তন্ময়ের তনু পর্ব-২৮+২৯

0
2556

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৮
#Jechi_Jahan

তন্ময়ের কথায় আমি ছাদ থেকে আসার কিছুক্ষণ পর শাড়ী পরছিলাম।হঠাৎ তন্ময় এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে।ওনার এমন হুট করে জরিয়ে ধরায় আমি অবাক হয়ে যাই।কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবাক হই ওনার কান্না করা দেখে।

আমি-কি হয়েছে তন্ময়??(ওনার দিকে ফিরে)

তন্ময়-(আবার আমাকে জরিয়ে ধরে)

আমি-কাঁদছেন কেনো??

তন্ময়-আমাকে ক্ষমা করে দাও তনু।

আমি-কেনো কি হয়েছে???

তন্ময়-আমি তোমার সাথে এই কয়েকদিন খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।(কান্না করে)

আমি-সেটার জন্য কাঁদছেন??

তন্ময়-আই এমন সরি।

আমি-আপনি তখন রাগের মাথায় এমন করেছেন তাই এখন আর কাঁদতে হবেনা।(ওনার চোখের পানি মুচে)আমি আপনাকে সবসময় হাসি খুশি দেখতে চাই।

তন্ময়-সরি।(বলে আবার জরিয়ে ধরে)

(কি হলো এটা???তন্ময়ের হঠাৎ এতো পরিবর্তন?ইমন কি এমন বলল যে তন্ময় এতো ভালো হয়ে গেছে।চলুন তো ফ্লাসব্যাকটা ঘুরে আসি)

/\ফ্লাসব্যাক/\

তন্ময়-কি বলবে ইমন??

ইমন-তুমি কি জানো তনুর আগে রিলেশন ছিল??

তন্ময়-(কিছুক্ষণ থেমে)হুম জানি।

ইমন-তনু বলেছে??

তন্ময়-হুম,,,আচ্ছা তুমি কিভাবে জানলে যে তনুর আগে রিলেশন ছিল???

ইমন-জানতে চাও কিভাবে জানলাম??

তন্ময়-বলো।

ইমন-কারণ ওর সেই লাভারটা আমিই ছিলাম।

তন্ময়-কি??(অবাক হয়ে)

ইমন-হুম,,,

তন্ময়-মিথ্যা কেনো বলছো???

ইমন-আমি মিথ্যা বলছিনা।আমি সত্যিই তনুর এক্স বয়ফ্রেন্ড ইমন।

তন্ময়-তাহলে তোমাদের মাঝে এখনো,,,,

ইমন-ভাইয়া প্লিজ ভুল বুঝোনা।

তন্ময়-তো??

ইমন-তনু এখন শুধু আমায় ঘৃণা করে।

তন্ময়-তুমি তনুর এক্স বয়ফ্রেন্ড।

ইমন-ও আমাকে ওর এক্স হিসেবেও নিজের মনে রাখেনি।কারণ আমি ওর সাথে খুব অন্যায় করে ফেলেছি।

তন্ময়-কি করেছে তুমি ওর সাথে??

এরপর ইমন সব সত্যি তন্ময়কে বলে দিলো ওর তনুকে ঠকানো,তন্ময়কে তনুর বিরুদ্ধে মেচেজ করা থেকে সব সত্যি বলে দিলো।

তন্ময়-ইমন তুই এতো খারাপ।

ইমন-আসলেই আমি অনেক খারাপ।তনুর কাছে তো হয়তো আনি খারাপ ও না।খারাপ থেকেও খারাপ।কিন্তু তুমি ওর কাছে খারাপ হয়োনা।

তন্ময়-মানে???

ইমন-তনুর সাথে আমার রিলেশন চলা কালীন ও আমার কাছে একটা কুইন ছিলো।যাকে তখন আমি নিজের দোষে হারিয়ে ফেলেছি।কিন্তু এখন ওই কুইন টা তোমার।তোমাকে তনুর কিং হয়ে ওকে ভালোবাসতে হবে।পারবে তো???

তন্ময়-আমি তনুকে তোমার থেকেও বেশি ভালো বাসি ইমন।

ইমন-তা তো ভাসতেই হবে কারণ তনু ভালোবাসা পাওয়ার মতো একটা মেয়ে ঘৃণা পাওয়ার নয়।

তন্ময়-তুমি ওকে ভালোবাসতে ইমন???

ইমন-খুব ভালোবাসতাম কিন্তু খনিকের ভালো বাসাটা হয়তো টিকতে চায়নি।ভাইয়া আমি নিজের দোষে তনুকে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি।তুমি ওকে পেয়েছো কিন্তু হারিয়োনা প্লিজ।

তন্ময়-তোমার কেনো মনে হয় আমি তনুকে হারিয়ে ফেলেবো।

ইমন-তিন বছর আগে যেটা আমি করেছি সেটা এখন তুমিও করছো।তাই বলছি তুমি ওকে হারিয়ো না প্লিজ।

তন্ময়-আমি তনুকে হারাতে পারবোনা ইমন।

ইমন-তাহলে আমার মতো করো না।

তন্ময়-আমি তনুকে হারাতে দিবো না।(বলে দৌড়ে নিচে চলে গেলো)

প্রেজেন্টঃ-

আমি এখন বাবার জন্য চা বানাচ্ছি।চা আসলে আমাকে বানাতে বলেনি বলেছিলো মা কে।কিন্তু এখন যেহেতু আমি কাজ করতে পারবো তাই মা কে বারণ করে আমিই চা টা বানাচ্ছি।চা বানানোর সময় শুধু তন্ময়ের কথা মনে পরছিলো।তখন তন্ময় আমাকে জরিয়ে ধরে অনেকবার সরি বলে। কিন্তু হঠাৎ এমন কেনো করলো সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।চা বানানো হয়ে গেলে চা টা নিয়ে আমি বাবার কাছে চলে গেলাম।

আমি-বাবা তোমার চা।(চা টা দিয়ে)

তন্ময়ের বাবা-চা তুই এনেছিস??(চা টা নিয়ে)

আমি-হুম!!

তন্ময়ের বাবা-তোর মা কই??(চায়ে চুমুক দিয়ে)

আমি-মা আছে তো।

তন্ময়ের বাবা-চা টা পুরা তোর বানানো চায়ের মত হয়েছে।(মুচকি হেসে)

আমি-আমই তো বানিয়েছি।

তন্ময়ের বাবা-কি তোকে এখন কাজ করতে দিয়েছে??(রেগে)

আমি-আরে বাবা কেও করতে দেয়নি আমি নিজে এই করেছি।(বাবার পাশে বসে)

তন্ময়ের বাবা-অনেক দিন পর শাড়ী পরেছিস।

আমি-হুম।(বাবার কাঁধে মাথা রেখে)

তন্ময়ের বাবা-কি হয়েছে???

আমি-কত বড় ঘটনা ঘটে গেলো তাও এত স্বাভা বিক কিভাবে রয়েছো??

তন্ময়ের বাবা-মাঝে মাঝে একটু স্বাভাবিক থাকতে হয়।

আমি-হুম(নিঃশব্দে কাঁদছি)

তন্ময়ের বাবা-কাঁদছিস কেনো??

আমি-তন্ময় খুব খুশি ছিলো।(কেঁদে)

তন্ময়ের বাবা-তো???

আমি-কি??(বাবার দিকে তাকিয়ে)

তন্ময়ের বাবা-যে চলে গেছে সে আর ফিরে আসবেনা।দেখবি তন্ময় এটা মাথায় রেখে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

আমি-হুম”!!

তন্ময়ের বাবা-তুই কিছুদিন তোর বাড়ী থেকে ঘুরে আয় তাহলে তুই স্বাভাবিক হয়ে উঠবি।

আমি-ঠিক আছে।

তন্ময়ের বাবা-তুই চাইলে আজকেই চলে যা।

আমি-না কালকে চলে যাবো।

তন্ময়ের বাবা-ঠিক আছে।

আমি-আচ্ছা আমি এখন আসি।

রাতে আমরা সবাই ডিনার করে যে যার রুমে চলে এলাম।আমিও আমাদের রুমে এসেছি কিন্তু কিছু ক্ষণের জন্য।আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শাড়ীটা খুলে একটা কালো কামিজ আর কালো প্লাজো পরে নিলাম।রুমে এসে দেখি তন্ময় খাটে শুয়ে আছে আমার দিকে মুখ করে।আমি আয়নার সামনে বসে চুলে একটা বেনি করে নিলাম।মুখ ধোয়ায় মুখ থেকে বিন্দু বিন্দু পানি পরছে যা তনু কে আরো সুন্দর করে তুলছে।আমি উঠে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে রুমে থেকে বের হয়ে গেলাম।

জেনি-ভাবী তুমি এতো দেরি করলে কেনো??

আমি-সরি আসলে শাড়ী চেঞ্জ করে জামা পরেছি তো তাই লেট হয়ে গেলো।

জেনি-রোজই তো জামা পরো আজ আর নতুন কি??

আমি-সবসময় তো আর পেটে ব্যাথা করতো না।

জেনি-(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)ওকে ঘুমাও।

আমি-হুম!!

জেনি-ভাবী,,,

আমি-বলো??(বালিশ ঠিক করতে করতে)

জেনি-বিয়ে হলে মেয়েদের অনেক কষ্ট তাইনা??

আমি-কই না তো।

জেনি-মিথ্যা বলো না তো।

আমি-কার কাছে কেমন লাগে সেটা আমি জানি না বাট বিয়ের পর আমি কোনো কষ্ট পাইনি।

জেনি-তুমি তো আরো বেশি কষ্ট পেয়েছো।

আমি-এটা তোমার ভুল ধারণা।

জেনি-ওকে ঘুমাও।

আমি-হুম।(বলে শুয়ে গেলাম)

শোয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর আমার ফোনে একটা মেচেজ আছে।আমি প্রথমে পাত্তা না দিলেও পর পর তিনটা মেচেজ একসাথে আসায় আমি ফোন টা অন করে দেখি তন্ময়ের মেচেজ।

তন্ময়-ওই এখনো আসছো না কেনো???
কোথায় আছো তুমি??
কথা বলছো না কেনো??

ওনার মেচেজ দেখে আমার পাগল হওয়ার দেরি।

আমি-আপনি জানেন না আমি কোথায়??

তন্ময়-আমি কি করে জানবো তুমি কোথায়??

আমি-আমি জেনির রুমে।

তন্ময়-তনু আজকে আমি তোমাকে এতোবার সরি বললাম তুমি তাও জেনির রুমে ঘুমাচ্ছো।

আমি-আমি কি জানতাম নাকি যে আমাকে আজকে আপনার সাথে ঘুমাতে হবে।

তন্ময়-যাই হোক তুমি এখন রুমে আসো।

আমি-আসবোনা।

তন্ময়-কি বললে??

আমি-আরে জেনি আছে তো।

তন্ময়-কিছু হবে না তুমি আসো।

আমি-তন্ময় প্লিজ।

তন্ময়-তুমি যদি এখন এখানে না আসো তাহলে কিন্তু আমি ওখানে চলে আসবো।

আমি-ওকে আসছি।

দূর ওনার মেচেজ এর রিপ্লাই দেয়া উচিত ছিলো না।এবার আমাকে ওখানে যেতে হবে।আমি আস্তে আস্তে জেনির দিকে তাকালাম।দেখলাম জেনি ঘুমিয়ে গেছে তাই আমি আস্তে আস্তে নেমে গিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলাম।আমাদের রুম এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ভেতরে যেতে ভয় করছে।হঠাৎ দরজাটা অটোমেটিক খুলে গেলো।

তন্ময়-এতো দেরি হলো কেনো???

আমি-কই???

তন্ময়-আজ কেনো গিয়েছো??

আমি-আমি ভেবেছি আজও আমি থাকলে আপনি রাগ করবেন তাই আর কি।

তন্ময়-ওসব নিয়ে তো সরি বলেছিলাম।

আমি-সরি””””(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-ওকে আসো।

আমি-হুম।(ভেতরে এসে)

তন্ময়-কালো রংয়ে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে।

আমি-(নিজের দিকে তাকিয়ে)আপনারই বউ।

তন্ময়-আর আমার ভাই ইমনের এক্স।

আমি-কি???

তন্ময়-আমি সব জানি।

আমি-ইয়ে তন্ময়,,,

তন্ময়-আমি প্রথম প্রথম তোমাকে কত কিছুর জন্যই না ভুল বুঝেছিলাম।কিন্তু তুমি ছিলে পুরো নির্দোষ।

আমি-(মাথা নিচু করে আছি)

তন্ময়-চলো ঘুমাতে আসো।

আমি-হুম।

আমি খাটে উঠে যেই বালিশে শুতে যাবো তন্ময় ওমনি আমায় নিজের বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরে। ওনার এমন কান্ডে আমি ওতটা অবাক হইনা বরং ভালোই লাগে।ওনার বুকে এভাবে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে আমি ঘুমিয়ে যাই।

সকালে—

তন্ময় ঘুম থেকে উঠে তনুকে কোথাও দেখলোনা। ও পুরো বাড়ী খুঁজেও তনুকে কোথায় পেলোনা।পরে মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে তনু ওর বাবার বাড়ী গেছে।ব্যাস তন্ময়ের রাগ বেড়ে গেলো তনুর উপর।একে তো গেল গেল তার উপর আবার না বলে গেল।তন্ময় রাগে নাস্তা না করেই বাড়ী থেকে বের হয়ে গেলো।

-চলবে

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৯
#Jechi_Jahan

আমি আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি।আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গল্প শুনাচ্ছে।আমি এগুলোই চাইতাম মায়ের থেকে মা যেনো আমাকে আপুর মতো ভালোবাসে।আজ বাড়িতে আসার সাথে সাথে মা আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।আর আমার কাছে ক্ষমা আমাকে ছোট থেকে অবহেলা করার জন্য।আমি ও মাকে পেয়ে খুশিতে কান্না করে দিই।

আমি-আচ্ছা আম্মু,,,

রাজিয়া-কি???

আমি-আমি যখন তোমার পেটে ছিলাম তখন তোমার কেমন অনুভব হতো???

রাজিয়া-তুই পেটে থাকতে আমি খুব খুশি ছিলাম।বলতে গেলে খুশির শেষ ছিলোনা।আমি সবসময় চাইতাম আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে হোক।আর দেখ আল্লাহ আমাকে একটা না দু দুটো ফুটফুটে মেয়ে দিয়েছে।আমি খুবই খুশি ছিলাম।

আমি-হুম!!

রাজিয়া-হ্যাঁ রে তুই যে এসেছিস তন্ময় কেও নিয়ে আসতে পারলি না??

আমি-আমি এসেছি খুশি হওনি???(কিভাবে আনবো বলো তোমাদের জামাই তখন ঘুমাচ্ছিল।দেখে মনে হলো যেনো ১০ বছর পরে ঘুমিয়েছে। পুরো হা করে ঘুমাচ্ছিলো তাই তো আমি আসার সময় জাগিয়ে বলিনি যে এখানে আসছি।)

রাজিয়া-যাহ খুশি হয়েছি না কি হয়েছি।এমনে জামাই সহ আসলে ভালো হতো।

আমি-হুম।(আসার সময় বলিনি এখন একটা ফোন করেও বলছিনা।উনি ঘুম থেকে উঠে যদি শুনে যে ওনাকে না জানিয়ে আমি এখানে এসেছি তাহলে তো খুব রেগে যাবে।বেশ তো বেলা হয়ে গেল এখন নিশ্চয়ই উঠে গেছে)

রাজিয়া-কিরে কি ভাবছিস???

আমি-আমি বাড়ীতে একটা ফোন দিয়ে আসি।(বলে মায়ের কোল থেকে উঠে গেলাম)

রাজিয়া-যা কল করে আয়।

আমি রুমে এসে ওনাকে কল করি কিন্তু উনি কল রিসিভ করে না।আমি বারবার কল করলাম কিন্তু উনি কল রিসিভই করেনি।আমি ভাবলাম এখনো ঘুমাচ্ছে তাই জেনিকে কল দিলাম।

জেনি-ভাবী আসসালামু আলাইকুম।

আমি-ওয়ালাইকুম আসসালাম।

জেনি-যেতে না যেতেই মিস করা শুরু করে দিলে।

আমি-তা আর বলতে।

জেনি-কি বলবে বলো??

আমি-তোমার ভাইয়া কই???

জেনি-ও তাহলে আমাদের মিস করছো না।

আমি-যাহ বলো না।

জেনি-ভাইয়া তো সকালে উঠেই বাইরে চলে গেছে তাও নাস্তা না করে।

আমি-অফিসে গেছে??

জেনি-আরে বিয়ের পর থেকে তো ভাইয়া অফিসে এই যায়নি।

আমি-তাহলে কোথায় গেছে??

জেনি-আমি জানিনা।

আমি-আমি ফোন দিয়েছিলসম কিন্তু ধরেনি।

জেনি-ওহ,,,আচ্ছা তুমি কি যাওয়ার সময় ভাইয়া কে বলে যাওনি??

আমি-নাহ,,

জেনি-কেনো???

আমি-উনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন তাই আর জাগিয়ে বলতে ইচ্ছে করেনি।

জেনি-জানো সকালে কি হয়েছে।

আমি-কি হয়েছে???

জেনি-ভাইয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে যে খোঁজা।আমি ইচ্ছে করেই চুপ ছিলাম।পরে মা বলে দিয়েছে তুমি বাড়িতে গেছো।আর এটা শুনার কিছুক্ষণ পরই ভাইয়া বাসা থেকে বের হয়ে যায়।বলো তো কাহিনিটা কি???

আমি-জানিনা।

জেনি-আচ্ছা রাখি,,,বাই।

আমি বুঝতে পারছি না যে এতে রাগ করার কি আছে।আমি কি এখানে আসতে পারিনা।উনি যে এমন রিয়েক্ট করছে।আমি রুমে চুপচাপ বসে আছি।কিছুক্ষণ পর পর আম্মু,আব্বু এসে কথা বলে যায়।আপু এখন বাসায় নেই আদিল ভাইয়ার সাথে বাইরে গেছে।আপু থাকলে হয়তো আমার একটু বেশি ভালো লাগতো।

আম্মু-তনু!!!

আমি-মা আমি কিছু খাবোনা।

আম্মু-আরে সেটা না।

আমি-তাহলে??

আম্মু-তন্ময় এসেছে।

আমি-কি??

আম্মু-হুম তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

আমি-তো???

আম্মু-তো নিচে চল।

আমি-না আমি যাবো না।

আম্মু-বিয়ে হয়ে গেছে এখনো বোধ বুদ্ধি হয়নি।

আমি-আম্মু তুমি যাওনা।

আম্মু-আমি তো গেছি কিন্তু ও তো তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

আমি-তুমি ওনাকে রুমে পাঠিয়ে দাও।

আম্মু-এটা কেমন দেখায় না।

আমি-যেমন দেখাক যাও তো।

আমি মাকে পাঠিয়ে একটা টেনশনে পরে গেলাম।উনি হয়তো আজ আমাকে কাঁচা গিলে ফেলবে।জেনির কথায় যতদূর বুঝলাম উনি আমার উপর রাগ করেই বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছিনা।তন্ময় আসার আগে আমি দৌড়ে বারান্দায় চলে যাই আর দরজা বন্ধ করে দিই।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করি কেও আমার রুমে ডুকেছে নিশ্চয়ই তন্ময় হবে।

তন্ময়-তনু ম্যাডাম!!!

আমি-(শোকে পাগল হয়ে গেলো নাকি)

তন্ময়-ম্যাডাম আপনি কই??(ভেঙ্গিয়ে)

আমি-(কি বলছে এসব)

তন্ময়-ম্যাডাম আমি আপনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

আমি-(চুপ করে আছি)

তন্ময়-ম্যাডাম আমি জানি আপনি বারান্দায়।

আমি-(ওহ শীট)

তন্ময়-আসলে দোষটা আমার আমি আপনাকে বেশি প্রশ্রয় দিয়ে দিয়েছি।আমি যদি এখন আমার আগের রুপে থাকতাম তাহলে আপনাকে নিজে বের হতে হতোনা।আমি নিজে দরজা ভেঙ্গে আপনাকে বারান্দা থেকে বের করতাম।

আমি-কি হয়েছে??(ভয়ে দরজা খুলে)

তন্ময়-বাহ বাহ এতো ভয় পাও।

আমি-তা আর বলতে।

তন্ময়-না জানিয়ে আসার সনয় এসব মনে ছিলনা

আমি-আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই,,,,,,,,

তন্ময়-ঘুমাচ্ছিলাম মাই ফুট,,,,একে তো এখানে এসে এক ভুল করেছে আবার জানিয়ে ও এসেছো বলো তো শাস্তি টা কি হবে??

আমি-এতে রাগ করার কি আছে।(ওনার গালে হাত দিয়ে।আসলে এখন এগুলা করার মুড আমার মোটেও নেই।তবুও ওনার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাকে এমন করতে হচ্ছে)

তন্ময়-রাগ করার কি আছে মানে।(হাত সরিয়ে)

আমি-মানে আমাকে তো আপনার বাবা আসতে বলেছে এখানে তাই আমি এসেছি।

তন্ময়-বাবা না হয় এখানে আসতে বলেছে কিন্তু আমাকে কি না জানিয়ে আসতে বলেছে।

আমি-কেনো এসেছি বলেছি তো মাত্র।

তন্ময়-জানো আজ আমার করে মনে হয়েছিলো।

আমি-কি মনে হয়েছিল???

তন্ময়-মনে হয়েছিলে তুমি আমার উপর রাগ করে চলে এসেছো।হয়তো আমার সরিটা একসেপ্ট করোনি তাই চলে এসেছো।

আমি-দূর কিসব বলেন।

তন্ময়-এমন আমার সাথে আর কোনোদিন করবেনা।

আমি-ওকে।

তন্ময়-এসব তোমার মুখের কথা,,,(রেগে)

আমি-তো কি বলবো??

তন্ময়-তুমি না আমাকে ভালোই বাসো না।

আমি-কি বললেন আপনি??(রেগে)

তন্ময়-ওই কাকে রাগ দেখাচ্ছো তুমি??

আমি-আপনি এটা বলতে পারলেন।

তন্ময়-স্যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম।

আমি-এই সামান্য বিষয়ের এটা বলতে পারলেন।

তন্ময়-এই সামান্য বিষয়ের জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে.(আমার কাছে এসে)

আমি-আপনি,,,

অনু-তনু,,(দরজায় নক করে)

আমি-কে???(ভয়ে)

অনু-আমার কন্ঠ ভুলে গেছিস??

আমি-ওহ আপু,,,(গিয়ে দরজা খুলে)সরি,,,

অনু-কিছু হবেনা।

আমি-কখন এলে তুমি??

অনু-এইতো মাত্র এলাম।

আমি-আদিল ভাইয়া এসেছে??

অনু-প্রথমে আসবেনা বলেছে বাট পরে যখন বলকাম তুই এসেছিস তখন আসবে বলেছে।

আমি-ওহ,,,ভালো।

অনু-তন্ময় এসেছে নাকি??

আমি-হুম রুমে।

অনু-আদিল যখন এসেছে আদিলের কাছে পাঠিয়ে দে।

আমি আর আপু রুমে বসে বসে গল্প করতে লাগ লাম।আর তন্ময়ের সাথে আদিল ভাইয়াকে বাইরে পাঠিয়ে দিলাম।

———

অভি-মা এগুলা তো তন্ময় কিনেছিলো।(তন্ময়ের কিনা খেলনা গুলো দেখে দেখে)

সাবিয়া-হ্যাঁ ও ওর ছেলে মেয়ের জন্য কিনেছিলো। কিন্তু তারা তো আসেনি তাই তোকে দিতে বলেছে।কারণ তুই ও তো সামনে বাবা হবি।আর তোর ছেলে-মেয়ের জন্যও খেলনা কিনতে হবে তাই।

অভি-তন্ময় ও পারে বটে বাচ্চা আসার আগে এত খেলনা কিনে ফেললো না জানি বাচ্চা আসার পর কত কি কিনে ফেলতো।

সাবিয়া-কিন্তু তারা তো আসলো না।

অভি-মা আমার সন্তান তন্ময়েরও সন্তান,তন্ময়ের সন্তান আমারও সন্তান এটা সবসময় মনে রেখো।

সাবিয়া-সেদিন ডক্টর যখন তন্ময় কে বললো যে বাচ্চাটা আর বেঁচে নেই তখন তন্ময় তোর বাবাকে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো।

অভি-সেদিন ওরা দুজনই খুব বড় একটা শক পেয়েছিলো।তন্ময় খুব খুশি ছিলো বাবা হবে জেনে।কিন্তু মা এতে কি তনুর দোষ ছিলো???

সাবিয়া-আমি জানিনা তবে ওরা এখন অকেন চিন্তিত এই বিষয় নিয়ে।কিন্তু এখন ওদের আগের মতো কিভাবে যে নরমাল করি।

অভি-আচ্ছা মা সাড়ে তিন মাস পরে নিসার ডেলিভারি ডেট আর তার কিছু দিন পরই তন্ময় তনুর বিবাহ বার্ষিকী তাইনা???

সাবিয়া-হ্যাঁ???

অভি-এতোকিছুর মধ্যে ওরা হয়তো ওদের বিবাহ বার্ষিকী টা ভুলে যাবে।

সাবিয়া-মানে???

অভি-আমরা ওদেরকে সারপ্রাইজ দিবো।

সাবিনা-তাহলে কি ওরা স্বাভাবিক হবে?

অভি-আলবাদ হবে।

বিকালে****

আমি,আপু আর আদিল,তন্ময় একসাথ পাশা পাশি আমাদের ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছি।আসলে আমরা একে অপরের সাথে গল্প করছিলাম।হঠাৎ আদিল ভাইয়া আমার দিকে প্রশ্ন জুরে দেয়।

আদিল-তনু তুমি এখন ঠিক আছো তো??

আমি-আমার আবার কি হয়েছে???

আদিল-আরে তোমার বেবি মিসক্যারেজ হয়ে গেছিলো না তাই বললাম।

আমি-(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)হুম এখন ঠিক আছি।

আদিল-আসলে বেবিই এমন,,,যে সবাই একসাথে হাসায় ও আবার সবাইকে একসাথে কাঁদায় ও।

অনু-কাঁদায় কিভাবে??

আদিল-যেভাবে তনু আর তন্ময় কেঁদেছে সেভাবে কাঁদায়।

তন্ময়-ওসব কথা তুলোনা আদিল।

আদিল-আমি ওসব কথা তুলছিনা বাট কিছু কথা বলছি মন দিয়ে শুনো।

তন্ময়-কি বলো,,

আদিল-যখন কেও হঠাৎ করে শুনে যে সে মা ও বাবা হতে চলেছে তখন সেই মুহুর্ত টাই অন্য রকম।তাইনা তনু??

আমি-হুম।

আদিল-তখন তারা এতো খুশি হয় যে বাচ্চা আসার আগেই তার জন্য সব ব্যবস্থা করে ফেলে।
কিন্তু একবারও এটা ভাবেনা যে যার জন্য এসব করছি সে কি আদো আসবে।আর যখন শুনেপ বেবি মারা গেছে বা মিসক্যারেজ হয়ে গেছে তখন শুধু তারা নিজেদের দোষ দিতে থাকে।তারা ভাবে তাদের অবহেলার কারণে তাদের বাচ্চা মরেছে।তোমরা ও নিশ্চই এমন ভেবেছিলে তাইনা।

তন্ময় এবার আমাকে কিছু না বলে টেনে রুমে নিয়ে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়।

তন্ময়-আদিল যা বলেছে তা কি সত্যি তনু??(করুণ চোখে)

আমি-কি সত্যি??

তন্ময়-আমাদের সন্তানের মৃত্যুর জন্য আমরা দায়ি নই।

আমি-জানিনা।(বলে চলে এলাম)

সাড়ে তিন মাস পরঃ-

আমরা সবাই হাসপাতালে বসে আছি।আজ নিসা ভাবীর ডেলিভারি হচ্ছে।আমরা প্রায় অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে আছি।বেশ কিছুক্ষণ পর ডক্টর একটা মেয়ে শিশুকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হল।

ডক্টর-অভিনন্দন মিঃ অভি আপনি একটা কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন।(বাচ্চাকে কোলে দিয়ে)

অভি ভাইয়ার বাচ্চাকে একে একে সবাই কোলে নিচ্ছে।আমি অবাক হয়ে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছি।উনি আজকে অনেক খুশি হয়তো অভি ভাইয়ার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করছে।তন্ময় যখন অভি ভাইয়ার মেয়েকে কোলে নিয়ে দুশটামি করছিলো তখন আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিলো।কারণ আজ আমার জন্য তন্ময়ও এই মুহুর্ত টা থেকে মুক্ত।তন্ময় হঠাৎ আমার সামনে এসে বাচ্চাকে আমার সামনে ধরে।

তন্ময়-তনু ওকে কোলে নাও।

আমি যেই খুশিমনে বাচ্চা টিকে নিতে যাবো ওমনি আমার মাথায় একটা কথা আসে যার জন্য আমি হাতটা সাথে সাথেই সরিয়ে নিই।

-চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে