ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব-২৩+২৪

0
2721

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ২৩
#Arshi_Ayat

ইয়াদ হসপিটালে এসে ইফাজের চেম্বারে উঁকি দিয়ে দেখলো ইফাজ রুগীর সাথে কথা বলছে।ইয়াদকে দেখে ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল।ইয়াদ বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলো।পাঁচ মিনিট পর রুগী বেরিয়ে যেতেই ইয়াদ ঢুকলো।ইফাজের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে বলল,’কি বলবে বলো।’

ইফাজ ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে!ভেতরে সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে।তবুও বলতে শুরু করলো,’ইয়াদ তোকে একটা সিরিয়াস কথা বলবো।’

ইয়াদ কৌতুহলী হয়ে বলল,’হ্যাঁ বলো।’

ইফাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন নার্স এসে দ্রুত বলল,’স্যার,ইট’স এন ইমার্জেন্সি।পেশেন্টের অবস্থা ক্রিটিকাল।’

ইফাজ নার্সের কথা শুনে তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।তারপর ইয়াদকে বলল,’তুই বাসায় যা।পরে কথা হবে।’

এটা বলেই ইফাজ চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো।
—————-
সন্ধ্যায় কোচিং থেকে বেরিয়ে মধু আর আরিয়া কোচিং এর সামনেই দাড়ালো ইয়াদের জন্য।মধুর একা দাড়াতে ভালো লাগে না।তাই আরিয়াও ওর সাথে দাড়ালো।হঠাৎ আরিয়া মধুর হাত চেপে ধরে বলল,’মধু তাড়াতাড়ি সামনে তাকিয়ে রিকশায় বসা ছেলেটাকে দেখ।’

মধু তাকিয়ে দেখলো ইফাজ রিকশায় বসা।আরিয়া আবারও বলল,’এই ছেলেটাকে যে আমি কতো খুঁজেছি দোস্ত।বলে বোঝাতে পারবো না।মাঝেমধ্যেই রাস্তায় দেখি কিন্তু গিয়ে কথা বলতে পারি না।’

মধু ভ্রু কুঁচকে বলল,’এটা তো ইফাজ ভাইয়া।ইয়াদের বড় ভাই উনি।’

মধুর কথায় আরিয়া চমকে বলল,’সত্যি!বিশ্বাস হচ্ছে না।ইয়াদ ভাইয়ার ভাই উনি!দোস্ত প্লিজ একটা ব্যবস্থা কর না!’

মধু আরিয়ার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,’আমার এই ব্যাটাকে ভয় লাগে।আর ওনার সঙ্গে আমার তেমন কথাও হয় নি।আমি পারবো না।তুই ইয়াদকে বল।’

‘ধূর,ইয়াদ ভাইয়াকে এগুলো বললে ভাইয়া কি ভাববে?তার চেয়ে ভালো তুই একটু দেখ না কি করা যায়!বেশি না ওনার নাম্বারটা একটু ম্যানেজ করে দে না!”

আরিয়ার কথার জবাব দেওয়ার আগেই ইয়াদ চলে এলো।ইয়াদকে দেখে আর মধু কিছু বলল না।আর আরিয়া ইয়াদকে হাই/হ্যালো বলে চলে যাওয়ার সময় বলল,’দোস্ত ওইটা কিন্তু চাইইই আমার।প্লিজ!”

এটা বলে আরিয়া চলে গেলো।ইয়াদের মাথায় কিছু ঢুকলো না তাই ও মধুকে বলল,’আরিয়া কি বলল?’

মধু এবার আমতা আমতা করতে করতে বলল,’আরে ওই যে আমার নোট চাইছে।’

‘ওহ!চলো।’ইফাজ সন্দেহ করলো না।শুধুশুধু সন্দেহ করাটা ওর ধাতে নেই।

‘চলেন।’
———–
সন্ধ্যায় ইফাজ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে মা’কে জিগ্যেস করলো,’মা ইয়াদ কই?’

