#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_৩১
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
বিবাহকে বলা হয় শান্তির প্রতিক।এটি একটি পবিত্র বন্ধন।বিবাহ এমন একটি সামাজিক বন্ধন যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয় আর তাদের মধ্যে মনের মিলন ঘটে। বিবাহের মাধ্যমে শুধু যে দুটি মানুষের মধ্যেই সম্পর্ক তৈরি হয় তা কিন্তু নয়,এর পাশাপাশি দুটি পরিবারের মধ্যেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, নির্ভরশীলতা,বিশ্বাস আর ভালোবাসা গড়ে ওঠে।বিয়ে নিয়ে প্রতিটি ছেলে মেয়ের মনেই থাকে একরাশ অনুভূতি।যে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
তানিশা আর নোমান আজ সেই বিবাহের মতো একটি পবিত্র আর সামাজিক বন্ধনের সাথে যুক্ত হলো।এখন দেখা যাক তাদের দাম্পত্য জীবন কেমন হয়?
তায়েব চৌধুরী ছেলের বউকে আজকেই নিজের বাসায় নিয়ে যেতে চান। কারণ বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে এখন তিনি মোটেও কোনো লুকোচুরি সহ্য করবেন না।তবে তিনি লুকোচুরি ভাবে বিয়েটা দিলেন এই ভেবে যে, বিয়েতে যেনো কোনো ঝামেলার সৃষ্টি না হয়।বিয়েটা যেনো সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়।ঠিক তেমন সুষ্ঠুভাবেই হয়ে গেলো বিয়েটা।
সেজন্য তায়েব চৌধুরী সবার থেকে পারমিশন চাচ্ছেন তার ছেলের বউকে নিজের ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।কিন্তু তহিদুল সাহেব আর শিউলি বেগম সেই কথা শুনে একদম কান্নায় ভেংগে পড়লেন।।তারা ভাবতেই পারছেন না তাদের মেয়ে আজ থেকে অন্যের বাড়ি আলোকিত করবে।আজ থেকে তাদের ঘর একদম অন্ধকার হয়ে যাবে।যদিও তারা তানিশার বিয়ে নিয়ে নিজেরাও ভীষণ চিন্তার মধ্যে ছিলেন কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কেউ তাদের ভিতর থেকে হৃদয় টা একদম ক্ষতবিক্ষত করে ফেলছে।তারা কিছুতেই নিজেদের আর শান্ত্বনা দিতে পারছেন না।এতোবছর ধরে যে মেয়ে তাদের সাথে থেকেছে আজ সে অন্যের ঘরে যাবে ভাবতেই ভিতর টা তাদের হু হু করে কেঁদে উঠছে।
তানিশা তার মা বাবার কান্না দেখে নিজেও কাঁদতে লাগলো।সেও আর নিজেকে থামাতে পারলো না।কিছুক্ষন আগে যে বাড়িটা হাসি খুশিতে ভরা ছিলো কিন্তু সেই বাড়িটাতে এখন শুধু কান্নার আওয়াজ ই পাওয়া যাচ্ছে।
নোমান তানিশাকে তার বুকের কাছে ধরে আছে।তবে সে আজ তানিশাকে বারণ করলো না কাঁদতে।সে আরো বলছে,কেঁদে নাও,ভালো করে কেঁদে নাও।এর পর আর কখনোই জল আসতে দিবো না এই চোখে।এই বলে নোমান তানিশার চোখ দুটি মুছে দিলো।
তানিশা সেই কথা শুনে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।তার কেনো জানি আজ ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছা করছে।এই কাঁদার সংগে মিশে আছে খুশি আর বেদনা।একদিকে সে আজ তার ভালোবাসার মানুষ টিকে সারাজীবনের জন্য আপন করে পেলো আর অন্যদিকে তার বাবা মাকে ছেড়ে অন্য জনের ঘরে যাচ্ছে।
তানিয়া এবার নিজের চোখের পানি মুছে তানিশার সামনে এলো।আর বললো,বোন,চুপ কর এখন।তোর কান্না করা দেখে বাবা মা আরো বেশি ভেংগে পড়ছেন।প্লিজ তুই চুপ কর।
তানিশা সেই কথা শুনে এবার তানিয়ার গলা ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। আর বললো, আপু বাবা মাকে এখন কে দেখবে?তাদের খোঁজখবর কে নেবে?
তানিয়া তখন বললো, আরে বোকা!আমি আছি না?আমি আর তোর দুলাভাই তো এখন মাঝেমধ্যে এসেই বাবা মাকে দেখে যাবো।তুই বাবা মাকে নিয়ে অযথা এসব বাড়তি চিন্তা করিস না।আজ থেকে মন দিয়ে নিজের সংসার করবি,শশুড়ের খেতমত করবি।আর তোর নোমানকে দেখে রাখবি।সবকিছু সামলিয়ে আবার চেম্বারেও বসতে হবে। তোর কাঁধে কিন্তু এখন অনেক দায়িত্ব।
তাছাড়া তুই কি একবারে যাচ্ছিস নাকি?মাঝেমধ্যে তো তুইও আসবি।এই বলে তানিয়া তানিশাকে শান্ত্বনা দিতে লাগলো।
তানিশা তার বোনের কথা শুনে নিজেকে শক্ত করে নিলো।তবুও ভিতর থেকে তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।
এবার তায়েব চৌধুরী নিজে এলো তানিশার কাছে আর বললো,মা তানিশা,এবার কান্নাকাটি থামাও।আর বাবা মাকে হাসিমুখে বিদায় জানাও।আর নোমান!যা শশুড় শাশুড়ী কে সালাম করে আয়।যেতে হবে এখন আমাদের।
নোমান সেই কথা শুনে তানিশাকে সাথে করে নিয়ে তহিদুল সাহেব আর শিউলি বেগমের কাছে চলে গেলো।তারপর তার শশুড় শাশুড়ী কে সালাম করলো।তানিশার বাবা সাথে সাথে নোমানকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।তারপর তানিশার হাত নোমানের হাতে দিয়ে বললো,বাবা আমাদের মেয়েটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম।ওর খেয়াল রেখো বাবা।দুইজনের মধ্যে যেনো কখনোই অশান্তির সৃষ্টি না হয়।সুখে শান্তিতে ঘর করিও বাবা।
নোমান সেই কথা শুনে বললো, আংকেল আপনারা এতো চিন্তা করছেন কেনো?ও ভালোই থাকবে আমাদের বাড়িতে।আপনারা শুধু দোয়া করিয়েন।
তানিয়া তখন বললো,ভাই নোমান,তানিশার বাবা মানে তোমার বাবা।সেজন্য আজ থেকে আংকেল না বলে তুমিও বাবা বলেই ডাকবে।বুঝেছো?
