তন্ময়ের তনু পর্ব-১৬+১৭

0
2983

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_১৬
#Jechi_Jahan

তন্ময় রুম থেকে চলে যাওয়ার পর আমি জেনির দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।জেনি আমার তাকানো দেখে মাথা শুধু এদিক ওদিক ঘুরায়।

নিসা-জেনি তুমি দিন দিন ফাজিল হচ্ছো।

জেনি-আরে আমি কি জানতাম নাকি যে ভাইয়া এতো রিয়েক্ট করবে।(ভয়ে)

অভি-তুই জানতি এই জন্যই তো আমাদেরকে এতোক্ষণ বারান্দায় লুকিয়ে থাকতে বলেছিস।

আমি-কি!!!(অবাক হয়ে)জেনি তুমি আমার সাথে এমন করতে পারলা।

জেনি-তোমার বর যে এমন করবে আমি জানতাম
নাকি।

অভি-আরে তুই জানতিস এই জন্যই তো এমন করলি ফাজিল।

নিসা-এই তুমি শুধু এমন করেছিস এমন করেছিস বলছো।কি করেছে ও?

অভি-জানো লাঞ্চের পরে ও আমাকে আর তন্ময় কে এই রুমে আনে।

নিসা-তারপর?

অভি-তারপর বলে কি যেনো একটা সারপ্রাইজ আছে আমাদের বারান্দায় লুকিয়ে থাকতে।

আমি-ভাইয়া জেনি বললো আর তোমরাও…..

অভি-আরে না তনু আমি তো লুকাতে চাইনি।তোমার ওই গুরুধর স্বামীই বলছিলো যে কি সারপ্রাইজ আমি দেখতে চাই।তাইতো বাধ্য হয়ে আমিও বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।

আমি-জেনি তুমিও না।(মনমরা হয়ে)

জেনি-সরি ভাবী।

তন্ময়-তনু….(রুম থেকে জোরে চিৎকার করে)

আমি-এই মরেছে(বলে দৌঁড়ে চলে যাই)

অভি-তোর জন্য এমন হচ্ছে।(জেনিকে মেরে)

জেনি-চুপ থাক আমি ভাবছি আরেকটা জিনিস।

নিসা-কি???

জেনি-ভাবীর এক্স এর কথা আমরা আরো আগে একবার তুলেছিলাম আর সেদিনও ভাইয়া শুনে ছিলো কিন্তু সেদিন এমন রিয়েক্ট করেনি।

অভি-তাহলে তুই বলতে চাস….

জেনি-ভাইয়ার মনে এতো জেলাস কোথায় থেকে এলোরে?

নিসা-জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।

জেনি-হা হা হা

অভি-এই চুপ কর।(ধমক দিয়ে)

***ওদিকে***

তন্ময়-কয়েকটা জামা আর কয়েকটা শাড়ী গুছাই নাও।

আমি-কেনো?

তন্ময়-যেটা বলেছি সেটা করো।

আমি-বাড়ী থেকে বের করে দিবেন????

তন্ময়-(রাগী চোখে তাকিয়ে আছে)

আমি-প্লিজ বলুন না কেনো গোছাবো।

তন্ময়-(কিছু না বলে চলে গেলো)

ওনার চলে যাওয়া দেখে আমার খুব রাগ হতে লাগছে।রাগের কারণে যেই ফোনটা আছাড়। মারতে যাবো ওমনি দেখি ফোনে কল এসেছে।

আমি-হ্যাঁ আপু বলো।

অনু-কেমন আছিস??

আমি-এইতো ভালো।তুমি?

অনু-আমিও আছি।

আমি-এভাবে বলছো কেনো?

অনু-এমনে একা একা ভালো লাগছে না।

আমি-আপু তুমি চলে আসো না।

অনু-দূর কি বলিস আদিল কে ছেড়ে আসবো?

আমি-ভাইয়া কে সহ নিয়ে আসো।বাড়িতে এসে সবাইকে বুঝিয়ে বললে সবাই তোমাদের ঠিকই মেনে নেবে।প্লিজ চলে আসো!!!

অনু-বলতে সহজ করতে কঠিন।

আমি-দূর!!!

অনু-এই তুই কাওকে বলিস নিতো যে তুই এতদিন আমাদের বাসায় ছিলি।

আমি-না বলিনি।

অনু-তন্ময় তোকে এখন ভালোবাসে তাই না?

আমি-ভালোবাসা না ছাই।

অনু-মানে?

আমি-আরে আমি জানিই না উনি আমাকে ভালো বাসে কিনা।হয়তো উনি নিজেও জানেনা।

অনু-ওওও!!!

আমি-তবে উনি তোমাকে খুব ভালোবাসত আপু।

অনু-ছাড়তো।

আমি-আপু তন্ময় আসছে রাখি।

অনু-ওকে সাবধানে থাকিস।

আমি-হুম তুমিও।(বলে ফোন কেটে দিলাম)

তন্ময়-কার সাথে কথা বলছিলে?

আমি-কারোর সাথে না।

তন্ময়-মিথ্যা কেনো বলো।

আমি-কথা বললেও আপনাকে কেনো বলবো।আমি কি আপনার গালফ্রেন্ড লাগি।

তন্ময়-বউ লাগো।

আমি-মানেন সেটা?(গম্ভীর হয়ে)

তন্ময়-আগে মানতাম না কিন্তু এখন ঠিকই মানি।

আমি-হুহ ডং।(বলে খাটে গিয়ে বসে পরলাম)

তন্ময়-তোমার তো চুল ভেজা।

আমি-তো??(পাত্তা না দিয়ে)

তন্ময় কিছু না বলে বারান্দা থেকে একটা টোয়ালে নিয়ে আমার পেছনে বসে।আর মাথার গোমটা সরিয়ে চুলগুলো মুচতে শুরু করে।কিছুক্ষণ মুচার পর উনি আমাকে একটা আজব প্রশ্ন করে।

তন্ময়-তনু।

আমি-হুম।

তন্ময়-আমার আর অনুর বিয়ের দিন তুমি কি কোনো ভাবে অনুকে বাড়ী থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলে?(চুল মুচতে মুচতে)

আমি-কি?(ওনার দিকে ফিরে)

তন্ময়-বলো??

আমি-এটা কেমন প্রশ্ন?(উঠে দাঁড়িয়ে)

তন্ময়-তুমি জাস্ট উত্তর টা দাও।

আমি-কোন বোন চাইবে তার বড় বোন বিয়ের দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাক।

তন্ময়-তুমি সাহায্য করোনি।

আমি-আমি উল্টো আপুকে পুরো বাড়ী খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি।

তন্ময়-তনু তুমি আমাকে সত্যিটা বলো।এখন তুমি আমায় সত্যি টা বললে কোনো সমস্যাই হবেনা কারণ আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি।

আমি-আপনি এসব কেমন কথা বলছেন?

তন্ময়-দেখো তনু আমি জানি তুমি অনুকে বিয়ের দিন পালিয়ে যেতে সাহায্য করছিলে যাতে আমায় বিয়ে করতে পারো।

আমি-পাগল হয়ে গেছেন আপনি?না জেনে না বুঝে কি একটা মিথ্যা দায় আমার উপর চাপিয়ে দিলেন।(কান্না করে)

তন্ময়-তনু তুমি সত্যি কিছু করোনি?(অবাক হয়ে)

আমি-এবার বুঝেছি!!!আপনি এতোদিন আমার সম্পর্কে এসব ভেবে বিয়ের দিন থেকেই এমন করেছিলেন তাইনা?(কান্না করে)

তন্ময়-তুমি আসলেই কিছু….