‘ও তো একটু আগে মধুর সাথে দেখা করতে বেরিয়েছিলো।এখনো ফেরেনি।’

‘ও আচ্ছা।ও আসলে একটু বইলো তো রুমে আসতে।’

তারপর ইফাজ রুমে চলে গেলো।নিজের ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ’টা বের করতে গিয়ে আজকে নিহার দেওয়া বিয়ের কার্ডাটায় চোখ পড়লো।অনিচ্ছা স্বত্বেও কার্ডটা খুললো।বরের নাম “রাজীব আহমেদ”।দশদিন পর বিয়ের তারিখ।সহ পরিবারে আমন্ত্রিত।’ইফাজ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।যাক নিহার বিয়ে হয়ে গেলো অন্তত ওর জ্বালানির হাত থেকে বাঁচা যাবে।ইফাজ কার্ড রাখতেই ইয়াদ চলে এলো।ইয়াদকে দেখে ইফাজ বলল,’কি রে কই ছিলি এতক্ষণ?’

‘আর বইলো না মধুকে হোস্টেল পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেলাম।পথেই চটপটির দোকান দেখে দাড়িয়ে পড়লো।চটপটি খেতেই হবে ওর।তো আমি আর কি করবো।দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র হবু বউ আমার চটপটি কিনে হোস্টেলে দিয়ে এলাম।’এটা বলেই ইয়াদ হাসলো

ইফাজের বুকে যন্ত্রণা হলো।নিজেকে সামলে হালকা হেসে বলল,’খুব ভালোবাসিস তাই না?’

‘হ্যাঁ অনেক ভালোবাসি।ও এমন একটা মেয়ে যে ওকে দেখলেই মায়া চলে আসবে।চোখে সরলতা ঠোঁটে চপলতা।হাসলে নরম গালে টোল পড়ে।দেখলে মন চায় দেখতেই থাকি।’
এতটুকু বলে ইয়াদ থামলো।তারপর আবার বলল,’জানো মেয়েটার পরিবারে কেউ ওর আপন না।বাবা ছোটবেলায় মারা গেছে।মায়ের অবহেলায় এই পর্যন্ত বড় হয়েছে।এর আগেও ওর মায়ের বিয়ে হয়েছিলো।কিন্তু পরে ডিভোর্স হওয়ায় ও আবার ওর মায়ের সাথেই থাকতো।একটু বড় হবার পর থেকেই বিয়ের জন্য প্রেশার দিতো।কয়েকবার ও বিয়ে ভেঙেছে।এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এখন ও হোস্টেলে থাকে।যখন ও ওর কষ্টগুলো আমার সাথে শেয়ার করেছিলো তখন আমি ভাবলাম ওকে সাহায্য করা দরকার।কিন্তু ও এমনিতে আমার হেল্প নিতো না।তাই ওর সাথে রিলেশনে যাই।ও আমাকে আগে থেকেই পছন্দ করতো।ওর এক্সপ্রেশনে বুঝতে পারতাম।আমি রিলেশনে সিরিয়াস ছিলাম না।কিন্তু ভাইয়া সত্যি বলতে ওর এই কয়েকমাস ওর সাথে থাকতে থাকতে আমি যে কখন ওকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না।সারাদিনে একবার না দেখলে অস্থির অস্থির লাগে।কিছুদিন আগে ওর টেস্ট পরীক্ষা ছিলো ওকে দেখা করতে না বলে নিজেই চুপিচুপি প্রতিদিন ওকে দেখে আসতাম।ওর মধ্যে রাগ জিনিসটা নেই কিন্তু অনেক অভিমানী।’এতটুকু বলেই ইয়াদ হাসলো।

ইফাজ এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সব শুনলো।ওরা কতো সুখী!শুধু নিজের জন্য এভাবে কি ওদের আলাদা করা ঠিক হবে !ইফাজের একবার মনে হচ্ছে স্বার্থপর হতে আরেকবার মনে হচ্ছে এটা ঠিক হবে না।ওদের মাঝখানে আসা উচিত নয়।ইফাজ কনফিউশানে পড়ে গেছে।ঠিক করতে পারছে না কি করবে।সময় প্রয়োজন!ভাবতে হবে!

