ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব-৩৯+৪০

0
1160

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_৩৯
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

আজ নোমানের ঘুম আর শেষ হচ্ছে না।মেয়েরা কোনো উপাই না দেখে রুম চেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিলো।কারণ এখন সবাই বেশ ক্লান্ত।সেজন্য সবার এখন বিশ্রামের প্রয়োজন।কিন্তু নোমান যেভাবে ঘুমিয়ে আছে মনে হয় না সে আজ আর উঠবে?সেজন্য ছেলেরা আসলো মেয়েদের রুমে আর মেয়েরা চলে গেলো ছেলেদের রুমে।

আমান,সোহান আর সিফাত রুমে এসেই নোমানকে ডাকতে লাগলো।কিন্তু নোমান এখনো ঘুমের অভিনয় করেই যাচ্ছে।সোহান তখন বললো ওকে ডিস্টার্ব করো না কেউ।ওকে ঘুমাতে দাও।চলো আমরা শুয়ে থেকে গল্প করি।
সিফাত তখন বললো কিসের গল্প করবো?

সোহান তখন নোমানের কাছে গিয়ে বললো, এমন এমন গল্প বলো যাতে ঘুমন্ত মানুষ ও জেগে ওঠে।

আমান তখন বললো তাহলে তুমিই আগে শুরু করো।

সোহান তখন বললো, এক লোক তার স্ত্রীকে জোরে করে একটা চড় মেরে বললো ‘যাকে মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তাকেই এভাবে মারে।

স্ত্রী সেই কথা শুনে স্বামীর গালে দ্বিগুণ জোরে দুইটি চড় মেরে বললো, ‘তুমি কি ভাবো আমি তোমাকে ভালোবাসি না?আমি তোমাকে আরো অনেক বেশি ভালোবাসি।

সোহানের গল্প শুনে সবাই হা হা করে হেসে উঠলো।

সিফাত সোহানের গল্প শুনে বললো এবার আমি একটা গল্প বলি শোনো।গল্পটা কিন্তু একদম বাস্তব।আমার সাথেই ঘটেছিলো এই কাহিনি।

আমি একটা ছবি ওয়াশ করে হাতে নিয়ে দেখতেছিলাম।হাতে আমার ক্যামেরাও আছে।হঠাৎ বাতাসে ছবি টা হাত থেকে পড়ে গেলো।তখনি আবার এক মহিলা আসলো সেখানে আর উনি ছবিটার উপর দাঁড়িয়ে থাকলেন।আমি তখন দৌঁড়ে গিয়ে বললাম
ম্যাডাম,পা টা একটু ওঠান,ছবি তুলবো।

ভদ্রমহিলা সেই কথা শুনে বললো বেয়াদব ছেলে,তোর বাবা মা কি কোনো শিক্ষা দেয় নি?

আমি তখন বললাম,ম্যাডাম আমি আবার কি করলাম?শুধু তো পা টা সরাতে বলছি যাতে আমি ছবি টা তুলতে পারি।
ভদ্র মহিলা এবার আমায় জোরে করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো ছবি তোলার জন্য অনেক কিছু আছে।সেগুলো তোল গিয়ে।আমার পায়ের ছবি কেন ওঠাবি?
আমি এতোক্ষনে বুঝতে পারলাম ব্যাপার টা।তখন বললাম ম্যাডাম আপনার পায়ের নিচে আমার একটা ছবি আছে।পা টা একটু সরান ছবি টা নিবো।
ভদ্র মহিলা পা সরাতেই ছবি টা দেখতে পেলো আর বললো সরি সরি।আমি তো ভেবেছিলাম আমার,,।আমি আর কি করি সরি শুনেই নিজেকে শান্ত্বনা দিলাম।আসলে কিছু কথা বিস্তারিত ভাবে না বললে এভাবেই জনগনের পিটুনি খেতে হয়।

আমান সিফাতের গল্প শুনে হা হা করে হাসতে হাসতে শেষ। আমান তখন বললো এরকম মজার একটা কাহিনী আমার এক পুলিশ সদস্যের সাথেও ঘটেছে।

পুলিশ সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে।

তো একজন লোক রাস্তার পাশ দিয়ে যাবার সময় কৌতুহল বশে গেটে পাহাড়ায় থাকা পুলিশ সদস্যর কাছে জানতে চাইল, “ভাই, এখানে কি হচ্ছে?”

পুলিশ সদস্য তখন বললো পুলিশ সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে।

লোকটি সেই কথা শুনে তার কপাল চাপড়াই য়ে বললো, কি দিন এলো! আজকাল চোরেরাও সংবর্ধনা পায়।

লোকটির কথা শুনে পুলিশ সদস্য দু ঘা লাগিয়ে দিয়ে বলল, “ব্যাটা, এত বড় সাহস! আমাদের চোর বললি”?

লোকটি তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,আরে ভাই, আপনাদের কখন চোর বললাম! আমি বলেছি পুলিশরা চোর। এই পুলিশ তো ভারতীয় পুলিশ অথবা পাকিস্তানী পুলিশ অথবা আমেরিকান পুলিশ হতে পারে!আমি তো বাংলাদেশের পুলিশদের চোর বলি নি।

পুলিশ সদস্য সেই কথা শুনে বললো,আমাকে বুদ্ধু পাইছিস তুই? আমি কি জানি না যে, কোন দেশের পুলিশ চুরি করে?

লোকটি সেই কথা শুনে বললো আমি তো সেজন্যই চোর বলেছি আপনাদের।

নোমান এবার ঘুম থেকে উঠে এলো।আর বললো ভাই তোরা থাম এবার।আমি আর না হেসে থাকতে পারছি না।হাসতে হাসতে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।ঘুমানোর অভিনয় করা যে এতো কঠিন তা আজ দিয়ে বুঝলাম।

সোহান তখন বললো এজন্যই তো এসব গল্প শুরু করে দিয়েছি।তুমি যে ঘুমানোর অভিনয় করছো তা আমরা ভালো করেই জানি।মেয়েদের কে এইভাবে বোকা বানালে তুমি?

নোমান তখন বললো, কি আর করার আছে বলো?ধরা পড়ে গেছি।এখন যে করেই হোক নিজের মানসম্মান টা তো বাঁচাতে হবে?

আমান তখন নোমানের কান ধরে বললো,এতোক্ষন তাহলে সত্যি সত্যি ঘুমের অভিনয় করছিলি?

–ভাইয়া ছাড়ো আমার কান।লাগছে আমার।ভাবিও এমন ভাবে মলে দিয়েছে যে এখনো ব্যাথা করছে কানটা।
আমান সেই কথা শুনে নোমানের কান টা ছেড়ে দিলো।

সিফাত তখন এগিয়ে এসে বললো,তা ডাক্তার সাহেব তোমার জানা কোনো মজার কাহিনী বলো?এতোক্ষন তো তোমাকে হাসানোর ট্রাই করলাম।এবার তুমি আমাদের হাসাও দেখি।

নোমান তখন বললো আচ্ছা ঠিক আছে।এই বলে নোমান ভেবেচিন্তে একটা গল্প মনে করলো।

পাগলা গারদের এক ডাক্তার তিন পাগলের পরীক্ষা নিচ্ছেন। পরীক্ষায় পাস করলে তিনজনকে পাগলা গারদ থেকে মুক্তি দেয়া হবে।কিন্তু ফেল করলেই তাকে তিন বছরের জন্য আটকে দেয়া হবে।

ডাক্তার এখন তিন পাগলকে একটা জলবিহীন ফাঁকা সুইমিং পুলের সামনে নিয়ে ঝাঁপ দিতে বললেন।

প্রথম পাগল তৎক্ষণাৎ তাতে ঝাঁপ দিয়ে পা ভেঙে ফেলল।
দ্বিতীয় পাগলটিও ডাক্তারের নির্দেশমতো তাতে ঝাঁপ দিল এবং হাত ভেঙে ফেলল।
কিন্তু তৃতীয় পাগলটি কোনোমতেই ঝাঁপ দিতে রাজি হল না।

ডাক্তার উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘আরে, তুমি তো সুস্থ হয়ে গেছ! যাও, তুমি মুক্ত।

তবে একটা কথা বল তো, তুমি পুলে ঝাঁপ দিলে না কেন?’

পাগলটি তখন নির্দ্বিধায় জবাব দিল, ‘দেখুন ডাক্তার বাবু, আমি সাঁতার একেবারেই জানি না!’সেজন্য ঝাঁপ দেই নি।

নোমানের জোকস শুনে সবাই হাসতে হাসতে শেষ হয়ে গেলো।কিন্তু সিফাত তখন বললো তোমার বাস্তব জীবনে এরকম মজার কোনো ঘটনা ঘটে নি?

নোমান তখন বললো হ্যাঁ ঘটেছে।আমি তখন নতুন জয়েন করেছি।কেউ তেমন একটা চেনে না আমাকে।এক জায়গায় গিয়েছিলাম সেজন্য চেম্বারে আসতে দেরী হয়েছে। তো নরমাল ড্রেসেই তাড়াতাড়ি করে চেম্বারে যাচ্ছিলাম।কিন্তু চেম্বারের সামনেই ছোটো খাটো একটা এক্সিডেন্ট হয় আমার।হাত আর পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ছিলে যায়।ব্যান্ডেজ করলেই ঠিক হয়ে যেতো।কিন্তু উঠতে পারছিলাম না।তখন কিছু লোকজন আমাকে কাঁধে করে চেম্বারের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো আর বলছিলো ভাগ্যিস ডাক্তার সাহেবের চেম্বারের কাছাকাছিই আপনার এক্সিডেন্ট টা হয়েছে।এখন তাড়াতাড়িই আপনি ডাক্তার দেখাতে পারবেন।
আমি তখন বললাম, যে চেম্বারে নিয়ে যাচ্ছেন সেই চেম্বারেরই ডাক্তার আমি।
আমার কথা শুনে সবাই অবাক।

এদিকে নোমানের গল্প শুনে সকল মেয়েরা অবাক।কারণ সকল মেয়ে আবার তাদের রুমে এসেছে।

শিরিন জানতো নোমান ঘুমায় নি।ঘুমানোর অভিনয় করছিলো মাত্র।সেজন্য শিরিন নোমানের গল্প শুনে হাত তালি দিতে দিতে এগিয়ে এলো।শিরিন কে এগিয়ে আসা দেখে নোমান বললো, ভাবি প্লিজ আর কান টা ধরো না।ভাইয়াও কিছুক্ষন আগে ধরেছিলো।

শিরিন তখন বললো, কান ধরবো না।এদিকে আয়, তোর সাথে গোপন একটা কথা আছে।

নোমান সেই কথা শুনে শিরিনের কাছে এগিয়ে গেলো।আর যেতেই শিরিন আবার নোমানের কান ধরে বললো, ভাবিকে বোকা বানাতে চাইছিলি?আমাকে বোকা বানানো এতো সহজ নয়। অনেক অভিনয় হইছে।যা এখন তোদের রুমে যা।

–কিন্তু কেনো?রুম তো অদলবদল করেছিই।

শিরিন তখন বললো, ও রুমে আমরা থাকতে পারছি না।সিগারেটের গন্ধে থাকা যাচ্ছে না।

আমান আর সোহান সেইকথা শুনে সাথে সাথে বের হলো রুম থেকে।কারন এই কাজ এই দুইজন করেছে।সিফাত ও খায় বাট সে রুমে খায় নি।বাহির থেকে খেয়ে এসেছে।আর নোমান খায় না সিগারেট।

নোমান আর সিফাত কে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে শিরিন বললো, কি হলো?তোমরা আবার যাচ্ছো না কেনো?যাও তাড়াতাড়ি।আমাদের রুম ফাঁকা করো। সেই কথা শুনে নোমান আর সিফাতও চলে গেলো।

সবাই কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে দুপুরের খাবার খাবে বলে হোটেলে চলে গেলো।রংধনু, পারিজাত,নীহারিকা, অবসর পুল ক্যাফে,ঝর্ণা,এবং মহুয়া নামে বিশ্বমানের পাঁচটি রেস্তোরাতে খাবারের সুযোগ আছে এই সীগাল হোটেলে।তানিশারা রংধনু তে চলে গেলো।সবাই সবার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করলো।তবে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ মেন্যুর প্রধান আকর্ষণ দখল করে আছে।বিশেষ করে চিংড়ি,রুপচাঁদা, কোরাল,টুনা ফিস লাইট্রা,ছুরি মাছসহ মজাদার শুটকি মাছের ভর্তার প্রতিই আকর্ষণ থাকলো বেশি।

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার তাদের নিজেদের বেডে চলে গেলো।এখন আর কোনো ঘোরাঘুরি নয়।পুরোদমে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।

কিন্তু নোমান তানিশাকে কল দিয়ে বললো,জান কি করো? আমার তো ঘুম আসছে না।
তানিশা ফিসফিস করে রিপ্লাই দিলো,খবরদার আমারে জান বলবেন না।আপনার জন্য আমি লজ্জাই কারো দিকে তাকাতে পারছি না।
নোমান তখন বললো কি করেছি আমি?যে তোমায় এতো লজ্জা পেতে হবে?
তানিশা তখন বললো এখন ফোন রাখেন, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।কথা বলা যাবে না এখন।
নোমান তখন বললো বেলকুনিতে এসে কথা বলো।সাগর,পাহাড় আর ঝাউবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কথা বলি।
তানিশা সেই কথা শুনে বেলকুনিতে চলে গেলো।

আসলেই অনেক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সীগাল হোটেল টি সুগন্ধা পয়েন্টে অবস্থিত হওয়ার কারণে হোটেলের বেলকুনি থেকেই সাগর দেখা যায়।দূরের পাহাড় আর ঝাউবনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সত্যি নিজের মন কে একদম শীতল করে তোলে।

নোমান বললো, কেনো জানি আমার সব কিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না তোমাকে আমি সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়েছি।

তানিশা তখন বললো, যদি না পেতেন তখন?

নোমান তখন বললো, যেটা হয় নি সেটা নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না।আমি তোমাকে পেয়েছি এটাই এখন সবচেয়ে বড় কথা।

তানিশা তখন বললো তো এখন কেমন অনুভুতি হচ্ছে আপনার?

নোমান তখন জোরে করে একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,পৃথিবীতে প্রিয় মানুষ কে পাওয়ার সুখের চেয়ে বড় কোনো সুখ আছে বলে আমার মনে হয় না।এ সুখ যেনো অবর্ননীয়। যা বলে বুঝানো যাবে না।আমি কিন্তু অন্যদের মতো ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না।তবে মনে হয় আমি অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। এখন এক নজর না দেখতে পেলে ভীষণ অস্থির অস্থির লাগে আমার।ইচ্ছে করে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে যাই তোমার ঐ চোখের মায়ায়।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো এই অসুখ টা খুবই বাজে।কারণ কারো চোখের মায়ায় পড়ে গেলে পৃথিবীর আর কিছুই ভালো লাগে না।যেমন আমি আপনাতে মুগ্ধ হয়েছি।আপনার মায়ায় পড়ে এতো বছর ধরে অপেক্ষা করেছি।

নোমান তখন বললো আমি একটা জিনিস অনুধাবন করলাম,তা হলো আসলে বেঁচে থাকার জন্য আর ভালোভাবে বাঁচার জন্য তার মনের মতো একজন জীবনসঙ্গীর অবশ্যই প্রয়োজন।তা ছাড়া পুরো জীবনটাই অনর্থক।

নোমান আর তানিশা ঘুম বাদ দিয়ে এই ভাবে তাদের মনের ভাব আদান প্রদান করতে লাগলো।এদিকে বাকিরা ঘুমিয়েছে।

তবে শিলা আর সিফাত একা একা নিজেদের ভাবনার জগতে আছে।দুইজনই ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু।আর নিরবে চোখের জল ফেলছে।তারা তাদের মন কে শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করছে,আদৌ কি তারা এসব অতীত ভুলে বর্তমানে সুন্দর একটা ভালোবাসার সম্পর্ক গড়তে পারবে?সবার সামনে হাসিমুখে থাকলেও যখন তারা একা থাকে তখন কেনো জানি কষ্ট টা আরো বেশি হয়।আর যখন দেখে তাদের ভালোবাসার মানুষ তাদেরই চোখের সামনে অন্য আরেকজনের সাথে ভালোবাসার কথা বলছে তখন বুকের ভেতর টা এমনিতেই হু হু করে ওঠে।

তানিশা কে এভাবে হেসে হেসে কথা বলা দেখে শিলা রুম থেকে বের হয়ে গেলো অন্যদিকে ফোনেই তানিশাকে একের পর এক চুমু খাচ্ছে নোমান,তা দেখে সিফাত ও বের হয়ে এলো রুম থেকে।
দুইজনই যখন ঘুরে দাঁড়ালো তখন দুইজনই একদম চোখাচোখি হলো।শিলা তখন বললো তুমি এখানে?
সিফাত ও বললো তুমি?

শিলা তখন বললো আমার ঘুম ধরছে না।এজন্য বের হলাম।সিফাতও সেম কথা বললো।তারপর দুইজন একসাথে হাঁটতে হাঁটতে হোটেল থেকে বের হয়ে গেলো।

তারপর তারা একটা রেস্তোরাঁয় বসে কফি খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো।

হঠাৎ শিলা সিফাতকে বললো,একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে?

–কি?

–তোমার ভালোবাসার মানুষ টা যখন তোমারই চোখের সামনে অন্যজনের সাথে প্রেম ভালোবাসার কথা বলে তখন তোমার কেমন লাগে?

সিফাত বুঝতে পারলো শিলা নোমান আর তানিশার কথা বলছে।সেজন্য সে এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।কারণ এ প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।

শিলা তখন বললো চুপ করে আছো কেনো?উত্তর দাও।না বলবে চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষ তার প্রেমিকের সাথে কথা বললে মোটেও তোমার হিংসা হয় না?বরং ভালোই লাগে।

–তো?আমার তো ভালোই লাগে।

শিলা তখন বললো তাহলে রুম থেকে বের হয়ে এসেছো কেনো?বসে বসে দেখতে আর শুনতে।

সিফাত তখন বললো তুমি এখনো ভুলতে পারো নি নোমানকে?

শিলা সেই কথা শুনে বললো, চেষ্টা তো করছিই।

সিফাত তখন বললো শুধু কি চেষ্টা করলেই হবে?না সারাজীবনের জন্য মন থেকে মুছে দিতে হবে?

শিলা সেই কথা শুনে বললো, আচ্ছা বাদ দাও ওদের কথা।এখন বলো তোমার নেক্সট পরিকল্পনা কি?

সিফাত জানালো আপাতত তার কোনো পরিকল্পনা নেই।সিফাত তখন উল্টো শিলাকে জিজ্ঞেস করলো তার কি পরিকল্পনা?

শিলা হেসে বললো,মন ভাংগা মানুষের আবার কিসের পরিকল্পনা?কোনো পরিকল্পনাই নাই।দেখি ভাগ্যে কি আছে?

সিফাত বুঝতে পারলো শিলা কিছুতেই তার মন কে বোঝাত পারছে না।সে এখনো নোমানের প্রতি দূর্বল।সেজন্য সিফাত বললো, একটা রিকুয়েষ্ট করতে চাই তোমাকে রাখবে?

–কি রিকুয়েষ্ট?

;রাগ করবে না তো?

–বলেন আগে।তারপর ভেবে দেখবো রাগ করবো না খুশি হবো?

সিফাত তখন বললো তুমি নতুন আরেকটা প্রেমে জড়িয়ে যাও।দেখবে পুরাতন ভালোবাসা মুহুর্তের মধ্যে ভুলে যাবে।আসলে ভালোবাসার অনেক শক্তি আছে।

শিলা তখন বললো, তাহলে তুমি কেনো জড়াচ্ছো না নতুন প্রেমে?তুমিও তো ভুলতে পারো নি তানিশাকে।

সিফাত সেই কথা শুনে বললো, চলো রুমে যাই এখন।তা না হলে সবাই খুঁজবে আবার।

শিলা সেই কথা শুনে বললো,আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না?

সিফাত তখন বললো কিছু কিছু প্রশ্ন এতই কঠিন যে তার উত্তর দেওয়া যায় না।

|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||

পড়ন্ত বিকেলে হাজারো পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত হয় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।বাতাসে ভেসে বেড়ানো সুরে অবিরাম ঢেউয়ের তালে সাগরের নোনা জলে ভেসে বেড়ায় যান্ত্রিক শহুরে মানুষ গুলো।বিশাল সমুদ্রে যেনো মিশেছে দূর আকাশের সীমানা।উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের পেছনে ফনা তুলে আসে ঢেউ।সাথে দুধ সাদা ফেনার উৎসব। বিরামহীন ঢেউয়ের নৃতে ঝংকার তুলে হু হু সুরের মূর্ছনা।সৈকতে আছড়ে পড়া সে ঢেউ পর্যটকদের পায়ে পরায় ফেনার নূপুর।সমুদ্রের মনভোলানো নানান রোমাঞ্চ মুহুর্তে ভুলিয়ে দেয় পর্যটকদের সব ক্লান্তি।শিস দিয়ে যেনো আনাড়ি করে তোলে পর্যটকদের মন।

শেষ বিকেলে তানিশারা আবার বেড়িয়ে পড়লো সমুদ্রের পাড়ে।কারন শেষ বিকালে পৃথিবীর বুকটাকে লাল রঙ এ সাজিয়ে লাল থালার মতো সূূর্য ডোবে পশ্চিম সমুদ্রে ।দিনের ক্লান্তিতে বিদায় হয় ঢেউয়ের সাথে পাঞ্জা লড়ার রোমাঞ্চ।
সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্যে দেখার জন্যই এসেছে তানিশারা।সূর্যাস্তের এই অপরূপ দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকলো তারা।সে এক অপরুপ দৃশ্য।যা কখনো ভোলার মতো নয়।

কিন্তু তানিশাদের সাথে শিলা আর সিফাত আসে নি।তারা জানালো এখন আর কোথাও তাদের যেতে ইচ্ছে করছে না।কিছুক্ষন আগেই তারা ঘুরিয়ে এসেছে।সেজন্য তানিশারা ওদের কে রেখেই এসেছে।

সন্ধ্যা গড়িয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে এলো কালো অন্ধকার।হঠাৎ শুরু হলো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে সবাই কাকভেজা হয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে এলো পাশের এক রেস্তোরায়।যেখানে মাছ ভাজা খাওয়ার ধুম পড়ে গেছে।এই সন্ধ্যার সময় প্রতিটা রেস্তোরাঁয় রকমারি তাজা সামুদ্রিক মাছ ভাজা পাওয়া যায়।সুগন্ধা বিচের পাশেই আছে তাজা সামুদ্রিক মাছ ভাজা খাওয়ার অনেক ভ্রাম্যমাণ দোকান।

নোমান তখন দাম ঠিক করে সবার পছন্দমতো মাছ অর্ডার করে বসে থাকলো।আর সবাই নানা ধরনের গল্প করতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পরেই একটা ছেলে ধোঁয়া ওঠা গরম মাছ ভাজা নিয়ে আসলো।এ এক অন্যরকম লোভনীয় মজাদার খাবার।দেখলেই জিভে জল চলে আসে।
চিংড়ি, লবস্টার,টুনা,রুপসা,রুপচাঁদা, স্যামন,কোরাল,লাইট্রা,কাঁকড়া সহ হরেক রকমের মাছ ভাজা।

হঠাৎ তানিশা খেয়াল করলো একটু দূরের বেঞ্চে বসে সিফাত আর শিলা গল্প করছে।আর মাছ ভাজা খাচ্ছে।
কিন্তু সিফাত আর শিলা তো হোটেলেই ছিলো।তারা আর সমুদ্র সৈকতে যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে তানিশাদের।সেজন্য তানিশারা ওদের কে রেখেই চলে এসেছে।

#চলবে,

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_৪০
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

সিফাত আর শিলা কে একাকি নিরালায় এভাবে গল্প করা দেখে তানিশা নোমানকে বললো,চলেন না আমরা বাহিরে গিয়ে বসি সবাই।এখানে ভীষণ গরম লাগছে।তাছাড়া বৃষ্টি পড়া দেখবো আর মাছ ভাজা খাবো।ভীষণ মজা হবে।
নোমান সেই কথা শুনে বললো ওকে।এই বলে নোমান সবাইকে নিয়ে বারান্দায় চলে এলো।কিন্তু বারান্দায় ভীষণ ভীড় ছিলো।সেজন্য দাঁড়িয়ে থেকেই সবাই প্লেট হাতে নিয়ে খেতে লাগলো।কিন্তু তানিশা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বার বার উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলো ওদের।ওরা এখনো গল্প করতেই আছে।দুইজন দুইজনার কথা এতো মনোযোগ দিয়ে শুনছে যে আশেপাশে তাকানোর প্রয়োজনই মনে করছে না।

নোমান নিজেও দেখেছে ওদের কে।সেজন্যই তো তানিশা বলার সাথে সাথে বারান্দায় চলে এলো।একটিবারের জন্যেও জিজ্ঞেস করলো না কেনো তানিশা বাহিরে যেতে চাচ্ছে।

আসলে নোমান আর তানিশা দুইজনই চায় শিলা আর সিফাত দুইজনই ভালো থাক।কারণ শিলা আর সিফাতের কষ্ট টা তারা নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারছে।কিন্তু তাদের কিছুই করার নাই।তবুও তারা দুইজনই চেষ্টা করবে ওই মন ভাংগা মানুষ দুইজনকে ভালো রাখার জন্য।তারা যদি অতীত টা ভুলে নতুন করে আবার ভালোবাসার চাদরে নিজেদের মুড়িয়ে নিতে চায় তাহলে যতটা সাহায্যের প্রয়োজন নোমান আর তানিশা করবে।

নোমান আড়চোখে শিলা আর সিফাতকে কে দেখে তানিশাকে জিজ্ঞেস করলো, এখন কি করা যায় বলো তো?

তানিশা নোমানের কথা শুনে বললো,আপনিও তাহলে দেখেছেন ওদের?

–হুম।

তানিশা তখন বললো, আগে ওরা নিজেরা ভালো করে মিশুক।দুইজন দুইজন কে ভালো করে পছন্দ করুক।তারপর বাকি কাজ আমরা করবো।

নোমান তখন বললো তাহলে চলো আমরা এখান থেকে চলে যাই।ওরা যদি দেখে ফেলে তাহলে হয় তো লজ্জা পেতে পারে।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো ওকে।এই বলে তানিশা সবাইকে নিয়ে চলে গেলো।এদিকে বৃষ্টি পড়াও থেমে গেছে।

রাতের সমুদ্র একেবারে অন্যরকম। ব্যস্ত নগরীর ক্লান্ত নাগরীকের নাক ডাকা সুরে যেন ঘুমিয়ে যায় পুরো পৃথিবী। কিন্তু সদা জাগ্রত সমূদ্রের উত্থাল ঢেউয়ে যেন উতলা করে তুলে সবার মন। এ দৃশ্য অসাধারন ।

রাতে সবাই মিলে আবার সমুদ্রের পাড়ে চলে গেলো আর রাতের সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য দেখতে দেখতে বড় সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ খেতে লাগলো।শিলা আর সিফাত এখানেও পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।তারা কি যে এতো গল্প করছে সত্যি কিছু বোঝা যাচ্ছে না, তবে তারা যে দুইজন দুইজনকে পছন্দ করে ফেলছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই।

ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় সমুদ্র সৈকতের ভিন্ন রুপ আর সন্ধ্যার পরে আবার অন্য রুপ ধারণ করে।বিশেষ করে পূর্ণিমার রাতে আকাশের উজ্জ্বল চাঁদ সমুদ্রের জলে প্রতিফলনের দৃশ্য আনন্দের মাত্রাকে বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।সবাই রাতের এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে এক এক করে হোটেলে ফিরে এলো।

তানিশা আর নোমান তাদের রুমে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে শিলা বললো,স্টপ!তোমরা রুমে ঢুকতে পারবে না এখন।
নোমান তখন বললো, কেনো?

সিফাত এবার এগিয়ে এসে বললো, হ্যাঁ কারণ আছে।কারণ তোমাদের জন্য এ রুম নয়।

নোমান আর তানিশা দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।কারণ তারা সিফাত আর শিলার কথা কিছুই বুঝতে পারলো না।

এবার তন্নি এসে তানিশা আর নোমানের হাত দুটি মিলিয়ে দিয়ে তাদের হাতে একটা চাবি দিলো।২০১ নাম্বার রুমের চাবি।

নোমান কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তন্নি বললো,ধন্যবাদ দিতে হবে না।এটা আমাদের সবার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য ছোট্র এই গিফটা।প্লিজ গ্রহন করো তোমরা।

আমান তখন নোমানের গায়ে হাত দিয়ে বললো ভাই বেস্ট অফ লাক।আমরা ঘুমাতে গেলাম।এক এক করে সবাই তাদের অভিনন্দন জানাতে লাগলো।সবশেষে শিরিন এসে বললো,দেবর জি এখন খুশি তো?যাও তোমাদের হানিমুনের ব্যবস্থাটা করে দিলাম।তা না হলে মনে মনে ঠিক বলতে কক্সবাজারে আসলাম কিন্তু হানিমুন টা হলো না।এই বলে শিরিনও চলে গেলো।

নোমান আর তানিশা বোকার মতো হা করে দাঁড়িয়ে আছে।তারা বুঝতেই পারে নি সবাই তাদের জন্য এই রকম একটা সারপ্রাইজ রেখেছে।

তানিশা এবার নোমানের উপর রাগ দেখিয়ে বললো সব আপনার জন্য হয়েছে।আপনি যদি তখন ওরকম টা না করতেন তাহলে কি এভাবে সবাই আমাদের জন্য আলাদা রুম বুকিং করতো?কি দরকার ছিলো মেয়েদের রুমে এসে বউ এর সাথে রোমাঞ্চ করার?এখন যে আমার লজ্জা লাগছে।কিভাবে সবাই মিলে আমাদের অভিনন্দন জানালো।

নোমান তখন বললো এখানে আমার কি দোষ? বউ ছাড়া ভালো লাগে নাকি?সেটাও আবার নতুন বিবাহিত কাপল।সবাই আমার দুঃখ টা তাহলে শেষমেষ বুঝতে পারছে।এদের সবাইকে আমিও কিছু একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই।কারণ আমি কারো ধার রাখি না।কিন্তু কি সারপ্রাইজ দিবো?

তানিশা তখন বললো কাল সবাইকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান।সবাইকে কেনাকাটা করে দিন।তাহলে সবাই বেশ খুশিই হবে।

নোমান সেই কথা শুনে তানিশাকে কোলে তুলে নিলো আর বললো গুড আইডিয়া। চলো এখন রুমে যাই।এই বলে নোমান তানিশাকে কোলে করেই ২০১ নাম্বার রুমে চলে গেলো।কিন্তু নোমান যখন দরজা খুললো নিজের চোখ কে সে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।সে তার চশমা টা খুলে আবার ভালো করে পড়ে নিয়ে বললো, এটা কি?

তানিশা নিজেও অবাক।কারণ তারা শুধু রুম বুকিং করে নি বরং রুম টাকে বাসর ঘরের মতো সাজিয়েছে।তানিশা তো এবার আরো বেশি লজ্জা পেতে লাগলো।কি করেছে এরা?আর কখন করলো?

পুরো বেডে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিয়েছে তারপর মাঝখানে বড় করে একটা লাভ এঁকে তার ভিতর আবার নোমান তানিশা লিখেছে।বেডের চতুর্পাশে বেলুন ঝুলানো।ডিম লাইটের নীল আলোয় রুম টিকে আরো বেশি সুন্দর লাগছিলো।

নোমান এবার তানিশাকে নিয়ে রুমের ভিতর প্রবেশ করলো।
নোমান সাজানো রুম দেখে বললো বিয়ে টা হঠাৎ করে হওয়াই আমরা তো নিজেদের বাসর ঘর সাজাতে পারি নি।সেজন্য আজ এরা সবাই মিলে এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে রুম টা।

তানিশা তখন বললো,এরা এসব করেছে টা কখন?

নোমান তখন বললো এতোক্ষণে বুঝলাম ব্যাপার টা।এসব করেছে সিফাত,শিলা আর তন্নি।কারন সিফাত আর শিলা তখন বসে বসে তাহলে এসব নিয়েই কথা বলছিলো।অন্যদিকে আজ তন্নির মেয়েটাকে ইকবালের কোলেই বেশি দেখেছি। তন্নির শরীর ভালো না বলে সে রুমে থাকার কথা বলেছে।শয়তান তিনটা যুক্তি-বুদ্ধি করে এসব করেছে।

তানিশা তখন বললো সবাই আমাদের কত ভালোবাসে দেখছেন?আমি চাই এই ভালোবাসা যেনো সারাজীবন থাকে।

নোমান সেই কথা শুনে বললো হ্যাঁ চাই তো।সবার ভালোবাসাই চাই।তার পাশাপাশি স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসাও ভীষণ প্রয়োজন।এই বলে নোমান তানিশাকে কোলে করে বেডে নিয়ে গেলো।

তারপর নোমান এই সুন্দর ফুলের বিছানায় তানিশাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলো কিছুক্ষন।
ধীরে ধীরে দুইজনেরই শ্বাসের উষ্ণতা বাড়ছে।আর দুইজনই নেশাভরা চোখে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই দুইজনে একে অপরের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো।
এই মিলনের মাঝে নেই কোনো অশ্লীলতা,আছে কেবল অজস্র ভালোবাসা আর অনুভূতির সংমিশ্রণ। আসলেই ভালোবাসা সুন্দর।

রাতের নিরবতায় এবং স্নিগ্ধতায় সুখ কুড়াতে ব্যস্ত এই দুইজন মানব মানবী। অন্ধকার রাতের গভীরতার আড়ালে ভালোবাসার পূর্ণতা ঘটছে।

নোমান এবার তানিশার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললো,আই লাভ ইউ সো মাচ।কখনোই হারাতে চাই না তোমাকে।জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এভাবেই পাশে থেকো।তানিশা নিজেও তখন নোমানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,আমিও আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।আর আমিও নিজেকে সারাজীবন এভাবে আপনার ভালোবাসায় রাঙ্গাতে চাই।তারপর দুই প্রেমিক যুগল তলিয়ে গেলো শান্তির নিদ্রায়।আহা! কি আরামের ঘুম।কি এক প্রশান্তি!

এদিকে রাতকে বিদায় দিতে সমূদ্র বুকে জোয়ার এসে যেন চলছে ভোরের আমন্ত্রণ। আকাশে ধীরে ধীরে আলো ফুঁটছে।আর চোখে ধরা দিচ্ছে বালুচরে লাল কাঁকড়ার লুকুচুরি খেলা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া নানা রঙ্গের শামুক-ঝিনুক।এ যে এক দেখার মতো দৃশ্য! মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।যারা এই সৌন্দর্য দেখে নি তারা অনেক কিছু মিস করছে জীবনে।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

কক্সবাজারের ১২ থেকে ২২ কি.মি দূরত্বের মধ্যে রয়েছে দুইটি আকর্ষণীয় পর্যটক স্থান।একটি হলো হিমছড়ি আর আরেকটি হলো ইনানী।নোমান আর তানিশা সবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য অনেক সকালে ডেকে তুললো তাদের।তারপর কলাতলী থেকে জিপে চড়ে রওনা দিলো হিমছড়ি আর ইনানীর উদ্দেশ্যে।

পাহাড় আর ঝর্ণার জন্য বিখ্যাত হলো এই হিমছড়ি। কক্সবাজার শহর থেকে যাওয়ার সময় রাস্তার বাম পাশে সবাই দেখতে পেলো সবুজে ঘেরা ছোটো বড় অনেক পাহাড়।এবং ডান পাশে দেখতে পেলো সাগরের নীল পানি।এসব দৃশ্য দেখে সবাই অনেক বেশি মুগ্ধ হলো।সবার চক্ষু যেনো জুড়িয়ে গেলো।

হিমছড়ি তে পৌঁছেই সবাই এক এক করে সিঁড়ি বেয়ে হিমছড়ি পাহাড়ে উঠতে লাগলো।সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার পর নিচের সাগর এবং প্রকৃতি কে অসম্ভব সুন্দর লাগলো সবার।সবাই হাত মেলে নির্মল বাতাস অনুভব করতে লাগলো।ইচ্ছা করছিলো এখানেই যদি সারাক্ষণ তারা থাকতে পারতো।কিন্তু সেটা কি আর সম্ভব?এই অল্প সময়ের মধ্যে তো আরো অনেক জায়গায় যেতে হবে তাদের।হিমছড়ির প্রধান আকর্ষণ ছিলো ঠান্ডা পানির ঝর্ণা। শীতের আদ্র আবহাওয়ায় ঝর্ণাকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত লাগে।

এবার নোমান সবাইকে ইনানী সমুদ্র সৈকতে নিয়ে গেলো।সেখানে গিয়ে দেখে শুধু তারাই নয় হাজার হাজার পর্যটক এসেছে অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই ইনানী সৈকত দেখার জন্য।

যেহেতু নোমানরা ভোরে বের হয়েছিলো সেই জন্য তারা দুইটার মধ্যে আবার কক্সবাজার শহরে পৌঁছলো।তারপর তারা কক্সবাজারের অতি নিকটতম সমুদ্র সৈকত লাবনী সৈকতে গেলো।এই সৈকত কাছে হওয়ায় এখানে দোকানিরা নানা রকম পসড়া সাজিয়ে বসেছে।যা পর্যটকদের আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলছে।এখানে রয়েছে হস্তশিল্প ও মনোহরি পন্যের দোকান।তানিশারা এবার ঝিনুক মার্কেটে চলে গেলো।আর ঝিনুক শিল্পের রকমারি জিনিসপত্র কিনলো।
তারপর সবাই লাবনী বিচে গোসল টা সেরে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো।

বিকেল বেলা নোমান সবাইকে রেডিয়ান্ট ফিশ ওয়াল্ড থেকে ঘুরে নিয়ে এলো।তারপর আজকেও সুগন্ধা বীচে এসে সবাই সূর্যাস্ত দেখলো।আর রাতের দিকে বার্মিজ মার্কেট থেকে সখের জিনিসপত্র কিনে নিলো সবাই।যার যেটা মন চায় সে সেটাই কিনে দিলো।আর সবাই বেশি বেশি করে মিষ্টি তেঁতুল নিলো।এখানকার এই মিষ্টি তেঁতুল গুলো খুবই পছন্দ করে সবাই।শুধু মিষ্টি তেঁতুলই না আম,তেঁতুল,আমলকী,আমড়া,বরই,কাঁচা মরিচ,রসুন,জলপাই চালতা সহ নানা রকমের মিক্স আচার পাওয়া যায় এখানে।

আজ সারাদিন সবাই মনের মতো করে ঘুরে বেড়ালো।এ যেনো এক স্বর্গীয় সুখ অনুভব করলো তারা।কারণ এতো সুন্দর সুন্দর দৃশ্য সবাই উপভোগ করলো সত্যি বলার মতো না।কোনো মানুষের যদি মন খারাপ থাকে তাহলে এই কক্সবাজার আসলে নিমিষেই তার মন ভালো হয়ে যাবে।

এভাবে একটানা ভ্রমনের ক্লান্তি সবার উপর ভর করেছে। তাই চোখ কচলাতে কচলাতে সবাই বিশ্রামের জন্য হোটেলে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। মোটামোটি সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।কারণ সবাই যে আজ বড্ড ক্লান্ত।

পরের দিন ঠিক ভোরবেলা সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।কক্সবাজারের এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ফেলে কারো মন যেতে চায় না।তবুও সবাইকে যেতে হচ্ছে।এই দুইদিন সবাই বিন্দাস জীবন যাপন করে ভুলেই গিয়েছিলো সবার একটা পার্সোনাল লাইফ আছে।আর সেই লাইফে সবাই কতটা ব্যস্ত।বিন্দুমাত্র অবসর নেওয়ার সময় নেই কারো।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

দুইদিন ছুটি কাটিয়ে সবার আলসেমি শুরু হয়ে গেছে।তবুও ডিউটি বলে কথা।আলসেমি করলে তো হবে না।আমান আর ইকবাল ঠিক ভোরে তাদের ডিউটিতে চলে গেলো।কারন তন্নি সবার সাথে নোমানদের বাসাতেই আছে।শুধু তন্নি না,শিলা সিফাত,সোহান তানিয়া সবাই একসাথে নোমানদের বাসাতেই আছে।পুরো বাসাটা যেনো লোকে গমগম করছে।তায়েব চৌধুরী সবার মাঝে এমন মিল মহব্বত দেখে ভীষণ খুশি হলেন।তিনি ভাবতেই পারছেন না মাত্র দুইদিনের মধ্যে তিনি এই রকম একটা সুখী পরিবার দেখতে পাবেন।

সকাল সাড়ে সাতটায় শিলা চলে গেলো কলেজে।
এবার ঠিক দশটায় নোমান আর তানিশা বের হলো।

নোমান তানিশাকে তার চেম্বারে রেখে নিজের চেম্বারে চলে গেলো।

কিন্তু তানিশা চেম্বারে যেতেই তানিশার এসিস্ট্যান্ট দুইজন বললো,ম্যাডাম কেমন আছেন?এই কয় দিন ভীষণ মিস করেছি আপনাকে।
তানিশা জানালো সেও মিস করছে সবাইকে।এই বলে তানিশা কিছু আঁচারের প্যাকেট দিলো তাদের।আর কিছু শুটকি মাছ।এসব জিনিসপত্র পেয়ে ওরা দুইজন তো ভীষণ খুশি হলো।আসলে ডাক্তার আর তার এসিস্ট্যান্ট এর মধ্যে এরকম সম্পর্ক খুবই কম দেখা যায়।

তানিশা চেম্বারে প্রবেশ করতেই আদ্রিয়ান আর তার মা প্রবেশ করলো।তানিশা ওদের কে দেখে ভীষণ অবাক হলো।সে কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ানের মা বললো,ডাক্তার ম্যাডাম!এই দুইদিন চেম্বারে আসেন নি কেনো?
তানিশা জানালো সে ফ্যামিলি ট্রুরে গিয়েছিলো।

আদ্রিয়ানের মা তখন বললো আমি আপনার খোঁজে এসেছিলাম কিন্তু পাই নি আপনাকে।আপনার এসিস্ট্যান্ট বললো,আপনি আজ আসবেন সেজন্য আবার আসলাম।

তানিশা তখন আদ্রিয়ান কে কোলে নিয়ে বললো, কোনো দরকার আছে?

আদ্রিয়ানের মা তখন একটা চার বাটির টিফিন বক্স তানিশার হাতে দিয়ে বললো, মা,কিছু মনে না করলে এই বক্সটি বাসায় নিয়ে যেও।আমি নিজের হাতে কিছু পিঠা,পায়েস,পোলাও আর দেশি হাসের মাংস রেঁধে নিয়ে এসেছি।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো আজ কি কোনো বিশেষ দিন?কি উপলক্ষে এই খাবার রেঁধেছেন?

আদ্রিয়ানের মা সেই কথা শুনে বললো, না কোনো বিশেষ দিন না।এমনিতেই সখ হলো সেজন্য এনেছি।এই বলে আদ্রিয়ানের মা চলে গেলো।

#চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে