#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ৩৩
#Arshi_Ayat
মেঝেতে বসে হাঁটু মুড়ে চুপচাপ বসে আছে মধু।একটু আগে আইরিন রহমান অনেকবার ডেকে গেছেন কিন্তু মধু স্ট্যাচু হয়ে বসে ছিলো।কোনো জবাব দেয় নি।কাল ইয়াদের সাথে মনোমালিন্য হওয়ার পর থেকেই এই অবস্থা।
হঠাৎ দরজার বাইরে আরিয়ার গলা শোনা গেলো।আরিয়া বারবার ডাকছে।হঠাৎ আরিয়ার একটা কথায় মধুর প্রাণ টাই উড়ে যেতে নিলো।বসা থেকে উঠে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,’কি হয়েছে ইয়াদের?’
আরিয়ার মধুর হাত ধরে ওর টেনে এনে সোফায় বসিয়ে বলল,’শান্ত হ মধু।’
‘কি শান্ত হবো!কোন হসপিটালে ইয়াদ?তাড়াতাড়ি চল।এখনি যেতে হবে।সব দোষ আমার।আমার জন্য এই অবস্থা হলো।ওর কিছু হলে আমি মরে যাবো।’
মধু একনাগাড়ে এগুলো বলছে আর কাঁদছে। ইয়াদের কাছে যাওয়ার জন্য হন্তদন্ত হয়ে দরজা দিয়ে বের হতে নিলেই আরিয়া ওর হাত ধরে ফেললো।মধু বাঁধা পেয়ে বলল,’তাড়াতাড়ি যেতে হবে আমার।যেতে দে আমাকে।’
আরিয়া মধুকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’পাগলামি করিস না।ইয়াদ ভাইয়ার কিছু হয় নি।তুই দরজা খুলছিস না বলে মিথ্যে বলেছিলাম।’
মধু এটা শুনে আচমকা আরিয়ার গালে একটা চড় মেরে দিলো।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,’এটা না বললেও পারতি।’
আরিয়া অনুতপ্ত গলায় বলল,’সরি রে,ইয়াদ ভাইয়া সকাল বেলা আমাকে ফোন দিয়ে অনেক অনুরোধ করে বলেছিলো তোকে যেনো এয়ারপোর্টে নিয়ে যাই।’
মধু চোখ মুছে কঠোর গলায় বলল,’যাবো না আমি।’
‘প্লিজ মধু।এমন করিস না।নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস।ভাইয়াকেও কষ্ট দিচ্ছিস।এমন করে কি সুখ পাচ্ছিস বল তো?’
‘না,আমি যাবো না।ও তো আমাকে ভালোবাসেই না।আমি গিয়ে কি করবো!আমি যাবো না।’মধু ভেজা গলায় বলল।
‘পরে আবার আফসোস করিস না।’আরিয়া থমথমে গলায় বলল।তারপর চলে যেতে নিলেই মধু বলল,’চলে যাচ্ছিস?’
‘হ্যাঁ তো কি করবো?তোকে নিতে এসেছিলাম।কিন্তু এখন তো তুই যাবি না তো থেকে কি করবো?’
মধু একমিনিট চুপ করে থেকে বলল,’বস,আমি পাঁচমিনিটে রেডি হয়ে আসছি।’
আরিয়া কিছু বলল না।নিঃশব্দে সোফায় বসে পড়লো।আর মধু ওয়াশরুমে চলে গেলো।মধু ওয়াশরুমে যাওয়ার পর আরিয়া মুচকি হাসলো।কারণ ও জানতো মধু যাবেই।
কাল যখন ওদের মনোমালিন্য হয়েছিলো তখন ইয়াদ আরিয়াকে ফোন দিয়ে সব বলেছিলো।ইয়াদের ভিষণ মন খারাপ ছিলো মধুকে ভুল বুঝেছে বলে।তারপর যখন অনেকবার ফোন দিয়েও মধুকে পায় নি তখন রাত বারোটার সময় আরিয়াকে আবার ফোন দিয়ে বলেছিলো,’তোমার বান্ধবী যেনো আমাকে বিদায় দিতে না আসে।আমি মরে গেলেও যেনো না আসে।’অনেকটা অভিমানী গলায়ই বলেছিলো।
তারপর আরিয়া বুঝেছিলো দু’পক্ষেই অভিমানের পাল্লা ভারী হয়ে গেছে।এখন ওকেই কিছু করতে হবে।তাই আরিয়া ভাবলো সকাল বেলা মধুকে এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবে।এমনি বললে তো আরো ফুলে থাকবে তাই বানিয়ে বানিয়ে বলতে হলো।
মধু তৈরি হয়ে আসলো।তারপর আইরিন রহমানকে বলে ওরা দুইজন বেরিয়ে গেলো।
—————
ইমিগ্রেশনের পর ইয়াদ ওর বাবা,মা,বোন,ভাই,ভাবীর সাথে কথা বলছিলো।ওর বাবা,মা অবশ্য মধুর কথা জিগ্যেস করেছিলো।ইয়াদ কিছু একটা বলে কাটিয়ে নিলো।কিন্তু মন থেকে ভিষণ ভাবে চাইছে যেনো একবার দেখা হয়!কিন্তু ও তো আসে নি!কিভাবে দেখা হবে?একটু পরই ফ্লাইট!ইয়াদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।যাওয়ার সময় এমনটা সত্যিই চায় নি ইয়াদ!
আর এদিকে আরিয়া আর মধু এয়ারপোর্টে চলে এসেছে কিন্তু চেকপোস্টের দায়িত্বরত পুলিশ ওদের ঢুকতে দিচ্ছে না পাসপোর্ট ছাড়া।এখন পাসপোর্ট কোথায় পাবে?আর পাসপোর্ট ছাড়া তো ঢোকাও যাবে না।কি মুশকিল!
হঠাৎ করে আরিয়ার মাথায় এলো ইয়াদকে ফোন করলেই তো হয়।আরিয়া ইয়াদকে ফোন দিলো।ইয়াদ আচমকা কারো ফোন পেয়ে স্ক্রিনে দেখলো আরিয়া!ফোন রিসিভ করতেই আরিয়া বলল,’ভাইয়া একটু বাইরে আসেন।চেকপোস্টে আঁটকে আছি।মধুও এসেছে।’
মধুর কথা শুনে ইয়াদের যেনো জানে পানি এসেছে।আভিমান পায়ে ঠেলে বেরিয়ে এলো।হ্যাঁ মধু এসেছে।ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে ইয়াদের মায়া হলো।ইশ!কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।নিজেকে যেনো ভাগ্যবান মনে হচ্ছে কেউ একজন তার বিরহ ব্যাথায় কাতরাচ্ছে!ইয়াদ আশেপাশের লোকজন উপেক্ষা করে দুইবাহু মেলে ধরলো মধুর দিকে।এবার মধুর সাড়া দেওয়ার সময়।ছুটে এসে ইয়াদের বুকে নিজেকে সঁপে দিলো।ইচ্ছে করছে না ইয়াদকে যেতে দিতে।কিন্তু যেতে তো হবে!এই কথা মনে করেই আবারও আখিদ্বয়ে জলে পরিপূর্ণ হলো।ইয়াদ মধুর কপাল নিজের কপালে ঠেকিয়ে বলল,’এখনো কাঁদবে?’
মধু চোখের জল মুছে বলল,’না আর কাঁদবো না।’বলতে বলতেই আবার কেঁদে দিলো।আর ইয়াদের বুকে কয়েকটা কিল ঘুষি দিয়ে বলল,’আপনি অনেক খারাপ।আমাকে রেখে চলে যাচ্ছেন।যান,যান এসে দেখবেন আমি বিয়ে করে ফেলেছি।’
ইয়াদ মধুর চোখ মুছে।নাক টেনে মুচকি হেসে বলল,’তাই?মেয়ের সাহস কতো বড়।করাচ্ছি তোমাকে বিয়ে।’
এটা বলে মধুর বাম হাতটা টেনে নিয়ে পকেট থেকে একটা রিং বের করে পরিয়ে দিলো।তারপর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল,’এই যে।ট্যাগ লাগিয়ে দিলাম।এখন থেকে তুমি শুধু আমার।এরপর কাউকে বিয়ে করা তো দূরের কথা মুখে আনলেও খবর আছে।’
মধু রিংটার দিকে তাকিয়ে হাসলো।ইয়াদ মধুর মুখটা তুলে ধরে বলল,’এই মেয়ে,কাদবে না একদম।যখনই আমার কথা মনে পড়বে মুচকি মুচকি হাসবে।যেনো সবাই বুঝে তুমি তোমার ইয়াদকে মন করছো।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবে।আমি যেনো ফিরে এসে আটচল্লিশ কেজির মেয়েটাকে আটানব্বই কেজে দেখি।’এটা বলে ইয়াদ হাসলো।আর মধু গাল ফুলিয়ে ইয়াদের বুকে আরেকটা কিল দিয়ে দিলো।মুখ বাকিয়ে বলল,’আমি মোটা হয়ে গেলে আপনিই আমাকে কোলে নিতে পারবেন না।’
‘পারবো।’ইয়াদ দৃড়কন্ঠে বলল।
মধু কিছু বলল না।শুধু হাসলো।তারপর ইয়াদ আবার বলতে শুরু করলো,’ঠিকমতো পড়াশোনা করবে।মন খারাপ করবে না একদম।আর ভালোবাসা গুলো জমা করবে।তিনবছর পর যেনো আমি আসলে ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজতে পারি।’
মধু বলল,’আর কোনো আবদার আছে?’
‘আছে।’ইয়াদ দুষ্ট হসে বলল।
মধু ইয়াদ মতলব বুঝলো না।তাই বলল,’কি আবদার?’
ইয়াদ মুখে বলল না ইশারায় নিজের গাল দেখিয়ে বোঝালো।মধু চোখ বড় বড় করে বলল,’এসব কি হচ্ছে?’
‘ইশ!আমার থেকে তো প্রতিদিনই নাও।আর নিজে দিতেই কিপ্টামি।’
‘কিন্তু এখন…’
‘আমি কিছু জানি না।আমার চাই মানে চাই।না দিলে এয়ারপোর্টে গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদবো আর কেউ জিগ্যেস করলে বলবো তুমি আমাকে চুমু দাও না সেইজন্য কাঁদছি।’
মধু লাজুক হেসে বলল,’অসভ্য।’
তারপর ওর গালে আলতে করে একটা চুমু দিয়ে বলল,’খুশী?’
‘একটু একটু।তবে চলবে।এসে বাকিটা বুঝে নিবো।’
তারপর কিছুক্ষণ পর ইয়াদকে বিদায় দিলো মধু।ইয়াদ ভেতরে চলে গেলো।ইয়াদ চলে যাওয়ার পরপরই মধুর চোখে আবারও পানি চলে এলো।আরিয়া এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছিলো।ইয়াদ চলে যাওয়ার পর মধুর কাছে আসলো।মধু আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে আবারও কাঁদলো।
——————-
সারাদিনে কোনো কাজে মন বসে নি মধুর।সারাক্ষণ শুধু তাহারেই পড়ে মনে।ইয়াদকে বিদায় দিয়ে আর ভার্সিটিতে যায় নি মধু।বাসায় চলে এসেছিলো।সারাদিন তো যেমন তেমন কাটিয়ে দেওয়া গেছে।কিন্তু রাতে কেমন যেনো নিঃসঙ্গ অনুভূতি হচ্ছে।
মধু জানালায় মাতা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তিনটা বছর তাকে ছাড়া কিভাবে কাটবে!হঠাৎ মনে পড়লো ইয়াদের দেওয়া জ্যাকেটের জথা।মনে পড়ে গেলো প্রথম দেখা।ওয়ারড্রব থেকে জ্যাকেট’টা বের করে ওটা পরে বসে রইলো।পুরোনো স্মৃতিগুলো একের পর এক চোখের সামনে ভাসছে।
ঘুম আসছে না কিন্তু মাথাব্যথা হচ্ছে তাই।জ্যাকেট টা খুলে আবার ওয়ারড্রবে যত্ন করে রেখে দিলো।তারপর মায়ের রুমে পা বাড়ালো।রুম অন্ধকার!মা ঘুমিয়ে গেছে ভেবে মধু চলে যেতে নিলে আইরিন রহমান ডেকে বললেন,’আয় আমার পাশে শুয়ে পড়।’
মন খারাপের মাঝে এই কথাটা যেনো মধুর মনটা শীতল করে তুললো।বিনাবাক্যে মায়ের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।আইরিন রহমান মধুর মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলেন!আহা,কি শান্তি!
মধু পাশ ফিরে আইরিন রহমানকে জড়িয়ে ধরলো।এভাবে প্রায় কতো বছর আগে জড়িয়ে ধরেছে মাকে মনে নেই!
চলবে…
#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ৩৪
#Arshi_Ayat
মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিলো মধু।হঠাৎ করেই বাইরে ঝড় বৃষ্টি শুরু হলো।ঝড়ো বাতাসে জানালা বারবার বাড়ি খাচ্ছে।মধু আর আইরিন রহমান শোয়া থেকে উঠে সব জানালা,বারান্দার দরজা আটকে দিলো।মধুর এখন ভয় হচ্ছে।ইয়াদ ঠিকমতো পৌঁছাতে পেরেছে কি না!এখনো তো ফোন করলো না।এগুলো ভাবতে ভাবতেই ফোন বেজে ওঠলো।মধু স্ক্রিনে দেখলো আননোন নাম্বার।আর এটা বাংলাদেশের নাম্বার না।তারমানে ইয়াদ ফোন দিয়েছে!মধু রিসিভ করতেই ইয়াদ বলল,’আমি আধঘন্টা হলো পৌঁছেছি।তুমি চিন্তা করো না।আর এবার ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পড়ো।একদম রাত জাগবে না।’
‘আচ্ছা,পাঁচ মিনিট কথা বলি?’মধু অনুরোধের সুরে বলল।
ইয়াদ ওর অনুরোধ ফেলতে পারলো না।বলল,’আচ্ছা,আমি ঘড়িতে দেখছি জাস্ট পাঁচ মিনিট।’
এরপর অবশ্য পাঁচ মিনিট না একটু বেশিই কথা হয়েছিলো।
—————
‘কে বাঁশী বাজায় রে
মন কেনো নাচায় রে
আমার প্রান যে মানে না
কিছুই ভালো লাগে না…..’
নিহা বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুনগুনিয়ে গান গাইছে আর বৃষ্টি উপভোগ করছে।বারান্দায় নিহাকে দেখে ইফাজ ওর পাশাপাশি এসে দাড়ালো।বলল,’আজ ভিষণ খুশী খুশী লাগছে যে?’
নিহা ইফাজের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,’আজকে আব্বু আম্মু আসবে আমাদের নিতে।’
ইফাজ ভ্রু কুঁচকে বলল,’আমাদের মানে আমিও যাবো নাকি?’
‘হ্যাঁ।’
‘নিহা তোমার কি মাথা খারাপ!আমার ডিউটি আছে।রোগীরা আমার জন্য অপেক্ষা করে!আমি পারবো না যেতে।’
‘আচ্ছা ঠিকাছে।একটা দিন অন্তত থাকো প্লিজ।’নিহা করুণ গলায় বলল।
‘একদিনও না।’
এই বলে ইফাজ বেরিয়ে গেলো।এতক্ষণ বাইরে বৃষ্টি পড়লেও এখন নিহার চোখও বৃষ্টিদের সাথে তাল মেলাচ্ছে।নিহা বারান্দার গ্রীল আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বলল,’যেদিন তোমার নামে কবুল বলেছিলাম সেদিন ভেবেছিলাম আমি তোমাকে পেয়ে গেছি কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম আমি তোমাকে পাই নি।তুমি কখনোই আমার হবেও না।’
বৃষ্টির গতি সকাল সাড়ে দশটার সময় কমে এসেছে।ড্রইং রুমে নিহা আর ইরিন কথা বলছিলো।হঠাৎ দরজায় বেল বাজলো।নিহা উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো ওর আব্বু আম্মু এসেছে।নিহা মাকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর দুজনকেই ভেতরে এনে সোফায় বসালো।এরমধ্যেই ইরিন সাইদা খান আর ইয়াফ খানকে ডেকে এনেছে।চার বেয়াই বেয়াইন মিলে খোশগল্প শুরু করলো।নিহা কিচেনে গিয়ে নাস্তা নিয়ে আসলো।গল্প করতে করতেই এক ফাঁকে নিহার মা ইফাজের বাবাকে বললেন,’আপনাদের আপত্তি না থাকলে নিহা আর ইফাজকে কিছুদিনের জন্য আমরা বাড়ি নিয়ে যেতে চাই।’
‘না বেয়াইন সাহেব কোনো আপত্তি নেই।যাক ঘুরে আসুক।কিন্তু আপনার এই মেয়েটা না থাকলে আমার কষ্ট হবে।সকাল বলে উঠে ওর হাতের চা খেতে পারবো না।’এটা বলেই ইয়াফ খান হাসলেন।
নিহা শ্বশুরের পাশে এসে বসলো। বলল,’বাবা,আমি দুই তিন পরই চলে আসবো।’
ইয়াফ খান নিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।তারপর ইফাজকে ডেকে বললেন,’যা নিহার সাথে গিয়ে কয়দিন থেকে আয়।’
ইফাজ বলল,’কিন্তু বাবা…’
‘কোনো কিন্তু না।যা কয়দিন ঘুরে আয়।’
ইফাজ আর বাবার কথার ওপর কথা বলল না।এটা দিকে নিহা মনে মনে হাসলো।ও আগে থেকেই ইফাজের জামা কাপড় নিয়ে নিয়েছিলো কারণ ইফাজ না গেলে ও নিজেও যাবে না।অগত্যা ইফাজকে যেতেই হলো।
—————
মধু বিকেল বেলা বেরিয়েছিলো আরিয়াদের বাসায় যাওয়ার জন্য।বাসায় বসে বসে বোর হচ্ছিলো।ভেবেছিলো আরিয়ার সাথে একটু ঘুরে আসবে কিন্তু ওদের বসায় এসে দেখে দরজায় তালা মারা।তারপর আরিয়াকে ফোন দিয়ে জানতে পারলো ওরা সবাই গ্রামে গেছে।আরিয়াও নেই!ইয়াদও নেই!কি আর করার মধু একা একাই হাটছিলো।পেছনে ইফাজও ছিলো কিন্তু মধু দেখতে পায় নি।অবশ্য ইফাজও মধুকে খেয়াল করে নি।একটু হেটে রাস্তার মোড়ে দেখলো ভ্যানগাড়িতে গোলাপ ফুল,বেলি,আর বকুল ফুলের মালা নিয়ে বসেছে।মধু গিয়ে একটু বকুলের মালায় হাত দিলো সাথে সাথে ইফাজও সেই মালাটাই ধরলো।একদম অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলো ঘটনাটা!কেউই কাউকে খেয়াল করে নি।ইফাজ যখন মধুর দিকে তাকালো মধুও তাকালো।ইফাজকে দেখে সালাম দিয়ে বলল,’কেমন আছেন ভাইয়া?’
ইফাজ অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,’ভালো।’
তারপর অন্য একটা মালা কিনে চট করে ওখান থেকে চলে গেলো মধুকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই।ইফাজ চলে যাওয়ার পর মধু মনে মনে বলল “ইয়াদের ভাইটা এমন কাটখোট্টা কেনো?মনে হয় অহংকারে পা মাটিতে পরে না।ইয়াদের ভাই বলে না হলে জীবনেও কথা বলতাম না।’
মনে মনে এগুলো বলে মধুও একটা মালা কিনে আবার হাঁটা শুরু করলো।আর ইফাজ ওর হাতের বকুলের মালাটার ঘ্রাণ নিয়ে বলল,’আমি কখনো তোমার সামনে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করবো না।কখনো না!হ্যাঁ তবে তোমার সুখের সময় না থাকতে পারলেও দুঃখের সময় ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেবো।ভালো থেকো তুমি।’
এরপর ইফাজও অন্যদিকে চলে গেলো।
————–
ইয়াদ যাওয়ার প্রায় দুইবছর পূর্ণ হয়েছে।প্রথম প্রথম মধুর কষ্ট হলেও এখন মানিয়ে নিয়েছে।আর মাত্র একটা বছরই তো অপেক্ষা করতে হবে!সারাদিনে ভার্সিটি ক্লাস আর টিউশনি করিয়েই দিন যায় মধুর।আজও ব্যাতিক্রম হয় নি।সবকাজ শেষ করে সন্ধ্যার সময় বাসায় ঢুকলো মধু।ফ্রেশ হয়ে ফোন নিয়ে বসলে।এখনো ইয়াদ কল দেয় নি।ইদানীং ইয়াদ সময়ই দেয় না।খুব ব্যস্ত থাকে তাই।তবুও মধু কিছু বলে না।কিন্তু আজ কেনো জানি ইয়াদের সাথে সারা রাত কথা বলতে মন চাইছে।মন চাইছে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে।বলতে ইচ্ছে করছে,’আপনাকে ছাড়া আমি ভালো নেই।’
অপেক্ষা করতে করতে রাত বারোটা বেজে গেছে।কিন্তু ইয়াদের কল আর আসে না।আজকে কি ফোন দিবে না ইয়াদ?আইরিন রহমান ঘরে এসে মধুর পাশে বসে বললেন,’ঘুমাবি না?’
‘হ্যাঁ,একটু পরই ঘুমাবো।তুমি যাও।’
‘আচ্ছা তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়িস।’
‘আচ্ছা।’
আইরিন রহমান মধুর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।মধু ফোন সামনে রেখে টেবিলের ওপর মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো।
কাঁদতে কাঁদতে মধু ঘুমিয়েই পড়েছিলো।হঠাৎ ফোনের আওয়াজে মধুর ঘুম ছুটে যায়।ইয়াদ ফোন করেছে।মধু রিসিভ করে চুপ করে রইলো।ওইপাশ থেকে ইয়াদ অনুতপ্ত কন্ঠে বলল,’সরি,মধু একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের কাজে বিজি ছিলাম।’
মধু তারপরও কথা বলল না।ইয়াদ আবারও বলল,’মধু প্লিজ কথা বলো।আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা করো।আমি ইচ্ছে করে এমন করি নি।’
মধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশ কন্ঠে বলল,’আপনি আর আগের ইয়াদ নেই।অনেক পাল্টে গেছেন।অবশ্য আপনার দোষ নেই।সময়ের সাথে সাথে তো সবাই পাল্টায় আপনি ও ব্যাতিক্রম নন।শুধু আমিই পাল্টাতে পারলাম না।আপনাকে এখনো পাগলের মতো ভালোবাসি।প্রতিদিন ছটফট করি আপনার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু আপনি ব্যস্ততা দেখিয়ে দায়সারা কথা বলে রেখে দেন।আপনি জানেন না আপনি কল রেখে দেওয়ার পর প্রতিটা সেকেন্ড আমার দমবন্ধ লাগতো!কখন আবার আপনি ফোন করবেন।যাক বাদ দেন এগুলো।এখন বলুন কি করছেন?’
এতক্ষণ সবকথা ইয়াদ মনোযোগ দিয়ে শুনেছে।মধুর কান্নভেজা কন্ঠটা ইয়াদের বুকে কঠিন ভাবে আঘাত করলো।কিন্তু কি করবে!লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপে এমনই হয়।ব্যস্ততার জন্য একটু সময় না দিতে পারলেই অপরপক্ষের মানুষটা ভেবে বসে তার ভালোবাসার মানুষটা হয়তো বদলে গেছে।কিন্তু সে তো এটা জানে না মনটা তারও পোড়ে।কিন্তু কি করার! বিদেশের মাটিতে টিকে থাকতে পড়াশোনার পাশাপাশি জবও করতে হয়।জব আর পড়াশোনা করে শরীর আর চলে না।তবুও যতোটুকু সময় পাওয়া যায় ততোটা সময় ভালোবাসা মানুষটাকেই দেয়।
ইয়াদ মধুর অভিযোগ গুলো শুনলো।কিন্তু কিছু বলল না।দেশে এসেই নাহয় সব অভিমান মেটানো যাবে।তাই ইয়াদ মধুর কথার জবাব দিয়ে বলল,’ক্লাস শেষ করে অফিসে যাচ্ছি।’
এবার মধু আবদার করে বলল,’আজকে আমার সাথে অনেক্ক্ষণ কথা বলবেন প্লিজ।’
‘আমিতো অফিসে যাচ্ছি।’
‘থাক বলা লাগবে না।’
মধু খট করে ফোনটা কেটে দিলো।তারপর ফোন বন্ধ করে ঘুমের ঔষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।কারণ এখন ঘুমের ঔষুধ না খেলে ঘুম তো আসবেই না কাঁদতে কাঁদতে মাথাব্যথা হয়ে যাবে।
এভাবেই মধু আর ইয়াদের দিনগুলো যাচ্ছে।কখনো ঝড়, কখনো বৃষ্টি, কখনো পূর্ণিমা!
————
মধু ভার্সিটির জন্য বের হবে এমন সময় ইয়াদের বাবা মধুকে ফোন দিলো।মধু রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলল,’কেমন আছেন আঙ্কেল?’
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি?’
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আঙ্কেল।সবাই কেমন আছে?’
‘সবাই ভালোই আছে।শোনো আজকে তোমার মাকে নিয়ে বাসায় এসো।তোমাদের দাওয়াত আজকে।’
মধু কৌতুহলী হয়ে বলল,’আজকে কি স্পেশাল কিছু আঙ্কেল?’
‘হ্যাঁ।’
চলবে……
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)