ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব-২৮+২৯

0
1323

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_২৮
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

তানিশা খুব মনোযোগ দিয়ে তার ড্রেস চুজ করছে।এদিকে যে এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে সেদিকে ওনার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।সে এখন পর্যন্ত একটা ড্রেস ও পছন্দ করতে পারে নি।শুধু দেখছে আর দেখছে।তানিশা একা নয়,তার সাথে তানিয়া,স্বর্না আর সোহান ও আছে সাথে।সবাই ভীষণ ব্যস্ত কেনাকাটা করতে।নোমান একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে।কারণ তার এসব একঘেয়েমি কাজ মোটেও ভালো লাগে না। সে কখনোই একটা ড্রেস চুজ করতে ঘন্টার পর ঘন্টা লাগায় না। সে জাস্ট শো রুমে যাবে,কালার দেখবে আর সাইজ দেখবে তাতেই তার হয়ে গেলো ড্রেস চুজ করা।

তানিশা প্রথমে ভাবলো শাড়ি দেখবে।একের পর এক শাড়ি দেখার পর তার মনে হলো, না সে লেহেঙ্গা পড়বে।সেজন্য সে শাড়ি রেখে এবার একের পর এক লেহেঙ্গা দেখেই যাচ্ছে।বাট বুঝতে পারছে না কোনটা নিবে সে?এদিকে নোমান তানিশার এমন কান্ড দেখে ভীষণ বিরক্ত হতে লাগলো।কারণ সে একটা ড্রেস চুজ করতে যেভাবে সময় নিচ্ছে না জানি আজ সারারাতেও তার মার্কেট করা শেষ হয় না।

হঠাৎ তানিশার চোখ গেলো নোমানের দিকে।তানিশা ভাবতে লাগলো নোমান এভাবে কেনো দেখছে তাকে?সবার সামনে কিছু জিজ্ঞেস করতেও পারছে না।সেজন্য তানিশা আবার তার ড্রেস চুজ করায় মনোযোগ দিলো।কিন্তু তার মন কেনো জানি বলছে আরেকবার তাকা নোমানের দিকে।যেই ভাবা সেই কাজ।কিন্তু তানিশা তাকাতেই দেখে নোমান এখনো তার দিকেই দেখছে।তানিশা বুঝতে পারছে না নোমান সবার সামনে এরকম ভাবে তাকে দেখছে কেনো?সেজন্য তানিশা নোমান কে মেসেজ দিলো,

–আপনি আমার দিকে বার বার এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো?আপনার জন্য আমি ড্রেস চুজ করতে পারছি না।

নোমান সাথে সাথে মেসেজের রিপ্লাই দিলো,তা ম্যাডাম এক ঘন্টা ধরে শুধু ড্রেসই দেখছেন,এখন পর্যন্ত তো একটাও পছন্দ করলেন না।এভাবে চলতে থাকলে তো ড্রেস দেখতে দেখতে বিয়ের দিন এসে যাবে।তখন এ ড্রেস দিয়ে কি করবেন?

তানিশা তখন রিপ্লাই দিলো তা কি করবো এখন?আমি তো বুঝতে পারছি না কোনটা নিবো?আপনিও তো চয়েজ করে দিচ্ছেন না।

নোমান তখন বললো, ডাক্তার ম্যাডাম, আপনি হলেন আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী রমনি।একদম অপ্সরাদের মতো লাগে আপনাকে।সেজন্য আপনি যে ড্রেস পড়বেন সেটাই ভালো লাগবে।আপনার হাতে এখন যেটা আছে সেটাই নিয়ে নিন।দারুন মানাবে কিন্তু।

–পার্পল কালার?বিয়েতে আমি পার্পল কালার পড়বো?

নোমান তখন রিপ্লাই দিলো,ড্রেস টা নিয়ে একবার ট্রায়াল রুমে আসুন।যদি খারাপ লাগে তাহলে নিবেন না।

তানিশা সেই কথা শুনে পার্পল কালারের লেহেঙ্গা টা নিয়ে উঠতেই তানিয়া বললো,এটা চয়েজ হইছে?

তানিশা মাথা নাড়িয়ে বললো হুম।

তানিয়া সেই কথা শুনে বললো,সেই এতোক্ষণ ধরে এই পার্পল কালার টা চয়েজ করলি?এটা একদম মানাবে না।এই বলে তানিয়া সোনালি কালারের একটা ড্রেস দেখিয়ে বললো, দেখ তো এটা কেমন?হলুদের অনুষ্ঠানে পড়লে খুব ভালো লাগবে।

তানিশা কি উত্তর দেবে ভাবতেই
নোমান মেসেজ দিয়ে বললো,নিয়ে নাও।এটাও সুন্দর আছে।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো,ঠিক আছে আপু।
–তাহলে এটা প্যাক করতে বলি?
–হুম।

কিন্তু তানিশার মন কেনো জানি খচখচ করতে লাগলো।নোমান পার্পল কালারটার কথা বললো আর সে সোনালী কালারের টা নিলো।সেজন্য সে তানিয়া কে বললো,
আপু এটাও নেই।কালার টা কিন্তু খারাপ না?