আমি-তন্ময় আপনি আমার সম্পর্কে এটা কেমনে ভাবলেন?(কান্না করে)

তন্ময়-সরি তনু!!!

আমি-আপনি এমন কেনো???প্রথমে কষ্ট দেন তারপর সরি বলেন।সরি বললেই কি সব সমাধান হয়ে যায়।এখন আবার বলবেন এটা আপনি ভুল করে বলে ফেলেছেন।(কান্না করে)

তন্ময়-তুমি যেটা ভাবছো ঠিক সেটাই।

আমি-কি???

তন্ময়-হুম!!!এখন কান্না থামাও।(আমার কাছে এসে আমার চোখের পানি মুচে জরিয়ে ধরে)

আমি-আপনি শুধু আমাকে কষ্ট দেন।

তন্ময়-কিছুক্ষন আগে তুমি আমাকে কষ্ট দিয়ে ছিলে তাই আমিও তোমাকে কষ্ট দিলাম।(মিথ্যা বলে কথাটা কাটিয়ে তো নিলাম।কিন্তু তনু যা বলছে তা তো আমার সত্যি মনে হচ্ছে।তাহলে ওই মেচেজটা আর ভিডিও টাকি মিথ্যে)

আমি-আপনাকে কষ্ট দিলাম???

তন্ময়-তখন যে তোমার এক্স এর কথা বললে।

আমি-এতে আপনার কষ্ট পাওয়ার কি আছে?

তন্ময়-তুমি আমার স্ত্রী তোমার মুখে অন্য একটা ছেলের কথা শুনলে আমার কষ্ট হবেনা।

আমি-এতো ডং কিভাবে পারেন?

তন্ময়-বিকালে একটু রেডি হয়ে থেকো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।(আমাকে ছেড়ে)

আমি-পারবোনা।(অন্য দিকে ফিরে)

তন্ময়-ঠিক আছে দেখা যাবে।

***সন্ধ্যায়***

আমি আর তন্ময় মাত্র বাড়িতে আসলাম।তন্ময় আজ আমাকে নিয়ে নদীর পারে ঘুরতে গিয়েছে।ওখানে উনি আমায় সাথে যা নয় তা করেছে আমার গায়ে নদীর পানি মেরেছে,সাত প্লেট পুচকা খাইয়েছে আরো কত কি।আমি একটু বিরক্ত ও ছিলাম বাট ভালোও লেগেছে।উনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন একেবারে ডিনার করে তারপর আসবে।কিন্তু আমি আমার শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে আসি।

সাবিয়া-কিরে এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি?

তন্ময়-ম্যাডামের শরীর খারাপ লাগছিলো।

সাবিয়া-ওমা কি হয়েছে?(আমার কাছে এসে)

আমি-না মা একটু মাথা ঘুরছিলো আর কিছু না।

সাবিয়া-মাথা ঘুরছিলো???

আমি-হুম!!!!

সাবিয়া-খুশির সংবাদ নাকি।(কানে কানে)

আমি-দূর মা কি বলো।

সাবিয়া-আমি দুশটামি করছিলাম।

তন্ময়-মা ভেতরে আসতে দাও।

সাবিয়া-হুম আয়।(তন্ময়কে সাইড দিয়ে)

তন্ময়-ওকে ফ্রেশ হয়ে এসে তারপর তোমার সাথে কথা বলতে বলো দেশের অবস্থা ভালো না।(উপরে উঠতে উঠতে)

আমি-(এমন হলে নিলেন কেনো)

সাবিয়া-আচ্ছা যা।

আমি-আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসি।

সাবিয়া-এই দাড়া একটু দেখি তোকে।

আমি-কি দেখবা???

সাবিয়া-তোকে তো জামায় বেশ সুন্দর লাগে।

আমি-তাই??

সাবিয়া-কালকে থেকে ওখানে জামা ই পরিস।

আমি-ওখানে???

সাবিয়া-ডং করিস নাতো যা।(আমাকে পাঠিয়ে)

আমি রুমে এসে দেখি তন্ময় আমার জন্য মাত্র কিনে আনা জামাগুলো গোছাচ্ছে সাথে নিজেরও কিছু শার্ট-প্যান্ট গোছাচ্ছে।আমি ওনাকে পাত্তা না দিয়ে শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে আমি রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াই।এখন আমি একটা কালো রংয়ের জামদানী শাড়ি পরেছি।আমি এবার আয়নার সামনে দাঁড়াই।

তন্ময়-তোমার পেট দেখাচ্ছো আমাকে?

আমি-কি??(ওনার দিকে ফিরে)

তন্ময়-সমস্যা নেই আমি আরো আগেও দেখেছি।

আমি-এই কি বলেন এসব?(ওনার কাছে এসে)

তন্ময়-কি???

আমি-মাত্র কি বললেন।(রেগে)

তন্ময়-কি বললাম।(আমাকে টেনে)

আমি-বিকালে আমার সাথে যা করেছেন তারপর থেকে আপনার সাথে কথা বলতেই ইচ্ছে করছেনা তবুও জিজ্ঞেস করছি।কেনো বললেন এই কথা?

তন্ময়-কোন কথা??

আমি-এই যে আমি আপনাকে পেট দেখাচ্ছি।

তন্ময় এবার আমাকে কিছু না বলে আমার শাড়ির আঁচলের নিচ দিয়ে আমার পেটে হাত দিয়ে দেয়।

আমি-তন্ময় কি করছেন?(হাত সরিয়ে)

তন্ময়-কিছুনা।

আমি-আপনি বলবেন কি না?

তন্ময়-এই শাড়ীতে তোমার পেট দেখা যাচ্ছিলো তাই আমি ওই কথা বলেছি।

আমি-এটা ভালোভাবে বলা যেতো না।

তন্ময়-না আমি একটু ত্যাড়াব্যাকা করেই বলি আর কাজ করি বিকালে তো নমুনা দেখেছো।

আমি-দূর!!!

আমি তন্ময়কে ছেড়ে বাবার রুমে চলে আসলাম।

আমি-বাবা!!!

রহমান-আরে তনু আয় আয়।

আমি-হুম.(বাবার পাশে বসে)

রহমান-মন খারাপ???

আমি-না।

রাহমান-তাহলে???

আমি-এমনি বোরিং লাগছে।

রহমান-এটা কেমন কথা?তন্ময় তোকে বাইরে থেকে ঘুরিয়ে আনলো আর তোর কিনা এখন বোরিং লাগছে।আবার ঘুরতে চাস বুঝি?

আমি-না এমনে ভালো লাগছেনা।

রহমান-যা ওখানে ভালো লাগবে।

আমি-আচ্ছা মা ও কিছুক্ষণ আগে ওখানে বলল আর তুমিও এখন ওখানে বলছো ব্যাপার টা কি?

রহমান-তুই এখনো জানিসই না।

আমি-কি জানবো?

রহমান-এই যে তোরা কালকে হানিমুনে যাচ্ছিস।

আমি-কি???(অবাক হয়ে)

-চলবে

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_১৭
#Jechi_Jahan

আমি বাবার রুম থেকে বের হয়ে আমাদের রুমের দিকে আগাতে লাগলাম।আমি যেই রুমে ঢুকতে যাবো ওমনি তন্ময় রুম থেকে বের হয়ে এলো।

আমি-এগুলা কি শুরু করেছেন আপনি???

তন্ময়-কি করলাম?

আমি-কিছুই জানেন না নাকি না জানার বান করে আছেন?

তন্ময়-সোজাসুজি বলনা কি বলতে চাও।

আমি-হানিমুনে যাওয়ার প্ল্যান আপনি করেছেন??

তন্ময়-ওহ এটা।

আমি-ব্যাপারটা এতো ইজিলি নিচ্ছেন??

