ডাকপিয়নের ছুটি নেই পর্ব-৪৩ এবং শেষ পর্ব

0
633

#ডাকপিয়নের_ছুটি_নেই ♥️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব____৪৩ এবং সমাপ্ত পর্ব

চোখের তারায় মনোহারিণীর ঘুমন্ত মুখশ্রী হৃদয় হরণ করলো শ্রাবণের গম্ভীর মনোভাবের। মায়ের বলার পর শ্রাবণ এদিক সেদিক না তাকিয়ে সোজা চলে এলো নিজের ঘরে। ইশার কাছে মাফ চাওয়ার তাগিদে। কিন্তু রুমে এসে দেখলো, তার ইশুপাখি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে বিছানার মাঝামাঝি হয়ে। শ্রাবণ দীর্ঘসময় তার পানে স্থীর ও স্বস্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে রইলো। বুঝি সে নতুন করে প্রেমে পড়লো চেনা মুখটির। আলগোছে ইশার পাশ ঘেঁষে বসতে বসতে আওড়ালো কথাটি। হাতের নিশপিশ করা ভাবটাকে দমন করতে না পেরে আলগোছে স্পর্শ করলো তার নরম শীর্ণ গালে। ইশা ঘুমের ঘরেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো। কাঁচা ঘুম। হয়তো মিনিট পাঁচেকও হয়নি এই ঘুমের।

“উপরওয়ালা আমাকে ক্ষমা করবেন না বউপাখি! তোমার সাথে আমি অন্যায় করেছি, অন্তত তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও!;

সন্তর্পণে হৃৎস্পন্দন তড়িৎ হারে বেড়ে গেলো শ্রাবণের। কথাগুলো বলতে বলতে ইশার নেতিয়ে থাকা হাতটা তুলে নিজের মুঠোবন্দি করে নিলো। বুক চিঁড়ে তপ্ত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে ইশার বন্দী হাতটায় নিজের কপাল চেপে ধরলো। সেকেন্ড গড়ালো না, পরক্ষণেই শ্রবণবিবর হলো অনাকাঙ্ক্ষিত একখানা স্বর,

“ক্ কি হয়েছে তোমার? কি হয়েছে!;

কন্ঠে একরাশ আকুলতা ও তীব্র ভীতি। নিজের হাতটা শ্রাবণের কপালের সাথে আরেকটু চেপে ধরে খানিক এগিয়ে গেলো ইশা। শ্রাবণ ফট করে ইশার হাতটা নামিয়ে দেয় নিজের কপালের শীর্ষ বিন্দু হতে। পরক্ষণেই ক্ষুধার্ত ভিখারির ন্যায় বুকের মাঝে মিশিয়ে নেয় ইশাকে। ঘুম কাতুরে ইশার সবটা বুঝতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গেলো। শ্রাবণের হৃৎস্পন্দনের ন্যায় পাল্লা দিয়ে কাঁপছে তার দেহ। মাথায় একরাশ দুশ্চিন্তারা এসে ভীড় জমালো। একবার মনে হলো, সব কিছু ঠিক আছে তো?

“তুমি এমন করছো কেন, কি হয়েছে? আমাকে বলোনা?;

ইশার আকুল কন্ঠ পুনরায় শ্রবণবিবর হয় শ্রাবণের। সে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইশাকে। মনের আশ মেটেনা তখনও। নিজের অপরাধ বোধ, একই আছে বুকের ভেতরটায়।

“কি গো, বলোনা? আমার যে এবার ভয় করছে।;

ইশার মুখে ভয়ের কথা শুনে শ্রাবণ ওকে আলগা করলো নিজের থেকে। সোজা করে বসালো তার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরত্বে। ফের ব্যস্ত গলাতে বলল,

“বসো, আমি আসছি!;

কোথায় চললে?’ প্রশ্ন করতে চেয়েও সময়ের কাছে হার মেনে গেলো ইশা। শ্রাবণ অতি দ্রুত প্রস্থান করলো। ঠিক দু’মিনিটের মাথায় আবার ফিরেও এলো। ইশা ঠিক ওখানেই, তৃষ্ণার্ত কাকের ন্যায় প্রহর গুনছিলো।

শ্রাবণের হাতে একখানা নীল রঙা খাম দেখে ইশা প্রশ্নবিদ্ধ নয়নে তাকালো তার পানে। শ্রাবণ চমৎকার হেসে খামটা নিয়ে এগিয়ে গেলো ডাকবাক্সটির কাছে। ইশা নেত্রে অবিশ্বাস্য ভাব জমিয়ে দেখে যাচ্ছে শ্রাবণের কান্ড। শ্রাবণ খামটা ডাকবাক্সে ফেললো। ক্ষণেই হা রে রে করতে করতে টিয়াপাখিটি গলা বাজিয়ে ডেকে উঠলো, ‘ইশুপাখি চিঠি এসেছে, ইশুপাখি চিঠি এসেছে’। ইশা চমকে উঠলো। পরক্ষণেই একঝাক আনন্দ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়েও নিলো ওর সর্বাঙ্গ। মনটা আনন্দে নাচনকোঁদন করে উঠতেই ইশা চটজলদি বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লো। বহুদিন হয়ে গেছে, কোনো চিঠি মেলেনি।

ইশা তাড়াহুড়োয় বের করলো চিঠিটা। মনটা তার আকুপাকু করছে চিঠি খোলার আকাঙ্ক্ষায়। নাচতে ইচ্ছে করছে উৎফুল্লতায়।

“থ্যাঙ্কিউ আমার ডাকপিয়ন, থ্যাঙ্কিউ সো মাচ। বহুদিন যাবত বড্ড মিস করছিলাম, আমার চিঠি গুলোকে।;

“আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি, মস্ত বড় অন্যায়। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।;

শ্রাবণের এমন বাক্যে চিঠি খোলার কথা ভুলে গেলো ইশা। চকিত পেছন মুড়ে তাকাতেই চোখের তারায় ভেসে ওঠে শ্রাবণের ক্লিষ্ট, মলিন মুখখানা। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো ইশার। চোখের গলি ভরাট হলো বুকের ভেতরের চাপা আর্তনাদ গুলো মনে পড়াতে। উপরওয়ালা ওর মোনাজাত কবুল করেছেন তবে। শ্রাবণকে পুনরায় ওর পানে ফিরিয়ে দিলেন তিনি।

“না, এখানে তোমার কোনো ভুল নেই, আমিই তো তোমাকে না জানিয়ে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার ভুল, আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।;

বলতে বলতে ইশা হাত জোর করলে শ্রাবণ ওর হাত টেনে জড়িয়ে ধরলো পুরনায়। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে জড়ানো কন্ঠে বলল,

“না একদম না। তুমি একদম ক্ষমা চাইবেনা। তুমি ঠিক ছিলে, আমি ভুল ছিলাম।;

ইশার আর কোনো বাক্যব্যয় করতে হলোনা। পরম স্নেহে বাকি রাত টুকু মানুষটার বুকের সাথে লেপ্টে থেকেই পার হলো।

_________
দুপুর বারোটা। গা পোড়া গরমে রাস্তার পাশের ছাওনিতে মোড়ানো ছোট্ট ফুচকার দোকানটায় বসে আছে আরাফ আর তানি। দু’জনের হাতে দুটো ফুচকার প্লেট। তানি ওর সম্পূর্ণ মনোযোগ ফুচকায় নিবন্ধ করে খেয়ে চলেছে। কিন্তু আরাফ সেটা পারছেনা। সে তানির সাথে তাদের প্রেমের সম্ভাব্য বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চায়। কিন্তু কোনো মতেই পারছেনা। উসখুস করছে ভেতরে ভেতরে।

“আমাকে তোমার কেমন লাগে?;

অবশেষে বলেই ফেললো। বড় উৎসুক শোনালো আরাফের কন্ঠখানা। তানির আয়েসি ভঙ্গিতে বসে ফুচকা খাওয়ায় কিঞ্চিৎ বিরতি এলো এহেম প্রশ্নে। ভ্রু জুগল কুঁচকে সে তাকালো আরাফের পানে। বিরক্তির সহিত বলল,

“কেমন লাগবে?;

আরাফের উৎফুল্ল হৃদয়ে ভাটা পড়লো। মুখটা লটকে গেলো ক্ষণেই। শার্টের কলার্টটা টেনে ঠিক করতে করতে মাথা নীচু করে বলল,

“ভালো নাকি খারাপ!;

“ভদ্র।;

ছোট্ট কাঠখোট্টা জবাবে এবারও আরাফের মুখের প্রফুল্লতা ফেরত এলোনা। মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে চিরুনি করে বলল,

“ব্যস?;

তানি ফের ফুচকা খেতে নিয়ে থামে। এবার সে আরও বিরক্ত হলো। সমস্যা কি লোকটার? খেতে চেয়েছে চকলেট, মিষ্টি, হাতে ধরিয়ে দিলো ফুচকা! যাক সমস্যা নয়, ফুচকাটা তার এতোটাও অপ্রিয় নয়। মোটামুটি এডজাস্ট করতে পারে। কিন্তু হঠাৎ এসব ব্যাঙের ছাতামাথা প্রশ্ন করে খামোখাই বিরক্তির সাগরে ফেলে দিচ্ছে তাকে।

“কি শুনতে চান সরাসরি বলুন? অযথা আজাইরা প্যাঁচাল পাড়ার কোনো ইচ্ছে নেই।;

আরাফ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। ফুচকাওয়ালা লোকটার পানে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,

“মামা তুমি ওরটায় ঝাল দিয়েছো? বারন করেছিলাম না তোমাকে?;

তানি ফের পুনরায় খেতে নিয়েও খেতে পারলোনা। হতভম্ব হয়ে গেলো আরাফের কান্ডে। সে পেছন থেকে আরাফের হাত টেনে ধরে বলে উঠলো,

“কি, কি হয়েছে আপনার? উনাকে বকছেন কেন! আর আপনাকে কে বলেছে আমার ফুচকায় ঝাল হয়েছে?;

আরাফ তটস্থ নয়নে তাকালো একবার। ফের বলল,

“ঝাল হয়নি?;

“না হয়নি।;

“স্ সরি মামা!;

“বসুন এখানে। আমাকে পটাবেন খুব ভালো কথা, আমিও পটতে চাই। তবে এসব টক ঝাল দিয়ে নয়, আমার জন্য গোটা একটা মিষ্টির বৈয়াম হতে হবে। বুঝলেন?;

“অ্যা!;

আরাফের হা করা মুখে একটা ফুচকা দিয়ে বন্ধ করে দিলো তানি। ফের মুচকি হেসে বলল,

“অ্যা নয়, হ্যাঁ।;

____________

ডাক্তারের নাম ফাজলে করীম। নামটা পড়তেই ইশার অবচেতন মন পড়লো ফাজিল করীম। ‘ফাজিল’ শব্দটা ওর মস্তিষ্ক দ্বিতীয় বারের ন্যায় আওড়াতে টনক নড়ে। নড়েচড়ে বসে পুনরায় নামটা পড়ে। ফাজলে করীম। ইশশ, কেমন বাচ্চাদের মতো চিন্তাধারা। শ্রাবণ শুনলে নির্ঘাত এক ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখবে।

সাত মাস পড়েছে ইশার অনাগত সন্তানের। ডাক্তার বলছেন, তারা চাইলেই আলট্রাসনো করিয়ে বেবির জেন্ডার জানতে পারবে। কেননা, এর পুর্বে বারকয়েক আলট্রাসনো করালেও শ্রাবণের বারনে কেউ জানতে চায়নি ইশার পেটে যে আছে সে তাদের প্রিন্স নাকি প্রিন্সেস। শ্রাবণ এবারও কাঠকাঠ হয়ে জবাব দিলো, তারা জানতে চায়না।

ডাক্তার ফাজলে করীম অবাক হয়ে শুধালেন,

“কেন? আধুনিক বিশ্বের এটাই তো সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট।;

শ্রাবণ মলিন হেসে জবাব দেয়,

“এখানেই আমার অসুবিধা!;

ডাক্তার সাহেব শ্রাবণের কথাটা ঠিক বুঝলেন না। ফাইলে কলম চালাতে গিয়েও থামলেন। প্রশ্নবিদ্ধ নয়নে তাকালে, শ্রাবণ ঠোঁটের কোনে এক চাঞ্চল্য হাসি এঁটে, এগিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর হাত দুটো রাখলো। একে অপরকে জুড়ে কয়েক মুহুর্তে ভাবনায় বিজড়িত হয়ে বলে উঠলো,

“ছোট বেলায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর হঠাৎ যখন বাবার হাতে নতুন কোনো পেন্সিল বক্স দেখতে পেতাম, তখন যে আনন্দ টা হতো আমি আমার সন্তানের ক্ষেত্রেও একই আনন্দ পেতে চাই। ইংলিশ এক্সাম, বুকটা বিরামহীন কাঁপছে, হঠাৎ দাদীজান এসে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে এক টুকরো স্নেহ দিয়ে মায়ের চোখের আড়ালে হাতে দশটাকা গুঁজে দিয়ে বলতো, পরীক্ষা শেষ হইলে তোমার পছন্দের কিছু কিনে খাবা’ এই যে কিছু কিনে খাবার অপ্রত্যাশিত আনন্দ, আমি আমার সন্তানের ক্ষেত্রেও ঐ একই আনন্দটা পেতে চাই। আমি চাই ও আমার অপ্রত্যাশিত সুখের কুন্ডলী হোক। আমার অনাকাঙ্ক্ষিত অনাবিল খুশির একমাত্র ভাগীদার হোক। যদি আগেই জেনে ফেলি, তবে প্রত্যাশিত আনন্দ পাবো, যেটায় হয়তো আমার আনন্দ আরেকটু বেশি হবার কথা ছিলো, কিন্তু কম হবে! আমি চাইনা প্রত্যাশিত আনন্দে আমার সন্তানের প্রতি সবার ভালোবাসার বিন্দু পরিমান কমতি হোক। সে কে, এই চাওয়াটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া নয়, সে কি, আমাদের কতটা জুড়ে রয়েছে সেটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া। আমরা চাই সে সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে দুনিয়ার আলো দেখুক। আপনি শুধু আমাদের এতটুকু ইনসিওর করবেন, সে কি সুস্থ আছে? স্বাভাবিক আছে?;

মুগ্ধতা ঝড়ছে নয়নে তার। অর্থাৎ ইশার। এতো সুন্দর এক্সপ্লেনেশন যে ও নিজেকেও দিতে পারবে না, অন্যকে তো দূর। আজ মানুষটার প্রতি আরও এক আকাশ সম ভালোবাসা বেড়ে গেলো ওর।

ফাজলে করীম ভরাট হাসলেন। তার সাদা দাঁত গুলো ঝলমল করছে। বোঝাই যাচ্ছে, ভীষণ খুশি হয়ে গেছেন তিনি। লোকটার বয়স পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। জরুরী নয়, সব ডাক্তারদের চোখেই ভারি পাওয়ারি মোটা চশমা থাকবে। উনারও নেই। জুয়ান তাগড়া ছেলেদের ন্যায় তার চোখের জ্যোতি। আধুনিকতার ছোঁয়া পেতে পেতে মানুষ আজ দিশেহারা। স্বাভাবিক ভাবেই এই দম্পতিকেও তিনি ব্যতিক্রম ভাবতে পারেননি। প্রথমে একটু অবাক হলেও ভেবেছিলেন শেষ অব্দি কেউই ধৈর্য্য ধরতে পারেনা। কিন্তু সে ভুল ছিলো। নিজের ভুল সে ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে। ছেলেটাকে একটা স্যালুট দিতে ইচ্ছে করছে তার।

“ইওর ওয়ার্ডস রিয়েলি টাচড্ মাই হার্ট, শ্রাবণ। আই এপ্রেসিয়েট ইওর ওয়ান্ডারফুল এটিটিউড। ব্রেভ বয়।;

শ্রাবণ মৃদু হাসলো। ডাক্তার সাহেবও হাসলো তার ন্যায়। অতঃপর দু’হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো শ্রাবণের সাথে।

“ইউ আর সো লাকি ডিয়ার। বেশি ঔষধ দিবোনা। সামান্য ক’টা ঔষধ দিলাম। টাইমলি খাবে, এন্ড অবশ্যই অবশ্যই নিজের খেয়াল রাখবে। দৌড়ঝাপ, ভারী কাজ একদম নয়। সোজা ‘না’ বলে দিবে। ওকে?;

ইশার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে গেলো ডাক্তার সাহেব। ইশা লক্ষ্মী মেয়ের মতো সবটা শুনে কেবল মাথা নেড়ে সমর্থন করলো।

________

ছোট্ট একটা ঘরোয়া আয়োজন করা হয়েছে ইশার জন্য। বহুদিন বাদে খান বাড়িতে পুনরায় কোনো খুশির আয়োজনে মেতে উঠেছে সকলে। নামিরা ছোটাছুটি করছে এটা সেটা নিয়ে। আরব আর শ্রাবণ ঘর সাজানোর দায়িত্বে রয়েছে। তিতির, তানি আর তুতুন রয়েছে ভাইদের এসিস্ট্যান্ট হয়ে। ওদিকে তিতিরের ৩মাসের ছেলে বাবার কোলে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে এবার কান্না জুড়লো চিৎকার করে। ছেলের কান্নায় তিতিরকে এসিস্ট্যান্ট পদ থেকে বাদ দিয়ে দিলো শ্রাবণ। আগে তাদের একমাত্র ভাগ্নেকে সামলাতে হবে, পরে সব কাজ। তিতির মুখ লটকে ছুটলো ছেলের কাছে। আফিয়া বেগম, নুপুর বেগম, এবং মরিয়ম বিবি রান্না করছেন এলাহি আয়োজনে। আজকে ইশার পছন্দের সমস্ত খাবার রান্না হচ্ছে, দরজার ওপাশে। ইশা সবার হৈচৈ করা কান্ড দেখছে নানীর সাথে বসে বসে। নানীজান ওর লম্বা কেশ গুলোকে আঁচড়ে বেঁধে দিচ্ছেন। খোঁপা করবেন, সাথে একটা বেলি ফুলের মালা ধরিয়ে দিয়ে গেছে শ্রাবণ। আদেশ করে গেছে তার গিন্নির খোঁপায় যেন এই ফুলটা পড়ানো থাকে। আনোয়ারা বেগম রসিকতা করে বললেন,

“ও আমি পারবোনা, যার গিন্নি সেই যেন এসে পড়িয়ে দেয় ওটা।;

শ্রাবণ হাসতে হাসতে চলে গেলো। সাথে জানিয়ে খেলো, ‘তাকে একবার ডাকলেই সে উড়ে চলে আসবে।’

সমস্ত আয়োজনের অন্তমিলে ইশাকে এনে বসানো হলো খাবার টেবিলে। ওর সামনে শ’ত রকমের খাবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বড় বড় পাঁচ মাছ৷ মাছের মুড়ো, আস্ত মুরগী, দশ-বারো পদের ভর্তা, তরকারী! সব দেখে ইশার জিভে জল আসার উপক্রম। সবাই উৎসুক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে, ইশা প্রথমে কোনটা তুলবে। ইশা সবার মনের ডাক শুনে বড় মাছের মুড়োটাই তুলে নিলো। আফিয়া বেগম, নুপুর বেগম এবং মরিয়ম বিবি মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মৃদু হাসলেন। আনোয়ারা বেগমও হাসলেন মুখ টিপে। ইশা এদিকসেদিক না দেখে খেতে আরম্ভ করলো। যা দেখে শ্রাবণ খোঁচা মে*রে বলে উঠলো,

“বর কে না সেধে খেয়ে নিলে? হায়হায়, মা এ তুমি কেমন মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিলে? দেখো, দেখো চেয়ে?;

শ্রাবণের কথায় সবাই হেসে উঠলো স-শব্দে। তবে ইশার মুখখানা চুপসে গেলো! অসহায় দৃষ্টিতে আফিয়া বেগমের পানে তাকাতেই তিনি চোখ পাকালেন ছেলেকে। বললেন,

“তুই এতো পেটুক হলি কবে রে, আমার মেয়ের খাবারে একদম নজর দিবিনা। আজ শুধু আমার মেয়ের জন্য রেঁধেছি আমি।;

শ্রাবণ মানলোনা। মিছিল করার ন্যায় বলে উঠলো,

“মানবো না, মানবো না। এভাবে খেলে চলবে না, চলবে না। ভাগ তো আমাকে দিতেই হবে।;

বলেই ইশার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লো সে।অতঃপর করলো এক অবিশ্বাস্য কান্ড। ইশার খাবারের প্লেটটা নিজের দিকে টেনে নিয়েই বড় এক কামড় বসালো মাছে মুন্ডিতে। ইশা মৃদু চিৎকার করে উঠলো। সেই সাথে বাকি সবার মুখে হাত। আফিয়া বেগম তেড়ে এসে তো দিলেন এক মা*র। মা*র খেয়ে বেঁকে গেলো শ্রাবণ। সকলে পুনরায় জোট বেঁধে হেসে উঠলো ঘর কাঁপিয়ে। হাসলো ইশাও। তবে মুখ লুকিয়ে। শ্রাবণ মুখে মাছ নিয়ে বিড়ালের ন্যায় চোরা চোখে তাকালো মায়ের পানে। আফিয়া বেগম আবারও মা*রবেন, হাত তুলতেই শ্রাবণ নিজের খাওয়া মাছ টুকু ইশার মুখে পুড়ে দিলো। সবার মুখে আবারও হাত। পরক্ষণেই পুনরায় হাসির রোল পড়লো সারা ঘর জুড়ে। আফিয়া বেগমও আর পারলেন না নিজের হাসিটাকে দমিয়ে রাখতে। হেসে উঠেই একহাতে জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে, সেই সাথে অন্যহাতে ইশাকেও। তাদের আলিঙ্গনের দৃশ্য মোহিত করলো সকলকে। যার দরুণ সবাই একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওদের উপর। যে যেভাবে পারলো একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। সবার নীচে পড়লো ইশা আর শ্রাবণ। হাস্যোজ্জ্বল মুখে ইশা শ্রাবণের পানে তাকাতেই সবার অলক্ষ্যে ইশাকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলো শ্রাবণ। কানে কানে বলল,

“ভালোবাসি মনোহারিণী।;

_______________সমাপ্ত_______________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে