“জ্যোৎস্নার ছল”পর্ব ৯.
আমার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পরীক্ষার পুরো মাসে আমি একটুও সাদিকের সাথে দেখা করিনি। এই পরীক্ষার পর সাদিক আমার কাছে পাগলের মতো ছুটে এসেছে।
তখন বাসার কেউ ব্যালকনির ধারেকাছে ছিল না। আমি ছাড়া তাকে কেউ দেখেনি। এভাবে হঠাৎ সে আমার বাসার সামনে আসায় আর তাকে এতদিন পর দেখার অনুভূতি দু’ই মিশ্রিত হয়ে আমার মাঝে অদ্ভুত এক ভাবনার সৃষ্টি করল। এরপর আমার কী হয়েছে জানি না, কারও কথা না ভেবে আমি দৌড়ে নিচে গেলাম। সে তার হাতগুলো বাড়িয়ে রেখেছিল। আমি দৌড়ে গিয়ে তার বাহুতে নিজেকে আবদ্ধ করে নিই। ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগলাম আমি। আমার মাঝে কোনো সঙ্কোচ কাজ করছে না। কোনো দ্বিধা কাজ করছে না। এমনকি ফরহাদ ভাইয়া দাঁড়িয়ে দেখছে এবং তিনি পরবর্তীতে আমাকে যেখানে-সেখানে টিজ করতে ছাড়বেন না জানার সত্ত্বেও।
দিনটি শুক্রবার। নিয়মমতো আরসিতে যাওয়ার জন্য ফরহাদ ভাইয়া আমাকে নিতে এসেছে। আমি তখনও রেডি হইনি। তিনি সামনের ঘরে বসে রয়েছেন। এরই মাঝে রুবি ভাবি দুইবার এসে জিজ্ঞেস করে গেলেন, একি স্বামী, তুমি এখনও যাওনি?
দ্বিতীয়বার এলে ভাইয়া তাকে বললেন, ‘যাচ্ছি বাবা। রেডি হতে মেয়েদের তো সময় লাগেই, বিশেষ করে রিলেশনশিপে থাকা মেয়েগুলোর। ওর বয়ফ্রেন্ড সাদিক আসবে। আরেকটু সময় দাও।’
ভাইয়ার মতো রসিক মানুষের উপর আমার কখনও এতটা রাগ হবে আমি ধারণাই করিনি। যদিও রুবী ভাবিও আগে থেকেই আমাদের সম্বন্ধে জানতেন, দু’জন মজাও করতেন। কিন্তু ভাইয়া বাসায় কেন মজা করতে ছাড়লেন না?
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ভাইয়ার দিকে চেয়ে রইলাম। ভাইয়া কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না।
‘আপনি কি এই ব্যাপারে এখানে মজা না করে থাকতে পারতেন না?’
‘কেন? কী হয়েছে? বাসায় কি কাউকে কিছু জানাওনি?
‘জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি।’
‘ওহহো। আমি বুঝি গোলমাল করে ফেলেছি। ইটস ওকে। কেউ তো শুনেনি।’
‘আপনি বড় রকমের গোলমাল করে ফেলেছেন।’ ইতোমধ্যে ছোট মা রান্নাঘরের দরজার কাছে এসে আড়িপেতে রয়েছেন। ‘আমি আজ আপনার সাথে কোথাও যাব না।’
‘সরি সিস্টার। এমন ভুল আর হবে না। আরসিতে আমার গতবারের কাজটি দেখার জন্য তুমি ছিলে না। আজ দু’জন লোক আসবে তাদের সমস্যা নিয়ে। জুয়েলও থাকবে। তুমি কি দেখবে না আমি কতটুকু সার্থক হচ্ছি আমার এই উদ্যোগে?’
