ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব-৩৭+৩৮

0
1230

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_৩৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

গাড়ি চলেছে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। সারি সারি সবুজ ঝাউবীথি,পাহাড়,ঝর্ণা আর নরম বালির মাঝে দীর্ঘ অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী হলো এই কক্সবাজার। সাগরের নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন সাথে হিমেল হাওয়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতেই সবাই দুইদিনের ট্যুরে কক্সবাজার এলো।

তানিশারা রাতের দিকে পৌঁছে গেলো কক্সবাজারে যাতে করে সকালবেলা সমুদ্রের নির্মল বাতাস মিস না করে।প্রথমেই তারা সীগাল হোটেলে চলে গেলো।কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে অবস্থিত পাঁচ তারকা মানের এই হোটেল টিতে রয়েছে অত্যাধুনিক ও বিলাসী আবাসন।বিভিন্ন পরিসেবার পাশাপাশি রয়েছে সুইমিংপুল, ফিটনেস সেন্টার, বার, স্টুডেন্ট বা স্পা সেবা।এছাড়া রয়েছে কিডস প্লে জোন বিজনেস সেবা সহ অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থা।

হোটেলে পৌঁছেই যে যার রুমে চলে গেলো।রুম বুকিং করা হয়েছে মাত্র তিনটি।প্রতিটি রুমে আছে ডাবল বেড।কারন মেয়েরা থাকবে এক রুমে আর ছেলেরা থাকবে অন্যরুমে।শুধুমাত্র তন্নি আর ইকবাল এক রুমে থাকার সুযোগ পেলো।কারণ তন্নি একা একা তার ছোট বাচ্চাটা সামলাতে পারবে না।তাছাড়া তাদের বড় মেয়ে ঈশাও ছিলো তাদের সাথে।
এই আইডিয়া টা প্রধানত তানিশার ছিলো।কারন কাপলরা এক রুমে থাকলে সিংগেল দুইজনের মন খারাপ হতে পারে।যেহেতু তারা সবাই আনন্দ করার জন্য গিয়েছে সেজন্য কারো যাতে মন খারাপ না হয় সেজন্যই এই ব্যবস্থা।আর এই সিংগেল দুইজন হলো শিলা আর সিফাত।শিলাকে আনা হয়েছে যাতে ওর মন টা একটু ভালো হয়,মাথা থেকে আত্নহত্যা করার বুদ্ধিটা যেনো লোপ পায় অন্যদিকে সিফাত কে আনা হয়েছে ছবি ওঠানোর জন্য।যেহেতু ও একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার।

তানিয়া,তানিশা,শিরিন আর শিলা তাদের রুমে গিয়েই ধপাস করে বেডে শুয়ে পড়লো।কারণ তাদের শরীর টা ভীষণ ক্লান্ত।এতোদূর থেকে জার্নি করে এসে তাদের এখন একটা রেস্টের দরকার।
অন্যদিকে আমান,সোহান,আর সিফাত ও মনের আনন্দে বেডে শুয়ে পড়লো।

কিন্তু বেচারা নোমান মন খারাপ করে বসে আছে।সে মনে মনে ভীষণ রাগান্বিত হয়ে আছে তানিশার উপর।নোমানের মতে তানিশার এমন করাটা মোটেও উচিত হয় নি।কারন তারা সদ্য বিবাহিত কাপল।এখনো বিয়ের সাধ পুরোপুরি ভাবে মেটে নি তাদের।তাদের তো অন্তত এক রুমে থাকা উচিত ছিলো।এটা তানিশা খুবই অন্যায় করলো নোমানের সাথে।

সোহান আর সিফাত দুই ভাই এক বেডে শুয়ে পড়লো।অন্যদিকে আমান ফ্রেশ হয়ে এসে নিজেও তার বেডে শুয়ে পড়লো আর নোমানকে শোয়ার জন্য ডাক দিলো।নোমান তখন বললো ঘুমাও তুমি।আমার ঘুম আসছে না।
আমান সেই কথা শুনে বললো,ঘুম আসছে না মানে টা কি?আমরা সবাই ক্লান্ত, ঘুমের জন্য চোখ ছোট হয়ে আসছে আর তুই বলছিস ঘুম আসছে না।

সিফাত সেই কথা শুনে বললো, আমান ভাইয়া পারমিশন দিলে একটা কথা বলবো?

;হ্যাঁ বলো।

–নোমান আর তানিশা কে এক রুমে রাখা উচিত ছিলো আপনাদের।তাদের সদ্য বিয়ে হয়েছে।এই সুযোগে হানিমুন টাও হয়ে যেতো তাদের।এইভাবে ওদের কষ্ট দেওয়ার মানেই হয় না।

নোমান সেই কথা শুনে সিফাতের কাছে চলে গেলো আর বললো, একটি বারের জন্য এই কথা টা কেউ বললো না।কেউ বুঝলো না আমার দুঃখ টা।অথচ যে সিফাত কে আমি পছন্দ করি না সেই সিফাত কি সহজে বুঝে গেলো!আয় ভাই তুই আমার বুকে আয়।এই বলে নোমান সিফাত কে জড়িয়ে ধরলো।

অন্যদিকে আমান আর সোহান হা করে তাকিয়ে আছে।তারা এতোক্ষনে বুঝতে পারলো ব্যাপারটা।তারা সত্যি এটা ভেবে দেখে নি।আমান তখন বললো,আহারে ভাই তুই দুই দিনেই বউ পাগল হয়ে গেছিস?দুই দিন কষ্ট করে একটু থাকতেই হবে।এই বলে আমান সোহান কে
বললো,সোহান তুমি আমার বেডে চলে আসো।ওরা দুই বলদ একসাথে থাকলেই ভালো হবে।যাতে সারারাত ওরা ওদের দুঃখের গল্প বলতে পারে।সোহান সেই কথা শুনে আমানের বেডে চলে আসলো।

সিফাত তখন বললো, আমান ভাইয়া আমাদের বলদ বললেন কেনো?

আমান তখন বললো, কখন বলদ বললাম?আমি তো বললাম নোমান আর সিফাত এক বেডে থাকবে।তোমরা বলদ হতে যাবে কেনো?

নোমান আর সিফাত এখন এক বেডে।নোমান আর সিফাত এই প্রথমবার দুইজন দুইজনার সাথে বন্ধুর মতো কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে।এতোদিন ধরে তো তারা দুইজন দুইজনার শত্রু মনে করতো।

সিফাত শুয়ে থেকে নোমানকে বললো,তোমার কি মনে আছে ভাবির হলুদ সন্ধ্যায় তুমি আমার ক্যামেরা ভেংগে ফেলেছিলে?

নোমান সেই কথা শুনে বললো, মনে থাকবে না মানে?তুমি তানিশার ছবি ওঠাচ্ছিলে তা দেখে আমার মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিলো।

সিফাত তখন হাসতে হাসতে বললো আমি কি জানতাম নাকি যে তুমি আর তানিশা দুইজন দুইজন কে পছন্দ করো?জানলে কি আর তানিশার পিছনে পিছনে এভাবে ঘুরে বেড়াতাম?

নোমান তখন বললো,এখন তো তানিশা বিয়ে করেই নিয়েছে তবুও তুমি বিয়ে করছো না কেনো?

সিফাত সেই কথা শুনে বললো, মন তো একটাই।সেই মনে শুধু একজনের নামই ছিলো।এখন অবশ্য ক্যান্সেল করে দিয়েছি।দেখি আর কেউ মন টাকে দখল করতে পারে কিনা?

নোমান সেই কথা শুনে বললো তুমি যে এতো ভালো একটা ছেলে আজ তোমার সাথে কথা না বললে বুঝতেই পারতাম না।আসলে কারো বাহিরের দিক দেখে তার মনের খবর নেওয়া যায় না।

সিফাত তখন বললো,সেম কথা আমিও ভাবছি।তুমিও অনেক ভালো নোমান।তানিশা ঠিক লোককেই চয়েজ করেছে।তোমাদের একসাথে দেখলে সত্যি মন থেকে দোয়া আসে আমার।এভাবে সুখে থাকো দুইজন।

নোমান মনে মনে ভাবলো তানিশার বিয়ে হওয়াতে বেচারা সিফাত ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।কিন্তু সেটা প্রকাশ করছে না।সেজন্য নোমান ওর জন্য দোয়া করতে লাগলো।আর বলতে লাগলো আল্লাহ ওর জন্য যাকে পাঠাইছো তার সাথে শীঘ্রই ওকে মিলিয়ে দাও।

নোমান আর সিফাত এভাবে গল্প করে কাটিয়ে দিলো।তারা ভাবতেই পারে নি এই কয়েক মিনিটের মধ্যে তারা এতো ফ্রি হয়ে যাবে।আর তাদের পুরাতন সব বিষাদ ভুলে দুইজন বেশ ভালো বন্ধু হয়ে যাবে।

অন্যদিকে তানিশা আর শিরিন এক বেডে শুয়ে আছে।তবে শিরিন অন্য পাশ হয়ে আছে।তানিশা আর শিরিন কে এক বেডে রাখার আইডিয়া টা কিন্তু শিলার।কারণ শিলা ভালো করেই জানে শিরিন মোটেও তানিশাকে পছন্দ করে না।এক, তানিশা একসময় আমানের ক্রাশ ছিলো।দুই,নোমান শিলাকে বাদ দিয়ে তানিশাকে বিয়ে করেছে।কিন্তু এভাবে চললে তো হবে না।কারণ তারা দুইজন যেহেতু জা আর এক বাড়িতেই থাকে সেজন্য সবার আগে তাদের মধ্যে মিল থাকা প্রয়োজন।তা না হলে ওদের সংসার টা সুখের হবে না।

শিরিন কে চুপ থাকা দেখে তানিশা বললো,ভাবি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন?
শিরিন কোনো উত্তর দিলো না।
তানিশা তখন বললো, আমি জানি আপনি ঘুমান নি।আমার উপর থেকে এখনো আপনার রাগ কমে নি।কিন্তু ভাবি,রাগ করে থেকে কোনো লাভ নাই।সেই আমার সাথেই একই রান্না ঘরে রান্না করতে হবে আর সেই এক বাড়িতেই থাকতে হবে।

শিরিন সেই কথা শুনে বললো, আমি কোন দুঃখে তোমার সাথে রান্না করতে যাবো?

তানিশা তখন বললো, আচ্ছা,রান্না না করলেন এক বাড়িতে থাকবেন তো?প্রতিদিন তো আমাদের দেখা হবেই।তাহলে কিসের এতো রাগ?

শিরিন আর কোনো উত্তর দিলো না।

তানিশা হঠাৎ করেই বললো,ভাবি আপনি নিজেও তো এমবিবিএস পাশ করেছেন তাহলে এভাবে বাড়িতে কেনো বসে আছেন?যেকোনো একটা হাসপাতালে জয়েন করলেও তো পারেন।

শিরিন সেই কথা শুনে বললো, আমান চাকরি করতে দেয় না।

তানিশা তখন বললো, আপনি যদি জোর করেন তাহলে উনি আর তখন কিছুই বলবে না।

শিরিন তখন বললো তবুও যদি একটু জয়েন করার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু তুমি বলাতে এখন সে ইচ্ছাটাও মরে গেলো।দুই দিন পর ঠিক বলবা তোমার কথা শুনে আমি চাকরি করছি।

তানিশা তখন শিরিন কে জড়িয়ে ধরে বললো কেনো ভাবি?এতো রাগ কেনো আমার উপর?শিলা তো কত সহজে আমাকে মেনে নিয়েছে তাহলে আপনি কেনো মেনে নিতে পারছেন না?

শিরিন তখন বললো শিলার মতো এতো বড় মন আমার নয়।যে সহজেই কাউকে আপন করে নেবো।এই বলে শিরিন তানিশার হাত সরিয়ে দিলো।

তানিশা তখন বললো ওকে,যেদিন আপনার মন বড় হবে সেদিন আপন করে নিয়েন আমাকে।গুড নাইট।এই বলে তানিশা চোখ বন্ধ করে থাকলো।

শিরিন তানিশার কথা শুনে মনে মনে ভাবলো মেয়েটাকে যেমন ভেবেছিলাম তেমন তো নয়।এতো বড় একজন ডাক্তার হয়েও আমাকে কিভাবে সম্মান দিচ্ছে।নিজের থেকে যেচে যেচে কথা বলছে।মেয়েটা মনে হয় আসলেই ভালো।না,এভাবে অভিমান করে থেকে কোনো লাভ নাই।আরেকবার যদি তানিশা কথা বলে তাহলে আমিও বলবো।

কিন্তু তানিশা আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

শিরিন তখন বললো, তানিশা তুমি কি ঘুমিয়ে গেছো?

তানিশা সেই কথা শুনে শিরিনের পাশ হলো।

শিরিন তখন বললো, আমি অনেক ভেবে দেখলাম আমাদের দুইজনের মধ্যে এরকম মান অভিমান থাকা মোটেও ঠিক না।যেহেতু আমরা একই বাড়ির বউ।

তানিশা তখন বললো আমি তো কখনোই আপনার উপর অভিমান করে নেই ভাবি।আমি তো আপনাকে নিজের বড় বোনের মতোই ভাবি।

শিরিন তখন বললো, ওকে আজ থেকে সব ভুলে গেলাম। তুমি আমাকে আজ থেকে আপু বলেই ডেকো।ভাবি ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই।

–জ্বি আপু।

শিরিন তখন বললো এখন তাহলে ঘুমাও।

তানিশা তখন বললো, আচ্ছা ঘুমান আপনি।কিন্তু আমার কেনো জানি ঘুম আসতেছে না।

শিরিন তখন হাসতে হাসতে বললো, কি করে ঘুম আসবে?আমার দেবর তো আর কাছে নেই।

তানিশা সেই কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেলো।সে তখন বললো, না সেজন্য নয়।এমনিতেই ঘুম আসছে না।

শিরিন তখন তানিশার হাত ধরে বললো,নতুন বিয়ে হইছে তোমাদের।তোমাদের মনে এখন কি চলছে তা আমি ভালো করেই জানি।ইসস নোমান টা মনে হয় তোমাকে বড্ড মিস করছে।

;মোটেও না ভাবি।উনি আমাকে একটুও মিস করছেন না।যদি করতেন তাহলে অন্তত একটা কল দিয়ে খবর নিতেন।

–ও কল দেয় নি তো কি হইছে তুমি দাও।

;না দিবো না।আজ আমি আপনার সাথে সারারাত গল্প করতে চাই।যদি আপনি রাজি থাকেন।

–কি গল্প করবা?

;সব ধরনের গল্প।
তানিশা সেই কথা শুনে শিরিনের সাথে গল্প করতে লাগলো।এইভাবে তানিশা আর শিরিনের মধ্যকার বন্ডিং টাও ভালো হয়ে গেলো।

হঠাৎ তানিশাদের রুমের দরজায় কে যেনো ঠকঠক করতে লাগলো।শিলা তা শোনামাত্র দরজা খুলে দিতে গেলো।কিন্তু তানিশা বললো, শিলা তুমি শুয়ে পড়ো।আমি দেখছি।এই বলে তানিশা নিজেই দরজা খুলে দিলো।

তানিশা দরজা খুলতেই দেখে নোমান এসেছে।নোমান কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।তানিশা তা দেখে বললো,কি হলো?এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

নোমান সেই কথা শুনে বললো, এইটা তুমি ঠিক করো নি তানিশা।তোমার উপর দায়িত্ব দিয়ে আমি মারাত্মক একটা ভুল করেছি।আমি ভাবতেই পারি নি তুমি শুধুমাত্র তিন টা রুম বুকিং করেছো?

তানিশা নোমানের কথা শুনে বললো, এতো রাতে আপনি সেই বিচার করতে এসেছেন?যান শুয়ে পড়ুন এখন।গুড নাইট।

নোমান তবুও গেলো না।সে হঠাৎ তানিশার হাত ধরে টেনে রুমের বাহিরে আনলো আর বললো আই মিস ইউ তানিশা।একা একা আমার কিছুতেই ঘুম আসছে না।প্লিজ এরকম করো না।

তানিশা তখন বললো তো আমি কি করবো এখন?সবাই কে রেখে কি এখন আপনার সাথে থাকবো?

নোমান সেই কথা শুনে তানিশাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,তুমি আসলেই একটা নির্দয়া মেয়ে।আমার ফিলিংস বোঝার ট্রাই ই করলা না!
সারাজীবন এই রাত টার কথা মনে থাকবে আমার।কখনোই ভুলবো না এই রাত টা আমি।এই বলে নোমান চলে গেলো।

নোমান চলে গেলে তানিশা আবার তার বেডে চলে আসলো।।

শিরিন তখন বললো, নোমান এসেছিলো?

;হ্যাঁ।এই বলে তানিশা শুয়ে পড়লো।

শিরিন তখন বললো বললাম না ও ভীষণ মিস করছে তোমাকে।

;হুম।ও সত্যি ভীষণ মিস করছে আমাকে।

তানিশা তখন নোমানকে একটা মেসেজ দিলো।

;সরি ডিয়ার।আই মিস ইউ টু।

কিন্তু নোমান রাগ করে সিন করলো না মেসেজ।

তানিশা বুঝতে পারলো নোমান ভীষণ রাগ করেছে তার উপর।

||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||

শারদের সকালে আসে ভাদ্রের ফোটাফোটা বৃষ্টি। ভিজিয়ে দেয় তপ্ত বালুচর।তাতেই যেনো প্রশান্তি খুঁজে পায় সাগর দেখতে আসা পর্যটকরা।আজকের সকালটাও ঠিক এমনি ছিলো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের।সকাল বেলা এরকম মনোরম দৃশ্য দেখলে কার না ভালো লাগে?নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বলে কথা।সাগরের নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন সাথে হিমেল হাওয়ায় মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ।সৃষ্টিকর্তা যেনো রুপসী বাংলার সব রুপ ঢেলে দিয়েছে এই বালুর আঁচলে।

তানিশারা আজ অনেক সকালে উঠেছে সবাই।যাতে সকালবেলার সমুদ্র সৈকত মন ভরে উপভোগ করতে পারে।আর এদিকে সিফাত একের পর এক ছবি ওঠাচ্ছে।রাতে কাপল রা আলাদা থাকলেও আজ ঠিকই যে যার সঙ্গীর সাথে হাত ধরে ধরে সমুদ্রের কিনারা ঘেষে হাঁটতে লাগলো।কিন্তু নোমান মুখ ভার করে আছে।সে তানিশার দিকে একটিবারের জন্যও তাকাচ্ছে না।তানিশা তবুও জোর করেই নোমানের হাত ধরে হাঁটতে লাগলো।

নোমান তখন বললো,আজ হঠাৎ সকাল সকাল এতো ভালোবাসা কই থেকে আসলো?

তানিশা সেই কথা শুনে বললো,আমার ভালোবাসা সবসময়ই এক রকম থাকে। আপনি বুঝতে ভুল করছেন আমাকে।

নোমান তখন বললো ছাড়ো আমার হাত।

তানিশা সেই কথা শুনে নোমান কে জড়িয়ে ধরে বললো সরি।আমি বুঝতে পারি নি আপনি আমাকে এতো বেশি মিস করবেন?

নোমান তখন তার অভিমান মাখা কন্ঠ নিয়ে বললো, ও তুমি বুঝবেও না কখনো।

তানিশা তখন বললো বললাম তো সরি।এখন রাগ অভিমান সব দূরে ঠেলে দিয়ে চলুন সকাল বেলার এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করি।এই বলে তানিশা আবার নোমানের সাথে হাঁটতে লাগলো।তবে এবার হাতে হাত রেখে নয়।দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে লাগলো।

এদিকে শিলা একা একা হাঁটছে।হঠাৎ শিলা খেয়াল করলো সিফাত কে।সিফাত সেই থেকে শুধু ছবিই তুলছে।সেজন্য শিলা এগিয়ে গেলো সিফাতের কাছে।আর বললো, এই আপনার কি আর কোনো কাজ নেই?সেই থেকে শুধু ছবিই ওঠাচ্ছেন।
সিফাত তখন শিলার আরো কয়েকটা ছবি তুলে বললো, ম্যাডাম! আমাকে এজন্যই তো আনা হয়েছে।

শিলা সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,তাই বলে সারাক্ষণ শুধু ছবিই ওঠাবেন?দেখি কেমন ছবি ওঠাছেন?
সিফাত তখন শিলাকে দেখাতে লাগলো ছবিগুলো।শিলা দেখলো সিফাত শুধু তানিশা আর নোমানের ছবিই বেশি উঠায়ছে।

শিলা কিছুক্ষন নোমান আর তানিশার দিকে তাকিয়ে থাকলো।সিফাত তা দেখে বললো, এই যে ম্যাডাম?ওভাবে কি দেখছেন?অন্যের হাজব্যান্ড কে দেখে কি লাভ?
শিলা তখন বললো, আপনি বুঝি অন্য জনের বউ কে দেখেন না?
সিফাত সেই কথা শুনে বললো, দেখি না বললে ভুল হবে।তবে আমি শুধু একজনের বউকেই দেখি।

শিলা বেশ আশ্চর্য হলো সেই কথা শুনে।সে তখন বললো কার বউ সেটা?

সিফাত হেসে বললো ম্যাডাম আপনি মনে হয় তাহলে জানেন না কিছু।

;কি জানি না।

সিফাত তখন বললো, চলুন হাঁটতে হাঁটতে গল্প করি।

;চলুন।এই বলে শিলা আর সিফাত হাঁটতে লাগলো।
সিফাত তখন বললো আমি কিন্তু তানিশাকে খুব বেশি পছন্দ করতাম।সেই থেকে ওনার জন্য ওয়েট করে ছিলাম।কিন্তু উনি নোমানকে ভালোবাসে বলে আমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছেন।

শিলা বেশ আশ্চর্য হলো সেই কথা শুনে।আর বললো সত্যি বলছেন?

;হ্যাঁ,একদম সত্যি।

শিলা তখন বললো, তাহলে আপনার কষ্ট হচ্ছে না ওদের কে একসাথে দেখে?

;না,বরং ভালো লাগছে যে ওরা ভালো আছে।

শিলা তখন বললো আপনার আর আমার কষ্ট কিন্তু সেম।আর চিন্তা ধারাও এক রকম।আমিও এটাই মনে করি।আর ওদের জন্য দোয়াও করি।যে ওরা দুইজন যেনো সারাজীবন ভালো থাকে।

সিফাত তখন বললো তাহলে আত্নহত্যা করতে চেয়েছিলে কেনো?

শিলা তখন হেসে উঠে বললো, জানি না।কেমন যেনো অসহ্য লাগছিলো জীবন টা।

সিফাত তখন বললো মাত্র এই কয়দিনেই এতো ভালোবেসেছেন নোমান কে,আর তার বিরহে আবার আত্নহত্যাও করতে ধরেছেন?

শিলা তখন বললো, আপনি কত দিন ধরে ভালোবাসেন তানিশাকে?

সিফাত তখন হাসতে হাসতে বললো বললে বিশ্বাস করবে?

;বলুন না?

–দশ বছর।

শিলা সিফাতের মুখে এই কথা শুনে অনেক বেশি আশ্চর্য হলো।সে ভাবতেই পারছে না এতোবছর ধরে এক তরফা ভাবে একজন কে এভাবে ভালোবাসা যায়?শিলা সিফাতের কষ্ট টা অনুধাবন করার ট্রাই করতে লাগলো।সে ভাবতে লাগলো তাহলে সিফাতের কত টা কষ্ট হয়েছে তানিশার বিয়ের কথা শুনে?তবুও তো সিফাত আত্নহত্যা করে নি।বরং হাসিমুখে তাদের শুভকামনা করছে।একের পর এক তাদের কাপল ফটো তুলছে।এমনও কি হয়?

#চলবে,
#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_৩৮
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

❝জানেন শিলা!আমি কিন্তু কখনোই তানিশাকে জোর করি নি,যে আমাকে আপনার ভালো বাসতেই হবে।তবে মাঝে মাঝে হেসে হেসে বলেছি যে আমাকে একটু ভালোবাসলে কি হয় তানিশা?করেন না আমাকে বিয়ে?কেনো এসব বলেছি জানেন?❞

–কেনো?(বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে শিলা)

‘;তানিশা আমার এই কথা শুনে যে রিয়্যাক্ট করতো সেটা দেখার জন্য ওকে এভাবে জ্বালাতাম।সে সবসময় হেসে হেসে বলেছে,আপনি আর কখনো ভালো হবেন না। ভাইয়া আর আপুকে কিন্তু এসব ফাজলামির কথা বলে দিবো।ও আমার এই ভালোবাসাকে ফাজলামি মনে করতো।কেনো জানি ওর ধমকানি গুলো শুনতেও ভীষণ ভালো লাগতো আমার।আসলে ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই ভালো লাগে।কেনো ভালো লাগে আজও বুঝলাম না।

শিলা আবেগপ্রবণ হয়ে গেলো সিফাতের কথা শুনে।সে তখন বললো আপনার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি এখনো তানিশাকে ভালোবাসেন!

‘;হ্যাঁ ভালোবাসি।নির্ধিদ্বায় বললো সিফাত।
এতো সহজেই কি এতো দিনের ভালোবাসা ভোলা যায়?তবে এখন শুধু তানিশাকেই ভালোবাসি না।ওদের দুইজনকেই ভালোবাসি।তানিশা আর নোমানের কেমিস্ট্রি টাকে ভালোবাসি।দুইজন দুইজনকে ভালোবেসে সারাজীবনের জন্য কাছে পেয়েছে,এই পাওয়া টাকে ভালোবাসি।আসলে ভালোবাসার বিভিন্ন প্রকার আছে।একজন কে বিভিন্ন ভাবে ভালোবাসা যায়।

শিলা তখন বললো, আপনার কথা শুনে বিশ্বাস করুন আমার মনের ভিতর থাকা কষ্টগুলো সত্যি অনেক হালকা হয়ে গিয়েছে।আপনি যেভাবে তানিশাকে ভালোবেসেছেন আমি তো নোমান কে এতো বেশি ভালোবাসার সুযোগ ই পাই নি।আর তাতেই একদম ভেংগে পড়েছি।মনে হচ্ছে কেউ নির্মম ভাবে আমাকে মেরে ফেলেছে।এখন শুধু আমার দেহ টা পড়ে আছে।যার জন্যই নিজেকে শেষ করতে চাইছিলাম।

সিফাত সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো এটাই ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য। ছেলেদের ধৈর্য্য অনেক বেশি যার কারনে অনেকেই তাদের হৃদয়হীন বলে। কিন্তু মেয়েরা হলো অধৈর্য্যেশীল।এরা একটুতেই ভেংগে পড়ে।এরা প্রেমে ব্যর্থ হলেই যেভাবে নিজেদের শেষ করে ফেলে মনে হয় প্রেম ছাড়া দুনিয়ায় আর কিছুই নাই।একজন কে ভালোবাসি,কিন্তু তাকে পেলাম না।তাই বলে কি নিজের এই মূল্যবান জীবন টা নষ্ট করে ফেলবো?কখনোই না।
আমি মারা গেলে তার কিছুই হবে না,কারণ সে তো আর আমাকে ভালোবাসে না,হয় তো দু একদিন আফসোস করবে তারপর কিন্তু ঠিক ভুলে যাবে সব।কিন্তু আমাকে যারা ভালোবাসে তারা ঠিক সারাবছর কাঁদবে।কেনো তাদের কে এভাবে কষ্ট দিবো আমি?আমার কষ্ট হচ্ছে হোক।দেখি কতদিন এই কষ্ট হয়?

শিলা তখন বললো,এভাবে তো ভেবে দেখি নি আমি?আসলেই তো।আমি নোমান কে না পেয়ে সুসসাইড করতে চেয়েছিলাম।এতে তো নোমানের কিছুই হতো না।সে তো তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে দিব্যি থাকতো।হয় তো দু এক দিন একটু ভাবতো আমাকে।কিন্তু আমার মা, বাবা,ভাই,বোন সারাজীবন মনে করে কাঁদতো।

–হ্যাঁ ঠিক বলেছেন শিলা।আসলে সবাই কিন্তু তার পছন্দের মানুষের সাথে ঘর করতে পারে না।এটা সম্পূর্ণ ডিপেন্ড করে কপালের উপর।
ভাগ্যে লেখা না থাকলে আমি যতই চিৎকার চেঁচামেচি করে বলি না কেনো তানিশা!আই লাভ ইউ।আই লাভ ইউ সো মাচ।আমি তোমাকে ছাড়া আমার এই জীবনে আর কাউকে চাই না।তাহলে কি সে ফিরে আসবে আমার কাছে?

কথাগুলো বলতেই সিফাতের চোখের কোনে জল চলে এলো।শিলা দেখতে পেলো সেই জল।সে সিফাতের এই কষ্ট অনুধাবন করতে পারছে।
কারণ নোমান যেদিন তানিশাকে বিয়ে করেছিলো সেদিনও ঠিক এভাবেই শিলা চিৎকার করে বলেছিলো,নোমান!কই আপনি?প্লিজ ফিরে আসুন আমার জীবনে।আমি আপনাকে ছাড়া সত্যি কিছু ভাবতে পারছি না।আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।মুহুর্তের মধ্যে শিলা ভাবনার জগতে চলে গেলো।

শিলাকে আনমনে থাকতে দেখে সিফাত বললো,এই যে ম্যাডাম!কই হারালেন এভাবে?চলেন যাই এখন।তা না হলে সবাই খুঁজবে আমাদের।এই বলে সিফাত হাঁটা শুরু করলো।আর কিছু সমুদ্রের ছবি ওঠাতে লাগলো।

আসলে শিলা আর সিফাত দুইজনেরই প্রচন্ড ভাবে মন ভেংগেছে। সেজন্য দুইজন দুইজনার কষ্ট টা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারছে।আজ তারা তাদের মনের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করে কিছুটা হলেও হালকা হলো।

এদিকে নোমান আর তানিশা,শিলা আর সিফাতকে খোঁজার জন্য এসেছে।সকালবেলার মনোরম দৃশ্য মন ভরে উপভোগ করে সবাই নাস্তা খাওয়ার জন্য হোটেলে চলে গেছে।কিন্তু শিলা আর সিফাত কে না দেখতে পেয়ে তানিশা আর নোমান খুঁজতে বের হইছে।

শিলা আর সিফাত কে একসাথে দেখতে পেয়ে তানিশা আর নোমান দুইজন দুইজনার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো।তারপর নোমান তানিশাকে বললো,তুমি কি কিছু বুঝছো?তানিশা তখন বললো হুম বুঝছি।
নোমান তখন বললো,কি বুঝলা?তানিশা তখন বললো আপনি যেটা বুঝছেন আমিও সেটাই বুঝছি।

এদিকে সিফাত আর শিলা আবার নোমান তানিশাকে দেখে নিজেরাই এগিয়ে এলো।আর বললো তোমরা এখানে?

নোমান তখন বললো হ্যাঁ আমরা এখানে।তা আমরা কি এসে তোমাদের ডিস্টার্ব করলাম?

সিফাত আর শিলা সেই কথা শুনে দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।আর একসাথে বললো,ডিস্টার্ব? কিসের ডিস্টার্ব?

তানিশা তখন বললো ও তোমরা বুঝবে না।কয় টা বাজে সেটা আগে দেখো।সকালের নাস্তা খাবে কখন?

–হ্যাঁ তাই তো।১০ টা দেখি বেজে গেছে।এই বলে সিফাত আগে আগে চলে গেলো।তারপর শিলাও চলে গেলো।

নোমান তা দেখে বললো আমরা এলাম ওদের ডাকতে।আর এরা দেখি আমাদের রেখেই চলে যাচ্ছে।
তানিশা তখন বললো, শুধু কি চলে যাচ্ছে?দুইজন একসাথেই যাচ্ছে।মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে।

–হলেই তো ভালো।

তানিশা তখন বললো চলেন এখন আমরাও যাই।এই বলে তানিশা নোমানের হাত ধরে নিয়ে গেলো।

সবাই সকালের নাস্তা খেয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে আবার ছুটলো সমুদ্রের পাড়ে।এবার আর শুধু পা আর হাত ভেজানোর জন্য এলো না।সবাই সরাসরি নেমে পড়লো পানিতে।কারণ এখন শুরু হবে সমুদ্রের পানির সাথে রোমাঞ্চ করা।

আমান ঢেউয়ে পিঠ ঠেকিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছে,আর সোহান ঢেউয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে।নোমান তো খুশির ঠেলায় লাফ দিয়ে শূন্যে উঠে ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিচ্ছে। সে এক অসাধারণ মুহূর্ত। সবাই আজ যেনো তাদের শৈশবে ফিরে গেছে। ঢেউয়ের সাথে চলছে সবার অবিরাম ছেলেখেলা।

অন্যদিকে সিফাত এসব আনন্দ ভরা দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করছে।

তারপর সবাই মিলে এক এক করে ওয়াটার বাইক এ চড়ে ঘুরে বেড়ালো কিছুক্ষন।সবাই আনন্দ করলেও ছাতার নিচে একা একাই বসে আছে শিলা।সে সবার আনন্দ করা উপভোগ করছে।

সিফাত তাকিয়ে দেখলো সে শুধু একাই নয় এরকম হাজারো ক্যামেরাম্যান বিচে ছাতায় বসে, পাড়ে দাড়িয়ে কিংবা সমুদ্র ঢেউয়ে ভিজে জুবুথুবু হয়ে একের পর এক ছবি ক্লিক করছে।দেখে মনে হচ্ছে এ যেনো ছবি ক্লিক করার ধুম পড়ে গেছে।
হঠাৎ সিফাতের চোখ পড়লো শিলার দিকে।সে তখন ছবি তোলা বাদ দিয়ে শিলার কাছে চলে গেলো।আর তাকে বললো, তুমি এখানে একা একা কি করো?যাও সবার সাথে আনন্দ করো।

শিলা তখন বললো আমার ওসব কিছু ভালো লাগছে না।

সিফাত সেই কথা শুনে হঠাৎ শিলার হাত ধরে টেনে জোর করেই পানির মধ্যে নেমে দিয়ে বললো, এখানে কি শুধু এভাবে ঝিমানোর জন্য এসেছেন?আনন্দ করেন সবার সাথে।সবাই কত আনন্দ করছে দেখতে পারছেন না?

শিলা তখন বললো কই সবাই আনন্দ করছে?একজন তো শুধু ছবিই তুলছে।

সিফাত সেই কথা শুনে বললো আমাকে তো এজন্যই আনা হয়েছে।এই বলে সিফাত শিলার কাছ থেকে সরে গেলো।আর আবার তার ফটোগ্রাফির কাজ শুরু করে দিলো।

মোটর বাইক, সার্ফিংয়ের এডভেঞ্চার সব ধরনের বিনোদন আছে এই কক্সবাজারে।
কলাতলি, সুগন্ধা, লাবনী বিচ সহ আরো কয়টি বিচ, ঢেউ আর গর্জন মিলে সমুদ্রকে এমন ভাবে সাজিয়েছে যেনো মনে হয় কোনো রোমাঞ্চিত সৌন্দর্যের পসরা বসেছে এখানে। এ যেনো মনোমুগ্ধকর এক ভিন্ন জগত।যে আনন্দ সত্যি প্রকাশ করার মতো নয়।

কিছুক্ষন আনন্দ করার পর নোমান সিফাতের কাছে চলে এলো।আর বললো আমাদের তো অনেক ছবিই তুললা এবার নিজে এসে একটু আনন্দ করো।এই বলে নোমান সিফাতের হাত থেকে ক্যামেরা রেখে দিলো তারপর ওকে টেনে নিয়ে সাগরের জলে নামলো।অন্যদিকে শিলা পানি থেকে উঠতে ধরলো তখন সবাই মিলে জোর করে শিলাকেও নামালো পানিতে।
তারপর সবাই ভীষণ মজা করতে লাগলো।সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে আজ সবার মন উতলা হয়ে উঠেছে।যে যার সঙ্গীর সাথে এবার রোমাঞ্চ শুরু করে দিলো।কিন্তু সিফাত আর শিলা একা একাই আনন্দ করতে লাগলো। তবে তারা মাঝে মাঝে দুইজন দুইজনার দিকে তাকাতে লাগলো।কিন্তু যখন দেখলো সবাই জুটি বেধে বেধে আনন্দ করছে তখন শিলা ভাবলো সিফাতের সাথে গল্প করা যাক।এই ভেবে শিলা সিফাতের কাছে চলে গিয়ে গল্প করতে লাগলো।সিফাতের মুখে এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ কথা শুনতে কেনো জানি ভালোই লাগছে তার।

কিছুক্ষন আনন্দ করার পর সবাই খেয়াল করলো নোমান আর তানিশা নাই।সবাই তখন ওদের কে খুঁজতে লাগলো।আমান তখন বললো ফোনও তো আনি নি যে কল করবো।শিরিন তখন বললো কই আর যাবে?হয় তো আশেপাশেই কোথাও আছে।আর যেখানেই থাক না কেনো সময় হলে এমনিতেই হোটেলে চলে যাবে।
সোহান তখন বললো তোমরা আর কতক্ষন থাকবে এই পানির মধ্যে।আমাকে আর ভালো লাগছে না।আমি হোটেলে চলে গেলাম।স্বর্না তখন সোহানের হাত ধরে বললো,ভালোই তো লাগছে বাবা।থাকি না আর কিছুক্ষন।সোহান সেই কথা শুনে থেমে গেলো।আর বাকিরাও রয়ে গেলো।

এদিকে নোমান তানিশাকে নিয়ে নিরিবিলি একটা জায়গায় এসেছে। সমুদ্রের পানির সাথে রোমাঞ্চ করতে যেয়ে তার নিজের মধ্যে রোমাঞ্চ করার ইচ্ছা জেগে উঠেছে।সেজন্য নোমান তানিশাকে জোর করেই কোলে করে নিয়ে এসেছে এখানে।সবাই সবার কাজে ব্যস্ত থাকায় কেউ খেয়াল করে নি তাদের।

ভেজা পোশাক থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে দুইজনের।নোমান অপলক ভাবে চেয়ে আছে তানিশার পানে।ভেজা চুলে কি স্নিগ্ধ দেখা যাচ্ছে তানিশাকে।ইচ্ছা করছে এখনি তাকে ভালোবাসার স্পর্শ দিতে।

নোমানকে এভাবে তাকানো দেখে তানিশা বললো, ছেড়ে দিন এখন।সবাই দেখছে তো।

–দেখুক।নিজের বউকেই তো কোলে নিয়েছি।

এদিকে ভেজা কাপড়ে থাকায় তানিশা বার বার হাঁচি দিতে লাগলো।
নোমান তা দেখে বললো তাড়াতাড়ি ভিজে কাপড় চেঞ্জ করতে হবে তোমার।তা না হলে আবার অসুখ বেঁধে ফেলবে।চলো রুমে নিয়ে যাই।এই বলে নোমান আবার তানিশাকে কোলে ওঠালো।

তানিশা তখন বললো, কোলে নিতে হবে না।আমি একাই যেতে পারবো রুমে।নোমান তানিশার কথা কিছুতেই শুনলো না।সে জানে তানিশা এই কথা বলে আবার সবার মাঝে চলে যাবে।কিন্তু নোমান কিছুতেই এই সুযোগ আর দিতে চায় না তাকে।কাল থেকে সে তার প্রিয়তমা বউ এর সাথে একাকি কথা বলার ট্রাই করছে।কিন্তু সবাই থাকার কারনে সে সুযোগ আর হচ্ছে না তার।এই সুযোগে রুমে গিয়ে একটু কথা বলা যাবে।সেজন্য নোমান তানিশাকে সোজা হোটেলে নিয়ে এলো।তারপর নামিয়ে দিলো কোল থেকে।

তানিশা তাদের রুমের চাবি নিয়ে দরজা খুললো।নোমান ও প্রবেশ করলো তানিশাদের রুমে।তানিশা যখন তার ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করে চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশ রুমে যেতে ধরলো ঠিক তখনি নোমান তানিশার হাত থেকে ড্রেস গুলো নিয়ে নিজেই তাকে চেঞ্জ করাতে ধরলো।কিন্তু তানিশা নোমানের হাত থেকে তার ড্রেস কেড়ে নিয়ে বললো,আমি চেঞ্জ করছি।আপনি গিয়ে নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে নিন আগে।নোমান সেই কথা শুনে এক ঝটকায় তানিশাকে আবার তার কাছে টেনে আনলো।আর তানিশার ড্রেস চেঞ্জ করাতে লাগলো।তানিশা জানে নোমানের সাথে অযথা জিদ করে কোনো লাভ হবে না।সেজন্য তানিশা চোখ বন্ধ করে থাকলো।কারণ তার ভীষণ লজ্জা লাগছিলো।হঠাৎ নোমান তানিশাকে এক ঝটকায় কোলে করে বেডে নিয়ে গেলো।

তানিশা তা দেখে বললো এই কি করছেন আবার?ড্রেস তো চেঞ্জ করা শেষ। এখন চলুন ওদের কাছে যাই।

নোমান সেই কথা শুনে বললো পাগল হইছো তুমি?এতোবড় একটা সুযোগ মিস দিবো আমি?

–সুযোগ?কিসের সুযোগ?

নোমান তানিশার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তাকে বেডে শুইয়ে দিলো। তারপর নেশাভরা চোখে তাকিয়ে রইলো তানিশার দিকে।

তানিশা নোমানের এমন চাহনি দেখে বললো, সবাই কিন্তু আসবে এখন রুমে।প্লিজ এরকম করেন না।সবাই চলে আসলে মুখ দেখাবেন কেমনে?

নোমান আছে এখন রোমান্টিক মুহুর্তে।তানিশার এসব আজেবাজে বকবকানি সে শুনতেই পাচ্ছে না।নোমান এবার তানিশার ঠোঁট দুটি মুখে পুরে নিয়ে তার বকবকানি থামিয়ে দিলো।তারপর কিস করতে করতে তাকে পাগল করে তুলছিলো।তানিশা যদিও নোমানের স্পর্শে দূর্বল হয়ে যাচ্ছিল তবুও সে থামিয়ে দিতে ধরলো নোমানকে।কারন তার শুধু ভয় লাগছে এই বুঝি সবাই এসে গেলো। কিন্তু নোমান কিছুতেই থামছিলো না।সে এখন তার লক্ষ্যে আছে।

এদিকে তানিশা যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো ঠিক সেটাই হলো।কারণ সবাই সাগরের পানি থেকে উঠে হোটেলের দিকে চলে এলো।আর এসেই ছেলেরা ছেলেদের রুমে আর মেয়েরা মেয়েদের রুমে চলে গেলো।কিন্তু ছেলেরা তাদের রুমে অনায়াসে ঢুকতে পারলেও মেয়েরা ঢুকতে পারলো না।তারা দরজা বন্ধ করা দেখে ঠকঠকাতে লাগলো।

শব্দ শুনে তানিশা নোমান কে সরিয়ে দিয়ে বললো,এই ছাড়ুন!ওরা সবাই আসছে।

নোমান তবুও ছাড়লো না তানিশাকে।ওর কানে যেনো তানিশার কথা পৌঁছলই না।এদিকে বাহিরে থেকে সবাই ঠকঠকাতেই আছে।শিরিন তখন তানিশাকে কল দিলো।কিন্তু তানিশার ফোন একটু দূরে থাকায় সে কল টা রিসিভ করতে পারলো না।সবাই তখন ভয়ের মধ্যে পড়ে গেলো।কোনো বিপদ হলো না তো আবার!
সেজন্য তারা এবার তানিশা তানিশা বলে ডাকতে লাগলো।

এবার আর তানিশা চুপ করে থাকতে পারলো না।সে নোমানকে একদম জোর করেই সরিয়ে দিয়ে বললো,শুনতে পাচ্ছেন না ওরা ডাকছে।যান খুলে দিয়ে আসুন এখন।আমি যেতে পারবো না।নোমান সেই কথা শুনে বেডে ভালো করে শুয়ে পড়লো।আর বললো তোমার প্রয়োজন হলে তুমি খোলো গিয়ে।

তানিশা এবার আর দেরী না করে নিজেই গিয়ে তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দিতে গেলো।দরজা খুলতেই শিরিন বললো, কতক্ষন ধরে ডাকছি আমরা?

তানিশা তখন বললো না মানে ভাবি,সরি আপু আমি ড্রেস চেঞ্জ করছিলাম।

শিরিন তখন বললো আমরা তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।রিসেপশনে চাবি নিতে গিয়ে শুনি তুমি নিয়ে এসেছো চাবি।কিন্তু রুমে এসে ডাক দিচ্ছি তোমার কোনো সাড়াশব্দ নাই। শিরিনের ধমকানি শুনে তানিশা আর কিছু বললো না।সবাই এক এক করে রুমে ঢুকে গেলো।এদিকে তানিশা সবাইকে ঢোকা দেখে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে থাকলো।এখন সবাই নোমানকে দেখে কি ভাববে কে জানে?

সবাই রুমে গিয়ে দেখে নোমান শুয়ে আছে।নোমান কে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে রইলো।

শিরিন তখন তানিশাকে বললো, তা তুমি বলবে না নোমান আছে রুমে?আমরা তো ভেবেছি তুমি একাই আছো।নোমান যে ইদানীং মেয়েদের রুম এতো বেশি পছন্দ করে তা তো আমার জানা ছিলো না।এই বলে শিরিন ডাকতে লাগলো নোমানকে।ওঠ ভাই ওঠ।আর লজ্জা পেতে হবে না।
কিন্তু নোমানের কোনো সাড়াশব্দ পেলো না শিরিন।অনেক ডাকাডাকি করার পরও নোমান উঠলো না।

তানিশা বুঝতে পারলো নোমান লজ্জায় ঘুমের অভিনয় করছে।সেজন্য তানিশা বললো ওনার নাকি শরীর টা ভালো লাগছে না।মাথা টা ভীষণ ঘুরছে।আর জ্বর জ্বর ফিল হচ্ছে।সেজন্য এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে।তুমি যেটা ভাবছো তেমন কিছুই হয় নি কিন্তু।

শিরিন সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো তাই?চোরের মন পুলিশ পুলিশ।ঠাকুর ঘরে কে রে?আমি কলা খাই নি।এই অবস্থা হইছে তোমার।

তানিশা সেই কথা শুনে লজ্জায় অন্য মুখ হলো।

ভাবি এবার নোমানের কান ধরে বললো,ওর যখন এতই ঘুম পাচ্ছে তাহলে ও আমাদের রুমে কেনো?ও নিজের রুমে যাই নি কেনো?এই বলে শিরিন ভালো করে নোমানের কান ডলে দিয়ে বললো, এই উঠবি তুই?এসব আজাইরে ঢং বাদ দে?আমার সাথে চালাকি করছিস?

নোমান এবার ঘুম ঘুম কন্ঠ নিয়ে বললো, ভাবি কান ছাড়ো আমার।ব্যাথা লাগছে তো?সারারাত ঘুমাই নি।এখন একটু চোখ টা লেগে গিয়েছিলো।তোমাদের জ্বালায় কি এখন আমি ঘুমাতেও পারবো না?এই বলে নোমান আবার শুয়ে পড়লো।

#চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে