#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৯
#Arshi_Ayat
অবিবাহিত মেয়ে প্রেগন্যান্ট!বিষয়টা সবার কাছেই দৃষ্টিকটু।তারওপর মেয়েটা নিজের মুখে বলছে আবার প্রমাণও দেখাচ্ছে।ইমন প্রেগন্যান্সির কিট’টা দেখে আর কিছু বলল না।বসার ঘরে চলে এলো।ওর পিছনে মধুও এলো।ইমন এসেই বাবা মাকে বলল,’চলো এখান থেকে।’
ওর মা ভ্রু কুঁচকে বলল,’কেনো কি হইছে?’
‘মেয়ে বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট!নিজের মুখে বলছে।এই মেয়ে বিয়ে করা যাবে না।’
ইমনের কথা শুনে ঘরের মধ্যে নিঃশব্দে একটা বজ্রপাত হলো।আইরিন রহমান মধুর দিকে এমন ভাবে তাকালো যাতে এটা স্পষ্ট ওর কপালে দুর্ভোগ আছে।আর এদিকে ছেলে পক্ষ আইরিন রহমানকে অপমান করে বেরিয়ে গেলো।ওরা বের হতেই আইরিন রহমান মধুর গলা চেপে ধরে বলল,’পেট বাধাইলি কার সাথে?’
মধু অনেক কষ্টে আইরিন রহমানের হাত নিজের গলা থেকে ছাড়ালো।কাশতে কাশতে চোখ থেকে পানি বের হয়ে গেলো।ঘরের ওয়াল ঘেঁষে বসে পড়লো মধু।আইরিন রহমান আবার মধুর ওপর হাত তুলতে নিলেই মধু নিজের হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে বলল,’খবরদার আমার গায়ে হাত তুলবে না।তুমি আমার মা না।’
আইরিন রহমান চিৎকার করে বলল,’হ্যাঁ,আমি তোকে পেটে ধরলেও আমি তোকে মন থেকে মানতে পারি নি কখনো।কতোবার তোকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোর বাপের জন্য পারি নি।তোর বাপের জন্য আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।’
মধু চোখের পানি মুছে কৌতূহলী গলায় বলল,’কি করেছে আমার বাবা?’
আইরিন রহমান রাগে ফোঁস করে উঠে বলল,’আমি অন্য একজনকে ভালোবাসতাম কিন্তু পরিবার থেকে মেনে নেয় নি।বিয়ের পর তোর বাপকে বলছিলাম আমাকে মুক্তি দিতে।কিন্তু না তোর বাপ আমাকে জোর করেছে তার সাথে সংসার করার জন্য।বিয়ের চারমাস পর জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট!অনেক চেষ্টা করি এবরশোন করানোর কিন্তু তোর বাবা করতে দেয় নি।তোকে আমি কখনো মন থেকে চাই নি।কখনো না!’
মধু উঠে দাড়ালো।টেবিল থেকে আইরিন রহমানের ফোনটা নিয়ে আরিয়াকে ফোন করলো।আরিয়া রিসিভ করতেই বলল,’আমি তোদের বাসায় আসছি।আজকে তোদের এখানে থাকবো।’
আরিয়া বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে।তাই প্রশ্ন না করে বলল,’চলে আয়।আমি এগিয়ে আসছি তুইও আয়।’
মধু ফোনটা রেখে নিজের ঘরে গিয়ে বইগুলো গুছিয়ে বেধে নিলো।তারপর নিজের কিছু জামা কাপড় গুছিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’বাবা তোমাকে৷ মুক্তি দেয় নি,কিন্তু আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে গেলাম।আর কখনো মা ডাকবো না।’
মধু বইয়ের ব্যাগ আর জামা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আরিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে হাটা ধরলো।মাঝরাস্তায় আসতেই আরিয়ার দেখা পেলো।আরিয়া ওকে এই অবস্থায় দেখে বলল,’কি হইছে তোর?এভাবে কেনো?’
‘থাকবো না আর ওই বাসায়।হোস্টেলে উঠবো।দুই/তিন দিনের মধ্যে কি সীট পাওয়া যাবে? ‘
‘জানি না,কিন্তু চেষ্টা করলে পাওয়া,যেতে পারে।কিন্তু কাহিনি কি সেটা তো বলবি?’ আরিয়া মধুর হাত থেকে বইয়ের ব্যাগটা নিয়ে বলল।
‘পরে বলবো।এখন ভালো লাগছে না রে।’মধু থমথমে গলায় বলল।
আরিয়া বুঝতে পারলো মধুর মন ভালো নেই তাই আর কিছু বলল না।বাসায় এসে নিজের ঘরে চলে গেলো।আজকে আরিয়াদের বাসায় কেউ নেই।আরিয়ার চাচাতো বোন শিউলীর বাবুকে দেখতে গেছে সবাই ওকে ও নিতে চেয়েছিলো কিন্তু আরিয়া যায় নি।
মধু আরিয়ার খাটে বসলো।আরিয়া ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বলল,’তুই একটু বস আমি আসছি।’
মধু কিছু বলল না নিশ্চুপে বসে রইলো।একটু পর আরিয়া একটা ঢাকনা দেওয়া একটা প্লেট এনে বলল,’আগে ফ্রেশ হয়ে নে।তারপর খেয়ে নে।মনে হয় না সারাদিনে কিছু খেয়েছিস।’
মধু আরিয়ার কথার কোনো জবাব না দিয়ে বলল,’তোর ফোনটা একটু দিবি?’
আরিয়া নিজের ফোনটা এগিয়ে দিলো।মধু ইয়াদকে ফোন দিলো।ইয়াদ রিসিভ করতেই মধু বলল,’হ্যালো,আমি মধু।’
‘হ্যা বলো।’
‘এখন কি অবস্থা?কোথায় আপনারা?’
‘আব্বু প্রচুর ভেঙে পড়েছে।ভাইয়া আব্বুর সাথে আছে আর ইরিন আম্মুর সাথে।আমরা কুষ্টিয়া আছি।আসতে পাঁচ/ছয়দিন লাগতে পারে।’
‘আচ্ছা আঙ্কেল,আন্টির খেয়াল রাখবেন।ভালো থাকবেন।’
‘তুমিও নিজের খেয়াল রাইখো।আল্লাহ হাফেজ।’
মধু ফোন রেখে দিলো।এই অবস্থায় আর টেনশনে ফেলা ঠিক হবে না ইয়াদকে তাই আর মধু কিছু বলল না।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে শুয়ে পড়লো।আরিয়া ওর রুমের লাইট বন্ধ করে অন্যরুমে চলে গেলো।এখন মধুর রেস্টের প্রয়োজন।লাইট জ্বললে মধু ঘুমাতে পারে না।
————
আনুমানিক রাত ৩.০০ টা হবে।আরিয়া মধুর পাশেই ঘুমিয়েছিলো।হঠাৎ করে ঘুমটা ছুটে যাওয়ায় ও পাশে তাকিয়ে দেখলো মধু নেই।বারান্দায় দরজা খোলা।আরিয়া গায়ে ওড়না জড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো মধু বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে পাথুরে ভঙ্গিতে।মনে হচ্ছে যেনো ওর ভেতরে প্রাণ নেই।কাঁদছে কি না অন্ধকারে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।আরিয়া গিয়ে মধুর কাঁধে হাত রাখলো।ওর কোনো ভাবান্তর নেই।যেভাবে দাড়িয়ে ছিলো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।আরিয়া মধুকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,’এই মধু,এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?’
এবার মধু একটু নড়েচড়ে পাশে রাখা একটা চেয়ারে বসলো।আরিয়াও ওর পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।আচমকা মধু আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।মধুর আচমকা জড়িয়ে ধরায় আরিয়া অবাক হলো তবে নিজেকে সামলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর মধু ওকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে ভেজা গলায় বলল,’তুই গিয়ে শুয়ে পড়।আমার ঘুম আসছে না।’
‘ঘুম আমারও আসছে না।তুই আগে এটা বল কি হয়েছিলো আসলে যে তুই এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে এলি।’
‘ওই বাড়িতে আমার কেউ নেই।ওখানে থেকে কি হবে?’মধু ভেজা কন্ঠে বলল।
‘কি হইছে একটু স্পষ্ট করে বল না।’আরিয়া উত্তেজিত কন্ঠে বলল।
মধু বৃষ্টিতে ভেজার পর থেকে যা যা হয়েছে সব বলেছে।সব শোনার পর আরিয়া বলল,’যা করছিস ঠিক করছিস আমি হলে আরো আগেই বেরিয়ে আসতাম।কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না তুই প্রেগ্ন্যাসির কীট’টা পেলি কোথায়?’
‘ময়লার বাল্টি থেকে নিয়েছিলাম।আইরিন রহমান তার মায়ের বাসায় যাওয়ার পর আমাকেই ময়লা ফেলতে হতো।তো একদিন ময়লা ওয়ালা আমাদের ঘরের সামনে ময়লার বাল্টি রেখে ওপরে গিয়েছিলো ময়লা আনতে।আমি যখন ময়লা দিতে গেলাম তখন দেখি ময়লার বাল্টিতে এই কীট’টা পড়ে আছে।আমার কৌতুহল জাগলো।আমি ওটা নিয়ে নিলাম।ঘরে গিয়ে এটা ভালো করে দেখলাম।এতে দুইটা দাগ স্পষ্ট!তারমানে এটা যার সে এখন প্রেগন্যান্ট।তো আমার কৌতুহল শেষ কিন্তু আমি ওটা ফেলতে ভুলে গেছিলাম।কাল যখন আইরিন রহমান আমাকে বলল রেডি হতে তখন এটা আমি আমার ড্রেসিং টেবিলের এক কোণায় পেয়েছিলাম।ওটা পাওয়ার পরই মাথায় এই বুদ্ধিটা এসেছিলো।’
আরিয়া সব শুনে হেসে ফেললো।সময়টা হাসির না হলেও এই ঘটনা শোনার পর হাসতে বাধ্য হয়েছিলো আরিয়া।মধুও একটু হাসলো।তারপর আরিয়া বলল,’যাক যা করেছিস ভালোই করেছিস কিন্তু এটা মনে রাখিস ইয়াদ ভাইয়া এটা শোনার আগেই তাকে সবটা বলে দিস তা নাহলে তোকে ভুল বুঝতে পারে।’
‘হুম,চেয়েছিলাম তখনই বলতে কিন্তু ওনার দাদা মারা গেছেন তাই বলতে পারি নি।’
‘ও,,আচ্ছা।সুযোগ পেলে বলে দিস।আর শোন তুই ঘুমিয়ে ছিলি বলে বলতে পারি নি তোর জন্য একটা সীট পেয়েছি।সমস্যা হলো ইন্টার ফাস্ট ইয়ারদের সাথে থাকতে হবে তোকে।সেকেন্ড ইয়ারের হলে সীট নেই।’
‘সমস্যা নেই।কালই উঠবো।’মধু বলল।
‘আচ্ছা তাহলে চল শুয়ে পড়ি।সকালে উঠতেও হবে।’
‘হুম।’
আরিয়া আর মধু গিয়ে শুয়ে পড়লো।মনে অশান্তি নিয়ে ঘুমানো যায় না।তবুও মধু শুয়ে রইলো।
——————-
চারদিন পরের কথা….
মধু হলে শিফট হয়ে গেছে চারদিন আগেই।হলে ফোন এলাও না তাই ইয়াদের সাথে চারদিন ধরে কথা হয় না।আবার কলেজেও আরিয়া ফোন আনে না।
আজকে বিকেলে মধু শুয়েছিলো।হঠাৎ আরিয়া আসলো।ওকে দেখে মনে হলো ও খুব তাড়াহুড়ায় এসেছে।মধু ওকে দেখে উঠে বসলো।তারপর বলল,’কি রে কি হইছে?’
‘এখনি রাস্তায় যা।ইয়াদ ভাইয়া আসছে।’
ইয়াদের কথা শুনে মধু লাফিয়ে উঠে ওড়না মাথায় দিয়ে এক দৌড় দিলো।একদৌড়ে রাস্তায় চলে এলো।রাস্তার বিপরীত পাশে ইয়াদ দাড়িয়ে আছে দুইহাত পকেটে ঢুকিয়ে।মধু রাস্তা পার হয়ে সোজা এসে ইয়াদকে জড়িয়ে ধরলো।একটু পর ছেড়ে দিয়ে বলল,’কেমন আছেন?’
‘ভালো,কিন্তু তুমি এখানে কেনো?অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম ওই ফোনে।ফোন বন্ধ!তারপর তোমার বান্ধবীকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম তুমি এখানে!কি হয়েছে?’
মধু বলল,’একটু পর আজান দিবে।এখনি হলের গেট বন্ধ করে দিবে।আমাকে ভেতরে যেতে হবে এখনি।আমি আপনাকে কাল সকালে সব বলবো।আপনি কাল সকালে এখানে আসবেন।’
এটা বলে মধু চলে যেতে লাগলো।হঠাৎ কিছু একটা মনে হওয়ায় আবার ফিরে এসে ইয়াদের হাত ধরে বলল,’আমাকে কখনো অবিশ্বাস করবেন না।আপনি অবিশ্বাস করলে আমি শেষ হয়ে যাবো।’
ইয়াদ ভরসা দিয়ে বলল,’আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।আমি জানি তুমি কোনো ভুল করো নি।’
মধু আরো একবার ইয়াদকে জড়িয়ে ধরে হলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।আর ইয়াদ মধুর যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।মধু হলের ভেতর চলে যাওয়ার পর সেও চলে গেলো।
চলবে….
#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ২০
#Arshi_Ayat
‘নিহা প্লিজ আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করো।আমি একজনকে ভালোবাসি তোমাকে কতো বার বলবো?বুঝতে চাও না কেনো তুমি?’ইফাজ রেগে কথাগুলো বলল।
‘কিন্তু আমার কি হবে ইফাজ!আমি তোমাকে ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি।তোমার জন্য জীবনে কারো সাথে জড়াই নি।কিন্তু কখনো আমি আমার ভালোবাসাকে সম্মান করো নি।’নিহা আক্ষেপের সুরে বলল।
‘আমি তোমাকে ভালো বন্ধু ছাড়া অন্যকিছু ভাবিনি কখনো।এতে আমার কি দোষ চাইলেই কারো জন্য ভালোবাসা আসে না, আবার না চাইতেও কারো জন্য মন অস্থির হয়।আমি চাইবো আমাদের বন্ধুত্ব যেনো আমার নষ্ট করতে নাহয় তোমার জন্য।’ইফাজ অন্যদিকে তাকিয়ে কাটকাট গলায় জবাব দিলো।
ইফাজের কঠিন কথার বানে নিহার চোখদ্বয় হতে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।তবুও নিজেকে সামলে নিহা ম্লান হেসে বলল,’ভালো থেকো।আমি আর কখনো ভালোবাসি বলবো না কিন্তু আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখতেই হবে।’
ইফাজ নিহার দিকে জিজ্ঞাসামূলক চাহনি নিয়ে তাকালো।নিহা নিজের ব্যাগ থেকে একটা টিফিন বক্স বের করে বলল,’তোমার জন্য বানিয়েছি।নিলে খুশী হবো।’
নিহার করুণ গলার স্বর আর কাতর চাহনি ইফাজকে বক্সটা নিতে বাধ্য করলো।ইফাজ বক্সটা নিয়ে টেবিলের একপাশে রাখলো।নিহা মৃদু হেসে বলল,’তুমি আমাকে না ই ভালোবাসলে,কিন্তু আমাকে ভালোবাসতে বাঁধা দিও না।তোমাকে না ভালোবাসলে আমি দম আটকে মারা যাবো।এটা নিশ্চয়ই তুমি চাইবে না তাই প্লিজ আমাকে বাঁধা দিও না।’
এটা বলে নিহা চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।ইফাজ আর নিহা ক্লাসমেট।ইন্টার পর্যন্ত একসাথে পড়লেও তারপর আলাদা হয়ে যায়।তবে আলাদা হলেও নিহা এক মুহুর্তের জন্যেও ইফাজকে ভোলে নি।দেশে বসে ইফাজের অপেক্ষা করেছে।এই দীর্ঘ পচিশ বছরের জীবনে শুধু ইফাজকেই ভালোবেসেছে।তবে এই ভালোবাসাটা একতরফা।নিহা নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছে একতরফা ভালোবাসা অভিশাপ!ভালবাসার মানুষের চোখে অন্য একজনের জন্য ভালোবাসা দেখা যে কতোটা কষ্টের এটা তারাই বোঝে যারা কাউকে একতরফা ভাবে ভালোবেসেছে।
তবে ইফাজের নিহার জন্য আফসোস হয় কিন্তু তবুও কিছু করার নেই।ইফাজ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রোগী কল করা শুরু করলো।
————–
এখন সকাল নয়টা বাজে।ইয়াদ মধুর হোস্টেলের সামনে দাড়িয়ে আছে।হোস্টেলের গেট দিয়ে একটু পরপরই কয়েকটা মেয়ে যাচ্ছে আর ইয়াদের দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেনো ছেলে দেখে নি।ইয়াদ বেশ অস্বস্তি লাগছে।মধু নেমে আসলে এখন থেকে চলে যাওয়া যেতো কিন্তু ও তো নামছে না।ভেতরে খবর দেওয়ার মতো কিছুই নেই।ইয়াদ বিরক্তি নিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতেই খেয়াল করলো মধু আসছে।ইয়াদও একটু এগিয়ে গেলো।মধু আসতেই বলল,’এতো দেরি লাগলো যে।’
মধু ভ্রু কুঁচকে বলল,’কোথায় এতো দেরি হলো।আপনি আসছেন নয়টায় আর আমি আসছি নয়টা পাঁচ এ।’
‘হুম।তোমাদের হোস্টেলে মেয়েগুলা কেমন যেনো?’
মধু ভ্রু নাচিয়ে বলল,’কেমন?’
‘আরে আমি দাড়িয়ে ছিলাম তোমার জন্য।তো ওরা একেকজন বের হয় আর আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেনো খেয়ে ফেলবে।’
মধু ইয়াদের কথায় বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,’দেখবেই তো।এতো সেজেগুজে আসলে তো দেখবেই।’
ইয়াদ মুখ বাঁকা করে বলল,’এইজন্যই গার্লস হোস্টেলের সামনে দাড়ানো উচিত না।এই মেয়ে গুলার জন্যই ছেলেরা কালো হয়ে যাচ্ছে।ওদের শকুনের নজর ছেলেদের ওপর পড়তেই ছেলেরা জ্বলে কালো হয়ে যায়।’
মধু চোখ বাঁকা করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,’ইনসাল্ট হচ্ছে কিন্তু!’
‘আচ্ছা ওকে আমি চুপ।চলো হাটি।’
‘হ্যাঁ চলুন।’
যাওয়ার আগে ইয়াদ দুই প্যাকেট ঝালমুড়ি নিয়ে এলো।তারপর হাঁটতে হাঁটতে বলল,’কি হয়েছিলো বলো।’
মধু সবটা বলল।সব শোনার পর ইয়াদ মধুর হাত ধরে বলল,’ওই সময়টা আমি ছিলাম না বলে তোমার মা বেঁচে গেছে।তা নাহলে ওই মহিলার এমন হাল করতাম!রাগ লাগছে প্রচন্ড।আর তুমিও বোকা নাকি!এতোদিন এগুলো সয়েছো কিভাবে!ও মাই গড!কতোটা স্টুপিড মহিলা।’
মধু ইয়াদকে শান্ত করে বলল,’আপনি কি সত্যি আমাকে বিশ্বাস করেছেন?মনে কোনো খচখচানি থাকলে বলুন আমি আমি টেস্ট করাবো।আমি চাইনা ভালোবাসার মধ্যে সন্দেহ থাকুক।’
ইয়াদ একহাত মধুর ঘাড়ের ওপর রেখে বলল,’একদম না,সন্দেহের কোনো প্রশ্নই আসে না।আমি শোনা কথায় চলি না।কারো কথায় কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করে সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়ার মতো পাব্লিক আমি না।কালকে নিশিও আমাকে হেনতেন বলেছিলো।আমারও মেজাজ গরম হয়েছিলো প্রথমত তুমি কেনো বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছো সেটা সঠিক জানতে পারি নি দ্বীতিয়ত কালকে তোমাকে দেখেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠেছিলো।তাই আমি তোমাদের হোস্টেল থেকে গিয়ে ছাদে দাড়িয়েছিলাম তখনই নিশি এসে আজেবাজে কথা শুরু করেছিলো।তারপর আর কি আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো আর আমি ঠাটিয়ে একচড় দিয়ে চলে এসেছি।’
ইয়াদের কথা শুনে মধু ঠোঁট টিপে হাসলো।তারপর বলল,’কিন্তু একটা বিষয় বুজলাম না আপনি এত তাড়াতাড়ি আমার প্রেগন্যান্ট এর বিষয়টা যে মিথ্যা এটা বিশ্বাস করে নিলেন কি করে?’
মধুর কথা শুনে ইয়াদ দুষ্টু হেসে বলল,’ধূর বললেই হলো না কি!আমি’তো এখনো কিছু করলাম ই না।বাচ্চা কোথা থেকে আমদানি হবে।’
মধু ইয়াদের কথার ইঙ্গিত ধরতে পেরে চোখ ছোটোছোটো করে বলল,’আপনি একটা অসভ্য!’
ইয়াদ মধুর কথায় হাসলো।মধুও হাসছে।তারপর আরো অনেক্ক্ষণ দুজনেই কথাবার্তা বলার পর যখন কলেজের কাছাকাছি পৌছালো তখন হঠাৎ করেই মধু বলল,’আচ্ছা সেদিন আপনি ছাদ থেকে কখন নেমেছেন?নিশি কি আপনাকে দেখেছিলো?’
ইয়াদ বলল,’তুমি যাওয়ার পাঁচ মিনিট পরই নিশি চলে যায়।আর ও নামার দুই মিনিট পর আমি নামি।ঠান্ডায় পুরো কাশাকাশি সুরু হয়ে গেছিলো আমার।’
মধুর অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’সরি।আমি আপনাকে একা রেখেই চলে গিয়েছিলাম।’
ইয়াদ মৃদু হেসে বলল,’ইট’স ওকে।তার একটু পরই জানতে পারি দাদু নাকি ভীষণ অসুস্থ।তো আমরা সবাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ি।ফোনে চার্জ ছিলো না আমার তাই তোমাকে বলতে পারি নি।তখন কথা বলার মতো পরিস্থিতিও ছিলো না।এরপর কালকে সকাল থেকে তোমাকে অনেকবার কল দিয়েছিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ ছিলো।’
এতটুকু বলার পর ইয়াদ থামলো তারপর আবার বলল,’যাক বাদ দাও।এখন বল নাস্তা করছো?’
ইয়াদের কথা শুনে মধুর ওইদিনের কথা মনে পড়ে গেলো।তাই মধু তাড়াতাড়িই বলল’করেছি,করেছি।’এমনিতেও মধু নাস্তা করেই বেরিয়েছিলো।মধুর উত্তর শুনে ইয়াদ জোরেজোরে হেসে দিলো।তারপর হাসি থামিয়ে বলল,’সত্যি তো?’
‘হুম,সত্যি।’
‘আচ্ছা তাহলে কলেজে যাও।আর হোস্টেলে ঢোকার আগে একটু বাইরে দাড়িয়ো।আমি আসবো।’
মধু মাথা নেড়ে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে কলেজের ভেতর চলে গেলো।
————
পাঁচদিন থেকে আইরিন রহমানের শরীর খারাপ।কেমন যেনো বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না হাত পা অবশ হয়ে আছে।এইটা তার নতুন কোনো রোগ নয় মাঝেমধ্যেই এমনটা হয়।তখন মধু সবকাজ করে হাতে পায়ে,মাথায় তেল মালিশ করে দেয়।কিন্তু এখন এগুলো করার মতো কেউ নেই।মিলি নিজের ঘরে নিজের মতো আছে।ডাকলে আসে না ডাকলে কথা নেই।
আজ কেমন যেনো একটু সুক্ষ্ম অনুভুতি কাজ করলো তার মধুর জন্য।
আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে বসলো আইরিন রহমান। দু-এক কদম হাঁটতেই মাথাঘুরে পড়ে যেতে নিলেই ওয়ারড্রব ধরে ফেলেন।তারপর আবার বিছানায় ফিরে এসে শুয়ে পড়লেন।শরীর চলছে না!
———
ইফাজ মাত্রই বেরিয়েছে চেম্বার থেকে।এখন বিকেল পাঁচটা।কয়েকদিন ধরেই তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে দেখা হয় না।কি জানি কোথায় গেছে!
ইফাজ রিকশায় উঠলো বাসায় যাওয়ার জন্য।আচমকাই খেয়াল করলো ওর প্রেয়সী রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।ইফাজ রিকশা থামিয়ে ওর দিকে যেতে নিলো কিন্তু তার আগেই ও আরেকটা রিকশায় উঠে পড়লো।ইফাজ হাত ঝাড়া দিয়ে বলল,’ওহ!শীট’
তারপর আবার নিজের রিকশায় উঠে পড়লো।বাসায় যেতে যেতে ভাবলো আগামী মাসে বাড়িটা কম্প্লিট হলে পুরো ফ্যামিলি ওখানে শিফট হবে তারপরই তার প্রেয়সীকে নিজের করে নিবে।এগুলো ভাবতে ভাবতেই ইফাজ হাসলো।
বাড়ির সামনে এসে রিকশা থেকে নেমে ভেতরে যেতে লাগলো।সিড়িতে উটতেই ইয়াদের ওর মুখোমুখি পড়লো।ইয়াদকে দেখে ইফাজ বলল,’কই যাস?’
‘এইতো একটু ঘুরতে।’ইয়াদ আমতা আমতা করতে করতে বলল।
‘ঘুরতে নাকি গার্লফ্রেন্ডরে ঘুরাইতে।’
ইয়াদ একটু লাজুক হাসলো।ইফাজ ওর পিঠে চাপড় দিয়ে বলল,’যতোই ঘুরাও কোনো লাভ হবে না যতোদিন না আমি বিয়ে করছি ততোদিন তোর রাস্তা বন্ধ।’
ইয়াদও টিটকারি দিয়ে বলল,’আমি পালিয়ে বিয়ে করবো তাও তোমার আগে।’
ইফাজও ভাব নিয়ে বলল,’দেখা যাবে।’
‘দেইখো।
তারপর দুজনই দুদিকে চলে গেলো।
—————
ইয়াদ মধুর হোস্টেলের সামনে আসতেই দেখলো নিশিও দাড়িয়ে আছে এখানে।ইয়াদ দেখেও না দেখার ভান করে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলো।ইয়াদকে দেখে নিশি কথা বলতে যাবে এরমধ্যেই মধু এসে ইয়াদের হাত ধরে ফেললো।এটা দেখে আর নিশি সামনে এগুলো না।মধুর কাহিনি দেখে ইয়াদ হেসে ফেলল।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)