‘একবার বলেছি না –যাব না?’ আমার মেজাজ বিগড়ে যেতে শুরু করছে, ‘এতো কথা কেন বলছেন? সমস্যা আমার নিজের কম বাড়াননি। যান এখান থেকে। আপনার সাথে এখন থেকে আমার আর কোনো কথা নেই।’
আমি নিজ ঘরে এসে ব্যাগ মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললাম। এরপর বিছানায় শুয়ে পড়ি। বাবা আসবেন। বাবাকে ছোট মা সাদিকের কথা ইনিয়ে-বিনিয়ে জানাবেন। এরপর এমন কোনো অশান্তির সৃষ্টি হবে, যেসব আমি পছন্দ করি না।
বইয়ের শেলফটির দিকে তাকালাম। শাহনাজ আপা বললেন, ‘এই আপদের জন্য তুমি প্রস্তুত তো? তোমাকে ভীত দেখাচ্ছে অনন্যা। আমার কথা শুনো, তুমি তোমার কাঠিন্যকে পরিহার করে নম্রতা দিয়ে এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে পারবে। মা-বাবা আমাদের পৃথিবীতে আনেন। তারা আমাদের সাথে যাই করুক না কেন, তাদের সাথে আমাদের সামান্যতমও দুর্ব্যবহার করা কিন্তু উচিত নয়। আমাদের পাল্লা বেশি ভারী হবে।’
আরসি-এর ফটো অ্যালবামটি নিয়ে আমি ছবিগুলো দেখতে লাগলাম। বিশেষ করে সাদিকের ছবি। প্রস্তুতি নিয়ে তার সাথে প্রেম করলেও আমি এতটা মায়ায় জড়িয়ে যাব ভাবতে পারিনি। সাদিকের ভোলা চোখগুলো আর তার পরিচিত মুচকি হাসিটি যে আমাকে এতটা আকৃষ্ট করবে আমি ভাবিনি। দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে বেডের নিচে অ্যালবামটি রেখে আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
বাবার ডাকে আমার বিকেলে ঘুম ভাঙল। মাথা ব্যথা, ক্ষুধা, টেনশন একত্রে হয়ে আমার জটিল অবস্থা। তবু আমি বেরুলাম।
বাবা সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন। আমি এলে আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন। আমাকে বসতে পর্যন্ত বললেন না, খেয়েছি কিনা জিজ্ঞেস করা দূরেই থাক।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
‘এটা কি সত্য তুমি প্রেম করে বেড়াও?’
‘হ্যাঁ করি। তাতে কী?’
বাবা আরও কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ‘তুমি জানো, এগুলো দেখে বাকি দশটা মানুষ আমাদের সম্বন্ধে কী বলবে? বলবে না যে আমরা আমাদের সন্তানদের ছাড় দিয়ে রেখেছি? আরমিনের যখন কথাগুলো আত্মীয়ের কাছে শুনতে হয় তখন তার লজ্জায় কেমনটা লাগে?’
তিনি আত্মীয়ের কাছে শুনেছেন বলেছেন? বাহ্! এইতো তার নাম এলো। তিনি হাজির।
‘আমি তোমাকে বলেছিলাম, ওকে চোখে চোখে রাখ। ওকে শাসনে রাখ। মা তো অসভ্য ছিলই। মেয়ে যে হবে না তার কী প্রমাণ?’
‘ছোট মা। আপনি যে আমার বড় আমাকে তা ভুলতে বাধ্য করবেন না।’
এরপর বাবা কিছু একটা নিশ্চয় বলবেন।
‘অনু, তুমি কি জানো? দিন দিন তুমি কতটা লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছ?’
‘বাবা, এতে আমি কী করেছি? এই মহিলা আমার সামনে আমার মায়ের সম্বন্ধে যা তা বলবে আমি সহ্য করতে পারব?’
‘কোন মায়ের কথা বলছ? যে তার গোঁ রক্ষা করতে তোমার কথা ভাবেনি?’
বাবা তাহলে আমার দুর্বল দিকটা আগে থেকে জানতেন। আমিও থেমে রইলাম না।
‘হ্যাঁ, মা আমার কথা ভাবেননি। কিন্তু তার মাঝে কাঠিন্য আসার জন্য আপনিই দায়ী বাবা। তাকে বিয়ে তো করে এনেছেন। কখনও কি ভালোবেসেছেন? আমাদের এই বাসায় এতো অশান্তির কেন সৃষ্টি হতো? সব দোষ কি মায়ের ছিল?’
‘ছিল। তার যত প্রয়োজন ছিল আমি তা পূরণ করেছি। তার শত আবদার আমি মেনেছি। এটাকে কি ভালোবাসা বলে না?’
‘না। আপনি তার আবদার এজন্যই পূরণ করতেন, কারণ তিনি সুন্দরী ছিলেন। এমন একজন ছিলেন, যার সৌন্দর্য দেখে মানুষের মুগ্ধ হওয়ার শেষ ছিল না। আজ যদি তিনি ময়লা রঙের কোনো মেয়ে হতেন, তবে আপনি কি করতেন আমি ভালো জানি। আপনি তাকে পায়ের ধূলো মনে করতেন। তাই না বাবা? আপনি ভুল বলেছেন। আপনি তাকে ভালোবাসেননি, তার রূপকে ভালোবেসেছেন।’
বাবা এসে আমার গালে চড় দিলেন। আমি কিছু বললাম না। বাবা পায়চারি করে নিজেকে তিনি শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন।
‘শুনো, তুমি এখন থেকে ওই ছেলের সাথে দেখা করবে না। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?’
আমি তার দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বললাম না।
‘ক্লিয়ার?’
‘আমরা দু’জন একে অপরকে খুব ভালোবাসি। আমি তাকেই বিয়ে করব।’
বাবা আরেকটু পায়চারি করলেন। ভাইয়া এসে কাণ্ডটা দেখে রয়েছে। কিন্তু কিছু বলছে না। বাবা থেমে গিয়ে তাকে বললেন, মাহিন, যাও কেরোসিন বাসায় আছে কিনা দেখ।
কেরোসিন বাসায় নেই। ভাইয়াকে নিচের দোকান থেকে কিনে আনতে বললেন বাবা। সে কিছুটা ইতস্তত করে চলে গেল। বাবা আবার পায়চারি করছেন। তাঁকে এখন থামানোর সাধ্য এখন কারও নেই। বাবাকে জেদ চেপে ধরেছে। মায়ের তাকে ত্যাগ করার ক্ষোভ তিনি আমার মাধ্যমে মেটাবেন। আমি তার কিছু গোঁ পেয়েছি কিনা। এই পরিস্থিতিতে প্রেমের অবদান কিন্তু অল্পই।
ভাইয়া কেরোসিন আনলে বাবা তা নিয়ে আমার ঘরে গেলেন। দরজা খোলা রাখায় আমি এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি তিনি শেলফের বইগুলো রুক্ষভাবে মাটিতে ফেলছেন। লোকটির মুখে এখনের রক্তিম আভা দেখে কেউ বিশ্বাস করবে না একটু আগে তিনি শান্ত ভাবে পায়চারি করছিলেন।
কোরআন শরীফটি ব্যতীত বাকি একটি বইও শেলফে নেই। বাবা সবই মেঝেতে ফেলার পর ইচ্ছামতো কেরোসিন ঢেলে দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিলেন। ধপ করে উপরে উঠে যাওয়া এই আগুন কী ভয়ঙ্কর সুন্দর! এই সুন্দর জিনিসটির কতই না তেজ সবকিছুকে মুহূর্তে ছাই করে ফেলার, ঠিক রূপের মতো।
আগুনের তেজের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ঝলসে যাচ্ছে। চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার পরও স্পষ্ট বুঝতে পারছি, বাবার দেওয়া আমার আয়েশের সব জিনিসই তিনি সেই আগুনে নীরবে ফেলছেন। তা দেখে লাগছে যেন এক গৃহিণী চুলায় রান্নার জন্য কড়াই দিয়ে আগুনে একের পর এক লাকড়ি দিয়ে চলেছে, পেটের ভরণের তাগিদে। আর এখানে কেউ মনের ভরণের তাগিদে। কী বিচিত্র এই পৃথিবী!
পরদিন শনিবার। পড়াশোনা চলাকালীন এই দিনে আমার কোচিং না থাকলেও ‘জোহরা টেইলার্স’ এর উপরের ঘরটিতে যেতাম, সাদিকের সাথে দেখা করার জন্য। কোচিং তো নেই, আজ যাব আরসিতে। আলমারিটা খালি হয়ে রয়েছে। আমার পছন্দের কাপড়গুলো ছাই হিসেবে মালিকের চাকর খোকন নিয়ে গেছে।
নিচের তাকে যে কাপড়গুলো রয়ে গেছে তা আমার পছন্দের নয়। দুয়েকটি ভিন্ন রং বাদে বাকি সবগুলো সবুজ আর লাল রঙের কাপড়। এ দুটো রঙকে আমি ছোট মায়ের চেয়ে বেশি অপছন্দ করি। কেন যেন লাগে, এ দুটো রং আমাকে মানায় না।
প্রায় সময়ের মতো সাদিক ঘরের দরজায় তালা লাগাতে লাগাতে বলল, ‘অনু, চলো আজ কোথাও যাই।’
‘এখানে বসে গল্প করি না।’
‘গল্প তো অনেক করি।’
‘তাহলে আমায় কিছু কাপড় কেনে দেবে?’
‘কাপড়? বলো তোমার কেমন কাপড় চাই?’
‘যেকোনো ধরনের চলবে। শুধু এসবের রং সবুজ আর লাল না হলেই ভালো হয়।’
‘রঙগুলি তোমার পছন্দের নয় বুঝি?’
গাড়িতে উঠার পর সে আমায় বলল, ‘আজ তোমায় একটি শাড়িও কিনে দিব। তুমি যদি তোমার পছন্দের কথা না বলতে তবে তবে তোমাকে কেমন শাড়ি কিনে দিতাম জানো?’
সে মুচকি হাসি হাসল। উত্তরটা তার মুখেই শুনলাম, ‘সবুজ রঙের।’
‘এই রঙে আমাকে ভালো দেখায় না।’
‘হোয়াট ডিড ইউ সে?’ সে আমার দিকে এমনভাবে ঘুরল যেন এখনই তর্ক শুরু করবে। ‘আমার তো এমন মনে হয় না। তোমাকে সব রঙে অসাধারণই দেখায়।’
‘তুমি ওভাবে দেখ বলেই।’
‘রং কোনো বড় বিষয় না। রং মানুষের সৌন্দর্যের কেবল একটা অংশ, সৌন্দর্য না। আর তুমি রং নিয়ে এতো ভাবো কেন? তোমার গায়ের রং তো ময়লা না। সুইট একটা রং। আর এই সুইট রঙের সম্বন্ধে উল্টাপাল্টা কথা বলে আমার মুড খারাপ করে দিবে না।’
আমরা কেনাকাটা করে ফিরে এলাম। বাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমি আসার সময় তাকে জানিয়েছি। সে কিছু বলেনি। চুপচাপ এসে আরসি-এর দরজা খুলল। আমি তার দিকে চেয়ে রয়েছি। সে কোনো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না।
ভেতরে ঢোকার পর সে দরজা বন্ধ করে আচমকাই আমাকে টেনে জড়িয়ে ধরল। আমাকে সে কখনও চমকিয়ে দেয় না। এটা তার পছন্দ না। সে আমার দুই গালে হাত রেখে বলল, ‘তুমি খুব কষ্টে আছ তাই না?’
আমি কিছু বললাম না।
‘চিন্তা করো না। আমি খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসব। তোমার বাবা আর ছোট মায়ের থেকে দূরে। আমি তোমাকে খুব সুখে রাখব। তোমাকে এতোই ভালোবাসা দিব যে, তুমি ভুলেই যাবে কখনও তুমি দুঃখ পেয়েছিলে।’
কবে আমার চোখে পানি টলমল করতে লাগল, কবে গলার স্বর অপরিষ্কার হয়ে এলো বুঝতে পারিনি।
‘আমার দুঃখ তুমি সইতে পারো না তাই না?’
‘অবশ্যই না।’
‘তাহলে আমাকে এখন তোমার সাথে নিয়ে যাও।’
সে কিছুটা থতমত খেয়ে গেল।
‘কী বলছ?’
‘আমাকে তোমার জীবনসঙ্গিনী করে নাও।’
সে কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
‘তুমি বসো। বসো। একটু পানি খাও।’
‘আমার পানির দরকার নেই। বলো, তুমি আমাকে বিয়ে করবে?’
‘এটি এমন একটি বিষয় যে, হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।’
‘তাহলে কি তুমি আমাকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে চাও না?’
‘এমনটা নয় অনু। বিয়েতে পরিবারেরও সায়ের প্রয়োজন হয়। আর তাছাড়া তুমি পড়াশোনা কর। আমি একটি চাকরি করি। এরপর আমরা সংসার শুরু করব।’
‘তখন যা করব, তা এখন করলে সমস্যাটা কোথায়? আমার খরচের জন্য তোমার তেমন চিন্তা করতে হবে না।’
‘তোমাকে চালানোর সামর্থ্য আমার এই মুহূর্তেও যথেষ্ট আছে। কিন্তু এটা খরচ চালানোর বিষয় না। আমি এখনও চাকরি শুরু করিনি। চাকরিও গুরুত্বপূর্ণ নয়। তোমাকে আমি নিতে পারব কিন্তু চাচা এটাকে ঠিক মনে করবেন না।’
‘কেন মনে করবেন না? তুমি আমাকে পছন্দ করেছ বলে দিলেই হচ্ছে। প্রেম করছিলে তা তো বলতে হবে না।’
‘আসলে চাচার চিন্তা-ভাবনা আধুনিক যুগের না, সেকেলে। তুমি বুঝবে না..’
‘আমার মা-বাবার ডিভোর্স হয়েছে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। এই তো?’
সে কিছু বলতে পারল না।
‘তাহলে চল। আমরা বিয়ে করে ফেলি। কাউকে জানাতে হবে না। পরবর্তী সময়ে যা হবার হবে। ততদিন পর্যন্ত আমি আমার বাসায় থাকব।’
‘এ কোন জেদে তুমি এঁটে রয়েছ?’
‘আমি জেদে এঁটে রয়েছি?’
‘তা নয়তো কী? তুমি কাল যা হয়েছে তার জন্যই তো এই সিদ্ধান্তে এলে। কাল যা হয়েছে তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই বিয়ে করতে বলছ। এসব বাদ দাও।’
আমি ওর পাঞ্জাবির কলার ধরে বললাম, ‘একটু আগে তুমি আমার কষ্টে কষ্ট পাচ্ছিলে। আর এখন..’
‘আমি তোমার মতো নই। আমি আমার বাবা-মায়ের অবাধ্য হতে চাই না।’
আমি ওকে ছেড়ে দিলাম, ‘ঠিক আছে। তুমি তোমার মা-বাবাকে নিয়ে বসে থাক। তোমার কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই।’
‘অনু, একদম বাজে কথা বলবে না তো। আমাকে চলে যেতে বাধ্য করো না।’
‘চলে যাও। আমি তোমার সাথে আর কথা বলতে চাই না।’
সে কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে রইল। এরপর আমাকে ধরে দরজার বাইরে নিয়ে এলো। সে দরজায় তালা লাগিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেল, আর ফিরে তাকায়নি। আমার হাতে তখনও শপিং ব্যাগগুলো রয়েছে।
(চলবে..)
লেখা: ফারিয়া কাউছার