ডেভিল বর
পর্ব – ১৬
শিফা_আফরিন
.
.
?
রিয়াদ কে আঁচল বরাবরই অনেক ভয় পায় তাই আর কথা না বারিয়ে খেয়ে শুরু করে দেয়।
আঁচলের খাওয়া শেষ হলে রিয়াদ চলে যায়।
আঁচল অনেকক্ষণ ধরে রুমে বসে আছে কিন্তু রেহানের আসার কোনো খবর নেই। আঁচল প্রচন্ড রেগে যায়।
আঁচল – দেখেছো? ঐ লুচু টা ওর হিয়ার কাছ থেকে আসতেই চাইছেনা। ঘরে যে ওর বউ বসে আছে সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।
আঁচল অনেকক্ষন রুমে পায়চারি করে দেখে রেহান এখনো আসে নি। আঁচল রেগে শুয়ে পরে।
রাতে…
রিয়াদ – আঁচল এই আঁচল…. এখনো ঘুমাচ্ছিস? তোর শরীর ঠিক আছে তো?
আঁচল – কি হয়েছে ভাইয়া? চেঁচামেচি করছো কেনো? (ঘুম ঘুম কন্ঠে)
রিয়াদ – চেচাঁমেচি করছি কি আর শখে! রাত ১০ টা বাজে এখনো তুই ঘুমাচ্ছিস?
আঁচল এক লাফে উঠে বসে রুমে এদিক সেদিক তাকায়।
রিয়াদ – কি হলো? কাউকে খুঁজছিস?
আঁচল – কই? নাতো।
রিয়াদ – ঠিক আছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় খেয়ে নিবি। তারাতারি আসবি কিন্তু।
রিয়াদ চলে যায়। আঁচল মন খারাপ করে বসে থাকে।
আঁচল – আমি এতো খন ঘুমিয়েছিলাম অথচ উনি একবারও আমায় ডাকতে আসলেন না?
একবার দেখতেও আসলেন না?
আঁচল ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে সবাই খাবার টেবিলে ওয়েট করছে।
কিন্তু হটাৎ আঁচলের মন টা ভালো হয়ে যায় কারন হিয়া রেহানের সাথে বসেনি। আঁচল আর রেহান একসাথে বসেছে। আর হিয়া ওদের বিপরীত দিকে।
রেহান – ওহো হিয়া… সরি গো। তোমার সাথে বসতে পারলাম না। আর তুমিও না! আমার পাশের চেয়ার টা দেখছো খালি পড়ে আছে বসলে না কেনো বলো তো?
রেহানের কথা শুনে আঁচল অনেকটা কষ্ট পায়। আঁচলের চোখের কোণে পানি চলে আসে।
আঁচল – ( তার মানে চেয়ার টা হিয়ার জন্যই ছিলো! মাঝখানে আমি চলে এসেছি? মনে মনে)
হিয়া – থাক না ভাইয়া। একবেলা না হয় বসে গেলাম। (মুচকি হেসে)
আঁচল চেয়ার থেকে উঠে যেতে নিলে রেহান আঁচলের হাত ধরে ফেলে।
রেহান – কি হলো উঠে পড়ছো যে? দুপুরের মতো এখনো তোমার পেট ভরে গেছে নাকি? (ধমক দিয়ে)
আঁচল – না আমি ভাইয়ার পাশে বসবো।
রেহান – এটা কি ছেলেমানুষি আঁচল!! একবার বসছো আবার চেঞ্জ করবে কেনো?
আঁচল আর কথা না বাড়িয়ে বসে খেতে শুরু করে।
হটাৎ আঁচল খেয়াল করলো কেউ তার পায়ে খুচা দিচ্ছে।
আঁচল সামনে তাকিয়ে দেখে হিয়া রেহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
আঁচল মাথা নিচু করে দেখে এটা হিয়ার পা।
আঁচল – হিয়া কি হচ্ছে টা কি? এরকম কেনো করছিস বল তো?
হিয়া – ওহো সরি আপুই ভুলে তোকে বিরক্ত করে ফেললাম।
আঁচল – (ভুলে মানে!! ওহ বুঝেছি উনার পায়ে খুচা দিতে চাইছিলো তাই!! মনে মনে)
আঁচল হালকা খেয়ে উঠে রুমে চলে যায়। আঁচল যে মারাত্মক রেগে আছে এটা কারো চোখ এড়াতে পারেনি।
হিয়া – ভাইয়া… ডোজ টা বেশি হয়ে গেলো না তো?
রেহান – না শালিকা তুমি তো একদম জমিয়ে দিয়েছো। (চোখ মেরে)
হিয়া – তাও। আমি জানি আপুই কতোটা রাগি। তাছাড়া আপুই অনেক অভিমানী ও। যদি আপনাকে ভুল বুঝে তো সহজে ওকে আর সত্যি টা বুঝাতে পারবেন না। ও ভুল টা নিয়েই পড়ে থাকবে।
রেহান – এই সব নিয়ে তুমি একদম ভেবো না ডিয়ার শালিকা। আমি আছি তো!
হিয়া – হুম সেই।
রিয়াদ – রেহান দেখো আবার যেনো গন্ডগোল বাধিয়ে ফেলো না।
আঁচলের মা – হ্যা তাইতো। আমার মেয়েটা বোধহয় অনেক কষ্ট পাচ্ছে। কি দরকার ওকে এভাবে কষ্ট দেয়ার বলো তো।
রেহান – মা, ভাইয়া আপনারা একদম চিন্তা করবেন না। আমি আছি তো। আমি সামলে নিবো।
রিয়াদ – হুম তোমার উপর আমার অনেকটা বিশ্বাস আছে।
রেহান – আচ্ছা আমি উঠি তাহলে।
আঁচলের মা – হ্যা বাবা যাও।
রিয়াদ – হুম দেখো গিয়ে তোমার মহারানি কি করছে।
রেহান মুচকি হেসে চলে আসে।
এদিকে আঁচল বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।
রেহান রুমে এসে দেখে আঁচল নেই। রেহান বুঝতে পারে আঁচল কোথায় থাকতে পারে।
রেহান বেলকনিতে গিয়ে দেখে আঁচল একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
রেহান আঁচলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
হটাৎ কারো স্পর্শ পেয়ে আঁচল কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। আঁচল পেছন ফিরে দেখে রেহান।
মূহুর্তেই আঁচলের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় রেহান কে।
রেহান – কি হলো সোনা? এমন করছো কেনো? (মুচকি হেসে)
রেহানের এমন বিহেভ আঁচলের অসহ্য লাগছে। আঁচল রেহানের কথার জবাব না দিয়ে রুমে এসে পড়ে।
রেহান আঁচলের কান্ড দেখে মুখ চেঁপে হাসছে।
রেহান – কোথায় যেনো কি পুড়ছে মনে হচ্ছে?
রেহানের কথায় আঁচল অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেহানের দিকে।
কিন্তু কোনো উত্তর না দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াতে শুরু করে।
রেহান – জানো… হিয়া মেয়েটা কি সুন্দর তাইনা? যেমন সুন্দর দেখতে তেমনি সুন্দর কথা বলার স্টাইল। হাসিটা ও মাশআল্লাহ।
আঁচল এবার আর চুপ থাকতে পারেনি।
আঁচল – এতোই যখন অপ্সরি মনে হচ্ছে তো যা না ঐ হিয়ার বাচ্চার সাথেই ঘুমাতে যা। আমার রুমে কেনো এসেছিস। (চিৎকার করে)
রেহান – এ মা! তুমি আমাকে তুই তোকারি করছো!! দেখলে হিয়া তো একবারও আমাকে তুই করে বলেনি? তাছাড়া তুমি আমার বউ। সারা দিন হিয়ার সাথে আড্ডা দিলেও রাতে তো তোমার সাথেই ঘুমাতে হবে তাই না? না হলে লোকে কি বলবে বলো তো!
আঁচল – ন্যাকামো করবেন না ওকে। — বলেই বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে।
রেহান আঁচলের এমন কাজে অবাক হয়ে যায়।
রেহান – তুমি সোফায় শুয়েছো কেনো? (দাঁতে দাঁত চেপে)
আঁচল – আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।
রেহান – এক্ষুনি বিছানায় আসো বলছি।
আঁচল – আসবো না। আমি এখানেই ঘুমাবো।
রেহান রেগে গিয়ে আঁচলকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় ধপ করে ফেলে দেয়।
আঁচল – আরেহহ আজিব। আপনি কি আমার কোমড় টা ভেঙে ফেলবেন নাকি।
রেহান আঁচলের কথার কোনো জবাব না দিয়ে আঁচলের উপর উঠে পড়ে।
আঁচল – কি হচ্ছে এটা। অসভ্যতামির একটা লিমিট থাকা দরকার বুঝলেন। উঠুন বলছি।
রেহান এবার আঁচলের দু’হাত চেঁপে ধরে আঁচলের ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়।
আঁচল নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে নিলে রেহান আঁচলের ঠোঁটে অনেক জোরে কামড় বসিয়ে দেয়। আঁচল চিৎকার করে উঠে।
রেহান – সব সময় তোমার রাগের কাছে হার মানতে হবে আমার?
কি ভাবো কি নিজেকে? ভালোই ভালোই বলছি এখানেই ঘুমাউ নয়তো তোমার কপালে দুঃখ আছে আঁচল।
চলবে….