,
নির্জন রাস্তায় বিয়ের সাজের সেরোয়ানি টা পরে বহু দুর ড্রাইভ করেছে ফুল স্প্রিডে রোদ।
একটা সময় গাড়িটা থামিয়ে বাইরে নেমে আসে।
মিষ্টি শীতল বাতাস বইছে।
এক দম নির্জন একটা পরিবেশ।
ঝিঝি করে ডাকছে ঝিঝি পোকা গুলো।
রোদ বিকট এক চিৎকার দেয় ভেতরের আগুন কোনোমতে বের হতে চাচ্ছে না,
–কেন করলে ছোঁয়া এমন? কেন করলে ছোঁয়া? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি ভালোবেসেছিলাম ছোঁয়া।
বলেছিলাম কোন তৃতীয় ব্যাক্তির আমাদের মধ্যে জায়গা হবে না।
তুমি তাও আমাদের মধ্যে অন্য কাউকে নিয়ে এলে।
কেন করলে ছোঁয়া ভীষণ ভালোবাসি তো তোমায়।
তুমি কেন বুঝো না।
রোদ মাটিতে হাঁটু মুড়ে কান্না করছে আর কথাগুলো বলছে।
সত্যি সব কিছু ধোঁয়াশা লাগছে তার কাছে।
কেমন সব কিছু অন্ধকার।
ভালোবাসা থেকে এমন প্রতারণা সে নিতে পারছে না।
,
,
,
সকালে,
ভাঙা কাঁচ আর এলোমেলো ঘরের মধ্যে নিজেকে এলোমেলো ভাবে আবিষ্কার করে ছোঁয়া।
গলাটা ভিশন ব্যাথা হয়ে আছে।
ধিরে ধিরে খাট ধরে উঠার চেষ্টা করে।
খুব কষ্টে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় দেখতে পায় গালে তার ৫ টা আঙুলের দাগ স্পষ্ট।
এগুলা দেখে ছোঁয়ার ভিশন কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু বলার কোন অবস্থা নাই।
ছোঁয়ার কথা শুনবার মতো কেউ নেই।
পৃথিবীতে ছোঁয়ার যে আপন বলতে কেউ নেই।
আচ্ছা যদি কাল রোদের জায়গায় বর্ষন থাকতো তবে কি বর্ষন এটা করত ৷
না বর্ষন আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে।
ও কখনো এমন করত না।
ছোঁয়া আবার কথা গুলো ভেবে কান্না শুরু করে।
হটাৎ তার রুমে ঠক ঠক শব্দ শোনা যায়,
ছোঁয়া নিজেকে সামলে দরজা খোলে,
সামনে এক জন সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে
–ম্যাম, স্যার এই শাড়ি পরে রেডি হতে বলেছে।
ছোয়া মহিলাটার হাতে একটা শাড়ি দেখতে পায়।
একটা নীল রঙা শাড়ি।
ছোঁয়া সেটা সার্ভেন্ট এর হাত থেকে নিতে সার্ভেন্ট চলে যায়।
ছোঁয়া বেশ ভালোই জানে এখন ছোঁয়া জিদ করে শাড়িটা না পরলে হয়তো আরও খারাপ কিছু হবে।
তাই চুপচাপ শাড়িটা পড়ে গোসল করে নেয়।
ঘরের ভেতরের অবস্থা দেখলে ছোঁয়ার হৃদয় বার বার কেঁপে উঠছে।
কাল রাতের ভয়ানক ঘটনার কথা ছোঁয়ার মনে পড়ছে বার বার ।
ছোয়া শাড়িটা পরে আয়নার সামনে রাখা কিছু গয়না পরে নেই।
আর তখন সেই সময় হাজির হয় রোদ।
রোদকে দেখে অন্তর আত্মা ভয়ে কেঁপে ওঠে।
ও ঠিক আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আমার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোদ।
আমি তাকে দেখে ফ্রিজ হয়ে গেছি।
কিছুক্ষণ পর ও তাকানো বাদ দিয়ে এগোতে শুরু করলো,
এবার ওর এগোনো দেখে আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম।
আমার হাত পা কাঁপতে আছে।
হটাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে ও আমার চোখে একটা কালো কাপড় বেঁধে দিলেন।
কি করতে চাচ্ছে ও আমি তো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
কাল রাতে ছিল কই।
যাক কাল রাতে কোথায় ছিল সেটা তো জানা যাবে না কিন্তু এখন ও কি করবে।
আমার ভাবনায় অবসান ঘটিয়ে সে আমায় কোলে তুলে নিলো।
এবার মনে হয় জান যায় যায় অবস্থা।
কোথায় নিচ্ছে আমাকে আর কেন।
কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে।
আমি বুঝতে পারছি সে আমাকে কোলে করেই হাঁটতে আছে আমি চুপচাপ তার শার্ট খামচে ধরে রেখেছি।
কেন জানি না ভয় করছে অনেক।
অনেকটা সময় পর মনে হলো সে থেমেছে,
আমাকে নামিয়ে ও দিলেন।
তার পর আমার পেছনে এসে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
–রেডি তো সারপ্রাইজ এর জন্য।
ওনার এমন কথা শুনে সত্যি মনে হচ্ছে এবার বোধহয় আমি আর থাকছি না।
আমাকে এভাবে ভয় পেতে দেখে সে আমার চোখ থেকে কালো পট্টি টা খুলে দিলো।
সামনে তাকিয়ে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল,

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে