ডুমুরের ফুল ৩৭.
– রাত ১০ টায় বাস কিন্তু শাম্মী, কথাটা যেন মাথায় থাকে।
রেহান কড়া মেজাজে কথাটা বলল। সকাল থেকেই রেহানের মেজাজ খারাপ। দিন যত গড়াচ্ছে মেজাজ খারাপের পরিমাণ বাড়ছে। ঘুম থেকে ফুড়ফুড়ে মেজাজ নিয়েই উঠেছিল। টিউশনিতে গিয়েই বাধল বিপত্তি। স্টুডেন্টের মায়ের কাছে ছুটি চাওয়াতে মহিলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন৷ চড়া গলায় বললেন
– এতো ছুটি নিলে চলে নাকি? ওর পড়াশোনার ক্ষতি হয়না? মাস গেলে তো টাকাটা গুণে নিতে ভুল হয়না।
রেহান আকাশ থেকে পড়ল। সে ছুটি কবে এতো নিল? সপ্তাহে তিন দিন পড়ানো। ঝড়, বৃষ্টি, রোদ, পরীক্ষা কোনোকিছুতেই তার বাদ যায়না। যদি একদিন বাদ হয়ে যায় তাহলে সেটা কবার করে দেয়। তারপরও এরকম মিথ্যা কথা কীভাবে বললেন?
রেহান ধীরে ধীরে বলল
– আন্টি মিথ্যা কথা কেনো বলছেন?
– আমি মিথ্যা কথা বলছি? আমি?
– হ্যাঁ আন্টি। আমি বাদ দেইনা আর দিলেও কবার করে দেই। আর ছুটি নিচ্ছি তো এক মাসের জন্য তো না।
– আমি ছুটি দিবো না৷
রেহান মাথা নিচু করে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল
– আমি আর পড়াবো না আপনার ছেলেকে।
– কী বললে?
– পড়াবো না।
লাস্টের দুটো শব্দ বলেই রেহান দ্রুত পায়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো। আর তখন থেকেই মেজাজ খারাপ। মাসের টাকাটাও আর নেয়া হলোনা৷ রুমমেট অবশ্য সবকিছু জানার পরে অভয় দিয়ে বলেছে, আরও ভালো টিউশন খুঁজে দিবে কিন্তু চিন্তা আর মেজাজ খারাপ যেন না করে।
শাম্মী জাদিদের জন্য হালকা খাবার রেডি করছে। জার্নি করার সময় জাদিদের খুদা লাগে। নিজের জন্যও এতো যত্ন করে ও খাবার রান্না করেনা৷ মানুষটাকে আজ তিন বছর যাবত আগলে রেখেছে সে। একেবারেই ভেঙে গিয়েছিল এক্সের বিয়ের পর। শাম্মীর মা মেয়ের রান্না দেখছেন মনোযোগ দিয়ে। মেয়ে মনে হয় নতুন করে প্রেমে পড়েছে। ছেলেটা কে হতে পারে? বাসায় তো ওর অনেক ছেলে ফ্রেন্ডই আসে। তাদের মধ্যে কোন ছেলেটা হতে পারে? শাম্মীকে জিজ্ঞেস করবে নাকি নিজেই খুঁজে বের করবে?
কী করবে বুঝতে পারছেননা। শাম্মীকে জিজ্ঞেস করলে সে ত্যাড়াভাবে উত্তর দিবে। তখনই মেজাজ বিগড়ে গিয়ে বড়সড় ঝগড়া বেঁধে যাবে দুজনের মধ্যে।
এরচেয়ে নিজে খুঁজে বের করাই বেটার।
জাদিদ ব্যাগ গোছাচ্ছিল। ফোন বেজে ওঠাতে ব্যাগ রেখে ফোন রিসিভ করল। ফোনের ওপাশ থেকে সূচির কণ্ঠ ভেসে আসছে।
– হ্যালো জাদিদ
– হ্যাঁ বলো।
– বাস কটায় যেন?
– রাত দশটায়।
– কোথায় আসতে হবে?
– শ্যামলী বাস কাউন্টারে।
– আচ্ছা রাতে খাবার কি খেয়ে আসবো নাকি আমরা একসাথে অন্য কোথাও খাবো?
– খেয়ে আসতে হবে।
– আচ্ছা কী পরিমাণ জামা কাপড় নিতে হবে?
জাদিদের এবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এই মেয়ে প্রচুর প্রশ্ন করে। আরে এটুকু বুদ্ধি নাই যে কয়টা জামা কাপড় আনতে হবে? ঢাবির কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে পড়েও যদি এরকম গাধা হয় তাহলে আর কিছু বলার নেই। সারাদিন শাম্মীর সাথে ঘুরে বেড়ায়। গাধা হলেও তো এতদিনে কিছুটা চালাক হওয়ার কথা।
জাদিদ রাগ কন্ট্রোল করে বলল
– শাম্মীকে জিজ্ঞেস করো। জামা কাপড়, কসমেটিকস, জুয়েলারি বিষয়ক প্রশ্ন মেয়েদেরকে করতে হয়, কোনো ছেলেকে না। ছেলেরা এসব ব্যাপারে অজ্ঞ মানে পুরোপুরি হগা। বুঝতে পেরেছো?
সূচি আহত স্বরে বলল
– হ্যাঁ, ভুল হয়ে গেছে। সরি জাদিদ আই এম এক্সট্রিমলি সরি।
– দ্বিতীয় বার এই ভুল করলে সরি নেয়া হবেনা, এবারের মতো নিলাম। এখন রাখছি।
– আচ্ছা।
মোবাইল রেখে জাদিদ পুনরায় ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মেজাজ ভালো করার চেষ্টা করতে লাগলো।
মিম্মা ব্যাগপত্র গুছিয়ে রান্নাঘরে নিজের জন্য চা করতে যাবে আর তখনই তার ফোন বেজে উঠলো। মির্জা ভাইয়ের মোবাইল নাম্বার দেখে আনন্দের সহিত রিসিভ করল মিম্মা।
– হ্যালো আপু আসসালামু আলাইকুম।
– অলাইকুম আসসালাম ভাইয়া।
– আপু একটা কথা ছিলো।
– হ্যাঁ বলুন।
– আসলে আপু গ্রুপে মাত্র দুইজন মেয়ে ছিলো। আপনি আর আমার ক্লাসমেট।
– হ্যাঁ।
– কিন্তু সমস্যা হলো যে, ও যেতে পারবেনা। ব্যক্তিগত কারণেই মূলত ও সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করেছে। আর বুঝতেই পারছেন ১৭ জন ছেলের সাথে একা একজন মেয়ে যাইতেও পারেনা আর আমরাও নিতে পারিনা।
মিম্মার খুব খারাপ লাগতে শুরু হয়েছে। এক মাস ধরে সে সাজেক যাওয়ার প্ল্যান করেছে আর এভাবেই মাটি হয়ে যাবে ভাবতে পারছেনা।
মিম্মা কোনো কথা বলছেনা বলেই মির্জা বললেন
– আপনি যদি দুপুরের মধ্যে একজন মেয়ে জোগাড় করতে পারেন তাহলে আমরা নিতে পারবো।
– আচ্ছা দেখি ভাইয়া।
ফোন কেটে যাওয়ার পরে বাচ্চাদের মতো মিম্মা কাঁদতে লাগলো। মিম্মার মা অবাক হলেন। একটু আগেও তো মেয়েটা আনন্দে লাফাচ্ছিল হঠাৎ কী হলো?
মিম্মার মা জিজ্ঞেস করলেন
– কীরে কাঁদছিস কেনো?
– মা, আমার সাজেক যাওয়া হবেনা।
– কেনো রে?
মিম্মা সবকিছু ভেঙে বলার পরে মিম্মার মা হেসে বললেন
– হেমলতাকে নিয়ে যা। ও তোকে না করবেনা।
– কিন্তু এতগুলো টাকা ও পাবে কই? জানোই তো ওর নানী কেমন।
– আমি দিচ্ছি পরে ও নাহয় দিয়ে দিবে হেমলতা। তুই ওকে রাজি কর।
মিম্মার মা নাসরিন চলে গেলেন। মিম্মা হেমকে ফোন করে অনেক জোরাজোরি করে রাজি করালো।
হেমলতা ভয়ে ভয়ে তার নানীর কাছে বলল। বৃদ্ধা কিছু একটা ভেবে বললেন
– আচ্ছা যাও। টাকাপয়সা কেমন লাগবে?
হেম মাথা নিচু করে বলল
– তোমার দিতে হবেনা। আমার কাছে কিছু জমানো টাকা আছে। ওতে হয়ে যাবে।
জয়নাব আর কিছু বললেন না। হেমলতার তার রুম ছেড়ে চলে যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
চলবে…..
” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir -মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
~ Maria Kabir
ডুমুরের ফুল ৩৭. অসধারণ একটি গল্প https://dreamssmile.com/