#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৭
#Arshi_Ayat
নিশির যা রাগ উঠেছিলো মন চেয়েছিলো তখনই গিয়ে মধুর মা কে সব বলে দিবে কিন্তু মনে মনে ভাবলো কয়েকটা প্রমাণ জোগাড় করতে পারলে খেলা জমে যাবে এইজন্য নিশি তখন কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো।
————–
নিশি যাওয়ার পাঁচমনিট পরই মধু বাসায় চলে আসলো।এখন সাড়ে ছয়টা বাজে।সাতটায় প্রাইভেট পড়াতে যেতে হবে।তারপর কলেজে তাই একবারেই রেডি হয়ে নাস্তা করতে এলো।কিন্তু নাস্তার টেবিলে এসে দেখে নাস্তা নেই।মধু ওর মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো মা শুয়ে আছে।ঘুমিয়ে আছে নাকি বোঝা যাচ্ছে না।মধু না ডেকেই বেরিয়ে পড়লো।
প্রাইভেট পড়িয়ে মাত্রই বের হলো পেট চো চো করছে ক্ষুধায়।আজকে টাকাও নিয়ে বের হয় নি মধু।ক্লাস শুরু হতে আধঘন্টা আছে আর এইসময়ে বাসায় গিয়ে খেয়ে আবার আসতে লেট হবে।তাই মধু আর বাসায় গেলো না।কলেজের দিকে রওনা দিলো।কলেজের কাছাকাছি আসতেই দেখলো ইয়াদ আসছে।মধুকে দেখে দূর থেকেই হাসলো।তারপর সামনে এসে বলল,’কলেজে যাচ্ছো?’
‘হুম।’
‘নাস্তা খেয়েছো?’
‘না।আসলে সময় পাই নি।’
‘চলো।’
ইয়াদ মধুর হাত ধরে হাটা শুরু করলো।মধু অবাক হয়ে বলল,’কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
‘খেতে।’ইয়াদ সংক্ষেপে বলল
‘আপনি এখনো খান নি?’মধু ভ্রু কুঁচকে বলল।
‘ম্যাম আমি খেয়েছি।আপনি খান নি।আর না খেলে পড়াশোনা মাথায় ঢোকে না।পেট ফুল করে পরে পড়তে বসতে হয়।তাই আগে খাওয়া দাওয়া পরে পড়াশোনা।’
‘কিন্তু খেয়ে আসতে আসতে তো লেট হয়ে যাবে।আর কলেজের গেটও বন্ধ করে দিবে।’
‘লেট হলে হবে।দরকার হয় আজকে কলেজ করবা না।কিন্তু খালি পেটে থাকা যাবে না।’
মধু মনেমনে বলল,’কেনো যে বলতে গেলাম!এখন খাইয়ে ফুটবল না বানিয়ে ছাড়বে না।’
ইয়াদ মধুকে নিয়ে কাছের একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো।তারপর দুইপ্লেট বিরিয়ানি অর্ডার করলো।মধু আৎকে উঠে বলল,’দুইপ্লেট কে খাবে?’
‘তুমি খাবা।’ইয়াদ স্বাভাবিক ভাবেই বলল।
মধু কাঁদোকাঁদো মুখে বলল,’এতো খাবারতো রাক্ষসও শেষ করতে পারবে না আমিতো দূরের কথা।প্লিজ এতো খাবার আমি খেতে পারবো না।’
‘চুপচাপ বসো।’ইয়াদ চোখ রাঙিয়ে বলল।
ইয়াদের কথায় মধু আর কোনো শব্দও করলো না।একটু পরই দুইপ্লেট বিরিয়ানি চলে আসলো।ইয়াদ মধুর দিকে তাকিয়ে বলল,’নাও শুরু করো।’
মধু অনুরোধের কন্ঠে বলল,’আমি অল্প খাবো কিন্তু!’
‘আচ্ছা শুরু করো।’
মধু খাওয়া শুরু করলো এবং বহুকষ্টে একপ্লেট শেষ করলো।তারপর ইয়াদের দিকে ছলছল চোখে তাকালো।ইয়াদ ওর অবস্থা দেখে মুখ টিপে একটু হাসলো তারপর বলল,’আচ্ছা ঠিকাছে এই প্লেট আমি খাচ্ছি।’
ইয়াদ ঝটপট শেষ করে ফেললো।তারপর বিল মিটিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে হাতঘড়িতে দেখলো সাড়ে দশটা বাজে।আজকে আর কলেজে যাওয়া হবে না।মধু বলল,’এখন কি করবো?বাসায় গেলেতো আম্মু হাজারটা প্রশ্ন করবে।’
‘বাসায় যাওয়া লাগবে না।চলো আমার ভার্সিটিতে চলো।ওদের সাথে দেখা করিয়ে আনি।’
তারপর মধু আর ইয়াদ ভার্সিটিতে এলো।ইয়াদ নিজের ফ্রেন্ডের মাঝে নিয়ে গিয়ে ওকে পরিচয় করিয়ে দিলো।ওর বন্ধুরা মধুকে ভাবি ভাবি করে ওর খান গরম করে ফেলছে।মধু বারবার ইশারা দিচ্ছে এখান থেকে যাওয়ার জন্য কিন্তু ইয়াদ বুঝতে পারছে না।কিন্তু রাসেল বুঝতে পারলো মধুর ইশারা তাই ইয়াদকে খোঁচা মেরে বলল,’বন্ধু তোমাকে কেউ একজন ইশারায় বলছে ”কাছে এসো, কাছে এসো,কাছে এসো না আআআআআআ’
রাসেলের কথায় বন্ধুদের মধ্যে সবাই হেসে দিলো আর মধু লজ্জা পেলো।তারপর ইয়াদ আর মধু ওদের থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে কিছুদূর হাঁটতেই টিপটিপ বৃষ্টি পড়া শুরু করলো।আশেপাশে ছাউনি পাওয়া যাচ্ছে না।দূর থেকে একটা বাস দেখে ইয়াদ হাত দিয়ে ইশারা দিলো।বাস এসে ওদের সামনে স্লো হয়ে গেলো কিন্তু থামলো না।ইয়াদ লাফিয়ে উঠলো তারপর মধুকেও উঠালো।বাসে উঠেই মধুর মাথা চক্কর দিতে লাগলো।এর আগে কখনো বাসে দাড়িয়ে যায় নি মধু।বাসের ঝাঁকুনির জন্য খালি পড়ে যেতে নেয়।ইয়াদ ব্যাপারটা লক্ষ করে চারপাশে দেখলো একটা সীটও নেই।তাই ইয়াদ মধুকে একবারে বাসের পিছনের সাইডে নিয়ে এলো তারপর নিজে একটা স্যান্ড ধরে একহাতে মধুকে জড়িয়ে ধরলো।মধু মাথাটা নিজের বুকের ওপর রেখে ফিসফিসিয়ে বলল,’আমার গলা জড়িয়ে ধরো তাহলে আর ঝাঁকুনি লাগবে না।ইয়াদের কথা মতো মধু ওর গলা জড়িয়ে ধরলো।তারপর না চাইতেও দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।মধুর চোখের দিকে চাইতেই ইয়াদের কবি নিমাই ভাট্টাচার্যের একটা কথা মনে হলো
“””””প্রহর শেষে আলোর রাঙা সেদিন চৈত্র মাস,
তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়,
বাটে ঘাটে হাজার লোকের পরিহাস,
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।””””(নিমাই ভট্টাচার্য)
ইয়াদ মধুর চোখ থেকে নিজের চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।বাস এসে থামলো লঞ্চঘাট।ইয়াদ আর মধু নামলো বাস থেকে।এখন রোদ উঠেছে তবে মাঝেমধ্যে বৃষ্টির আনাগোনাও আছে।মধু চারপাশে একবার তাকিয়ে বলল,’এখানে আসলাম কেনো?’
‘তোমাকে পাচার করে দিবো তাই।’ইয়াদ দুষ্টু হেসে বলল।
মধু মুখ বাকিয়ে বলল,’এহ!আপনাকে ছাড়া আমি যাবো না।’
ইয়াদ হাসলো তারপর বলল,’চা খাবে?’
‘হ্যাঁ খাবো কিন্তু দোকানে যাবো না।অনেক ছেলেরা বসে আছে।’
‘আচ্ছা তাহলে তুমি এখানে পাঁচ মিনিট দাড়াও আমি নিয়ে আসছি।’
মধু ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।ইয়াদ গিয়ে দু কাপ চা নিয়ে এলো।চা শেষ করে ওরা নদীর ঘাটে গিয়ে দাড়ালো।নদীর ঠান্ডা পানি ছুয়ে একটা বাতাস দুজনেরই চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে।নিরবতা ভেঙে মধুই বলল,’জানেন আমি কখনো লঞ্চে উঠি নি।ইচ্ছা আছে উঠবো।’
‘চলো এখনি উঠি।’
‘এখনি?’
‘হ্যাঁ,কারণ আজকে সুযোগ আছে, সময় আছে, টাকা আছে,ইচ্ছা আছে তাই আজই উঠবো বলা যায় না কখন কি হয় তাই যখনি কোনো ইচ্ছা হয় তখনি সেটা পূরণের চেষ্টা করবে কারণ হয়তো এমন কোনোদিন আসবে সেদিন তোমার টাকা,সময় থাকলেও ইচ্ছে থাকবে না আবার ইচ্ছে থাকলেও সময় অথবা টাকা থাকবে না।তাই সুযোগ যখন আসে তখনই লুফে নিতে হয়।’
মধু ইয়াদের কথায় মুগ্ধ হলো আবারও।নতুন করে আরো একবার এই ইয়াদের প্রেমে পড়তে হলো মধুকে।
এখন একটা লঞ্চ ছাড়াবে।এই লঞ্চেই উঠবে ওরা।কিন্তু মধুর ভয় লাগছে।যদি পড়ে যায়।তবুও মনে সাহস রেখে একটু একটু করে এগিয়ে লঞ্চে উঠেই গেলো।ওর পিছনে ইয়াদও এলো।এটা লোকাল লঞ্চ।নদীর ওইপাড়ে যাবে।একটু পারই লঞ্চ ছেড়ে দিলো।মধু ভয় ইয়াদের হাত খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছে লঞ্চের বারান্দায়।এটা তখন মাঝনদীতে অবস্থান করছে।ইয়াদ চারপাশে একবার তাকিয়ে বলল,’ফিল করো এখন তুমি নদীর ওপর ভাসছো।ফিলিং কেমন?’
‘খুব ভাল্লাগছে।’মধু উৎফুল্ল হয়ে বলল।
‘আচ্ছা চলো একটা টাইটানিক পোস দেই।’
‘এটা দিতে হলে ছাদে যেতে হবে।’মধু বলল।
‘এরা ছাদে যেতে দিবে না।এখান থেকেই দিতে হবে।’
তারপর দুজনে গরীবের জ্যাক আর রোজ সোজে একটা পোস দিলো।দুজনেই হাসলো খুব।লঞ্চ ওইপাড়ে পৌঁছানোর পর দুজনই নামলো।নদীর এপাড়টা একটু গ্রাম টাইপের।মধু আর ইয়াদ আশেপাশে ঘুরলো।তারপর ফিরতি লঞ্চে এপাশে চলে আসলো।এখন দুপুর একটা।দুইটা থেকে মধুর কোচিং শুরু।কলেজ না করলেও কোচিং করতে হবে তাই।ইয়াদ আর মধু লঞ্চ ঘাট থেকে একটা বাস উঠলো।এইবাসটায় যাত্রী তেমন নেই।দুপুরের সময়তো তেমন যাত্রী নেই।দশমিনিট অপেক্ষা করে আরো দুই তিন জন যাত্রী নিয়ে বাস ছেড়ে দিলো।বাসে দুজের মাঝে তেমন কথা হয় নি শুধু চোখাচোখি হয়েছে।ইয়াদের ভার্সিটির সামনে আসতেই দুজনে নেমে গেলো।বাস থেকে নেমে মধু বলল,’আমি ব্যাচে গেলাম।আল্লাহ হাফেজ।’
‘এই দাড়াও।এখনো একঘন্টা বাকি।দুপুরে খেয়ে তারপর যাবা।’
‘যেগুলো খাওয়াইছেন ওগুলোইতো এখনো হজম হয় নাই।’
‘হয়ে যাবে।’
তারপর জবরদস্তি মধুকে খেতে হলো দুপুরে।যেখানে মধু জীবনেও দুপুরে খায় নি।খাওয়া শেষ করে বের হতেই মধু আচমকা ইয়াদের হাত ধরে ফেললো।ইয়াদ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,’কি হইছে মধু?’
‘সামনে তাকান’ মধু সামনের দিকে তাকিয়ে বলল।
দৃষ্টি অনুসরণ করে ইয়াদও তাকালো সামনে।নিশি রাস্তার ওইপাড়ে একটা ছেলের হাত ধরে হাঁটছে।ইয়াদ ওইদিকে তাকিয়েই ঘৃণায় অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,’ব্যাচে চলে যাও।আর এসব মেয়েদের থেকে কমপক্ষে একশো হাত দূরে থাকবা।’
তারপর ইয়াদ চলে গেলো বাসার দিকে আর মধু নিশির পিছুপিছু।কারণ ব্যাচ শুরু হতে আরো আধঘন্টা বাকি।মধু নিশিকে ফলো করতে করতে কিছুদূর আসতেই হঠাৎ দেখলো কেউ একজন ছুটে এসে নিশির হাত ধরে ফেললো।মধু আরেকটু এগিয়ে ভালো করে তাকিয়েই বুঝতে পারলো এটা সেদিনের সেই পাগলটা যেটা মধুকে দেখতে এসেছিলো।মধুর হাসি আসছে প্রচুর তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে কাহিনি দেখতে লাগলো।
যে ছেলেটা নিশির হাত ধরে হাটছিলো ওই ছেলেটা নিশিকে একটা থাপ্পড় মেরে চলে গেলো।ছেলেটা ভেবেছে এই পাগল ছেলেটা ওর আরেকটা বয়ফ্রেন্ড।এদিকে নিশি বেক্কল হয়ে গেছে।এটা কি হলো!নিশি বারবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ছেলেটা ছাড়ছে না।এরমধ্যেই ছেলের মা এসে ওদের ছাড়িয়ে ছেলেটাকে নিয়ে গেলো।যেতে যেতেও ছেলেটা নিশির দিকে তাকিয়ে ছিলো।দূর থেকে মধু দেখে বলল,’আহা কি মহব্বত!”
এটা বলেই হাসতে হাসতে নিজের ব্যাচের দিকে হাটা ধরলো।আজকে একটা শান্তি শান্তি লাগছে মনের মধ্যে।
চলবে…
#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৮
#Arshi_Ayat
ব্যাচে আজকে আরিয়া যায় নি।মধু ব্যাচে গিয়ে বুঝতে পারলো।আজকে একা যেতে হবে।হঠাৎই মনে হলো ইয়াদকে বললেই তো হয়।ও এসে নিয়ে যাবে।মধু ক্লাসের মাঝেই লুকিয়ে ইয়াদকে টেক্সট করে দিলো।
ব্যাচ শেষ করে মাত্রই মধু বের হয়েছে।এখনো ইয়াদ আসে নি।অন্ধকার আস্তে আস্তে আলোকে মুছে দিয়ে নিজের অস্তিত্ব কায়েম করছে।মধু ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে ইয়াদ ফোন দিতে নিবে এই সময়ই ইয়াদ চলে এলো।এসেই স্বভাবমতো একটু হাসলো।তারপর বলল,’আজকে তোমার বান্ধবী আসে নি?’
‘না সেইজন্যই তো আপনাকে আসতে বললাম।আমার ভয় লাগে রাস্তাটা দিয়ে যেতে।আবার কয়েকদিন যাবত মনে হয় কেউ যেনো ফলো করে আমাদের।’
ইয়াদ চিন্তিত কন্ঠে বলল,’কে তোমাদের ফলো করবে?সন্দেহ হয় কাউকে?’
‘না সন্দেহ করার মতো কাউকেই তো দেখি না।’
‘তাহলে শুধু শুধু কেউতো ফলো করবে না।’
‘আমিও তো সেটাই বলছি।বুঝতে পারছি না বিষয়টা।’মধু অস্থির হয়ে বলল।
‘আচ্ছা চিন্তা করো না।কালকে তুমি আর আরিয়া আগে যাবে আমি তোমাদের থেকে অনেকটা পিছনে থাকবো।দেখবো কে সন্দেহজনক ভাবে তোমাদের ফলো করছে।’
‘আচ্ছা।’
এবার মধু অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে এসে বলল,’দুপুরে বাসায় যাওয়ার পর কি করলেন?’
‘বাসায় যাই নি তো।রাসেল,মাসুদ আর কয়েকজন বড় ভাইয়ের সাথে ক্রিকেট খেলছি।’
‘বাহ!আপনিতো ফুটবল ক্রিকেট সবই খেলেন।’
‘হ্যাঁ,ছোট থাকতে মাঝেমধ্যেই ভাইয়া আমি বাবা খেলতাম।কখনো আমি ব্যাটিং করতাম তো কখনো ভাই নাহয় বাবা।মোটামুটি সব খেলার হাতেখড়ি বাবার হাতেই হয়।
ইফাজ ভাইয়া খুব শান্তশিষ্ট ছিলো কিন্তু আমি দুষ্ট ছিলাম খেলার সময় প্রচুর চালাকি করতাম।ভাইয়া বুঝতে পারলেও কিছু বলতো না।এখন ভাইয়া ব্যাস্ত আর বাবা ইচ্ছা থাকলেও তার ডাক্তার পুত্রের নিষেধ আছে কারণ হাটুতে ব্যাথা।তাই ওদের সাথে খেলতে না পারলেও এখন ফ্রেন্ডদের সাথে খেলি।’
‘ও,আমার সাথে খেলবেন লুকোচুরি।’
ইয়াদ চোখ মেরে দুষ্ট হেসে বলল,’হ্যাঁ খেলা যায়।’
‘আচ্ছা।সময় হোক।’
‘যেমন আপনার ইচ্ছা।’ইয়াদ মুচকি হেসে বলল।
এভাবেই কথা বলতে বলতে বাড়ির কাছাকাছি চলে এলো।এখান থেকে মধু আগে আগে হাটছে আর ইয়াদ পিছনে।তারপর যে যার ঘরে চলে গেলো।
———————-
আজকে শুক্রবার।কলেজ,ব্যাচ কিছুই নেই তার ওপর সকাল থেকে বৃষ্টি।জানালাগুলো আটকে মধু বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টি হাতে দিয়ে ছুয়ে অনুভব করছে।হঠাৎ মনে হলো ভিজলে কেমন হয়!তাই ইয়াদকে মেসেজ করলো,’এই যে মহাশয়,চলুন না বৃষ্টিতে ভিজি।ছাদে আসুন।’
সাথেই সাথেই উত্তর আসলো,’অসুখ বাধানোর জন্য?’
‘কিচ্ছু হবে না প্লিজ আসুন না।’
‘আচ্ছা আসো।’
মধু খুশী হয়ে ফোনটা ব্যাগে রেখে বেরিয়ে পড়লো।ছাদের মাঝখানে এসে মুখটা আকাশের দিকে তুলে ধরে বৃষ্টি অনুভব করতে লাগলো।এরইমধ্যে ইয়াদও চলে এলো।ইয়াদ ছাদে এসেই ছাদের দরজা বন্ধ করে দিলো।খোলা রাখাটা ঠিক হবে না।কে কখন দেখে ফেলে কে জানে!
ছাদের দরজা আটকে মধুর সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,’অসুখ হলে দেইখো কি করি?’
‘কি করবেন?’মধু ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করল।
‘আগে হোক তারপরই বুঝবা।’
মধু মুখ ভেঙচিয়ে বলল,’আপনার হলে?’
‘আমার হলেও তুমি দায়ী।তোমার জন্যই আমি ভিজছি।’
‘আমি আপনার কে?আমি বললেই আপনি ভিজবেন কেনো?’মধু দুষ্টুমি করে বলল।
‘আচ্ছা তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।’এই বলে ইয়াদ হাঁটা ধরলেই মধু হাত ধরে ফেললো।তারপর বলল,’সরি,সরি আর বলবো না।’
ইয়াদ মুচকি হাসলো।মধু নিজের চুলের খোঁপা ছেড়ে দিয়ে বলল,’আমাকে কোলে নিতে পারবেন।বর’রা যেভাবে বউদের নেয়।’
ইয়াদ একবার মধুর দিকে তাকিয়ে বলল,’না পারার কি আছে তবে এখন না সময় হলো নিবো।’
মধু কিছু বলবে এই সময়েই ছাদের দরজায় খটখট আওয়াজ হয়।দরজায় কারো শব্দে দুজনেই ঘাবড়ে গেলো।এখন কি করবে কোথায় লুকাবে।পাশেই একটা সিমেন্টের টাংকি আছে।ইয়াদ সেটার পিছনে লুকিয়ে পড়লো।মধু গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো নিশি।ও মধুকে পাশকাটিয়ে ছাঁদে চলে গেলো।মধুও কিছু না বলে একপাশে এসে দাড়ালো।নিশির মতিগতি কিছু বোঝা যাচ্ছে না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে ও।পনেরো মিনিট হয়ে গেছে এখনও নিশি যাচ্ছে না তাই মধুও যেতে পারছে না আর ইয়াদ বেচারা টাংকির পিছনে বসে বসে পা ব্যাথা হয়ে গেছে।মধু ভেবেছে নিশি যাওয়ার পরই যাবে বলাতো যায় না কখন কি কান্ড করে ফেলে।কিন্তু মধুর সেই ইচ্ছায় একবালতি জল ঢেলে মিলি এসে বলল,’আপু,তোমাকে আম্মু ডাকে।’
যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয় কথিত এই প্রবাদটা মধুর সাথেও মিলে গেলো না চাইতেও ইয়াদকে একা রেখে যেতে হচ্ছে।মধু বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ছাদ থেকে নেমে যেতে লাগলো।
—————
জামা পাল্টে বিছানায় বসে মধু চিন্তা করছে ইয়াদ কি এখনো ছাদে আছে?নিশি কি চলে গেছে?ও কি ইয়াদকে দেখে ফেললো?এমন অনেক প্রশ্ন মধুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।ইয়াদকে মেসেজ করেছে বাসায় এসে ওকে জানাতে কিন্তু সেটারও রিপ্লাই আসছে না।ওফ!চিন্তায় মনে হচ্ছে মাথা ফেটে যাবে।আর এখন বেরও হওয়া যাবে না।
চিন্তায় চিন্তায় বিকেল হয়ে গেলো।একবার ইয়াদকে দেখে আসতে পারলে ভালো হতো কিন্তু যাবে কিভাবে!ভাবতে ভাবতেই টেবিলের ওপর একটা খাতা দেখলো ইরিনের যেটা গত পরশুদিন এনেছিলো।এটা দেওয়ার নাম করে তো যাওয়া যেতেই পারে।মধু খাতাটা নিয়ে তিন তলায় পা বাড়ালো।কিন্তু একি!দরজায় তো তালা ঝুলানো।ওরা কি কোথায় গেলো নাকি!ইয়াদ তো মধুকে কিছু বলে নি নাকি রাগ করেছে ওকে ওভাবে একা রেখে আসায়!মধু পাঁচ মিনিট তিনতলার ফ্ল্যাটের সামনে ঘুরাঘুরি করে আবার নিজের ঘরে চলে এলো।তারপর ফোনটা বের করে ইয়াদকে ফোন দিলো কিন্তু ফোন বন্ধ!টেনশন হচ্ছে মধুর!কোথাও যাবে একবারও বলবে না!মধুর কষ্ট লাগলো!চোখ দিয়ে পানি বের হতে নিলেও সে সামলে নিয়ে ফোনটা ব্যাগে রেখে দিলো।কিন্তু ভেতরে অস্থিরতা ঠিকই কাজ করছে।হঠাৎ মনে পড়লো আইরিন রহমানের ফোন দিয়ে ইরিনকে কল দিলেই তো হয়।
মধু ইরিনের নাম্বারে কল দিলো কিন্তু ফোন কেউ রিসিভ করছে না।ওদের আর নাম্বারও নেই মধুর কাছে।খুব ভয় লাগছে মধুর।এমন কি হলো যে সবাই একসাথে গায়েব হয়ে গেলো।
—————-
মধু পড়ছিলো।ঠিক পড়ছিলো বললে ভুল হবে বইটা সামনে রেখে বসে ছিলো।চিন্তা মাথায় রেখে কি পড়া হয়!
বিরক্তিতে বইটা বন্ধ করে মধু উঠে দাড়ালো।কিছুক্ষণ পায়চারি করে আবার কল দিলো ইয়াদকে না এবারও ফোন বন্ধ।চিন্তা বেড়েই চলছে মধুর।
এখন রাত ১১.০০ টা বাজে।মধু আবার কল দিলো।এবার ফোনে কল ঢুকছে।মধুর বুক ঢিপঢিপ করছে।কল কেটে যাবার আগেই ইয়াদ কল ধরলো।মধু প্রায় সাথে সাথেই উত্তেজিত কন্ঠে বলল,’আপনি কোথায়?কি হয়েছে আপনার?কল ধরছেন না কেনো?’
ইয়াদ কিছু বলল না।মধু উদ্বিগ্ন কন্ঠে আবার বলল,’কি হলো বলুন না।’
‘আমার দাদু মারা গেছেন একটু আগে।তোমার সাথে পরে কথা বলবো।’ইয়াদ এতটুকুই বলল ধরা গলায়।ফোনের এপাশ থেকেও মধু বুঝতে পারলো ইয়াদের প্রচুর কষ্ট হচ্ছে।কেনো যেনো মধুরও খারাপ লাগা ভর করলো।এতক্ষণ দুশ্চিন্তা আর এখন খারাপ লাগা!
—————-
এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন চোখ লেগে এসেছিলো মধু টেরও পায় নি।সকালে তাড়াতাড়িই উঠেই ইয়াদকে কল করলো।ইয়াদ কল ধরে নি।না ধরাটাই স্বাভাবিক।
মধু ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই চোখ কপালে চলে গেলো।ওর ফোন মিলির হাতে।মধু ভুলেই গিয়েছিলো ফোনটা লুকাতে।মধু ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই মধু খপ করে ওর হাত ধরে বলে,’মিলি কাউকে বলিস না প্লিজ।’
‘না আমাকে ছাড়ো।আমি আম্মুর কাছে যাবো।’
মধু অসহায় কন্ঠে বলল,’প্লিজ বলিস না।তোর যা লাগবে বল আমি দিবো।’
মিলি তবুও শুনলো না।এমনিতেই মন মেজাজ খারাপ তার ওপর আবার মিলির এই আচরণ মধুর ভাল্লাগলো না।মিলিকে সপাটে একটা থাপ্পড় দিয়ে ফোনটা নিয়ে নিলো কিন্তু মধু বুঝতে পারে নি রাগের মাথায় করা কাজটা ওর বিপদ ডেকে আনতে পারে।ঠিক তাই হলো মিলি গিয়ে আইরিন রহমানকে সব বলে দিলো।আইরিন রহমান এসে মধুকে উড়াধুড়া মাইর শুরু করলো।ওর থেকে ফোনটাও নিয়ে নিলো।প্রচুর মার খাওয়ায় মধু জ্ঞান হারালো।যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দুপুর।সারা শরীরে কালশীটে দাগ।আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো।মাথা ঘুরছে।শরীরে ব্যাথা।কোনো মতে বিছানায় বসে ব্যাথার ঔষুধ খেয়ে শুয়ে থাকলো।
বিকলে ঘুম থেকে উঠতেই বুঝতে পারলে ব্যাথা নেই।তবে দাগগুলো স্পষ্ট।মধু গোসল করে নিলো।ভাত খাওয়ার রুচি নেই।
সন্ধ্যার সময় ওর মা এসে ফুল হাতার একাটা ব্লাউজ আর শাড়ি দিয়ে বলল,’চুপচাপ রেডি হ।’
কিচ্ছু বলল না মধু।চুপচাপই রেডি হলো।পাত্রপক্ষের কথাবার্তা শেষ হওয়ার পর পাত্র বলল মধুর সাথে কথা বলবে।মধুও গেলো।ছেলের নাম ইমন।ছেলে মধুকে বলল,’আপনার কি বিয়েতে আপত্তি আছে?’
‘হ্যাঁ আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।’
‘বিয়ের আগে এমন থাকেই।যাইহোক আমি আপনাকেই বিয়ে করবো।’এটা বলে ছেলেটা চলে যেতে নিলেই মধু বলে উঠলো,’আমি প্রেগন্যান্ট জানার পরও বিয়ে করবেন আমাকে?’
ছেলেটা মুহুর্তেই ঘুরে তাকালো।তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’আপনি প্রেগন্যান্ট তার প্রমাণ কি?’
‘ও আচ্ছা প্রমাণ লাগবে তো দাড়ান দেখাচ্ছি।’
এই বলেই মধু প্রেগ্ন্যাসি কিট’টা ইমনকে দেখালো।ইমন কীট’টা দেখেই মুখ গম্ভীর করে ফেললো।কীটে স্পষ্ট প্রমাণ করছে মধু প্রেগন্যান্ট!
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)