তানিয়া তখন বললো,কি তখন থেকে সেই এক কালারের পিছনে পড়ে আছিস?এই দেখ? খয়েরী কালারের লেহেঙ্গার দিকে দেখ।বিয়ের দিন পড়লে কিন্তু মন্দ হবে না।

তানিশা এবারও নিজে কিছু বললো না।
নোমান তখন এগিয়ে আসলো,আর বললো,তানিশা হয়েছে কি তোমার ড্রেস চুজ করা? না হয় নি এখনো?দেখি কি কি নিয়েছো?
তানিশা তখন সোনালী আর খয়েরী কালারের ড্রেস টা দেখিয়ে দিলো।
নোমান তা দেখে বললো,দারুন হয়েছে।এর সাথে কিন্তু এই পার্পল কালারের টাও নিতে পারো।তাহলে হলুদের দিন সোনালি টা,বিয়ের দিন এই খয়েরী টা আর বৌভাতের দিন এই পার্পল কালারের টা পড়তে পারবে।

তানিয়া তা দেখে বললো,নোমান, তোমার আর তানিশার পছন্দ দেখি একই।

তানিয়ার কথা শুনে নোমান বললো, ও তাই?তানিশাও কি এটাই চয়েজ করেছে?

–হ্যাঁ।সেই থেকে তার হাতে এই ড্রেস টাই দেখছি।

নোমান তখন বললো,দুইজনের পছন্দ যখন একটাই তাহলে সেটাই সবার আগে নেওয়া দরকার।এই বলে নোমান তানিশার দিকে তাকালো।তানিশা মনে মনে ভাবলো নোমান তো দেখি বেশ ধূর্ত।একে তো বোকা ভাবছিলাম।ভেবেছিলাম এই ছেলের তেমন একটা আউটনলেজ নাই।

নোমান তানিশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?যাও ড্রেস টা একটু পড়ে দেখো।পড়ে যদি আবার ফিট না হয়?তখন তো আমাকেই দোষারোপ করবে।যেহেতু আমিও চয়েজ করেছি এটা।

তানিয়া সেই কথা শুনে বললো,হ্যাঁ,হ্যাঁ।যেকোনো একটা ড্রেস নিয়ে ট্রায়াল রুমে চলে যা।কারণ তিনটার মাপই এক।
তানিশা আবার সেই পার্পল কালারের ড্রেস টাই নিলো হাতে।তা দেখে তানিয়া হেসে অন্য মুখ হলো সে আর কিছু বললো না।কারন সে বুঝে গেলো পার্পল কালারের লেহেঙ্গা টা তানিশার বেশ পছন্দ হয়েছে।আবার নোমানও পছন্দ করেছে,সেজন্য ওটার প্রতি ঝোঁক টা আরো বেশি বেড়ে গেছে।

হঠাৎ স্বর্না বললো,খালামনি আমিও যাবো তোমার সাথে।কারণ আমিও আমার একটা ড্রেস পড়ে দেখতে চাই।
–ঠিক আছা মামুনি।চলো।এই বলে স্বর্নাও গেলোও তানিশার সাথে।

অন্যদিকে সোহান নোমানকে বললো,নোমান চলো এবার তোমার ড্রেসগুলো কিনি।নোমান তখন বললো হ্যাঁ চলুন দুলাভাই।এই বলে সোহান আর নোমান একসাথে চলে গেলো।

সোহান দোকানদার কে নোমানের সাইজ দেখে শেরওয়ানি বের করতে বললো।আর হেসে হেসে বললো,একটু ভালো আর স্ট্যান্ডার কালার দেখে বের করেন।বেটা কিন্তু ডাক্তার।

দোকানদার তখন নিজেও হেসে হেসে বললো,তা ডাক্তার হোক আর ইঞ্জিনিয়ার হোক সব বেটার জন্যই একই শেরওয়ানি।বিয়ের সময় সব ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এক হয়ে যায়।আর বিয়ের পর তো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের চিহ্নও থাকে না।কারণ বউ দের বিশ্বাসই হয় না তাদের স্বামীদের একটা আলাদা প্রফেশন আছে।বাহিরে তাদের কত পরিচিতি!

দোকানদারের কথা শুনে সোহান বললো,আপনি বেশ মজার লোক তো?তা আপনার বউ কি বলে আপনাকে নিয়ে?

–কি আর বলবে ভাই?আমি নাকি কোনো কাজেরই না।আমার দ্বারা নাকি কোনো কাজ হয় না।অথচ সারাদিন রাত দোকানে বসে পরিশ্রম করি।উলটো সে নিজেই বাসার মধ্যে সারাদিন বসে থাকে।আর ইউটিউবে মেকাপ টিউটিরিয়াল দেখে।

–হা,হা।মেয়েরা এমনই ভাই।আমাকেও সেম কথাই শুনতে হয়।এই বলে সোহান নোমান কে বললো,তা শালা বাবু নিজে প্রস্তুত আছেন তো বউ এর কথা শোনার জন্য?

নোমান ভীষণ লজ্জা পেলো সোহানের কথা শুনে।তবে সে মনে মনে ভাবলো বউকে কথা বলার সুযোগ দিলে তো সে কথা বলবে।শুরুর থেকেই এমন টাইট দিয়ে রাখবো যে একটুও নড়াচড়া করতে পারবে না।শুধু আদরই করতে চাইবে।

–কি হলো তোমার আবার?কই হারিয়ে গেলে এই বলে সোহান দোকানদারকে বললো, ভাই নিউ কিছু কালেকশন দেখান।
হঠাৎ নোমান বললো,দুলাভাই আপনি আপনার পছন্দ মতো চয়েজ করুন।আমি কিন্তু আসছি।

–এই নোমান কই যাচ্ছো তুমি?যাও না কোথাও।তুমি বিয়েতে কি পড়বে সেটা নিজেই চয়েজ করে নাও।

–দুলাভাই,আপনি আমার থেকে ভালো চয়েজ করতে পারেন।নেন যেকোন একটা।

–তা তুমি আবার কই যাচ্ছো?

–এই তো সামনেই।এই বলে নোমান চলে গেলো।
কিন্তু সে যে আশায় চলে গেলো সে আশা আর হলো না তার।সে তানিশাকে দেখতে চাইছিলো।কিন্তু গিয়ে দেখে ট্রায়াল রুমের সামনে এক দল মেয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।আর সবার হাতেই ড্রেস। এক এক করে ঢুকছে আর বের হচ্ছে সবাই।কিন্তু তানিশাকে দেখতে পেলো না নোমান।হয় তো সেই আছে এখন ভিতরে।

নোমান তবুও সাহস করে গেলো সেখানে।আর মেয়েগুলোকে বললো,আচ্ছা আমার ওয়াইফ কি ভিতরে ঢুকেছে?

তখন একটা মেয়ে বললো,তা আমরা কি করে জানবো?আমরা কি আপনার ওয়াইফ কে চিনি নাকি?

নোমান সেই কথা শুনে বললো,তাই তো?আপনারা চিনবেন কিভাবে।খুব ইমার্জেন্সি একটা দরকার ছিলো তো সেজন্য বললাম।হঠাৎ স্বর্না এসে বললো,আংকেল!আপনি এখানে কি করছেন?

নোমান তখন বললো, তোমার খালামনি কোথায় মামুনি?

–এই তো ভিতরে।

–ও তাই?এই বলে নোমান মেয়েগুলোকে বললো,একটু সাইট দিন প্লিজ,খুবই ইমার্জেন্সি একটা কাজ আছে।এই বলে সে দরজা নক করলো।

তানিশা ভেবেছে মেয়েগুলো নক করছে।সেজন্য সে সাথে সাথে খুলে দিলো।নোমান ও সাথে সাথে ভিতরে ঢুকলো।আর গিয়েই তানিশার মুখ টিপে ধরলো।কারণ সে জানে তানিশা না বুঝেই চিল্লায় উঠবে।

নোমান তানিশার মুখ টিপে ধরে বললো, কোনো সাউন্ড করবা না।আমি জাস্ট একটু দেখতে এসেছি।দেখেই চলে যাবো।এই বলে নোমান তার হাত সরালো।

তানিশা তখন বললো, কি দরকার এভাবে আসার?মেয়েগুলো কি ভাববে এখন?ছিঃ আমার তো ভীষণ লজ্জা লাগছে।না জানি আমাকে আবার খারাপ মেয়ে ভেবে বসে।

–কেনো খারাপ মেয়ে ভাববে?স্বামী আর স্ত্রী একসাথে থাকলে বুঝি মানুষ খারাপ ভাবে তাদের?

–স্বামী আর স্ত্রী?মানে টা কি?আমাদের বিয়ে হলো কবে?

–হয় নি।কিন্তু হবে তো।

তানিশা তখন বললো, আপনি যান এখন।হয়েছে দেখা।

নোমান সেই কথা শুনে নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে লাগলো,আর বললো,হ্যাঁ হয়েছে দেখা।সুন্দরই লাগছে।তবে?

তানিশাও বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে বললো,তবে?

–একটু অসম্পূর্ণ লাগছে।এই বলে নোমান হঠাৎ তানিশাকে কাছে টেনে এনে একটা কিস করে বললো, গাড়ির ভিতর দিতে দাও নি।সেটা দিয়ে গেলাম।

তানিশা কিছু বলার আগেই আরেকটা কিস করলো নোমান,আর বললো এটা এখনকার জন্য।ড্রেস টা কিন্তু হেব্বি মানাইছে।এই বলেই সে বের হলো রুম থেকে।

কিন্তু নোমান বের হতেই মেয়েগুলো কেমন যেনো বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।সে বুঝতে পারলো না কিছু।নোমান মনে মনে ভাবলো তার ঠোঁটে আবার লিপিস্টিকের দাগ দেখা যাচ্ছে নাকি?সেজন্য সে সামনে থাকা গ্লাসটাই ভালো করে তাকালো।না, সব তো তার ঠিকই আছে।তাহলে মেয়ে গুলো এরকম ভাবে দেখছে কেনো?

