ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
পর্ব_৩৩
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
সময়ের সাথে সাথে পুরানো ক্ষত গুলো মিশে যায় । কিন্তু সেই ক্ষতের যন্ত্রণার রেশটুকু যেতে যেতেও থেকে যায় । বেলী সব ভুলে ইরফানের সাথে সেইভাবেই মিশে গেছে যেভাবে চুম্বক লোহাকে আটকে রাখে । ইরফানের বাবা কয়েকবার বেলীকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন । এমনকি তিনি এই কথাতেও উপনীত হয়েছেন যে তিনি শুধুমাত্র বেলীকে তার মেয়ে হিসেবে পরিচিত করবেন এবং ওনার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি তিনি বেলীকে দিয়ে দিবেন তবে তার আগে গ্রামে বিচার সভা বসিয়ে সবাইকে সব কিছু জানিয়ে বেলীর সাথে ইরফানের তালাক করিয়ে দিবেন । কারণ তিনি বেলীর এই অবস্থার জন্যে একমাত্র নিজেকে দায়ী করেন ।
একজন বাবা কতটা অসহায় হয়ে গেলে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হন তা সেই বাবা-ই জানেন । ইরফানের অপরাধ এতটাই বেশি ছিলেন যে রহমান আলী বেলীর সামনেই বলেছিলেন ,
– দুনিয়াতে এত ভালো মানুষরা মরে যায় আল্লাহ পাক এই এর মত দুই একটা শয়তান এই দুনিয়াতে রেখে দিছে ।
শ্বশুরের কথা শুনে বেলীর আত্মাটা কেঁপে ওঠে ।
– বাবা কি বলেন এইসব আপনি ? আপনি আমার বিধবা হওয়াটা দেখতে পারবেন তো বাবা ? আর যেখানে আমি সব ভুলে গেছি আপনিও ভুলে যান বাবা । আর সব থেকে বড় কথা বাবা , মানুষটা তার সব ভুল বুঝতে পারছে । যে মানুষ তার ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয় তাকে ক্ষমা করে দেয়া উচিত । বাবা ক্ষমা করা মহৎ গুন । ও-কে ক্ষমা করে দিন বাবা ।
ছেলের বউয়ের কথা শুনে রহমান আলী অনেক অবাক । এ কেমন নারী , যে কিনা এত কিছু সহ্য করার পরেও বলে ক্ষমা করে দেয়ার কথা ।
– তুই এই শয়তানটারে ক্ষমা করে দিতে কিভাবে বলস মা ?
– বাবা , সে মানুষ । তাকে শয়তান বলবেন না । আমার স্বামী সে বাবা । এইসব বলবেন না দয়া করে ।
– দেখলা তো ইরফান , যে তোমার সম্পর্কে সামান্য কটু কথা শুনতে পারে না সেই মেয়েটারে তুমি দিনের পর দিন এইভাবে এত বাজে ব্যবহার কিভাবে করছো তুমি ?
বাবার কথায় ইরফান আরও মাটিতে মিশে যাচ্ছে লজ্জায় । পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে দেখে বেলী তার শ্বশুরকে বুঝিয়ে শুনে অন্য রুমে পাঠিয়ে দেয় । আর ইরফান তখন রুমে গিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে যায় ।
হাতের টুকটাক কাজ সেড়ে রুমে চলে আসে বেলী । এসে দেখে ইরফান শুয়ে আছে । বেলীর মন বলছে ইরফান ভালো নেই । সে আজ তার বাবার কাছে সব স্বীকার তো করে নিয়েছে কিন্তু সেই সাথে সে ভিষণ লজ্জিত তার সব অপরাধের জন্য । তাই বেলী আর বাড়তি কোন কথাতে যায় নি । চুপ করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে ইরফানের পাশে । আজ ইরফান ওপাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে । অন্যান্য দিন ইরফান তার দিকে মুখ করে ঘুমায় । কিন্তু আজ বিপরীত হলো । এই বিপরীতের কারণ হয়তো কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা ।
জীবনে কিছু ঘটনা ঘটে যায় যার উপর সবার হাত থাকে না তেমনি ইরফান আর বেলীর জীবনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটিও আপত্তিজনক । তবে আপত্তিজনক হলেও এটাই হয়তো নিয়তি ছিল । হয়তো এটাই তাদের দুজনার ভাগ্যে লিখা ছিল ।
আজ বেলীর মনটা বড় কাতর হয়ে আছে । ইরফান যদি এইভাবে থাকে তাহলে সেদিন তার মন বড়ই বিচলিত থাকে । আজ বেলীও অপরপাশে মুখ করে শুয়ে আছে । বৈশাখীর ঝড় আজ বেলীর অন্তরে বয়ে যাচ্ছে ।
রাতের মধ্যাংশে বেলী কিছু অনুভব করতে পারে । কেউ একজন তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে । বেলীর পিছন দিকটা কেউ একজন জড়িয়ে ধরে আছে । হাতের স্পর্শ বলে দিছে এ হাতের ছোয়া অন্য কারো না । এ হাতের স্পর্শ তার বরের ।
ইরফান বেলীকে জড়িয়ে আছে । ইরফানের হাতটা সরিয়ে নিয়ে ইরফানের দিকে ঘুরে শোয় বেলী ।
শান্ত নয়নে ইরফান চেয়ে আছে বেলীর দিকে ।
– কি হয়েছে ? কি দেখছেন ,
– তোমাকে ,
– ওইদিকে মুখ করে শুইলেন কেন আজকে ?
– ভালো লাগছিল না ।
– শরীর খারাপ ?
– উহু ,
– তাহলে ?
– আমি কি আসলেই শয়তান ?
– উহু , মানুষ কখনো শয়তান হয় না ।
– বাবা কি বললো , শুনলা না ?
– বাবা হয়তো কষ্ট পাইছে তাই বলে ফেলছে , আপনি কষ্ট পাইয়েন না ।
বেলীকে শোয়া অবস্থায় জড়িয়ে নেয় ইরফান । বেলীও ইরফানকে জড়িয়ে নেয় ,
– বেলীফুল কিভাবে পারিস রে তুই ?
– কি কিভাবে পারি ?
– এইযে এত উদার কিভাবে হোস ?
– আমি উদার না , আমি পারি না কারো সাথে খারাপ আচরণ করতে আর আপনার সাথে তো একদমই না । কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি ।
– কতটা বাসিস ভালো ?
– অনেকটা ,
– আয় না , আজকে মিশে যাই ?
– মিশেই তো আছি আমি আপনার সাথে ,
– আরও মিশতে হবে ,
– তাহলে মিশিয়ে নেন ।
রাতের গভীরতায় দুজন মানুষের ভালোবাসা গুলো আরও গভীর হয় ।
কিছু রাগ কিছু অভিমান সব কিছুই মিলিয়ে যায় একটু ভালোবাসার ছোয়ায় ।
– বেলী,,,,,,,,,,,?
– হু ,
– আরেকটা বেলী আসলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে ?
কাপড় বিহীন লজ্জা চোখে ইরফানের মুখের দিকে তাকায় বেলী । ইরফানের মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কথাটা শুনে বেলীর কলিজাটা এক লহমায় শান্ত হয়ে যায় ।
– কি হলো , বল , আমাদের দুজনের মাঝে আরেকজন আসলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে ?
বেলী আর কিছু বলতে পারে নি সেই মুহুর্তে । শুধু দুইহাত দিয়ে ইরফানকে জড়িয়ে নেয় আর ইরফানের বুকে নিজের মুখ লুকিয়ে নেয় ।
.
.
চলবে………………………..
[ আসসালামু আলাইকুম ,
কিছু কথা , আসলে ইদানীং অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি । জানি এই গল্প নিয়ে সবাই অপেক্ষায় থাকেন । বিশ্বাস করেন আমারও ভালো লাগে না আপনাদের অপেক্ষা করাতে । কিন্তু কি করবো বলেন , শরীর আস্তে আস্তে অবনতির দিকে যাচ্ছে । একটার পর একটা লেগেই আছে । তার উপর আরেক বড় দায়িত্ব মাথার উপর । আর তা হচ্ছে প্রকাশিতব্য উপন্যাস নিয়ে যা এইবার অমর একুশে গ্রন্থ মেলা ২০২০ এ প্রকাশিত হতে চলেছে । উপন্যাসের প্রথম প্রুফরিডিং এর কপি হাতে এসে গেছে । এখন এটাতেও আমায় সময় দিতে হবে । আশা রাখবো সবাই বুঝবেন । আর দোয়া করবেন । গল্প ছোট হলে দয়া করে কেউ কিছু মনে নিবেন না । হয়তো এখন থেকে রেগুলার দিতে পারবো না । কারণ আমায় প্রুফরিডিং এর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে । তাই সব কিছু আজকেই জানিয়ে দিলাম । আশা রাখবো সবাই বুঝবেন এবং সহযোগিতা করবেন । আর অবশ্যই দোয়া করবেন আমার জন্যে । কারণ আপনাদের দোয়া-ই আমার একমাত্র ভরসা ।
আসসালামু আলাইকুম ?? ]