–জ্বি আপু।
তখন তায়েব চৌধুরী বললো,হয়েছে তোমাদের বিদায় নেওয়া?এখন চলো সবাই।এই বলে তায়েব চৌধুরী তহিদুল সাহেব কে বললো, তাহলে আসছি বেয়াই আর তানিশা কে নিয়ে চিন্তা করার কিছুই নাই।আমাদের বাসায় ও অনেক ভালো থাকবে।এই বলে তিনি নোমান আর তানিশার হাত ধরে বেড়িয়ে গেলেন।আর সোজা গাড়িতে গিয়ে বসলেন।
আমান আর তার বাবা সামনের সীটে বসলো,আর নোমান,তানিশাকে পিছনের সীটে বসতে বললো।তানিশাকে নোমান জানালার কাছে বসতে বললো।কারণ যে গরম পড়েছে জানালার কাছে বসলে তানিশা একটু বাতাস পাবে।
গাড়িতে বসে নোমান একটিবারের জন্য তানিশার হাত ছাড়লো না।সে তানিশাকে আগলে রাখার চেষ্টা করলো। কিন্তু তবুও তানিশার মন কিছুতেই ভালো হলো না।সে এখনো কাঁদছে।আর নোমান তাকে সেই থেকে শান্ত্বনা দিয়েই যাচ্ছে।তানিশা এবার চুপ হলো।তবে কেমন যেনো এক অচেনা ভয় তাকে পেয়ে বসলো। প্রিয় মানুষ কে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়েও তার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।সে একমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
তানিশাকে চুপচাপ থাকা দেখে নোমান বললো,এখনো কি খারাপ লাগছে তোমার?
তানিশা মাথা নাড়িয়ে বললো, না।
নোমান তখন তানিশার মাথাটি তার ঘাড়ে রেখে বললো,কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকো ভালো লাগবে।
কিন্তু তানিশা তার মাথাটা সরিয়ে নিয়ে বললো,কি করছেন?সামনের সীটে বাবা আর আমান ভাইয়া আছে না?
–তো কি হইছে?
–না লাগবে না শোয়া।
নোমান তখন জোর করেই আবার তানিশার মাথাটা তার ঘাড়ে রেখে বললো,কোনো কথা না বলে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে থাকো।
তানিশা সেজন্য এবার আর কিছু বললো না।কিন্তু সে চোখ বন্ধ করতেই ঘুমিয়ে পড়লো।নোমান তখন তার হাত দিয়ে তানিশাকে ভালো করে ধরে রাখলো,যাতে গাড়ির ঝাঁকুনিতে তার ঘুম নষ্ট না হয়।
তানিশা আরামে ঘুমিয়ে আছে।তার নিঃশ্বাসের শব্দ নোমানের ঘাড়ে এসে যেনো আছাড় খাচ্ছে।গাড়ির ভিতর ডিম লাইট জ্বলছে।তবুও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তানিশার মুখ টি। আর নোমান সেই আলোতেই প্রাণভরে দেখছে তার নিদ্রাচ্ছন্ন প্রেয়সী বধূকে।ঘুমন্ত অবস্থায় তানিশাকে কত মায়াবতী লাগছে তা শুধু সেই জানে।নোমান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো তানিশার দিকে।প্রচন্ড গরম পড়েছে আজ।গরমে তানিশার নাগের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমিয়েছে।নোমান তখন তার অন্য আরেকটা হাত দিয়ে ঘামগুলো মুছিয়ে দিলো।কিন্ত তানিশা সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো।এদিকে নোমানও তাকিয়ে আছে।দুইজন এই প্রথমবার এতো কাছে থেকে দুইজন কে দেখছে।কারন নোমানের নাক আর তানিশার নাকের মাঝে মনে হয় দুই তিন ইঞ্চির মতো ফাঁকা।হঠাৎ গাড়ির একটা ঝাঁকুনিতে নোমানের নাকের সাথে তানিশার নাক ছুঁয়ে যেতেই তানিশা ইসঃ বলে সরে গেলো।কারন নোমানের চশমা দিয়ে তানিশার কপালে আঁচড় লেগেছে।
নোমান তখন বললো,সরি,সরি।এই বলে সে তার চশমাটা খুলে ফেললো।
কিন্তু তানিশা তখন মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো, ইটস ওকে।তারপর সে নোমানের ঘাড় থেকে মাথাটা সরিয়ে জানালা দিয়ে আবার বাহিরে তাকিয়ে রইলো। সে জানালা দিয়ে অন্ধকার শহর টাকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।আর মনে মনে ভাবছে মন দিয়ে কাউকে ভালোবাসলে সে মনে হয় এভাবেই ফিরে আসে।সে তো নোমানকে হারিয়েই ফেলেছিলো,সেই হারানো ভালোবাসাকে এভাবে সে সারাজীবনের জন্য পেয়ে যাবে সত্যি ভাবতে পারছে না।
হঠাৎ নোমান তানিশাকে জড়িয়ে ধরায় সে একদম চমকে উঠলো।
নোমান তখন ফিসফিস করে বললো, এভাবে কি দেখছো বাহিরে?আমার দিকে তাকাও একটু।
তানিশা সেই কথা শুনে নোমানের মুখ হলো।কিন্তু বেশিক্ষণ তাকাতে পারলো না নোমানের দিকে।কারন নোমান কেমন যেনো এক আবেদন ময় ভংগীতে দেখছে তাকে।নোমান তখন বললো কি হলো?তাকাও?
তানিশা সেই কথা শুনে নোমানের মুখ চেপে ধরে বললো,চুপ করুন না।ভাইয়া শুনতে পাবে তো?
–পাবে না শুনতে। ভাইয়ার কানে ইয়ার ফোন লাগানো আছে।
–কিন্তু বাবার কানে তো নেই?বাবা তো শুনতে পাবে।
নোমান তখন তানিশাকে ভালো করে জড়িয়ে ধরে বললো, বাবার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তো যে জেগে জেগে ছেলে আর ছেলের বউ এর কথা শুনবে? ভালো করে তাকিয়ে দেখো বাবাও ঘুমাইছে।
তানিশা তখন বললো, তাহলে তো এখন আরো বেশি চুপচাপ থাকতে হবে।তা না হলে বাবা কিন্তু উঠে যাবে।
নোমান তখন বললো ওকে,মুখ বন্ধ রাখলাম,তবে হাত চলবে কিন্তু?এই বলে নোমান তানিশাকে স্পর্শ করতে লাগলো।কিন্তু তানিশা এতে ভীষণ আন ইজি ফিল করলো।সে তখন বললো, প্লিজ!থামেন এখন।এই বলে সে আবার সরিয়ে দিলো নোমানকে।
নোমান তখন বললো, ওকে।জাস্ট বাসায় যেতে দাও শুধু।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো, কি করবেন বাসায় গেলে?
–সেটা গেলেই টের পাবে।নিজের বাড়ি বলে কথা।এই বলে নোমান আবার তার চশমা টা চোখে দিয়ে নিলো।
তানিশা নোমানের কথা শুনে বললো,এই যে মিঃ ওটা শুধু আপনার বাড়ি না,আজ থেকে কিন্তু আমারও বাড়ি ওটা।
–ও তাই?তোমারও বাড়ি?
–হুম।আমারও বাড়ি।
হঠাৎ মোবাইলের রিংটোনে তায়েব চৌধুরীর ঘুম ভেঙ্গে গেলো।তিনি একদম তাড়াহুড়ো করে মোবাইল টা পকেট থেকে বের করলেন।
শিরিন ফোন দিয়েছে।কারণ তার ভীষণ টেনশন হচ্ছে হঠাৎ তার শশুড় এভাবে কই গেলো?রাত হয়ে গেছে তবুও তিনি কেনো ফিরছেন না বাসায়?
তায়েব চৌধুরী শিরিন কে কল করা দেখে আমান কে ডাকতে লাগলো।আর বললো,শিরিন দেখি কল দিচ্ছে আমাকে।
আমান তখন বললো,রিসিভ করার দরকার নাই বাবা।বাসায় তো যাচ্ছিই।তারপর এমনি বুঝে যাবে কই গিয়েছিলাম আমরা।
তানিশারা পৌঁছে গেলো বাসায়।সেজন্য গাড়ি থামতেই এক এক করে সবাই নেমে গেলো গাড়ি থেকে।নোমান তানিশার হাত ধরে ধীরে ধীরে তাকে গাড়ি থেকে নামালো।তারপর তাকে নিয়ে বাসার ভিতর প্রবেশ করলো।তায়েব চৌধুরী আর আমান আগেই প্রবেশ করেছে বাসায় সেজন্য দরজা খোলায় ছিলো।
তানিশা আর নোমানকে বিয়ের সাজে দেখে শিরিন একদম তাজ্জব লেগে গেলো।সে মনে হয় আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।তার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে নোমান আর তানিশার বিয়ে হয়ে গেছে।এবার শিরিন ভালো সাজার নাটক করতে লাগলো।সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, বাবা আমি কি আপনাদের কাছে এতো টাই পর যে আমাকে না জানিয়ে আপনারা একা একা চুরি করে বিয়ে দিলেন নোমান তানিশার?
তায়েব চৌধুরী তখন বললো, এখানে পর আপন টা বড় কথা নয় মা,কথা হলো তুমি শফিকের মেয়ে।তোমাকে জানালে তুমি ঠিক শফিক কে বলে দিতে।আর এজন্য জিসান, শফিক এসে আবার ঝামেলা বাঁধাতো।এজন্য বলা হয় নি তোমাকে।তার জন্য দুঃখিত আমি।এখন যাও তানিশাকে নোমানের ঘরে নিয়ে যাও।
শিরিন তানিশাকে এ বাড়িতে বউ এর সাজে দেখে রাগে খিটমিট করতে লাগলো।তার কিছুতেই তানিশাকে সহ্য হচ্ছে না।সে ভাবতেই পারছে না তানিশা সত্যি সত্যি নোমানের বউ হয়ে এসেছে।সে তার বোনের জন্য চিন্তা করতে লাগলো।না জানি তার বোনটা শুনে কি করবে এখন?
তায়েব চৌধুরী তখন বললো, কি হলো শিরিন?যাও তানিশাকে ঘরে নিয়ে যাও।তবে তার আগে একটা কথা ভালো করো শোনো।তানিশাও মনোযোগ দিয়ে শোনো।এ বাড়িতে কিন্তু তোমাদের কোনো শাশুড়ি নাই।যদিও তোমাদের ফুফু শাশুড়ী আছে,তবে সে এখন প্রায় সময়ই মেয়ের সাথে থাকে।সেজন্য দুইজন বউ মিলে মিলেমিশে থাকবে।আমি যেনো কখনোই শুনি না তোমরা নিজেদের মধ্যে কোনো অশান্তির সৃষ্টি করেছো।যেহেতু তোমরা দুইজনই যথেষ্ট শিক্ষিত, সেজন্য তোমাদের তো কিছু বিস্তারিত ভাবে বলতে হবে না।আদব কায়দা,শিষ্টাচার সব তোমাদের জানাই আছে।
শিরিন মুখ চোখ অন্ধকার করে বললো,জ্বি বাবা।এদিকে তানিশা তার শশুড়কে সালাম করে বললো,মামা দোয়া করবেন আমাকে।
তায়েব চৌধুরী তখন হাসতে হাসতে বললো,আবার মামা?ওসব মামা টামা এখন ক্যান্সেল।এখন থেকে বাবা বলে ডাকবি।আমার নিজের কোনো মেয়ে নাই।তোরা দুইজনই হলি আমার মেয়ে।সেজন্য আমিও চাই তোরা নিজেরা আপন বোনের মতো মিলেমিশে থাকবি।যাও শিরিন, নিয়ে যাও ওকে ঘরে।
শিরিন তায়েব চৌধুরীর কথা শুনে তানিশাকে নোমানের ঘরে নিয়ে গেলো।
এদিকে নোমান তার বাবার হাত ধরে বললো,বাবা আমার উপর কি এখনো তোমার রাগ আছে?এখনো কি আমাকে ক্ষমা করো নি?
তায়েব চৌধুরী তখন নোমানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,না করি নি।আর করবোও না কখনো।শুধু ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা করি বলে দুইজনকে মিলিয়ে দিলাম।তা না হলে জীবনেও তোর মুখ দেখতাম না আমি।
নোমান তখন বললো, বাবা এতো কেনো অভিমান আমার উপর।প্লিজ মাফ করে দাও আমাকে।আমার সাথে আগের মতো আবার কথা বলো,আর আগের মতো ভালোবাসো।
তায়েব চৌধুরী তখন বললো, যা রুমে যা এখন।আমি ঘুমাবো এখন।এই বলে তায়েব চৌধুরী চলে গেলেন।
নোমানকে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে আমান বললো,মন খারাপ করিস না।ঘরে চলে যা।আর বেস্ট অফ লাক ভাই।
নোমান সেই কথা শুনে তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমার মতো ভাই যেনো সবার ঘরে ঘরে হয়।তুমি আমার সব স্বপ্ন পূরন করেছো ভাই।
আমান তখন বললো,এসব কান্নাকাটি বাদ দিয়ে যা তো এখন।ঘরে বউ বসে আছে।এই বলে আমান নিজেও তার রুমে চলে গেলো।
এদিকে শিরিন তানিশাকে নোমানের ঘরে নিয়ে গেছে।তবে সে একটা কথাও বলে নি তানিশার সাথে।তানিশা তখন বললো, ভাবি আপনি কি আমার উপর রাগান্বিত? প্লিজ রাগ করে থাকবেন না।
শিরিন তখন বললো, না,রাগ করবো কেনো?
তানিশা তখন বললো, নোমান যে কাজ করেছে তাতে রাগ হওয়ারই কথা।শুধু শুধু শিলাকে কষ্ট পেতে হলো।
শিরিন তখন বললো,তানিশা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না আমি।
এই বলে শিরিন রুম থেকে বের হয়ে যেতে ধরলো।কিন্তু নোমানের সাথে তার দরজায় দেখা হলো।
নোমান তখন শিরিনের হাত ধরে বললো,ভাবি,যা হবার হয়ে গেছে।প্লিজ ভাবি আমার উপর আর রাগ করে থেকো না।প্লিজ।তোমার অবদান কিন্তু আমি ভুলতে পারবো না কখনো।
শিরিন তখন নোমানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, আমার অবদানের কেমন প্রতিদান দিলি তা তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি।আর এসব ন্যাকামি কথাবার্তা না বলে নিজের নতুন জীবন উপভোগ কর।বেস্ট অফ লাক।এই বলে শিরিন চলে গেলো।
#চলবে,
#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_৩২
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
ইসস,কি যে গরম!তার উপর আবার এই শেরওয়ানি পড়ে আছি।এগুলো খুলতে হবে আগে।এই বলে নোমান তানিশার সামনেই শেরওয়ানি টা খুলে ফেললো।তারপর একটা তোয়ালে,টি শার্ট আর টাউজার নিলো হাতে।নোমানের পরনে এখন শুধু সাদা একটা পাজামা আছে।ফর্সা শরীরে সাদা পাজামা টা বেশ মানিয়েছে নোমানকে।তবে নোমান যে এতো চিকন তানিশা এই প্রথমবার খেয়াল করলো।শরীরে পোশাক থাকলে অবশ্য এতো চিকন বোঝা যায় না।বেশ তরতাজায় মনে হয়। নোমান কে এরকম অবস্থায় দেখে তানিশার বেশ হাসি পেলো।অন্যদিকে লজ্জাও লাগলো।সেজন্য তানিশা তখন অন্য মুখ হলো আর ভাবতে লাগলো এই ছেলেটার দেখি একটুও লজ্জা শরম নাই।কিভাবে নতুন বউ এর সামনে এই অবস্থায় আছে।
এদিকে নোমান তানিশার কাছে এগিয়ে এসে বললো,তোমার গরম লাগছে না?এতো ভারী লেহেঙ্গা এখনো গায়ে জড়িয়ে আছো?খুলে ফেলো তাড়াতাড়ি। তারপর ফ্রেশ হয়ে আরামদায়ক একটা ড্রেস পড়ে নাও।
তানিশা সেই কথা শুনে তার শান্ত কন্ঠে বললো, আগে আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।তারপর আমি নিচ্ছি।
নোমান তখন বললো এখানে আগে পরের কি আছে?আমরা আমরাই তো?চলো একসাথে ফ্রেশ হয়ে নেই।এই বলে হেঁচকা টানে তানিশাকে বেড থেকে ওঠালো নোমান।তানিশা একদম সোজা নোমানের বুকে এসে পড়লো।
নোমান তা দেখে বললো,ওঠালাম ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য কিন্তু তুমি তো দেখি এখনি গায়ে পড়ে আদর চাইছো?
–এই কি বলছেন এসব?আপনিই তো এভাবে টান দিলেন।আমি ইচ্ছা করে কিন্তু গায়ে পড়ি নি।এই বলে তানিশা দূরে সরে গেলো।
নোমান তখন আবার তানিশাকে তার কাছে টেনে নিয়ে বললো,আমি তো এটাই চাই,যে আমার বউ যখন তখন সময়ে অসময়ে এভাবে আমার গায়ে পড়ুক।আর আমি তার ভালোবাসার ঘ্রাণ নেওয়ার সুযোগ পাই।এই বলে নোমান তানিশার দিকে আবেদনময় লুকে তাকালো।তারপর ধীরে ধীরে তানিশার গলায় তার মুখ ডুবিয়ে দিলো।তানিশা নিজেও নোমানের স্পর্শ পেয়ে ভীষণ ভাবে তলিয়ে যাচ্ছিলো,সে তখন তার চোখ দুটি বুজিয়ে নিলো।কিন্তু নোমান তখন তানিশার গলার মালাটি খুলে দিয়ে বললো,
এতো তাড়াতাড়ি দূর্বল হয়ে যাচ্ছেন ম্যাডাম?একটু তো ওয়েট করুন।
–আপনি এমন কেনো বলুন তো?আপনিই তো?এই বলে তানিশা নোমানের দিকে রাগান্বিত ভাবে তাকালো।নোমান তখন তানিশার ঠোঁটে হাত দিয়ে বললো,কথা বলতে গিয়ে থেমে যাও কেনো?
আমি কি?
তানিশা তখন সরে গিয়ে বললো,কিছু না।এই বলে সে নিজেই তার কানের দুল খুলতে লাগলো।কিন্তু যখন দেখলো এভাবে হচ্ছে না তখন সে আয়নার সামনে গিয়ে দুলগুলো খুলতে লাগলো।কানের দুল খোলা শেষ হলে মাথার টিকলি টাও খুলে ফেললো।তারপর চুলের খোপা টা খুলতে লাগলো।কিন্তু নোমান হঠাৎ পিছন দিক দিয়ে আবার জড়িয়ে ধরলো তানিশাকে আর তার ঘাড়ে একটা কিস করে বললো, অযথা সময় নষ্ট করছেন ম্যাডাম।দিন আমি খুলে দেই।
তানিশা আবার যেনো নোমানের ছোঁয়াই শিওরে উঠলো।সে ভীষণ নার্ভাস ফিল করছিলো,কিন্তু নোমান এদিকে তানিশার চুলে গোজানো ক্লিপ গুলো এক এক করে খুলতে লাগলো আর ফাঁকে ফাঁকে আয়নার দিকে তাকালো তানিশার দিকে।হঠাৎ তানিশারও চোখ গেলো গ্লাসের দিকে।সে নোমানকে এভাবে তাকানো দেখে বললো,
আপনি কি আমার খোঁপা খুলে দিচ্ছেন না শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন?
–দুইটাই করছি।তোমার কোনো প্রবলেম?
–হ্যাঁ প্রবলেম হচ্ছে আমার?
–কি প্রবলেম?
–আমার অস্বস্তি লাগছে ভীষণ।
নোমান তখন তানিশার খোপা খুলে চুল গুলো বুকের উপর এলিয়ে দিয়ে বললো ও তাই?তাহলে কি ভাবে স্বস্তি ফিরবে তোমার?
–আপনি দূরে দূরে থাকলে।
নোমান সেই কথা শুনে তানিশাকে জড়িয়ে ধরে বললো এটা আর সম্ভব না ম্যাডাম।এখন শুধু কাছাকাছিই পাবেন আমায়।
হঠাৎ শিরিন দরজায় দাঁড়িয়ে হালকা করে কাশি দিলো।নোমান সাথে সাথে তানিশাকে ছেড়ে দিলো।আর বললো,ভাবি তুমি?
–হ্যাঁ আমি।এই বলে শিরিন এক গ্লাস দুধ নিয়ে রুমের ভিতর প্রবেশ করলো।আর নোমানের বেডের পাশে রাখা টেবিলটায় রেখে দিলো।
তানিশা একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।সে আর শিরিনের দিকে তাকাতে পারলো না।সে তখন মেঝেতে পড়ে থাকা ওড়না টা তুলে নিয়ে একটু দূরে সরে গেলো।
নোমান নিজেও ভীষণ লজ্জা পাইছে।বাট এমন ভাব নিয়ে থাকলো যে কিছুই হয় নি তার।
সে তখন বললো,
ভাবি তুমি আবার কষ্ট করে এতো রাতে দুধ আনতে গেলে কেনো?
শিরিন তখন বললো,হাজার হোক তুমি আমার দেবর তো!ভাবি হিসেবে তোমার প্রতি একটা দায়িত্ব তো আমার আছেই।তাছাড়া দেবর যদি দূর্বল হয় বদনাম তো আমাদেরই হবে তাই না?
নোমান তার ভাবির কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো। ভাবি কি সব বলছে?তার গায়ে যথেষ্ট শক্তি আছে।সে আবার দূর্বল হলো কবে থেকে?
–ওভাবে হা করে কি দেখছো?তাড়াতাড়ি গরম গরম দুধ টা খেয়ে নিও।তা না হলে কিন্তু ঠান্ডা হয়ে যাবে।এই বলে শিরিন চলে গেলো।
হঠাৎ শিরিন আবার দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। আর নোমানের উদ্দেশ্যে বললো,আগে সিঙ্গেল ছিলে,সারাক্ষণ দরজা খুলে রাখাতে কোনো প্রবলেম ছিলো না।কিন্তু এখন ঘরে বউ আছে।আমার মনে হয় দরজা টা সবসময় লাগিয়ে রাখলেই বেশি ভালো হয়।এই বলে শিরিন নিজেই জোরে করে লাগিয়ে দিলো দরজাটা।
মনে হলো সে দরজা লাগালো না,তানিশা আর নোমানের উপর করা রাগ দরজায় ঝাড়লো।এই রকম শব্দ হলো।
শিরিন চলে যাওয়ার পর পর তানিশা নোমানের কাছে এসে বললো, জানি না আপনার জন্য আর কতবার আমাকে এমন লজ্জার মধ্যে পড়তে হবে?নেক্সট টাইম একটু ভেবে চিনতে পাগলামি করবেন।এই বলে সে তার লাগেজ থেকে ড্রেস বের করে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো।।
এদিকে নোমান মনে মনে ভাবলো সে কিসের পাগলামি করলো?জাস্ট তার জুয়েলারি গুলো খুলছে আর মাথার খোপা খুলতে হেল্প করছে।পাগলামি তো এখনো শুরুই করে নি।এই বলে নোমান গ্লাসের দুধ টুকু এক ঢোকেই শেষ করে ফেললো।
তানিশা তাড়াতাড়ি করতে যেয়ে তোয়ালে নিয়ে যাওয়ার কথাই ভুলে গেলো। সে এখন শাওয়ার শেষ করে কিভাবে তার শরীর মুছবে সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।তানিশা এখন তার শাওয়ার নিয়ে ব্যস্ত।এতোক্ষণে একটু স্বস্তি মিললো তার।সেই থেকে মোটা লেহেঙ্গা টা গায়ে জড়িয়ে আছে।আহাঃ কি শান্তি এখন।
কিন্তু তানিশা যখন শাওয়ার শেষ করে শরীর মুছতে যাবে সে তোয়ালে খুঁজে পেলো না।এখন সে শরীর মুছবে কিভাবে?সে জন্য তানিশা সাথে সাথে তার জিহবায় কামড় দিয়ে বললো,এতো বড় মিসটেক সে করলো কিভাবে?
তানিশা কোন উপাই না দেখে দরজা একটু ফাঁক করে তার গলাটা বের করে নোমানকে বললো,এই যে শুনছেন?
নোমান বিছানায় শুয়ে মোবাইল দেখছে।সে তানিশাকে ডাকা দেখে ভীষণ অবাক হলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো এমন রোমান্টিক বউ ই তো তার চাই।কি সুন্দর ভাবে তাকে ডাকছে।আহঃ কি সুন্দর একটা রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি হবে এখন।সে আর আমি দুইজন দুইজনার অতি নিকটে। উপরে বৃষ্টির ফোঁটার মতো টিপটিপ করে ঝরনার পানি পড়বে।তারপর একসাথে দুইজন হারিয়ে যাবো প্রেমের অতল সাগরে। না আর ভাবতে পারছি না।এই ভেবে নোমান মোবাইল টা রেখে দৌঁড়ে গেলো ওয়াশরুমের সামনে।
কিন্তু তানিশা নোমানকে কাছে আসা দেখে চিৎকার করে বললো,এতো কাছে আসছেন কেনো?ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন।
নোমান তখন দুষ্টু হাসি হেসে বললো,এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে রোমাঞ্চ কিভাবে হবে বেবি?
তানিশা সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,রোমান্স? আপনি সবসময় এতো নেগেটিভ চিন্তা করেন কেনো?আমি তো তোয়ালে নিতে ভুলে গেছি।সেজন্য ডাকছিলাম।
নোমান একদম অবাক হয়ে গেলো।সে এরকম টা কখনোই আশা করে নি।তানিশা তাকে তোয়ালে নেওয়ার জন্য ডাকছিলো।না এটা হতে পারে না।আনরোমান্টিক বউ কোথাকার!এই বলে নোমান সেখান থেকে চলে গেলো আর আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
তানিশা যখন দেখলো এই ছেলেকে দিয়ে তার কিছুতেই এ কাজ হবে না তখন সে ভিজে শরীরেই ড্রেস পড়ে নিলো।আর খুলে রাখা লেহেঙ্গাটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো।
আর নোমানের কাছে এসে বললো ছিঃ আপনার থেকে এরকম টা আশা করি নি কখনো।এতোক্ষণ ভেজা শরীরে থেকে আমার বার বার হাঁচি পড়ছে। এই বলে সে সাথে সাথে হাঁচি দিতে লাগলো।
নোমান তখন সাথে সাথে তানিশার কাছে চলে গেলো আর তার তোয়ালে টা দিয়ে নিজেই তানিশার মুখ আর শরীর মুছতে লাগলো।তানিশা তোয়ালে টা নিতে ধরলে নোমান তার হাত টা খপ করে ধরে ফেললো।আর এবার তানিশার চুলগুলো মুছতে লাগলো।কারণ ভেজা চুল দিয়ে তানিশার টপটপ করে পানি পড়ছে।একদম কাক ভেজার মতো লাগছে তাকে।তানিশা আবার একটা হাঁচি দিলো।নোমান তখন তার হেয়ার ড্রায়ার টা এনে তানিশার চুল শুকাতে সাহায্য করলো।
তানিশা তা দেখে হেয়ার ড্রায়ার টা নিজের হাতে নিলো আর বললো,এখন এতো দয়া দেখাতে হবে না।যখন দরকার ছিলো তখন তো সাহায্য করার বদলে মুখ ভেংচিয়ে চলে গেলেন।
–সরি।বুঝতে পারি নি এটুকুতেই তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।
তানিশা তখন বললো,যান এখন ওয়াশরুমে।আর তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিন।আমি নিজেই শুকিয়ে নিচ্ছি চুল।রাত কিন্তু অনেক হয়েছে।ঘুমাতে হবে এখন।আমি কিন্তু বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকি না।
নোমান সেই কথা শুনে তানিশার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,এখন রাত জাগার অভ্যাস করতে হবে। আর আজ ঘুমাতে দিলে তো ঘুমাবে তুমি।আজ কোনো ঘুম চলবে না। রেডি হয়ে থাকো।আসতেছি।এই বলে নোমান নিজেও ওয়াশরুমে চলে গেলো।
তানিশা নোমানের কথা শুনে একদম হা করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।সে ভাবতেই পারছে না এতো দুষ্টু দুষ্টু কথাবার্তা কিভাবে বলে নোমান?এতো ফাজিল একটা ছেলে সে! ভাবতেই তানিশার হাসি চলে এলো মুখে।কত ভদ্র ছিলো ছেলেটা!কিন্তু একদিনেই যেনো তানিশার চোখ খুলে গেলো।নোমান যে অতিরিক্ত মাত্রার রোমান্টিক ছেলে তার আর বুঝতে দেরি রইলো না।
এবার তানিশা তার চুলগুলো ভালো করে শুকিয়ে নিলো।তারপর সুতি ব্লাক কালারের একটা প্রিন্টের থ্রী পিচ পড়ে নিলো।থ্রী পিচ টির ভিতরে পিংক কালারের বড় বড় ফুল আঁকানো আছে।তানিশা এবার আয়নার সামনে চলে গেলো।তারপর হালকা করে একটু সাজগোছ করলো।তার ডেইলি ব্যবহার করা ক্রিম টা মুখে লাগিয়ে নিয়ে তারপর একটু পাউডার ও দিলো।এবার চোখের কোটায় একটু কাজল দিয়ে পিংক কালারের লিপিস্টিক টা হালকা করে দিয়ে নিলো ঠোঁটে।তারপর সে আয়নার দিকে তাকিয়ে একা একাই হাসতে লাগলো।আজ কেনো জানি মনে হচ্ছে তার মতো সুখী আর কেউ নয়।মনে হচ্ছে সে স্বর্গে বসবাস করছে।
এরপর তানিশা বিছানায় গিয়ে বসলো।কিছুক্ষন ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকের নিউজ ফিড স্ক্রল করতে লাগলো।
হঠাৎ তানিশার মনে হলো বাবা মার সাথে একটু কথা বলা যাক।সেজন্য সে তার বাবাকে ফোন দিলো।আর কথা বলতে লাগলো।তানিশা কথা বলতে বলতে বেলকুনির দিকে চলে গেলো।আর দূরের বিল্ডিং গুলো দেখতে লাগলো।
চারিদিকে অন্ধকার হলেও কিছু কিছু বিল্ডিং এর বেলকুনিতে আলো জ্বলছিলো।যা দেখতে ভীষণ ভালো লাগছিলো তার।আর মাঝে মাঝে দমকা হাওয়ার ঝাটকা যখন তার শরীর স্পর্শ করছিলো সে এক অজানা সুখে ভাসতে লাগলো।
হঠাৎ বেলকুনিতে নোমানও চলে আসলো।সে এসেই তানিশাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছো?
তানিশা তখন তার মাকে বললো,আচ্ছা মা রাখছি।ভালো থেকো।এই বলে সে কল কেটে দিলো।আর নোমানকে ধমক দিয়ে বললো,এই আপনি দেখি আসলেই কানা?দেখতে পাচ্ছেন না কথা বলছি?
–না দেখি নি।এই বলে সে তার নাক ঘষতে লাগলো তানিশার ঘাড়ে।তানিশা সেজন্য নোমানের পাশ হলো।
হঠাৎ নোমান তানিশাকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিয়ে বললো,যে ভালোবাসার জন্য এতোদিন ছটফট করেছি আজ তা আদায় করে নিতে চাই।তানিশা নিজেও ভীষণ অস্থির হয়ে আছে।কারণ সেও নিজের সবটুকু ভালোবাসা আজ উড়াড় করে দিতে চায়।এতোদিন নোমানকে তার ভালোবাসার কথা না বলে যে কষ্ট দিয়েছে আজ একদিনেই তার হাজারগুন ভালোবাসা ফিরে দিতে চায় সে।নোমান তানিশাকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।
রুমে ডিম লাইট জ্বলছে।তবে বেড সুইচ টা অন করা।
হালকা লাল আলোর আভায় রুমটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।।তানিশা নোমানকে বিছানায় শুয়ে দিলো।তারপর মিউজিক টা অন করলো।সুন্দর একটা হিন্দি গান বাজতে লাগলো।যা শুনে দুইজনের শরীরে আরো বেশি শিহরণ জেগে উঠলো।
||
||
Meri Jaan Meri Jaan Meri Jaan
Meri Jaan Meri Jaan Meri Jaan
Aayi Hai Jo Raat Nasheeli
Iski Har Ik Baat Nasheeli
Tu Bhi Aa Karle Nasha
Dono Ki Mulaqat Nasheeli
Nashe Ki Yeh Barsaat Nasheeli
Tu Bhi Aa Karle Nasha
Meri Jaan Meri Jaan Meri Jaan
Meri Jaan Meri Jaan Meri Jaan
মুহুর্তের মধ্যে অন্যরকম একটা রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি হলো রুমের ভিতর।নোমান আর নিজেকে সংবরন করতে পারলো না। সেজন্য সে নিজেও শুয়ে পড়লো তানিশার বুকের উপর।তারপর চোখের চশমা টা খুলে রেখে তানিশার হাতের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে নিজের হাতের আংগুল ঘোরাতে লাগলো।কেউ কোনো কথা বলছে না,শুধু দুইজনের তপ্ত নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে আর ভালোবাসার ক্ষুধায় জর্জরিত দুইজোড়া চোখ পলকহীন ভাবে দুইজনার দিকে তাকিয়ে আছে।
নোমান এবার তানিশার গলায় তার মুখ ডুবিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বললো, নার্ভাস লাগছে?
তানিশা নোমানের এমন আবেদনঘন কন্ঠ শুনে আরো বেশি দূর্বল হয়ে গেলো।সে তখন তার শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলো হুম।
নোমান সেই কথা শুনে তানিশার ঠোঁট দুটি ছুঁয়ে নেশাগ্রস্ত চোখে তাকিয়ে বললো,তাহলে এখন কি এবার আমার বউকে একটু গভীরতম ভালোবাসার জগতে নিয়ে যেতে পারি?
তানিশা সেই কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেলো। আর সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে তার চোখ বন্ধ করে নিলো।
নোমান তা দেখে তানিশার হাত দুইটি সরিয়ে প্রথমে হাতে একটা কিস করলো।আর তানিশার কপালে ও একটা কিস করলো।তারপর যখন তানিশার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট নিয়ে গেলো ঠিক তখনি তানিশা নোমানকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো।
এদিকে নোমানের ভিতরে কামনার আগুন দাউদাউ করে জ্বলছিলো।সে আর অপেক্ষা করতে পারলো না।সে তখন তানিশাকে এলোপাতাড়ি ভাবে কিস করতে লাগলো।আর তানিশার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্পর্শ করতে লাগলো।অন্যদিকে তানিশা নোমানের ভালোবাসার এমন পাগল করা স্পর্শে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেললো।আর চোখ বন্ধ করে ভালোবাসার উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো।
কিছুক্ষনের মধ্যেই দুই প্রেমিক যুগল ভালোবাসার অতল গহবরে তলিয়ে গেলো।তারা মধুর এক ভালোবাসার জগতে আছে এখন।হাজার বছর তারা এখন সেখানেই থাকতে চায়।সেখান থেকে ফিরে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তাদের।মনের মধ্যে পুষে রাখা দীর্ঘ দিনের ভালোবাসা আজ এভাবেই পূর্নতা পেলো।তারপর দুইজন কখন যে ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে বুঝতেই পারলো না।
নিত্যদিনের মতো আজকেও রাত শেষে ভোর হলো।আর ভোরের আলোয় চারিদিক একদম আলোকিত হলো।তবে আজকের সকালটা একটু বেশিই স্পেশাল মনে হলো নোমান তানিশার কাছে।দুইজনের মুখেই সুখের হাসি।আর লাজুক লাজুক চাহনি। তানিশা একটিবারের জন্য নোমানের দিকে আজ তাকিয়ে থেকে কথা বলতে পারলো না।কারণ তার যে লজ্জা এখনো কাটে নি।এদিকে আবার সকালের নাস্তা করার টাইমও হচ্ছে।তানিশা সেজন্য নোমান কে ডেকে তুললো।কিন্তু নোমান উলটো তানিশাকে জড়িয়ে ধরে আবার শুয়ে পড়লো।
তানিশা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে নোমানের দিকে।আর তার মাথার চুলগুলো বোলাতে বোলাতে মনে মনে কি যেনো ভাবতে লাগলো আর ফিক ফিক করে একা একাই হাসতে লাগলো।নোমান তানিশাকে এভাবে হাসতে দেখে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকিয়ে বললো,
পাগল হয়ে গেলা নাকি?হাসছো কেনো?
তানিশা তখন বললো, হ্যাঁ পাগল পাগলই লাগছে নিজেকে।
–তাই?তাহলে আরেকটু পাগল করে দেই?এই বলে নোমান তানিশাকে আবার তার ভালোবাসার ছোঁয়ায় বন্দি করতে চাইলো।
কিন্তু দরজায় কে যেনো নক দিতে লাগলো।সেজন্য তানিশা তাড়াতাড়ি করে উঠে গেলো দরজার দিকে।আর নোমান আবার শুয়ে পড়লো।
তানিশা দরজা খুলতেই দেখে আমান দাঁড়িয়ে আছে।আমান কে এভাবে দরজার সামনে দেখে তানিশার ভীষণ লজ্জা লাগলো।তবে সে তার লজ্জাকে দূরে ঠেলে বললো,ভাইয়া আপনি?
–হ্যাঁ আমি।নোমান কই?ওকে একটু ডেকে দাও তাড়াতাড়ি।
তানিশা সেই কথা শুনে নোমানকে ডাকতে লাগলো।আর আমানের কথা বললো।
নোমান আমানের কথা শুনে এক লাফে বিছানা থেকে উঠলো আর আমানের কাছে চলে গেলো।
আমান নোমানকে দেখামাত্র বললো,তাড়াতাড়ি একটু ফ্রেশ হয়ে আয়।একটু বাহিরে যেতে হবে।
–বাহিরে?এতো সকালে কোথায় যাবে?
আমান তখন তার ঘড়ি দেখিয়ে বললো ১০ টা বাজে।আর তুই বলছিস সকাল?
নোমান সেই কথা শুনে বললো,ওকে ভাইয়া।আসছি আমি।তুমি জাস্ট দশ মিনিট অপেক্ষা করো।এই বলে নোমান ওয়াশরুমে ঢুকলো।
এদিকে তানিশা অনেক সকালে উঠেই আগে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে।সেজন্য সে মাথায় কাপড় টা ভালো করে টেনে কিচেনের দিকে চলে গেলো।
#চলবে,