#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৪
#Jechi_Jahan
আমি বাড়ীর দিকে রওনা দিচ্ছি। আজ আমার এত খুশি লাগছে যে বলে বুঝাতে পারবোনা।বাড়ীতে পৌঁছে আমি সোজা রুমে চলে গেলাম।রুমে গিয়ে দেখলাম তন্ময় চিন্তিত মুখে বিছানার উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে।আমি ওনার সামনে যাওয়ার সাথেই উনি উঠে আমাকে জরিয়ে ধরে।
তন্ময়-তুমি আমাকে জ্বালাচ্ছো তনু।(রেগে)
আমি-মানে???
তন্ময়-কালকে নাহয় তারাহুরোর জন্য জানিয়ে যেতে পারলেনা যে তুমি বাইরে যাচ্ছো।কিন্তু আজ কে কি হলো যে তুমি জানাতে পারলেনা?
আমি-সরি!!(মাথা নিচু করে)
তন্ময়-তোমার এমন বেখেয়ালি কাজের জন্য তোমাকে থাপ্পড় মারা উচিত।
আমি-বললাম তো সরি।
তন্ময়-আচ্ছা ছাড়ো,,,,কোথায় গিয়েছিলে???
আমি-গিয়েছিলাম কোথাও একটা।
তন্ময়-বলবে???(রেগে)
আমি-বলছিলাম কি খাটটা বেশি ছোট না।
তন্ময়-ছোট হলেও তুমি আর আমিই তো।আর কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছো কেনো???
আমি-তন্ময়””(তন্ময়ের গলা জরিয়ে ধরে)
তন্ময়-কি???
আমি-খাটটা আসলেই ছোট।
তন্ময়-আমরা দুজনই তো সমস্যা নেই।
আমি-যদি আরেকজন আসে???
তন্ময়-আরেকজন আবার কে আস…..
উনি আর কিছু বলতে পারলেন না চুপ হয়ে গেলেন।হয়তো ভাবছেন এ কথার মানে কি।হঠাৎ তন্ময় চোখ দুটো পুরো রসগোল্লার মতো করে ফেললো।উনি এখন কি ভেবেছেন আমি জানিনা বাট যেটাই ভেবেছেন তাতে উনি বেশ অবাক
হয়েছেন এটা আমি বুঝতে পারছি।
আমি-তন্ময় কি হলো???
তন্ময়-এটা সত্যি???
আমি-কি সত্যি???
তন্ময়-এইযে আমার তানবি আর তৌহিদ আসবে।
আমি-আপনিই বলুন।(চোখ দুটো ছোট করে)
তন্ময় আবার আমাকে জরিয়ে ধরলো আর গালে অনবরত চুমু দিতে লাগলো।উনি এবার আমাকে ছেড়ে আমার পেটের কাছে বসে পেটে হাত দেয়।
তন্ময়-আমার বেবি বুঝি এখানে???
আমি-তন্ময় আপনি বাবা হবেন।
তন্ময়-চলো সবাইকে গিয়ে বলি।
আমি-এখনই???
তন্ময়-আরে চলো তো।(বলে নিচে নিয়ে গেলো)
অভি-ওই এভাবে আসছিস কেনো তুই??
তন্ময়-বাকিরা কই??
জেনি-বাকিরা বলতে???
তন্ময়-মা বাবা আর জেঠা জেঠি।
ইভা-ওনারা তো নিজেদের রুমে।
তন্ময়-জেনি গিয়ে ডেকে আন।
জেনি-কেনো??
তন্ময়-প্লিজ ডেকে আননা।
জেনি-হুম।(বলে সবাইকে ডেকে আনে)
রহমান-কিরে সবাইকে ডাকলি??
তন্ময়-আগে বসো তারপর বলছি।
জেঠি-বল কি বলবি???
তন্ময়-বাবা আমি বাবা হতে চলেছি।
রহমান-কি???
তন্ময়-হ্যাঁ বাবা তনু আজকে বলেছে।
সাবিয়া-এটা সত্যি???(তনুর কাছে গিয়ে)
আমি-আজকে রিপোর্টে দেখেছি।
অভি-আরেহ দুই ভাই একসাথে বাবা হবো।
এই বিষয় নিয়ে সবাই খুব খুশি হলো।কিন্তু একটা মানুষ খুশি হতে পারলো না আর সে হলো ইমন।ও এটা বিশ্বাসই করতে পারছে না যে ওর তনয়া অন্য কারো সন্তানের মা হতে চলেছে।এই টপিক নিয়ে সবাই অনেকক্ষণ ধরে কথা বললো।
রহমান-তন্ময়!!!