তন্ময়-দুইটা জায়গা সিলেক্ট করেছি আমি।

আমি-আমি কি এটা জিজ্ঞেস করেছি?

তন্ময়-(কিছু না বলে রুমে চলে গেলেন)

আমি-আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি(রুমে এসে)

তন্ময়-এই যে জায়গা দুইটা কি কি??

আমি-না।

তন্ময়-কক্সবাজার না হয় সাজেক যাবো।

আমি-তন্ময়!!!!(রেগে)

তন্ময়-ওকে বলছি।

আমি-হুম!!!

তন্ময়-এই যে তুমি বাড়িতে থেকে দেখছি আমার প্রতি কোনো গুরুত্বই দেখাচ্ছো ন তাই সিদ্ধান্ত নিলাম হানিমুনে যাবো।

আমি-আজব এখানে হানিমুন কোথা থেকে এল?

তন্ময়-বাইরে কোথাও গেলে হয়তো তোমার আমার প্রতি গুরুত্ব তা বাড়বে।

আমি-এই কথা!!!আচ্ছা আমি যদি না যাই?

তন্ময়-বিকালের মতো দেখা যাবে।(বলে বারান্দায় চলে গেলো)

আর আমি বিকালের কথা শুনে ভয় পেয়ে যাই।

ফ্লাসব্যাকঃ-

তন্ময়-ওকে দেখা যাবে।

আমি-হুম দেখা যাবে।(বলে আমি সোজা খাটে গিয়ে শুয়ে পরলাম।আমার শোয়ার কিছুক্ষণ পর তন্ময় ও আমার পাশে এসে শুয়ে পরে।আমি এখন একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছি বাট তন্ময় আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না তাও গান গেয়ে)

তন্ময়-তোরে পাগলের মতো করে সাজিয়ে,ছাগল এর মতো করে নাচাবো,তুই মে মে….মে মে করলে
কাঁঠালের পাতা ছিড়ে খাওয়াবো।(সুর টেনে)

আমি-কি হচ্ছে এগুলা?(ওনার দিকে তাকিয়ে)

তন্ময়-কি হচ্ছে?(না জানার ভান করে)

আমি-তন্ময় আমি খুব ক্লান্ত তাই একটু ঘুমাতে চাই।সো প্লিজ কোনো আওয়াজ করবেন না।

তন্ময়-তো ঘুমাও তোমাকে আটকিয়েছে কে?

আমি-প্লিজ!!!

তন্ময়-ওকে ওকে ঘুমাও।

আমি এবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম আর ঘুমিয়ে ও গেলাম।কিন্তু ঘুমানোর বেশ কিছুক্ষণ পর আমি খেয়াল করি যেনো কেও আমার শাড়ী টা খুলে ফেলছে।আমি সাথে সাথে চোখ টা খুলে ফেলি।

আমি-তন্ময়!!!!(অবাক হয়ে)

তন্ময়-বলেছিলাম না দেখা যাবে।

আমি-শাড়ী কেনো খুলছেন?(শাড়ীর আঁচল ধরে)

তন্ময়-এখনো খুলিনি।

আমি-কিন্তু খুলতে তো চাচ্ছেন।

তন্ময়-ওকে খুলবোনা তাও একটা শর্তে।

আমি-কি শর্ত??

তন্ময়-রেডি হয়ে আমার সাথে বাইরে চলো।

আমি-আমি এসব শর্ত তর্ত মানিনা।

তন্ময়-ওকে তো খুলে ফেলি।(শাড়ী টেনে)

আমি-না প্লিজ।

কিন্তু কে শুনে কার কথা উনি সেই জোর করে শাড়ীটা খুলে আমায় ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয় আর সাথে দরজা টাও বন্ধ করে দেয়।

আমি-তন্ময় বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।

তন্ময়-মোটেও বেশি কিছু করিনি।

আমি-দরজা খুলুন।

তন্ময়-তুমি সত্যি আমার সামনে এভাবে থাকবে।

আমি-আমার শাড়ী টা দিন।

তন্ময়-ওখানে জামা রাখা আছে ওগুলা পরে বের হও।(দরজার কাছে এসে)

আমি-আমি পরবোনা।

তন্ময়-ওকে তো এভাবেই থাকো।

আমি-আমি কোথাও ঘুরতে যাবোনা।

তন্ময়-ওকে থাকো ওখানে।

আমি-তন্ময়!!!

তন্ময়-চিৎকার করে লাভ নেই।

আমি এবার কোনো উপায় না পেয়ে ওয়াশরুমে থাকা জামাটা পরে নিলাম আর তন্ময়কে বলে বের হয়ে এলাম।উনি এবার নিজে আমাকে সাজিয়ে রেডি করে বাইরে নিয়ে ঘুরতে যায়।

***প্রেজেন্ট***

আমি এতোক্ষণ এসব ভাবছিলাম কিন্তু হঠাৎ রুমে জেনি আসায় আমি বাস্তবে ফিরে আসি।

আমি-জেনি কিছু বলবে?

জেনি-হুম এগুলা দিতে এসেছি।(চাদর দেখিয়ে)

আমি-চাদর কেনো?

জেনি-তোমরা যেখানে হানিমুনে যাচ্ছো ওখানে নিশ্চয়ই এখন ঠান্ডা পরবে।যেহেতু এখন এখানে একটু ঠান্ডা পরছে তাই চাদর গুলো নিও।

আমি-আচ্ছা।(চাদরগুলো নিয়ে)

জেনি-ভাইয়া কই?

আমি-বারান্দায়।

জেনি-জানো তো ভাবী একটা ছেলে তার বউয়ের লাভ স্টোরি শুনে এত বড় ছ্যাকা খেয়েছে যে সে এখন তার বউকে নিয়ে হানিমুনে যাচ্ছে।

তন্ময়-তুই যেমন তোর ভাবনাচিন্তাও তেমন।
(রুমে এসে)

জেনি-সত্যি কথা একটু তেঁতোই হয়।

তন্ময়-পেঁচাল বাদ দিয়ে এখন যা এখান থেকে।

জেনি-ভাবী তুমিও আমার সাথে চলো না।

আমি-ওকে চলো।

তন্ময়-তুই তনুকে কেনো নিচ্ছিস?(আমার হাত ধরে)

জেনি-কেনো নিতে পারিনা।

তন্ময়-ওকে নিয়ে তুই কি করিস সেটা আমি খুব ভালো করে জানি সব আমাকে জ্বালানোর ধান্দা।

জেনি-তুই কেনো জ্বলবি তুই তো ভাবীকে পছন্দই করিস না তাই না।

তন্ময়-সেটা আমার ব্যাপার তুই যা।

জেনি-আরে ভাবীকে এখন আমার দরকার আছে।

তন্ময়-কেনো স্টোরি শুনবি?(রেগে)

জেনি-ওকে সরি যেতে দে প্লিজ।

তন্ময়-না তোর বিশ্বাস নেই।

আমি-কি করছো তোমরা?

তন্ময়-তুমি চুপ করো।(হাত জোরে চেপে ধরে)

জেনি-ওকে ভাইয়া আমি আর কখনো ভাবীর কাছ থেকে ভাবীর লাভ স্টোরি শুনবো না।

তন্ময়-না তুই যা এখন।

আমি-এমন করছেন কেন….

তন্ময়-বেশি বুঝো তুমি?(রেগে)

জেনি-ভাইয়া প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

তন্ময়-ওকে কিন্তু কি বলেছিস মনে আছে তো।

জেনি-হুম মনে আছে।ওকে ভাবী চলো।

আমি-হুম(বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম)

জেনি-তোমার বর না একটা জিনিস।

আমি-কি জিনিস?

জেনি-তুমি দেখি কিছুই বুঝো না।

আমি-কি বুঝবো?

জেনি-বাদ দাও,বসো!!!(রুমে এসে)

আমি-তা আমাকে কিসের জন্য দরকার?(বসে)

জেনি-কালকে তো তোমরা হানিমুনে যাচ্ছো তাই আনি তোমার জন্য কিছু ড্রেস সিলেক্ট করেছি।

আমি-আমি তো ড্রেস নিয়েছি।

জেনি-আরে এগুলা সেই ড্রেস না।

আমি-তো কি ড্রেস?

জেনি-স্পেশাল।

আমি-ওহ!!

জেনি-ভাবী এদিকে আসো একটা কথা বলি।

আমি এবার জেনির দিকে এগিয়ে গেলে ও আমার কানে কানে একটা কথা বলে সেটা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি

সাবিয়া-আচ্ছা তন্ময় হঠাৎ হানিমুনের কথা কেনো তুললো?

রহমান-জানিনা।

সাবিয়া-তোমাকে বললো আর তুমি জানোনা।

রহমান-আমি সত্যি জানিনা।

সাবিয়া-কিছু আন্দাজ করোনি?

রহমান-আরে আজকে দুপুরে তন্ময় হঠাৎ করে এসে আমায় হানিমুনের কথা বলবে এটা কি আমি কল্পনা করেছি।

সাবিয়া-তো কি বললো তোমাকে?

রহমান-বলেছে ওর বন্ধুদের যখন নতুন বিয়ে হয়েছে তখন তারা নাকি মাস পেরোতেই হানিমুনে চলে গেছে।এখন ও তো নতুন বিয়ে করেছে তাহলে ও কেনো হানিমুনে যাবেনা।

সাবিয়া-তখন তুমি কি বললে?

রহমান-আমি বললাম ঠিক আছে সব ব্যবস্থা করবো শুধু কোথায় যাবি সেরা বল।

সাবিয়া-কোথায় যাবে?

রহমান-সাজেক যাবে বলছিলো তখন আমি বললাম সাজেক তো গিয়েছিস তার চেয়ে ভালো কক্সবাজার যা কারণ ওখানে তো যাসনি।

সাবিয়া-কেমন ছেলে তোমাকে হানিমুনের কথা বলছে?

রহমান-তোমার ছেলে তখন রেগে ছিলো দেখেই বুঝা গেছে।আর তুমি তো জানো তোমার ছেলে রেগে গেলে আর কোনোকিছুর ধার ধারে না।

সাবিয়া-ওহ।

আমি-জেনি!!!(পিঠে একটা বারি দিয়ে)

জেনি-বলোনা।

আমি-ভাবীকে কেও এসব জিজ্ঞেস করে।

জেনি-ভাবী উল্টো ভাবে দেখলে কিন্তু তুমি আমার ভাবী হতেনা বোন হতে।

আমি-হুম তা তো ঠিক কিন্তু।

জেনি-বোন হিসেবে বলোনা ভাইয়া আর তোমার মাঝে কি কিছু হয়েছে?

আমি-জেনি!!(বলে মাথা নিচু করে ফেলি)

জেনি-ওকে বুঝেছি হয়েছে তাহলে।

আমি-তো??(ওর দিকে তাকিয়ে)

জেনি-তুমি না একটা গাঁদা।

আমি-কেনো??

জেনি-আর আমি হলে আমার বরকে প্রতুথম এক বছর আঙুলের উপর নাচাতাম সুযোগ না দিয়ে কিন্তু তুমি তো তোমার বরকে সুযোগ দিয়ে দিলে।

আমি-আমি সু্যোগ দিইনি।

জেনি-হুম তাই তো এতো ভয় পাও ভাইয়াকে।

আমি-তোমার ভাইয়া কি ভয় পাওয়ার মতো মানুষ নয় তুমি নিজেও তো ভয় পাও।

জেনি-ওকে এসব রাখো এখন,শুনো!!!

আমি-কি?

জেনি-আজ থেকেই না আজ রাত থেকেই তুমি ভাইয়াকে তোমার আঙুলের উপর নাচাবে।মানে এতোদিন ভাইয়া তোমার উপর জোর খাটাতো এখন তুমি ভাইয়ার উপর জোর খাঠাবে ওকে।

আমি-আমার দ্বারা এসব সম্ভব নয়।

জেনি-ভাবী ভাইয়া কিন্তু তোমাকে ভালোবাসে তাই তোমার সাথে এমন করে।আর তুমি এখন ভাইয়ার সাথে যাই করো না কেনো ভাইয়া কিছুই বলবেনা।

আমি-এটা আমিও একবার বলেছিলাম ওনাকে বাট আমি না ওনাকে দেখলেই কেমন একটা লাগে মানে ভয়+লজ্জা এমন কিছু।

জেনি-তাহলে তো হয়েই গেলো আজ থেকেই তুমি তোমার কাজ শুরু করে দাও।আর একদম ভয় পাবেনা ওকে কারণ ভাইয়া কিছুই করবেনা।

আমি-ওকে!!!আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো তো তুমি তো ওনার বোন তুমি কেনো ওনার সাথে এমন করার জন্য বলছো?

জেনি-তোমার স্বামী আমাকে খুব জ্বালিয়েছে তাই তোমার মাধ্যমে প্রতিশোধ নিবো আরকি।আর এটার মাধ্যমে দুইটা লাভ হবে।
১.তোমার ভাইয়ার প্রতি ভয় কাটবে।
২.আমার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।
আর এটাকে বলে এক তিরে দুই পাখি মারা।

আমি-এমন করায় সত্যি আমার ভয় কাটবে?

জেনি-হুম সাথে ভালোবাসাও বাড়বে।

আমি-যাহ!!!

রাতে সবাই একসাথে ডিনার করে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।আমি ভাবীকে রুমে পাঠিয়ে খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে রান্নাঘরের বাকি কাজ গুলো সেরে রুমে চলে আসলাম।

তন্ময়-এত দেরি করে কেনো এলে?

আমি-আমি কাজ করি আপনার মত বসে থাকিনা

তন্ময়-আরে আমি তো আর অফিসে যাইনা তাই তোমার মনে হয় আমি সারাক্ষণ বসে থাকি।

আমি-হুম!!

তন্ময়-কালকে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে ওকে।

আমি-হুম!

তন্ময়-কি হুম হুম করছো বলো হ্যাঁ উঠবো।

আমি-এটা বলি আর ওটা বলি উত্তর কিন্তু একি টা।(এটা বলেই আমি ওয়াশরুমে চলে যাই)

তন্ময়-এর আবার কি হলো?

আমি-আল্লাহ আল্লাহ তুমি আমাকে এইটা কি সাহস দিলা?আর একটু থাকলে আমার জান বেড হয়ে যেতো।(আমি এবার আর দেরি না করে
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে এলাম।রুমে এসে দেখি তন্ময় আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওনার এই তাকানো দেখে ভয় হয় আমার)

আমি-কি???

তন্ময়-কি???

আমি-আরে কি???

তন্ময়-আরে আমিও তো বলছি কি?

আমি-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

তন্ময়-না কিছুনা ঘুমাতে আসো।

আমি-কেনো তাকিয়ে ছিলেন?(খাটে বসে)

তন্ময়-না কিছু না এমনে।

আমি-(উনি নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন তাই কিছু বলতেও পারছেনা।জেনির প্ল্যান কাজ করেছে দেখছি এখন আমি আপনাকে মজা দেখাবো)
তন্ময় শুনন না।

তন্ময়-হুম(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি-আজ আপনি বারান্দায় শুবেন।(শক্ত কন্ঠে)

তন্ময়-What???(অবাক হয়ে)

-চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে