#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_১২
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
হলুদের অনুষ্ঠান টি তানিশাদের ফলের বাগানের মধ্যে করা হচ্ছে।একটু অন্যরকম স্টাইলে করা হচ্ছে অনুষ্ঠানটি।সেজন্য বাগানটি খুব সুন্দর করে ডেকোর করা হয়েছে। স্টেজে বাহারি রঙ এর ফুলের পাশাপাশি সাটিন কাপড়,নেট,মরিচা বাতি দিয়েও ডেকোরেশন করা হয়েছে।তানিশাদের গ্রামে এই প্রথমবার কারো বিয়েতে পাত্র বিয়ের আগেই কনের বাড়ি এসে হলুদের প্রোগ্রামে এটেন্ড করছে।গ্রামের লোকজন এ নিয়ে বেশ কানাঘুষা করছে।কেউ কেউ তো ছিঃ ছিঃ করছে।তবে তানিশার পরিবারের কারো এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নাই।কারণ বিয়ে তো হচ্ছেই,তাহলে পাত্র কেনো আসতে পারবে না বিয়ের আগে?তারও তো হলুদের অনুষ্ঠানএ এটেন্ড থাকতে মন চাইবে বা তার বউ কে হলুদের সাজে কেমন লাগছে তা দেখার ইচ্ছা জাগবে।যেহেতু হলুদের অনুষ্ঠানের সমস্ত আয়োজন তিনি নিজ দায়িত্বে করছেন সেজন্য ওনাকেও আসতে হবে।
আজকের প্রোগ্রামের সবচেয়ে মূল আকর্ষণ তো কনে হওয়ার কথা কিন্তু কনের বদলে সেই আকর্ষণ দখল করে বসে আছে ডাক্তার ম্যাডাম।মানে আমাদের তানিশা।কারণ হবু দুলাভাই তার একমাত্র শালিকার জন্য এতো সুন্দর একটা লেহেংগা পাঠিয়েছে যা তানিশা পড়ার পর সবার চোখ একদম ছানাবড়া হয়ে গেছে।কিন্তু তানিশা এখন পর্যন্ত ঘরের মধ্যেই চুপটি করে বসে আছে।কারণ সে এরকম সাজসজ্জা কখনোই করে নি।সেজন্য এই বেশে সবার সামনে আসতে ভীষণ লজ্জা লাগছে তার।তানিশা সেজন্য ঘরেই বসে আছে আর এক এক করে সবাই কে রেডি করছে।যারা রেডি হয়েছে তাদের কে আবার চেক করছে।কারণ সমস্ত প্রোগ্রামের ভিডিও করা হবে।আর সেজন্য অবশ্যই সবার সাজ সুন্দর আর পরিপাটি হওয়া চাই।
অন্য মেয়েরা লেমন কালারের শাড়ির সাথে কাজ করা খয়েরী রঙ এর ব্লাউজ পড়েছে।আর সবাই চুলগুলো খোঁপা করে তাতে টাটকা খয়েরী রঙ এর গোলাপ গুজিয়েছে।অন্যদিকে ছেলেরা পড়েছে মেরুন কালারের পাঞ্জাবী। এটাই হলো আজকের অনুষ্ঠানের সকল ছেলে আর মেয়ের ড্রেস কোড।তবে বর আর কনেও আলাদা রঙের ড্রেস পড়েছে।কনে পড়েছে গাঢ় হলুদ রঙের মধ্যে সবুজ সুতার কাজ করা জামদানী শাড়ি।সাথে সবুজ রঙের ব্লাউজ।আর বর পড়েছে কনের ব্লাউজের সংগে ম্যাচিং করে সবুজ রঙের পাঞ্জাবী।এসব আইডিয়া সম্পূর্ণ তানিশার হবু দুলাভাই এর।আর সমস্ত খরচ তিনিই বহন করেছেন।ওনার কথা,বিয়ে যখন ধুমধামে হচ্ছে তাহলে সকল অনুষ্ঠান ভালোভাবেই সম্পন্ন করবেন তিনি।বিয়ে জীবনে একবারই হয়,বার বার তো হয় না।যদিও প্রথমে উনিই এতো বেশি ধুমধাম করতে রাজি ছিলেন না।এখন উনিই আবার বলছেন সমস্ত আয়োজন জাকজমকভাবেই হবে।
সবাই সবার সাজগোছ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও একগুয়ে আর একরোখা নোমানের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই।সে চুপটি করে রুমের মধ্যে বসে আছে আর জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।হয় তো তানিশাকে দেখার জন্যই এভাবে জানালার কাছে বসেছে সে।কিন্তু কাউকে সেটা সে বুঝতে দেবে না।মনের কথা মনের মধ্যে রাখতেই সে বেশি পছন্দ করে।
নোমান আসার পর থেকেই এই ঘরের মধ্যেই আছে।বিয়ে বাড়িতে আসার জন্য অনেক বেশি উৎসাহ থাকলেও এখন কেনো জানি আর থাকতে ইচ্ছে করছে না তার।আর কিভাবেই বা ইচ্ছা করবে?যে ছেলে কারো সাথে মিশতে পারে না,নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না তার এসব প্রোগ্রামে না যাওয়াই ভালো।
অন্যদিকে আমান কত সহজে সবার সাথে মিশে গেছে।হলুদের প্রোগ্রামের জন্য রেডি হয়েছে আবার তানিশার সকল আত্নীয়স্বজনদের সাথেও কথা বলছে।সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে সে।আমানের এই বিশেষ গুনটির কারণে সবাই তাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। কিন্তু নোমান কারো সাথে ঠিকভাবে মিশতে পারে না।কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলতে জানে না বিধায় সবাই তাকে অহংকারী মনে করে।আসলে সে শুধু বই এর পাতায় মুখ গুজে বসে থাকাই শিখেছে।তাকে কখনোই বলতে হয় নি নোমান পড়তে বস,নোমান তোর কাল এক্সাম,নোমান পড়াশোনা বাদ দিয়ে কি করছিস?