নোমান মনে মনে ভাবলো, হয় তো তাকে ভীষণ হ্যান্ডসাম লাগছে।সেজন্যই এভাবে তাকিয়ে আছে।নোমান সেজন্য তার শার্টের কলার ঠিক করতে করতে সেখান থেকে চলে গেলো।

কিন্তু তানিশা বের হতেই একটা মেয়ে বললো,এটা অসভ্যতা করার জায়গা না।এখানে সবাই শুধু ড্রেস চেঞ্জ করার জন্যই আসে।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো, কি আজেবাজে কথা বলছেন এসব?কিসের অসভ্যতা করলাম?জেনেবুঝে কথা বলবেন এই বলে তানিশা স্বর্ণাকে সাথে করে নিয়ে চলে গেলো।তারপর তানিশা হঠাৎ স্বর্নাকে জিজ্ঞেস করলো,
তখনকার আপু গুলো কি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলো?
–হ্যাঁ।
–কি জিজ্ঞেস করেছিলো?
–বললো,এই ছেলেটা কি তোমার খালামনির হাজব্যান্ড?
–তা,তুমি কি বললা?
–আমি বললাম,না।হাজব্যান্ড না।উনি তো আমার আংকেল হন।আমার নোমান আংকেল।

তানিশা স্বর্নার কথা শুনে ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলো।তাহলে মেয়েগুলো তো ভুল কিছু বলে নি।তানিশার ভীষণ রাগ হতে লাগলো নোমানের উপর।এই ছেলেটা কেনো এমন করলো?কি দরকার ছিলো এভাবে রুমে যাওয়ার?

তানিশা আর স্বর্ণাকে দেখামাত্র তানিয়া বললো,একটা ড্রেস চেঞ্জ করতে এতোক্ষন লাগলো?আর এদিকে আমি পাঁচ টা ড্রেস চেঞ্জ করলাম?বাকি কেনাকাটা কখন করবি?
তানিশা তখন বললো, আপু নোমানকে দেখেছিস?
–কেনো কি দরকার নোমেনের?নোমান তো তোর দুলাভাই এর সাথে কেনাকাটা করছে।চল এখন কসমেটিকস এর দোকানে চল।এই বলে তানিয়া তানিশার হাত ধরে কসমেটিকস এর দোকানে প্রবেশ করলো।ড্রেস এর সাথে ম্যাচিং করে জুয়েলারি খুঁজতে লাগলো তারা।
কিন্তু এদিকে এখন পর্যন্ত নোমান আর সোহান একবারও আসলো না।তানিশা বুঝতে পারছে না নোমান কোথায় গেলো।সেজন্য তানিশা কল দিলো নোমানকে।কিন্তু নোমানের ফোন বার বার বিজি দেখাচ্ছে।সেজন্য তানিশা আর দিলো না কল।

হঠাৎ কিছুক্ষণ পর নোমান নিজেই আসলো তানিশাদের কাছে।কিন্তু নোমানের মুখ টা ভীষণ চিন্তিত দেখাচ্ছিলো।আর এদিকে দুলাভাই তানিশাকে নোমানের ড্রেসগুলো দেখিয়ে বললো, দেখ!কত কম সময়ে কিনে ফেললাম।আর তুই সেই থেকে মাত্র তিনটা ড্রেস চুজ করলি।তোর ড্রেসের থেকেও নোমানের ড্রেস গুলো কিন্তু বেশি সুন্দর।অবশ্য আমি চয়েজ করেছি দেখে এতো সুন্দর লাগছে।

তানিশা তার দুলাভাই এর কথায় কান না দিয়ে নোমানের দিকে দেখছে।সে তখন এগিয়ে গেলো নোমানের কাছে আর বললো,কি হয়েছে আপনার?মুখ চোখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?কোনো প্রবলেম?

নোমান মাথা নাড়িয়ে বললো,না,কোনো প্রবলেম নেই।তোমাদের কেনাকাটা কি শেষ?

–না হয় নি শেষ। আরো কিছু বাকি আছে।

নোমান তখন বললো তাহলে তুমি আপু আর দুলাভাই এর সাথে বাকি কেনাকাটা গুলো শেষ করো।আমাকে একটু বাসায় যেতে হবে এখন।

তানিশা তখন নোমানের হাত ধরে বললো, আপনি কিছু লুকাচ্ছেন না তো?কি হয়েছে বলুন আমায়?

–বললাম তো হয় নি কিছু।ভাইয়া ডাকছে বাসায়।বললো জরুরি একটা কাজ আছে।এই বলেই নোমান চলে গেলো।

তানিশা বুঝতে পারলো কিছু তো হয়েছে।কারণ সে নোমানের মুখ দেখেই বুঝতে পারছে ব্যাপারটা। এই কিছুক্ষন আগেই যে ছেলেটার মুখে হাসি লেগে ছিলো তার হঠাৎ মুখ টা এমন মলীন হলো কেনো?

এদিকে নোমান তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো বাসায়।গিয়ে দেখে শিলার বাবা মা আর জিসান এসেছে।তাদের চোখ মুখ দেখে বোঝা গেলো তারা নোমানের উপর ভীষণ ক্ষেপে আছে।নোমানকে দেখামাত্র জিসান ধাক্কা দিয়ে বললো,
কি কাহিনী শুরু করছিস এসব?নিজেকে কি ভাবিস?

–মানে?কি ভাবি আবার?

শিলার বাবা তখন বললো,জিসান চুপ করো তুমি।এটা বড়দের ম্যাটার।যা বলার আমি আর তোমার মা বলবো।তুমি চুপ করে থাকো।

জিসান সেই কথা শুনে বললো, চুপ করবো মানে?এতো কিছুর পরে আমি কি করে চুপ থাকি?আমি জানি তো ও কেনো শিলাকে বাদ দিয়ে তানিশাকে বিয়ে করছে?ও হিংসায় করছে এসব?যেই শুনেছে আমি তানিশাকে বিয়ের জন্য দেখতে গিয়েছি ও তখনি নিজেই প্রস্তাব দিয়েছে।ভেবেছে কেউ কিছু বলবে না।

নোমান সেই কথা শুনে বললো,জিসান! কি আজেবাজে কথা বলছিস?তোকে আমি হিংসা করতে যাবো কেনো?বরং তুই নিজে জেনেবুঝে তানিশার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিস।

জিসান তখন চিৎকার করে বললো তুই আমাকে কেনো হিংসা করিস তা তুই নিজেও ভালো করে জানিস।আর তোর ঐ তানিশার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নাই।আমি আমার বোনের জন্য এসেছি।আগে বল কবে বিয়ে করছিস শিলাকে?

#চলবে,

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_২৯(বোনাস পর্ব)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

❝আমি শিলার থেকে পারমিশন নিয়েই তানিশা কে বিয়ে করছি।আর শিলা নিজের মুখে বলেছে আমি যাকে ভালোবাসি আমার তাকেই বিয়ে করা উচিত।যেখানে শিলা কোনো ঝামেলা করছে না সেখানে তোর প্রবলেম টা কোথায়?❞

জিসান তখন রেগে গিয়ে বললো,ভালোবাসা?তোমার এই ভালোবাসা এতোদিন কই ছিলো?এনগেজমেন্ট করার সময় মনে ছিলো না?

নোমান তখন বললো,জিসান ঝামেলা করিস না।সবার আগে শিলাকে জিজ্ঞেস কর তুই।সে কি বলে শোন আগে।তারপর আজেবাজে কথা বলিস।

শিলার বাবা তখন নোমানকে বললো,আমরা শিলার মুখে শুনেই তোমার কাছে এসেছি।শিলা নিজের মুখে বলেছে তোমাকে না পেলে সে নিজের জীবন শেষ করে ফেলবে।

নোমান তখন বললো,একটু ওয়েট করেন আংকেল।আমি নিজে কথা বলছি।এই বলে নোমান শিলাকে কল দিলো।বাট সে রিসিভ করলো না।নোমান তখন আবার কল দিলো।এবারও শিলা রিসিভ করলো না নোমানের ফোন।তখন নোমান বললো,জিসান তুই ফোন দে তো একটু।

জিসান সেই কথা শুনে কল দিলো শিলাকে।আর শিলা সাথে সাথে রিসিভ করলো।
জিসান তখন বললো, শিলা নোমান তোর সাথে কথা বলতে চায়।
শিলা নোমানের কথা শুনেই বললো,আমি বলবো না কথা।এই বলেই সে কল কেটে দিলো।আর জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।

নোমান তখন আবার জিসানের ফোনটা নিলো।আর নিজেই আবার কল দিলো জিসানকে।এবার শিলা রিসিভ করেই বললো,বার বার কেন কল দিচ্ছিস?বললাম তো আমি ওনার সাথে কথা বলবো না?

নোমান তখন বললো, শিলা?

নোমানের কন্ঠ শুনে শিলা তার কান্না থামালো।সে নরমাল হওয়ার ট্রাই করলো।তবুও তার কন্ঠ শুনে বোঝাই যাচ্ছে সে কাঁদছে।তারপর কান্না বিজড়িত কন্ঠে বললো,হ্যালো।

নোমান তখন বললো,শিলা তুমি কাঁদছো কেনো?তুমি তো নিজেই বললে, আমি যাকে ভালোবাসি আমার তার সাথেই বিয়ে করা উচিত।তাহলে?

শিলা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, হ্যাঁ বলেছি।সেটা আমার মুখের কথা ছিলো।বাট আমার মন কিছুতেই মানছে না।আমি আমার মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না।আমি আপনাকে ছাড়া আর দ্বিতীয় কাউকে গ্রহন করতে পারবো।সরি।এই বলেই শিলা হু হু করে কেঁদে উঠলো।

নোমান এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে এখন?সে তো পুরাই ফান্দে পড়ে গেলো।শিলা তার সাথে এটা কি করলো?এইভাবে গাছে উঠিয়ে দিয়ে কি করে মই সরিয়ে নিলো?

এদিকে শিলার বাবা বার বার হুমকি দিতে লাগলো তার মেয়ের কিছু হলে সব কয়টার নামে মামলা করবেন তিনি।
এদিকে জিসানের এক কথা তার বোনকেই বিয়ে করতে হবে।সে আর অন্য কোনো অপশন দিচ্ছেই না।

নোমান তখন বললো আচ্ছা আপনারা সবাই চলে যান এখন।আমি কিছুক্ষণ পরে আমার ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি।
জিসান সেই কথা শুনে বললো, নোমান কোনো চালাকি করলে কিন্তু খবর আছে তোর?আর তুই কিসের সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছিস?শিলা কে বিয়ে করতে হবে এটাই ফাইনাল।

এবার শিলার বাবা তায়েব চৌধুরীর কাছে গেলো।আর বললো,তুই আমার বন্ধু মানুষ। তুই কি করে এই কাজটা করতে পারলি?আমার মেয়ে আগে না ওই পরের মেয়েই আগে?
তায়েব চৌধুরী তখন বললো তোরা যে নোমানের সাথে শিলার এনগেজমেন্ট করিয়েছিস আমাকে জানিয়েছিস কিছু?তাহলে এখন কেনো আমাকে দোষারোপ করছিস?তোরা আমাকে না জানিয়ে যদি এনগেজমেন্ট করাতে পারিস,তাহলে আমি আমার পছন্দ করা মেয়ের সাথে নোমানের বিয়ে কেনো দিতে পারবো না?

–ও তাহলে তুই হলি আসল কালপিট।তোর কারনেই নোমানের সাহস এতো বেড়ে গেছে?আচ্ছা আমিও দেখবো কি করে এই বিয়ে টা হয়?এই বলে শিলার বাবা সবার সামনে নোমান আর তানিশার বিয়ের কার্ড ছিড়ে ফেললো।আর সেখান থেকে চলে গেলো।বোঝাই যাচ্ছে তিনি বড় কোনো মতলব করতে যাচ্ছেন।কিন্তু তায়েব চৌধুরী ও কাঁচা খেলোয়াড় নন।তিনিও জানেন কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে?

তায়েব চৌধুরী এবার শিরিন কে বললো,মা, সত্যি করে মন থেকে বলো তুমি কি চাও?
শিরিন কোনো কথা বললো না।
তায়েব চৌধুরী বুঝে গেলো শিরিনও তানিশাকে এ বাড়ির বউ হিসেবে দেখতে চাচ্ছে না।তখন তায়েব চৌধুরী বললো, তুমি আজ একটু তোমাদের বাড়ি যাও।আর শিলাকে আরেকবার বোঝাও।
শিরিন সেই কথা শুনে বললো, কি বোঝাবো ওকে আমি ?সে তো কারো কথাই শুনতে চাচ্ছে না।এই বলে শিরিন তার রুমে চলে গেলো।

তায়েব চৌধুরী এবার নোমানের কাছে গেলো।আর বললো,কিছু না বুঝেই যে একটা কাজ করেছিস এখন কিভাবে সামলাবি সামলা?আমি কিন্তু এ ঝামেলার মধ্যে নেই আর।

নোমান তখন তার বাবাকে চমকে দিয়ে বললো, বাবা আজকেই আমি তানিশাকে বিয়ে করবো।তাহলেই আর এসব ঝামেলা হবে না।অনুষ্ঠান পরেও করা যাবে।

তায়েব চৌধুরী মনে মনে ভাবলো, ছেলের তো ভালোই উন্নতি হয়েছে দেখছি।ঠিক এটাই তায়েব চৌধুরী ও ভাবছিলেন।বিয়ে হয়ে গেলে তারপর কি করে করবে শিলার বাবা।তার আগে আমানকে বলে একটা জিডি করে রাখতে হবে।যদি শিলা এক্সিডেন্ট খারাপ কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কিছুই হবে না তাদের।
এজন্য তায়েব চৌধুরী নোমানকে বললো,তাড়াতাড়ি করে তানিশাদের বাড়ি চলে যা।আমি কিছুক্ষণ পরে যাচ্ছি।
নোমান সেই কথা শুনে আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।তারপর তানিশাকে কল করলো,আর জিজ্ঞেস করলো সে এখন কোথায় আছে?

তানিশা জানালো তারা কেনাকাটা শেষ করে বাসার দিকেই যাচ্ছে।
নোমান সেজন্য বললো,ওকে যাও।আমিও আসছি তোমাদের বাসার দিকে।নোমান আর এসব ঝামেলার কথা বললো না তানিশাকে।কারন তানিশার একটু দয়া বেশি। একটুতেই সে ইমোশনাল হয়ে যায়।হয় তো এসব কাহিনি শুনে আবার নোমানকে সে দান করতে চাইবে।যেমন তন্নির কাছে তাকে দান করতে চেয়েছিলো।

তানিশারা নোমানের আগেই পৌঁছেই গেলো তাদের বাসায়।সে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়েও নিলো।তারপর লেমন কালারের একটা থ্রী পিচ পরে নিলো।সে এখনো বুঝতে পারে নি যে আজকেই তাদের বিয়ে হবে।তবে তানিশার মন টা কেমন যেনো করছিলো।সে শুধু ভাবছে নোমান এখন হঠাৎ কেনো আসতে চাচ্ছে?

কিছুক্ষণ পর নোমান আসলো তানিশাদের বাসায়।আর এসেই সে তহিদুল সাহেব কে বললো, আংকেল বাবা চাচ্ছিলো আজকেই বিয়েটা হোক।পরে ধুমধামে অনুষ্ঠান করবেন তিনি।
তহিদুল সাহেব অবাক হয়ে বললো,কেনো?

–এমনিতেই আংকেল।অনুষ্ঠানের দিন তাহলে আর বিয়ে পড়ানো লাগবে না।আজ বিয়ের পড়ানোর কাজ টা সেড়ে ফেললে ভালো হবে।

–কিন্তু আত্নীয়স্বজনদের যে ইনভাইট করা হয়েছে।তাদের কেউ কেউ তো আজ থেকেই আসা শুরু করবে।

–নোমান সেই কথা শুনে বললো,যারা আসবে তাদের কে বললেন বিয়ের ডেট কয়েকদিন পেছানো হয়েছে।

নোমানের কথা শুনে তহিদুল সাহেব সোহান আর তানিয়াকে বললো ব্যাপারটা।তারাও ভীষণ অবাক হলো কথাটা শুনে।হঠাৎ করে বিয়ে মানে?নিশ্চয় কিছু হয়েছে?কিন্তু নোমান এই ঝামেলার কথা বললো না কিছু।

তানিশা তার রুমেই ছিলো।নোমানের কন্ঠ শুনে সে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।আর নোমানের কাছে এগিয়ে এসে বললো,কি হয়েছে আপনার?হঠাৎ আবার আসলেন যে?
নোমান তখন বললো, কেনো?শশুড় বাড়িতে আসতে বারন আছে নাকি? তানিশা সেই কথা শুনে লজ্জায় হেসে উঠলো।আর সেখান থেকে চলে গেলো রুমে।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,নোমান সবার সামনে এভাবে না উত্তর দিলেও পারতো।

এদিকে তহিদুল সাহেব নোমানের কথা শুনে বিয়ের বন্দোবস্ত করতে লাগলো।তানিয়া আর সোহান নিকটতম মেহমান দের ফোন করে করে জানিয়ে দিলো যে বিয়ে কয়েকদিন পর হচ্ছে।আর তানিশার মা রান্না বান্না জোগাড় করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।এইভাবে সবাই সবার কাজে ব্যস্ত থাকলো।আর নোমান এই ফাঁকে চলে গেলো তানিশার রুমে।

এই প্রথমবার সে তানিশার রুমে ঢুকলো।ঘরটি বেশ সুন্দর।আর অনেক বড়।একটা বক্স খাট,ড্রেসিং টেবিল,একটা বই রাখা সেল্ফ,আর একটা আলমারি আছে।রুমের মধ্যে আকর্ষণীয় একটা সোকেচ ও আছে।যাতে রয়েছে হরেক রকমের শো পিচ।তানিশা যে সৌখিন একটা মেয়ে তা তার রুমে এলেই বোঝা যাবে।রুমের সাথের বেলকুনিটা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়।ঠিক নোমানের বেলকুনির মতো।বেলকুনিতে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য ছোটো ছোটো চারটা টুল আর বড় একটা টেবিল ও আছে।এর আগে যখন নোমান তানিশার গ্রামে গিয়েছিলো,তখন অবশ্য তানিশার রুমেই ছিলো সে।

তানিশা তার বিছানায় বসে নতুন ড্রেস গুলো গুছিয়ে রাখছে।নোমান হঠাৎ যাওয়ায় সে যেনো একদম চমকে উঠলো।।

নোমান কে দেখামাত্র তানিশা বললো, আপনি?আপনি এ রুমে কি করছেন?বাসার কেউ দেখলে কি ভাববে?

নোমান তখন তানিশার কাছে গিয়ে বললো, কেউ যাতে কিছু আর না বলে সেই ব্যবস্থা করার জন্যই এসেছি।দেখি তারপর আর কে কি বলে?

তানিশা তখন বললো, মানে?বুঝলাম না কিছু?

–ও তোমাকে বুঝতে হবে না।শুধু বিয়ের জন্য রেডি হও এখন।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো,বিয়ে?আজকেই বিয়ে?কিন্তু কেনো?

নোমান সেই কথা শুনে তানিশাকে জড়িয়ে ধরে বললো, হুম। আজকেই বিয়ে।দুই দিন ওয়েট করে থাকার ধৈর্য্য নেই আমার।সেজন্য আজকেই করতে হচ্ছে বিয়েটা।

তানিশা তখন নোমানকে সরিয়ে দিয়ে বললো, এতো বছর ওয়েট করলেন,আর এখন দুইদিনই সহ্য হচ্ছে না?

–না।হচ্ছে না।তাছাড়া তুমি যে হাত টাও ধরতে দিতে চাও না।শুধু পালিয়ে পালিয়ে যাও আমার থেকে।সেজন্য আর যাতে পালাতে না পারো সেজন্য আজকেই করতে হচ্ছে বিয়েটা।

তানিশা তখন বললো, আপনি এমন কেনো বলুন তো?আগে জানলে,,,,,।

–আগে জানলে কি?এই বলে নোমান তানিশার আরো কাছে এগিয়ে আসতে হলো।

হঠাৎ তায়েব চৌধুরীর গলা শুনে নোমান তানিশাকে ছেড়ে দিলো।আর বললো,বাবা মনে হয় এসেছে।তুমি জলদি রেডি হয়ে নাও।আমি আসছি।এই বলেই নোমান বেড়িয়ে গেলো তানিশার রুম থেকে।

নোমানের কথা যেনো তানিশার মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো।সেজন্য সেও বের হলো রুম থেকে।বাহিরে গিয়ে দেখে সত্যি তার আজকেই বিয়ে হবে।কারণ তায়েব চৌধুরীর সাথে কাজি সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন।

তানিশাকে দেখামাত্র তানিয়া এগিয়ে এলো।আর বললো,নোমান আজকেই বিয়ে করতে চাচ্ছে।তোর কোনো সমস্যা নেই তো?
তানিশা তখন বললো, আমার তো সমস্যা নেই।কিন্তু যাদের ইনভাইট করা হয়ছে তাদের কি হবে?

তানিয়া তখন বললো,আমি আর তোর দুলাভাই কিছু কিছু জায়গায় ফোন করে বারণ করে দিয়েছি।এখন তুই ঝটপট গোসল করে রেডি হয়ে নে।

তানিশা বুঝতে পারছে না সে কি ড্রেস পড়বে?কত আশা করলো ধুমধামে তার বিয়ে হবে।কত সুন্দর করে সাঁজবে।সব একদম ধূলিসাৎ হয়ে গেলো।তবে সে বুঝতে পারলো কিছু একটা তো হয়েছেই।কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করবে সে এই মুহুর্তে?

কিন্তু তানিশা আর কাউকে বাড়তি কথা জিজ্ঞেস না করে একা একাই সাজতে লাগলো। বিয়ের দিন পড়বে বলে যেটা ঠিক করেছিলো সেই খয়েরী কালারের লেহেঙ্গা টাই পড়ে নিলো সে।আর তার সাথে ম্যাচিং করা সেই খয়েরী পাথর বসানো জুয়েলারির সেট।খয়েরী নেকপিচ,বড় বড় কানের দুল,আর খয়েরী কালারের টিকলি পড়ে তানিশাকে একদম অপ্সরাদের মতোই লাগছিলো।মাথার চুলগুলো উঁচু করে খোপা করে নিলো।তারপর খয়েরী কালারের এক জোড়া হাইহিল পড়ে নিলো।পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির তানিশাকে যেনো ৫ ফুট দশের মতো লাগলো।মানে সে এখন নোমানের সমান সমান হয়ে গেলো।দুইজন পাশাপাশি দাঁড়ালে এতো সুন্দর লাগবে ভাবতেই তানিশার অন্য রকম এক অনুভূতি হলো।

এদিকে নোমান রেডি হওয়া বাদ দিয়ে বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে।কারন সে নাকি রেডি হবে না।তার কথা ঘরোয়া বিয়েতে আবার কিসের সাঁজগোজ? যে ড্রেস পড়া আছে তাতেই চলবে।
কিন্তু সোহান কিছুতেই শুনলো না নোমানের কথা।সে বললো,শালাবাবু আমার শালিকার পাশে দাঁড়াতে হলে বিয়ের সাঁজেই দাঁড়াতে হবে।কারণ সে কিন্তু নরমাল ড্রেসে নাই,একদম বিয়ের কনের সাজেই সেজেছে।নোমান সেই কথা শুনে বললো, তাহলে আগে দেখে আসি ওকে।

–না,না।এখনি না।বিয়ের পর এমনি দেখতে পাবা।এখন চলো রেডি করে দেই আগে।এই বলে সোহান নোমানকে রেডি করাতে নিয়ে গেলো।

নোমানও খয়েরী কালারের শেরওয়ানী পড়লো।তাকে বর সেজে এতো বেশি লজ্জা লাগছিলো যে সে শুধু ভাবছে সবার সামনে যাবে কেমনে।আর মনে মনে বললো,আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।এই দুই চারজনের সামনেই এরকম লাগছে তাহলে বড় করে অনুষ্ঠান করে বিয়ে হলে তখন কি হতো?

#চলবে,
সারপ্রাইজ পর্ব কেমন লাগলো সবার অবশ্যই জানাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে