#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ৩৫
#Arshi_Ayat
মধু ইয়াদের বাবার সাথে কথা বলে জানতে পারলো আজকে ইরিনের এঙ্গেজমেন্ট।সেইজন্য ওদের দাওয়াত দিয়েছে।যেহেতু হবু শ্বশুর মশাই দাওয়াত দিয়েছে সেহেতু যেতেই হবে।তাই মা’কে ও জানিয়ে রাখতে হবে।মধু ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে মায়ের সাথে দেখা করতে গেলো।
আইরিন রহমান এলোমেলো জামা কাপড় ভাজ করছিলেন।মধু ঘরে ঢুকে বলল,’আম্মু ইয়াদের বাবা দাওয়াত দিয়েছে।আজকে দুপুরে যেতে হবে।’
‘কেনো?’আইরিন রহমান কাপড় ভাজ করতে করতেই বললেন।
‘ইয়াদের ছোটবোনের এঙ্গেজমেন্ট।তাই আঙ্কেল ফোন করে তোমাকে আর আমাকে যেতে বলেছেন।’
‘আচ্ছা যাবো।তুই তাড়াতাড়ি চলে আছিস।’
‘আচ্ছা।’
মধু মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।আজকের টিউশনি গুলো করাবে না।আজকের বদলে অন্য একদিন পড়িয়ে দিলেই হবে।
ক্লাস শেষ করে মধু বাসায় ফিরে রেডি হয়ে নিলো তারপর মা’কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
এঙ্গেজমেন্টে তেমন কেউ ছিলো না।শুধু ইয়াদের ভাই,ভাবি,মা,বাবা ইরিনের দুই একজন বান্ধবী এছাড়া আর কেউ না।আর ছেলেপক্ষ থেকে ছেলের বাবা,মা,বোন,চাচা আর জ্যাঠা।
এঙ্গেজমেন্টের সময় ইয়াদকে ভিডিও কলে রাখা হয়েছিলো।ইয়াদ’দের ওইখানে রাত!ওর চোখ,মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে বেচারা ঘুমে ঢুলছে।মধুর দেখে বেশ হাসি পাচ্ছিলো কিন্তু এতো মানুষের সামনে হাসে নি।তবে ইয়াদের একটা বিষয় বড্ড খারাপ লেগেছে মধুর ভিডিও কলে থাকাকালীন একবারও মধুর দিকে তাকায় নি ও।এমন ভাব করলো যেনো কোনোদিন দেখেই নি।আবার এদিকে ইরিনের ননদটা ড্যাবড্যাব করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তাকাবেই তো এভাবে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে কলে আসলে তো দেখবেই।একবার শুধু আজকে ফোন দে তারপর শরীর দেখায় ঘোরা আমি বের করবো!
মধু মনে মনে এগুলো বিড়বিড় করছে আর সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে।
আজকে আইরিন রহমানের সাথে ইয়াদের বাবা মায়ের বেশ ভালো করেই কথা হয়েছে।কথার ধাচ দেখে বোঝা যাচ্ছে দু পক্ষের কারোই বিয়ের বিষয়ে আপত্তি নেই কিন্তু তাতে কি বর নিজেই তো গায়েব।কি সুন্দর সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।কয়দিন পর ছেলে মেয়ে হবে।আর আমারই কপাল ফুটা!মনে মনে এমনই আফসোসের সুর তুলছে মধু।
————
সন্ধ্যার সময় ইয়াদের বাবা মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে মা আর মেয়ে দুজনই বসায় যাওয়ার জন্য রওনা হলো।হঠাৎ আইরিন রহমান বললেন,’মধু রিকশাটা থামাতে বল তো একটু।’
মধু মায়ের কথায় রিকশা থামাতে বলল।আইরিন রহমান রিকশা থেকে নেমে বলল,’তুই থাক আমি আসছি।’
‘কোথাও যাচ্ছো তুমি?’
‘সামনেই।যাবো আর আসবো।’
‘আচ্ছা চলো আমি যাচ্ছি।একা ছাড়া যাবে না।কয়দিন আগেই তো এক্সিডেন্ট হলো!’
মেয়ের ভালোবাসায় আইরিন রহমান ভালো লাগছে কিন্তু আবার খারাপও লাগছে এই ভেবে যে নিজের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জন্য মেয়েটা এতো কষ্ট দিয়েছে।মাঝেমধ্যে এগুলো মনে পড়লে বুকটা ফেটে আসে।এতো অত্যাচার করার পরও মেয়েটা তাকে আগলে রেখেছে।
আইরিন রহমান গিয়ে একটা ফুলের দোকানে গেলেন।মধু ভাবছে তার মা হঠাৎ এখানে এসেছে কেনো!আইরিন রহমান একবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন তারপর দোকানীকে বললেন,’খোঁপা পরার জন্য একটা সুন্দর করে গাজরা বানিয়ে দেন।’
মধু ভ্রু কুঁচকে বলল,’মা তুমি গাজরা পরবা?’
‘আরে না তোর জন্য নিচ্ছি।তোর খোপাটা খালি খালি লাগছে।আর আমার তো এগুলো পরার দিন চলে গেছে।সময় এখন তোদের তোরা পরবি।’
‘ধূর তুমি কি যে বলো না।’মাকে এটা বলে দোকানী বলল,’আপনি দু’টো গাজরা দিয়েন।’
‘আরেকটা কার জন্য?’
‘কার জন্য আবার তোমার জন্য।তোমার খোঁপাটাও তো খালি।’
‘ধূর আমি বুড়ো হয়ে গেছি।এখন গাজরা পরলে মানুষ কি বলবে!’
‘মানুষ যা ইচ্ছা বলুক তোমার শুনতে হবে কেনো?মানুষ আমাদের খাওয়ায় না পরায় আমারা ওদের কথা শুনে চলবো কেনো?’
‘কিন্তু…’
‘কিন্তু, টিন্তু আমি বুঝি না।আমি পরলে তুমিও পরবা।’
আইরিন রহমান আর কিছু বললেন না।মেয়ের শাসনটাই চলুক আজ!
দুটো গাজরা নিয়ে রিকশায় উঠলো দুজনে।রিকশায় বসে প্রথমে মধুই মা’কে গাজরা পরিয়ে দিলো পরে আইরিন রহমান মেয়েকে পরিয়ে দিলেন।দু’জনে মুখেই হাসি!
—————
মধু বই সামনে নিয়ে অপেক্ষা করছে ইয়াদের ফোনের।এখন রাত ১২.০১ বাজে।মা আর মিলি তো আরো আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে।হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে আর মধু সাথে সাথেই ফোন রিসিভ করে।অবশ্য প্রতিদিনই এমনটা হয়!ইয়াদ ফোন দিতে দেরি মধুর ধরতে দেরি নেই।আজকে ফোন ধরেই মধু বলল,’আজকে আমার মন খুব খারাপ।’
ইয়াদ ওপাশ থেকে কৌতুহলী হয়ে বলল,’কেনো?’
‘সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।কয়দিন পর বাচ্চাও হয়ে যাবে।আর আমি এতিমের মতো ঘুরছি!আপনি আসেন না কেনো?’
মধুর কথা বলার ভঙ্গি আর অভিযোগ শুনে ইয়াদ হেসে ফেললো।কিন্তু ইয়াদের হাসি শুনে মধু ফায়ার হয়ে বলল,’হ্যাঁ হাসি তো আসবেই।হাসেন!আরো হাসেন!ও হ্যাঁ ভালো কথা মনে পড়ছে আপনি দুপুরে খালি গায়ে ভিডিও কলে আসছিলেন কেনো?মেয়েদের শরীর দেখাইতে ভাল্লাগে?’
ইয়াদ পুরোপুরি তাজ্জব বনে গেলো মধুর কথায়।মাথা চুলকে বলল,’আরে খালি গায়ে কোথায় ছিলাম গায়ে তো স্যান্ডো গেঞ্জি ছিলো।আর বাইরের কেউ তো ছিলো না।সব তো আমরা আমরাই।’
‘স্যান্ডো গেঞ্জি পরা আর না পরা একই।আর আপনি জানেন না ইরিনের ননদটা কি কু নজরে আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলো।’
‘ওহ!তুমি এবার মানুষের নজরও মাপা শুরু করছো!হায়রে!’
‘তো করবো না।নিজের জিনিস তো নিজেরই হেফাজত করতে হবে তাই না!আর শুনুন আপনি আর এভাবে খালি গায়ে আসবেন না।’
‘আচ্ছা ম্যাম আর এভাবে আসবো না।’
‘আচ্ছা আমরা বিয়ে করবো কবে?’
‘আবার।’ইয়াদ বিরক্ত হয়ে বললেও মধু হেসে দিলো।
——————-
ইদানীং নিহার মন অনেক খারাপ থাকে আর ওর এই মন খারাপের কারণ যে ইফাজ এটা ইফাজও বুঝতে পারে।তাই আজকে একটা ফয়সালা করবে সম্পর্কটার।এভাবে একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়ে মিথ্যা সম্পর্কটা বয়ে বেড়ানো যায় না।ইফাজ ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরে রুমে আসতেই দেখলো রুম অন্ধকার। আর বারান্দা থেকে গানের আওয়াজ আসছে
“তোমার আমার প্রেম
আমি আজও বুঝিনি
ওই চোখের চাওয়াতে
প্রেম আজও দেখিনি
দূরে তবু দূরে
সরে থাকতে পারিনি
কাছে এসে কেন
কাছে আসতে পারিনি
আমি আজও বুঝিনি
আমি আজও বুঝিনি
তোমার আমার প্রেম
আমি আজও বুঝিনি
ওই চোখের চাওয়াতে
প্রেম আজও দেখিনি
সুরে সুরে গানে কবিতায়
তোমাকেই খুঁজে মন
তবু হায়
তুমি দাও না ধরা……
ইফাজ বিছানায় বসে চুপচাপ গানটা শুনছিলো।হঠাৎ গানটা বন্ধ হয়ে যায়।আর নিহা ধীর পায়ে বারান্দা থেকে উঠে এসে লাইট জ্বালিয়ে বলল,’কখন আসলে?’
‘এইতো একটু আগে।’
‘ও আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নাও।খাবার দিচ্ছি।’
এটা বলে নিহা চলে যেতে নিলেই ইফাজ নিহাকে ডাক দেয়,’শোনো।’
নিহা ঘুরে দাড়াতেই ইফাজ ইতস্তত করতে করতে বলল,’তোমার সাথে কথা আছে।’
‘আচ্ছা। আমি আসছি।’এই বলে নিহা বেরিয়ে গেলো।
ইফাজের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে গেছে ও নিহার জন্য অপেক্ষা করছে।একটু পর নিহা রুমে এসে ইফাজের মুখোমুখি বসে বলল,’হুম,বলো।’
‘নিহা আমার মনে হয় আমাদের এই সম্পর্কটা বয়ে বেড়ানো উচিত না।দেখো আমি অনেক চেষ্টা করেছি তোমার সাথে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার কিন্তু পারছি না।তোমাকেও কষ্ট দিচ্ছি নিজেও পাচ্ছি।তুমি প্লিজ ডিভোর্স দিয়ে দাও আমাকে।আমার জন্য তোমার জীবনটা নষ্ট হচ্ছে।তুমি ভালো কাউকে ডিজার্ভ করতে!’
এবার নিহা ইফাজকে থামিয়ে দিয়ে চট করে বলে উঠলো,’নাহ!আমি তোমার চেয়ে ভালো কাউকেই ডিজার্ভ করতাম না কারণ ভালো তো মানুষ একবারই বাসে।যেমন তুমি মধুকে বাসো তেমন আমি তোমাকে বাসি।তোমার নাতি নাতনি হয়ে গেলেও তোমার মনে মধুও থাকবে আর আমার মনে তুমি।এখন যদি আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করি তাহলে এখন যেমনটা তুমি আমার সাথে করছো তেমনটা আমিও তার সাথে করবো।কারণ আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।শুধু শুধু ভালো থাকার নাম করে আরেকজনকে ঠকাবো কেনো?আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে পারবো না প্রথমত তুমি।দ্বিতীয়ত বাবা মা।মানুষ দুটোকে আমি খুব ভালোবাসি।পারবো না আমি তাদের ঠকাতে।’
একটানে নিহা কথাগুলো বলে উঠে আবার বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।
——————
এখন ফোন রাখতে হবে কারণ অফিসে ফোন চালানো নিষেধ।তাই ও মধুকে বলল,’আচ্ছা এখন রাখি অফিসে চলে এসেছি।’
‘আমরা বিয়ে কবে করবো।’
‘ধ্যাত!’
বলে ইয়াদ ফোন রেখে দিলো আর মধু হাসতে হাসতে শেষ।আজকে কথা বলার সময় ‘আমরা বিয়ে কবে করবো’ এটা বলে বলে ইয়াদের মাথার তারছিড়ে ফেলেছে।
———
দেখতে দেখতে তিনটা বছরের অবসান ঘটিয়ে আজ ইয়াদ বাড়ি ফিরবে।বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে একটা উত্তেজনা কাজ করছে।এতোদিন পর ছোটো ছেলে ঘরে ফিরবে।ইয়াদকে রিসিভ করতে ওর বাবা আর ভাই গেছে এয়ারপোর্টে।
চলবে…
#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ৩৬
#Arshi_Ayat
দশদিন আগের কথা….
মধু পড়াশোনা শেষ করে ইয়াদের ফোনের অপেক্ষা করছিলো।আর অনলাইনে বিয়ের লেহেঙ্গা দেখছিলো।বিয়েতে কোন লেহেঙ্গা পরলে ভালো লাগবে এটা নিয়েই গবেষণা চলছিলো।মধু মেরুন রঙের একটা লেহেঙ্গা দেখতে দেখতে বাঁকা হাসি দিয়ে মনে মনে বলছিলো ‘এই একসপ্তাহে আমি সব শপিং করে ফেলবো।আর দশদিন পর যেদিন ইয়াদ আসবে সেদিনই ওকে বিয়ে করবো।এবার আর পালাতে পারবে না চান্দু।’
মনে মনে এগুলো বলতে বলতেই কল এলো ইয়াদের।মধু রিসিভ করতেই ইয়াদ বলল,’কি করছো?’
‘আমার জন্য বিয়ের লেহেঙ্গা আর আপনার জন্য শেরওয়ানি দেখছি।’মধু হাস্যজ্বল কন্ঠে উত্তর দিলো।
ইয়াদ প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,’মধু একটা কথা বলবো রাগ করো না প্লিজ।’
ইয়াদের এমন কন্ঠস্বরে মধু অনেকটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,’কি হয়েছে ইয়াদ?’
‘ভিসা আর পাসপোর্ট সংক্রান্ত ঝামেলার জন্য আমাকে আরো একবছর অপেক্ষা করতে হবে।একবছর পর আমি ফিরতে পারবো।’
ইয়াদের কথা শুনে মধু একদম চুপ হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে ফোনের ওপাশে কেউ নেই।মধুর এমন নিস্তব্ধতা দেখে ইয়াদ আবার বলল,’মধু কিছু বলো।’
‘কি বলবো?’নিরুত্তাপ কন্ঠে জবাব দিলো মধু।
‘প্লিজ আরেকটা বছর অপেক্ষা করো।’
এবার মধু প্রচন্ড রেগে গেলো।এতক্ষণ চুপ থেকে রাগটা কন্ট্রোল করছিলো কিন্তু এখন আর পারলো না।সার ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করে বলল,’তোর আর কোনোদিন আসা লাগবে না।ওখানেই বিয়ে করে সুখে শান্তি থাক।আমিও বিয়ে করে ফেলবো।তিনটা বছর আমাকে কষ্ট দিয়ে এখন বলতেছিস আরো একবছর অপেক্ষা করতে।’বলতে বলতেই মধু কেঁদে ফললো।তারপর ফোনটা বন্ধ করে দিলো।
ওপাশ থেকে ইয়াদ আর কিছুই বলার সুযোগ পেলো না।ইয়াদের রুমমেট তৌহিদ বলল,’ইয়ার তুই বেশি করে ফেলেছিস।ভাবী অনেক কষ্ট পাইছে।বলে দিলে কি হতো?বেচারি কি সুন্দর বিয়ের প্ল্যানিং করছিলো।আর তুই মুডটাই নষ্ট করে দিলি।এখন শান্তি?’
ইয়াদ মৃদু হেসে তৌহিদের পিঠে চাপড় দিয়ে বলল,’বলে দিলে তো সারপ্রাইজ হতো না।এখন ও আরো একবছর অপেক্ষা করার প্রস্তুতি নিবে কিন্তু আমি যখন দশদিন পর গিয়ে ওর সামনে দাড়াবো।ওর ফিলিংসটা দেখার মতো হবে।আমি এটা মিস করতে চাই না।’
‘বাহ!ভালোই তো প্ল্যান করেছিস।তবে দেখিস সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যাস না।’
ইয়াদ তৌহিদের কথা সিরিয়াসলি নিলো না।ইয়াদ ভাবছে পাগলিটা যখন হঠাৎ করেই ওকে সামনে দেখবে তখন কি করবে?শক্ত করে কি জড়িয়ে ধরবে!নাকি অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিবে!নাকি বলবে,’আপনি খুব খারাপ!শুধু আমাকে কষ্ট দেন।’
ইয়াদ নিজের মতো করেই মধুর রিয়েকশন কল্পনা করছে।
তবে এই দশদিনে একবারের জন্যও মধু ফোন রিসিভ করে নি এতোই রেগেছিলো।আজ প্রিয়তমার সমস্ত রাগ অভিমান ভাঙাতে প্রিয়তম স্বয়ং হাজির হবে তার প্রিয়তমার সামনে।
এগুলো ভাবতে ভাবতেই ইয়াদ লাগেজ নিয়ে হাটছিলো।সামনে বাবাকে দেখতে পেয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,’কেমন আছো বাবা?’
‘আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি।তুই কেমন আছিস?’
‘এতোদিন ভালো ছিলাম না।তোমাদের ছাড়া তিনটা বছর খুব কষ্টে কেটেছে।কিন্তু এখন ভালো আছি।’
এবার পাশ থেকে ইফাজ খোঁচা মেরে বলল,’এদিকে আমি আছি।’
ইয়াদ হেসে ভাইকেও জড়িয়ে ধরলো।তারপর তিন বাপ-বেটা বাসার দিকে রওনা হলো।ইফাজ ড্রাইভিং সিটে বসলো।ওর পাশে ইয়াদ আর পিছনে ইয়াফ খান।গাড়িটা ইফাজ নতুন কিনেছে কিছুদিন হলো।নিহা’ই অবশ্য পছন্দ করেছিলো।আর নিহার পছন্দের ওপর সবারই আস্থা আছে।
বাসায় পৌঁছে সাইদা খান, ইরিন আর নিহার সাথে দেখা করেই ইয়াদ মধুর বাসার দিকে ছুটলো।যাওয়ার সময় ভাইয়ের গাড়িটাও নিয়ে গেলো।আজকে প্রিয়তমার সাথে একটা লং ড্রাইভও হয়ে যাবে।বারবার গাড়ির মিররে নিজের চেহারা দেখছে আর নিজে নিজেই হাসছে ইয়াদ।যতোটা মধুর বাড়ির দিকে এগুচ্ছে মনে হচ্ছে যেনো হৃদয়টা ফেটে বেরিয়ে যাবে এতো জোরে লাফাচ্ছে!উত্তেজনায় ইয়াদের অবস্থাই কাহিল।তিনটা বছর পর আবার সামনাসামনি!মধুদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো।তিনতলায় পৌঁছে দরজায় নক দিলো।দুই/তিনবার নক দিতেই অচেনা একটা মেয়ে দরজা খুললো।ইয়াদকে একবার আগা গোড়া দেখে নিয়ে বলল,’কে আপনি?কি চাই?’
‘মধুকে চাই না মানে মধু আছে?’
‘না এই বাসায় কোনো মধু থাকে না।’
ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল,’জ্বি না,এই ফ্ল্যাটে মধুরা থাকতো।’
‘আরে ভাই আমরা নতুন আসছি এই বসায়।আগে কারা ছিলো আমরা জানি না।আপনি বাড়িওয়ালাকে জিগ্যেস করেন।’
এটা বলেই মেয়েটা ইয়াদের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো।ইয়াদ চিন্তিত মুখে নিচতলায় গিয়ে বাড়িওয়ালার ফ্ল্যাটে নক করলো।বাড়িওয়ালার বউ বের হয়ে এলেন।ইয়াদ মহিলাকে সালাম দিয়ে বলল,’আন্টি মধুরা কি চলে গেছে?’
‘হ্যাঁ ওরা তো গত মাসেই রুম ছেড়ে দিয়েছে।’
‘ওহ!কোথায় গেছে বলতে পারবেন?’
‘না এটা জানি না।বলে নি ওরা।’
‘ওহ!আচ্ছা আন্টি।ধন্যবাদ।’
মহিলাটা দরজা আটকে দিলো।ইয়াদ চিন্তিত মুখে বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো।পকেট থেকে ফোন বের করে মধুকে কল দিলো।ফোন বন্ধ!দুইদিন ধরে ফোন বন্ধই আছে।ইয়াদ কল লিস্ট অনেক খুঁজে আরিয়ার নাম্বার বের করে আরিয়াকে ফোন দিলো কিন্তু আরিয়া কল ধরছে না।বেশ কয়েকবার ফোন করার পরও যখন কল ধরছে না তখন ইয়াদের ভেতর ভয় চলে আসলো পাশাপাশি চিন্তাও হচ্ছে।এখন আরিয়ার বাসায় যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।ইয়াদ আরিয়ার বাসার দিকে রওনা হলো।ওর বাসায় এসে নক করতেই আরিয়া দরজা খুললো।ইয়াদকে দেখে বলল,’আমি জানতাম আপনি আসবেন।একটু দাড়ান,আসছি।’
এটা বলেই আরিয়া ভেতরে গিয়ে দুইমিনিট পর আসলো।তারপর বলল,’চলুন।’
ইয়াদ আরিয়ার সাথে বিনাবাক্যে বের হলো।বাসা থেকে বের হতেই ইয়াদ বলল,’কি হয়েছে আরিয়া?’
আরিয়া কিছু না বলে একটা বিয়ের কার্ড ইয়াদের হাতে দিলো।ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল,’এটা দিলে কেনো?এটা কার?’
‘খুলে দেখুন।দেখলেই বুঝবেন।’
ইয়াদ কিছুটা কৌতুহল কিছুটা ভয় নিয়ে কার্ডটা খুললো।কনের নামের জায়গায় ‘তয়ত্রি রহমান মধু’ লিখা।শুধু এতটুকু দেখেই ইয়াদের মাতা চক্কর দিলো।ইয়াদ আরিয়ার দিকে তাকাতেই আরিয়া বলল,’মধুর বিয়ে হয়ে গেছে।আরো একসপ্তাহ আগে।’
এটা বলেই ইয়াদের দেওয়া রিং টা ওর হাতে দিয়ে বলল,’যাওয়ার সময় এই রিং টা আমার হাতে দিয়ে বলেছিলো আপনাকে এটা দিতে।
ইয়াদ এখনো বুঝে উঠতে পারছে না আসলে কি হচ্ছে এটা!মধু বিয়ে করবে কেনো?এইতো দশদিন আগেও তো কথা হলো।দশদিনের মধ্যে এমন কি হলো যে বিয়ে করে ফেলতে হবে।ইয়াদ বহুকষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল,’কিন্তু কেনো এগুলো করলো ও?’
‘আমি জানি না।বলে নি আমাকে।শুধু বিয়ের কার্ডটা আর রিং টা দিয়ে চলে গিয়েছিলো।’
‘ও এখন কোথায় থাকে? ঠিকানা আছে তোমার কাছে?’
‘না,ও ঠিকানাও দেয় নি।আমি বারবার জিগ্যেস করেছিলাম কিন্তু বলে নি।’
অতঃপর আরিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’আচ্ছা ভাইয়া আমি যাই।আমার যা বলার ছিলো আমি বলেছি।’
ইয়াদ হ্যাঁ,না কিছুই বলল না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো আর আরিয়া চলে গেলো।
———————
এই অবস্থায় কাকে কি বলা উচিত অথবা কি করা উচিত কিছুই মাথায় ঢুকছে না ইয়াদের।কোন কারণে মধু এতো বড়ো শাস্তি দিলো!ইয়াদ আরিয়ার সাথে কথা বলে আর বসায় যায় নি।নদীর পড়ে এসে বসেছিলো।বারবার মনে পড়ছে মধুর সাথে কাটানো সময়গুলো।এতো সহজে ও এই স্মৃতিগুলো ভুলে যেতো পারলো!
বাসা থেকে অনেকবার কল দিয়েছে সবাই কিন্তু ইয়াদ কারো কলই রিসিভ করে নি।
তাই ইফাজ,ইয়াফ খান দু’জনেই খুঁজতে বের হলো।অনেক খোঁজাখুঁজি করে ইফাজ নদীর পাড়ে গিয়ে দেখলো ওর গাড়িটা সেখানে পার্ক করা।কিন্তু ইয়াদকে দেখা যাচ্ছে না।ইফাজ আশেপাশে ভালো করে খুঁজলো কিন্তু পেলো না।ঘাট কিনারে নামতেই দেখলো ইয়াদ বসে আছে।ইফাজ পেছন থেকে ডাক দিলো,’এই ইয়াদ,ওইখানে কি করিস।উঠে আয়।’
ইয়াদের কোনো হেলদোল নেই।ইফাজ নেমে এসে ইয়াদের পাশে বসলো।ইয়াদকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,’কি রে কথা বলছিস না কেনো?’
ইয়াদ ইফাজের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’মধুর বিয়ে হয়ে গেছে।’
শুধু এতটুকু বলেই ইয়াদ ঢলে পড়লো।ইফাজ দ্রুত ইয়াদকে আকড়ে ধরলো।
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)