বরং মাঝে মাঝে উলটো তাকে বলতে হয়েছে,নোমান এবার একটু বই টা রেখে দে,কয়েক মিনিট একটু রেস্ট কর।
আমান এবার নোমানকে ডাকার জন্য এলো। কারণ নোমান যেভাবে ঘরবন্দি হয়ে আছে লোকে তো তাকে পাগল মনে করবে।
আমান রুমে ঢুকতেই নোমান হো হো করে হেসে উঠলো আর বললো ভাইয়া, এটা তুমি কি পড়েছো?
–কেনো কি হয়েছে?
–নিজেকে দেখেছো আয়নাতে?
আমান সেই কথা শুনে বললো কি হয়েছে বলবি তো?
নোমান তখন বললো তোমাকে এই পাঞ্জাবি টা একদম মানায় নি।কারণ পাঞ্জাবি টা অনেক বেশি শর্ট আর ঢিলা ঢিলা লাগছে।
আমান তখন বললো ও রকম একটু হবেই।তানিশা তো আর আমার ফিগার মেপে মেপে দেখে নি।আন্দাজে বানাইছে।এসব হাসিঠাট্টা বাদ দিয়ে এবার একটু ঘর থেকে বের হ।বাহিরে গিয়ে দেখ সবাই কত মজা করছে।
–আমার ভালো লাগছে না কিছু। তুমি গিয়ে মজা করো।
আমান সেই কথা শুনে বললো,তাহলে তুই পাঞ্জাবি পড়বি না?
–না।
–ওকে।না পড়লে কি আর করার আছে?এই বলে আমান চলে যেতে ধরলো।
নোমান তখন বললো ভাইয়া তন্নি কোথায়?ওকে দেখছি না যে?
আমান সেই কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো।আর বললো,ওকে কি আর আজ তুই খুঁজে পাবি?আজ তো সাজগোছ করতেই সারাদিন পার করে দেবে সে।
আসলে তন্নির খোঁজ করা একটা বাহানা মাত্র।নোমান তো জানতে চাচ্ছে তানিশা কোথায়?তাছাড়া সে জানে তানিশা যেখানে থাকবে তন্নিও সেখানে থাকবে।নোমান সেই থেকে জানালার কাছে একখান বই হাতে নিয়ে বসে আছে বাট একবারের জন্যও তানিশার দেখা সে পেলো না।
নোমান তন্নির কথা বলতেই তন্নি এসে উপস্থিত সেখানে।কারণ সে তার সাজগোছ ইতোমধ্যে কম্পিলিট করে ফেলেছে।নোমান তন্নিকে দেখে মোটেও চিনতে পারছে না।কারণ তাকে এতো বেশি গর্জিয়াস লাগছে যে তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো নাইকা হলুদের ফটোশুটের জন্য রেডি হয়েছে।
তন্নি কোনো কথা না বলে বোবার মতো দাঁড়িয়ে থাকলো।সে দেখতে চাচ্ছে নোমান কি বলে?
কিন্তু নোমান তো তন্নিকে দেখে তানিশার কথা ভাবছে।তানিশাকে সাজগোছ করে কেমন লাগছে তা দেখার জন্য আর এক মিনিট তর সইছে না নোমানের।কিন্তু তানিশার দেখা সে পাবে কিভাবে?তানিশা তো সেই থেকে নিরুদ্দেশ।যার জন্য এই বাড়িতে আসা সেই তো তার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
আমান হঠাৎ তন্নিকে বললো,কি রে তন্নি?বোবার মতো চুপচাপ হয়ে আছিস যে?আর তুই একাই কেনো?তানিশা কোথায়?
তন্নি তখন বললো আগে বলেন আমাকে কেমন লাগছে?তারপর তানিশার কথা বলবো।
আমান সেই কথা শুনে বললো তোকে একদম ঝাক্কাস লেমন পরীর মতো লাগছে।চোখ ফেরানোই যাচ্ছে না।
তন্নি তখন নোমানকে উদ্দেশ্য করে বললো,আপনি কিছু বলছেন না যে?
নোমান তখন বললো,আমি আর কি বলবো বল?আমি তো তোকে চিনতেই পারছি না।
আমান সেই কথা শুনে বললো, তুই তো চিনতে পারবিই না।কানা লোক আবার দেখতে পারে নাকি?
নোমান আমানের কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলো আর রাগান্বিত কন্ঠে বললো,ভাইয়া!বলছি না আমাকে কানা বলবে না।
–তাই?দাঁড়া দেখাচ্ছি।এই বলে আমান হঠাৎ নোমানের চশমাটি কেড়ে নিলো।আর তার পকেটে রাখলো।
নোমান আমানের এমন কান্ড দেখে ভীষণ রেগে গেলো।
সে তখন চিৎকার করে বললো ভাইয়া চশমাটা দাও।দাও বলছি।
তন্নিও বললো,আমান ভাইয়া দিয়ে দিন চশমাটা।তা না হলে উনি দেখবেন কিভাবে?
–না দিবো না।তবে ও যদি পাঞ্জাবি পড়ে আমাদের সবার সাথে প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকে তবেই পাবে এই চশমা।এই বলে আমান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
নোমান তখন তন্নিকে বললো তার লাগেজ থেকে আরেকটা চশমা বের করার জন্য। তন্নি সেই কথা শুনে নোমানের জন্য চশমা খুঁজতে গেলো ব্যাগে।কিন্তু ব্যাগে আর কোনো এক্সট্রা চশমা ছিলো না।নোমান তাড়াতাড়ি করতে যেয়ে এক্সট্রা চশমা নিতে ভুলে গেছে।
তন্নি যে এতো সুন্দর করে সাঁজগোজ করলো তা নোমান ভালো করে তো দেখতেই পেলো না।এই আফসোস করতে করতে তন্নি রুম থেকে চলে গেলো।
কারন তন্নি ভালো করেই জানে নোমান চশমা ছাড়া দূরের সব জিনিস আবছা আবছা দেখে। সামনে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে তার অবয়ব বুঝতে পারে, সে কে সেটাও বুঝতে পারে বাট স্পষ্ট দেখতে পারে না।
অন্যদিকে আমান চশমা নিয়ে কই যে নিরুদ্দেশ হলো তাকে আর তন্নি খুঁজেই পেলো না।আমানের এমন দুষ্টমি করা নোমান মোটেও সহ্য করে না।সে রাগে কিড়মিড় করতে লাগলো।কিন্তু অন্যের বাড়ি বলে কিছু করতে পারলো না।তা না হলে এতোক্ষণে পুরো বাড়ি মাথায় তুলতো সে।
এদিকে সবার সাজগোছ কম্পিলিট হয়েছে। সেজন্য এক এক করে সবাই বাগানের ভিতর প্রবেশ করছে।অন্যদিকে কনেকে আগেই স্টেজে বসে রেখেছে সবাই।বাড়ির মধ্যে আর একজন লোকও নেই।মুহুর্তের মধ্যে পুরো বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেলো।সবশেষে তানিশা বের হলো রুম থেকে।কারণ তার আর এভাবে লজ্জা পেলে চলবে না।কারণ তার হবু দুলাভাই চলে এসেছে।সে ঘরের মধ্যে বসে থাকলে অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করবে কে?
তানিশা তার রুম থেকে বের হতেই হঠাৎ কি মনে করে যেনো নোমানের রুমে চলে গেলো।
তানিশা রুমে গিয়ে দেখে নোমান এখনো রুমের মধ্যে শুয়ে আছে।তানিশা এখন কি করবে বুঝতে পারছিলো না।সে ভেবেছে হয়তো নোমানও রেডি হয়ে বাগানে চলে গিয়েছে।এইভাবে নোমানের মুখোমুখি হয়ে যাবে সে ভাবেই নি কখনো।
অন্যদিকে নোমান তানিশাকে দেখামাত্র তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো।দুইজনই দুইজনার দিকে তাকিয়ে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নাই।
আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে তবুও বোঝা যাচ্ছে খয়েরী আর সবুজের কম্বিনেশন এ তানিশা সুন্দর হাতের কাজ করা একটা লেহেঙ্গা পড়েছে। চশমাটা থাকলে স্পষ্ট দেখতে পেতো সে।তার ভাই কেনো যে এভাবে চশমাটা খুলে নিলো সত্যি তার ভীষণ রাগ হচ্ছে।যাকে দেখার জন্য এতোক্ষণ ধরে বসে ছিলো আর এখন সে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তবুও ভালোভাবে দেখতে পারছে না।নোমানকে এভাবে তাকানো দেখে তানিশা আর এক মুহুর্ত ও থাকতে চাইলো না।সেজন্য সে চলে যেতে ধরলো। ঠিক তখনি নোমান বললো,
আগেই যাও না।দাঁড়াও একটু।
তানিশা সেই কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো।
তানিশাকে দাঁড়ানো দেখে নোমান এগিয়ে এলো তানিশার কাছে।একদম কাছে আসলো তানিশার।দুইজন দুইজনার নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারছে, এতো কাছাকাছি দুইজন।নোমান কেনো জানি তানিশার চারপাশে ঘুরেফিরে দেখতে লাগলো।নোমানকে এরকম করা দেখে ভয়ে তানিশার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো।তার পুরো শরীর একদম কাঁপতে লাগলো।নোমান এমন করছে কেনো?তানিশা সেজন্য নোমানের থেকে একটু দূরে সরে গেলো।
নোমান তা দেখে তানিশার হাত ধরে টেনে আবার তার কাছে আনলো।আর বললো,
এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?আমি কি বাঘ না ভাল্লুক,যে খেয়ে ফেলবো?
তানিশা নোমানের এমন পাগলামো দেখে বললো ছাড়ুন আমাকে।আমি মোটেও ভয় পাচ্ছি না।আর যখন তখন এভাবে আমার হাত ধরবেন না।কেউ দেখলে কি ভাববে?
নোমান তখন বললো আমাকে দেখানোর জন্যই তো এ রুমে এসেছো?তা এখন এমন ছটফট করছো কেনো?
–কি বলছেন এসব?আপনাকে কেনো দেখাতে আসবো আমি?
–তাহলে এ ঘরে কি?জানোই তো আমি এ ঘরে আছি।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো,সরি,ভুল করে ঢুকে পড়েছি।কারণ এটা আমার রুম।এই রুমেই আমি থাকি।সেজন্য অভ্যাসগত ভাবে এসে পড়েছি।এখন ছাড়ুন আমাকে।কেউ দেখলে মারাত্নক রকমের প্রবলেম হয়ে যাবে।
এই বলে তানিশা নোমানের থেকে তার হাত টি ছাড়িয়ে নিলো।আর বললো আপনি কি জন্য আমাকে দাঁড়াতে বললেন?সেটা তাড়াতাড়ি বলুন।আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে।
নোমান তখন বললো,যাও এখন।কাজ হয়ে গেছে আমার।
–মানে?কিসের কাজ হয়ে গেছে?কিছুই তো বুঝলাম না।
–ও তুমি বুঝবে না।যাও এখন।
তানিশা সেই কথা শুনে চলে গেলো।তবে সে ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো।নোমান কেনো তাকে দাঁড়াতে বললো আর কেনোই বা তাকে এরকম কাছ থেকে দেখছিলো।আর কেনোই বা আবার যেতে বললো।
আসলে নোমান চশমা ছাড়া দূরের জিনিস শুধু আবছা আবছা দেখে।তবে কাছের জিনিস স্পষ্টই দেখতে পারে।সে যখন দূর থেকে তানিশাকে ক্লিয়ার ভাবে দেখতে পারছিলো না তখন তানিশার একদম কাছে এসে তাকে ভালো করে দেখে নিলো।
তানিশা খয়েরী আর সবুজের কম্বিনেশনে একটা সুন্দর কাজ করা লেহেঙ্গা পড়েছে।যার উপরের পার্ট খয়েরী আর নিচের পার্ট সবুজ।ওড়না টা ও সবুজ কালারের তবে খয়েরী সুতার কাজ করা।ফর্সা শরীরে খয়েরী আর সবুজ কালার তানিশাকে যেনো একদম গিলে খাচ্ছিলো।তার উপর চুলগুলো এতো সুন্দর করে বেঁধেছে যে চোখ ফেরাতেই পারছিলো না নোমান।আবার তাতে দিয়েছি সাদা কালারের পাথর বসানো ব্যান্ড।আর সুন্দর একটা টিকলি।যা তার সাঁজকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে।তানিশাকে দেখতে একদম অপ্সরাদের মতো লাগছিলো।নোমান কিছুক্ষনের জন্য নিজেও হারিয়ে গিয়েছিলো তার মাঝে,সে বুঝতেই পারছিলো না কিভাবে তার চোখ দুটি সরিয়ে নেবে।কানে দুই জোড়া বড় বড় ঝুমকা আর গলায় স্টোন বসানো মালা।উহঃ কি যে হচ্ছিলো মনের অবস্থা নোমানের যা সে ছাড়া কেউ বুঝতে পারছে না।
তানিশা হলো হলুদ ফর্সা,আর তার উচ্চতা ৫” ৫.মুখের আকৃতি গোলাকৃতি তবে থুতনীর দিকে সরু।তানিশা তার লম্বা নাকটিতে সাদা পাথরের ছোট্র একটি নাকফুল পড়ে।যা দেখতে খুবই ভালো লাগে।তানিশার পুরো মুখ জুড়ে দুইটা তিল আছে।কপালের উপরে আর ডান গালে।এক কথায় অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী হলো তানিশা।যার দিকে একবার তাকালে বার বার তাকাতে ইচ্ছে হবে।সেজন্য যে কেউ যখন তখন এই ডাক্তার ম্যাডামের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে থাকে।
নোমানের মাথায় এখন শুধু তানিশা।সে তানিশাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না।এভাবে চলতে থাকলে তো সে সত্যি সত্যি একদিন পাগল হয়ে যাবে।নোমান সেজন্য সিদ্ধান্ত নিলো আজকেই সে তার মনের কথা তানিশাকে জানাবে।এভাবে মনের মধ্যে কথা রাখলে কখনোই তো তানিশা জানতেই পারবে না কিছু।
নোমান কোনোকিছু না ভেবে হঠাৎ তার লাগেজ থেকে একটা গ্রীন কালারের ফতুয়া বের করলো আর তার সাথে জিন্সের একটা প্যান্ট বের করলো।নোমান ঠিক করলো এই ড্রেস গুলো পড়েই হলুদের প্রোগ্রামে যাবে সে।কিন্তু চশমা ছাড়া বেড়োবে কি করে?সেজন্য নোমান তার ভাই কে ফোন দিলো আর বললো,ভাইয়া আমি ও প্রোগ্রামে যাবো।চশমাটা দিয়ে যাও প্লিজ।
আমান সেই কথা শোনামাত্র নোমানের রুমে আসলো।আর কোনো কথা না বলে নিজেই চশমাটা নোমানের চোখে পড়িয়ে দিলো।নোমান শুধু রাগে ফুঁসছে।আর চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে।
আমান ওদিকে খেয়ালই করে নি,সে উলটো নোমানকে বললো,
চশমা তো ফেরত পেলি,এবার পাঞ্জাবি টা পড়ে নে।আর চল।
নোমান কোনো কথা বললো না।সে ফতুয়া আর প্যান্ট টা হাতে নিয়ে বললো,আমি কোনো পাঞ্জাবি পড়বো না।আমি এগুলোই পড়বো।
আমান সেই কথা শুনে বললো,যা মন চায় পড়।তবুও একটু বের হ ঘর থেকে।এই বলে আমান ও চলে গেলো।
আমান বেচারা এখনো দেখে নি তানিশাকে।কারণ তানিশা এখন পর্যন্ত স্টেজে যাই নি।আমান দেখলে তো আজকেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবে তানিশাকে।
এদিকে তানিশা নোমানের পাগলামি দেখে অন্য আরেকটা রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকলো।তার নিজেরও অন্যরকম এক অনুভূতি হচ্ছে।প্রথম পছন্দ আর প্রথম ভালোলাগার মানুষ টি যদি এভাবে বার বার তাকায় আর তাকে স্পর্শ করে একদম কাছে টেনে নেয় সেই মুহুর্তে বাকি সবার কেমন লাগে তানিশা জানে না বাট তার অন্যরকম এক ফিলিংস হচ্ছে।সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না।তানিশা বুঝে গেলো সে সত্যি সত্যি নোমানকে ভালোবেসে ফেলেছে।আর নোমান যে তাকে পছন্দ করে সেটা সে অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে।তানিশার শুধু বার বার নোমানের সেই কাছে আসা,তার উত্তপ্ত নিশ্বাসের কথাই মনে হচ্ছে।আর নোমানের চাহনি তো তাকে এমনিতেই বার বার পাগল করে দেয়।
হঠাৎ হিয়া এসে তানিশা কে ডেকে নিয়ে গেলো। কারণ সবাই শুধু নাকি তানিশাকেই খুঁজছে।
নোমান এবার নিজেও তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে তানিশাদের বাগানের দিকে চলে গেলো।সেখানে গিয়ে দেখে তারার মেলা বসেছে।কে কোনটা চেনাই যাচ্ছে না।সবাই একই রঙের আর একই সাজে সেজেছে বিধায় এরকম ঝটকা লাগছে নোমানের।তবে তানিশাকে স্পষ্ট চেনা যাচ্ছে।কারণ সে সবার থেকে আলাদাভাবে সেজেছে।আর তার বোনের পাশেই বসে আছে।তানিশার হবু দুলাভাই পাশের একটা শোফায় বসে আছে।
নোমান দূর থেকে দাঁড়িয়েই তানিশাকে দেখতে লাগলো।
তানিশাও দেখছে নোমানকে।নোমানের গায়ে সবুজ রঙের ফতুয়া দেখে তানিশা মুচকি একটা হাসি দিয়ে নিচ মুখ হলো।সে মনে মনে ভাবতে লাগলো শুধু একই রঙের ড্রেস পড়লেই হবে না,যতদিন নিজের মুখে কিছু বলছো না ততোদিন আমিও পাত্তা দিচ্ছি না।
হঠাৎ নোমান খেয়াল করলো একটা ছেলেটা শুধু তানিশারই ছবি তুলছে।সে আর অন্য কারো ছবি তুলছে না।নোমান তা দেখে ছেলেটির কাছে এগিয়ে গেলো।আর তার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে বললো,
এক্সকিউজ মি!বউ ঐ টা।এটা না।
ছেলেটি সেই কথা শুনে বললো, এক্সকিউজ মি!আমিও জানি বউ ঐ টা।এই বলে নোমানের হাত থেকে আবার ক্যামেরা টি নিয়ে নিলো।আর আবার শুধু তানিশারই ফটো তুলতে লাগলো।
নোমান ছেলেটির এমন কান্ড দেখে তানিশার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।কারণ তানিশা ছেলেটিকে কেনো কিছু বলছে না?কেনো বারণ করছে না তার ছবি তুলতে?
#চলবে,
#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_১৩
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
নোমান বারণ করা সত্ত্বেও ছেলেটি অনবরত তানিশার ছবি তুলতেই আছে এবং নোমানকে দেখিয়ে দেখিয়ে আরো বিভিন্ন এংগেলে ছবি তুলতে থাকলো।নোমান তা দেখে হঠাৎ রাগ করে ছেলেটির হাত থেকে ক্যামেরা টা নিয়ে মাটির সাথে দিলো এক আছাড়,মুহুর্তের মধ্যে ক্যামেরা টি ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।তা দেখে ছেলেটি নোমানকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
তোর এতো বড় সাহস?আমার ক্যামেরা ভেংগে ফেললি কেনো?
নোমান তখন নিজেও ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে বললো, ভেংগেছি বেশ করেছি।তা তুই আমার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কোথায় পেলি?মুহুর্তের মধ্যে দুইজনে মারাত্নক রকমের ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিলো।এক পর্যায়ে যখন তারা মারামারির পর্যায়ে যেতে ধরলো তখন তানিশার দুলাভাই সোহান নিজে এসে ক্যামেরাওয়ালা ছেলেটির উপর চোখ রাঙিয়ে বললো,সিফাত কি হচ্ছে এসব?মারামারি বন্ধ করো।
সিফাত তখন বললো,দেখো না ভাইয়া ছেলেটা কই থেকে এসে হঠাৎ আমার ক্যামেরা ভেংগে ফেললো।তারপর আবার ধাক্কাও দিচ্ছে।সোহান তখন
নোমানকে বললো,কে তুমি?কেনো ওর ক্যামেরা ভেংগে ফেললে?
নোমান কোনো উত্তর দিলো না।সে সেখান থেকে চলে যেতে ধরলো।কিন্তু সিফাত হঠাৎ নোমানের ফতুয়া টেনে ধরে বললো, এই আগেই কই যাচ্ছিস?আমার ক্যামেরা আগে ফেরত দে।
নোমান তখন চোখ রাঙ্গিয়ে সিফাতের হাত ঝাটকা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো,গায়ে হাত দিস কেনো?শুধু একটা নয়,দরকার হলে হাজারটা ক্যামেরা কিনে দেবো,ভালো করে ভদ্রতার সহিত কথা বল।
সিফাত তখন বললো, আমি কি তোর থেকে ভিক্ষা চাচ্ছি নাকি?আমার জিনিস আমি ফেরত চাচ্ছি।তোর হাজারটা ক্যামেরা আমি নিতে যাবো কেনো?
যে ছেলেটি তানিশার ছবি তুলছিলো সে আসলে তানিশার দুলাভাই সোহানের ছোট ভাই সিফাত।যে একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। যেহেতু নিজের ভাই এর হলুদ অনুষ্ঠান সেজন্য আজকের প্রোগ্রামের জন্য সিফাত নিজেই ফটোগ্রাফির কাজটা করছে।কিন্তু সিফাত যখন বার বার তানিশার দিকে ফোকাস করছিলো নোমানের তা কিছুতেই সহ্য হচ্ছিলো না।রাগে তার পুরো শরীর গরম হয়ে গেলো।তার ইচ্ছে করছিলো এখনি এই মুহুর্তে ছেলেটাকে মাটির সাথে পুঁতে ফেলতে।তার তানিশার দিকে নজর দেওয়ার সাহস সে কই পেলো?
নোমান অবশ্য অনেকবার সিফাতকে বারণ করেছিলো কিন্তু সিফাত কিছুতেই শুনছিলো না।সে উলটো ঘাড় ত্যাড়ামি করছিলো নোমানের সাথে।
এক এক করে সবাই এগিয়ে আসলো নোমানের কাছে।কেউই বুঝতে পারছিলো না আসলে হয়েছিলো টা কি?তবে নোমান কেনো ভাংলো ক্যামেরাটি এ নিয়ে সবার বেশ কৌতুহলের সৃষ্টি হলো।
এবার আমান আর তন্নিও এগিয়ে আসলো।আর নোমানের এমন রাগান্বিত চেহারা দেখে আমান বললো,নোমান?থাম এবার।গেস্টের বাসায় এসে এটা কি ধরনের বেয়াদবি?ওনার ক্যামেরা কেনো ভেংগে ফেললি?
নোমান তার ভাই এর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেলো।
সিফাত তখন বললো এই কই যাচ্ছিস?আমার ক্যামেরা দিয়ে যা।সিফাতের কথা শুনে সোহান বললো,চুপ থাক এখন।আমি কিনে দেবো ক্যামেরা।তবুও গোলোযোগ করিস না।ওকে যেতে দে।
সিফাত তা শুনে বললো, তুমি কিনে দেবে কেনো?যে ভেংগেছে সেই কিনে দেবে।
আমান তখন কিছু টাকা বের করে দিয়ে বললো,এই নাও টাকা।তোমার ক্যামেরা কিনে নিও।তবুও চুপচাপ থাকো।
সোহান তখন আমানকে বললো, কে তুমি?তুমি টাকা দিলে কেনো?
আমান তখন তার নিজের পরিচয় দিতে লাগলো।তা দেখে এতোক্ষণে তানিশা এগিয়ে আসলো।আর তার দুলাভাই এর সাথে আমানের আর তন্নির আরো ভালোভাবে পরিচয় করে দিলো।সোহানের সাথে আমানের যখন ভালোভাবে পরিচয় হয়ে গেলো তখন আমান বললো,
আমি নোমানের বড় ভাই।ওর আসলে মাথায় একটু সমস্যা আছে।এমনিতেই মাঝে মাঝে মাথা গরম করে ফেলে।কিছু মনে করবেন না ওর ব্যাবহারে।সোহান তখন বললো আমার ভাইটাও এমন।কিছু নাই বুঝতেই উল্টাপাল্টা করে বসে।আসলে আজকালকার ইয়ং জেনারেশনের ছেলেরা এমনই।কই সবাই মিলেমিশে অনুষ্ঠান উপভোগ করবে তা না করে হুদাই গন্ডগোল করে।এদের মধ্যে ছাড় দেওয়ার কোনো মন মানসিকতাই নেই।
এদিকে নোমান রুমে গিয়ে তার ব্যাগ প্যাক করতে লাগলো।সে সিদ্ধান্ত নিলো এক্ষুনি চলে যাবে।আর এক মুহুর্তও থাকবে না সে।তার কিছুই ভালো লাগছে না।হঠাৎ তানিশা এলো সেখানে।নোমানকে ব্যাগ প্যাক করা দেখে বললো,
এই কি করছেন আপনি?এতো রাতে কই যাচ্ছেন আবার?
নোমান তানিশার কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকালো।আর তার ব্যাগ রেখে দিয়ে তানিশার কাছে চলে গেলো।তারপর হঠাৎ তানিশার হাতটি জোরে করে টিপে ধরে বললো, তুমি কিছু বললে না কেনো?কেনো বললে না?
তানিশা তোতলাতে তোতলাতে বললো,কি বলবো?
নোমান তা শুনে ধমক দিয়ে বললো, কি বলবে মানে?ছেলেটা যে তোমার ছবি তুলছে তুমি বারণ করবে না?
তানিশা নোমানের দিকে ভালো করে তাকালো।মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে।চশমার সাদা গ্লাস ভেদ করেও দেখা যাচ্ছে সে আগুন।তানিশা তখন বললো,আপনি এতো রাগ করছেন কেনো?ও ছবি তুললে আপনার প্রবলেম কি?
নোমান সেই কথা শুনে চিৎকার করে বললো হ্যাঁ আছে প্রবলেম।আমার চোখের সামনে অন্য কেউ তোমাকে এভাবে দেখবে তা আমার কিছুতেই সহ্য হবে না।চোখ দুটি একদম উপড়ে ফেলবো তার।
তানিশা তখন বললো কেনো?কেনো উঁপড়ে ফেলবেন?আমি আপনার কে হই?আমার উপর আপনার কিসের এতো অধিকার?
নোমান সেই কথা শুনে বললো,আছে অধিকার।তোমার উপর আমার অধিকার সবচেয়ে বেশি।কারণ আমি তোমাকে ভা,,,।এই বলে নোমান থেমে গেলো।আর তানিশার হাত ছেড়ে দিলো।
তানিশা তখন বললো,থেমে গেলেন কেনো?বলেন?কি বলতে চাইছিলেন আপনি?
–কিছু না।তুমি চলে যাও এখন।
তানিশা তখন বললো ওকে যাচ্ছি।বাট একটা কথা শুনে রাখুন অযথা আমার উপর অধিকার দেখাবেন না।কারণ আপনি আমার কেউ হন না।আপনি কিন্তু আজকাল আমার যখন তখন হাত ধরছেন,আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছেন।আমার এসব ভালো লাগে না।এই বলে তানিশাও চলে যেতে ধরলো।
হঠাৎ নোমান তানিশার হাত ধরে টেনে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলো যে তানিশা নড়াচড়া করতেও পারছিলো না।
তানিশা তা দেখে বললো,এই?এই আপনি কি করছেন?কেউ দেখলে কি হবে?ছাড়ুন আমাকে।
নোমান তবুও ছাড়লো না তানিশাকে।
সে আরো শক্ত করে তার বুকের সাথে মিশে নিলো তানিশাকে।আর বললো,
তানিশা আমি আর পারতিছি না এই ব্যাথা সহ্য করতে।কেমন যেনো অসহায় লাগছে নিজেকে।আমি মনে হয় তোমাকে ভালোবেসে ফেলছি।তোমাকে একদিন না দেখলে ভীষণ কষ্ট হয় এখন। ইচ্ছে করছে তোমাকে সারাজীবনের জন্য আমার কাছে রেখে দেই।।আই লাভ ইউ সো মাচ বেবি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।
নোমান মনে হয় এতো দিনে একটু হালকা হলো।মনের ভিতর জমানো কথা বলতে না পেরে অসহ্য এক ব্যাথায় ছটফট করছিলো এতোদিন।আজ কে তানিশাকে সবকিছু বলতে পেরে মনে হলো বুকের উপর থেকে শক্ত একটা পাথর নেমে রাখলো কেউ।
তানিশা নোমানের কথা শুনে তো একদম স্তব্ধ হয়ে রইলো।তার কথা বলার কোনো শক্তিই মনে হয় নাই।বোবার মতো চুপচাপ থাকলো সে।তার তো আজ খুশি হওয়ার কথা।আনন্দে খুশিতে নাচানাচি করার কথা। কারণ সে যে অনেক আগেই তার মন নোমানকে দিয়ে বসে আছে।যেদিন প্রথম দেখেছিলো নোমানকে সেদিনই তার চোখ আঁটকে গিয়েছিলো তার মায়ায়।সে কিছুতেই বের হতে পারে নি সে মায়া থেকে।কিন্তু নোমান যদি কখনো প্রকাশ না করতো তার না বলা মনের কথা চিরদিন মনের মধ্যেই রয়ে যেতো।
কিন্তু হঠাৎ নোমান তানিশাকে ছেড়ে দিলো।আর সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।কারণ সে এতোক্ষণ যে ঘোরের মধ্যে ছিলো।অতিরিক্ত আবেগ আর উত্তেজনার বসে সে যে তানিশাকে সব সত্য কথা বলে দিয়েছে ভাবতেই তার ভীষণ লজ্জা লাগছে।নোমান এখন তার এই মুখখানা কেমনে দেখাবে তানিশাকে সেই চিন্তায় সে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।
অন্যদিকে তানিশা নোমানের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলো না।তার ইচ্ছা করছিলো পাখির মতো উড়ে বেড়াতে।তানিশা সেজন্য দৌঁড়ে তন্নির কাছে ছুটে গেলো।কারণ আজ সে তন্নিকে তার মনের কথা জানাবেই জানাবে।এতোদিন সে যেহেতু একতরফা ভাবেই ভালোবেসে এসেছে সেজন্য জানায় নি তন্নিকে কিছু।কিন্তু আজ তো নোমান সবকিছু ক্লিয়ার করেই দিলো।সেজন্য আজ আর কোনো বাধা নেই বলতে।কিন্তু এতো মানুষ জনের মধ্যে সে কি করে বলবে এজন্য আর বললো না।এ নিয়ে নিরিবিলি কথা বলবে সে।
হলুদের প্রোগ্রাম শেষ হলো অনেক রাতে।ভীষণ গরমের মধ্যে ভারী লেহেঙ্গা পড়ে তার শরীর একদম ভিজে একাকার।সেজন্য তানিশা ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলো।তারপর গোসল করে টাওয়াল টা দিয়ে চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বের হলো।হঠাৎ তার রুমে নোমান প্রবেশ করলো।আর রুমে ঢুকেই সে দরজা লাগিয়ে দিলো।নোমানকে এতো রাতে রুমে দেখে তানিশার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।নোমান আবার কেনো এসেছে এতোরাতে?
কারণ যেকোন মুহুর্তে তন্নি রুমে ঢুকবে।কারণ সে অন্য আরেকটা ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছে।
তানিশা তাড়াতাড়ি করে ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে বললো,আপনি আমার রুমে?আর দরজা লাগালেন কেনো?
নোমান সেই কথা শুনে তানিশার একদম কাছে এসে বললো,তোমার উত্তর এখনো পাই নি।এজন্য মন টা ভীষণ ছটফট করছিলো।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো, প্লিজ রুম থেকে বের হয়ে যান এখন।কেউ দেখলে খুব খারাপ হবে কিন্তু।
–আগে বলো।তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
আমার প্রতি তোমার ফিলিংস কেমন জানতে চাই আমি।
তানিশা তখন বললো কাল বলবো।প্লিজ এখন যান।
হঠাৎ তন্নি দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,তানিশা দরজাটা খোল।
তানিশা পড়ে গেলো মহাবিপদের মধ্যে।এখন কি করবে সে?
অন্যদিকে নোমানের মনে বিন্দুমাত্র ভয়ভীতি নেই।সে তানিশার মুখ থেকে শুনবে তবেই যাবে।তানিশাও নাছোড়বান্দা। সে এতো সহজে কিছুতেই বলবে না।
তানিশা সেজন্য নোমানের হাত ধরে টেনে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো।তারপর ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে দরজা খুলে দিলো।
তন্নি রুমে ঢুকেই বললো,দরজা লাগিয়ে দিছিস কেনো?
এদিকে আমান আবার তানিশার রুমে এলো নোমানের খোঁজে।এতোরাতে নোমান আবার কই গেলো?
আমান তানিশার রুম চেক করেই চলে গেলো।সে বেশি দেরী করলো না।হঠাৎ নোমান ওয়াশরুমের ভিতর থেকে থাপড়াতে লাগলো।তানিশা অনেক আগেই শুনতে পেয়েছে।সেজন্য তানিশা ওয়াশরুমের দরজার সিটকিনি টা খুলে দিয়েই তন্নিকে সাথে করে নিয়ে জোর করেই বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
তন্নি কিছু বুঝতে পারলো না।সে তখন বললো,কি রে এভাবে হঠাৎ এখানে আনলি কেনো?
তানিশা তখন তন্নির হাত ধরে বললো, তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।সেজন্য নিয়ে আসলাম এখানে।
–ও তাই?তা কি কথা?
তানিশা বুঝতে পারছে না কিভাবে শুরু করবে সে?সে আমতা আমতা করতে লাগলো।
তন্নি তখন তানিশার মুখখানা উপরে তুলে বললো,বুঝতে পেরেছি,প্রেমে পড়েছিস।
তানিশা ভীষণ অবাক হলো।তন্নি কিরে বুঝলো?তাহলে কি সে সবকিছু জানে?সেজন্য তানিশা বললো,তুই কি করে বুঝলি?
–কারণ আমি যখন প্রেমে পড়েছিলাম ঠিক এমনটাই করেছিলাম।মুখখানা ঠিক তোর মতই হয়েছিলো।পুরো শরীরে ঠিক এমনটাই উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিলো।
তানিশা তন্নির কথা শুনে বললো, বেঈমান,যা তোর সাথে কথা নাই।তুই প্রেমে পড়েছিস আর আমি জানি না।
তন্নি তখন বললো,জানাবো জানাবো করে আর সময় হয় নি।আমি না ভীষণ ভয়ের মধ্যে ছিলাম।যদি আবার সে রাজি না থাকে।কারণ একতরফা ভালোবাসাগুলো সবসময় পূর্ণতা পায় না।কিন্তু এখন আমার সব ভয় দূর হয়ে গেছে।তার সাথে আমার বিয়েও ঠিক হইছে।আমি যে কি খুশি হইছি তোকে সেটা বলে বোঝাতে পারবো না।কবে যে আমাদের দুইজনের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে সেই অপেক্ষায় আছি।
তানিশা অনেক বেশি এক্সসাইটেড ছিলো তন্নির ভালোবাসার গল্প শোনার জন্য।সে তন্নির মুখে তার প্রেম ভালোবাসার কাহিনি শোনার জন্য অস্থির হয়ে থাকলো।সে আজ শুনবেই শুনবেই।
অন্যদিকে তন্নিও এক্সসাইটেড তানিশার ভালোবাসার মানুষের নাম শোনার জন্য।দুই বান্ধুবি কিছুক্ষন ভালোবাসা নিয়ে গবেষণা করতে লাগলো।
তাদের মতে, ভালোবাসা হলো,দুইজন মানুষের মনের গভীরতম ভাব।দুইজনের মনের ভাষাই যখন এক হয়ে যায় তখন সেটাই হলো ভালোবাসা।ভালোবাসার মানুষ কে এক নজর দেখলেই শান্তি পাওয়া যায়।মনের মধ্যে অন্যরকম এক ফিলিংস আসে।আর সে যদি একটু স্পর্শ করে তাহলে মনে হয় সারাজীবনের জন্য তার মাঝে হারিয়ে যাই।এ যে এক অন্য রকম ফিলিংস।যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
#চলবে,