ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব-২৫+২৬

0
1396

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_২৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

নোমান বাসায় প্রবেশ করতেই তায়েব চৌধুরীর সাথে দেখা তার।তায়েব চৌধুরী নোমানের সাহস দেখে ভীষণ অবাক হলেন।কিন্তু নোমান ভেবেছে তার বাবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে সেজন্য তায়েব চৌধুরী কে সে জড়িতে ধরতে গেলো।কিন্তু নোমান এটা জানে না যে তায়েব চৌধুরী তার উপর কত টা রেগে আছেন।নোমানকে দেখামাত্র তায়েব চৌধুরী ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় মারলো নোমানের গালে তারপর বললো,কেনো এসেছিস এ বাসায়?তোকে কে ডেকেছে।বের হয়ে যা এক্ষুনি।আমি তোর মুখ দেখতে চাই না।

নোমান তার বাবার চড় খেয়ে একদম আহাম্মকের মতো তাকিয়ে রইলো সে কি উত্তর দেবে বুঝতে পারলো না।এদিকে চড় খেয়ে নোমানের চোখের চশমা মেঝেতে পড়ে গেছে।চশমা ছাড়া নোমান চোখে একদম আবছা আবছা দেখতে লাগলো।যার কারণে সে তার চশমাটা খুঁজতে লাগলো।কিন্তু পেলো না খুঁজে। কারণ চশমাটা একটু দূরে পড়েছে।সে তো আবার দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পারে না।
তায়েব চৌধুরী নোমানকে কি শাসন করবেন আর কি মারবেন,ছেলের এমন করুন অবস্থা দেখে ওনার ভীষণ মায়া হলো।সেজন্য তিনি নিজেই মেঝে থেকে তুলে আনলেন চশমাটা।কিন্তু চশমাটার দুটি কাচই ভেংগে গিয়েছে।যর কারনে তায়েব চৌধুরী চশমা টা ফেলে দিলেন।আর নোমানকে জিজ্ঞেস করলেন,কাছে এক্সট্রা চশমা নেই?

নোমানের প্যান্টের পকেটে আরো একটি চশমা আছে তবুও সে বললো নাই চশমা।এই অজুহাতে যদি তার বাবার রাগ কিছুটা কমে।
হ্যাঁ,সেটাই হলো।তায়েব চৌধুরীর রাগ কিছুটা কমে গেলো। তিনি আর কিছু বললেন না নোমানকে।তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন।

এদিকে আমান বাসাতে থাকা সত্ত্বেও নোমানের কাছে আসে নি।এমনকি শিরিন কেও বারণ করে দিয়েছে,কেউ যাতে ওদের বাবা ছেলের মাঝে না যায়।যাতে তারা বাবা ছেলে নিজেরাই নিজেদের ব্যাপার মিটমাট করে নেয়।কিন্তু কোনো মিটমাট ই হলো না।তার বাবা তো কিছু না বলেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন।

তায়েব চৌধুরী চলে যাওয়ার সাথে সাথে নোমান তার এক্সট্রা চশমাটি বের করলো।তারপর সেটি চোখে দেওয়ার সাথে সাথে পরিষ্কার দেখতে পেলো। নোমান এবার সবাইকে খোঁজার জন্য রুমে চলে গেলো।সে বুঝতে পারলো না বাসার বাকি সদস্য রা কোথায় এভাবে লুকিয়ে আছে।বিশেষ করে তার আমান ভাই যে তাকে ফোন করে ডাকলো।তাকেও তো নোমান দেখতে পারছে না।
কিন্তু নোমান যখন তার ভাই এর ঘরে গেলো গিয়ে দেখে তার ভাই আর ভাবী দুইজনই বসে আছে। তখন নোমান রাগ করে বললো,তোমরা দুইজন এখানে কি করো?কই আমাকে একটু বাবার হাত থেকে বাঁচাবে তা না করে লুকিয়ে আছো সব?

আমান তখন বললো,আমাদের কে দেখলে বাবা আরো বেশি রাগ করতেন।হয় তো তোকে টেনে বাসা থেকেই বের করতেন।এখন তো দুই চারটা চড়ের উপর দিয়ে চলে গেলো।

নোমান তখন বললো, ভাইয়া তুমি না বললে বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।বাবার রাগ কমে গেছে। তাহলে বাবা এরকম রিয়্যাক্ট করলো কেনো?

আমান তখন বললো,বাবার রাগ মোটেও কমে নি।আর তোকে ক্ষমাও করেন নি।আমি চালাকি করে তোকে ডেকে এনেছি।তাছাড়া তুই যে আসতে চাস না।এভাবে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালে কিভাবে সমস্যার সমাধান হবে?

নোমান তখন বললো, তাই তো বলি বাবা এরকম রিয়্যাক্ট করলো কেনো?আমার তো এখন দিয়ে ভয় হচ্ছে।ভাগ্যিস চশমাটা ভেংগে গিয়েছিলো তা না হলে জানেই মেরে ফেলতো আজ।যেভাবে এট্যাক করেছিলো।

আমান তখন বললো, আচ্ছা ওসব চিন্তা এখন বাদ দে।বাবার রাগ যে কমে গেছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।ওরকম একটু অল্প অল্প অভিমান তো করবেই।তার আগে বল তোর তানিশার কি খবর?কথা বলেছিস ওর সাথে?তোদের মধ্যকার ঝামেলা মিটমাট করেছিস?