এবার ইয়াদ আবার বলল,’তুমি কিছু বলবে বলেছিলো!”

‘হ্যাঁ আরে শোন না তোর ফাইনাল এক্সাম কবে?আর স্কলারশিপের আবেদন করেছিস?’

‘ফাইনালের আরো চারমাস বাকি।আর স্কলারশিপের আবেদন কিছুদিন আগেই করেছি।’

‘ও,আচ্ছা।’
ইফাজ আর কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না।তাই বলল,’এখন যা কিছু রিচার্স করতে হবে।’

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল,’তুমি না কি বলবে বলছিলে?সিরিয়াস কিছু!”

‘বললামই তো!এই যে তোর স্কলারশিপের ব্যাপারে।’

ইয়াদ বেকুব হয়ে মনেমনে বলল,’এটা সিরিয়াস বিষয়!অবশ্য ভাইয়া যেই আঁতেল টাইপ স্টুডেন্ট তার কাছে এটা সিরিয়াস বিষয় হওয়াটা অস্বাভাবিক না।’

ইয়াদ শিশ দিতে দিতে নিজের রুমে চলে গেলো।
—————
হোস্টেলে ফোন এলাও না তবুও ইয়াদের জন্য মধুর ফোন রাখতে হয়।প্রথম ফোন আইরিন রহমান নিয়ে যাওয়ার পর ইয়াদ আরেকটা ফোন দিয়েছিলো শুধুমাত্র ওর সাথে কথা বলার জন্য।যখন ইয়াদ ফোন দেয় তখন মধু ওয়াশরুমে গিয়ে কল ছেড়ে কথা বলে।এছাড়া আর উপায়ও নেই।রুমমেট’রা ওকে সন্দেহ করলেও কখনো হাতেনাতে ধরতে পারে নি।ফোন লুকানোর ক্ষেত্রে বেশ সতর্কই থাকে মধু!প্রথমবার ধরা খেয়ে প্রচুর শিক্ষা হয়ে গেছে।

রাত ৯.০০ টা বাজে।মধু ওর বিছানার ওপর বসে ম্যাথ করছিলো।হঠাৎ কোমরে ফোনের ভাইব্রেশনে বুঝলো ইয়াদ ফোন দিয়েছে।মধু ম্যাথ বইটা অফ করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো ইয়াদ না আরিয়া ফোন দিয়েছে।মধু রিসিভ করলো হয়তো কোনো জরুরি দরকার থাকতে পারে তাই।

‘হ্যালো আরিয়া বল।’

‘ওই নাম্বারটা জোগাড় করতে পারছিস?’

মধুর মেজাজ গরম হয়ে গেলো মুহুর্তেই।এই বাল বলার জন্য আরিয়া ফোন দিছে!মধু রেগে বলল,’কালকে কলেজে আইসা যদি তোরে জুতা দিয়া না পিটাইছি তাইলে আমার নামও মধু না।’

‘হ্যাঁ এখন তো এমন করবিই।তোর তো লাইন ক্লিয়ার।শুধু আমার বেলায়ই ঠনঠনা ঠনঠন।’কৃত্রিম অভিমানী সুরে আরিয়া বলল।

‘ন্যাকামি কম কর হারামি।’

‘প্লিজ বইন নাম্বারটা জোগাড় কইরা দে না প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ….’

প্লিজের বন্যা হয়ে যাওয়ার আগেই মধু ফোন কেটে দিলো।তারপর ইরিনকে ফোন দিলো ইয়াদের কাছে জীবনেও নাম্বার চাইতে পারবে না কিন্তু ইরিনকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে নাম্বার নেওয়া যাবে।আর আজকে নাম্বার না নিলে আরিয়া কালকে ওর কান খেয়ে ফেলবে।দুই তিন কল হতেই ইরিন ফোন রিসিভ করলো

‘হ্যালো ইরিন,আমি মধু।’

‘হ্যা বলো।’

‘কেমন আছো?’

‘এইতো ভালো তুমি?’

‘আলহামদুলিল্লাহ।শোনো না একটা দরকারে ফোন দিলাম।’

‘কি দরকার বলো?’

‘ইফাজ ভাইয়ার নাম্বারটা একটু দিবে?আমার ফ্রেন্ডের খালা শ্বাশুড়ি অসুস্থ এইজন্য ও ভালো ডাক্তার খুঁজছিলো।তো আমি ভাইয়ার কথা বললাম।ও ভাইয়ার নাম্বারটা চাইছিলো।’

‘ও আচ্ছা।ঠিকাছে লিখো।’

নাম্বার নেওয়ার পর আরো দু’চারটা সৌজন্য মূলক কথা বলে মধু ফোন রেখে দিয়ে আরিয়াকে কয়েকশ গালি দিয়ে ফোন কোমরে গুঁজে ওয়াশরুম থেকে বের হতে না হতেই আবার ফোন ভাইব্রেশন হলো।মধু আবার দৌড়ে ওয়াশরুমে গেলো।এবার ইয়াদ ফোন দিয়েছে।

ওর সাথে কথা বলে বের হয়ে বিছানায় এসে বসতেই ওর পাশের বেডের শিমলা বলল,’তোমার কি পেট খারাপ?বারবার ওয়াশরুমে যাচ্ছো যে?’

মধু কি বলবে!অতি দুঃখে কাঁদতেও পারছে না হাসতেও পারছে না।

চলবে…

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ২৪
#Arshi_Ayat

দুপুরের লাঞ্চের সময় একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এলো ইফাজের ফোনে।ইফাজ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ ভেসে এলো।মধুর রিনরিনে গলায় বলল,’এটা কি ডাক্তার ইফাজের নাম্বার?’

‘জ্বি,কে বলছেন?’

‘আমি খুব অসুস্থ ডাক্তার সাহেব।’

‘আপনি চেম্বারে আসুন।ফোনে তো বোঝা যাবে না আসলে আপনার সমস্যা কোথায়।’

এবার ওপাশ থেকে একটু কাতর গলায় বলল,’আমি জানি আমার সমস্যা কোথায়।কিন্তু ঔষধ তো শুধু আপনার কাছেই আছে।জানেন আমি যেদিকে তাকাই শুধু আপনাকেই দেখতে পাই।’

ইফাজ এবার বুঝতে পারলো কেউ ওর সাথে তামাশা করছে।তাই ইফাজও ঠাট্টার স্বরে বলল,’ওহ!এবার বুঝতে পেরেছি আপনার সমস্যা।আপনাকে তো জ্বিনে ধরেছে।অতি দ্রুত ওঝার কাছে গিয়ে পানি পড়া খান জ্বীন চলে যাবে।’

এটা বলে ইফাজ ফোনটা খট করে কেটে দিলো।তারপর বিরক্তিতে লাঞ্চ করা শুরু করলো।এমনিতেই মনে শান্তি নাই তার ওপর এগুলো যে কোথা থেকে আসে!উফফ!

ইফাজ ফোন কাটতেই আরিয়া হাসতে হাসতে রাস্তায় বসে পড়লো।মূলত ওই ইফাজকে ফোন করেছিলো মধুর কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে।কলেজ ছুটির পর আরিয়া নিজের ফোন থেকে ইফাজকে ফোন দিয়েছিলো।সাথে মধুও ছিলো।প্রথমে আরিয়া নার্ভাস থাকলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়েছিলো।
———–
সন্ধ্যার সময় ইফাজ বাসায় যাওয়ার জন্য চেয়ার ছাড়তেই দেখলো নিহা চেম্বারে ঢুকলো।আজকে নিহাকে অন্যরকম লাগছে।হাফ সিল্কের নীল পাড়ের সাদা শাড়ী,হাতে নীল সাদা চুড়ি,মাঝখানে সীঁথি করে খোপা বাধা।খোপায় টাটকা বেলি ফুলের মালা গোঁজা।চোখে কাজল টানা।

নিহা এগিয়ে এসে চুড়ির ঝংকার তুলে বলল,’কেমন আছো ইফাজ?’

ইফাজ মোহ কাটিয়ে বলল,’ভালো,তুমি?’

‘এই তো,ভালোই আছি।বাসায় যাচ্ছো?’

‘হ্যাঁ,ডিউটি শেষ।’

‘ওহ!রাজীবের সাথে একটু বেরিয়েছিলাম।চলো পরিচয় করিয়ে দেই।’

চেম্বারের বাইরেই রাজীব দাঁড়িয়ে ছিলো।ইফাজ আর নিহা বেরিয়ে আসতেই রাজীব ইফাজের দিকে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো।তিনজনে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ইফাজ নিজের বাসার দিকে চলে এলো আর ওরা অন্যদিকে চলে গেলো।বাসায় যেতে যেতে ইফাজের রাস্তার একপাশে চোখ গেলো।ইয়াদ আর মধু রাস্তা পার হচ্ছে।ইয়াদ মধুর হাত ধরে খুব সাবধানে পার করলো।ইফাজ মনে মনে বলল “ভালোবাসা সবার জন্য না।”
————–
দুইদিন পরের কথা..
আজকে শুক্রবার।ইয়াদ আর মধু বিকেলে রাস্তায় হাটছিলো।দুজনে কথা বলতে বলতেই মধু গুনগুনিয়ে গান শুরু করলো।ইয়াদ বলল,’একটু আমাকেও শোনাও।’

মধু ইয়াদের দিকে তাকিয়ে ভেঙেচিয়ে বলল,’না,শোনাবো না।’

‘কেনো?’

‘আমি ফ্রীতে গান শোনাই না।’

‘আচ্ছা যাও যা চাও তাই দিবো।’

‘পাক্কা?’মধু লাফিয়ে উঠে বলল।

‘পাক্কা’।ইয়াদ হাসলো।

মধু ইয়াদের হাত ধরে গাইতে শুরু করলো।

“ও আমার বন্ধু গো
চির সাথী পথ চলার
তোমারই জন্য গড়েছি আমি
মঞ্জিল ভালোবাসার

এক সাথে রয়েছি দুজন
এক ডোরে বাঁধা দুটি প্রাণ
ছিঁড়বেনা কভু এই বাঁধন
আসলে আসুক তুফান

তুমি আমারই বলবো শতবার
হাত দু’টি ধরেছি তোমার
মানবো না কোনো বাধা আর
শুনবো না কারো কথা যে আর

মন্দ বলুক সমাজ
তুমি আমারই, হায়, বলবো শতবার
ও আমার বন্ধু গো
চির সাথী পথ চলার,
তোমারই জন্য গড়েছি আমি
মঞ্জিল ভালোবাসার।”

মধুর গান শেষ হতেই ইয়াদ তালি দিলো।তারপর বলল,’বাহ!এইবার বলো কি চাও?’

‘যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই,যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই।’

মধুর উত্তর শুনে ইয়াদ হেসে বলল,’অলরেডি তোমারই আমি।কিন্তু এখন কি চাও?আমি বলেছিলাম তুমি যা চাও তাই দিবো।’

‘আচ্ছা আপাতত একটা আইসক্রিম হলে মন্দ হয় না।’

ইয়াদ দুটো চকবার নিলো।আইসক্রিম খেতে খেতেই ইয়াদ বলল,’দে কে আগে খেতে পারে।যে জিতবে সে তার পাশের জনেরটা খেয়ে নিবে।’

‘ওকে।’
দুজনেই তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করলেও কিন্তু ইয়াদ জিতলো।তাই শাস্তি স্বরুপ ইয়াদ মধুর আইসক্রিম কাড়তে লাগলো।দুজনেই কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে কারোই খাওয়া হলো না।আইসক্রিম পড়ে গেলো।মধু হাসতে হাসতে বলল,’ভালো হইছে পড়ে গেছে।না আপনি খেতে পারলেন না আমি পারলাম।’

‘তোমার জন্যই পড়ছে।’

‘জ্বী,না আপনার জন্য পড়ছে।’

এই তো শুরু হলো দুইজনের যুদ্ধ সারা রাস্তা দুইজনে দুজনার দোষ দিতে দিতে যেতে লাগলো।
————–
গত দুইদিন ধরে একটা আননোন মেয়ের নাম্বার ইফাজকে প্রচুর জ্বালাচ্ছে।মেয়েটাকে ইফাজ দেখা করতে বলেছিলো কিন্তু সে অনেক ঘুরানোর পর আজ দেখা করতে রাজি হয়েছে।ইফাজও রাজি হয়েছে।যেহেতু আজ শুক্রবার সেহেতু ডিউটি নেই গিয়ে ফাজিল মেয়েটার ফাজলামো বের করা যাবে।ইফাজ রেডি হয়ে বের হলো।মেয়েটা বলছিলো আরাগ নগর মলের সামনে দাড়াবে।ইফাজ ওকে দেখে নি তাই গিয়ে শুধু ওখানে দাড়াবে।মেয়ে নিজেই ওকে খুঁজে নিবে।ইফাজ মলের সামনে গিয়ে দাড়াতেই একটা মেয়ে দৌড়ে এসে ওর সামনে দাড়ালো।তারপর উৎফুল্ল গলায় বলল,’কেমন আছেন?’

‘ভালো,কিন্তু আপনি কে?’

‘আমি আপনার রোগী,আপনি আমার ডাক্তার।’আরিয়া রসিকতা করে বলল।

আরিয়ার এহেন কথায় ইফাজ বুঝলো এটাই সেই বজ্জাত মেয়ে।ইফাজ গলা ঝেড়ে বলল,’তো,আমাকে বিরক্ত করার পেছনে কারণ কি?’

‘আপনাকে পছন্দ করি সেইজন্য বিরক্ত করি।আর বিরক্ত না করলে তো আপনি পটবেন ও না।’

ইফাজ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল,’শুনুন আমি একজনকে ভালোবাসি।তাই আমি চাইবো আপনি আমাকে বিরক্ত করবেন না।’

আরিয়ার মুখ কালো করে বলল,’আপনি মিথ্যা বলছেন আমি জানি।’

‘বেশি জানা ভালো না।’

‘আচ্ছা আপনার গার্লফ্রেন্ডের ছবি দেখান তাহলেই আমি বিশ্বাস করবো।’

ইফাজ ভাবলো কথা বাড়ানোর চেয়ে একটা ছবি দেখিয়েই দেই।ফোনের গ্যালারিতে শুধু মধুর ছবি।কিন্তু ইফাজ কি মনে করে যেনো মধুর ছবি দেখালো না।নিহার সাথে কয়েকটা পিক আছে ওগুলোই আরিয়াকে দেখালো।আরিয়া পিকগুলো দেখে অনেক আপসেট হয়ে গেছে।এটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যায়।আরিয়া ইফাজের ফোনটা ওকে ফিরিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে চলে গেলো।ইফাজও উল্টোদিকে হাঁটা ধরলো।
—————-
একসপ্তাহ পরের কথা…
আজ ইফাজ অনেক চেষ্টা করেছিলো ইয়াদকে সব বলতে কিন্তু ভেতর থেকে কিছু একটা ওর গলা চেপে ধরেছিলো তাই আর বলতে পারলো না।কিন্তু এখন কষ্ট হচ্ছে খুব।তাই নিহাকে ফোন দিলো।নিহা ফোন রিসিভ করতেই ইফাজ বলল,’একটু নদীরপাড় আসতে পারবে?’

‘এখন?এখনতো সন্ধ্যা।আর আমার……’

ইফাজ আর কিছু বললও না শুনলো না খট করে ফোনটা কেটে দিলো।নিহা কয়েকবার ফোন দিলেও ধরলো না।ফোনে যখন কথা বলছিলো তখন মনে হয়েছিলো ইফাজ কাদছিলো।কি হয়েছে ওর!যতক্ষণ না জানা যাবে ততক্ষণ নিহার শান্তি লাগবে না।অগত্যা কাজিনদের সাহায্যে বিয়ের আসর ছেড়ে পালাতে হলো।

নিহা যখন নদীর পাড়ে পৌছালো ইফাজ তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো।নিহা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল,’কি হয়েছে তোমার?’

ইফাজ নিহার দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো।আজ যে নিহার বিয়ে ছিলো বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো।ও কি বিয়ের আসর ছেড়ে চলে আসলো নাকি?অবশ্য ও যা মেয়ে এমন করলেও অস্বাভাবিক হওয়ার কিছু নেই।ইফাজ শিউর হওয়ার জন্য জিগ্যেস করলো,’নিহা তুমি কি বিয়ের আসর ছেড়ে এসেছো?’

‘হ্যাঁ,কবুল না বলেই এসেছি।’

‘কি বলছ তুমি?মাথা খারাপ তোমার?বিয়ের আসর ছেড়ে কেনো আসতে গেলে?’

‘তুমি ডাকলে আমি সবকিছু ছেড়ে আসতে পারবো।’

‘হেয়ালি করার সময় না এখন চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।’

এই বলে ইফাজ নিহার হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলেই নিহা দাঁড়িয়ে পড়লো।ইফাজ ওর দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকলো।নিহা আকুতি ভরা কন্ঠে বলল,’রেখে দাও না আমাকে।’

ইফাজ থমকে গেলো।কি সরল আকুতি ভরা কন্ঠ।এতো ভালোবাসা বোধহয় এইজীবনে কেউ দিতে পারবে না।নিজের ভালোবাসা পূর্ণতা না পেলেও কারো ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে পারলে ক্ষতি কি?একমুহূর্ত কিছু একটা ভেবে ইফাজ বলল,’সত্যি?একবার রেখে দিলে আর যেতে পারবে না।’

‘কবুল বলে শিকল পড়িয়ে দাও যেনো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে পারি।’

ইফাজ আর কথা বাড়ালো না।জেলা সদরে চলে গেলো।ওখানেই কাজি অফিস।নিহা কাজি অফিস আসার সময়টুকু ইফাজের দিকে তাকিয়ে ছিলো।সময়টা যনো ঘোরের মধ্যে দিয়ে কাটছে।আসলেই কি এই মানুষটার সাথে ওর বিয়ে হচ্ছে?নাকি এটা স্বপ্ন!নিহা ইতিমধ্যে দশবার নিজের হাতে চিমটি কেটে পরীক্ষা করেছে এটা সত্যি কি না!

যখন সাইন করে কবুল বলল তখন নিহা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলেই ইফাজ ধরে ফেললো।তারপর বলল,’তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?’

‘নাহ!মনে হচ্ছে স্বপ্ন!এতো খুশীতে আমার হার্ট অ্যাটাক চলে আসছে।’

ইফাজ নিহার কথায় হাসলো।কাজি অফিস থেকে বেরিয়ে নিহাকে বলল,’এখন কি করবে?’

‘চলো কোথাও গিয়ে বসি।’

ইফাজ আর নিহা আবার নদীরপাড়ে এলো।নিরবতা ভেঙে নিহা’ই বলল,’তুমি যাকে ভালোবাসো সে কোথায়?’

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে