ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব-২১+২২

0
1480

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_২১
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

তানিশা শুধু সুযোগ খুজছে আমানের সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু সবার সামনে কি করে সে নোমানের কথা জিজ্ঞেস করে?এদিকে আবার শিরিন সারাক্ষণ আমানের সাথে সাথেই আছে।
অন্যদিকে জিসান এক দেখাতেই তানিশাকে পছন্দ করে ফেললো।সেজন্য সে শিলার কানে কানে কথা টা বললো যে তার পছন্দ হয়েছে মেয়ে।শিলা আবার তার বোন শিরিনকে বললো।কিন্তু শিরিনের এতোক্ষণ তানিশাকে বেশ ভালো লাগলেও এখন কেনো জানি আর তার প্রতি মন বসছে না।তানিশাকে আর জিসানের বউ করতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হচ্ছে না শিরিনের।সে কি করে নিজের স্বামীর পছন্দের মেয়েকেই আবার তার একমাত্র ভাই এর বউ করতে পারে?

আমান হঠাৎ বললো,তানিশা!আমার শালকের তো পছন্দ হয়েছে তোমাকে বাট তুমি কি বলো?তোমার তো নিজের একটা মন্তব্য আছে।
তানিশা এতোগুলো লোকের সামনে কি করে না বলে? সেজন্য সে বললো,আমান ভাইয়া আমি পরে জানাচ্ছি এখন আমাকে একটু বের হতে হবে। হসপিটালে আমার অনেকগুলো অপারেশনের রোগী অপেক্ষা করছে।এই কথা বলে তানিশা উঠতে ধরলো।কিন্তু তহিদুল সাহেব বললেন,মা তানিশা আর একটু অপেক্ষা কর।পাঁচটা বাজতে আরো অনেক দেরী আছে।

হঠাৎ শিলা বললো,আপনারা যদি কিছু না মনে করেন তাহলে জিসান ভাইয়া আর তানিশা আপুকে একটু আলাদা ভাবে কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত।ওনারা দুইজন দুইজনার সম্পর্কে আলাদা ভাবে একটু জেনে নিক।

তানিয়া সেই কথা শুনে বললো,হ্যাঁ ঠিক বলেছো তুমি।আমিও এটাই ভাবছি।এই বলে তানিয়া বললো,তানিশা তুই তোর রুমে চলে যা।আমরা জিসান কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
তখন তানিশা বললো,আপু তার আগে আমি একটু আমান ভাইয়ার সাথে কথা বলতে চাই।

আমান তানিশার কথা শুনে ভীষণ অবাক হলো।তানিশা আবার তার সাথে কি কথা বলবে?এদিকে শিরিন তো তানিশার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আমানের দিকে।আমান তা দেখে বললো, তানিশা কি বলবা তুমি?এখানেই বলো না?

তানিশা পড়ে গেলো মহাবিপদে।সে এখন সবার সামনে কি করে নোমানের কথা জিজ্ঞেস করে।সেজন্য তানিশা বুদ্ধি খাটিয়ে বললো,ভাইয়া আপনার সাথে আমি একটু পার্সোনাল ভাবে কিছু কথা বলতে চাই।আসলে তন্নির বিষয় এ আমার কিছু জানার ছিলো।

শিরিন তন্নির কথা শুনে বললো,কি শুনবা তন্নির কথা?
এই বলে শিরিন তন্নির ডিটেলস বলে দিলো।তন্নির জীবনে কি কি ঘটেছে সব বললো।কিন্তু তানিশা তো সবকিছু আগেই শুনেছে।তবুও চুপচাপ সেই কথা আবার শুনলো।

এবার তানিশা তার নিজের রুমে চলে গেলো।আর কিছুক্ষণ পরে জিসানকেও পাঠানো হলো রুমে।তানিশা জড় হয়ে এক পাশে বসলো।আর জিসান তানিশার থেকে একটু দূরেই বসলো।দুইজনই চুপচাপ। কারো মুখে কোনো কথা নাই।কারণ দুইজনই বুঝতে পারছিলো না কি কথা দিয়ে শুরু করবে?

তানিশাকে চুপচাপ থাকা দেখে জিসান নিজেই জিজ্ঞেস করলো,আপনার পুরো নাম কি?
তানিশা তার শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলো তানিশা তাবাচ্ছুম।
–ওহ,নাইচ নেম।যেমন সুন্দর নাম তেমন দেখতেও আপনি।
তানিশা বুঝতে পারলো তাকে পটানোর চেষ্টা করছে জিসান।কিন্তু সে এতো সহজে পটার মেয়ে না।

জিসান এবার বললো,আপনি তো দেশ থেকেই এমবিবিএস কম্পিলিট করেছেন।তা বিদেশ থেকে পড়াশোনা করার ইচ্ছা হয় নি?

–না হয় নি।কারণ বিদেশে পড়ালেখা করার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই।

জিসান সেই কথা শুনে বললো,আপনি অনেক সাদা মনের মানুষ।মনের মধ্যে কোনো জটিলতা নেই আপনার।সেজন্য কি সুন্দর সত্য কথাটা বলে দিলেন।

–জ্বি আমি এমনি।সবসময় সত্য কথা বলারই ট্রাই করি।

এবার জিসান জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা আপনার কি নিজস্ব কোনো হাসপাতাল দেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে?

–হ্যাঁ অবশ্যই।তবে সেটা নিজের ইনকামের জন্য নয়।আমার গ্রামের মানুষ জনের জন্য দিতে চাই।

–ওয়াও!আপনার চিন্তাভাবনা অনেকসুন্দর।
আচ্ছা আপনার পছন্দের খাবার কি?

তানিশা আবার তার শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলো,সব খাবারই আমার ভালো লাগে।একক ভাবে কোনো খাবারের নাম বলতে চাই না।কারন একেক খাবারের একেক টেস্ট।
–ইয়েস। রাইট এনসার।
জিসান এবার বললো আপনি কিছু জিজ্ঞেস করুন।আমি তো অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করলাম।

তানিশা তখন বললো আমার কিছু জিজ্ঞেস করার নাই।আপনার যদি আর কিছু জিজ্ঞেস করার থাকে করতে পারেন।আমার আবার পাঁচটার মধ্যেই হাসপাতালে যেতে হবে।

জিসান তখন বললো,এবার একটা পার্সোনাল কথা জিজ্ঞেস করবো?

তানিশা জিসানের প্রশ্নের অপেক্ষায় না থেকে বললো,আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই।তবে মনে মনে একজনকে ভীষণ পছন্দ করি।কখনো তাকে ভালোবাসার কথা বলা হয় নি।
জিসান এমন উত্তরে একদম কোনঠাসা হয়ে গেলো।সে আর কি প্রশ্ন করবে বুঝতে পারলো না।তবুও একটা শেষ প্রশ্ন করলো তাকে।আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে?আমাকে কি বিয়ে করতে ইচ্ছুক আপনি?

তানিশা এক কথাই বলে দিলো না,আমি আপনাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নই।

তানিশার এমন উত্তর শুনে জিসান আর এক মুহুর্তও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে গেলো।জিসান রুম থেকে বের হয়েই শিলাকে বললো,চলো তাড়াতাড়ি। বাসায় যাই।

–কেনো ভাইয়া?কি হয়েছে?

জিসান তখন রাগ দেখিয়ে বললো মেয়ে বিয়ে করবে কি করবে না তা না জেনে তোরা কেনো নিয়ে এসেছিস এখানে?আমার কি মানসম্মান নাই নাকি?সারা দুনিয়ার মেয়ে মানুষ আমাকে বিয়ে করার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।কই আমি তাদের রিজেক্ট করে দেবো কিন্তু এই মেয়ে তো আগেই আমাকে রিজেক্ট করছে।

আমান সেই কথা শুনে এগিয়ে গিয়ে বললো,কি হয়েছে শালক?এতো রাগ হইছো কেনো?

জিসান তখন বললো, ইনি তো আমাকে বিয়ে করবেন না দুলাভাই।এনার অন্য জায়গায় পছন্দ আছে।হয়তো ফ্যামিলির লোকজন জোর করেই রাজি করাতে চেয়েছিলেন আমার সাথে।

জিসানের কথা শোনামাত্র তানিয়া তানিশার কাছে গিয়ে বললো,তানিশা কি বলেছিস জিসানকে?জিসান এভাবে বলছে কেনো?

তানিশা তখন বললো আমার পছন্দ হয় নি ছেলে।চললাম আমি হসপিটালে।এই বলে তানিশা বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।

তানিশার এমন ব্যবহার দেখে পাত্রপক্ষের সবাই অবাক।বিশেষ করে আমান।আমান মনে মনে বলতে লাগলো তানিশার স্বভাব একটুও চেঞ্জ হয় নি।তার মুখের উপর না বলা স্বভাব এখনো রয়ে গেছে।আমানের আজ ভীষণ জানতে ইচ্ছে হচ্ছে তানিশা কেনো এখনো বিয়ে করে নি।আর সবাইকে কেনো সে মুখের উপর না করে দেয়।কিন্তু সবাই আছে বিধায় কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

এদিকে শিরিন আর শিলা ভীষণ অপমানিত বোধ করলো।তাদের মতো এমন সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকদের কিভাবে অপমান করতে পারলো?বিশেষ করে জিসান খুবই লজ্জা পেলো।সে ঘটক কে খুঁজতে লাগলো।আজ ঘটককে হাতের কাছে পেলে একদম মেরেই ফেলবে।
সবাই এক এক করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।কিন্তু আমান রয়ে গেলো।সে এতোক্ষণ দিয়ে বুঝতে পারলো তানিশা কি জন্য তার সাথে পার্সোনাল ভাবে কথা বলতে চেয়েছে। তানিশা হয়তো তাকে কিছু বলতে চায়
আমান সেজন্য তানিশার ফোন নাম্বার নিলো তানিয়ার থেকে।কিন্তু হঠাৎ শিরিন এসে বললো,কি হলো তোমার আবার?আসতেছো না কেনো?

আমান তখন বললো যাও তুমি।আমি একটু আংকেলের সাথে কথা বলে আসছি।অনেকদিন পর দেখা।কিন্তু শিরিন গেলো না।সে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।আমান সেজন্য আর অন্য কোনো বিষয়ে কথা বললো না।শুধু জিজ্ঞেস করলো তারা কেমন আছে।শরীরের অবস্থা কেমন?
তারপর আমানও চলে গেলো।

সারারাস্তা শিরিন,শিলা,আর জিসান আমানকে বকতে লাগলো।এ কোন আত্নীয় তোমার?মিনিয়াম ভদ্রতা শেখে নি।এইভাবে কাউকে সরাসরি রিজেক্ট করে কেউ?

আমান তখন বললো,তানিশা এমনই।ও যা বলে মুখের উপরই বলে।

শিরিন তখন বললো, ওহ,বুঝেছি।এইভাবে তোমাকেও বুঝি না করেছিলো।

শিরিনের কথা শুনে শিলা আর জিসান বললো কে কাকে না করেছিলো আপু?

শিরিন কোনো উত্তর দিলো না।আমান বুঝতে পারলো তানিশা কে কিছুতেই শিরিন সহ্য করতে পারছে না।আমান আজ দিয়ে বুঝতে পারলো আসলে তার তানিশার কথা বলাই উচিত হয় নি।শিরিন কে সে বিশ্বাস আর ভালোবাসার থেকে সত্য টা বলে দিয়েছিলো।কিন্তু এখন তো দেখি শিরিন কথায় কথায় তানিশার কথা বলছে।

এদিকে তানিশা চেম্বারে গিয়ে কাঁদতে লাগলো।তার আর এই অস্থিরতা ভালো লাগছে না।নোমানের অবস্থা না জানা পর্যন্ত সে শান্তি পাচ্ছিলো না।তানিশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচটা বাজতে এখনো ১৫ মিনিট বাকি আছে।সেজন্য সে আবার তন্নির বেডে চলে গেলো।
তন্নি আর মিসেস সায়রা বেগম রুমে আছেন।অন্যদিকে ইকবাল আর ইকবালের মেয়ে বাহিরে গেছে সবার জন্য নাস্তা আনতে।সায়রা বেগম তানিশাকে দেখামাত্র বললো,আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম।ভালো আছেন ম্যাডাম?
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভালো আছি আমি।এই বলে তানিশা সায়রা বেগমকে কিছুক্ষণ বাহিরে যেতে বললো।সায়রা বেগম সাথে সাথে বাহিরে চলে গেলো কিন্তু তার মনের মধ্যে খচখচ করতে লাগলো।তিনি ভাবতে লাগলেন ডাক্তার ম্যাডাম এভাবে বার বার একাকি কি কথা বলছে তন্নির সাথে।তাছাড়া তিনি তো এর আগে অনেক হাসপাতালেই গিয়েছেন।কোনো হাসপাতালে তো দেখেন নি গাইনি ডাক্তার বার বার তার সিজারের রোগীকে দেখতে আসে।ডাক্তার ম্যাডামরা তো সিজার করেই চলে যায় আর তো খোঁজ ও নেয় না।তাহলে ইনি বার বার কেনো খোঁজ নিচ্ছেন?সেজন্য সায়রা বেগম দরজার কাছে কান পেতে থাকলো।

তানিশা তন্নিকে বললো, এখন কেমন লাগছে শরীর টা?
–মোটামুটি ভালো।বাট ব্যাথা তো কমছে না।
তানিশা তখন বললো ব্যাথা সারতে দুই তিন দিন তো লাগবেই।তবে দামি ঔষধ দেওয়া হইছে দুইদিনেই ভালো হয়ে যাবে।
তন্নি তখন বললো তুই তখন তাড়াহুড়ো করে চলে গেলি যে?বাসায় কোনো প্রবলেম হয়েছে কি?
–হ্যাঁ, অনেক বড় প্রবলেম।আমাকে আজ ও দেখতে এসেছিলো পাত্রপক্ষ।কিন্তু পাত্রপক্ষ দেখে আমার চোখ তো একদম কপালে উঠে গেলো।কারণ পাত্র ছিলো আমাদের আমান ভাইয়ার শালক।

তন্নি সেই কথা শুনে নিজেও ভীষণ অবাক হলো।কি আশ্চর্যজনক কথা।সে তখন বললো, জিসান ভাইয়াকে আমিও চিনি।আমাদের নোমান ভাইয়ার ব্যাচের উনি!অনেকবার বাসাতেও এসেছিলেন।তাছাড়া এখন তো আত্নীয় হয়েছে এখন নিশ্চয় অনেক আসে বাসাতে।

–ও তাই?ঢাকা মেডিকেলের স্টুডেন্ট ছিলেন উনি?
–হ্যাঁ।
–কই আমি তো একদিনও কলেজে দেখি নি ওনাকে।
তন্নি সেই কথা শুনে বললো এতো স্টুডেন্ট এর মধ্যে কি করে দেখবি?
তানিশা তখন হঠাৎ করেই বললো, তন্নি তুই কি সত্যি জানিস না নোমান কোথায়?প্লিজ জানলে বল না?
এই বলে তানিশা তন্নির হাত ধরে রিকুয়েষ্ট করলো।

তন্নি তখন বললো বিশ্বাস কর আমি জানি না কিছু।নোমান ভাইয়াকে মামা বাসায় উঠতে দেয় নি।তারপর নোমান ভাইয়া যে কই গেছে সত্যি আমরা জানি না কেউ।তবে আমার মনে হয় আমান ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ আছে নোমান ভাইয়ার।

তানিশা তখন বললো আচ্ছা, আমান ভাইয়ার হঠাৎ করে কি করে বিয়ে হলো জানিস কিছু?

–হ্যাঁ জানি।জিসান ভাইয়ার বাবার সাথে তায়েব মামার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো।সেজন্য হয়তো দুই বন্ধু মিলে ঠিক করেছিলো।

তানিশা তন্নির সাথে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে রুম থেকে বের হলো।তবে সে তার মন কে বোঝাতে পারছিলো না।এই মুহুর্তে তার নোমানের সাথে দেখা করাটা ভীষণ জরুরি।

তানিশা বের হওয়ার সাথে সাথে মিসেস সায়রা বেগম তন্নিকে বললো,ডাক্তার ম্যাডাম কে তুমি কি আগে থেকেই চেনো?

তন্নি আর লুকানো না কিছু।সে বললো হ্যাঁ।ও আমার কলেজের বান্ধুবী হয়।

সায়রা বেগম সেই কথা শুনে বললো,আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না এটা।তোমার বান্ধুবী ডাক্তার আর তুমি সামান্য একটা নার্স ও হতে পারো নি?পড়ালেখা করা বাদ দিয়ে কি শুধু প্রেম পিরিতি করে বেড়িয়েছো?

তন্নি সেই কথা শুনে বললো,মা কি বলছেন এসব?যেটা জানেন না সেটা বলেন কেনো?

হঠাৎ ইকবাল আর তার মেয়ে খাবার নিয়ে রুমে ঢুকলো।তখন দিয়ে সায়রা বেগম চুপ হয়ে গেলো।তন্নিও আর কথা বাড়ালো না।কারন ইকবাল এসব তর্ক পছন্দ করে না।তবে তন্নি তার শাশুড়ির কথা শুনে কেঁদে ফেললো।সে ভাবতে লাগলো এই মহিলা পেলো এক নতুন ইস্যু। এখন এটা নিয়েই সারাক্ষন ঝগড়া করবে।

তানিশা একে একে পাঁচটা অপারেশন সম্পন্ন করলো।তারপর সে ভালো করে ফ্রেশ হয়ে নিজের চেম্বারে একটু রেস্ট করার জন্য বসলো।আর কিছুক্ষনের জন্য চোখটি বন্ধ করলো।আর সাথে সাথে তার চোখে ঘুম এসে গেলো।কিন্তু বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারলো না তানিশা।কারণ হঠাৎ তার ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো।

তানিশা চোখ বন্ধ করেই তার ফোনটা হাতে নিলো আর রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,হ্যালো কে বলছেন?
অপর পাশ থেকে আমান বললো, তানিশা আমি আমান।
আমানের নাম শোনামাত্র তানিশা একদম চমকে উঠলো।সে তখন বললো আমান ভাইয়া আপনি?আমি আরো মনে মনে ভাবছিলাম আপনার ফোন নাম্বার টা নেওয়া হয় নি।
আমান তখন বললো তানিশা তুমি আমাকে পার্সোনাল ভাবে কি বলতে চেয়েছিলে?তখন তোমার ভাবি ছিলো বিধায় শুনি নি।
তানিশা তখন বললো, ভাইয়া নোমান কোথায়?উনি নাকি আর আপনাদের বাসাতে থাকেন না?

আমান বেশ অবাক হলো তানিশার মুখে নোমানের কথা শুনে।সেজন্য আমান কিছুক্ষন চুপ হয়ে থাকলো।
তানিশা তখন বললো, ভাইয়া চুপ হয়ে রইলেন যে?প্লিজ বলেন না একটু।

আমান তখন বললো আসলে তানিশা সে এক বিরাট কাহিনী। পরে আরেকদিন সময় করে বলবো।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো,ভাইয়া প্লিজ এক্ষুনি বলেন।
আমান তখন বললো তার আগে বলো দেখি তুমি নোমানের কথা কেনো জানতে চাচ্ছো?

তানিশা তখন বললো আসলে ভাইয়া আজ আমাদের হসপিটালে তন্নির অপারেশন হয়েছে।তো ওর থেকে শুনলাম যে নোমান নাকি সেই দিনের পর থেকে আর বাসায় আসে নি।তাহলে উনি গিয়েছেন টা কোথায়?সেজন্য জানতে ইচ্ছে হলো।

আমান তখন বললো,আসলে আমিও জানি না।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো, ভাইয়া আপনার থেকে এরকম উত্তর আমি কখনোই আশা করি নি।আমি ভেবেছিলাম আপনি সত্য কথা বলবেন।
এই বলে তানিশা কল কেটে দিলো।

আমান তখন আবার কল দিলো তানিশাকে।কিন্তু তানিশা রিসিভ করলো না।তখন আমান মেসেজ দিয়ে বললো তানিশা কল ধরো।বলছি সব।

তানিশা সাথে সাথে কল রিসিভ করলো।আমান তখন বললো,
নোমান বাবার কথা অমান্য করায় বাবা আর তাকে বাসায় উঠতে দেয় নি।সেজন্য নোমান তার এক বন্ধুর বাসায় ওঠে।কিন্তু বন্ধুর বাসায় আর কয়দিন থাকবে?এদিকে সে এবার ফাইনাল ইয়ারে উঠবে।ভীষণ পড়ার চাপ তার।সেজন্য নোমান একদিন আমাকে ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে ভাইয়া কি করবো এখন?আমার তো পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এখন।আমি কি আর জীবনেও ডাক্তার হতে পারবো না?

আমি সেই কথা শুনে বাবাকে অনেক রিকুয়েষ্ট করি যে বাবা এমন করো না।ওর তো পড়াশোনা একদম গোল্লায় উঠে যাবে।শেষ পর্যন্ত এসে যদি পরীক্ষা না দেয় তাহলে এ কয় বছর পড়াশোনা করে ওর কি লাভ হলো?
বাবা তখন বললো,নোমান নামের আমার কোনো ছেলে নাই।যে আমাকে এতোগুলো মানুষের মধ্যে অপমান করলো সে আমার ছেলেই হতে পারে না।তন্নির জীবনটা ও একদম ছারখার করে ফেললো।তাহমিনার চোখের দিকে আমি তাকাতে পারছি না।ওর যেদিকে মন চায় ও চলে যাক।লাগবে না ওর ডাক্তার হওয়া।

বাবার কথা শুনে বুঝে গেলাম বাবা ভীষণ রাগ করেছেন।আর ওনাকে বোঝানো যাবে না।সেজন্য নোমানকে আমি একটা হোষ্টেলে রেখে আসলাম।নোমান হোষ্টেলে থেকেই তার এমবিবিএস কোর্স কম্পিলিট করলো।তবে ওর নাকি বেশ অসুবিধা হচ্ছিলো।কারন হোষ্টেলের ছেলেরা ঠিকভাবে পড়াশোনা করতো না।উলটো ওর পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটাতো।তখন আমি ওকে শান্ত্বনা দিতাম যে এভাবেই পড়তে হবে।যে করেই হোক তোকে পাস করতেই হবে।
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ রহমতে নোমান কোনোমতে পাশ করে গেলো।তারপর এক বছরের ইন্টারনিও করে।বাট বাবা তবুও ওকে বাসায় উঠতে দেয় না।ওর ইচ্ছা ছিলো বিদেশে গিয়ে সে তার ক্যারিয়ার গড়বে।কিন্তু তা আর হলো না।আমার যতটুকু সামর্থ্য ছিলো আমি ততটুকুই চেষ্টা করেছি।তবে নোমান মানসিক ভাবে ভীষণ ভেংগে পড়েছে।কারণ তার ইচ্ছে যে পূরন হলো না।এখন সে অনেক বেশি আফসোস করে কেনো যে বাবার কথা শুনলো না।আজ বাবার কথা শুনলে তার ক্যারিয়ার আরো অনেক ভালো হতে পারতো।

নোমানের কথা শুনে তানিশার ভীষণ মন খারাপ হলো।কারণ নোমান অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট ছিলো।সে বিদেশ থেকে আরো অনেক বড় ডিগ্রি আনতে পারতো।কিন্তু তার স্বপ্ন যে এভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে তানিশা ভাবতেই পারছে না।তানিশা তখন বললো ভাইয়া নোমান এখন কোথায় থাকে?ওর ঠিকানা কি দেওয়া যাবে?
–না,দেওয়া যাবে না।সরি তানিশা।কারণ নোমান বারণ করে দিয়েছে।কেউ যাতে ওর ঠিকানা না পায়।বলতে গেলে সে এখন সবার আড়ালে থাকতেই বেশি পছন্দ করে।কোনো আত্নীয়স্বজনের সাথেও সে যোগাযোগ করে না।
তানিশা তখন বললো,নোমানের চেম্বার টা কোথায়?সে এখন কোথায় চাকরি করছে?
বা ওনার ফোন নাম্বার টা দিন অন্তত।

আমান বুঝতে পারছে না কিছু।তানিশা হঠাৎ এতো নোমান নোমান করছে কেনো?তবে তানিশার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে নিশ্চয় এদের মধ্যে কোনো কাহিনী আছে।সেজন্য আমান নোমানের ফোন নাম্বার টা দিলো।আর ওর চেম্বারের ঠিকানাও বলে দিলো।

তানিশা নোমানের ফোন নাম্বার পাওয়ার সাথে সাথে কল দিলো তাকে।এতোক্ষন যদিও তার শরীর টা ভীষণ ক্লান্ত লাগছিলো।কিন্তু নোমানের খোঁজ পাওয়ায় কিছুটা ভালো লাগছে।
তানিশা অনেক কয় বার ফোন দিলো নোমানকে।কিন্তু নোমান রিসিভ করলো না ফোন।তানিশা তখন ভাবলো হয় তো নোমান ব্যস্ত আছে।সেজন্য তানিশা আর বিরক্ত করলো না তাকে।সে ঠিক করলো কাল নিজে গিয়ে সারপ্রাইজ দেবে নোমানকে।

আজ আর সারারাত তানিশা ঘুমাতে পারলো না।তার দুচোখের পাতা কিছুতেই সে এক করতে পারলো না।ভীষণ টেনশন হচ্ছিলো তার।এতোদিন পর নোমানের মুখোমুখি হচ্ছে সে।না জানি নোমান তাকে দেখে কি বলে?আবার ভাবছে নোমান আবার রাগ করে তাকে যা নয় তাই বলবে নাকি?তানিশা সে প্রস্তুতিও নিয়ে নিলো।কারণ সব দোষ তো তারই।তার জন্যই এতোকিছু হয়েছে।সেজন্য নোমান কিছু বললে সেই কথা শোনার ধৈর্য্য তার অবশ্যই থাকতে হবে।সেই নোমানকে আঘাত দিয়েছে।নোমানের ভালোবাসা ও সে নিজেই প্রত্যাখ্যান করেছে।

পরের দিন তানিশা আর হসপিটালে গেলো না।সে একদিনের জন্য ছুটি নিলো।যদিও তার চাকরি জীবনে সে এই প্রথম ছুটি নিচ্ছে।সেজন্য তানিশা সাথে সাথে ছুটি পেয়ে গেলো।

তানিশা আজ তার মনের মতো করে সাজলো।নেভী ব্লু কালারের একটা সুতি শাড়ি পড়ে নিলো।তারপর ম্যাচিং করে চুড়িও পড়লো।গলায় পাথর বসানো একটা নেকপিস পড়ে নিলো।আর কানের দুল নেকপিসের সাথে ম্যাচিং করে পড়লো।তারপর চুলগুলো সুন্দর করে একটা খোঁপা করে নিলো।আর তাতে গুজে দিলো গাজরা।হাতে একটা পার্স নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো তানিশা।

সকাল সকাল তানিশাকে কোথাও যেতে দেখে তানিয়া বললো, এতো সাজগোজ করে কই যাচ্ছিস?
–একটু বাহিরে যাচ্ছি আপু।
তানিয়া সেই কথা শুনে আর কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো না।কিন্তু তানিশার ভাগ্নি স্বর্না সে ভীষণ জিদ ধরে বসলো যে সেও বাহিরে যাবে।
কিন্তু তানিশা স্বর্নাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বললো,আজ না মামনি,অন্য আরেকদিন নিয়ে যাবো।কারণ আজ আমার খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা মিটিং আছে।

তানিশাকে আজ কেনো জানি ভীষণ খুশি খুশি লাগছে।সে আজ আর নিজের মধ্যে নেই।অন্যরকম একটা ফিলিংস হচ্ছে তার।মনে হচ্ছে বহুদিন পর বাতাসে প্রেম প্রেম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
তানিশা একটা রিক্সা নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে চলে গেলো।
আজকের আবহাওয়া টা বেশ ভালো লাগছে তানিশার কাছে।রোদ আছে কিন্তু রোদের তেমন একটা তেজ নাই।থেকে থেকে একটু বাতাসও হচ্ছে।বেশ ভালো লাগছে তার।
হঠাৎ বাস আসলে তানিশা তাড়াতাড়ি করে উঠে পড়লো বাসে।বাসে ওঠার সাথেই সব হা করে তাকিয়ে রইলো তানিশার দিকে।তানিশার কারো দিকে দেখার আজ টাইম নাই।সে শুধু অপেক্ষা করছে কখন তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।

প্রায় এক ঘন্টা পর তানিশা নোমানের চেম্বারে এসে গেলো।নোমান নিজেও একজন সরকারি ডাক্তার।সেজন্য তার চেম্বারে ভীষণ ভীড়।তানিশা হাসপাতালের ভিতর প্রবেশ করতেই দেখে বিশাল বড় একটা লাইন।সেজন্য চেম্বারে ঢুকতে হলে তাকেও এই লাইনে দাঁড়াতে হবে।কিন্তু তানিশার সেই ধৈর্য্য আছে নাকি?সে তখন আবার ফোন দিলো নোমানকে।কিন্তু এবার নোমানের এসিস্ট্যান্ট ফোন রিসিভ করলো।তানিশা তখন বললো একটু ডাক্তার নোমানকে দিন প্লিজ।কিন্তু এসিস্ট্যান্ট জানিয়ে দিলো স্যার এখন বিজি আছেন।যা বলার আমাকেই বলুন।তানিশা তখন বললো,ডাক্তার নোমানকে বলুন তানিশা নামের কেউ একজন খোঁজ করছে আপনার।সেই কথা শুনে নোমানের এসিস্ট্যান্ট বললো,একটু ওয়েট করুন।স্যার এমারজেন্সি একটা রোগী দেখছে।এই বলে এসিস্ট্যান্ট টি কল কেটে দিলো।

এদিকে তিরিশ মিনিট পার হয়ে গেলো তবুও কোনো খবর নাই নোমানে।তানিশা বুঝতে পারলো এই লোকটি নিশ্চয় বলেই নি তার কথা।সেজন্য সে ভীড় ঠেলে সোজা দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো।এদিকে লাইন ধরা লোকগুলো চিৎকার করতে লাগলো।তানিশা ওদিকে তোয়াক্কা না করে দরজা ঠকঠকাতে লাগলো।

তানিশা দরজা ঠকঠকাতেই একজন ছেলে ধমক দিয়ে বললো,একটু অপেক্ষা করুন।ভিতরে রোগী আছে তো।তানিশা সেজন্য অপেক্ষা করে থাকলো।প্রায় ১৫ মিনিট পরে ভিতরের রোগী টি বের হলো।তারপর তানিশা প্রবেশ করলো রুমে।

#চলবে,

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_২২(বোনাস পার্ট)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

নোমান নিচ মুখ হয়ে প্রেসক্রিপশন লিখছে।সে এতোই ব্যস্ত যে উপরের দিকে তাকানোর সময় নেই তার। তানিশাকে না দেখেই বললো,সিট ডাউন প্লিজ।
তানিশা নোমানের কথা শুনে বসে গেলো।নোমান তখন বললো,নাম,বয়স আর প্রবলেম বলুন।

তানিশা তখন বললো, আমার নাম তানিশা তাবাচ্ছুম।আপাতত আমার কোনো প্রবলেম নাই।তবে আমাকে দেখার পর হয়তো ডাক্তার সাহেবের কোনো প্রবলেম হতে পারে।

নোমান সেই কথা শুনে প্রেসক্রিপশন লেখা বাদ দিয়ে উপর দিকে তাকালো।তবে তানিশাকে দেখে তার বিন্দুমাত্র কোনো রিয়েকশন হলো না।সে স্বাভাবিক ভাবে বললো,তুমি?

–হ্যাঁ আমি।আপনি দেখি একটুও অবাক হলেন না আমাকে দেখে।

–অবাক হওয়ার কি আছে?তুমি কি ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী নাকি?

তানিশা তখন বললো, আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিলো।এজন্যই আসা।বিরক্ত না হলে কথাগুলো বলার পারমিশন চাচ্ছি।

–যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।বাহিরে আমার অনেকগুলো পেশেন্ট অপেক্ষা করছে।এই বলে নোমান তার চেয়ার থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

তানিশা নোমানের এমন শান্তশিষ্ট ব্যবহার দেখে বেশ অবাক হলো।আবার একটু কষ্টও পেলো।সে বুঝতে পারলো না নোমান এতো স্বাভাবিক ভাবে তার সাথে কথা বলছে কেনো?মনে হচ্ছে তাদের কালও দেখা হয়েছে।সে তো ভেবেছিলো নোমান খুব বাজে রিয়্যাক্ট করবে।সেজন্য তানিশা ধৈর্য্য ধরে চুপচাপ থাকলো কিছুক্ষন।তারপর হঠাৎ করেই বললো,নোমান, আই লাভ ইউ।

নোমান এবার ও কোনো রিয়্যাক্ট করলো না।সে তখন হাসতে হাসতে বললো,এখন কি প্রেম করার বয়স আমাদের?যে আই লাভ ইউ বলছো?

তানিশা তখন বললো, ভালোবাসা সব বয়সেই প্রকাশ করা যায়।আর কতই বয়স হয়েছে আমাদের যে আই লাভ ইউ বলা যাবে না।

নোমান আবার হাসলো।আর বললো তা হঠাৎ এতো বছর পর মনে হলো, যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।এ কয় বছরে কি একবারও মনে হয় নি?

তানিশা তখন নোমানের কাছে এগিয়ে এসে বললো,নোমান প্লিজ আপনি রাগ করে থাকবেন না।একবার শুনুন না আমার কথাগুলো?কি জন্য আমি আপনার ভালোবাসা এক্সসেপ্ট করি নি।আর কি জন্য আজ এতোদিন পর ছুটে আসলাম আপনার কাছে?

নোমান তখন আবার হেসে হেসে বললো,আমার মতো হয় তো আর কাউকে পাও নি।আমার মতো কেউ হয় তো বেহায়া গুলোর মতো বলে নি,তানিশা!আই লাউ ইউ।আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে।প্লিজ এক্সসেপ্ট মি।দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দিও না।সেজন্য এসেছো।আর কি?

তানিশা এবার কেঁদে ফেললো নোমানের কথা শুনে।সে তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,আপনার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আপনি আমাকে ভুলে গেছেন।আপনি বোধ হয় আর আগের মতো ভালোবাসেন না আমাকে।কিন্তু আমি তো সেই আগের মতোই ভালোবাসি আপনাকে।কই আমি তো ভুলতে পারলাম না।

নোমান এবার চিৎকার করে উঠলো।এই শাট আপ।তোমার মুখে আমি কোনো ভালোবাসার কথা শুনতে চাই না।তুমি ভালোবাসা বোঝো?ভালোবাসা কি জিনিস আগে সেটা শিখে আসো। তবেই আমার সাথে তর্ক করিও।এখন যাও আমার সামনে দেখে।তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করতেছে না আমার।

এদিকে নোমানের চিৎকার শুনে তার এসিস্ট্যান্ট দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো আর বললো,স্যার, এনি প্রবলেম?

–নো।কোনো প্রবলেম নেই।আর শোনো!বাহিরের জটলা একটু কম করো।আর সবাইকে এক ঘন্টা পর আসতে বলো।

–স্যার কোনো সমস্যা?

নোমান তখন চিৎকার করে বললো, বললাম তো কোনো সমস্যা নেই।বার বার এক কথা কেনো জিজ্ঞেস করছো?
সেই কথা শুনে এসিস্ট্যান্ট টি আবার দরজা লাগিয়ে দিলো।

এদিকে তানিশা কাঁদতেই আছে।তার খুবই কষ্ট হচ্ছে।সে বুঝতে পারছে সব দোষ তারই।সে যদি সেদিন নোমানকে তার ভালোবাসার কথা বলে দিতো তাহলে আজ আর এ দিন দেখতে হতো না তাকে।

তানিশা তখন আবার এগিয়ে আসলো নোমানের কাছে।আর বললো,সরি আমার ভুল হয়ে গেছে।আর আসবো না কখনো।শুধু এটাই বলার জন্য এসেছিলাম যে আমিও আপনাকে ভালোবাসতাম।আর আজও ভালোবাসি।

নোমান হঠাৎ তানিশার হাত ধরে টেনে তার কাছে আনলো আর তানিশার একদম মুখের কাছে মুখ এনে বললো,আজ কি জন্য এসেছো?এতোবছর পর তোমার কি এই কথাগুলো মনে হলো?বার বার আমার ভালোবাসা তুমি প্রত্যাখ্যান করেছো।আমি অসহায়দের মতো কতোবার তোমাকে রিকুয়েষ্ট করেছি।তবুও তুমি একটিবার আমার ভালোবাসায় সাড়া দাও নি।আমি ভিতরে ভিতরে মানসিক ভাবে কত টা ভেংগে পড়েছিলাম তার খোঁজ পর্যন্ত নেও নি।এমনকি আমার আর তন্নির বিয়ের কথা শুনেও কোনো রিয়্যাক্ট করো নি।আমি বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম।আমি ভেবেছিলাম অন্তত আজ আসবে তুমি।এসে তোমার মনের কথা জানাবে।তুমি সেদিনও আসলে না।তাহলে আজ কেনো এসেছো?সেদিন যদি সত্যি সত্যি তন্নিকে বিয়ে টা করতাম?তারপরেও কি এভাবে আসতে পারতে?তুমি তো আমাকে তন্নির হাতে দিয়েই দিয়েছো?তোমার মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছো।সারা বিশ্বের কাছে মহান হতে চেয়েছিলে।সবাই তোমার উদারতা দেখে বলবে,আহা!কি দরদি মেয়ে টা।বান্ধুবীর জন্য নিজের প্রেম বিসর্জন দিয়েছে।তুমি তো খুশিই হয়েছিলে আমার আর তন্নির বিয়ের কথা শুনে।তাহলে আজ কেনো কাঁদতেছো?আমি তো তোমাকে আর ভালোবাসি না।যে মেয়ে প্রেমিকের ফিলিংস বোঝে না,তার মনে কি কষ্ট হচ্ছে সেটা অনুভব করতে পারে না সে কখনোই আমার ভালোবাসার যোগ্য নয়।
তুমি তো ভালো সাজতে চেয়েছিলে?সবার প্রশংসা শুনতে চেয়েছিলে?তাই না?
আমিও প্রশংসা করছি আজ।তানিশা!সত্যি তুমি অনেক মহান।তোমার তুলনা হয় না।আর কিছু শুনতে চাও?এই বলে নোমান তানিশার হাত ছেড়ে দিলো।আর বললো,আর কখনোই আসবে না আমার কাছে।আর এভাবে তোমার মুখে ভালোবাসি শব্দ টা বলবে না।কারণ ভালোবাসা শব্দ টা তোমার মুখে বেমানান লাগে।তুমি কারো ভালোবাসার যোগ্যই নও।কথাগুলো একদম এক নিঃশ্বাসে বললো নোমান।মনে হলো তার বুকের কষ্ট টা কিছুটা হালকা হলো।অনেক বড় বোঝা মনে হয় সরে গেলো বুক থেকে।

তানিশা নোমানের এতোগুলো কথা শুনে চোখ মুছতে মুছতে চলে যেতে ধরলো।সে কখনোই ভাবে নি নোমান এরকম রিয়্যাক্ট করবে।সে ভেবেছিলো হয় তো নোমান রাগ আর অভিমানে কিছু কথা শোনাবে।কিন্তু সে যে সারাজীবনের জন্য তাকে ভুলে গেছে সে সেটা কল্পনাও করে নি।

নোমান হঠাৎ বললো,দাঁড়াও।আরেকটা কথা শুনে যাও।আমার কিন্ত বিয়ে ঠিক হয়েছে।আমান ভাইয়ার শালির সাথে।আশা করি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছো। এখন পারলে নিজেও বিয়ে টা করে নিও।আর আমি একটা জিনিস বুঝতে পারতেছি না তুমি বিয়ে কেনো করো নি?না মানে তুমি তো আমাকে তন্নির জন্য ছেড়েই দিয়েছো তাহলে কিসের আশায় বসে ছিলে?না ভেবেছিলে নোমান বার বার তোমার ইগনোর পাওয়া সত্ত্বেও আবার এসে বলবে,তানিশা!আমাকে একটু ভালোবাসো।তানিশা!দুনিয়ায় আর কোনো মেয়ে নেই।তানিশা!আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।এইরকম কিছু ভেবেছিলে কি?
এই বলে নোমান আবার তানিশার হাত ধরে তার কাছে টেনে আনলো।আর বললো,উত্তর দাও।

তানিশা একটা কথাও বলতে পারছে না।সে শুধু কেঁদেই চলেছে।তানিশা আবার নোমানের হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে ধরলো।নোমান তখন বললো আগেই যাচ্ছো কেনো?শুনে যাও কিছু কথা আরো?তুমি কয়জন মানুষের জীবন নষ্ট করেছো জানো?
গুনেগুনে চারজন মানুষের।
এক তোমার নিজের জীবন।দুই আমার জীবন।তিন তন্নির জীবন।আর চার যে আমার বউ হতে চলেছে তার জীবন।

আরো দুইজন মানুষের মন ভেংগেছো তুমি।আমার আমান ভাইয়ার আর আমার বাবার।সবচেয়ে দামী একটা সম্পর্ক বাবা ছেলের সম্পর্ক। আমার আর বাবার মধ্যকার সম্পর্ক টাও তুমি চিরতরে নষ্ট করেছো।সেই থেকে বাবা আজও আমার মুখ দেখে নি।আমার কত টা কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছো সেটা?কি অসহায় দিন পার করেছি জানো সেটা?

এখন তুমিই বলো, আমি কি করে তোমার কাছে ফিরে যাই?তাছাড়া ইতোমধ্যে একজনের সাথে আমার বিয়ে ঠিকও হয়েছে।এনগেজড ও হয়ে গেছে।এই দেখো আংটি।এই বলে নোমান তার হাতের আংটি ও দেখালো।

তানিশা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না আপনার বিয়ে ঠিক হইছে।তাহলে আর কোনোদিনও আসতাম না।আমি তো ভেবেছি আপনি আজও আমাকেই ভালোবাসেন।সেজন্যই মনে হয় তন্নিকে বিয়ে করেন নি সেদিন।সেজন্যই এসেছি।

নোমান তখন বললো,আবার সেই কথা।আমি তোমাকে আর কি জন্য ভালোবাসবো?তুমি তো আমাকে ছেড়েই দিয়েছো।আমি যাতে অন্যজনের হাজব্যান্ড হই।যদি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা থাকতো আমার প্রতি তাহলে একদিন অন্তত খোঁজ নিতে আসতে।আমি কি যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটিয়েছি তা দেখতে আসতে।জানি না আজ আমার অবস্থান কোথায় যেতো?
এই ভাই আর ভাবী না থাকলে আমি তো একদম শেষ ই হয়ে যেতাম।তারা যেভাবে আমাকে সাহস যুগিয়েছে আর আমার পাশে থেকেছে যা আমি ভুলতে পারবো না কখনো।
সেজন্য তারা যখন রিকুয়েষ্ট করলো আমাকে আমি আর না করতে পারলাম না।ভাবলাম তোমার মতো নির্দয়া একজন মেয়ের জন্য কেনো বসে থাকবো যে একদিনও দেখতে এলো না আমাকে?আমার খোঁজ পর্যন্ত নিলো না।আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি সেটাও সে জানে না।

তানিশা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি ভেবেছিলাম আপনি আর তন্নি বিয়ে করে সংসার করছেন।সেজন্য আপনাদের সুখের সংসারে অযথা কেনো আসতে যাবো আমি?এজন্য আসি নি।তাছাড়া আপনিও তো একদিন খোঁজ করলেন না আমার?একবার জানতে চেয়েছিলেন আমি কেমন আছি?

নোমান তখন বললো কি বললে?আমি কেনো তোমার খোঁজ করি নি?
আমি কি পরিস্থিতির মধ্যে নিজের জীবন পার করেছি তা শুধু আমি জানি।এই পরিস্থিতিতে প্রেম ভালোবাসার চিন্তা মাথায় আসবে কি করে?
বাবা বাসায় উঠতে দেয় নি,তার মধ্যে ফাইনাল এক্সাম।টাকা পয়সা দরকার ছিলো।একটা থাকার জায়গা পর্যন্ত ছিলো না।ভাইয়া কোনো ভাবে টেনেটুনে মেনেজ করেছে।সেটা দিয়েই কোনোভাবে চলেছি।সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবার টাইম ছিলো না আমার।

তানিশা তখন বললো, হ্যাঁ এখন সব দোষ আমার।আমি তা মাথা পেতে মেনে নিচ্ছি।আপনার ফ্যামিলিতে কার কি প্রবলেম হয়েছে সব আমার জন্য হয়েছে।আপনার জীবন তন্নির জীবন সবার জীবন নষ্ট করেছি আমি।আমার মতো খারাপ মেয়ে আর একজনও নেই।পারলে ক্ষমা করে দিয়েন।আর আমিও চেষ্টা করবো নিজেকে ক্ষমা করতে।কারণ অন্যের ভালো করতে গিয়ে আজ নিজেই দোষী হয়ে বসে আছি।সবাই শুধু সবার ক্ষত দেখাতেই ব্যস্ত।আমার বুকে যে কত ক্ষতর সৃষ্টি হয়েছে তা কারো না দেখলেও চলবে।আমার যত কষ্টই হোক না কেনো আমি সেটা মানিয়ে নিতে পারবো।
তানিশা এবার আর থাকতে চাইলো না।সে দরজা খুলে বের হয়ে যেতে ধরলো।নোমান তখন আবার তার হাত ধরে টেনে আনলো।আর বললো,এতো তাড়াহুড়ো করছো কেনো যাওয়ার জন্য?আরেকটু কষ্ট পাও।আজ তোমার কান্না দেখতে আমার ভালোই লাগতেছে।দাঁড়াও একটু।কিছুক্ষন পর আমার উড বি ওয়াইফ লাঞ্চ নিয়ে আসবে।বিয়ে না হতেই কত টা কেয়ার করে আমার।রেলি আই এম এ ভেরি লাকি পারসন।নিজের চোখে দেখে যেও সেটা।তুমি ভেবেছিলে তুমি ছাড়া দুনিয়ায় আর কোনো মেয়ে নেই।কিন্তু তোমার থেকেও যে অনেক অনেক ভালো মেয়ে আছে সেটা নিজের চোখেই দেখে যেও।

তানিশা তখন রাগ করে নোমানকে সরিয়ে দিয়ে বললো, বার বার আমাকে ধরছেন কেনো?ছাড়ুন আমাকে।আমি যেতে চাই এখন।প্লিজ যেতে দিন আমাকে।

–কেনো? ধরলে কি হবে?তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসো?

তানিশা তখন চিৎকার করে বললো,আগে ভালোবাসতাম।এই চেম্বারে আসার আগ পর্যন্তও বাসতাম।বাট এখন থেকে আর বাসি না।ভালো থাকবেন।আপনার নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।আর কখনোই আসবো না আপনার সামনে।

নোমান তখন হাসতে হাসতে বললো,এগাইন সেক্রিফাইস করতেছো।আচ্ছা তুমি যে বার বার এভাবে সেক্রিফাইস করো তোমার কি খারাপ লাগে না?তুমি কি মানুষ নও নাকি?না তোমার হৃদয় টা পাথর দিয়ে গড়া সেজন্য কষ্ট হয় না।আমি তো ভাবছিলাম তুমি জোর করবে আমাকে।যে নোমান যা হবার হয়ে গেছে ভুলে যাও।আমাকে ফিরিয়ে দিও না।আমি অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম।প্লিজ এক্সসেপ্ট মি।আই লাউ ইউ সো মাচ।তা না করে আমার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছো।কি ইন্টারেস্টিং মেয়ে তুমি!

তানিশা এবার চুপ করে রইলো।এদিকে তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।কিছুতেই সে তার চোখের পানি আটকাতে পারছে না।

নোমান তা দেখে বললো,কি লাভ এই চোখের পানি ফেলে?এতেই কি তুমি সুখ খুঁজে পাও নাকি?

তানিশা তখন বললো,আপনি প্লিজ আর একটা কথাও বলবেন না আমার সাথে।আপনি কেমন লোক তা আমার জানা হয়ে গেছে।আপনি যখন জানতেনই সব, কেনো আমি আপনার প্রপোজ এক্সসেপ্ট করি নি, তবুও আপনি আমার কাছে যান নি।আপনি আপনার ইগো নিয়ে বসে ছিলেন।তাছাড়া আবার নতুন আরেকজন কে পেয়ে গেছেন।আমার কথা মনে কি করে থাকবে? আসলে ছেলেদের ধর্মই এটা।অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেরা সাধু সেজে ঘুরে বেড়ান।আজ থেকে আমি আপনাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করা শুরু করবো।আপনার মুখ আমি দেখতে চাই না কখনো।এই বলে তানিশা কাঁদতে কাঁদতে চলে যেতে ধরলো।

হঠাৎ নোমান কিছু না বুঝে তানিশা কে জড়িয়ে ধরলো। তার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে।তার কত টা কষ্ট হচ্ছে হয় তো তানিশা বুঝতে পারে নি।সে যে আজও তানিশাকেই ভালোবাসে।শুধুমাত্র তানিশার উপর রাগ দেখাতে গিয়ে তার ভাই আর ভাবীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।এখন যে তানিশাকে দেখার পর তার সব রাগ অভিমান চলে গেছে।এখন কি করবে সে?
তানিশাও কাঁদছে আর নোমানও কাঁদছে।

হঠাৎ নোমানের এসিস্ট্যান্ট বাহির থেকেই বললো,স্যার ভাবি এসেছে।ভিতরে কি পাঠিয়ে দিবো?

তানিশা সেই কথা শোনামাত্র নোমানকে ছেড়ে দিলো।আর সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

তানিশা চেম্বার থেকে চলে যাওয়ার পর নোমানের এতো খারাপ লাগছিলো যে সে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারতেছিলো না।তার শুধু বার বার তানিশার ঐ কান্না করা চেহারা ভেসে উঠতে লাগলো।তার মনে পুষে থাকা রাগের কারনে সে একের পর এক আঘাত দিয়ে দিয়ে কথা বলেছে তানিশাকে।সে কি করলো এটা?ভাবতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে নোমানের।

আসলে নোমান সত্যি কথা টা মাত্র কিছুদিন আগে জেনেছে।রিশার সাথে কিছুদিন আগে দেখা হয়েছিলো নোমানের।তখন রিশা বলে দিয়েছে সব সত্য কথা।নোমান আগে যদি জানতো তাহলে কবেই চলে যেতো তানিশার কাছে।নোমান এতোদিন ধরে ভেবে এসেছে তানিশা তাকে ভালোবাসে না।সেজন্যই তানিশা একদিনও তার খোঁজ নেয় নি।সেজন্য নোমান তানিশার অপেক্ষা না করে তার ভাই আর ভাবির রিকুয়েষ্ট এ রাজি হয়ে যায় শিলাকে বিয়ে করতে।সে কখনোই ভাবে নি তানিশা তাকে এতো বেশি ভালোবাসে।কারণ তানিশা যে কখনো তাকে তার ভালোবাসার কথা বলে নি।অন্যদিকে তানিশা ভেবেছে নোমান আর তন্নি দুইজনে সংসার করছে।এজন্য সেও আর কারো খোঁজ নেয় নি।এই ভুলবোঝাবুঝির কারণে আজ কত গুলো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।আমান শিরিনের সাথে আর তন্নি ইকবালের সাথে তবুও কোনোমতে সংসার করছে কিন্তু নোমান,তানিশা আর শিলার জীবনে কি ঘটবে এখন সেটাই দেখার পালা।

শিলা প্রবেশ করলো নোমানের চেম্বারে।নোমান সেজন্য তাড়াতাড়ি করে তার চোখের পানি মুছিয়ে নিলো।কিন্তু তার চোখ দুটি ভীষণ লাল দেখাচ্ছিলো।নোমান সেজন্য ওয়াশরুমে গিয়ে আগে চোখে পানি দিয়ে নিলো।এদিকে শিলা নোমানের জন্য খাবার সার্ভ করে দিলো।সে নিজেও নোমানের সাথে বসেই এই চেম্বারে লাঞ্চ করে।
নোমান হাতমুখ ধুয়ে এসে তার প্লেট হাতে নিলো।বাট আজ আর এক লোকমা খাবারও তার মুখে ঢোকাতে পারলো না।সে শুধু খাবার নড়াচড়া করতে লাগলো।তা দেখে শিলা বললো,কি হয়েছে আজ আপনার?খাচ্ছেন না যে?
নোমান সেই কথা শুনে খাবার টা রেখে দিয়ে বললো,আজ আমার শরীর টা কেনো জানি ভালো লাগছে না।আমি আজ একটু বাসায় গিয়ে রেস্ট নিতে চাই।এই বলে নোমান শিলাকে রেখেই চলে গেলো।
আজ আর সে একজন রোগী ও দেখতে চাইলো না।তার যে আজ রোগী দেখার মন মানসিকতাই নেই।এতোদিন তার এই যন্ত্রনা ছিলো না।সে ভোলার চেষ্টা করেছিলো তানিশাকে।কিন্তু আজ তানিশা তার সামনে এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।

অন্যদিকে শিলা কিছুই বুঝতে পারলো না।সে ভাবতে লাগলো আজ হঠাৎ নোমান এমন বিহেভ কেনো করলো?তার সাথে ঠিক করে কথাও বললো না।এমনকি তার দিকে তাকালো না পর্যন্ত।শিলা আবার এ নিয়ে ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো।

নোমান সোজা তার বাসায় চলে গেলো।সে একা একাই থাকে বাসায়।এমনিতেই পরিবার ছাড়া একা একা থাকে সে তার জন্য ভীষণ কষ্টে ভুগছে।তার মধ্যে তানিশা ফিরে আসায় নতুন করে কষ্ট শুরু হলো নোমানের।

অন্যদিকে তানিশাকে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ঢোকা দেখে তার বোন একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।তানিশা তার বোনের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে শুধু বললো,আপু আমি বিয়ে করতে চাই।তোরা না খুব ব্যস্ত হয়ে গেছিস আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য।দুই এক দিনের মধ্যে বিয়ে করবে এমন ছেলে থাকলে আমাকে খবর দিস।

তানিয়া তখন বললো, কি বলছিস এসব পাগলের মতো?কি হয়েছে তোর?
–কিছুই হয় নি আমার।আমি ঠিক আছি।অনেক ভেবে দেখলাম আমার এখন বিয়ে করা উচিত।
এই বলে তানিশা তার ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।

তানিশা যখন দেখলো নোমান তার লাইফ পার্টনার খুঁজে নিয়েছে তাহলে অযথা কেনো তার অপেক্ষা করবে?তার চেয়ে বরং তার বিয়ে করে নেওয়াই শ্রেয় হবে।

#চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে