“জ্যোৎস্নার ছল”পর্ব ৩.
আমি বাধ্য মেয়ের মতো দরজা বন্ধ করে হুক লাগালাম। এরপর রান্নাঘরের জানালাটি দিয়ে প্রথমবারের মতো বাইরের দিকে তাকালাম। সে চলে যাচ্ছে। আমার নিজেকে কেন যেন সকাল থেকে ছোট বাচ্চার মতো মনে হচ্ছে। আর সে আমাকে অর্ডার দিয়ে চলেছে। আসার সময়ও সে আমার আঙুল ধরে ধরে হেঁটেছে, যেন আমি কোনো ছোট বাচ্চা মেয়ে, হারিয়ে যাব। ছোট মায়ের কথা একটু-আধটু সত্য মনে হচ্ছে। নইলে আমি কীভাবে এই লোকের কথায় উঠা-বসা করছি?
আলনাটি আগে খেয়াল করিনি। ফার্নিচারগুলো দেখতে বেশ ভালোই। নিচের ড্রয়ার খুলে দেখলাম, আমার জন্য বেশ কয়েকটি সুতির শাড়ি রাখা আছে। আমি আমারগুলো আর অতিরিক্ত দুটো ওখান থেকে নিয়ে আমার জন্য উপরে খালি করে রাখা একটি স্ট্যান্ডে রেখে দিলাম।
আমার এখনও মনে হচ্ছে, আমি এক ঘোরে আছি। বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমার বিয়ে হয়েছে এবং এই লোকটির সাথে একমাস কিংবা তারও বেশি সময় থাকব।
অবসর সময় কাটানোর জন্য আমি রঙধনু সংগঠনের স্মৃতির অ্যালবামটি নিলাম। এটি ছাড়া আমার হাতে আর কোনো ভালো স্মৃতি নেই। একসময় সৌভাগ্যবশত আমি ঘুমাব বলে এটি বেডের নিচে রেখেছিলাম। নইলে এটিও পুড়ে ছারখার হয়ে যেত। আমি তা বুকের সাথে লাগিয়ে ভাবতে লাগলাম, আমার জীবনের কিছু মুহূর্তের কথা। দিনটি শুরু হয়েছিল, সালমার উদ্ভট প্রশ্নের মাধ্যমে।
সালমা জিজ্ঞেস করল, ‘চামচের উপরের অংশটা গোলাকার কেন হয়? চারকোণা হতে পারত না? দেখতে কিন্তু বক্সের মতোই মনে হতো।’
টেবিলে বসতেই চামচ দেখে সে এই প্রশ্নটা করল। এসবের উত্তর দেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। কিন্তু ভাইয়া স্বাচ্ছন্দ্যে তার এইসব ফালতু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে। তবে এইবার আমি বললাম, ‘আমার তো এটা গোলাকার মনে হয় না। কিছুটা ডিম্বাকার মনে হয়। সম্ভবত আবিষ্কারক ডিম থেকেই চামচের আইডিয়া নিয়েছেন।’ সে যেন বুঝতে পেরেছে। তার মতো দশ বছর বয়সী মেয়ের জন্য এটাই পারফেক্ট এক ব্যাখ্যা।
ভাইয়া মুখ চেপে হাসল। মন্তব্য করল না। নইলে আমার প্রতিটি কথাই তার ধারণার বিপরীত হয় এবং সে তর্কে যায়। একবার তো এমন হয়েছিল, ঝগড়া করতে করতে একসময় আমরা একে অপরের চুল টানাটানি করতে লাগলাম। ছিঁড়ে ফেলারই অবস্থা। মা আর বাবা দু’জনে মিলে আমাদের থামাতে পারেননি। অবশেষে বাবা ধমক দিলেন, মাহিন, এখনই এসব বন্ধ করো। নইলে তোমার টেস্ট পেপার কিনে দিব না। আর অনু, তোমার গল্পের বইগুলো পুড়তে কিন্তু আমার দশটি মিনিট সময় লাগবে না। আমরা একে অপরকে ছেড়ে দিলাম। বাবা মাঝে মাঝে সিরিয়াস হলে এসব কাজ করতে দ্বিধা করেন না। তখন তাঁকে থামানোর সাধ্য কারও থাকে না।
বাবা এসে পড়লেন। দেশে থাকলে তিনি আশ্চর্য রকমের শুকিয়ে যান। একমাস না পেরুতেই তাকে এতোই রোগা দেখায় যে, বিশ্বাস করাই দায় হয়ে পড়ে এই লোকটি একমাস আগে মোটাতাজা এবং সতেজ ছিলেন। এইবার তো একেবারেই চলে এসেছেন। না জানি কী হবে। তিনি খাবার টেবিলের নিস্তব্ধ পরিবেশ দেখে অবাকই হলেন।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
সালমা বরাবরই ভাইয়াকে এধার-ওধারের প্রশ্ন করছে। ভাইয়া তার উত্তর দিয়ে চলেছে। বুয়া নাস্তা দেওয়ার সময় ছোট মা খেতে বসলেন। এই মহিলার ভয়ঙ্কর এক বদ অভ্যাস আছে।
একটু পরই বললেন, ‘অনু, তুমি নাকি ছেলেদের সাথে কথা বলো?’
‘কে বলেছে?’
‘কেউ একজন বলেছে। বলো।’
‘মেয়েদের সাথেও বলি।’
‘ছেলেদের সাথে বলো কি না?
‘বলি।’
‘তোমাকে কতবার বলি, এসব ঠিক না। যুগ খুব খারাপ হয়েছে। যাকে ভালো দেখায়, সে আসলেই ভালো হয় না।’
‘আমার ভালো নিয়ে যদি আপনার এতোই চিন্তা থাকত তবে মাঝে মাঝে এসে আমার সাথে দুটো সুখ-দুঃখের কথা বলতে পারতেন, প্রকৃত মায়েরা যেভাবে করে।’
বাবা কড়া গলায় ধমক দিয়ে উঠলেন, ‘অনু! বড়দের সাথে এভাবে কথা বলে? আরমিন তোমার মা।’
‘তাকে আমি মা বলতে চাই না, যে সবসময় নিজের প্রেজটিসকে আমার ভালো চাওয়ার নাম দেয়।’
বাবা আরেকটি ধমক দেওয়ার আগে আমি উঠে নিজ ঘরে চলে এলাম। সত্যটা ভাইয়াও জানে। ছোট মায়ের সামনে কেউ সামান্য কারণেও আঙুল তুলুক তা তার পছন্দ নয়। এই জায়গায় আশেপাশে তার অনেক আত্মীয়। তারা কেউ তাকে নিয়ে খারাপ কিছু ভাবুক, তাঁর তা পছন্দ নয়।
তিনি এখনও দিব্যি বাবার সাথে কথা বলে চলেছেন, যেন কিছুই হয়নি।
‘শুন, আমি আরেকটা নতুন ব্যাগ কিনব।’
‘ব্যাগ? এই কয়েকদিন আগেই মনে হয় একটি নতুন কিনলে।’
‘ওটা.. ওটা আমি ইউজ করব না। সেঁজুতির বড় বোনেরও সেইম একটি ব্যাগ আছে।’
‘ঠিক আছে। কেনো।’
সেঁজুতি হচ্ছে তাঁর অন্তরঙ্গ বান্ধবী। যেন কেউ মনে করে বসছে, তার বোনেরটা দেখে তিনি কিনেছেন। এসব আর ভালো লাগল না। খুব তাড়াতাড়িই কলেজে চলে এলাম।
মনটা খুব বিষণ্ণ। সাদিক ভাইকে দেখেছি মাত্র দুটো দিন পার হয়েছে। আজকের দিনটিও আমার খুব কষ্টে পার করতে হবে। সপ্তাহে এই তিনটি দিন এক্সট্রা কোচিং-এ যাওয়া হয় না। এগুলোকে ক্যালেন্ডার থেকে বাদ দিতে পারলে কতই না খুশি হতাম। ইন্টারের প্রথম বর্ষের একটি মেয়ে আমার সামনে দিয়ে বান্ধবীর সাথে হাসাহাসি করে যাচ্ছিল। হাসলে তার গালের দু’পাশে টোল পড়ে। অসম্ভব সুন্দর এই মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসি বন্ধ করে দিলো। এরপর বান্ধবীর সাথে হনহন করে হেঁটে চলে গেল।
আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। সে কথা বলবে না জানি। বড় হিসেবে আমারই বলা উচিত ছিল। আমার অস্বস্তির মাঝে স্বপ্নাকে আসতে দেখে খানিকটা স্বস্তি পেলাম। সে খুব তাড়াতাড়িই আসে প্রাইভেটে কী কলেজে। তার এই কাজটি আমার মনের মতো।
আবার মাঝে মাঝে তার উপর কম বিরক্ত হই না। সবসময় সে ফালতু বিষয় নিয়ে পড়ে থাকে। বাসার কাহিনি, শপিং কোথায় করল বা কীভাবে করল, কোন সিনেমাটা দেখে এলো এবং তাতে কী কী হলো, কোন খালাতো ভাই বা বোন কী বলল, কোন ছেলে কী করল, কোথায় বেড়াতে গেল, কোন জিনিসের কোয়ালিটি কেমন, এসব বিষয়েই সে কথা বলে থাকে। কখনও জ্ঞানসম্পন্ন কথা তাকে বলতে দেখা যায় না কিংবা পড়ালেখা নিয়ে তাকে মাথা ঘামাতে দেখা যায় না। আমি তার চেয়ে বেশি নাম্বার পেলে কিন্তু জিজ্ঞেস করতে আসে, তুই কবে এতো পড়াশোনা করেছিস।
এসব অপছন্দের কাজ করার পরও তাকে আমার খুব ভালো লাগে। আমার সব কথা সে গোপন করে যায়। মাঝে মাঝে বাসায় কারও উপর রাগ উঠলে তার বাসায় চলে যাই। সে আমার দিকে চুপচাপ চেয়ে থাকে অথবা মাঝে মাঝে নম্র স্বরে গান গেয়ে শোনায়। আমার মন সেই তো খুব কম সময়ে ভালো করতে পারে। ফ্রেন্ড হিসেবে সে আমার খুব ভালো এক সঙ্গী।
সে আসতেই আমার মনের কথা ধরে ফেলল।
‘কী খবর? মন খারাপ? মিসিং সামওয়ান?’
‘ইংরেজিগুলো পরীক্ষার সময় কোথায় থাকে?’
‘ইউ কান্ট আন্ডারস্ট্যান্ড গার্ল। আই হেড টু কিপ মাই স্টক ফুল.. ইয়ে কথা বলার জন্য।’
‘হ্যাভ টু।’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। বল সাদিক ভাইকে মিস করছিস?’
আমি তার দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বললাম না।
‘ভাইয়া তো বাচ্চাগুলোকে সপ্তাহে পাঁচদিন পড়ায়। তাই না? এখনও তো ক্লাস শুরু হয়নি। চল, কোচিং সেন্টারে যাই।’
‘পাগল হয়েছিস? আজ তো আমাদের কোচিং নেই।’
‘কাল কোচিং আটটায় শুরু না হলেও ওখানে গিয়ে বসে থাকতে পেরেছিস।’ সে শয়তানি হাসি হেসে বলল, ‘আর আজ এমনি যেতে পারবি না?’
আমিও হেসে বললাম, চল।
‘আমি গিয়ে কী করব? আমি যাই। কলেজে না এলে আমার বাসায় চলে যাস।’
কে যেন পেছন থেকে ডেকে উঠল। মমিন একগাল হেসে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কী খবর পুচকি?’
‘ভালো। কিন্তু আমাকে পুচকি ডাকবি না।’
‘তুই পড়ালেখা করে যতই বড় হয়ে যাস না কেন, তুই আমার জন্য সেই ক্লাস এইটের ক্লাসমেটই থাকবি।’
আমি হাসলাম। কেউ বুঝবে না এই বন্ধুত্বের মূল্য। কেবল ছোট মায়ের মতো কিছু মানুষ আছে, যারা মেয়েদের সামান্য কাজেও দোষ খুঁজে বেড়ায়। মমিন ছেলে। তাই বলে কি সে আমার বন্ধু হতে পারবে না?
কলেজ থেকে কোচিং সেন্টারের দূরত্ব চার-পাঁচ মিনিটেরই। দেরি না করে চলে গেলাম। গিয়ে সিঁড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। যতটা উৎসাহ নিয়ে আমি এসেছি, সব মুহূর্তেই উবে গেছে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে সাদিক ভাই একটি মেয়ের সাথে কথা বলছে দেখে আমার কেমন ফিল হলো ঠিক বুঝতে পারলাম না। মেয়েটি ওর হাত ধরে মিনতি করার মতো করে কী যেন বলছে। এটা হতে পারে না! আমি তার সম্বন্ধে সবই জানি। এও জানি, তার বর্তমানে কোনো প্রেমিকা নেই। কিন্তু এই মেয়েটি? তাহলে স্বপ্না কি ভুল ইনফরমেশন পেয়েছে? এমনটা হলে ছেলেটি আমার ছেলেমানুষি কাজে কেন বাধা দেয়নি? সে সহজেই বলতে পারত, অনন্যা, তুমি ওই ঘরেই বসো। রাকিব স্যার এসে পড়বে। ভয়ের কিছু নেই।
রাগ, দুঃখ, অভিমান একত্রে ভর করায় কী করব ভেবে পেলাম না। কাকতালীয় ভাবে সেদিনই আমাকে স্বপ্না তার বাসায় যেতে বলেছে।
স্বপ্নার মা বাসায় ছিলেন না। সে তার মা-বাবা আর তার এক ভাইয়ের সাথে থাকে। তার বাকি দুটো ভাইয়াদের একেকজন একেক জায়গায় কর্মরত অবস্থায় আছে। তার মা প্রায়ই তার নানুর সাথে থাকে। বাসায় বেশিরভাগ তিনজন সদস্যকেই দেখা যায়। প্রতিবারের মতো নাহিদ ভাইয়া দরজা খুললেন। আমি কিছু না বলে স্বপ্নার ঘরে চলে এলাম। আমার এভাবে আসাটা তার কাছে নতুন নয়।
বিছানায় ব্যাগটা রেখে আয়নার দিকে তাকাই। এক উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের চেহারা দেখতে পেলাম। তাতে যে চোখজোড়া আছে, নাহিদ ভাইয়ার মতে তা খুব রহস্যময়। তিনি এও বলেন, এই ধরনের টানাটানা চোখগুলো খুব নজরকাড়া। এই রঙের মধ্যেও চেহারায় যে আকর্ষণটা আছে তা ফরসা মেয়েদেরও হার মানাতে বাধ্য। তার এই কথাগুলো আমার মাঝে একসময় আলোড়ন সৃষ্টি করলেও এখন আমার নিজের সম্পর্কিত সবকিছুই ফিকে লাগছে। আমি বোধ হয় সাদিক ভাইয়ের জন্য পর্যাপ্ত সুন্দর নই। বিশেষ করে ওই মেয়েটির তুলনায় আমি কিছুই না। কিছুই না। কেনই বা তিনি আমাকে নিয়ে ভাববেন?
আমি আচমকাই মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলাম। আমার মাঝেও নম্রতা আছে তা জানা ছিল না। মায়ের চলে যাওয়ার পরও আমি শক্ত ছিলাম। ছোট মায়ের এতো তিক্ত কথার পরও আমি কাঁদি না। তাকে অবজ্ঞা করার মাধ্যমে নিজেকে সবসময় ঠিক রেখেছি। আজ হঠাৎ আমার সেই ধৈর্যের শক্ত দেয়ালটি কেন নড়ে উঠেছে?
স্বপ্না এসে কিছুই বলল না। কিন্তু আমি বললাম, ‘আজ আমি আমার মাঝে ভিন্ন একজনকে দেখছি স্বপ্না। এইজন খুব কোমল মনের। এইজন যে, কষ্ট পেতে পারে তা আমি জানতাম না।’
‘আপনের দেওয়া কষ্টই আমাদের জোরালো ভাবে আঘাত করে থাকে। তোর জীবনে এতদিন আপন বলতে কেউ ছিল না, যাকে তুই মন দিয়ে ভালোবাসতে পারবি। তোর প্রতি তোর বাবার মাঝে ভালোবাসা থাকলেও তা তোর ছোট মায়ের কারণে কোথাও চাপা পড়ে আছে। তোর ছোট মা প্রচলিত সৎমায়েদের ব্যতিক্রম নন। মাহিন ভাই তো সবসময় আপন জগতেই থাকে। বোন নিয়ে তার বিশেষ কোনো মাথা ব্যথা নেই। ওদের দেওয়া কষ্ট তোর কাছে কষ্টের মতো লাগে না। এইজন্য কখনও কষ্টকে গভীরভাবে উপলব্ধি করিসনি।’
কয়েকটা দিন আমি তেমন কারও সাথে কথা বলিনি। কলেজেও যাওয়া হয়নি। কেবল কোচিং করতে গিয়েছি আর কোচিং শেষে বাসায় ফিরে এসেছি। আমার আচরণ দেখে স্বপ্না অবাকই হলো। সে হেসে বলল, বাহ্ রে তুই কাউকে এতটুকু ভালোবাসতে জানিস তা তো আমি জানতামই না। আমি তার দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বললাম না।
তার কথায় শনিবার কলেজে গেলাম। হয়তোবা আমার মুড ঠিক করার জন্যই, সে বলল, ‘জানিস, ভাইয়া কাল কী করেছে? সারাটা দিন খুঁজেও তাকে কোনোদিকে পাওয়া যায়নি। আমরা তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। মা তো ভয়ে নানুর বাসার থেকে চলে এসেছিল। সন্ধ্যার দিকে কী দেখতে পাই জানিস? ভাইয়া খাটের নিচে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমচু্ছে। যে লোকটিকে সারাদিন পাগলের মতো করে খুঁজে বেড়ালাম, সেই বলল, মশা কামড়াচ্ছিল তাই নিচে শুয়ে গেছি। খুব ভালো ঘুম হয়েছে রে। ক্ষিধে পর্যন্ত পায়নি। আমি বলছি তোকে, ভাইয়ার জন্য শীঘ্রই ভাবি আনতে হবে। নইলে ভাইয়ার পাগল হতে আর বেশি দেরি নেই।’ তারপর সে কী ভেবে চুপ হয়ে গেল।
(চলবে..)
লেখা: ফারিয়া কাউছার