ডেভিল বর
অন্তিম পর্ব
শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান মুচকি হেসে আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে বসে।
অনেকক্ষণ দু’জন ঘুরাঘুরি করে শপিং এ যায়।
আঁচল – শপিংমল এ আসলেন কেনো?
রেহান – কিছু কেনাকাটা করতে।
আঁচল – কই! বাসায় তো বলেন নি?
রেহান – আরেহ বেশি কিছু না। জাস্ট তোমার কয়েকটা শাড়ি।
আঁচল – আমার শাড়ি তো আছেই। আর কিনতো হবে না। চলুন এখান থেকে।
রেহান রাগি চোখে আঁচলের দিকে তাকায়। আঁচল রেহানের চাহনি দেখে ভয়ে চুপ মেরে যায়।
রেহান আঁচলকে নিয়ে একটা শপে ঢুকে। হটাৎ পেছন থেকে কেউ ডাক দেয়….
— আঁচল…
আঁচল রেহান দু’জনই পেছন ফিরে তাকায়।
আঁচল মানুষ টাকে দেখে কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। আচমকাই আঁচলের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে…..
আঁচল – জিসান….
আঁচলের মুখে জিসান নাম টা শুনেই রেহান চমকে যায়। তার মানে সামনে থাকা লোক টা জিসান। রেহান একহাতে আঁচলের কোমড় ধরে জিসানের দিকে এগুতে থাকে।
জিসান – বাহহ বিয়ে করে নিয়েছো? কতো দিন হলো?
আঁচল কিছু বলছে না শুধু একদৃষ্টিতে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।
রেহান – হেই ব্রো… আমি রেহান আঁচলের হাসবেন্ড। তুমিই জিসান!
জিসান – জ্বী।
রেহান – তোমাকে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো আমার জানো তো! স্পেশালি একটা কথা বলার জন্য।
জিসান – কী কথা?
রেহান – থ্যাংকস
জিসান – কেনো?
রেহান – আঁচলকে ফিরিয়ে দিয়ে তুমি যে আমার কতোবড় উপকার করেছো নিজেও জানো না। তোমার জন্যই আঁচলকে পেলাম। না হলে হয়তো খাটি হিরে হারিয়ে ফেলতাম।
জিসান রেহানের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
জিসান – আঁচল আপনাকে আমার সম্পর্কে বলেছে।
রেহান – আঁচল বলেনি তবে বিয়ের আগে আঁচলের মা বাবা আই মিন আমার শশুর শাশুড়ি বলেছে। আর বিয়ের পর অবশ্য আঁচল অনেক বারই তোমার নাম নিয়েছে কিন্তু এখন মনে হই তোমার নামটাও ও ভুলে গেছে। কি আঁচল তাই তো? (আঁচলের দিকে তাকিয়ে)
আঁচল এতোখন রেহানের কথা শুনছিলো। আঁচল কিছু না বুঝেই বলে দেয়….
আঁচল – হ্যা।
রেহান – দেখলে তো? এই না হলে আমার বউ। পুরনো সব কথাই ভুলে গেছে। জানো ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। মাত্র তো কয়েক টা দিন হলো বিয়ের এর মাঝেই এতোটা ভালোবেসে ফেলেছে কি বলবো আর।
আজ অফিস গিয়েছিলাম কিছুক্ষন পরই ফোন দিয়ে বলে বাসায় চলে আসো।
আঁচল রেহানের কথা শুনে হা হয়ে যায়। বলে কি!!
এতো বড় মিথ্যে??
রেহান – বাই দ্য ওয়ে উনি কে? তোমার মিসেস? (জিসানের সাথের মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে)
আঁচল এতক্ষন জিসান কে দেখায় এতোটাই ব্যাস্ত ছিলো যে জিসানের সাথে যে আরও একজন আছে তার দিকে খেয়ালই করেনি। রেহানের মুখে শুনে আঁচল তাকিয়ে দেখে জিসানের সাথে একটা মেয়ে।
দেখতে অতোটাও সুন্দরী না যতোটা আঁচল।
জিসান – হ্যা। সায়নী।
আঁচল – কেমন আছো ভাবি? (সায়নীকে উদ্দেশ্য করে)
সায়নী – হুম ভালো। আপনি?
আঁচল – এমন একখানা বর পেয়ে কেউ কি খারাপ থাকতে পারে বলো!! আমিও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। (রেহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)
আঁচলের কথা শুনে জিসান অনেকটা জেলাস ফিল করছে আর রেহান বেচারা তো শেষ। সব যেনো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
রেহান – ( কি হলো এটা!! জিসান কে দেখে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেলো না তো? মনে মনে)
আঁচল – আচ্ছা জিসান ভাইয়া সায়নী ভাবি ভালো থাকবেন কেমন। আল্লাহ হাফেজ।
জিসানের তো এবার রাগ উঠে যায়। চেয়েছিলো আঁচলকে ছ্যাকা দিয়ে সারা জীবন কাঁদাবে এখন তো আঁচলই উল্টো জিসানকে ছ্যাকা দিয়ে ব্যাকা করে দিলো।
আঁচল রেহানের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে।
রেহান আঁচলের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে….
রেহান – কি হলো বলো তো? এমন বিহেভ করলে যে!
আঁচল – ইচ্ছে হয়েছে তাই। আপনার কোনো সমস্যা?
রেহান – না না সমস্যা কিসের।
রেহান আঁচলের জন্য কিছু শাড়ি কেনে রেস্টুরেন্টে চলে আসে। তার পর দুজনে একসাথে ডিনার করে বাড়ি ফেরে।
৫ দিন পর….
আঁচল কিচেনে রান্না করছে আর রেহান আঁচলকে সাহায্য করছে। শুধু সাহায্য বললে ভুল হবে সাথে জ্বালিয়ে মারছে।
হটাৎ বেল বাজতেই আঁচল বলে…
আঁচল – দাড়ান আমি দেখে আসি।
রেহান – আমি থাকতে আমার বউ টার কষ্ট করা লাগবে না। (আঁচলের নাক টেনে)
রেহান গিয়ে দরজা খুলে দেখে রেহানের মা বাবা আর রিমি।
রেহান – মা বাবা তোমরা চলে আসলে যে।
আমাকে তো বলোনি আজ আসবে।
রেহানের বাবা – বলতাম পরে ভাবলাম আঁচল একা একা থাকবে বাড়িতে তাই বলিনি।
রেহান – বলতে তো পারতে। আর আমি অফিস গেলে আঁচল তো একাই থাকে। বাই দ্য ওয়ে আসতে অসুবিধে হয়নি তো?
রেহানের মা – একদমই না।
রেহান – আচ্ছা তোমরা ফ্রেশ হয়ে আসো।
রেহানের বাবা মা রিমি সবাই যার যার রুমে চলে যায়। আঁচল কিচেন থেকে বেরিয়ে আসে….
আঁচল – কে আসলো?
রেহান – মা বাবা।
আঁচল – তাই!! রিমি আসেনি?
রেহান – হুম। রুমে গেছে।
আঁচল মুচকি হেসে চলে আসে।
রিমি ফ্রেশ হয়ে বিছানায় রেস্ট নিচ্ছে এমন সময় আঁচল আসে…
আঁচল – রিমি…
রিমি – ওহহ ভাবি আসো।
আঁচল – কেমন কাটলো গ্রামে দিনগুলো?
রিমি – অনেক ভালো। তবে একটু টেনশনেও ছিলাম বটে।
আঁচল – কিশের টেনশন?
রিমি – আমরা চলে গেলাম। তুমি না জানি আমার ভাইটাকে কতো কষ্ট দিয়েছো। (মন খারাপ করে)
আঁচল – কষ্ট দিই নি গো। আমি তো তোমার ভাইয়ের প্রেমে পড়ে গেছি। (মুচকি হেসে)
রিমি – কিহহহহহ!!
আঁচল – হুম। গল্প পরে হবে এখন খেতে চলো।
আঁচল চলে যায় সবার জন্য খাবার রেডি করতে।
রেহানের মা বাবাও আসে।
রেহানের মা – আঁচল তোমার কোনো সমস্যা হয়নি তো?
আঁচল – না মা।
রেহানের বাবা – এই সুযোগে রেহানের অফিস যাওয়া টা শুরু হলো কি বলো।
রিমি – হ্যা বাবা একদম।
রেহান মুচকি হাসে সাথে আঁচলও।
রাতে…..
আঁচল রুমে এসে দেখে রেহান বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।
আঁচল ধীর পায়ে রেহানের কাছে গিয়ে রেহান কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
রেহান বুঝতে পারে মানুষ টা কে। কারন তার শরীরের ঘ্রান, প্রতিটা স্পর্শ রেহানের চেনা। খুব চেনা।
রেহান আঁচলের হাত দু’টো চেপে ধরে।
রেহান – আজ সূর্য কোন দিকে উঠলো বলো তো?
আঁচল – কেনো?
রেহান – এতো ভালোবাসা যে?
আঁচল – আমার বর। আমি ভালোবাসবো। এতে তোমার পারমিশন নিতে হবে বুঝি?
রেহান মুচকি হেসে আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে।
রেহান – মোটেই না। তবে এতোদিন যে কষ্ট দিয়েছো তার শাস্তি তো পেতেই হবে তাই না।
আঁচল – আমি সব শাস্তির জন্যই রেডি আছি বুঝছো।
রেহান – এই ওয়েট ওয়েট….. তুমি আমাকে তুমি করে বলছো যে…!
আঁচল – হু…
রেহান – বাহ বাহ এতো পরিবর্তনের কারন কি জানতে পারি।
আঁচল – প্রেমে পড়ে গেছি।
রেহান – কার?
আঁচল – আমার ডেভিল বর এর। এমন ভাবে প্রশ্ন করছো যেনো অন্য কারো প্রেমে পড়েছি।
রেহান – অন্য কারো প্রেমে পড়ে দেখো না তুলে আছাড় মারবো।
রেহানের কথা শুনে আঁচল হেসে দেয়।
রেহান – এবার তো বলো।
আঁচল – কী?
রেহান – ভালোবাসি…
আঁচল – সব কিছুই কি মুখে বলতে হই হুহহহ…
রেহান মুচকি হেসে আঁচলকে কোলে তুলে নেয়।
রেহান – নাহ মুখে বললে তো হয়না প্র্যাক্টিকালি করে দেখাতে হয়। (চোখ মেরে)
আঁচল লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রেহানের গলা জড়িয়ে ধরে।
সমাপ্ত
( ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ❤)