#ঠিক_যেনো_love_story
#02
#Esrat_jahan_Esha
৪.
না স্যার আমি তো নতুন জয়েন করেছি বেশিদিন হয়নি আর আজকে কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে।
১০ টার দিকে রিশাত কেবিনে চলে যায়। কেবিনে এসে রিশাত ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
রিমলি রুহমার সাথে ফ্রী হওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু রুহামা সে কোনো ভাবেই রিমলির সাথে কথা বলে না চুপচাপ শুনে। রিমলির রুহামার উপর প্রচুর রাগ উঠে তাই আর রুহামার সাথে কথা না বলে মোবাইল নিয়ে বসে থাকে।
ফেইজবুকে যেতেই একটা মেসেজ রিকুয়েষ্ট আসে।
রিমলি মেসেজ টি দেখে কান্নায় ভেংগে পড়ে। ওহহ আল্লাহ কেনো আজকে আমাকে এখানে দাড়া করালে কত কষ্ট করে এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। যেই কষ্ট ভুলার জন্য যাকে ভুলার জন্য এতোটা পথ হাটলাম আজ আবার তার সামনে কেনো।
ম্যাসেজ ;- কেমন আছো রিমলি? আমি সাফওয়ান না চিনার কথা না। দেখলাম তুমি নার্স হয়েছো তাও আবার এই হসপিটালের। জানো রিমলি বাইক এক্সিডেন্টে আমার বা পা টা ভেংগে গেছে প্লিজ একবার এসে দেখা করে যাও তোমাকে বড্ড মনে পড়ছে।
রিমলি ভাবে কি রিপ্লাই করব? নাহ কোনো রিপ্লাই করব না। কে ও ওকে আমি চিনি না। জিবনে সবচেয়ে কঠিন সময় পাড় করে এসেছি এখন আবার অতীত জীবনে আনব না। সাফওয়ান নামে আমি কাউকে চিনি না চিনতাম না। রিমলি কাঁদতে কাঁদতে নিজের ফেইজবুক আইডি ডিএক্টিভ করে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামনে তাকাতেই দেখে রুহামা কেবিনে নেই।
রিমলির ভয়ে মুখ শুকিয়ে আসে কোথায় গেলো মেয়েটি?
স্যার আমাকে তার মেয়ের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে বলেছেন।
রিমলি দ্রুত কেবিন থেকে বেড়িয়ে রুহামাকে খুঁজতে শুরু করে। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে একাকার অবস্থা। মনে হয় রিমলি এবার কেঁদেই দিবে। যার কাছে জিজ্ঞেস করছে কেউ রুহামাকে কেবিন থেকে বেড় হতে দেখেনি। রিমলি বুঝতে পারছে না কি করবে। প্রায় আধঘন্টা খুঁজাখুজি করে কোথাও না পেয়ে রিমলি কেবিনে চলে আসে। এসে যা দেখে তা দেখে রিমলির চোখ কপালে উঠে যায়। রুহামা তো ওর বাবার পাশেই বসা।
রিমলি ভিতরে ঠুকতেই রিশাত জিজ্ঞেস করল কোথাও গিয়েছিলেন নাকি?
— না মানে স্যার রুহামাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছিলাম না আমি ভেবেছিলাম ও বাইরে গেছে তাই খুঁজতে,,,,
মিস রিমলি একটু চতুর হওয়া দরকার রুমে না খুঁজে বাইরে কেনো গিয়েছেন? আমাকেও তো ডাকতে পারতেন ও বেডের নিচে ছিল।
—না মানে আসলে স্যার আমি এতো ভাবিনি মনে হলো বাইরে গেছে ছোট্ট মানুষ চোখের আড়াল হলেই তো।
— তো চোখের আড়াল হলো কিভাবে? আপনাকে বললাম না আমার থেকেও আমার মেয়ের দিকে বেশি খেয়াল দিতে হবে। দেখুন আমার মেয়ের কিছু হলে আপনাকে ছাড়ব না। আমার মেয়ে আমার সব কিছু।
রিমলি রিশাতের কথা গুলো শুনে চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো কোনো উত্তর করল না। এমনিতেই মনের অবস্থা ভালো না তার উপর মানুসিক চাপ নিতে পারছি না। সুনিল স্যারের কাছ থেকে বলে অন্য কাউকে কাজটা দেওয়া যায় কিনা। এই কাজ তো আর আমার না।
— স্যার আসব ভিতরে?
— হুমম আসো।
— স্যার আমাকে আগের মত ডিউটি দিলে হয়না?
— মানে স্যার রুগীর থেকে রুগীর মেয়ের বেশি খেয়াল রাখতে হয় আর আমার তো বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। ২৪ ঘন্টা একটা বাচ্চাকে গাইড করা আমার সম্ভব না।
— দেখো রিমলি রিশাত আমার বন্ধু। ওর পরিচিত কেউ এখানে নেই যারা আছে সবাই দূরে। আর মেয়েটার মা নেই রিশাত ওকে সব সময় জান প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে আগলে রাখার তাই হসপিটাল থেকেই একজন কে আমাদের বেছে নিতে হয়েছে।
— স্যার আমাকে কেনো? অন্য তো আরো সিনিয়র আপুরা আছে। আমি তো মাত্র কয়দিন আছি।
— তোমার বিয়ে হয়নি সংসার নেই তুমি পুরো সময় দিতে পারবে এই চিন্তা করেই তোমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর এর জন্য তোমাকে আলাদা পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।
— কিন্তু স্যার।
— কোনো কিন্তু না জব রাখতে হলে তোমাকে আমার কথা শুনতে হবে আর দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে হবে।
— স্যার এটা কোনো কথা? আপনাদের ক্ষমতা আছে তাই যেকোনো সময় হুমকি দিবেন? সবার ক্ষেত্রে এক রকম আমার ক্ষেত্রে অন্য রকম আমার কপালটাই খারাপ।
রিমলি চোখ মুছতে মুছতে ডাক্তার সুনীলের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। ডাক্তার সুনীল একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বলে কেনো যে তোমাকে ওখানে পাঠাচ্ছি সেটা তুমি যেদিন জানবে সেদিন হয় আমাকে ঘৃনা করবে না হয় আমাকে ধন্যবাদ দিবে।
৫.
এই যে আপু দাড়ান!আপনি আমাকে চিনেও কেনো না চিনার ভান করছেন? আপনি নিশ্চয়ই আমাকে চিনতে পেরেছেন তাই কাল রাতে আমার কাছে ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করেছেন।
— এই যে শুনুন কারো ভাই টাই আমি চিনি না। পরবর্তীতে আর আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন না।
— আপু ভাইয়া তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে তার পাপের ফল ভোগ করছে আপু ক্ষমা না করেন একবার কথা তো বলতে পারেন।
— চুপ! আজকে আপনি আমাকে আপু সম্মোধন করছেন এর আগে আপনার এই নরম মিষ্টি মিষ্টি কথা কই ছিলো? কম অপমান করেননি আপনি আমাকে। আপনার তো আমি বয়সে বড় ছিলাম তাও আপনি আমাকে সেই সম্মানটা দেননি। এখন ভদ্রতা দেখানো হচ্ছে? কেনো? আমাকে কি খেলনা পুতুল মনে হয়? কখনো যদি সেটা মনে করে থাকেন সেটা অতীত ছিলো এখন বর্তমানে আমার সাথে অতীতের কোনো সম্পর্ক নেই।
এর পর যদি আর পথ আটকানোর চেষ্টা করেন তাহলে এর ফলাফল খুব খারাপ হবে। আপনার ভাইয়ের ঠ্যাং তো একটা ভাংছে দেখেছেন কি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে? আপনার ঠ্যাং আমি ভাংবো। টাকার জন্য তো ভাইয়ের পিছনে পিছনে ঘুরো। তোর পিছনে কেউ আসবে না বুঝতে পারছিস? কথাটা মাথায় নিয়ে রাখ।
বলেই রিমলি দ্রুত পায়ে রিমনের সামনে থেকে চলে আসে।
রিমন রিমলির কথায় ভয় পেয়ে যায়। আর ভাবে আসলেই কি এই সেই রিমলি যাকে আমরা আগে চিনতাম? কথায় এতো পরিবর্তন কিভাবে? নাহ এই মেয়ের সামনে আমি আর আসব না আমার ভাইয়ের বিষয় আমার ভাই বুঝুক রিমলির অভিশাপেই ভাইয়ার জিবনে এই অবস্থা। এই অভিশাপ আমার জিবনে যেনো না আসে।
রিমলি কেবিনে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে। রিশাত রিমলিকে জিজ্ঞেস করে আপনি কি আমার কথায় রাগ করেছেন?
রিমলি নিজের রাগ, কষ্ট, সব চোখ বন্ধ করে হজম করে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলে না স্যার রাগ করেনি একটু জরুরি কাজ ছিলো তাই না বলেই বেড়িয়ে ছিলাম৷ সবার সব কিছু তে রাগ থাকতে নেই অনেক সময় না চাইতে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।
— বুঝলাম না।
— কিছুনা স্যার, রুহামা মামুনি আসো আমার কাছে তোমার জন্য চকলেট আছে৷
রুহামা চকলেটের কথা শুনে রিমলির সামনে গিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় চকলেটের জন্য।
রিমলি হাতের উপর একটা চুমু দিয়ে রুহামার হাতে একটা চকলেট দিয়ে পাশে বসিয়ে বলে তুমি যদি আমার সব কথা শুনো তাহলে তুমি যখন যা বলবে আমি তখন তাই করব।
রুহামা চকলেট খাচ্ছে আর বলছে শুনব মামুনি।
রিমলি একটু অবাক হয়ে বলে হটাৎ এতো পরিবর্তন? বাচ্চা মানুষ হয়ত ভয় ভেংগে গেছে।
সাফওয়ান রিমন কে রিমলির বিষয় জিজ্ঞেস করলে রিমন সাফওয়ানকে কাট কাট ভাবে উত্তর দেয় ভাইয়া শোনো যা গেছে গেছে এসব বাদ দাও হটাৎ আবার রিমলির পিছনে কেনো পড়ছ? শুধু শুধু অপমান হওয়ার জন্য?
আপমান তোমার হতে হচ্ছে করলে তুমি হও। আমাকে টানবে না এসবের মধ্যে। আর আমি আজ বাসায় যাবো তোমার মাকে বলো আসার জন্য।
তোমার পা কেটে ফেলা লাগতে পারে আমার অনেক কাজ আছে তোমার পাশে পড়ে থাকলে হবে?
সাফওয়ানের খুব খারাপ লাগছে কখনো ভাবেনি এমন একটা পরিস্থিতিতে ওর পড়তে হবে।
সাফওয়ানের ফোন বেজে উঠে ফোন ধরতেই ফোনের ওপাশ থেকে একজন কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে তোর পা নাকি কেটে ফেলতে হবে? শোন তোর মত একজন খোঁড়া ছেলেকে আমি বিয়ে করতে পারব না। তোর বাবাকে বলিস বিয়ে ক্যান্সেল করে দিতে। না হলে তোর যে পা টা আস্ত আছে বিয়ের পর ওটাও ভেংগে দিবো৷
চলব,,,,,