তন্ময়-হুম বাবা।
রহমান-তোদের বিয়ের পর তনু শুরু একবার ওর বাড়িতে গিয়েছিলো এরপর আর কোনোদিন যায়নি।তো তোরা আজ তনুর বাড়ীতে গিয়ে এই খুশির খবর দিয়ে আয় এখন তো অনুও আছে।
আমি-সত্যি ওখানে যাবো বাবা???
তন্ময়-আমি নিয়ে যাবো বাবা।
সাবিয়া-তাহলে তোরা এখনই চলে যা।
আমি-আমি এখনি রেডি হয়ে আসি।(বলে দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উঠে চলে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ তন্ময়ের ডাকে আমি থেকে যাই)
তন্ময়-পাগল হয়ে গেছো তুমি???
আমি-কেনো???
তন্ময়-এই অবস্থায় দৌঁড়াচ্ছো তুমি???(রেগে)
সাবিয়া-এই সময় সাবধানে চলাফেরা করতে তনু।নিসাকে দেখছোনা???
আমি-হুম মা।
সাবিয়া-তন্ময় তুই ওকে উপরে নিয়ে যা।
তন্ময়-হুম নিয়ে যাচ্ছি।
তন্ময় আমাকে নিয়ে রুমে আসলে আমি চেঞ্জ করতে ওয়াশরুমে চলে যাই।আমি চেঞ্জ করে এসে দেখি তন্ময়ও চেঞ্জ করে ফেলেছে।হয়তো রুমেই চেঞ্জ করে ফেলেছে।আমরা দুজন রেডি হয়ে এবার আমার বাড়িতে চলে আসলাম।
আবদুল-আরে তনু???
আমি-আসসালামু আলাইকুম আব্বু।
তন্ময়-আসসালামু আলাইকুম বাবা।
আবদুল-ওয়ালাইকুম আসসালাম।(অবাক হয়ে)
আমি-কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আব্বু???আমাদের দেখে খুশি হওনি???
আবদুল-এতদিন পর আসবি ভাবতে পারিনি।
তন্ময়-এতদিন পর এসেছি তো এসেছি একটা খুশির সংবাদ ও নিয়ে এসেছি।(মুচকি হেসে)
আবদুল-কি সংবাদ???
আমি-আব্বু ওসব পরে শুনবে আগে বলো আম্মু আর আপু কোথায়??
আবদুল-তোর আপুর রুমে আছে তারা।
আমি আর দেরি না করে হেঁটে হেঁটে আপুর রুমে চলে গেলাম।রুমের সামনে গিয়ে দেখলাম আপু আর আম্মু বসে বসে কথা বলছে।আমি ভেতরে না গিয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা বলা দেখছিলাম।ওদের দেখে আমার চোখে পানি জমে গেলো কারণ মা তো কখনো আমার সাথে কথা তো দূরে থাক বসতেও চাইতো না।
অনু-তনু!!!
আমি-হু হুম,,(আপুর ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে)
অনু-তুই কখন এলি??
আমি-মাত্রই এসেছি।
অনু-তো ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো এখানে আয়???(উঠে আমাকে ভেতরে নিয়ে)
আমি-আসসালামু আলাইকুম আম্মু,,
আম্মু-ওয়ালাইকুম আসসালাম(অন্য দিকে ফিরে)
আমি-কেমন আছো তুমি???(খাটে বসে)
আম্মু-যেমনই থাকি তোকে ভাবতে হবেনা।
অনু-মা কি শুরু করেছো বলোতো।
আম্মু-যা করছি ঠিকই করছি।
অনু-তনুর সাথে হয়তো তন্ময় ও এসেছে যাও ওদের গিয়ে চা-নাস্তা দাও।আর আমাদের জন্য শুধু চা টা পাঠিয়ে দাও।
আম্মু-তোরা বস আমি আনছি।
অনু-কিরে কেমন আছিস???
আমি-ভালো।(মাথা নিচু করে)
অনু-তন্ময় এসেছে তোর সাথে???
আমি-হুম এসেছে।আচ্ছা আদিল ভাইয়া কই???
অনু-ও ওর বাড়িতে গেছে।
আমি-তোমাকে এখানে রেখে???
অনু-বলেছে মায়ের কাছে কিছুদিন থেকে যাও।
আমি-ওহহ ভালো।
অনু-তুই মন খারাপ কেনো করছিস??তুই তো জানিসই যে মা তোর সাথে একটু এমন করেই।
আমি-কিন্তু কেনো করে???
অনু-বলতে বারণ আছে।
আমি-কেনো বারণ আছে আপু আমি কি ছোট বেলায় কোনো ভুল করেছি যার জন্য এমন হচ্ছে।
অনু-অত কিছু বলতে পারবোনা।
আমি-আপু তুমি অন্তত এমন করো না।
অনু-ওসব ছাড়তো,,,আচ্ছা হঠাৎ এখানে কিভাবে আসা হলো বল।
আমি-এমনে এসেছি।
অনু-না কারণ ছাড়া তো তন্ময় তোকে আনবে না।
আমি-একটা নিউজ দিতে এসেছিলো।
অনু-কি নিউজ???
আমি-আছে একটা পরে বলবো।
অনু-মজা কেনো করছিস বল না।
আমি-তুমি খুব তাড়াতাড়ি খালামণি হবে।
অনু-যাহ মজা করছিস তাই না।
আমি-আমি সত্যি বলছি আজকে রিপোর্ট এসেছে
অনু-তারমানে তুই মা হবি।
আমি-হুম!!(মুচকি হেসে)
অনু-তন্ময় খুশি তো???
আমি-এ কথা বলার পর উনি আমার সাথে যা যা করেছে তা বললে তুমি হাসি থামাতে পারবেনা।
অনু-কেনো কি করেছে???
এরপর আমি আপুকে তন্ময়ের কথা বলতে লাগলাম।যখন ও বাবা হবে শুনেছিলো তার পরের ঘটনা গুলো।এসব বলার সময় হঠাৎ মা চা নিয়ে রুমে আসে।চা টা আমার দিকে এগিয়ে দেয় আর আমিও চা নিয়ে বসে থাকি।খেয়াল করে দেখি মা আমার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রয়েছে এটা অবশ্য আপুও খেয়াল করে।
অনু-আম্মু কি হয়েছে??
আম্মু-হু হুম কিছু কি বলেছিস??
অনু-তুমি তনুর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো???(মুচকি হেসে)
আম্মু-কই তাকিয়ে আছি???
অনু-আচ্ছা কোনো খবর শুনেছো কি???
আম্মু-হুম নিচে মাত্র শুনে আসলাম।
অনু-খুশি হয়েছো???
আম্মু-খুশি না হওয়ার কি আছে।(আমার দিকে তাকিয়ে)
অনু-খুশি হলেই ভালো।
আমি-আপু আমি না কিছুক্ষণ পর চলে যাবো।তুমি আমার সাথে একটু ছাদে চলোনা অনেকদিন হয়েছে ছাদে যাইনি।
অনু-কিছুক্ষণ পরই চলে যাবি।
আমি-হুম!!!এখানে থাকলে মা মন রাগ করবে।
অনু-আম্মু তো রাগ করবেই তোর থাকা তো পছন্দ করেনা তাই।(আম্মুর দিকে তাকিয়ে)
আমি-আরে আমি আম্মুর কথা বলিনি তন্ময়ের মায়ের কথা বলেছি।
অনু-ওহ বুঝেছি তোর ওই মা রাগ করবে।
আমি-চলোনা ছাদে যাই।
অনু-চল!!!(বলে আমাকে সহ ছাদে নিয়ে গেলো)
——-
ইমন-না না তনু এটা করতে পারেনা।ও কিভাবে তন্ময়ের সাথে সংসার করছে।তন্ময়কে আমি যা দেখিয়েছি আর যা বুঝিয়েছি তাতে তো তন্ময়ের তনুকে মেনে নেওয়ার কথা না।(নিজের রুমে দাঁড়িয়ে একা একা নিজেকেই এসব বলছে)
জেনি-ইমন ভাইয়া???
ইমন-জেনি তুমি এখানে???
জেনি-কি এমন করেছিলে যে ভাইয়া ভাবীকে মেনে নিতো না???
ইমন-কি কি বলছো এসব??
জেনি-আমি যাওয়ার সময় সব শুনেছি ভাইয়া।
ইমন-কি কি শুনেছো তুমি যে এসব বলছো।
জেনি-এই যে তুমিই ভাবীর এক্স।
ইমন-তোমার ভাবীর এক্সও আছে।
জেনি-ভাবী আমায় তোমার ব্যাপারে সব বলেছে।
ইমন-আজে বাজে কথা বলবেনা জেনি যাও এখান থেকে।
জেনি-আমি সব রেকর্ড ও করেছি ভাইয়া।(মোবাইল দেখিয়ে)তাই সব সত্যি বলে দাও।
ইমন-কি সত্যি জানতে চাইছো তুমি??
জেনি-ভাইয়া প্লিজ নাটক করোনা।আমি কি জানতে চাইছি এটা তুমি ভালো করেই জানো।
ইমন-তাহলে তুমি বুঝে গেছো যে আমিই তনুর সেই ব্যর্থ প্রেমিক যে তিন বছর আগে তনুকে নিজের না করে পালিয়ে গিয়েছিলো।
জেনি-কেনো ছেড়ে চলে গিয়েছিলে ভাইয়া???
ইমন-কারণ আমি নিরুপায় ছিলাম।
জেনি-কেনো???
ইমন-আমি তনুকে ভালোবাসলেও কেনো জানিনা ওকে আমার নিজের লেভেলের মনে হতো না।
জেনি-মানে???
ইমন-ওকে কতই না ভালোবেসে ছিলাম বাট পর মুহূর্তে ওকে আমার অসহ্য মনে হতো যার জন্য ওকে ছেড়ে আমি চলে আসি।
জেনি-ভাবীকে তো একবারও জানাওনি।
ইমন-হুম একবারও জানাইনি উল্টো যখন ও জানতে চাইতো তখন আমি ওকে বলতাম না।
জেনি-কখনো মিসও করোনি তাইনা???
ইমন-প্রথম এক বছর ওকে ভুলে শান্তিতে ছিলাম।কিন্তু পরে পরে ওর কথা খুব মনে পরতো।যখন বুঝতে পারি আমি ভুল করেছি ঠিক তখনই বাবা ইভার সঙ্গে আমার বিয়ের কথা বলে।আমি ইভা কে বিয়ে করেও তনুকে ভুলতে পারিনি।
জেনি-একদম ডং করোনা তুমি যদি সত্যিই ভাবী কে ভালোবাসতে তাহলে ইভার সাথে সুখে সংসার করতে না।
ইমন-আমি জাস্ট তনুকে ভুলতে চেয়েছিলাম।বাট ও আমার একটা জিদ ছিলো।যে জিদটা ওকে অন্য কারোর হতে দিতে চাইতো না।
জেনি-মানে???
ইমন-আমার বিয়ের পর আমি আমার এক জুনিয়রকে তনুর সব খবর দিতে বলি।বলতে পারো ওই জুনিয়র ছেলেটা তনুর গার্ড ছিলো।তনুও ওই ছেলেটাকে চিনতো।তো যেদিন তন্ময় আর অনুর বিয়ে হবে সেদিন তনু কেনো জানি অনুর গয়না খুলে দিচ্ছিলো।আর এটা ওই ছেলেটা ভিডিও করে আমায় পাঠিয়ে ছিলো।
জেনি-তারপর???
ইমন-যখন জানা হয় অনু পালিয়ে যাওয়ায় কারণে তনুর সাথে তন্ময়ের বিয়ে হয়েছে তখন আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।যতই হোক আমি তনুকে অন্য কারো হতে দিতাম না।তাই আমি তন্ময় কে আমার একটা নতুন নাম্বার থেকে তনুর ওই ভিডিও টা পাঠাই।
জেনি-কোন ভিডিও???
ইমন-যখন তনু অনুর গয়না খুলছিল সেই ভিডিও
জেনি-ওই ভিডিও পাঠিয়ে কি করলে??
ইমন-ওই ভিডিও পাঠিয়ে আমি মেচেজে লিখে ছিলাম “তনু তোমাকে বিয়ে করার জন্য অনুকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করছে” আর তন্ময় ও ওটা বিশ্বাস ও করে ফেলে।
জেনি-ছিহ নিজে তো ভালোবাসতে পারলে না উল্টো আমার ভাই টাকেও ভালোবাসতে দিলে না।তুমি আসলে ঠিকই বলেছো ভাবী তোমার জিদ ছিলো ভালোবাসা ছিলো না।
ইমন-যখন কাউকে সত্যিকারে ভালোবাসবে তখন বুঝতে পারবে আমি এমনটা কেন করেছিলাম।(বলে চলে যেতে লাগে)
জেনি-আমি সব ভাইয়া আর ভাবীকে বলে দিবো।
ইমন-বলার আরো অনেক সময় আছে কিন্তু এখন যদি তুমি বলতে চাও তাহলে আমি বলবো বলার জন্য এটা সঠিক সনয় নয়(বলে চলে গেল)
———-
আমি-তন্ময় ছাড়ুন কি করছেন??
তন্ময়-কেনো কি হয়েছে???
আমি-ছাদে যে কেউ চলে আসতে পারে আর আপনি আমাকে এভাবে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলেন।(ওনাকে সরানোর চেষ্টা করে)
তন্ময়-আচ্ছা তনু আমার কোলে কি তৌহিদ আসবে নাকি তানবি আসবে???
আমি-সেটা আমি কিভাবে বলবো মাত্র তো তিন সপ্তাহ হয়েছে এখনই বুঝা যাবে নাকি।
তন্ময়-মা রা তো বুঝে।
আমি-আমি তো বুঝতে পারছি না।
তন্ময়-তুমি একটা বোকা।
আমি-তন্ময় বাবা…..
তন্ময়-বাবা কই কই??(আমাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে)
আমি-এখন যদি সত্যি থাকতো??
তন্ময়-তোমাকে তো.(এগিয়ে আসতে নিয়ে)
আবদুল-তন্ময়!
তন্ময়-হুম বাবা।(পেছনে ফিরে)
আবদুল-তোমাকে তোমার মা ডাকছে।
তন্ময়-হুম বাবা যাচ্ছি।(বলে চলে গেলো)
আবদুল-তুই এখানে কি করছিস মা??
আমি-কিছুনা বাবা এমনে দাঁড়িয়ে আছি।
আবদুল-জানিস তোর মা খুব খুশি তুই মা হবি জেনে।
আমি-আমার তো মনে হয়না।
আবদুল-সত্যি খুব হয়েছে।
আমি-আচ্ছা বাবা মা আমার সাথে এমন করে কেনো???
আবদুল-জানিনা।
আমি-বাবা তুমি অন্তত সত্যিটা বলো।
আবদুল-তোর এই মায়ের ভালোবাসা না পাওয়ার জন্য একমাত্র দায়ী আমি।
আমি-কেনো বাবা???
আবদুল-যেহেতু তুই ও মা হতে চলেছিস তো তোকে আজ সত্যিটা বলেই দি।
আমি-কি সত্যি???
আবদুল-জানিস তোর মা ছোটবেলায় তোকে খুব ভালোবাসতো।কিন্তু এখন ভালোবাসলেও সেটা প্রকাশ করে না শুধুমাত্র আমার কারণে।
আমি-কি করেছিলে তুমি???
এরপর বাবা আমাকে যা যা বললো তা শুনে আমার নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে।
-চলবে
#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৫
#Jechi_Jahan
আমি বাবার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।আজ আমার নিজের দোষের জন্যই হয়তো মা এর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হলাম।
আব্বু-কি ভাবছিস???
আমি-এমন কেনো করলে তুমি???
আব্বু-তুই আমার কলিজা ছিলি সেদিন যদি তোর কিছু হয়ে যেতো তখন আমি কি করতাম।।
আমি-তাই বলে মাকে ডিভোর্স দিতে চাইছিলে?
আব্বু-তুই বল তোর মা যদি তোর প্রতি খেয়াল রাখতো তাহলে কি সেদিন তোর ওই এক্সিডেন্টটা হতো।
আমি-এটা তো ঠিক ছিলোনা।
আব্বু-বাদ দে!!!যা অনুর কাছে যা।
আমাকে আব্বু আপুর রুমে দিয়ে চলে গেলো।আপু আদিল ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলো তাই আমি কিছু না বলে বসে ছিলাম।
অনু-সরি রে একটু কথা বলছিলাম।
আমি-হুম!!!
অনু-মা আবার কিছু বলেছে??
আমি-না।
অনু-তাহলে মন খারাপ কেনো তোর???
অামি-আপু আমি সত্যিটা জেনে গেছি।
অনু-কে বলেছে তোকে???
আমি-বাবা!!!
অনু-তাহলে বুঝেছিস দোষটা কার???
আমি-আমারই তো।
অনু-তনু তুই ক্লাস থ্রিতে পড়া একটা মেয়ে ছিলি তখন এতে তোর দোষ কিভাবে থাকতে পারে।
আমি-আমার জন্যই তো….
অনু-শুন তোকে স্কুল থেকে আম্মু বাড়ীতে আনার সময় তোর এক্সিডেন্ট হয়। কিন্তু তোর এক্সিডেন্টে না তোর দোষ ছিলো আর না মায়ের।কিন্তু বাবা ভেবেছে মায়ের অসাবধানতার জন্য তোর এক্সিডেন্ট হয়েছে।
আমি-বাবা তো মাকে ডিভোর্স ও দিতে চেয়েছিল।
অনু-বাবা তোকে খুব ভালোবাসতো তাই রাগের মাথায় মাকে থাপ্পড় মারে আর শেষে ডিভোর্সের কথা বলে।তাই মা এসবের জন্য তোকে দায় করে।
আমি-আমি কি আর মাকে পাবোনা?(কান্না করে)
অনু-জানিস আজ মা অনেক খুশি হয়েছে তোর মা হওয়ার খবর শুনে।
আপুর কথাটা শুনে আমি মুচকি হাসলাম।হঠাৎ আমার ফোনে একটা মেচেজ আসে।মেচেজটা দেখে আমি খুব ঘাবড়ে যাই।
আমি-আপু আমি এখন চলে যাবো।
অনু-কি এখনই চলে যাবি??
আমি-হুম আপু আমি আর থাকতে পারবোনা।(বলে রুম থেকে বের হয়ে তন্ময়ের কাছে গেলাম)
তন্ময়-আবার জোরে জোরে হাঁটছো??(রেগে)
আমি-সরি!!!আমি বাড়ী যাবো।
তন্ময়-কি???
আমি-আমাকে এক্ষুনি বাড়ী নিয়ে চলুন।
তন্ময়-আর কিছুক্ষণ থাকো।
আমি-না তন্ময় আমি আর থাকতে পারবোনা।
তন্ময়-তনু তোমার কি শরীল খারাপ করছে?
আমি-না আমি ঠিক আছি।তন্ময় প্লিজ চলুন।
আমার একপ্রকার জোর করাতে তন্ময় আমায় বাড়ীতে আনতে রাজী হয়।আমরা আব্বু আর আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।আমি বাড়ীতে এসে কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা
জেনির রুমে চলে যাই।রুমে গিয়ে দেখলাম জেনি চিন্তিত হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি-জেনি!!!
জেনি-ভাবী তুমি এসেছো???(আমার কাছে এসে)
আমি-তখন মেচেজে এভাবে আসতে বললে তো আমি আসবোই।”ভাবী তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ীতে আসো নাহলে আমি বিপদে পড়ে যাবো আর এই বিপদ থেকে তুমিই বাঁচাতে পারবে”।এভাবে বলতে তো যে কেওই চলে আসবে।
জেনি-সরি!!!তোমাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করি।
আমি-করো!!!
জেনি-ইমন ভাইয়াকে তুমি আগে থেকে চিনো???
আমি-(জেনি কি সত্যি টা জেনে গেছে)
জেনি-ভাবী আমি সব জানি।
আমি-কে বলেছে তোমাকে???
জেনি-ইমন ভাইয়া নিজে।
আমি-কি কি বলেছে???
জেনি-আমি বলবোনা তুমি শুনো।
এটা বলে জেনি ওর ফোন থেকে ইমনের কথা গুলোর রেকর্ড শুনাতে লাগলো তনুকে।তনু সব শুনে রাগে চোখ থেকে পানি বের হয়ে যায়।
আমি-ও এমন করবে আমি কল্পনাও করিনি।
জেনি-ভাবী তুমি ইমন ভাইয়া থেকে দূরে থেকো।
আমি-ও কি আমার ক্ষতি করবে???
জেনি-ভাইয়া তোমাকে এখনো ভালোবাসে তাই তোমার উপর খুব দূর্বল।তুমি যদি ভাইয়ার থেকে দূরে দূরে থাকো তাহলে ভালো হবে।
আমি-আচ্ছা!!(বলে দুজন কিছুক্ষণ চুপ ছিলাম)
জেনি-চলো আজ কিছু রান্না করি।
আমি-কি রান্না করবে???
জেনি-তেহারি খেতে ইচ্ছে করছে।
আমি-তাহলে চলো তেহারি রান্না করি।
জেনি-ওয়েট!!
আমি-কি??
জেনি-তোমার মনে হয় তোমাকে এই অবস্থায় কেও রান্না করতে দিবে।
আমি-কেও জানবে না চলো।
আমি আর জেনি রান্নাঘরে এসে তেহারির জন্য সব জিনিস রেডি করে রাখলাম।যখন আমরা তেহারি রান্না করতে শুরু করলাম তখন ভাবী রান্না করে আসে।রান্না ঘরে এসে আমাদেরকে দেখে ভাবী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
আমি-ভাবী তুমি এখানে,,,,কিছু লাগবে??
নিসা-না!!!কিন্তু তুমি কখন এলে???
আমি-বেশ কিছুক্ষণ আগে।
নিসা-আমাকে তো কেও বলেও নি।
জেনি-তেমন কেও জানেওনা তাই বলেনি।
নিসা-তা ঠিক আছে কিন্তু তুমি রান্না ঘরে???
আমি-তেহারি রান্না করছি।
নিসা-আসতে না আসতেই রান্না ঘরে বাহ।
জেনি-আমি জানতাম এমন হবে।
নিসা-তো রান্না করতে দিচ্ছো কেনো??
জেনি-ভাবী বলেছিলো কিছু হবেনা।
নিসা-তনু আমি তন্ময়কে বলবো???
আমি-ভাবী কিছু হবেনা।
নিসা-তনু রিপোর্টে বলেছে তোমাকে তিন মাস রেস্টে থাকতে হবে কারণ তুমি অনেক দুর্বল।আর তুমি এখন রান্না করছো।
আমি-আজকেই লাস্ট।
নিসা-আমার কিছু বলার নেই।(বলে চলে গেলো)
জেনি-ভাবী আসলেই তুমি রুমে যাও।
আমি-জেনি এবার তুমিও।
জেনি-না ভাবী আমার কথাটা শুনো।
আমি-ওকে আমি রান্না করব না শুধু হেল্প করব।
জেনি-তোমাকে সেটাও করতে হবেনা তুমি যাও।
আমি-জেনি প্লিজ।
জেনি এবার কিছু না বলে রান্না করতে শুরু করল আর আমি ওর রান্না দেখছি।রান্না প্রায় শেষের দিকে আসলে আমি সালাদের জন্য শশা কাটতে লাগলাম।শশা কাটতে গিয়ে ভুলবশত আমার হাতটা একটু কেটে যায়।জেনি এবার রেগে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে রুমে পাঠিয়ে দিলো।
আমি রুমে এসে তন্ময়কে কোথাও দেখালাম না।আমি বারান্দায় এসে দেখি উনি দাঁড়িয়ে আছে।
আমি-তন্ময়!!!
তন্ময়-কি??(গম্ভীর হয়ে)
আমি-কি হয়েছে আপনার???
তন্ময়-কি হবে??(গম্ভীর হয়ে)
আমি-না মনে হচ্ছে যেনো রেগে আছেন?
তন্ময়-আমি রেগে থাকলেও তোমার কি?(রেগে)
আমি-আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?
তন্ময়-তোমার উপর কেনো রেগে থাকবো।
আমি-আপনি এমন করছেন কেন আমার সাথে?
তন্ময়-কেমন করছি???(রেগে আমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে)
আমি-আহ!!!তন্ময় লাগছে।
তন্ময়-এখন তোমার লাগছে যখন দৌড়াও,হাত কাটো,রান্না করো তখন লাগেনা।(রেগে)
আমি-আপনি এই সামান্য ব্যাপারটার জন্য….
তন্ময়-হ্যাঁ আমি এই সামান্য ব্যাপার টার জন্য এমন করছি।কারণ আমার আমাদের সন্তানের জন্য চিন্তা হয়।কিন্তু তোমার আমাদের সন্তানের জন্য একটুও চিন্তা হয় না।
আমি-তন্ময় আপনি এসব…
তন্ময়-আসলে আমার কি মনে হয় জানো যে তুমি আমাদের সম্পর্ক টাকে এখনো মেনে নিতে পারোনি।তাই আমার আমাদের সন্তানের খেয়াল রাখছোনা কারণ তুমি তো আমাকেই মানোনি আমার সন্তানকে কি মানবে।
আমি-আপনি আমাকে এটা বলতে পারলেন।আর তাছাড়া এমন ছোট খাটো কাজে তো বেবির কিছু হয়না তন্ময়।
তন্ময়-যদি তোমার কিছু হয়ে যায় ডক্টর বলেছেনা তিন মাস রেস্টে থাকতে।কিন্তু তুমি কি রেস্টে থাকছো??তনু আমি শুধু আমাদের সন্তানের চিন্তা করছিনা আমি তোমারও চিন্তা করছি।কিন্তু আমার মনে এটা বুঝার মতো সেই বুদ্ধিটা এখনো তোমার হয়নি।(বলে চলে গেলো)
তন্ময়ের কথা গুলো তেতো হলেও সত্যি ছিলো।একজন বাবা অবশ্যই চাইবেনা তার সন্তান আর স্ত্রীর কোনো ক্ষতি হোক।এটা আমি এখন বুঝতে পেরেছি বলে তন্ময়ের কথাগুলোয় আমার আর কষ্ট হচ্ছে না।কিন্তু তন্ময় যে সেই বাড়ী থেকে বের হলো আর ফিরলো না।রাতে আমি ওনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম।হঠাৎ ঘুম এর মধ্যে মনে হলো কেও আমার পেটে মাথা রেখে শুয়ে আছে।এমন হওয়ায় আমার খুব ভয় হতে লাগলো।একে তো তন্ময় নেই তার উপর কে না কে আমার পেটের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।আমি অনেক ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
আমি-ক কে??(চোখ বন্ধ করেই)
তন্ময়-তুমি জেগে আছো??
আমি-তন্ময়!!(উঠে বসে)
তন্ময়-হুম আমি!!
আমি-আপনি কোথায় গিয়েছিলেন??(তন্ময়কে জরিয়ে ধরে)
তন্ময়-তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো??
আমি-আমি কত অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য।
তন্ময়-সরি!!!
আমি-আপনি কেনো সরি বলছেন,,,,আমার সরি বলা দরকার,,,আমি সরি তন্ময়।আমার নিজের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত ছিলো।
তন্ময়-না আমার সরি বলা দরকার।তোমাকে এমন করতে দেখে আমার রাগ উঠে যায়।আর রাগের মাথায় তোমাকে আমি কি না কি বলে ফেলেছি বুঝতে পারিনি।সরি(জরিয়ে ধরে)
আমি-আমি কালকে থেকে রেস্টে থাকবো।
তন্ময়-প্রমিস….(হাত দিয়ে)
আমি-প্রমিস,,,(উনার হাতে হাত রেখে)
এভাবে দিন যেতে লাগলো আমার প্রেগন্যান্সির।তন্ময় সমসময় আমার খেয়াল রাখতো।বেড থেকে উঠতে দিতো না আর আমি উঠতাম না।আজ আমার প্রেগন্যান্সির সাড়ে ৩ মাস পার হয়েছে।এই সাড়ে দুই মাসে আমার খাওয়া দাওয়া সব রুমেই হয়েছে।মা আর জেনি রুমে এসে আমার সাথে গল্প করে যেতো।আমি এই রুমে থাকতে থাকতে পুরো বোর হয়ে গেছি।
আমি-তন্ময়”””
তন্ময়-বলো।(ফোন টিপতে টিপতে)
আমি-আমাকে একটু বাইরে নিবেন।
তন্ময়-কি??
আমি-আসলে অনেক দিন তো বের হইনি তাই।
তন্ময়-তো এখন তুমি বের হতে চাচ্ছো???
আমি-তিন মাস তো হয়েও গেছে।
তন্ময়-ওকে যেও।
আমি-তো চলুন।
তন্ময়-বলতে না বলতেই….
আমি-প্রথমে ছাদে যাবো।
তন্ময়-ওকে।
আমি আর তন্ময় ছাদে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি।
তন্ময় আমার পেটে হাত দিয়ে আমার সাথে গল্প করছে।আমাদের গল্পের মাঝে হঠাৎ ইমন আর নিহা আসে।ওরা আমাদের দেখে খানিকটা অবাক হয়।ইমন তো আগ বাড়িয়ে বলেই ফেলে।
ইমন-বাহ বাহ আমি তো ভেবেছি বেবি হওয়ার আগে আর রুম থেকে বেরই হতে পারবেনা।
নিহা-আহ চুপ থাকো,,,তা ভাইয়া আজ হঠাৎ ভাবীকে ছাদে আনলেন।
তন্ময়-নাছোড় বান্দা বলেছে তাই।
নিহা-হুম।
ইমন-আচ্ছা নিহা চলো ওদের মাঝে আর আমরা না আসি।(তনুর দিকে তাকিয়ে)
নিহা-হুম চলো।(বলপ ইমন সহ চলে গেলো)
তন্ময়-তনু!!!
আমি-হুম!!!
তন্ময়-আমি অধীর অপেক্ষায় আছি আমার বেবির কিক শুনার জন্য।
আমি-তাই!!!
তন্ময়-হুম।
আমি-চলুন নিচে যাই।
তন্ময়-ছাদে এসেছো তো নিচেও চলো।
আমি আর তন্ময় ছাদ থেকে নেমে যাই।নিচে যাওয়ার জন্য সিড়ির কাছে এসে আমি যেই পা বাড়াই ওমনি আমার পা পিছলে যায় আর আমি গড়িয়ে নিচে পরে যাই।তন্ময় আমাকে নীচে পরার আগেই ধরতে চেয়েছিলো কিন্তু ওনার ধরার আগেই আমি নিচে পরে যাই।আমার পেটটা সোজা গিয়ে মেঝের সাথে লেগেছে।আমি মেঝেতে শুয়া অবস্থায় পেটে হাত দিয়ে দিলাম।
-চলবে