নোমান মাথা নাড়িয়ে বললো, না।কি কথা বলবো?আর কিভাবে মিটমাট করবো?আমি তো এসবের কিছু বুঝি না।

–ওরে আমার কচি খোকা।কিছুই বোঝে না।এই বলে আমান নোমানের মাথায় একটা টেলা দিলো আর বললো,কি কথা বলবি সেটা তুই ভালো জানিস।সেটাও কি আমাকেই শিখে দিতে হবে?ওর সাথে সম্পর্ক টা তো আগে ঠিক করতে হবে।যেভাবে ওর উপর রাগারাগি করেছিস না জানি সে এখন কি করছে।এদিকে তো আমি ম্যানেজ করছিই।

নোমান সেই কথা শুনে বললো,ওর ফোন নাম্বার নেই আমার কাছে।

আমান তখন নিজের মোবাইল থেকে তানিশার নাম্বার টা বের করে দিলো।

শিরিন তা দেখে বললো,বাহঃ ভালোই তো।তাহলে তানিশার ফোন নাম্বার তোমার কাছেও আছে।অথচ যার কাছে থাকার কথা তার কাছেই নাই।

আমান তখন বললো, কার সামনে কি করলাম ভাই?এরে এখন বোঝায় কে?নোমান তুই কথা বল রুমে গিয়ে।আমি তোর ভাবিকে এখন বিস্তারিত ভাবে বলি এই নাম্বার আমি কিভাবে পেলাম।তা না হলে উনি আমার মাথাটা একদম চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।

নোমান তার ভাই এর কথা শুনে হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেলো।
নোমান কত দিন পর নিজের রুমে ঢুকলো।ভাবতেই তার মন টা খারাপ হয়ে গেলো।সে চলে যাওয়ার পর আর কেউ থাকে নি এ রুমে।তবুও রুমটি গোছানোই আছে।হয় তো শিরিন ভাবি ঠিক করে রেখেছে এই ভেবে নোমান তার বেডে ধপাস করে শুয়ে পড়লো।আর তানিশার নাম্বারে কল দিলো।কিন্তু তানিশা রিসিভ করলো না ফোন।নোমান মনে হয় গুনে গুনে ১০-২০ বারের মতো দিলো তবুও তানিশার কোনো রেসপন্স পেলো না সে।নোমান তখন ভাবলো হয় তো তানিশা রাগ করে তার কল রিসিভ করছে না।কিন্তু তানিশা আজ একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ রোগীর সিজার করছে।সেজন্য সে ব্যস্ত আছে এখন।তাছাড়া সিজার করার সময় তার ফোন সবসময় সাইলেন্ট রাখে সে।

রোগীটির নাম ছিলো কোহিনুর বেগম।যার বিয়ের পাঁচ বছর চলছে তবুও এখন পর্যন্ত কোনো বাচ্চা হচ্ছিলো না।সেজন্য একদিন কোহিনূর বেগম তানিশার কাছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসে।আর এসেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।এই বাচ্চা না হওয়ার জন্য তার শশুড়বাড়ি থেকে নাকি খুবই অত্যাচার করা হচ্ছে তাকে।একদিকে শশুড় শাশুড়ী তো অন্যদিকে পাড়াপ্রতিবেশি। সবাই নানা ধরনের কথা শোনান তাকে।শেষমেষ হাজব্যান্ড ও নাকি হুমকি দেয়।এবার বাচ্চা না হলে ডিভোর্স দিয়ে দেবে।সেজন্য কোহিনূর বেগম তার মায়ের সাথে এসেছিলেন তানিশার চেম্বারে।
তানিশা কোহিনূর বেগমের ভালোভাবে চিকিৎসা করতে লাগলো,আর বিভিন্ন নিয়মকানুন শিখিয়ে দিলো। আর বললো এই নিয়ম ঠিক তিনমাস ফলো করবেন।তারপর ফলাফল কি হয় জানাবেন।কহিনুর বেগম তানিশার কথামতো সেইভাবেই চলে,আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি তিন মাসের মধ্যেই কনসিভ করেন।কিন্তু তানিশাকে আর জানান না।এমনকি কোনো যোগাযোগ ও করেন না।
কিন্তু হঠাৎ করে ২৩ সপ্তাহে আবার এসে উপস্থিত হন কোহিনূর বেগম।আর কাঁদতে কাঁদতে বলেন তার নাকি জরায়ুর মুখ খুলে গেছে। এই বেবী আর রাখা সম্ভব না।তাদের এলাকার নিকটতম এক হাসপাতালের ডাক্তার বলেছেন।
কিন্তু তানিশা কোহিনূর বেগমকে বলেন,আপনি যদি আমার কথামতো চলেন,আর আমার নিয়ম ফলো করেন তাহলে এই বাচ্চা রাখা সম্ভব।
কোহিনূর বেগম আর তার মা সেই কথা শুনে সাথে সাথে তানিশার পায়ে পড়ে।আর বলে ডাক্তার ম্যাডাম,প্লিজ চেষ্টা করুন একটু।এবার আর কোনো গাফলতি করবো না।প্লিজ ডাক্তার ম্যাডাম।
তানিশা তা দেখে বলে এই আপনারা কি করছেন,উঠুন।পায়ে পড়ছেন কেনো?সব আল্লাহর রহমত।উনি চাইলে সবই সম্ভব।তবে আমি শেষ চেষ্টা করবো।
তানিশা সেই কথা শুনে তার শেষ চেষ্টা করে।সে কোহিনূর বেগমের জরায়ুর মুখ সেলাই দিয়ে রাখে আর ওনাকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখেন।এ কয় মাস কোহিনূর বেগম তার বাবার বাড়ি থাকেন।কিন্তু ফোনে ফোনে তিনি তানিশার থেকে চিকিৎসা নিতেন।এভাবে ৩৪ সপ্তাহ পার হয়ে গেলো।

কিন্তু আজ হঠাৎ করে ওনার ব‍্যাথা উঠলে দ্রুত তিনি তানিশাদের হসপিটালে চলে আসেন। তানিশা সেজন্য প্রথমে কোহিনুর বেগমের USG করলো।USG করে তো তানিশার চোখ একদম কপালে উঠে গেলো।কারণ এ যেনো একাদশে বৃহস্পতি।কারণ কোহিনূর বেগমের পেটে জমজ বাচ্চা আছে।সেজন্য তানিশা আর দেরী না করে দ্রুত ডেলিভারি করে।
সব ঠিক আছে।শুধু বেবী দের ওজন কম কিন্তু মাশাল্লাহ্ বেবীরা সুস্থ আছে।মাও ভালো আছে। কোহিনূর বেগম আল্লাহ্ র কাছে চেয়েছিল একটি বেবী আল্লাহ্ দিয়েছেন দুইটি বেবী।দুইটি বেবি পেয়ে কোহিনূরের পরিবারের সবাই এতো খুশি হলো যে তানিশাকে কিছু গিফট দিতে চাইলো।কিন্তু তানিশা বললো,আমার জন্য শুধু দোয়া করবেন।আমি যেনো এইভাবেই সব সময় সবার উপকার করতে পারি।তবে তানিশা কোহিনূর বেগমের হাজব্যান্ড আর শশুড় শাশুড়ী কে বললেন,কখনোই কারো মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে নেই।সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা করে চলতে হয়।আর কোনো নারী কিন্তু নিজের ইচ্ছাতে বাচ্চা নিতে পারে না।আল্লাহ চাইলে তবেই সম্ভব হয়।দেখলেন আল্লাহর নিয়ামত।একটির জায়গায় দুইটি বাচ্চা পেলেন।
কোহিনূরের শশুড় বাড়ির লোকজন তো একদম লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলো।তারা বুঝতে পারলো আসলেই তারা কোহিনূরের সাথে অন্যায় করেছে।

আজ তানিশার মন টা যেনো খুশিতে ভরে উঠলো।সে মনে মনে ভাবলো এ পেশায় এসে সত্যি তার জীবন সার্থক হয়েছে।সবাই কত দোয়া করছে তাকে।আর মানুষ জনের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে তার খুব বেশি আনন্দ হচ্ছে।

এদিকে নোমান কল দিতেই আছে তানিশাকে।বেচারার মনে যে নতুন করে প্রেমের বাতাস বইতেছে।তার আর দেরী সইছে না কিছুতেই।কিন্তু তানিশা আছে তার রোগী নিয়ে ব্যস্ত।সে একটিবারের জন্যও ফোন হাতে নিলো না।এদিকে নোমান ছটফট করতে লাগলো আর অপেক্ষা করতে লাগলো কখন তানিশা কল বেক করবে?

কিন্তু তানিশা অপারেশন শেষ করে সবার আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর রেস্ট হাউজে গিয়ে রেস্ট করলো।

অন্যদিকে নোমান তার রুমে শুয়ে তানিশার কলের অপেক্ষা করছে আর ভাবতেছে কবে সব ঠিক হয়ে যাবে।কবে সে আর তানিশা এক হয়ে যাবে।তার আর কিছুতেই ভালো লাগছে না।

হঠাৎ তায়েব চৌধুরী প্রবেশ করলেন নোমানের রুমে।নোমান ভাবতেই পারে নি তার বাবা আসবে তার রুমে।সেজন্য সে চশমাটা লুকানোর সময়ই পেলো না।এদিকে তায়েব চৌধুরী অন্য আরেকটি নতুন চশমা কিনে এনেছেন।কারন তিনি জানেন নোমান চশমা ছাড়া এক সেকেন্ড চলতে পারে না।
নোমানের চোখে চশমা দেখে তায়েব চৌধুরী হা করে তাকিয়ে রইলো।তিনি কিছু বলার আগেই নোমান বললো,চশমা টা ভাইয়া দিলো।ওর কাছে নাকি ছিলো।

তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,ও।আমি আরো নতুন আরেক টা নিয়ে আসলাম কিনে।

নোমান তার বাবার কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।কারন তার প্রতি এতো রাগ অভিমান থাকার পর ও তার বাবা নতুন আরেকটা চশমা কিনে এনেছেন।
নোমান সাথে সাথে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,বাবা,সরি।ভুল হয়েছে আমার।আমি সত্যি বুঝতে পারি নি তুমি এতো টা রেগে যাবে আমার উপর।প্লিজ বাবা ক্ষমা করে দাও না?
তায়েব চৌধুরী তখন নোমান কে সরিয়ে দিয়ে বললো,চশমা টা রাখো।আর যত দ্রুত সম্ভব এ বাসা থেকে চলে যাও।ভেবো না ক্ষমা করে দিয়েছি তোমাকে।চশমা ছাড়া যাবে কিভাবে সেজন্যই নিয়ে এসেছি।এই বলেই তায়েব চৌধুরী চলে যেতে ধরলেন।

নোমান বুঝতে পারলো তার বাবার রাগ এখনো কমে নি।তবে ভালোবাসা আর টান সেই আগের মতোই আছে।সেজন্য নোমান এবার তার বাবার একদম পায়ে পড়লো।আর বললো,বাবা,প্লিজ রাগ টা একটু কমাও।প্লিজ বাবা।
তায়েব চৌধুরী তখন সরে গেলো।নোমান তখন তার বাবার কাছে গিয়ে বললো,
তুমিই বলো? যাকে আমি ভালোবাসি না তাকে কি করে বিয়ে করি?কিন্তু তুমি যেভাবে জোর করছিলে মুখের উপর নাও করতে পারি নি সেজন্য পালিয়ে গিয়েছি।এতে আমার দোষ টা কোথায়?

