জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
1158

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ৮ম পর্ব
©শাহরিয়ার

মিলু:- রুমে ঢুকতে ঢুকতে এই আপু ও ভাইয়াও এখানে আছো আমরা কোথায় বেড়াতে যাবো বলো না।

— সোহান, ইকরা দু’জনেই মনে মনে বড্ড বেঁচে গেলাম, এদিকে ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে দেখে সোহানের ঠোঁটো লিপিস্টিকেে দাগ লেগে গেছে। যদি এই অবস্থা মিলু দেখে ফেলে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ইকরা ইশারায় সোহারকে বললো ঠোঁটের লেগে থাকা লিপস্টিকের কথা।

মিলু:- কই আপু আমাকে বলো আমি কাউকে বলবো না।

ইকরা:- ব্যাগ থেকে একটা টিসু বের করে সোহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে, আরে পাগলী বোন আমার কাউকেই বলা যাবে না এখন যা তো আমি ভার্সিটিতে যাবো।

— মিলু মন খারাপ করে সোহান আর ইকরার সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। মিলু নিজের রুমের দিকে সোহান আর ইকরা বাড়ির বাহিরে বের হয়ে আসলো।

ইকরা:- বড় বাঁচা বেঁচে গেছি।

সোহান:- কেন কি হলো?

ইকরা:- তুমি কি বোকা হচ্ছো নাকি দিন দিন?

সোহান:- মানে?

ইকরা:- যদি মিলু তোমার ঠোঁটে লেগে থাকা লিপিস্টিকের দাগ দেখে ফেলতো তাহলে কি হতো বলোতো?

সোহান:- কিছুই হতো না আমি বলতাম এগুলা রঙের দাগ।

ইকরা:- ওরে চালাকরে রঙ আর লিপিস্টিকের দাগের মধ্য আকাশ পাতাল পার্থক্য এটা বুঝেননা?

সোহান:- এতো কিছু বুঝার দরকার নাই, মিলু ছোট মানুষ না, যে মেয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে সে নিশ্চই এসব কিছু তোর চেয়ে ভালোই বুঝে। বলেই একটা রিক্সা ডাক দিলো।

ইকরা:- রিক্সায় বসে সে হতে পারে আমার বুদ্ধি কম এটাতো সব সময়ই বলো এ আর নতুন কি? তবে বেঁচে গেছি এটাই বেশী।

সোহান:- এখন চুপ করে বসে থাক মানুষজন এমনিতেই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।

ইকরা:- সোহানের একটা হাত শক্ত করে চেঁপে ধরে কাঁধের উপর নিজের মাথাটা রেখে দেখলে দেখুক তাতে কি হয়েছে। ভালো করে দেখুক আর জ্বলুক।

সোহান:- আরে আরে তুই কি পাগল হলি নাকি?

ইকরা:- হুম ছোট বেলা থেকেই আর তুমি এখন বুঝলে?

— দু’জন গল্প করতে করতে রিক্সা চলে আসলো ভার্সিটির গেটে। দু’জন রিক্সা থেকে নেমে ইকরাকে ভার্সিটির ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে সোহান বাড়িতে চলে আসলো আর ইকরা চলে গেলো ক্লাশ করতে।

— দেখতে দেখতে দুটো দিন কেটে গেলো। শুকবার সকাল থেকেই সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে পরলো নিজেদের জামা কাপড় গুছাতে। সোহান ইকরার ঘরের দরজায় নক করতেই ইকরা ভিতরে আসতে বললো।

সোহান:- ঘরে ঢুকে কিরে তোর সব গুছানো শেষ?

ইকরা:- হুম প্রায় শেষ তোমার গুলো গুছিয়েছো?

সোহান:- না তুই যেয়ে গুছিয়ে দিয়ে আসবি।

ইকরা:- কেন আমি গুছিয়ে দিবো? আমি কি তোমার বউ নাকি যে তোমার জামা কাপড় আমি গুছিয়ে দিবো?

সোহান:- হাসতে হাসতে না হলেও হবিতো একদিন।

ইকরা:- যখন হবো তখন দেখা যাবে এখন নিজের গুলো নিজেই গুছিয়ে নিও।

সোহান:- আমিও পারবো না এখন থেকে তুই গুছিয়ে দিবি।

— দু’জন অনেকটা সময় এ নিয়ে তর্ক করলো। শেষ মেষ ইকরা রাজি হলো সোহানের কাপড় গুছিয়ে দিতে।

ইকরা:- আচ্ছা আমি শাড়ি পরবো নাকি অন্য জামা?

সোহান:- অন্য জামা পর, আর শাড়ি গুছিয়ে নে গ্রামে যেয়ে পরবি।

ইকরা:- ওকে ঠিক আছে।

— সোহান ইকরার রুম থেকে নিজের রুমে চলে আসলো। কিছু সময় পর সোহান পাঞ্জাবী পরে বের হলো। বাবা আর চাচাও পাঞ্জাবী পরেছে, সকলে এক কালারের একই রকম পাঞ্জাবী পরেছে। এক সাথে নামাজে যাবার জন্য। এমন সময় ইকরা গোলাপি রঙের একটা জামা পরে হেঁটে নিচে নামছিলো। সোহান সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠলো অপূর্ব।

বাবা:- কিরে তাড়াতাড়ি চল দেরী হয়ে যাচ্ছে।

সোহান:- হ্যাঁ বাবা চলো।

ইকরা:- বাহ বাহ আজ তিনজন একই রকম পাঞ্জাবী পরে নামাজের জন্য যাচ্ছো দেখি।

সোহান:- কেন তোর হিংসে হয় নাকি?

ইকরা:- কেন আমার হিংসে হবে?

সোহান:- না মানে তোরও যদি একই রকম ড্রেস পরার ইচ্ছে থাকে তাহলা যা না মার্কেটিং করে নিয়ে আয় তোদের চার জনের জন্য একই রকম জামা।

— ইকরা রেগে বড় বড় চোখ করে তাকালো সোহানের দিকে, সোহান বাবা চাচার দিকে তাকিয়ে চলো তাড়াতাড়ি বের হই বোম ফাটার আগেই। বলতে বলতে সকলে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলো।

ইকরা:- মা ও মা তাড়াতাড়ি আসোতো।

মা:- কি হলো তোর আবার?

ইকরা:- চলো আমরাও শপিং করবো এক রকম জামা কিনবো।

মা:- তোর মাথা কি খারাপ হইছে? এই বুড়ো বয়সে এক করম জামা পরবো?

ইকরা:- কেন পারবে না? বাবার চেয়ে তোমার বয়স নিশ্চই বেশী না।

মিলু:- মা আপু কিন্তু কথাটা ঠিক বলছে।

সোহানের মা:- চল চল এখন ছেলে মেয়েরা যা পছন্দ করবে আমাদেরও তাই করতে হবে।

মা:- কিন্তু বুবু

ইকরা:- কোন কিন্তু চলবে না যাও সবাই পাঁচ মিনিটের ভিতর রেডি হয়ে আসো।

— সকলে তাড়াহুরো করে রেডি হয়ে আসলো। বের হয়ে পরলো শপিং এর জন্য। এদিকে নামাজ পরে তিনজন বাসায় এসে কাউকে পেলো না। এদিকে খুদায় পেট চু চু করছে সোহানের। বাসায় এসে সবাই আলোচনা করছে কোথায় গেলো ওরা। সবাই রেগে সোহানের দিকে তাকালো।

সোহান:- আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

বাবা:- তোর বুদ্ধিতেইতো ওরা বাসা থেকে বের হইছে শপিং করার জন্য।

সোহান:- আমার কি দোষ? আমি কি জানতাম নাকি ওরা সত্যি সত্যি চলে যাবে।

চাচা:- আরে থামো না তোমরা, গেছে যাক ওদেরওতো মন চায় নিজেদের মত করে একটু সাজতে। আর যেহেতু ঘুরতে যাচ্ছি নিজেদের মত করে মার্কেটিং করুক।

— সোহান নিজের রুমে এসে চার্জার থেকে ফোনটা খুলে ইকরার নাম্বারে ফোন দিলো।

ইকরা:- ফোন ধরে কি হয়েছে বলো?

সোহান:- এই তোরা কইরে?

ইকরা:- এইতো মার্কেটিং শেষ করে বের হলাম। কেন কি সমস্যা?

সোহান:- কোন সমস্যা নেই, তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়।

— ফোন রেখে নিজের মাথার চুল নিজে টানতে শুরু করলো সোহান। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর সকলে আনন্দ করতে করতে বাসায় ফিরলো। ডাইনিং এ বসে সোহান বড় বড় চোখ করে ইকরার দিকে চেয়ে রয়েছে।

মা:- এই তোর সমস্যা কি এভাবে তুই ওর দিকে চেয়ে আছিস কেন?

সোহান:- কিছু না এমনি তাড়াতাড়ি খাবার দাও খুব খুদা লেগেছে।

মা:- দেরী হবে দেখছিস না বাহির থেকে এসেছি ফ্রেস হবো তারপর খাবি। বলেই সকলে নিজেদের রুমে চলে আসলো ফ্রেস হবার জন্য। সোহান সকলের চলে যাবার পথে চেয়ে রইলো।

বাবা:- মন খারাপ করিস না, এজন্যই বলি ব্যবসাটা বুঝে একটা বিয়ে করে নে। তাহলে বউকে যখন যা বলবি তাই করবে।

সোহান:- বাবার দিকে তাকিয়ে বাবা মা না তোমার স্ত্রী তুমি কেন মাকে বলতে পারলে না খাবার দিয়ে যেতে?

বাবা:- থতমত খেয়ে ইয়ে না মানে আমারতো এখন বয়স হয়েছে এখন অশান্তি করে কি লাভ বল। আসলে এখন বয়স হলো সংসারের শান্তি বজায় রাখার।

সোহান:- রেগে চাচার দিকে তাকিয়ে আর তুমি?

চাচা:- না মানে যেখানে সংসারে বড় ভাই চায় শান্তি বজায় থাকুক সেখানে আমি কি করে অশান্তি করবো বল? আর আমার মনে হয় এই বিষয়টা তোর ও মানা উচিৎ সংসারে শান্তি বজায় রাখার জন্য স্ত্রী লোকেরা যা বলবে তা মেনে চলতে শিখে নে।

— সোহান মনে মনে আজ ইকরাকে মজাটা বুঝাবো খুব ভালো করেই বুঝাবো ভাবতে ভাবতে সকলে নিচে নেমে আসলো।

মা:- এখন খুব খিদে লেগেছে নাকি?

সোহান:- না।

— মা আর চাচী সকলের জন্য খাবার রেডি করে দিলো। সকলে মিলে দুপুরের খাবার খেতে শুরু করলো।

ইকরা:- বড় মা আমাদের ড্রেস গুলো দারুণ হয়েছে কিন্তু। আমরা বাড়ি থেকে বের হবার আগে এক সাথে পরে বের হবো।

মিলু:- হুম আপু ঠিক বলছো, দারুণ লাগবে আমাদের সবাইকে।

সোহান:- মিলুর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে, তোকে কি কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করছে?

মিলু:- কান্না কান্না কণ্ঠে তুমি আমাকে কেন বকা দিচ্ছো?

সোহান:- কিছু না চুপচাপ খেয়ে নে।

ইকরা:- কি করবে আর কাউকেতো বলতে পারে না।

— সোহান রেগে কিছু বলবে ঠিক সে সময় বাবা বলে উঠলো আহ কি শুরু করলি তোরা? তাড়াতাড়ি সবাই খেয়ে নে সময় নেই বিকেল হয়ে আসছে। কেউ আর কোন রকম কথা না বাড়িয়ে খাবার খাওয়া শেষ করলো। সোহান টেবিল থেকে উঠতে উঠতে ইকরার দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি আমার রুমে এসে সব গুছিয়ে দিয়ে যা।

ইকরা:- সব কিছু গুছিয়ে সোহানের রুমের সামনে যেয়ে দরজায় ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। রুমে ঢুকে সোহানের দিকে তাকিয়ে বললো বলো কি কি গুছাতে হবে?

সোহান:- তোর যা যা নিতে ইচ্ছে হয় তাই নে।

ইকরা:- কেন তুমি মুখে বলতে পারো না।

সোহান:- খাট থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে এগুলা গুছিয়ে দে।

— ইকরা খাটের উপর থেকে জামা গুলো হাত দিয়ে ধরতে যাবে অমনি সোহান ইকরার হাত চেঁপে ধরে মোচড় দিয়ে পেছনের দিকে নিয়ে এসে খুব বেড়ে গেছিস না?

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে