#তপ্ত_সরোবরে
#তেজস্মিতা_মর্তুজা
৭.
লাবন্য বেশ সংকুচিত ভঙ্গিতে রিক্সা থেকে নেমে দাঁড়ায় রেস্টুরেন্টের সামনে। আগেই এসে থেমে আছে ইরফান বাইক নিয়ে। বাড়ির সামনে লাবন্যকে নিতে গিয়েছিল, লাবন্য কোনভাবেই বাইকে উঠতে রাজি হয়নি, এমনকি তার ভাবসাব দেখে মনে হয়েছে– আর দু-একবার বললে মেয়েটা হয়ত আর যাবেই না সঙ্গে। ইরফান অবশ্য জোর করেনি, তবে বলেছিল কয়েকবার বাইকের পেছনে উঠতে। শেষ অবধি লাবন্য রিক্সাতে এবং ইরফান সেই রিক্সাকে অনুসরণ করে পিছন পিছন বাইকে এসেছে।
লাবন্য চোরা চোখে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। চোখে-মুখে তার নীরব অস্বস্তি। ইরফান হাত প্রসারিত করে ইশারা করল লাবন্যকে আগে ঢুকতে। লাবন্য ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়ল সিঁড়ির সামনে। পা থামিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ইরফান আবার ঘাঁড় নেড়ে ইশারা করে দোতলায় উঠে যেতে। লাবন্য জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট নেড়ে ধীর পায়ে উঠে যায় রেস্টুরেন্টের দোতলায়। খুব বেশি লোকজন নেই ভেতরে। ইরফান এগিয়ে গিয়ে লাবন্যর জন্য চেয়ার টেনে দিয়ে নিজে বসে পড়ল লাবন্যর মুখোমুখি চেয়ারটায়।
মেয়েটা একদম সস্তি পাচ্ছে না তা তার চেহারায় স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে। বসে কেমন হাঁসফাঁস করছে। ইরফান একদৃষ্টে চেয়ে দেখছে অস্থির লাবন্যর অল্প ঘেমে ওঠা মুখটা। মেয়েটা সুন্দরী, বেশ ফর্সা চেহারা, নাক-মুখ বেশ মানানো গঠনের। বিশেষ করে ইরফানের নজর কাড়ছে—লাবন্যর গম্ভীর মুখের এলোমেলো অপ্রস্তুত দৃষ্টি। মেয়েটা বোধহয় জানে না—নারীর আড়ষ্ট চোরা চাহনি কিছু পুরুষকে কতটা মারাত্মক ভাবে ঘায়েল করে। লাবন্যর দিকে অপলক তাকিয়ে থেকেই এক ওয়েটারকে ডাকল ইরফান, “ভাই, এসিটা অন করো তো এপাশের। মেডাম ঘেমে যাচ্ছেন।ʼʼ
লাবন্য চকিতে তাকায় ইরফানের এমন একটা কথায়। আবার সঙ্গে সঙ্গে আড়ষ্ট নজর নামিয়ে নেয় নিচের দিকে। তা দেখে মুচকি হাসল ইরফান। কিছুক্ষণ ওভাবেই লাবন্যর দিকে তাকিয়ে থেকে মেনু কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “কী খাবে? নাও চুজ করো।ʼʼ
ইরফানের ঠোঁটের কোণে মিটিমিটি হাসি। লাবন্য তাকাতেই তা চোখে বিঁধল। অপরিকল্পিতভাবে হুট করে মস্তিষ্কের স্মৃতিতে ফারজাদের কঠিন মুখটা ভেসে উঠল। দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয় লাবন্য। কী হচ্ছে তার সাথে? আবার তাকাল ইরফানের দিকে, এবার ইরফান ভ্রু নাচায়। লাবন্য ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে চোরের মতো নজর লুকিয়ে মেনু দেখতে থাকে ব্যস্ত ভঙ্গিতে। ইরফান চেয়ে আছে লাবন্যর দিকে। হঠাৎ-ই জিজ্ঞেস করল, “আমায় আর কখনও দেখো নি সেদিনের আগে?ʼʼ
লাবন্য বলল, “না, কেন?ʼʼ
“তোমার বাড়িতে হুট করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলাম কেন?ʼʼ
লাবন্য ভ্রু কুঁচকায়, “আগে থেকে চিনতেন আমায়?ʼʼ
“ঠিক চিনতাম না। দেখেছি বেশ কয়েকবার ভার্সিটিতে যাওয়া-আসার সময়।ʼʼ
লাবন্যকে বেশ অপ্রস্তুত দেখাল। ইরফান তা দেখে লাবন্যকে তাড়া দিলো, “নাও কিছু অর্ডার করো। দুপুর হয়ে আসছে, লাঞ্চটা করে নিই, কী বলো? এখান থেকে আমায় আবার অফিস যেতে হবে।ʼʼ
লাবন্য ইরফানের দিকে মেনুকার্ড এগিয়ে দিয়ে বলল, “আপনিই কিছু অর্ডার করুন। তাতেই চলবে, আমার বিশেষ কিছু চোখে পড়ছে না।ʼʼ
ইরফান মেনুকার্ডটা নিয়ে হাতে নাড়তে নাড়তে বলল, “ভেরি ব্যাড, লাবন্য! কেন নিয়ে এসেছি তোমাকে এখানে? একে অন্যকে জানার জন্য তো নাকি? এই-যে আমি বললাম, অফিসে যাব। তুমি জিজ্ঞেস তো করলে না— কোথায় জব করি আমি?ʼʼ
লাবন্যকে কথা বালানোর জন্য এসব বলছে ইরফান–তা বুঝল লাবন্য। সে একটু অবাকও হলো মনে মনে। জিজ্ঞেস করল, “কোথায় জব করেন?ʼʼ
“স্কয়ার ফার্মা কুমিল্লা ডিপোট।ʼʼ গম্ভীর স্বরে বলল কথাটা ইরফান।
ওয়েটারকে ডেকে দু প্লেট ফ্রাইড রাইস সহ দুটো সফ্ট ড্রিংকস অর্ডার করে লাবন্যর দিকে শান্ত নজরে মনোযোগ সহকারে তাকাল ইরফান। অদ্ভুত স্বরে জিজ্ঞেস করল, “তোমার মত আছে বিয়েতে?ʼʼ
লাবন্য এবার পূর্ণদৃষ্টি মেলে তাকায় ইরফানের দিকে। কয়েক মুহুর্ত কেটে গেলে চোখ সরিয়ে আস্তে করে বলল, “না করি নি তো।ʼʼ
“তোমার মুখে হ্যাঁ-ও তো শোনা হয় নি।ʼʼ
লাবন্য ঠোঁট চেপে ধরে একটা ঢোক গিলল। কিছু সময় তাকিয়ে রইল টেবিলের দিকে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফারজাদের মুখটা। বুকে সূক্ষ্ম ব্যথারা নড়েচড়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে আবার মনে পড়ে যায় ফারজাদের নির্দয়, কঠোর মুখটা। অথচ তৎক্ষণাৎ–পরিস্থিতি, ফারজাদের আচরণ, নিজের অবস্থান, সব যেন বুকে জমে থাকা অনুভূতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদমূলক এক আন্দোলন করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে নিজের অজান্তেই মাথায় দুলায় লাবন্য, মুখে অস্পষ্ট উচ্চারণ করে, “হু।ʼʼ
ইরফান লাবন্যর হাবভাব দেখে হাসল সামান্য। জিজ্ঞেস করল, “প্রেম কয়টা করেছ?ʼʼ
ভাবনা ভঙ্গ হয় লাবন্যর, তড়াক করে চোখ মেলে তাকায় ইরফানের হাসি মুখটার দিকে। লোকটা বেজায় ঠোঁটকাটা আর খোলামেলা মানুষ। ফোনে যেমন কথা শুনেছিল বাস্তবে তার চেয়েও বেশিই আন্তরিক আর ফ্রি মাইন্ডেড। হুট করে নয়ত এত সহজ ভঙ্গিতে হবু বউকে এমন প্রশ্ন করা যায় নাকি? লাবন্য দৃঢ়ভাবে মাথা দোলায়, “উহু।ʼʼ
ইরফান সাঁয় দিলো, “হু, আমি বিশ্বাস করি। তোমার মতো মেয়ের দ্বারা আর যাই হোক বয়ফ্রেন্ড পালা সম্ভব না। তবে প্রেমে হয়ত দু-একটা পড়েছিলে, তাই না? ও সকলেই পড়ে, না পড়লেই বরং ব্যাপারটা অ্যাবনরম্যাল। আমাকেই দেখো না, লাইফে বে-হিসেব প্রেম করে, বিয়ে সেই একটা আর একজনকেই করতে হচ্ছে। তাও আবার যার সাথে কোনদিন প্রেমই হয়নি। এজন্যই বলে— কপালের নাম গোপাল।ʼʼ
লাবন্য বিষ্মিত, হতভম্ব হয়ে খানিক হাঁ করে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। বে-হিসেব প্রেম করেছে? সেটা আবার অকপটে স্বীকার করছে লোকটা? আর বিয়ে একজনকে করছে বরে আফসসো আছে নাকি লোকটার? সব প্রশ্নকে মনে বিষ্ময় আকারে চাপিয়ে কেবল জিজ্ঞেস করল, “আমার মতো মানে? আমি কেমন?ʼʼ
ইরফান বিনিময়ে হাসল। পকেট হাতরে খুব মূল্যবান একটা জিনিস বের করছে এমন ভঙ্গিতে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের ভাজে রেখে বলল, “বলছি।ʼʼ
লাবন্য এবার বাকরুদ্ধ। তার ভাষা হারিয়ে গেছে। এই লোকের মাথায় গন্ডোগোল আছে নাকি? লাবন্যর সামনে বসে এভাবে নির্দিধায় সিগারেট জ্বালাচ্ছে! ইরফান জলন্ত সিগারেটটা আঙুলে চেপে বলল, “দেখো, আমি ভালো, এর চেয়ে বড়ো সত্যি আর নেই। তবে তার মাঝে একটু-আধটু, মানে বলতে পারো খুউউউব অল্প পরিমাণে খারাপ গুণও আছে। সেটাও তোমার আগেই জানা উচিত, যাতে বিয়ের পর খিস্তি না করতে পারো।ʼʼ
লাবন্য মনে মনে বলে, এখনও তো বিয়ে ভেঙে দিতে পারি। লোকটা কী তা বুঝছে না? লাবন্য ভ্রু কুঁচকেই আছে। ওভাবেই আবার জিজ্ঞেস করল, “বলুন এবার—আমার মতো মানে কী? মানে আমি কেমন?ʼʼ
ইরফান একটু টেবিলে ঝুঁকে লাবন্যর দিকে মুখ এগিয়ে বসল। ধীর কণ্ঠে বলল, “শান্ত, বুদ্ধিমতি, লজ্জাবতী, প্রবল আত্নসম্মানবোধে ভরপুর, লক্ষীবতী, আর সবশেষে আমার আদুরিনী। প্রেম তো অস্থায়ী, অনিশ্চিত এক সম্পর্ক। এমন মেয়েদের সাথে প্রেম নয়, গোটা জীবন সাজাতে হয়। তোমাদের সাথে ফ্লার্ট করা যায় না, খারাপ স্পর্শ করা যায় না, তোমাদেরকে ছেড়ে দেওয়া যায় না। বরং নিজের ঘরের লক্ষী হিসেবে সাজিয়ে রাখতে হয়। নিজের আদুরিনী হিসেবে পাশে রেখে দিতে হয়। এদের যত্নে প্রতিপালিত হয়ে পুরুষের এক জীবনকে ধন্য করতে হয়। জানি জানি, একটু কাব্যিক হয়ে গেছে কথাগুলো। তবে খুব সাজিয়ে মন মাতানোর মতো কথা বলতে পারিনি, রাইট? কী আর করব? যখন গোমরামুখো হবু বউকে পটাতে হয় আর কী! রাতভর মুখস্থ করে এসেছি স্ক্রিপ্টটা, এতে কাজ না হলে খাটুনিটা জলে যাবে। এবার বলো, প্রেমে পড়েছ আমার?ʼʼ
লাবন্য অস্তিত্বহীনের ন্যায় চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। সে বাকহারা, কিৎকর্তব্যবিমূঢ়। লোকটা আজব, আজব তো সহজ শব্দ, লোকটা অদ্ভুত ধরণের… তারপর? লাবন্যর মাথায় আসে না পরিস্থিতিটাকে বর্ণনা করার ভাষা। সে কেবলই হারিয়ে যেতে চাইছে এখান থেকে, বসে থাকতে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে খুব, অদ্ভুত লাগছে সবকিছু। আস্তে করে কেবল বলল, “লক্ষীবতী! সেটা আবার কী?ʼʼ
—
ফারজাদ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে মহানগর সড়কের ব্যস্ত পরিবেশের দিকে। মন বলছে– এখন এক কাপ কফি, চা কিংবা কোন সফট ড্রিংকস হাতে থাকলে খুব ভালো হতো। কিন্তু উঠে গিয়ে মোটেই কফি বা চা বানাতে ইচ্ছে করছে না। আধখাওয়া একটা স্পিডের ক্যান পড়ে আছে ছোট্ট টেবিলটার ওপর। সেটাও হেঁটে
গিয়ে আনতে ইচ্ছে করছে না। শরীর ও মন থেমে আছে যেন। আজ ঠাণ্ডা তুলনামূলক কম। এই বিকেলে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করেছে সে। কয়েকদিন আছে মাঝে ট্রেনিং শুরুর। অথচ সেদিকে মন দিতে পারছে না সে পুরোপুরি। সবকিছুই কেমন অসহ্য ঠেকছে। অলস পায়ে হেঁটে এসে বিছানার ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ হাতে নাম্বার ডায়াল করল। কল রিসিভ করতেই ফারজাদ বলল, “কী খবর ওদিকের?ʼʼ
আজাদ সাহেব বলে উঠলেন, “কী আর খবর? তুই ফিরবি না, নাকি? আর তো দুই দিন আছে বাকি। কত কাম পইড়ে আছে, আমি আর আসলাম কতদিক সামলাইতাম। আইবি কবে তুই? স্যার ক্যান ডাকছিল, কী কইছে?ʼʼ
ফারজাদ সব প্রশ্ন বাদ দিয়ে কেবল বলল, “বাড়ির সকলে ভালো আছে?ʼʼ
আজাদ সাহেব একটু অবাক হলেন। ফারজাদ এভাবে খুব কমই জিজ্ঞেস করে, তাও আবার গেছেই আজ দুদিন হলো। বললেন, “হ আছে, সব ঠিকই আছে। কিন্তু তোর আম্মা খালি আমার কানের কাছে ঘ্যানঘ্যানায়, তোরে যেন ফোন করে আসবার কই। তোরে ফোন কইরা লাভ আছে? তুই তো তোর মর্জি মতোনই আইবি। কল করছিলাম, ধরলি না।ʼʼ
ফারজিদ বলল, “আচ্ছা, এখন তো কল ব্যাক করেছি, এখন ওই কথা শোনাচ্ছেন কেন? সবার কী খবর? লাবন্য ভালো আছে? সব ঠিকঠাক?ʼʼ
একটু অদ্ভুত লাগল ফারজাদের শেষের প্রশ্নটা। স্বরটা অদ্ভুত সাথে কথাটাও। শুনেই বোঝা যাচ্ছে গোমরামুখো খুব ইতস্তত করে কথাটা বলেছে। আজাদ সাহেব বললেন, “হ ভালোই আছে। তুই জলদি..ʼʼ
ফারজাদ যেন প্রস্তুতি নিচ্ছিল কথাটার, এভাবে হঠাৎ-ই বলে, “আর দ্বিজা? দ্বিজা ভালো আছে?ʼʼ
“দ্বিজা তো নাই। বাড়িত চলে গেছে, আইব কাল পরশু, বইলা গেছে।ʼʼ
কথাটা শুনে ফারজাদ ভ্রুটা জড়িয়ে নিলো, আস্তে করে বলল, “ও আচ্ছা। রাখুন তাহলে।ʼʼ
“হ, শোন কবে আইবি তুই? ইরফান কইছে একেবারে তুইলা নিয়া যাইব। তাই তো আবার সব আয়োজন আরও বাড়ায়া করা লাগতেছে।ʼʼ
“আসব। আপনার বেশি চাপ নেয়ার দরকার নেই। ছোটো কাকা আছে তো, আর এমন আহামরি কিছু না। অনুষ্ঠান সকলের বাড়িই হয়। এত বেশি ব্যস্ত না হয়ে সুস্থহালে সব ব্যবস্থাপনা করুন।ʼʼ
কল কেটে দিলো ফারজাদ। বুক ফুলিয়ে ছোটো একটা শ্বাস নিলো। রাগ হলো দ্বিজার ওপর। পুচকি মেয়ে ঢং শিখে গেছে। গেছে, তোকী বলে গেছে? রুমে গিয়ে বিছানায় এলোমেলো হয়ে থাকা কালো জ্যাকেটটা তুলে গায়ে দিতে দিতে অপর হাতে সিগারেটের প্যাকেট হাতে তুলে নিলো।
সিগারেটের ধোঁয়া উড়ে গিয়ে বিকেলের হালকা কুয়াশার সঙ্গে মিশে ধোঁয়াটে পরিবেশ তৈরী করছে। সেদিকে তাকিয়ে কপালটা কুঁচকে ফেলে ফারজাদ—এই বয়সের ছেলেমেয়েরা খুব অদ্ভুত হয়। এদের লীলাখেলা বোঝা বড়ো দায়। কখন কী করে, নিজেরাও জানে না বা বোঝে না। ফারজাদ নিজের বর্তমান জীবন থেকে কয়েক বছর আগে ফিরে গেল। যখন সেও এরকমই ভয়ানক বয়সটা পার করছিল। দিনগুলো মস্তিষ্কে নাড়া দিতেই তড়াক করে চোখটা খুলে ফেলল ফারজাদ। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলল চারদিকে। সে-সব দিনগুলোকে সে ঘৃণা করে, সে ঘৃণা করে এই বয়সটাকে, সে ঘৃণা করে আবেগকে, সে ঘৃণা করে অবুঝ অনুভূতিকে। এই বয়স কেবল কেড়ে নেয়। নিঃস্ব করে ছাড়ে মানুষকে।
ফারজাদ শ্বাস ভরে সিগারেটের ধোঁয়া টেনে নেয় নাকে মুখে। হা করে শ্বাস ফেলল—তাতে পাঁজা পাঁজা ধোঁয়া হাওয়ায় মিশে যায় বুকে চিড়ে বেরিয়ে। মনে মনে বিরবির করল, “তোকেও ঘৃণা করতে ইচ্ছে করছে, দ্বিজা। যারা-ই দাবী করে আমাকে ভালোবাসার, তাদের সবার প্রতি আমার এক জনমের ঘৃণা। তুইও পার পেলি না।ʼʼ
চলবে..