তায়েব চৌধুরী তখন নোমান কে আবার সরিয়ে দিলো,আর বললো,হ্যাঁ তোর তো কোনো দোষই নাই।তার আগে বল?পালিয়ে কি লাভ হয়েছে?দেখা আমাকে লাভ টা?

নোমান তখন বললো, তাহলে কি করতাম আমি?

–কি করতিছ মানে?আমাকে সত্য টা বললে কি প্রবলেম হতো?
নোমান তখন বললো, আমি তো নিজেও সত্য টা জানতাম না।কিছুদিন আগে জানলাম।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,ধর আমি তোকে ক্ষমা করে দিলাম।কিন্তু যে বছর গুলো জীবন থেকে হারিয়েছিস সেগুলো কি আর ফেরত পাবি?

নোমান তার বাবার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।

তখন তার বাবা বললো, চুপ করে আছিস কেনো?উত্তর দে?তারপর শুনলাম আমানের শালির সাথে আবার এনগেজড ও করেছিস।বিয়ে টা কি তোর কাছে ছেলেমানুষী মনে হয়?এখন আবার শুনছি শিলাকে বাদ দিয়ে তানিশাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস?কি শুরু করেছিস বল তো তুই?

নোমান সেই কথা শুনে বললো,বাবা! ভুল হয়ে গেছে আমার।আমি বুঝতে পারি নি।

তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, এতো ভুল কেনো হয় তোমার?বুঝেশুনে কাজ করতে পারো না?এখন এ ভুলের মাশুল কে দেবে?
ছাপোস,তানিশার সাথে তোর বিয়ে হলো,কিন্তু তখন শিলার কি হবে?ও বেচারা কত কষ্ট পাবে ভেবেছিস একবার?

নোমান এবার একদম নিশ্চুপ হয়ে রইলো।সে বুঝতে পারছে আসলেই সে ভুল করেছে।তার বাবার প্রশ্নের কোনো উত্তর নাই তার।

হঠাৎ নোমানের ফোনে রিং বেজে উঠলো।তানিশা কল দিয়েছে।নোমান ফোনের দিকে তাকাচ্ছে শুধু কিন্তু রিসিভ করছে না।তখন তার বাবা ধমক দিয়ে বললো, কল রিসিভ করো।এই বলে তিনি চলে গেলেন।

আর নোমান এদিকে তাড়াতাড়ি করে কল টা রিসিভ করলো।আর বললো,হ্যালো তানিশা।

কিন্তু তানিশা কোনো উত্তর দিলো না।

নোমান তখন বললো, কথা বলো না কেনো?প্লিজ রিপ্লাই দাও।

তানিশা এবারও চুপচাপ।
নোমান তখন বললো, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই তানিশা।কখন কোথায় দেখা করবে জাস্ট জানিয়ে দাও।
তানিশা এতোক্ষনে উত্তর দিলো।সে বললো,আমি আপনার সাথে কখনোই দেখা করবো না আর।আপনি কি জন্য কল দিয়েছেন?সেদিন এতোগুলো অপমান করেও কি শান্তি হয় নি আপনার?এজন্য আবার ডাকছেন আমাকে যাতে আমাকে আরো বেশি অপমান করতে পারেন।

নোমান তখন বললো,সরি ইয়ার।ভুল হয়ে গেছে আমার।সরি।প্লিজ রাগ করো না।তোমার সাথে দেখা করাটা এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। প্লিজ।

–নো।আমি করবো না দেখা আপনার সাথে।কেনো দেখা করবো আপনার সাথে?

–বিকজ,আই লাভ ইউ।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো, কি বললেন?আরেকবার বলেন।শুনতে পাই নি।

–আই লাভ ইউ।

তানিশা এবার নোমানকে ধমক দিয়ে বললো,এই আপনি কোন সাহসে অন্যজনার ওয়াইফকে আই লাভ ইউ বলেন?আপনার সাহস তো দেখি কম না?

নোমান সেই কথা শুনে বললো, অন্যজনের ওয়াইফ মানে?কি যা তা বলছো?

–হ্যাঁ আমি ঠিক বলছি।কারণ আমি বিয়ে করতেছি।দুই একদিনের মধ্যেই বিয়ে আমার।

নোমান সেই কথা শুনে বললো, এই, এই কি বলছো এসব?পাগল হইছো তুমি?বিয়ে করছো মানে টা কি?

–বিয়ে করছি মানে বিয়ে করছি।আপনি যদি শিলার সাথে এনগেজড করতে পারেন তাহলে আমি কেনো বিয়ে করতে পারি না?আর কখনোই ফোন দিবেন না আমাকে।এই বলে তানিশা কল কেটে দিলো।

নোমান তা দেখে আবার কল দিলো।কিন্তু তানিশা এবার আর কল বেক করলো না।কারণ সে নোমানের উপর ভীষণ অভিমান করে আছে।নোমান কি করে তাকে বাদ দিয়ে অন্য মেয়ের সাথে এনগেজড করে নিলো?তানিশার যখনই এই কথাটা মনে হয় তখনি তার ভীষন রাগ ওঠে।সে তখন আর নোমানের কথা সহ্য করতেই পারে না।

এদিকে নোমান তানিশার বিয়ের কথা শুনে দৌঁড়ে তার ভাই এর রুমে চলে গেলো।

#চলবে,

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_২৬(বোনাস পর্ব)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

শিরিন একটুতেই সন্দেহ করে আমানকে আর কোনো কিছু না বুঝেই আজেবাজে মন্তব্য করে।আমান এজন্য একটু বকাঝকা করলে উলটো আবার রাগ করে বসে থাকে।হাত ধরতে দেবে না,কাছে আসতে তো দেবেই না এমনকি সে আমানের সামনেও আর যাবে না।যার কারনে বাধ্য হয়ে আমানকেই তার ভাঙ্গাতে হয়।হাজার হোক বউ তো!আমান শিরিনের রাগ ভাঙ্গাতে ব্যস্ত আছে এখন।
ঠিক সেই সময়ে নোমান তার ভাই এর ঘরে উপস্থিত হলো।কিন্তু নোমান যখন দেখলো তার ভাই আর ভাবি রোমান্টিক মুহুর্ত কাটাচ্ছে সে সাথে সাথে অন্য মুখ হয়ে বললো,
সরি,সরি।ভুল সময়ে এসে পড়েছি।আসলে ভাইয়া, খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা কথা ছিলো তোমার সাথে।

আমান সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বেড থেকে নেমে আসলো।আর বললো, কি কথা?

নোমান তখন বললো,ভাইয়া!তানিশা বিয়ে করছে।
আমান সেই কথা শুনে বললো,বাহঃ এতোদিনে তাহলে তানিশার শুভ বুদ্ধির উদয় হলো।ঠিক কাজই করছে সে।
নোমান তখন বললো,কি বলছো ভাইয়া?
–হ্যাঁ ঠিক বলছি আমি।তোর মতো এমন বোকা হাদারাম জামাই দিয়ে সে করবে টা কি?
–আমি বোকা?হাদারাম?
–এবসুলেটলি!এতে কোনো সন্দেহ নাই।যে ছেলে তার প্রেমিকার মন জয় করতে পারে না সে বোকা ছাড়া আর কি হতে পারে?

নোমান আমানের কথা শুনে বললো, ভাইয়া এটা কিন্তু তর্ক করার সময় নয়।কিছু একটা ব্যবস্থা করো না প্লিজ।
–না,আমি এবার আর কোনো ব্যবস্থা করতে পারবো না।এতোদিন শুনেছি তোরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসিস।যেহেতু আমি ভালোবাসাকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করি সেজন্য যতটুকু হেল্পের প্রয়োজন ততটুকু করেছি।কিন্তু এখন যেখানে তানিশা নিজের ইচ্ছায় অন্যখানে বিয়ে করছে সেখানে আমার আর কি করার আছে?নিজের ব্যবস্থা নিজে কর গিয়ে।

নোমান সেই কথা শুনে বললো, ভাইয়া এটা বলতে পারলে তুমি?আমি কি অবস্থার মধ্যে আছি সেটা তো বুঝতেই পারছো?টেনশনে চেম্বারে পর্যন্ত বসতে পারছি না।হাসপাতাল থেকে একের পর এক ফোন আসছে।কিন্তু আমি আগেই চেম্বারে বসবো না বলে ঠিক করেছি।আগে এই সমস্যার সমাধান করবো তবেই নিজের পেশায় মন দেবো।এবারের মতো একটা সমাধান বের করে দাও না প্লিজ।এই বলে নোমান আমানের হাত ধরলো।

আমান তখন বললো, না পারবো না আমি।তোর প্রেমিকা কে তুই কি করে ঠিক করবি সেটা তুই ভালো জানিস।এই বলে আমান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

এদিকে শিরিন এগিয়ে এসে বললো, তানিশা মেয়েটা বড্ড নাটকবাজ।তা না হলে এসব কি কাহিনি শুরু করছে?ফাজলামির একটা লিমিট থাকা দরকার?এতোদিন পর কোথা থেকে এসে এক এক করে সবার জীবন টা নষ্ট করে ফেলছে।আমার বোন টার জীবন টা একদম তছনছ করে দিলো।বোনটা আমার টেনশনে খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে।

শিলার কথা শুনে নোমানের খুবই মন খারাপ হলো।তারই জন্য আজ শিলা আপসেট হয়ে আছে।সেজন্য নোমান বললো, ভাবি শিলার কি খবর?ও কেমন আছে?

শিরিন তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো,ও কেমন আছে সেটা শুনে তুমি কি করবে?তুমি ওর জীবনটা একদম নষ্ট করে দিলে নোমান।এরকম না করলেও পারতে।তোমার থেকে এটা আশা করি নি আমি।আমার আব্বু আম্মু কিন্তু এখনো শোনে নি কিছু।যেদিন শুনবে সেদিন নিজেকে লুকানোর জায়গা খুঁজে পাবে না।বিয়ে নিয়ে ছেলেখেলা শিখিয়ে দেবে তোমাকে।

নোমান শিরিনের কথা শুনে আর এক মুহুর্ত ও রুমে থাকলো না।সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তা না হলে তার শিরিন ভাবি মাথাটা আরো খারাপ করে ফেলবে।এমনিতেই সে মরন জ্বালার মধ্যে আছে।তারমধ্যে শিরিন ভাবি আরো তাকে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে।কোনদিন যে নোমান এই টেনশন হতে মুক্তি পাবে সত্যি সে জানে না।

সারাদিন সারারাত চলে গেলো।বাট নোমান কোনো উপাই খুঁজে পেলো না।আমান আজ আর বাসাতেই আসলো না।সারারাত তার ডিউটি ছিলো।অন্যদিকে তায়েব চৌধুরী এখন পর্যন্ত নোমানের অপরাধ ক্ষমা করেন নি,তার সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তাকে দেখলেই সেখান থেকে চলে যাচ্ছে।এদিকে আবার তানিশা নোমানকে ব্লক দিয়ে রাখছে যাতে নোমান তাকে আর ফোন দিতে না পারে।
নোমান বুঝতে পারছে না সে কি করবে এখন?অনেক ভেবেচিন্তে নোমান সিদ্ধান্ত নিলো সরাসরি তানিশার বাড়ি চলে যাবে।তাছাড়া আর কোনো উপাই ও দেখছে না সে।সেজন্য নোমান আমানের থেকে তানিশার বাড়ির ঠিকানা নিলো।

নোমান পরের দিন ঠিক দুপুরবেলা ঠিকানা মতো তানিশার বাড়ি পৌঁছে গেলো।কারণ এসময় তানিশা বাড়িতেই থাকে।নোমানকে দেখামাত্র তহিদুল সাহেব আর শিউলি বেগম খুবই আশ্চর্য হলেন।কারণ তারা বুঝতে পারলেন না নোমান হঠাৎ এ সময়ে তাদের বাড়ি কেনো?তারা স্বামী স্ত্রী দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।

নোমান ও পুরাই বেয়াকুবের মতো চুপ করে থাকলো।সে কি বলবে নিজেও জানে না।তবে সে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।কিন্তু তানিশাকে দেখতে পেলো না।

তহিদুল সাহেব নোমানকে চুপ থাকা দেখে বললো বাবা নোমান!তুমি?তা কেমন আছো?
–জ্বি আংকেল আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা কেমন আছেন?
–আমরাও ভালো আছি।
এদিকে মিসেস শিউলি বেগম নোমানকে দেখামাত্র নাস্তা আনতে গেলেন।নোমানকে বাসায় আসা দেখে তিনি কেনো জানি খুবই খুশি হয়েছেন।

সবাই বেশ খুশিই হয়েছে নোমানকে দেখে।কিন্তু নোমান শুধু চেষ্টা করছে তানিশার কথা জিজ্ঞেস করার জন্য।কিন্তু পারছে না বলতে।এদিকে তহিদুল সাহেব এক এক করে সবার ভালোমন্দো জিজ্ঞেস করতে লাগলো।নোমানও এক এক করে উত্তর দিতে লাগলো। হঠাৎ সেখানে সোহান আসলো।
নোমান সোহানকে দেখামাত্র সালাম দিলো।সোহান সালামের উত্তর নিলো,কিন্তু সে চিনতে পারলো না নোমানকে।সেজন্য সে তহিদুল সাহেব কে জিজ্ঞেস করলো,বাবা! কে এই ছেলে?
তহিদুল সাহেব তখন হাসতে হাসতে বললো,চিনিস না একে?নোমান এটা?

সোহান সেই কথা শুনে বিস্ময়ভরা মুখ নিয়ে বললো,ও, নোমান এটা?আসলে অনেক দিন পর দেখা তো চিনতে পারি নি। এই বলে সোহান নোমানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
সরি নোমান।চিনতে পারি নি তোমাকে।
নোমান তখন বললো, ইটস ওকে দুলাভাই।
ঠিক তখনি স্বর্ণা হঠাৎ দৌঁড়ে এসে বললো,বাবা মার্কেটে যাবো কখন?
–এই তো যাবো মা।এই বলে সোহান তার মেয়েকে কোলে তুলে নিলো।

মার্কেটে যাওয়ার কথা শুনে নোমানের বুক টা কেমন যেনো ধক করে উঠলো।সে ভাবতে লাগলো,তারা আবার বিয়ের মার্কেটে যাচ্ছে না তো?তানিশা তো বলেছে দু এক দিনের মধ্যেই বিয়ে হবে তার।নোমানের মুখ চোখ একদম শুকিয়ে গেলো।সে তখন আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো,দুলাভাই!অসময়ে মার্কেটে যাচ্ছেন যে?
সোহান তখন হাসতে হাসতে বললো, সময় আর কই আছে?আজকের দিনটাই তো শুধু ফাঁকা।
পরে আর কখন করবো মার্কেট?
নোমানের এবার সত্যি ভয় হতে লাগলো।সে জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক সেই সময়ে আবার তানিয়া রেডি হয়ে এসে বললো,
হয়েছে আমার।চলো এখন।এই বলে সে যখন নোমানকে দেখলো সাথে সাথে বললো,নোমান তুমি?কতদিন পর দেখা!
নোমান সেজন্য তানিয়া কে সালাম দিয়ে বললো,আপু কেমন আছেন?
–জ্বি ভালো আছি ভাই।তুমি কেমন আছো?
–জ্বি আমিও ভালো আছি।এই বলে তানিয়া স্বর্নার হাত ধরে বললো,আংকেল কে সালাম দিয়েছো মামনি?
–আংকেল?ইনি আমার আংকেল হন?
–হ্যাঁ মামুনি।যাও সালাম দিয়ে এসো।
স্বর্না সেই কথা শুনে দৌঁড়ে নোমানের কাছে গিয়ে বললো,আসসালামু আলাইকুম আংকেল।কেমন আছেন আংকেল?
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
–আমিও ভালো আছি।এই বলে স্বর্ণা আবার তার মায়ের কাছে চলে গেলো।আর বললো,দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।কখন যাবো আমরা মার্কেটে?

তানিয়া আর সোহান তখন নোমানকে বললো,নোমান!তুমি তাহলে বসো একটু।আমরা মার্কেট থেকে ঘুরে আসছি।
নোমান মাথা নাড়িয়ে বললো,জ্বি আচ্ছা।
সেই কথা শুনে সোহান আর তানিয়া চলে গেলো।

এদিকে নোমানের হার্টবিট শুধু বাড়তেই আছে।তার এমন কেনো হচ্ছে সত্যি সে বুঝতে পারছে না।এদিকে আবার তানিশার পরিবারের লোকদের মতিগতি বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না।তারা সবাই কেমন যেনো এক অন্যরকম আচরণ করছে তার সাথে।
নোমান আর চুপ করে না থেকে বলেই ফেললো,আচ্ছা আংকেল তানিশা কই?ওকে দেখছি না যে?

তহিদুল সাহেব সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, ওর কথা আর বলো না।দুইদিন পর ওর বিয়ে।কই একটু কেনাকাটা করবে,একটু বিয়ের প্রস্তুতি নিবে তা না করে আজও চেম্বারেই বসে আছে।

–মানে,,,,বিয়ে?তানিশার বিয়ে দুইদিন পর?কি বলছেন এসব?

তহিদুল সাহেব সেই কথা শুনে বললো, বাবা নোমান!তুমি কি ঠিক আছো?এরকম করছো কেনো বাবা?
নোমান সেই কথা শুনে বললো, না আংকেল,আমি ঠিক আছি।ঠিক আছি আমি।এই বলে নোমান আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।আর সাথে সাথে তার ভাইকে ফোন দিলো।কিন্তু আমানের ফোন ব্যস্ত দেখালো।

এদিকে নোমানের পুরো শরীর ঘামতে লাগলো।আর হাত পা হঠাৎ করেই অবশ হতে লাগলো।সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।তার মাথা যেনো বনবন করে ঘুরতে লাগলো।এই বুঝি সে মাটিতে পড়ে যায়।কিন্তু নোমান নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করলো।তারপর একটা রিক্সা নিয়ে সোজা তানিশার চেম্বারে চলে গেলো।তানিশার সাথে আজ তোর বোঝাপড়া আছে।সে পাইছে টা কি?এভাবে হঠাৎ করে কাকে বিয়ে করছে সে?

এদিকে তানিশা অনেক আগেই বাসায় আসার জন্য হসপিটাল থেকে বের হয়েছে।সেজন্য নোমান আর তানিশার দেখা পেলো না।নোমান একদম পাগলের মতো হয়ে গেলো।সে তখন তানিশার এসিস্ট্যান্ট কে জিজ্ঞেস করলো তানিশা কখন ফিরবে চেম্বারে?

তানিশার এসিস্ট্যান্ট জানালো,ম্যাডাম আজ আর আসবেন না।ম্যাডামের বিয়ে তো সেজন্য কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়েছেন।
নোমান সেই কথা শুনে বললো, আপনারা কি জানেন কার সাথে বিয়ে হচ্ছে?
–না স্যার।জানি না।

নোমান সেই কথা শুনে আবার পাগলের মতো তানিশার বাসার দিকে ছুটে গেলো।সে এবার আর কিছুতেই চুপ থাকবে না।ওর ফ্যামিলির সবার সামনে তানিশাকে আজ বিয়ের কথা বলবেই বলবে।এভাবে তানিশার অন্য কোথাও বিয়ে হতেই পারে না।তীরে এসে কিছুতেই নৌকা সে ডুবতে দেবে না।সে ভাবতেই পারছে না তানিশা সত্যি সত্যি বিয়ে করছে।সে ভেবেছিলো হয় তো রাগ করে বলেছে তানিশা।

নোমান তানিশার বাসায় আসতেই তাড়াতাড়ি করে রিক্সা থেকে নেমে গেলো।সে আর এক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে পারছে না।এদিকে সে এতো তাড়াহুড়ো করার ফলে পুরো শরীর ঘেমে একাকার।শরীর একদম হাঁপসে গেছে তার।এক পা এগোতেই পারছে না।তবুও কষ্ট করে তানিশাদের দরজার সামনে গেলো।

কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখে তানিশার বাসায় বড় একটা তালা ঝুলানো।নোমানের মাথা এবার সত্যি পাগল হয়ে গেলো।সে তখন চিৎকার করে করে বললো,তানিশা!এরকম কেনো করতেছো?তানিশা!নোমান ফোন করে যে কথা বলবে সেটাও করতে পারছে না।নোমান একদম তানিশা তানিশা করতে করতে কেঁদে ফেললো।

এদিকে নোমানের চিৎকার করা দেখে তানিশাদের পাশের ফ্ল্যাট এর এক ছেলে বের হয়ে আসলো।আর জিজ্ঞেস করলো,আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?
নোমান তখন শান্ত হয়ে বললো,জ্বি।তানিশারা কই গেছে বলতে পারেন?
ছেলেটি তখন বললো,সরি ভাই।বলতে পারলাম না।ফোন করে শুনুন কই গেছে?
নোমান লোকটিকে এখন কি বলবে?তানিশা যে তাকে ব্লক করে রেখেছে।তার সাথে সে তো কোনো যোগাযোগ করতেই পারছে না।সেজন্য নোমান বললো,এক্সকিউজ মি ভাই।কিছু মনে না করলে আপনার ফোনটা থেকে একটু কল করতে পারি?
–জ্বি সিওর।এই বলে ছেলেটি তার ফোন দিলো নোমানকে।
নোমান তাড়াতাড়ি করে তানিশার নাম্বার ডায়াল করতে লাগলো।কিন্তু ছেলেটির ফোনে আগে থেকেই তানিশার নাম্বার সেভ করা ছিলো।নোমান সেজন্য তাড়াতাড়ি করে কল দিলো।কিন্তু তানিশা রিসিভ করলো না ফোন।নোমান আবার দিলো কল।কিন্তু এবারও তানিশা কল রিসিভ করলো না।এদিকে আবার ছেলেটির একটু তাড়া আছে।সেজন্য সে বললো, ভাই আমার একটু এক জায়গায় যেতে হবে।কিছু মনে না করলে ফোন টা নিতে হবে এখন।
নোমান সেই কথা শুনে ছেলেটিকে দিয়ে দিলো ফোনটা।

নোমান এখন কি করবে সত্যি তার মাথাতে খেলছিলো না।হঠাৎ তার মনে হলো কোনো দোকানে গিয়ে তো সে তানিশার সাথে কথা বলতে পারে।সেজন্য নোমান আর দেরী না করে রিক্সা নিয়ে সামনের একটা দোকানে চলে গেলো।এবং সেখান থেকে তানিশাকে কল দিলো।বাট তানিশা এবারও ধরলো না।নোমানের এবার মেজাজ বিগড়ে গেলো।তার ইচ্ছা করছে তানিশার দুই গালে দুইটা কষে থাপ্পড় মারতে।কি শুরু করেছে তার সাথে সে।নোমান তখন রাগ করে দোকানদারের ফোনটাই মাটিতে আছাড় দিতে ধরলো।

তা দেখে দোকানদার চিৎকার করে বললো, ভাই কি করছেন এটা?পাগল টাগল হলেন নাকি?এই বলে দোকানদার তাড়াতাড়ি করে ফোনটা নিয়ে নিলো।

নোমান তখন তার নিজের ফোন টা বের করে আমানকে আবার ফোন দিলো।এবার আমান রিসিভ করলো।আমান রিসিভ করার সাথে সাথে নোমান হাঁপাতে হাঁপাতে আর এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলো,
ভাইয়া তানিশার তো দুই দিন পরে সত্যি সত্যি বিয়ে হচ্ছে।এদের বাসার সবাই বিয়ের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে।আজ এরা সবাই বিয়ের কেনাকাটাও করছে।এখন আমার কি হবে?আজকের মধ্যেই কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

আমান সেই কথা শুনে বললো,তুই কই এখন?

নোমান জোরে জোরে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,তানিশাদের বাসার এখানে।ওরা কেউ বাসায় নেই।

আমান তখন বললো,ওখানে না থেকে আমাদের বাসায় চলে আয়।বাবাকে রিকুয়েষ্ট কর।তা না হলে আর কেউ এই সমস্যা থেকে তোকে বাঁচাতে পারবে না।

নোমান সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে এলো।

কিন্তু বাসায় এসে সে যা দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।কারন তানিশা এসেছে তাদের বাসায়।

নোমান তখন হাঁপাতে হাঁপাতে তানিশার কাছে চলে গেলো।আর তাকে জোরে করে এক ধাক্কা দিয়ে বললো,ফাজলামি শুরু করছো আমার সাথে?আমাকে রেখে কাকে বিয়ে করছো?আবার সেই বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছো এখানে?

তানিশা তখন বললো,কি বলছেন এসব?সবাই শুনছে তো?

–শুনুক।শোনার জন্যই তো বলছি।তোমার বিয়ে আমি অন্যখানে হতে দেবো না কিছুতেই।দরকার হলে জোর করে তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করবো।

তানিশা নোমানের এমন পাগলামি দেখে তার থেকে দূরে সরে গেলো।নোমান তখন তার বাবার হাত ধরে বললো,
বাবা, তানিশা কিন্তু আমাকে ভালোবাসে।আর আমিও ওকে ভালোবাসি।ও কিন্তু মন থেকে বিয়ে টা করছে না।রাগ আর জিদের জন্য করছে বিয়ে টা।প্লিজ এই বিয়ে টা হতে দিবে না।প্লিজ কিছু একটা করো বাবা।

তায়েব চৌধুরী কোনো উত্তর দিলেন না।তিনি ছেলের এমন পাগলামি দেখে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলেন।

এদিকে নোমান তার বাবাকে চুপ থাকা দেখে বললো, কি হলো বাবা?কিছু বলছো না কেনো?বিশ্বাস করো বাবা আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি।ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করে দেখো।এই বলে নোমান আমানকে বললো,ভাইয়া তুমি কিছু বলছো না কেনো?প্লিজ সবটা বলো বাবাকে।আমার কথা বিশ্বাস করছে না বাবা।

আমান সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,ভাই এবার একটু শান্ত হ।তোদের ভালোবাসার কথা সবাই জানে এখন।

–জানে সবাই?তারপরও তানিশার বিয়ে অন্য জায়গায় হতে দিচ্ছে কেনো?

আমান তখন বললো, না,অন্য জায়গায় হচ্ছে না বিয়ে।তোর সাথেই হচ্ছে।কাল রাতে বাবা গিয়ে সব ফাইনাল করে এসেছে।

নোমান আমানের কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।তার কি বলা উচিত এখন আর কি করা উচিত সেটাই সে ভুলে গেলো।নোমান একদম হা করে তাকিয়ে রইলো তার ভাই এর দিকে।

আমান তা দেখে বললো,এবার মাথা কি ঠান্ডা হয়েছে? এখন রুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নে।তারপর তানিশার সাথে মার্কেটে চলে যা।

নোমান তখন বললো,মানে?কিভাবে কি হলো?

–আবার কথা বলছিস?যা বললাম সেটা কর আগে।তানিশার বাবা,মা,ভাগ্নি, বোন দুলাভাই সবাই আগেই চলে গিয়েছে মার্কেটে।ওরা তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু তানিশাকে আমি বলেছিলাম বাসায় আসতে।যাতে তোরা দুইজন মিলে একসাথে মন মতো নিজেদের বিয়ের জন্য মার্কেট করতে পারিস।

#চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে