ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব-৩৩+৩৪

0
1347

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_৩৩
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

তানিশা কিচেন রুমে গিয়ে দেখে লিনা একা একাই রান্না করছে।সেজন্য তানিশা জিজ্ঞেস করলো,
শিরিন ভাবি কই?
লিনা জানালো শিরিন ভাবি তার বাপের বাড়ি গেছে।সেই কথা শুনে তানিশার বেশ খটকা লাগলো।এতো সকালে শিরিন ভাবি বাপের বাড়ি কেনো গেছে?
তানিশা তখন লিনাকে জিজ্ঞেস করলো, সে কিছু জানে নাকি?
লিনা বললো, না ভাবি, জানি না কিছু আমি।তবে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।কারন খালু জানও সেই সকাল থেকে বাসায় নাই।এদিকে আমান ভাই আজ এখনো অফিস যায় নি।আমাকে শুধু বললো, এক কাপ কফি রেডি করতে।আমিও করে দিলাম কফি।তারপর থেকে উনি ওনার রুমেই আছেন।

তানিশা লিনার কথা শুনে নিজেও বেশ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো।কারণ আমানও তো নোমানকে নিয়ে কই যেনো যাবে।তাহলে হয়েছে টা কি?

এদিকে নোমান শাওয়ার শেষ করে রেডি হয়ে বসে আছে তানিশার জন্য।কিন্তু তানিশা তো একটিবার রুমে আসছে না।সেজন্য নোমান তার রুম থেকেই তানিশা তানিশা বলে ডাকতে লাগলো।তানিশা সেই কথা শুনে সাথে সাথে রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে দেখে নোমান একদম আকাশী কালারের একটা ফুল হাতা শার্ট আর তার সাথে গ্রে কালারের একটা প্যান্ট পড়ে রেডি হয়ে বসে আছে।ডাক্তার সাহেবকে বেশ হ্যান্ডসামই লাগছিলো।

তানিশা রুমে প্রবেশ করতেই নোমান তার হাত ধরে টেনে ইচ্ছামত কয়েকটা কিস করে বললো, কই ছিলে এতোক্ষণ? জানোই তো বাহিরে যাবো এখন?

তানিশা তখন বললো,হ্যাঁ বাহিরেই তো যাবেন।তা যাচ্ছেন না কেনো?

নোমান সেই কথা শুনে আরো কয়েকটা কিস করে বললো,এই জন্য যাচ্ছি না।বাহিরে যাওয়ার আগে বউকে একটু আদর না করলে হয় নাকি?

তানিশা সেই কথা শুনে বললো,আমার না আপনাকে চিনতে ভীষণ কষ্ট হয় এখন।আপনি কি সেই ভদ্র নোমান?যাকে আমি চিনতাম?

নোমান তখন তানিশার গলায় তার মুখ ডুবিয়ে বললো, হ্যাঁ ম্যাডাম!আমিই সেই নোমান।তাছাড়া বউ এর কাছে ভদ্র হলে চলবে নাকি?বউ এর কাছে যদি ভদ্রতা দেখায় তাহলে তো বউ তখন আফসোস করে করে বলবে,শালা আনরোমান্টিক বর একটা!কোন দুঃখে যে একে চয়েজ করেছিলাম?

এদিকে আমান সেই থেকে ওয়েট করে আছে নোমানের জন্য।নোমান বললো,দশ মিনিটের কথা সেখানে তো ২০ মিনিট হয়ে গেলো।কিন্তু আমানের আবার ভীষণ তাড়া আছে।সেজন্য সে আবার নোমানকে ডাকতে গেলো।কিন্তু রুমে ঢুকে সে যা দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
নোমান আর তানিশা দুইজনই প্রেমের সাগরে ডুবিয়ে আছে।নোমান তানিশাকে ভালোবাসার স্পর্শে পাগল করে তুলছে আর তানিশা তা চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে।

আমান সেজন্য তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে এলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো, ভাগ্যিস ওরা দুইজন দেখে নি।তা না হলে কি হতো তার?সে কিভাবে মুখ দেখাতো ছোট ভাইকে।

আমান তখন তার ঘড়ির দিকে তাকালো।হাতে তার সময়ও নাই।আর এদিকে নোমান আছে তার রোমান্স নিয়ে।আজ কপালে ওর কি আছে বুঝতে পারছি না।
না,এভাবে হবে না।অন্যভাবে ট্রাই করতে হবে।এজন্য আমান কল দিলো নোমানকে।কিন্তু নোমান মোবাইলের রিংটোন যেনো শুনতেই পেলো না।

এদিকে তানিশা রিংটোন শুনে বললো,এই,ছাড়ুন এখন।আপনাকে কে যেনো কল করেছে।

নোমান সেই কথা শুনে তার পকেট থেকে ফোনটা বের করলো আর তার ভাইয়ের নাম্বার দেখে বললো,ও মাই গড।সে তো একদম ভুলেই গেছে।এই বলে সে তানিশার ঠোঁটে হালকা করে ছুঁয়ে দিয়ে বললো, গুড বাই ম্যাডাম।আসছি আমি।এই বলে নোমান বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

নোমান রুম থেকে বের হতেই দেখে আমান রেডি হয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে।আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।

–ভাইয়া চলো এখন। রেডি আমি।
আমান সেই কথা শুনে বললো, দশ মিনিটের কথা বলে কয় মিনিট লাগালি?নেক্সট টাইম ভেবেচিন্তে সময় বলবি।

নোমান তখন বললো সরি ভাইয়া।ভুলে গেছিলাম। কিন্তু আমরা এখন যাচ্ছি টা কোথায়?
–গেলেই বুঝতে পারবি।এই বলে আমান আগে গিয়ে গাড়িতে বসলো।তারপর নোমান পরে গিয়ে বসলো।আমানকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিলো।নোমান তা দেখে বললো, ভাইয়া এনি প্রবলেম?প্লিজ টেল মি।

আমান তখন তার দুই হাত নাড়িয়ে বললো, শুধু প্রবলেম না বিশাল বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।

–কিসের বিপদ ভাইয়া?(এতোক্ষণে সিরিয়াস হলো নোমান)

–শিলা আত্নহত্যা করতে ধরেছিলো।সে এখন হাসপাতালে আছে।এ জন্য তোকে দায়ি করে আমার শশুড় মশাই মামলা করেছে।সেজন্য তোকে নিয়ে যাচ্ছি অফিসে।তোর একটা জবানবন্দি লাগবে।

নোমান তা শুনে বললো শিলা কেমন আছে?

–এখনো জ্ঞান ফেরে নি।বলা যাচ্ছে না কি হবে?

নোমান তখন বললো ভাইয়া শিলা যে হসপিটালে আছে সেখানে নিয়ে চলো।

–পাগল হইছিস তুই?ওখানে গেলে গন্ডগোল হয়ে যাবে।জিসান কিন্তু খুব ক্ষেপে আছে।

–বললাম তো নিয়ে চলো।যা হবার হবে।

আমান তখন বললো আগে অফিসের কাজটা সেরে আছি।পরে যাবো।বাবা আগেই আমাকে জিডি করে রাখতে বলেছিলো।ভাগ্রিস রেখেছিলাম।তা না হলে মারাত্মক বিপদ হয়ে যেতো আরো।

শিলার কথা শুনে নোমানের ভীষণ মন খারাপ হলো।সে বুঝতে পারছে না শিলা এরকম পাগলামি কেনো করছে?সে তো নিজের মুখে বলেছিলো তার কোনো আপত্তি নাই।তাহলে আজ সে কেনো বাস্তবতা বুঝতে চাইছে না।

আমান নিজেও ভীষণ টেনশনে আছে শিলাকে নিয়ে।সে পড়ে গেছে মহা বিপদের মধ্যে।একদিকে ভাই তো অন্যদিকে শালি।কারপক্ষ নেবে সে এখন?তবে সে সবসময় সত্যের পক্ষে থাকারই চেষ্টা করে।এখানে সে তার শশুড় মশাই এর দোষ টাই বেশি দেখছে।কারণ উনি তিলকে তাল বানিয়ে ফেলতে চাইছেন।

আমান নোমানকে ডাইরেক্ট অফিসে নিয়ে গেলো।এদিকে তায়েব চৌধুরী আগেই এসেছেন অফিসে।কারন মামলা টা বেশ জটিল।সেজন্য তায়েব চৌধুরীর ও নিজস্ব একটা জবানবন্দি লাগবে।কারণ তিনি যে নিজের থেকে নোমান আর তন্নির বিয়ে ঠিক করেছিলেন তার উপর জবানবন্দি নেওয়া হবে।

শিলার বাবা তন্নি আর নোমানের বিয়ের কার্ড দেখিয়ে মামলা টা বেশ জটিল করে তুলেছেন।নোমানের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এখন,যে নোমান একজন বাজে স্বভাবের ছেলে।যার প্রধান কাজ হলো মেয়েদের কে প্রেমের ফাঁদে ফেলা,তারপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে চুটিয়ে প্রেম করা।কিন্তু বিয়ের সময় হলেই সে আর বিয়ে করে না।সেই ফাঁদে পড়েছে তন্নি আর শিলা।তন্নিকে বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর শিলাকে এনগেজমেন্ট পর্যন্ত।তন্নি নোমানের শোকে অনেক পাগলামি করে।শেষ পর্যন্ত তাকে জোর করে অন্যথায় বিয়ে দেওয়া হয়।কিন্তু সেখানে তন্নি সংসার করে না,ডিভোর্স দিয়ে চলে আসে।তারপর নোমানের ফ্যামিলি তাকে আবার অন্য জায়গায় বিয়ে দেয়।তন্নি যেহেতু নোমানের ফুফাতো বোন হয় সেজন্য ঘটনাটা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।তারা সত্য টা স্বীকার করে না,সেজন্য আসল কাহিনী অপ্রকাশিত থেকে যায়।ঠিক এইভাবে শিলাকেও প্রতারিত করা হয়েছে।শিলা নরম স্বভাবের মেয়ে।সে এই প্রতারণা সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়।যার জন্য তার অবস্থা খুবই আশংকাজনক।এইরকম যে আরো কত মেয়ের জীবন নোমান নষ্ট করেছে যার প্রমাণ তাদের কাছে নেই। সেজন্য নোমানকে শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।আর সবগুলো ব্যাপার তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে।

শিলার পক্ষের উকিল সামান্য ব্যাপারটাকে আরো অনেক বড় করেছে।বিভিন্ন মিথ্যা কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে নোটিশে।যে নোমানের সাথে শিলার শারিরীক সম্পর্কও হয়েছে।যার কারণে মেয়েটা আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
নোমান তার নামে এমন নোটিশ শুনে হাসবে না কাঁদবে সত্যি বুঝতে পারলো না।যে ছেলে ভুল করেও কোনো মেয়েকে টাচ করা তো দূরের কথা,ভালো করে কথা পর্যন্ত বলে নি সে নাকি দুশ্চরিত্রের ছেলে!তার সাথে নাকি একাধিক মেয়ের রিলেশন আছে!

নোমান তো জানে শিলার সাথে এরকম কিছুই হয় নি।সেজন্য সে সম্পূর্ণ টেনশন মুক্ত থাকলো।তবুও ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।

আমান এবার একটা ফাইল বের করে প্রথমে নোমানের সিগনেচার নিয়ে নতুন করে আরেকটা জবানবন্দি নিলো।জবানবন্দি তে নোমান পুরো কথাগুলো লিখলো যা শিলা তাকে বলেছে।যা শুনে নোমান তানিশাকে বিয়ে করার সাহস পেয়েছে আর অনায়াসেই শিলার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছে।এখন শিলা সুস্থ হলে ওর জবানবন্দি অনুযায়ী নোমানের বিচার হবে।

সেজন্য নোমানকে আমান এখন বাসায় যেতে বললো।কারণ তার আর কাজ নেই।যখন দরকার পড়বে অবশ্যই ডেকে নিবে তাকে।নোমান সেজন্য অফিস থেকে বের হয়ে গেলো।কিন্তু সে বাসায় গেলো না।সে সোজা হাসপাতালে চলে গেলো যেখানে শিলা আছে।

নোমান হাসপাতালে গিয়ে দেখে হাসপাতালের করিডোরে শিলার মা,বাবা,জিসান আর শিরিন দাঁড়িয়ে আছে।সে জানে তাকে দেখলে সবাই ক্ষেপে যাবে তবুও সে সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।কারণ শিলা এখন কেমন আছে তা জানাটা তার ভীষণ জরুরি।

নোমানকে দেখামাত্র সবাই ভীষণ অবাক হলো।কিন্তু জিসান দৌঁড়ে এসে নোমানের শার্টের কলার চেপে ধরে বললো,তোর সাহস হলো কি করে এখানে আসার?
নোমান তখন বললো, আমার শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে কথা বল।আমি এখানে মারামারি করতে আসি নি।জাস্ট শিলার অবস্থা জানার জন্য এসেছি।

জিসান সেই কথা শোনামাত্র নোমানকে এবার জোরে করে এক ধাক্কা দিয়ে বললো,একদম পুঁতে ফেলবো তোরে আমার বোনের নাম উচ্চারণ করলে।
জিসানের ধাক্কা খেয়ে নোমান একদম দেয়ালের সাথে আঘাত পেয়ে মাটিতে পড়ে যায়।সে ভীষণ ব্যাথা পায়।সেজন্য নোমানের মেজাজ ভীষণ বিগড়ে গেলো।সে তখন রাগ করে নিজেও ধাক্কাতে ধাক্কাতে জিসানকে একদম দেয়ালে ঠেস দিয়ে নাক বরাবর ওকেও একটা ঘুষি দিয়ে বললো, বেশি তিড়িংতিড়িং করতেছিস কিন্তু তুই।কিছু বলছি না দেখে বেড়ি বাড়াবাড়ি করছিস।

ঘুষি খেয়ে জিসানের নাক একদম ফেটে গেলো।নাক দিয়ে রক্তও বের হলো।সে তখন আবার নোমানকে ধরতে এলে শিরিন এসে বাঁধা দিলো জিসান কে।আর নোমানকে বললো,নোমান তুমি কেনো এসেছো এখানে?চলে যাও তাড়াতাড়ি।

এদিকে শিলার বাবা দৌঁড়ে এসে নোমানের দুই গালে দুইটা জোরে জোরে থাপ্পড় দিয়ে বললো,হাসপাতালে কি মারামারি করার জন্য এসেছো?তোমার বিবেক দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।

নোমান তখন উচ্চস্বরে বললো, আংকেল আমি তো জাস্ট শিলাকে দেখার জন্য এসেছি।জিসানই তো মারতে এসেছে আমাকে।তো আমি কি চুপ করে থাকবো?

শিলার বাবা তখন ধমক দিয়ে বললো চুপ করো।কোনো কথা বলো না তুমি।তোমার দাদাগিরি বের হয়ে যাবে এক্ষুনি।তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি!নির্লজ্জ ছেলে কোথাকার।এই বলে শিলার বাবা থানাতে কল দিলো।আর তাদের জানিয়ে দিলো,নোমানের নামে মামলা করায় নোমান হাসপাতালে এসে মারামারি শুরু করে দিয়েছে।আমার ছেলে জিসানকে এট্যাক করেছে।সে এখন আহত। পুলিশ সেই কথা শুনে সাথে সাথে নোমানকে ধরার জন্য চলে এলো।

এদিকে নোমান এসবের কিছুই জানে না।সে তো হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সোজা বাসার দিকে যাচ্ছিলো।তবে সেও মাথায় ভীষণ আঘাত পেয়েছে।
||
||
তানিশা লিনাকে রান্নাবান্নায় হেল্প করছে।লিনা আর তানিশা মিলেমিশে কাজ করছে আর গল্প করছে।রান্নাবান্না মোটামুটি শেষ। সেজন্য লিনা বললো,ভাবি তুমি এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি বাকি টুকু সামলাচ্ছি।

–আচ্ছা ঠিক আছে। এই বলে তানিশা তার রুমে চলে গেলো।আর আরেকবার কল দিলো নোমানকে।কিন্তু নোমান এবারও রিসিভ করলো না কল।এর আগে তাকে আরো কয়েকবার দিয়েছিলো কল।সেজন্য তানিশা ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর সুন্দর একটা আকাশী কালারের সুতি শাড়ি পড়ে নিলো।তারপর মাঝখানে সিথি করে চুলগুলো খোলা রাখলো।আর নোমানের আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।

হঠাৎ তানিশার ফোনে কল বেজে উঠলো। সেজন্য তানিশা তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করলো কল টা।কল টা তানিশার এসিস্ট্যান্ট এর ছিলো।

–হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম।

–ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি খবর মায়া?

–ম্যাম!খুব এমারজেন্সি একটা পেশেন্ট এসেছে।

–কিন্তু আমি তো ছুটি নিয়েছি।সুলতানা মেম আছে না?

–হ্যাঁ আছে।কিন্তু উনি অন্য রোগী দেখছেন।খুব আরজেন্ট ম্যাম।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো, ওকে আমি দেখছি।এই বলে সে নোমানকে আবার কল দিলো।
কিন্তু নোমানের ফোন এবারও বিজি দেখাচ্ছে।সেজন্য তানিশা নোমানকে মেসেজ দিলো যে তাকে হাসপাতালে যেতে হবে এক্ষুনি।খুব এমারজেন্সি একটা পেশেন্ট আছে।
এই বলে তানিশা শাড়ির উপরই এপ্রোণ টা পড়ে নিলো।শুধু চুলগুলো একটু বেঁধে নিলো।তারপর লিনাকে বললো,যে সে হাসপাতালে যাচ্ছে।এই বলে তানিশা বাসা থেকে বের হলো।

কিন্তু বাসা থেকে বের হতেই তাহমিনা চৌধুরীর সাথে দেখা।তিনি মাত্র তন্নির বাসা থেকে ফিরলেন।তানিশার সাথে যে নোমানের বিয়ে হয়েছে তিনি এখনো জানেন না।

তাহমিনা তানিশাকে দেখে অন্য মুখ হলো।কিন্তু তানিশা বললো, আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন?তন্নি ভালো আছে?

তাহমিনা চৌধুরী তানিশার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বললো,তুমি এ বাসায় কি করো?

তানিশা ভীষণ সংকোচ করছিলো।সেজন্য সে নীচ মুখ হয়ে বললো,আসলে আন্টি নোমানের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।।

তাহমিনা চৌধুরী যেনো সেই কথা শুনে কারেন্টের শকড খেলেন।তিনি তখন বললেন,নোমানের সাথে বিয়ে হয়েছে মানে?কি বলছো কি?

–হ্যাঁ আন্টি।আপনি বাসার ভিতর যান আন্টি।আমাকে এখন একটু হাসপাতালে যেতে হবে।পরে এসে বলছি।

এই বলে তানিশা হাসপাতালে চলে গেলো।তানিশা হাসপাতালে গিয়েই আগে অপারেশন রুমে ঢুকলো।কারণ রোগী কে অনেক আগেই বেডে শোয়ানো হয়েছে।সব রকম ব্যবস্থা আগেই করে রাখা হয়েছে।শুধু সবাই তানিশার অপেক্ষা করছে।
তানিশা অপারেশন শুরু করে দিলো।৩০-৪০ মিনিটে সে তার কাজ শেষ করলো।তারপর সে তার চেম্বারে চলে গেলো।

তানিশা চেম্বারে প্রবেশ করে আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো তারপর রোগীর জন্য প্রেসক্রিপশন লিখতে লাগলো।হঠাৎ আমান ফোন দিলো তানিশাকে আর নোমানের কথা জিজ্ঞেস করলো।কারণ নোমানের ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো, ভাইয়া ও তো আপনার সাথে চলে যাওয়ার পর এখনো বাসায় ফেরে নি।

–কি বলছো কি এসব?নোমান তো অনেকক্ষন গিয়েছে বাসায়।

তানিশা সেই কথা শুনে ভীষণ অবাক হলো।আমান ভাইয়া এসব কি বলছে?

তানিশার সাথে আমান কথা বলতেই হঠাৎ চারজন পুলিশ নোমান কে টানতে টানতে অফিসে নিয়ে এলো। কারণ নোমান আসতে চাইছিলো না।

নোমানের এ অবস্থা দেখে আমান পুলিশ চারজন কে ধমক দিয়ে বললো, কি হচ্ছে এসব?ছেড়ে দাও ওকে।

–কিন্তু স্যার?

–কিন্তু আবার কি?আমি বলছি ছেড়ে দিতে।
আমান তখন নোমানের কাছে গিয়ে বললো, কি হয়েছে আবার?তুই এখানে কেনো?

এদিকে তানিশা শুধু হ্যালো হ্যালো করছে।

#চলবে,

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_৩৪(বোনাস পর্ব)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

আমান নোমানের মুখে পুরো কাহিনী শুনে ভীষণ রেগে গেলো।আর বললো,তোকে না ওখানে যেতে বারণ করলাম?তারপরও কেনো গেলি?আমি জানতাম ওরা সবাই রেগে আছে।নতুন করে একটা ঝামেলা বাধাবে।

নোমান তার ভাই এর কথা শুনে চুপ হয়ে থাকলো।কারন তার কিছু বলার নাই।সে প্রতিবার ই এভাবে একটা করে ঝামেলা বেধে বসে থাকে।
কিন্তু সে তো কোনোকিছু ইচ্ছাকৃতভাবে করে না।হঠাৎ করেই হয়ে যায় এসব তার সাথে।

আমান নোমানকে চুপ থাকা দেখে বললো,কি রে কথা বলছিস না কেনো?উত্তর দে।এখন চুপ করে থাকলে হবে?এটা তোর ফ্যামিলি না?এটা জেলখানা?জবাব দিতে হবে?

এদিকে মিঃ শফিক সাহেব জিসান কে সাথে করে নিয়ে পুলিশ ষ্টেশনে এলেন।নতুন করে আরেকটা মামলা করবেন বলে।
কিন্তু নোমান কারো সাথে কোনো কথা না বলে অফিস থেকে চলে যেতে ধরলো।তখন পুলিশ চারজন বললো,আপনি আগেই যাচ্ছেন কেনো?আপনার ঝামেলা তো এখনো মিটমাট হয় নি।এই বলে তারা আবার নোমানের কাছে এগিয়ে এলো।

কিন্তু নোমান তখন বললো, যেখানে আমি কোনো দোষই করি নি সেখানে আমি কি কারণে থাকবো?আপনারা অযথা বাড়াবাড়ি করছেন আমার সাথে।জিসান আমাকে আগে মেরেছে।তো আমি কি বসে থাকবো?আমিও মেরে দিয়েছি।তবে পার্থক্য শুধু একটাই।ওর আঘাতে আমার কিছু হয় নি।কিন্তু আমার আঘাতে ও রক্তাক্ত হয়েছে।

আমান তখন নোমানকে ধমক দেখিয়ে বললো,চুপচাপ থাক।আমি কথা বলছি।এই বলে আমান তার শশুড়ের মুখোমুখি হলো।আর বললো, বাবা আপনি আমার গুরুজন।আপনি আমার বাবার মতো।সেই হিসেবে আপনাকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি।কিন্তু এমন কিছু করেন না যাতে আপনাকে অসম্মানিত হতে হয়?আমার মনে হয় অযথা এসব অশান্তি না করে ব্যাপারটা মিটমাট করে নেওয়াই ভালো।নোমান তো বিয়ে করেছে।এখনো কি আপনি শিলার সাথে ওর বিয়ে দিতে চাচ্ছেন?

শফিক সাহেব সেই কথা শুনে বললো,ইমপজিবল।প্রশ্নই আছে না।তবে একটা কথা শুনে রাখো,তুমিও আমার জামাই হও।সেজন্য জামাই এর মতোই থাকো।আমার মেয়ের সাথে যে অন্যায় হয়েছে আমি তার প্রতিবাদ না করে চুপচাপ থাকবো?সে তোমার ভাই বলে কি মাফ পেয়ে যাবে?

আমান তখন বললো, বাবা একবার শুধু ঠান্ডা মাথায় ভাবুন ব্যাপারটা।নোমানের অন্যায়টা কোথায়? সেটা একটু দেখান আমাকে।ও কি নিজের মুখে শিলাকে বিয়ে করতে চাইছে?না আপনি রিকুয়েষ্ট করেছেন বিধায় আমি আর শিরিন নোমানকে বিয়ে করতে রাজি করিয়েছে।সে তো বিয়ে করতেই চাইছিলো না কিন্তু আমি জোর করেছি বিধায় নোমান রাজি হইছে।কিন্তু আমি যদি জানতাম নোমান তানিশাকে লাভ করে তাহলে এভাবে রাজি করাতাম না?কিন্তু আপনারা ব্যাপারটাকে যেভাবে সিরিয়াস করছেন এতে কিন্তু ক্ষতি শিলারই হচ্ছে।

শফিক সাহেব আমানের কথা শুনে চুপচাপ থাকলো।কারণ তিনি এসব আসলে রাগের মাথায় করছেন।মেয়েকে আত্নহত্যা করতে দেখে ওনার মাথা আসলে ঠিক নেই।
কিন্তু জিসান এগিয়ে এসে বললো, দুলাভাই আপনাকে সবসময় নিজের ভাই মনে করতাম।কিন্তু আজ দিয়ে বুঝলাম পর পরই।পর কখনো আপন হয় না।চলো বাবা।শিলাকে শুধু সুস্থ হতে দাও।ও যখন নিজের মুখে সবকিছু ক্লিয়ার করে দেবে তখন দেখি কে বাঁচায় একে।এই বলে জিসান আর শফিক সাহেব বের হয়ে গেলো।

এদিকে তানিশা শুধু একের পর এক কল দিতেই আছে আমানকে।সে ভাবতে লাগলো হঠাৎ আমান ভাইয়ার কি হলো?তিনি হঠাৎ কল কেনো কেটে দিলেন।আর কেনোই বা ফোন রিসিভ করছেন না?

আমান এবার রিসিভ করলো তানিশার কল আর বললো,তানিশা আমি একটু ব্যস্ত আছি।পরে কথা বলছি।আর নোমানকে নিয়ে টেনশন করো না।ও আমার সাথেই আছে।আসলে ওর ফোনে চার্জ নাই সেজন্য অফ হয়ে গেছে ফোন। এই বলে আমান কল কেটে দিলো।
এতোক্ষনে তানিশা একটু চিন্তামুক্ত হলো।তা না হলে সে তো ভীষণ ভয়ের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলো।

আমান এবার নোমানকে বললো এখন বাসায় চলে যা। শিলা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।তবে আমার মনে হচ্ছে এরা শীলাকে নেগেটিভ কথা বলার জন্য জোর করবে।এখন দেখি শিলা কি বলে?ও যদি শয়তানি করে তাহলে তো আর কিছুই করার নাই।তাছাড়া ফরেন্সিক রিপোর্ট টা হাতে এলেই সবকিছু ক্লিয়ার হবে।

নোমান আমানের কথা শুনে পুলিশ ষ্টেশন থেকে বের হয়ে গেলো।হঠাৎ আমান আবার ডাক দিলো নোমানকে।আর বললো,তানিশা চেম্বারে গেছে।ওর সাথে কথা বলে নিস।তোর ফোন বন্ধ পেয়ে ও ভীষণ টেনশন করছে।

নোমান তখন অবাক হয়ে বললো,চেম্বারে কেনো?ও তো তিনদিন ছুটি নিয়েছে।

–এমারজেন্সি কোনো পেশেন্ট এসেছিলো হাসপাতালে।অন্যান্য ডাক্তাররা ব্যস্ত ছিলো বিধায় ওকে ডেকে নিয়েছে হাসপাতাল থেকে।

নোমান সেই কথা শুনে সোজা তানিশার চেম্বারের দিকে রওনা দিলো।

তানিশার আজ আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ নাই।কোনো গাইনি ডাক্তারের সিডিউল ফাঁকা ছিলো না বিধায় এই সিজার টা তাকে করতে হলো।তানিশা সেজন্য ঠিক করলো আর কিছুক্ষণ পরেই বাসার দিকে রওনা দিবে।সেজন্য সে সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলো।

হঠাৎ একজন পুচঁকু ছেলে তার চেম্বারে উঁকি দিলো।

তানিশা কিছু বলার আগেই সে দৌঁড়ে চলে গেলো।তানিশা সেজন্য আবার তার কাজে মন দিলো।কিন্তু ছেলেটি আবার উঁকি দিলো চেম্বারে।এইভাবে পুচঁকু টা বার বার তানিশার রুমে উকিঁ দিয়ে আবার চলে যাচ্ছিলো।
কিন্তু এবার উঁকি দিতেই তানিশা হাতের ইশারায় ডাকলো পুচঁকু টিকে।পুচঁকু টিও গুটি গুটি পায়ে তানিশার রুমে এগিয়ে আসলো।
তানিশা তখন পাশের একটা চেয়ার টেনে ছেলেটিকে বসালো।আর তাকে জিজ্ঞেস করলো নাম কি বাবু?

পুঁচকু টি কোনো সংকোচ না করে তার মাথার ক্যাপ হাতে নিয়ে চুল গুলো ঠিক করতে করতে হাসি দিয়ে উত্তর দিল-
আদ্রিয়ান।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো,ও রে বাবা রে!কি কঠিন নাম!এই নাম কে রাখছে?

–মা রেখেছে।

তানিশা তখন বললো,এত কঠিন নাম কেন রেখেছে?মাকে তুমি জিজ্ঞেস কর নাই?

পুঁচকু টি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো যে সে জিজ্ঞেস করেছে।

তানিশা তখন বললো আমাকে বলা যাবে কি?

–হ্যাঁ যাবে! কারণ তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে!আমার যাকে পছন্দ হয় আমি তাকে সত্য কথাটা বলে দেই।

–ওমা!তাই নাকি!তাহলে বলো এখন এতো কঠিন নাম কেন রেখেছে তোমার মা?

পুচঁকু তখন বললো,মা বলেছে নাম সুন্দর না হলে বড় হলে কেউ আমাকে পছন্দ করবে না,ভালোওবাসবে না।এমন কি বউ ও না।

তানিশা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। সে তার হাসি থামিয়ে দিয়ে বললো, ওহ! এই কথা! মা তো ঠিকই বলেছে।
এখন বল তো তুমি বড় হয়ে কি করতে চাও?

–বিয়ে করতে চাই!

আনসার শুনে তানিশার তো ভিড়মি খাওয়ার যোগাড়।

সে তখন পুচঁকু কে বললো- ঠিক আছে!বিয়ে তো করবেই, কিন্তু পড়াশোনা করে কি হতে চাও?

–ডাক্তার হতে চাই!

এইবার তানিশা খুশি হয়ে গেলো।যাক তার প্রফেশনে আসতে চাইছে। নিশ্চয়ই তার বাবা মা শিখিয়েছে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে!
খুশির ঠ্যালায় তানিশা পুচঁকু কে আবার জিজ্ঞেস করলো- ডাক্তার হয়ে কি করতে চাও?

আদ্রিয়ান উত্তর দিলো পরীর মত একটা মেয়েকে বিয়ে করব!মা বলেছে ডাক্তার হলে পরীর মত বৌ পাওয়া যায়!

তানিশা একদম অবাক হয়ে গেলো আদ্রিয়ানের কথা শুনে।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো এর মাকে দেখার খুব শখ হচ্ছে।এতোটুকু বাচ্চারে বিয়া ছাড়া আর কিচ্ছু শিখায় নাই।

তানিশা তখন জিজ্ঞেস করলো তোমার মা আসে নি?

পুচঁকু বললো কেনো?

–তোমার বৌয়ের ব্যাপারে কথা বলব!

পুচঁকু ওরফে আদ্রিয়ান হেব্বি এক্সাইটেড হয়ে বললো,এসেছে তো মা।ডেকে আনছি।এই বলে পুচঁকু দিলো এক দৌঁড়।

কিছুক্ষন পরেই আদ্রিয়ান তার মাকে জোর করেই আনলো ডেকে।আদ্রিয়ানের মা সালাম দিয়ে চেম্বারে প্রবেশ করলো।
তানিশা সালামের উত্তর দিয়ে বললো আপনি আদ্রিয়ানের আম্মু?
–জ্বি।

মহিলাটিকে দেখে তানিশার ভীষণ চেনা চেনা লাগলো।
কারণ মহিলাটির চোখ আর কথা বলার ভঙ্গি কেমন যেনো চেনা চেনা লাগলো তার।
তবে সে বুঝতে পারছে না কে আসলে।সেজন্য তানিশা ওনাকে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করলো।কিন্তু তবুও তানিশা চিনতে পারলো না মহিলাটিকে।
মহিলাটি চোখের ডক্টর দেখাবেন! সেজন্য পাশের রুমে সিরিয়ালে ওয়েট করছেন!তিনি মাসে মাসেই চেক করার জন্য আসেন।আর আদ্রিয়ানের বয়স প্রায় ৭ হবে।

হঠাৎ দরজায় দাঁড়িয়ে নোমান বললো,মে আই কাম ইন ডাক্তার ম্যাডাম।
নোমান কে দেখে মহিলাটি ভাবলো হয়তো পেশেন্ট।সেজন্য তিনি তাড়াতাড়ি করে আদ্রিয়ান কে নিয়ে বের হয়ে গেলেন।
মহিলাটি বের হয়ে গেলে নোমান নিজের থেকেই চেম্বারে প্রবেশ করলো।

–আপনি?

–হ্যাঁ আমি।আমি একটা প্রবলেম নিয়ে এসেছিলাম ডাক্তার ম্যাডাম।

তানিশা তখন হাসতে হাসতে বললো,ফান করা অফ করেন।।আগে বলেন সারাদিন কোথায় ছিলেন?

নোমান তখন তানিশাকে জড়িয়ে ধরে বললো ডাক্তার ম্যাডাম।প্লিজ আমার কথা টা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।আসলেই আমি একটা প্রবলেম নিয়ে এসেছি।

তানিশা তখন বললো,কি প্রবলেম?

নোমান তখন বললো,আমরা দুই ভাই।

–তো?

–আমরা দুইজনই বিয়ে করেছি।

তানিশা তখন আবার ও বললো,তো?আমি কি করবো?

–দুঃখের বিষয় আমাদের একজনের ও ছেলে মেয়ে নাই।আমার ভাই এর কথা বলতে পারছি না।তবে আমার ঘরভরা পোলাপান চাই।

তানিশা নোমানের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।এর কি উত্তর দেবে সে?

নোমান তা দেখে বললো,আরে ডাক্তার ম্যাডাম!এভাবে মুচকি মুচকি হাসছেন কেনো?এতো লজ্জা পেলে আপনি মানুষ কে পরামর্শ দেবেন কেমনে?

তানিশা তখন মনে মনে ভাবলো এতো মানুষ কে সে পরামর্শ দেয় কই তার তো কোনো লজ্জা লাগে না।তাহলে নোমানের কথা শুনে সে চুপ হয়ে আছে কেনো?

নোমান তখন বললো, কি হলো ম্যাডাম?উত্তর দিন।

তানিশা তখন বললো, আমি ছেলেদের কে পরামর্শ দেই না।আপনার বউকে পাঠিয়ে দিন পরামর্শ দিয়ে দেবো।

নোমান তখন তানিশাকে বললো,কি পরামর্শ দেবে আমাকে একটু বলো।

–ওটা পার্সোনাল ভাবে শুধু আপনার বউকেই দিবো।আপনাকে বলা যাবে না।

নোমান তখন বললো আমার শোনারও কোনো প্রয়োজন নাই।আমার শুধু বাচ্চা চাই।

তানিশা সেই কথা শুনে নোমানের মুখ টিপে ধরে বললো, আপনি কি এবার একটু চুপ করবেন।সারাক্ষণ এতো দুষ্টু দুষ্টু কথাবার্তা কিভাবে বলেন?

নোমান তখন তানিশার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,আচ্ছা আর বলবো না দুষ্টু দুষ্টু কথাবার্তা। এখন বলো বাসায় যাবে কখন?প্রচুর ক্ষুধা লাগছে।

–আগে বলেন কই ছিলেন?তা না হলে যাবো না আপনার সাথে।

নোমান তখন সবকথা খুলে বললো তানিশাকে।সে আর কিছুই গোপন করলো না।

তানিশা নোমানের কথা শুনে একদম হা করে তাকিয়ে রইলো।এতোকিছু হয়ে গেছে অথচ সে কিছুই জানে না।বা টের ও পায় নি।

নোমান তখন বললো তুমি অযথায় টেনশন করবে সেজন্য কিছু বলি নি।কিন্তু ব্যাপার টা যে এতো বেশি সিরিয়াস হবে সত্যি আমি ভাবতে পারি নি।এখন দেখি শিলা সুস্থ হলে কি জাবানবন্দি দেয়।

তানিশা নোমানের কথা শুনে বললো, কিন্তু আপনি তো বলেছেন শিলা মন থেকে সবকিছু মেনে নিয়েছে।

–হ্যাঁ মেনে তো নিয়েছেই।কিন্তু এখন যে সে এরকম পাগলামি করবে সত্যি বুঝতে পারি নি।

হঠাৎ সেই মহিলাটি বাহিরে থেকে ঠকঠক করতে লাগলো।কারন আদ্রিয়ান তার মাথার ক্যাপ টি রেখে গেছে চেম্বারে।

ঠকঠক আওয়াজ শুনে নোমান নিজেই খুলে দিলো দরজাটি।তখন মহিলা টি বললো,সরি ম্যাডাম!আসলে আদ্রিয়ান তার ক্যাপ টি রেখে গেছে।

–ইটস ওকে।এই বলে তানিশা ক্যাপটি খুঁজতে লাগলো।কিন্তু পেলো না।
কিন্তু নোমান খেয়াল করলো টেবিলের পাশে পড়ে আছে ক্যাপটি।সেজন্য নোমান ক্যাপটি তুলে মহিলাটির হাতে দিলো।

মহিলাটি তখন বললো,তোমার নাম কি বাবা?

–জ্বি মাহতাব চৌধুরী নোমান।

মহিলাটি নোমানের নাম শুনে বললো,

–তোমার বাবার নাম?

–জ্বি তায়েব চৌধুরী।

–কি করো বাবা তুমি?

–জ্বি আমিও একজন ডক্তর।

তানিশা তখন বললো,ইনি আমার হাজব্যান্ড হন।

মহিলাটি সেই কথা শুনে নোমানের মাথা ছুঁয়ে একটা চুমু খেয়ে বললো,হাজার বছর বেঁচে থেকো বাবা।মহিলাটি ছলছল চোখে কথাগুলো বলছিলো।তারপর তিনি চেম্বার থেকে বের হয়ে গেলেন।

তানিশা আর নোমান দুইজনই হা করে তাকিয়ে রইলো দুইজনের দিকে।তারা বুঝতে পারলো না মহিলাটি এভাবে কাঁদছে কেনো?

#চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে