ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-৩৭+৩৮

0
2246

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ৩৭
#Arshi_Ayat

ইয়াদ নিজের বিছানায় সেন্সলেস অবস্থায় শুয়ে আছে।আর ওকে ঘিরে ইফাজ,ইয়াফ খান,সাইদা খান,ইরিন দাড়িয়ে আছে।আর নিহা পানির বালতি আনতে গেছে।ইফাজ মাত্রই প্রেশার চেক করলো।প্রেশার হাই হয়ে গেছে।মাথায় পানি দিতে হবে।নিহা পানি নিয়ে আসার পর ইফাজ ইয়াদের মাথায় পানি ঢালতে লাগলো।আর ইরিন পায়ের তালু মালিশ করতে লাগলো।ইফাজের নির্দেশে সাইদা খান তেতুল পানি আনতে গেছেন।

অনেক্ক্ষণ পানি দেওয়ার পর আস্তে আস্তে ইয়াদের জ্ঞান ফিরলো।ইয়াদের জ্ঞান ফিরতে দেখে সবাই একদফা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।ইফাজের বাধা স্বত্তেও ইয়াদ আস্তে আস্তে উঠে বসলো।কিছু একটা বলতে নিলেও ইফাজ বাধা দিয়ে বলল,’এখন কিছু বলবি না।পরে সব শুনবো।আগে তেতুল পানিটা খেয়ে নে।’

ইফাজ সাইদা খানের হাত থেকে তেতুল পানিটা ইয়াদের হাতে দিলো।ইয়াদ একটু খেয়ে ফিরিয়ে দিলো।তারপর চুপচাপ বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।চোখের কোণায় পানি চিকচিক করছে।ইফাজ আবারও প্রেশার চেক করলো আগের তুলনায় এখন কম আছে কিন্তু তবুও শংকামুক্ত না।ইয়াদের সাথে একান্তে কথা বলা প্রয়োজন।তাই ইফাজ সবাইকে রুম থেকে চলে যেতে বলল।সবাই বের হয়ে যাওয়ার পর ইফাজ রুমের দরজা বন্ধ করে এসে ইয়াদের সামনাসামনি বসে ওর হাত দরে বলল,’কি হয়েছে তোর ইয়াদ?’

ইয়াদ সোজা হয়ে বসলো।ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তারপর কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু ভেতর থেকে কথা বের হচ্ছে না কান্না আর কথা দলা পাকিয়ে আসছে।কন্ট্রোল করা বেশ মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।ইফাজ ভাইয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল,’রিল্যাক্স ইয়াদ!কন্ট্রোল কর।তাড়াহুড়োর কোনো প্রয়োজন নেই।আস্তে আস্তে বল।’

ইফাজের কথা শেষ হতেই ইয়াদ চট করে ইফাজকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।কান্না জড়ানো কন্ঠে সবটা বোঝা না গেলেও কষ্ট’টা ইফাজ গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে কারণ সেও তো এই রোগেই আক্রান্ত!যেখানে না শান্তিতে বাঁচা যাবে না মরা যাবে।কিন্তু ইয়াদের সাথে এমন কেনো হলো!ওকে ভালো রাখার জন্যই তো ইফাজ সেক্রিফাইজ করেছিলো।কিন্তু মধু এটা কেনো করলো!

ইয়াদকে বাড়ি নিয়ে আসার সময় গাড়িতে একটা বিয়ের কার্ড পেয়েছিলো ইফাজ সেটা পড়েই সবটা বুঝে গেছে ইফাজ।কিন্তু এমনটা করার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না ইফাজ।
আর এখন তো মধুর খোঁজও নেই।দুইমাস আগে বিপদের আশংকা নেই ভেবে মধুকে যারা ফলো করতো ওর নির্দেশে সবাইকে ইফাজ না করে দিয়েছিলো ফলো করতে।কিন্তু এখন ওই বোকামিটার জন্য আফসোস হচ্ছে।

ইয়াদ কিছুটা শান্ত হয়ে চোখ মুছে বলল,’ভাইয়া কিসের শাস্তি দিলো ও আমায়?ও কি জানতো না ওকে ছাড়া আমি শেষ হয়ে যাবো?ও কি জানতো না আমাকে এভাবে রেখে গেলে আমি পাগল হয়ে যাবো!তাহলে কেনো এমন করলো?কেনো?

ইফাজ নিরুত্তর।কি বলবে?কিছু বলারও নেই।যা স্বপ্নে কল্পনা করতে পারে নি তাই হলো!কেনো হলো এর উত্তর নেই!তবে উত্তর জানতেই হবে!কেনো করলো মধু এমন এর উত্তর মধুকে দিতেই হবে।

ইফাজ ইয়াদকে একটা প্রেশারের ঔষধ আর ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে দিলো।তা নাহলে আবার হাইপার হয়ে যাবে।আর এতে দুর্ঘটনার সম্ভবনাও আছে।

ইয়াদ ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ইফাজ নিজের রুমে এসে নিখিলকে ফোন দিলো।নিখিল ফোন রিসিভ করতেই ইফাজ বলল,’দেখা করতে পারবি?’

নিখিল হাতঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো রাত ৯.০৪ বাজে।দেখা করাই যায়।তাই বলল,’হ্যাঁ পারবো।কোথায় আসতে হবে বল।’

‘বাসায় চলে আয়।’

‘আচ্ছা।’

নিখিল আধঘন্টার মাঝেই চলে এলো।ইফাজের বাবা মায়ের সাথে একটু কুশল বিনিময় করে ইফাজের সাথে ছাদে চলে গেলো।ছাদের দরজাটা বন্ধ করে ফিরে আসতেই নিখিল বলল,’এনি থিং রং ইফাজ?’

‘ইয়েস।একজনকে খুঁজতে হবে।’

‘কাকে?’নিখিল জিগ্যাসু দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো।

ইফাজ সাথে করে ইয়াদের ফোনটা নিয়ে এসেছিলো।ফোনের গ্যালারি থেকে মধুর ছবিটা দেখিয়ে বলল,’এই মেয়েটাকে।’

‘ঠিকাছে।একটা মিসিং ডায়েরি করবি?’

‘না,আমি চাই তুই আনঅফিশিয়ালি আমাকে হেল্প কর।’

‘আচ্ছা।আমি চেষ্টা করবো।’

‘আচ্ছা।’
নিখিলের সাথে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ করে ইফাজ ওকে বিদায় দিলো।তারপর নিজের বিশ্বস্ত কয়েকজনকেও খোঁজার দায়িত্ব দিলো।
—————–
গত চারদিন ধরে নিজেকে রুমে বন্ধ করে রেখেছে ইয়াদ।কারো সাথে কথা নেই।শুধু সাইদা খান জোরাজুরি করলে একটু খায় তা নাহলে সারাদিন ঘরে বসে থাকে।

আজকে ভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে জয়েন করার কথা থাকলেও ইয়াদের কোনো হেলদোল নেই।

ইরিন ভাইয়ের রুমে এসে ঘরটা গুছিয়ে জানালা গুলো খুলে দিয়ে বিছানায় এসে বসলে।ইয়াদ বিরক্তমুখে বলল,’এখানে আসছিস কেনো?’

‘ভাইয়া আজকে তোমার জয়েনিং।যাবে না?’

‘না যাবো না।তুই এখান থেকে যা।’

‘ভাইয়া প্লিজ এভাবে পড়ে থেকো না।আমাদের খারাপ লাগে।তাকদিরের ওপর কারো হাত নেই।তুমি এভাবে বসে থাকলে কিচ্ছু পাল্টে যাবে না।তুমি জানো তোমার জন্য বাসার কারো মনই ভালো নেই
আব্বু,আম্মু তোমার কষ্ট দেখে ছটফট করছে।তুমি একটা বেইমানের জন্য তাদের কষ্ট দিবে?’

ইয়াদ ইরিনের দিকে তাকালো আসলেইতো এভাবে গুমরে মরলে তো কিচ্ছু হবে না।অন্তত বাবা মায়ের কথা তো চিন্তা করতে হবে।তবে আর যাইহোক বেইমানির কোনো ক্ষমা নেই।ইয়াদ দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বলল,’আমি যাবো ভার্সিটিতে।’

ইরিন খুশী হয়ে বলল,’আচ্ছা তুমি রেডি হয়ে আসো।আমি আম্মুকে বলি খাবার দিতে।’
ইয়াদ মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই ইরিন বেরিয়ে গেলো।ইরিন যেতেই ইয়াদ নিজের ওয়ালপেপারে একবার মধুর ছবিটা একবার দেখে মনে মনে বলল,’আমি যে কষ্ট পাচ্ছি তার থেকেও বেশি কষ্ট যেনো তুমি পাও।তাহলে বুঝতে পারবে মন ভাঙার কষ্ট!এত কষ্ট পাও যেনো কষ্ট লাঘব করতে আবার আমার কাছেই ফিরতে হয়!পাষাণী,খুব ভালোবাসি তোমাকে!

ইয়াদ রেডি হয়ে নিচে নামলো।সাইদা বেগম ডাইনিং টেবিলে খাবার বেড়ে অপেক্ষা করছিলো।ইয়াদ মায়ের পাশে এসে বালো।সাইদা ছেলের না বলা কথা বুঝতে পেরে খাইয়ে দিলেন।খাওয়া শেষে বাবা মাকে সালাম করে বেরিয়ে পড়লো।

রিকশায় বসে আশেপাশে তাকাতেই আগের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।এই রাস্তার প্রতিটা ইট,বালু,কণা জানে ওদের ভালোবাসার কথা!প্রত্যেকটা মোড় মনে করিয়ে দিচ্ছে মধুর শূন্যতা!ইয়াদের এখন খুব করে একটা গান পড়ছে…

”এই. রাস্তা গুলো লাগে বড় অচেনা
আকাশটার সাথে নাই জানাশোনা
এই. রাস্তা গুলো লাগে বড় অচেনা
আকাশটার সাথে নাই জানাশোনা

আমি তোর. প্রেমেতে অন্ধ
ছিলো চোখ কান সব বন্ধ
থেমে গেছে জীবনের লেনাদেনা

সেই পুরোনো রাস্তাটায়.
আজ একা একা হেটে যাই
হচ্ছনা হিসাবের বনিবনা

এখন এমনি করে ভালো
কেমন করে বাসি অন্য কোনো পাখিকে
তার চেয়ে ভালো ছিল তুই নিজ হাতে খুন করে যেতি
আমাকে…’

একটা সময় গানটা এমনিতেই শুনতো ইয়াদ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে গানটা ওর জন্যই বানানো হয়েছে।যেনো প্রত্যেকটা লাইন অদ্ভুত ভাবে মিলে যাচ্ছে।
—————-
প্রথম ক্লাস বলে আজকে ক্লাস হয় নি।শুধু পরিচয় পর্ব হয়েছে।কলিগদের সাথে হালকা পরিচিত হলো।তারপর নিজের ক্লাস টাইম শেষে বাসায় আসার জন্য রওনা দিলে।রিকশায় উঠতেই রাস্তার পাশে দেখলো আরিয়া যাচ্ছে।ইয়াদ আরিয়াকে দেখে রিকশা থেকে নেমে ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো।মলিন হেসে বলল,’কেমন আছো আরিয়া?’

‘ভালো আছি ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?’

‘তোমার বান্ধবী যেমন রেখেছে।’

এই পর্যায়ে আরিয়া চুপ রইলো।ইয়াদ পুনরায় ম্লান হেসে বলল,’আচ্ছা,আল্লাহ হাফেজ।ভালো থেকো।’

‘আপনিও ভালো থাকবেন ভাইয়া।’এটা বলে আরিয়া চলে যেতে লাগলো কিন্তু হঠাৎ ইয়াদের ডাকে থেমে গেলো।ইয়াদ পিছিয়ে এসে আরিয়ার সামনে দাড়িয়ে বলল,’আচ্ছা,মধুর স্বামীকে তুমি চেনো?’

‘চিনি না তবে শুনেছি ওর খালাতো ভাইকে বিয়ে করেছে।’

‘ওহ!আচ্ছা।’
তারপর আরিয়া চলে গেলো।আরিয়া যেতেই ইয়াদ রাসেল কে ফোন দিলো।এতোদিন পর বন্ধুর ফোন পেয়ে রাসেল রিসিভ করে বলল,’কি অবস্থা এতোদিন পর মনে পড়লো শালা!’

‘চুপ কর।ফালতু কথা বাদ দে।এখন কুমিল্লা যেতে পারবি আমার সাথে?’

‘হ্যাঁ পারবো কিন্তু কেনো?’

‘চলে আয় বাসায়।পরে সব বলবো।’

‘আচ্ছা।’
ইয়াদ ফোন কেটে বাসার দিকে রওনা হলো।আর মনে মনে বলল,’আজকে কি হবে আমি জানি না।তবে খুব খারাপ কিছু হবে!’

চলবে….

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ৩৮
#Arshi_Ayat

আরো আধঘন্টা আগে রাসেল আর ইয়াদ বেরিয়ে পড়েছে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে।বাসায় তেমন কিছু বলে নি।ট্যুরের কথা বলে বেরিয়েছে।যেহেতু ছেলের মন ভালো নেই!এতোবড় একটা ঘটনা ঘটেছে সেহেতু ঘুরে আসুক।এটা ভেবেই কেউ আটকায় নি।
—————
ইয়াদ সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।কিছুই ভালো লাগছে না।মন চাইছে সব ভেঙে ফেলতে!কিভাবে মধু ওকে ছেড়ে আরেকজনের হতে পারলো!

রাসেল পাশের সীটে বসে কৌতুহলী চেহারায় ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু ইয়াদ নিজে থেকে কিছু না বলায় ও ই জিগ্যেস করলো,’দোস্ত!হঠাৎ আমরা কুমিল্লা যাচ্ছি কেনো?’

‘কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে।’ইয়াদ চোখমুখ শক্ত করে বলল।

‘মানে?আমি কিছু বুঝতে পারছি না!’

রাসেলের বোঝার সুবিদার্থে ইয়াদ সবকিছু বলল।সব শোনার পর রাসেল চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,’আমার বিশ্বাস হচ্ছে না মধু এমনটা করবে।’
ও তোকে অনেক ভালোবাসে।আমার মনে হয় এখানে অন্যকোনো ঘাপলা আছে।’

‘আমিও বিশ্বাস করি নি কিন্তু বিয়ের কার্ডটা কি মিথ্যা?’

‘বিদেশ থেকে পড়ে এসে ছাগলই রয়ে গেলি।এমন একটা বিয়ের কার্ড বানানো কোনো ব্যাপারই না।’

রাসেলের কথায় এবার ইয়াদের টনক নড়ে।আসলেই তো!কিন্তু এগুলো করার পেছনে কারণ কি?আর যদি এমনই হয় তাহলে মধুর বিয়ে হয় নি!
মধুর বিয়ে হয় নি এটা ভেবেই ইয়াদের মন কিছুটা শান্ত হলো।তবে পুরোপুরি শান্ত হলো না।যদি এতক্ষণ যা ভেবেছে এগুলো সত্যি নাহয় যদি সত্যি সত্যি মধুর বিয়ে হয়ে যায়!
————–
মাত্রই লাকসাম এসে পৌঁছালো ওরা।এখান থেকে একটা সি এন জি নিয়ে মধুর খালার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।বাড়িটা ইয়াদ চিনে মধুই চিনিয়েছিলো।

আধঘন্টার মধ্যে ওরা পৌঁছে গেলো।বাড়ির সামনে এসে সি এন জি থেকে নেমে রাসেল বলল,’তুই ওদের বাড়ি চিনিস?’

‘হুম,এসেছিলাম একবার।’

‘আচ্ছা।চল।’

রাসেল আর ইয়াদ হাটা শুরু করলো।একটু হেটে ওদের বাড়ির উঠানে এলো।সারাবাড়ি মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো।আর উঠানের গেটে বিয়ের গেট করা।ইয়াদ আর রাসেলকে দেখে সাইকা এগিয়ে এসে ওদের সামনে দাড়ালো।চেনার চেষ্টা করে বলল,’আপনারা কারা?’

ইয়াদ কিছু বলল না।আশেপাশে মধুকে খোঁজার চেষ্টা করলো।কিন্তু না ওর ছায়াও দেখা যাচ্ছে না।সাইকার কথার উত্তরে রাসেল বলল,’আপু আমরা ঢাকা থেকে এসেছি।’

‘বুঝলাম।কিন্তু কার কাছে এসেছেন?’

এবার ইয়াদ বলল,’মধু আছে?’

সাইকা ভ্রু কুঁচকে বলল,’না ওরা এখানে নেই।’

‘মিথ্যা বলছেন আপনি!দেখুন আমি ঝামেলা করতে চাই না।আপনি মধুকে ডেকে দিন।আমি শুধু কয়েকটা কথা বলেই চলে যাবো।’শেষ কথাটা ইয়াদ অনুরোধ করে বলল।

‘আরে বললাম তো মধু এখানে নেই।আর কয়েকদিন থেকে আইরিন খালার আর মধুর নাম্বার বন্ধ।আমরা নিজেরাই জানি না ওরা কোথায়।’

সাইকার কথা শুনে ইয়াদ দাঁত মুখ খিচিয়ে রাসেল কে বলল,’ইয়ার এবার আমি বুঝতে পেরেছি এরা আমার মধুকে জোর করে এখানে রেখেছে।যদি এমন কিছু হয় একটাকেও আস্ত রাখবো না।’

রাসল ইয়াদের পিঠে চাপড় দিয়ে ওকে শান্ত করলো।তারপর সাইকাকে বলল,’ও আচ্ছা।যা বলবেন তাই বিশ্বাস করে ফেলবো?যদি তাই হয় তাহলে বাড়িতে কার বিয়ে?নিশ্চয়ই আপনার ভাই আর মধুর!’

‘না,আমার ভাইয়ার সাথে মধুর বিয়ে হতে যাবে কেনো?আমার ভাইয়ের সাথে মধুর বিয়ে না।আর আপনারা এখানে এসে সিনক্রিয়েট করছেন কেনো?’সাইকা বিরক্ত হয়ে বলল।

‘সিনক্রিয়েট করি নি এখনো কিন্তু ভালোয় ভালোয় যদি মধুকে না নিয়ে আসেন তাহলে সিনক্রিয়েট কতো প্রকার ও কি কি সব বুঝিয়ে দেবো।’ইয়াদ উচ্চ গলায় থ্রেট দিয়ে বলল।

বাইরে চিল্লাচিল্লির শব্দ শুনে আরাফ,শিহাব,সাইকার মা,বাবা বাকি আত্মীয় স্বজন সবাই বেরিয়ে এলো।কেউ কিছু বুঝতে পারছে না আসলে কি হচ্ছে এখানে!আরাফ এগিয়ে গিয়ে বলল,’কি হচ্ছে এখানে আপনারা কারা?’

ইয়াদ আর রাসেল কিছু বলার আগেই সাইকা বলল,’ভাইয়া জানি না কারা এরা কিন্তু এসেই মধুকে খুঁজছে।আর বলছে মধুকে নাকি আমরা লুকিয়ে রেখেছি ওর সাথে নাকি তোমার বিয়ে!’
সাইকার মুখ থেকে সব শুনে আরাফ বলল,’দেখুন খালামনি,মধু,মিলি ওরা কোথায় গেছে আমরা কেউ জানি না।ওদের ফোনও বন্ধ।আর আমার বিয়ে মধুর সাথে না।দাড়ান আপনাকে বিয়ে কার্ড দেখাই।’
আরাফ বলার আগেই সাইকা ঘর থেকে বিয়ের কার্ড নিয়ে এলো।তারপর ইয়াদের হাতে দিয়ে বলল,’দেখুন!’

ইয়াদ কার্ডে কনের নাম খেয়াল করলো।ওখানে মধুর নামের বদলে,’তাসনিম চৌধুরী রাহা’ লেখা।আর বরের নামে ‘আরাফ তালুকদার’লেখা।এবার ইয়াদের কাছে সব পরিস্কার।আগের কার্ডটা ভুয়া আর এটা আসল কার্ড।ইয়াদ কার্ডটা আরাফের হাতে ফিরিয়ে দিলো।আরাফ কার্ডটা ফেরত নিয়ে বলল,’ওদের ফোন বন্ধ পেয়ে গতকাল আমি ঢাকা গিয়েছিলাম কিন্তু ওদের ফ্ল্যাটে অন্য ফ্যামিলি থাকে।ওরা বাসা পাল্টেছে।নতুন বাসাও চিনি না।আর কাউকে চিনিও না যে ওরা কোন বাসায় উঠেছে এটা বলবে।’

আরাফের কথা শুনে ইয়াদ হতাশ হলো।মধু এখানে নেই তবে এটা জেনে খুশী হলো যে মধুর বিয়ে হয় নি!কিন্তু এই মধুর কাজটা করার কারণ কিছুতেই আন্দাজ করতে পারছে না ইয়াদ।

যেহেতু এখানে মধু নেই সেহেতু এখানে দাঁড়িয়ে অযথা সময় নষ্ট করার মানেই হয় না।ইয়াদ আরাফ আর সাইকার কাছে ক্ষমা চেয়ে রাসেলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।আজকেই আবার ঢাকা ফিরবে।

রাত নয়টার বাসে উঠলো দুজনে।ইয়াদকে কিছু একটা চিন্তা করতে দেখে রাসেল বলল,’কি ভাবছিস?’

‘দোস্ত মধু এটা কেনো করলো?আর কেনোই বা আমাকে বোঝাতে চাইলো ওর বিয়ে হয়ে গেছে।আর আরিয়াই বা কেনো মিথ্যা বলল।’

‘আরিয়ার নাম্বার আছে তোর কাছে?’

‘হ্যাঁ আছে।’

‘ফোন করে জিগ্যেস কর।’

ইয়াদ ফোন দিলো আরিয়াকে।আরিয়া রিসিভ করতেই ইয়াদ বলল,’আরিয়া তুমি আমাকে মিথ্যে কেনো বললে?’

আরিয়া ঘাবড়ে গিয়ে বলল,’কি মিথ্যা বললাম ভাইয়া?’

‘নাটক করবা না প্লিজ।আমি আজকে কুমিল্লা মধুর খালার বাড়িতে এসেছিলাম।এখানে মধু নেই।আর মধুর বিয়ে ওর খালাতো ভাইয়ের সাথে হচ্ছে না।আমি সব জানি।দুই বান্ধবী মিলে কি ঢপ টাই না দিলে আমাকে।বাহ!’ইয়াদের কন্ঠে তাচ্ছিল্য।

‘ভাইয়া আপনি বিশ্বাস করবেন কি না জানি না তবে আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।মধু আমাকে যা বলেছে আমি শুধু তাই আপনাকে বলেছি।আর ওর এমন করার কারণে আমি ওর ওপর খুব রেগেও ছিলাম তাই কিছু খতিয়েও দেখি নি।আমি জানতাম না সব মিথ্যে ছিলো।’

‘আচ্ছা বিশ্বাস করলাম তোমাকে কিন্তু কেনো এমন করেছে এগুলো কিছু বলেছে?’

‘না আমিও জিগ্যেস করি নি মধুও বলে নি।’

আরিয়ার কথা শুনে ইয়াদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তারপর ফোন রেখে দিলো।গ্যালারিতে গেলো।গ্যালারি ভর্তি মধুর ছবি।ইয়াদ মনে মনে বলল,’অতি শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা!’
——————-
আরো দুইমাস চলে গেলো…
ভেতরে ভেতরে ইয়াদ,ইফাজ দুজনেই খুঁজে চলছে মধুকে।বাসার সবাই সবকিছু জানে।ইয়াদ সেদিন কুমিল্লা থেকে এসেই সব জানিয়েছে।

আজকে ক্লাস নেই ভার্সিটিতে।ইয়াদের অফ ডে।কোথাও যাওয়ার জন্য ইয়াদ রেডি হচ্ছিলো।হঠাৎ ওর মা রুমে এসে বলল,’ইয়াদ তোর খালা এসেছে।নিচে আয়।’

‘আসছি মা।’
ইয়াদ নিচে গিয়ে দেখলো খালা তো এসেছে কিন্তু সাথে আরেকজন মহিলাও আছে।ইয়াদ চিনতে পারলো না।মায়ের পাশ বসে খালাকে সালাম দিলো।ইয়াদের মা পাশের অপরিচিত মহিলাকে দেখিয়ে বলল,’ওনি তোর রেশমা আন্টি।আমার বান্ধবী।’

ইয়াদ সালাম দিলো।আর মনে মনে বলল,’এখন এই রেশমা আন্টির কোনো মেয়ে না থাকলেই হয়!’
কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।বলতে বলতেই রেশমা আন্টির মেয়ে হাজির!সাইদা খান মেয়েটাকে ইয়াদের পাশে বসতে বলল।মেয়েটা বসার আগেই ইয়াদ উঠে দাড়ালো তারপর বলল,’আমাকে যেতে হবে মা।’

‘কোথায় যাবি?তোর না আজকে ছুটি?’

‘মধু কে খুঁজতে।’ইয়াদ স্পষ্ট স্বরে বলল।

‘আর কতোদিন খুঁজবি ওকে?’

‘যতোদিন না পাই।’
এটা বলেই ইয়াদ দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো আর সাইদা খানের প্ল্যান ফেল হয়ে গেলো।উনি চেয়েছিলেন রেশমার মেয়ের সাথে ইয়াদের বিয়ে দিতে।আজকাল ছেলের বিষন্ন আর উদাস চেহারা ভাল্লাগে না।একটা বিয়ে দিতে পারলে হয়তো পরিবর্তন হবে কিন্তু ইয়াদকে দিয়ে কোনো কাজ জোর করে করানো যায় না।তার মর্জি হলে করবে নাহলে করবে না।
—————
সেই কখন থেকে নিহা ইফাজের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু ইফাজ আসছে না।অবশ্য আজ যেনো সময়গুলোও চা নাস্তা করে জিরিয়ে জরিয়ে যাচ্ছে।অথচ অন্যদিন বিদুৎবেগে চলে যায়।নিহা অস্থির হয়ে কতক্ষণ দরজার সামনে দাড়াচ্ছে তো কতক্ষণ বারান্দায় গিয়ে দাড়াচ্ছে!এমন করতে করতে অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো ইফাজের আগমন ঘটলো।ইফাজ ঘরে ঢুকতেই নিহা দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।আচমকা জড়িয়ে ধরায় ইফাজ একটু অবাক হলো।তারপর বলল,’আজকে এতো খুশী খুশী লাগছে যে?’

নিহা ইফাজের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,’খুশীর খবর আছে ডাক্তার সাহেব।’

‘কি খুশীর খবর।’ইফাজের চোখেমুখে কৌতুহল।

‘না না এতো সহজে খুশীর খবর দেওয়া যাবে না।আমাকে এক্ষুনি কোলে নিতে হবে।তাহলে বলবো।’

‘এখন?আমি মাত্রই তো আসলাম।একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।’

‘না ফ্রেশ হওয়া লাগবে না।এখন কোলে না নিলে আমি বলবোও না।ওকে বাই।’
এটা বলে নিহা চলে যেতে নিলেই ইফাজ ধরে ফেললো।হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে নিহাকে ঘুরিয়ে কোলে তুলি নিলো নিহাকে তারপর বলল,’এবার বলো।’

নিহা লজ্জা পাওয়া ভঙ্গিতে ইফাজের কানেকানে বলল,’তুমি বাবা হবে ডাক্তার সাহেব।’

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে