#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-১৩ তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— সোহান হাসতে হাসতে থাম তোরা থাম, তোদের চিৎকার শুনে ভুত প্রেত সব ভয়ে পালিয়েছে।
জুহি:- তুমি এতো পঁচা কেন?
সোহান:- আমি আবার কি করলাম? কারেন্ট চলে গেছে এটা কি আমার দোষ?
জুহি:- এতো ভয়ংকর গল্প কেন বলতে হবে?
সোহান:- ভুতের গল্পতো ভয়ংকর হবেই।
— কথা বলতে বলতে ফুপু মোমবাতি নিয়ে রুমে আসলো।
ফুপু:- কিরে এতো চিৎকার করছিস কেন তোরা?
জুহি:- মা জানো না ভাইয়া কি ভয়ংকর ভুতের গল্প বলছে, তার উপর কারেন্ট চলে গেলো তাইতো ভয়ে চিৎকার করে উঠছি।
ফুপু:- পাগল মেয়ে কোথাকার। কারেন্ট আসলে সকলে খেতে আছিস।
— বলে ফুপু রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ইকরা:- হয়েছে তোমাকে আর ভুতের গল্প বলতে হবে না, এবার চুপ করে বসে থাকো।
— সবাই টুকটাক কথা বলতে বলতে প্রায় ত্রিশ মিনিট পর কারেন্ট আসলে সকলে মিলে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য উঠে পরলো। সবাই মিলে গোল হয়ে যেয়ে খাবার খেতে বসলো। এক সাথে রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে আসলো।
সোহান নিজের রুমের ব্যালকনিতে আর মিলু ইকরা তাদের রুমের ব্যালকনিতে গভীর রাত পর্যন্ত বসে সময় পার করে এক সময় বিছানায় যেয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো। গভীর রাতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলে সোহানের ঠাণ্ডায় ঘুম ভেঙে যায় এদিকে কারেন্টও নাই। কি করবে বুঝতে পারছে না। কোথাও কাঁথা বা কম্বল আছে কিনা বুঝে উঠতে পারছে না। এতো রাতে কাউকে ডাক দিবে কিনা বুঝতেও পারছে না। ফোনটা হাতে নিয়ে ইকরার নাম্বারে কল দিলো। প্রথম বার রিং বেজে কেটে গেলো। সোহান আরেক বার কল দেবার পর ইকরা ফোন রিসিভ করলো।
সোহান:- সরি তোর ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।
ইকরা:- ঘুম নিয়েই কি হয়েছে বলো?
সোহান:- নাম মানে রুমের কোথাও কাঁথা বা কম্বল আছে কিনা বলতে পারিস?
ইকরা:- ঐ ঘরে মনে হয় নাই, তুমি আমার রুমের দরজার সামনে আসো আমি বের করে দিচ্ছি নিয়ে যাও।
— ফোন কেটে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে আলমারি খুলে ইকরা একটা কম্বল বের করলো ততক্ষণে সোহান দরজার সামনে চলে এসেছে। টোকা দিতেই ইকরা যেয়ে দরজা খুলে কম্বলটা এগিয়ে দিলো সোহানের দিকে। সোহান কম্বল হাতে নিতে নিতে তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর সরিও এতো রাতে জাগিয়ে তোলার জন্য।
ইকরা:- ওসব কিছু লাগবে না যাও যেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
সোহান:- হ্যাঁ তুইও ঘুমিয়ে পর শুভ রাত্রী
— সোহান কম্বল নিয়ে চলে যেতেই ইকরা দরজা বন্ধ করে আবার যেয়ে শুয়ে পরলো। সোহানও রুমে যেয়ে কম্বল গায়ে জড়িয়ে আরামে শুয়ে পরলো।
— পরদিন সকালে সকলে আবার এক সাথে হলো নাস্তার টেবিলে। নাস্তা খেতে খেতে রাসেল বললো আজ কি তোরা ঘুরতে বের হবি?
জুহি:- কেন তোমার কি কোন কাজ আছে নাকি?
রাসেল:- না আমার কোন কাজ নেই, তোরা ঘুরতে গেলে আমি নিয়ে বের হবো।
জুহি:- ইকরার দিকে তাকিয়ে আপু কি বলো যাবে তোমরা?
ইকরা:- হুম অবশ্যই যাবো। ঘুরতে যাবো এটা বলতে হয়?
রাসেল:- ঠিক আছে তাহলে সকলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। বড় মামার দিকে তাকিয়ে মামা তোমরাও চলো খুব মজা হবে।
সোহানের বাবা:- নারে বাবা তোরাই যা আমরা বাড়িতেই রেস্ট করি।
রাসেল:- বেশতো তাহলে তোমরা রেস্ট করো।
— বলতে বলতে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তোরা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়। বলেই নিজের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। বাকিরাও খেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে নিজেদের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। রুমের দিকে যেতে যেতে ইকরা সোহানকে বললো কি পরে বের হবো?
সোহান:- তোর ইচ্ছে যা মনে চায় পরে বের হো।
ইকরা:- কি হলো এমন করে বলছো কেন?
সোহান:- আরে কেমন করে বলছি, আচ্ছা শোন কালতো শাড়ি পরেছিলি, আজ অন্য জামা পরলেই হবে। আর আকাশের অবস্থাও ভালো না এই রোদ এই বৃষ্টি। তাই শাড়ি না পরাটাই ভালো, আর এতো মানুষের সাথে তুই অন্য জামায় পরে নিস।
ইকরা:- আচ্ছা আচ্ছা হয়েছেতো, বুঝতে পেরেছি এভাবে বলতে হবে না। অন্য জামাই পরবো। বলে ইকরা হেসে দিলো। সোহান মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো ইকরার দিকে। দু’জন নিজেদের রুমে চলে আসলো।
— দু’জনই এসে ফ্রেস হতে চলে গেলো, ফ্রেস হয়ে বের হয়ে সোহান আকাশি রঙের একটা শার্ট বের করলো সেই সাথে জিন্স প্যান্ট পরলো। এদিকে ইকরা, কালো একপা থ্রীপিস বের করলো যা কার চুপির কাজ করা ছিলো। গায়ে জড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মিলু বলেলে উঠলো, আপু তোকে খুব সুন্দর লাগছে ঠিক যেন আসমানের পরী জমিনে নেমে আসছে।
ইকরা:- চুপ কর কি সব বলছিস এসব?
মিলু:- আমি ঠিকই বলছি ইস আমি যদি ছেলে হতাম না তোমার প্রেমে পরে যেতাম।
ইকরা:- হাসতে হাসতে মাইর চিনিস আম্মুরে বলমু তুই বেশী পেকে গেছিস।
মিলু:- আমি কি ভয় পাই ভাবছো আমিও আম্মুরে বলে দিবো তোমার আর সোহান ভাইয়ার কথা।
ইকরা:- কিছুটা চমকে প্রশ্ন করলো কি বলবি আমার আর সোহান ভাইয়ার কথা?
মিলু:- আমি বুঝি বুঝি সব কিছুই বুঝি তোমাদের দু’জনের মাঝে কি চলতাছে।
— মিলুর এমন কথায় ইকরা মিনিট খানেক একদম স্তব্দ হয়ে বসে ছিলো ড্রেসিং টেবিলটার সামনে তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে মিলুর কান টেনে ধরে খুব বেশী বেড়ে গেছিস সারা দিন ফেসবুক আর মেসেঞ্জার নিয়ে পরে থাকিস আর এসব শিখেছিস?
মিলু:- আপু ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি, আর সোহান ভাইয়্ খুব ভালো ছেলে তোমার জায়গায় থাকলে আমিও সোহান ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলতাম।
— ইকরা মিলুর কানের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো, ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে মিলুর দিকে তাকিয়ে বললো তুই না আমার লক্ষী বোন আমার কাছে প্রমিজ কর তুই এই সব কথা কাউকে বলবি না।
মিলু:- বলবো না বললেতো এতোদিনে বলেই দিতাম। আর আমি এতোটাও বোকা না যে নিজের বোনের ক্ষতি করবো।
— কথাটা বলেই মিলু ইকরাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ফিসফিস করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো আপু অংকে কিন্তু তুমি সত্যিই পাঁকা। মিলুর মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা লজ্জা পেলেও দু’বোন এক সাথে হেসে উঠলো। ইকরা মিলুর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে চল বের হো এখন। নয়তো দেরী হয়ে যাবে।
মিলু:- হ্যাঁ হ্যাঁ চলো,
— দুই বোন এক সাথে রুম থেকে বের হলো, এমন সময় সোহানও রুম থেকে বের হলো। দু’জনের চোখেচোখ পরতেই একে অপরের দিকে চেয়ে রইলো। দু’জনের অবস্থা দেখে মিলু খকখক করে উঠলো, মৃদু হাসি দিয়ে সোহান চোখ নামিয়ে নিলো। ইকরা লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো।
মিলু:- কি দু’জন দাঁড়িয়ে রইবে নাকি সামনের দিকেও যাবে। নাকি একজন আরেক জনকে বলবে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে?
সোহান:- মিলুর কান টেনে ধরে বেশী পণ্ডিত হয়ে গেছিস তাই না।
ইকরা:- সোহানের হাত টেনে ধরে এই কি করছো ছেড়ে দাও ওকে।
— সোহান মিলুকে ছেড়ে দিতেই দূর থেকে জুহি বলতে বলতে এগিয়ে আসলো কই তোমরা রেডি হলে, কাছে এসে ভাইয়া তোমাদের জন্য বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
ইকরা:- হ্যাঁ চল,
— সকলে মিলে হাঁটা শুরু করলো বাড়ির বাহিরে বের হতেই দেখতে পেলো রাসেল অটো দাঁড় করিয়ে রাখছে। সবাইকে দেখে যাক তাহলে তোরা এলি অবশেষে। আমিতো ভাবছিলাম তোদের রেডি হতে হতেই বেলা শেষ হবে।
সোহান:- মেয়েদের সাজতে একটু সময়তো লাগবেআ ভাইয়া এটাই স্বাভাবিক।
রাসেল:- এতো সাজুগুজু করতেই কেন হবে?
সোহান:- সাজুগুজুতেই নারীরা সুন্দর, আর একটু পরিপাটি না সাজলে মেয়েদের ভালোও লাগে না।
রাসেল:- নে হয়েছে এখন তাড়াতাড়ি উঠে বস যেতে অনেকটা সময় লাগবে।
— আর কোন কথা না বাড়িয়ে সকলে অটোতে উঠে বসলো। অটোর সামনে বসলো রাসেল আর পেছনে ওরা চারজন। অটো চলতে শুরু করতেই জুহি গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলো।
মিলু:- এই আপু তুমি গুনগুন করে কি বলছো? কবিতা নাকি গান?
জুহি:- কিছু না আবোল তাবোল মনে যা আছে তাই বলছি।
মিলু:- ওহ আচ্ছা। সোহানের দিকে তাকিয়ে ভাইয়া একটা কবিতা বলো না শুনি। এতো সুন্দর পরিবেশ আর তোমার কবিতা শুনবো না এটা কি হয়।
সোহান:- আরে কি বলিস আমি এখন ওসব পারবো না।
রাসেল:- এই তুই কি সত্যি সত্যি কবিতা পারিস নাকি? বলনা আমিও শুনি তোর কবিতা।
ইকরা:- পারে মানে খুব সুন্দর করে বলতে পারে।
রাসেল:- আরে বল বল লজ্জা পাচ্ছিস কেন মেয়েদের মত।
— রাসেলের সাথে সাথে সকলে বলতে শুরু করলো। সোহান বললো আচ্ছা বলছি। বলেই ইকরার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো।
” অচেনা পথ, অচেনা রাস্তা,
চিরচেনা তুমি আর আমি।
চলছি একই সাথে পাশাপাশি
খুব করে ইচ্ছে থাকার পরেও ছুঁয়ে দিতে পারছি না তোমাকে।
তুমি যে আমার না বলা কবিতা।
তুমি যে আমার না গাওয়া গান।
তুমি ছিলে তুমি থাকবে চিরদিন আমারি হৃদয়ের গহিনে।
কেউ দেখবে না কেউ জানবে না
শুধু অনুভবে বুঝে নিও তুমি।
কতটা ভালোবাসি আমি”
চলবে..
#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ১৪তম পর্ব
©শাহরিয়ার
কবিতা শেষ হতেই সবাই বাহ বাহ করতে শুরু করলো।
রাসেল:- আরে বাহ তুইতো দেখছি বেশ রোমান্টিক।
— কিছুটা লজ্জা পেয়ে সোহান মাথা নিচু করে রাখলো। রাসেল আবার বললো তুইতো মেয়ে মানুষের মত লজ্জাও পাস দেখছি তা প্রেমটেম কিছু করিস নাকি?
মিলু:- এই বয়সে প্রেম না করলে কোন বয়সে করবে?
রাসেল:- বেশ বেশ চালিয়া যা। বয়সতো এখন তোদেরই।
সোহান:- কেন ভাইয়া তুমি কি বুড়ো হয়ে গেছো নাকি?
রাসেল:- আরে সে কথা না এখন কি আর আমার প্রেমের বয়স আছে নাকি। এখন বয়স হয়েছে বিয়ে করে সোজা সংসার জীবনে চলে যাবার।
ইকরা:- হ্যাঁ তাড়াতাড়ি একটা বিয়ে করে ফেলো।
— রাসেল কোন জবাব না দিয়ে হাসছে। অল্প কিছু সময় পর অটো ইকো পার্কের সামনে চলে আসলো। সকলে নেমে পার্কের ভিতর প্রবেশ করলো। এখানে সেখানে ঘুরছে আর সকলে মিলে ছবি তুলছে। ঘুরতে ঘুরতে দুপুর হয়ে গেলো। সকলে মিলে পার্কের ভিতর পর্যটন রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো। তারপর আরও কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে আবার ঘুরতে শুরু করলো। নানান রকম বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি দেখছে সেই সাথে প্রকৃতিক বাতাস সকলে দারুণ উপভোগ করছে। মাঝে মাঝে ক্লান্ত হলে সকলে মিলে এক সাথে বসে গল্পের আসর জমাচ্ছে সকলে বেশ উপভোগ করছে এই ঘুরাঘুরি। সন্ধ্যায় সকলে পার্কের ভিতর থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। সবাই যে যার মত করে নিজেদের রুমে চলে আসলো। কিছু সময় পর ফ্রেস হয়ে আবার সকলে খাবার টেবিলে আসলো। পরিবারের সকলে মিলে রাতের খাবার খেতে বসলো।
বাবা:- কিরে কেমন ঘুরলি তোরা?
সোহান:- জ্বি বাবা খুব ভালো।
বাবা:- তাতো তোদের দেখেই বুঝা যাচ্ছে কারো ভিতর কোন রকম ক্লানির দাগ দেখা যাচ্ছে না।
ইকরা:- বড় আব্বা এতো সুন্দর পরিবেশে ঘুরলে কি আর ক্লান্তি লাগে। ইস যদি আমাদের ঢাকার শহরটা এতো সুন্দর হতো। সবুজ গাছগাছালিতে ভরপুর।
সোহান:- তখন বলবি ইস হলুদ ল্যাম্পপোষ্ট খুব মিস করছি। বুঝলি আমরা যা পাই তার চেয়ে অনেক বেশী আশা করি।
বাবা:- হুম ঠিক তাই,
রাসেল:- শোন যত বেশী আশা করবি পুরোটা না পেলেও তার চেয়ে কিছুটা কম পাবি, কিন্তু আশা যত কম করবি পূর্ণতাও ততই কম হবে।
— এভাবেই যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সকলে রাতের খাবার শেষ করে যার যার মত রুমে চলে গেলো। রুমে যেয়ে যে যার মত শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো। পরদিন সকালে সকলে নাস্তা করে সকলে হাঁটা শুরু করলো সেই নদীর দিকে। আজ সঙে বড়রাও যোগ দিয়েছেন বাড়ির পাশে বলে। দু’টো নৌকা ঠিক করা হলো একটাতে বড়রা আর একটায় ছোটরা যাবে। নৌকা চলছে সকলে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছে। নৌকা পাড়ে যেয়ে ভিরতেই সকলে নৌকা থেকে নেমে পরলো।
সোহানের মা:- ইস কত গুলো বছর পর নৌকায় উঠে এই কাশবনে এলাম।
বাবা:- তোমার মনে আছে সোহান সেই ছোট ছিলো যখন শেষ বার আমরা এখানে এসেছিলাম।
মা:- মনে থাকবে না আবার, স্মৃতি গুলো মধুর হয়ে চিরদিন হৃদয়ের মাঝে থাকবে। আজ ছেলে মেয়ে গুলো কত বড় হয়ে গেছে অথচ ওদের মত বয়সে আমরা শেষ এখানে এসেছিলাম।
বাবা:- হ্যাঁ দেখতে দেখতে সময় চলে যায়। আজ ওদের দেখলে আমার অতীত দিনের কথা মনে পরে।
মা:- হুম ওদের মাঝেই নিজেদের অতীত খুঁজে পাই।
— সকলে ঘুরতে শুরু করলো ছবি তুলতে শুরু করলো। সকলে এক সাথে একই ফ্রেমে বন্দী হচ্ছে। এখানে এসে যেন সকলে জীবনের স্বাদ খুঁজে পেয়েছে। শহরের বন্দী জীবন কাটিয়ে মুক্ত মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। চারি পাশের পরিবেশ দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। বেহায়া মন বাচ্চামি করতে ইচ্ছে করে ভীষণ। অতীতে হারিয়ে যায় মন। সকলে মিলে দুপুর পর্যন্ত ঘুরাঘুরি করে বাড়ি ফিরে আসে। যে যার রুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে রেস্ট নেয়। এদিকে ফুপু মিহি আর সোহানের মা রান্না ঘরে চলে আসে রান্না করার জন্য। দুপুরের খাবার রেডি হতেই সকলে খাবার খেতে চলে আসে। খাবার খেতে বসতেই বৃষ্টি শুরু হয়।
বাবা:- ছোট বেলায় গ্রামে থাকতে এমন বৃষ্টির সময় ছুটে যেতাম আম কুড়াতে। তখন আমাদের অনেক গুলো আম গাছ ছিলো কত কত আম গাছের নিচে পরে থাকতো।
সোহান:- যাও না এখনো দেখবে রাস্তার পাশের আম গাছ গুলোয় অনেক আম পরে আছে।
— সোহানের কথা শুনে সকলে এক সাথে হেসে দিলো।
বাবা:- এখন কি আর দৌঁড় ঝাপের বয়স আছে নাকি। এখনতো বয়স তোদের।
সোহান:- আমারতো আর খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নাই যে আম কুড়াতে যাবো।
ইকরা:- ইস আমারতো ভিজতে ইচ্ছে করছে।
রাসেল:- যা না ভিজ মানা করছে কে?
ইকরা:- না না আমি এখন বাহিরে ভিজতে যাবো না উঠান যে পিছলে পরে কোমড় ভাঙার ইচ্ছে নেই।
রাসেল:- হা হা অল্প বয়সে কোমড় ভেঙে বুড়ি হবি এইতো।
— সকলে রাসেলের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো। ইকরা লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে পরলো। অল্প সময়ের ভিতর সকলের খাওয়া হয়ে গেলো। সোহান আর মিলু গল্প করতে করতে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। ঘরের দরজার সামনে আসতেই মিলু বললো চলো আমাদের রুমে সবাই মিলে গল্প করবো।
সোহান:- ঠিক আছে চল।
— রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলো ইকরা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বাহিরের বৃষ্টিতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মিলু বললো তুমি বসো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি। মিলু ওয়াশ রুমে চলে যেতেই সোহান এগিয়ে গেলো ইকরার দিকে। পাশে দাঁড়িয়ে কিরে এতো মনোযোগ দিয়ে কি করছিস?
ইকরা:- বৃষ্টিতে ভিজছি।
সোহান:- হেসে দিয়ে এভাবে কি কেউ বৃষ্টিতে ভিজে?
ইকরা:- ভিজে ভিজে এই যে দেখ দু’হাত ভিজিয়েছি। বাকিটা মনে মনে ভিজে নিচ্ছি।
সোহান:- ইকরার দু’হাতে নিজের হাত রেখে হুম বুঝলাম। কিন্তু এভাবে ভিজলেতো জ্বর আসতে পারে সে কি তুই জানিস?
ইকরা:- আসলে কি হবে তোমারতো আর কষ্ট লাগবে না।
সোহান:- আমার কষ্ট লাগবে না কে বললো? তুই অসুস্থ হলে বুঝি আমার খুব ভালো লাগবে?
ইকরা:- লাগতেও পারে তাছাড়া আগেতো তোমার সেই ভালো লাগতো আমাকে বলতে সব নাকি আমার ন্যাকামি।
সোহান:- আরে সে সবতো বলতাম যাতে তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাস তাই।
— দু’জন কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জোরে বজ্রপাতের শব্দ হতেই ইকরা খুব শক্ত করে সোহানের হাত চেঁপে ধরলো। বাতাস বেড়ে যাবার ফলে বৃষ্টির পানি ছিঁটে এসে লাগছিলো দু’জনের মুখে। এক জন আরেক জনের দিকে অপলক চেয়ে রয়েছে। এমন সময় মিলু ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ওদের দিকে এগিয়ে যেয়ে এমন অবস্থা দেখে কাশি দিতেই দু’জন দু’জনার হাত সরিয়ে নিলো।
মিলু:- আমি কি কোন ডিস্ট্রাব করলাম?
সোহান:- কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কই নাতো।
মিলু:- নামে মানে ইয়ে।
ইকরা:- মিলুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে, তুতলাচ্ছিস কেন?
মিলু:- কই নাতো আমি বলতে চাচ্ছিলাম তোমরা কি এখানে দাঁড়িয়ে ভিজবে নাকি রুমের ভিতরও আসবে?
— মিলুর কথায় দু’জন বুঝতে পারলো অনেকটাই ভিজে গেছে জামা কাপড়। তাড়াতাড়ি করে দু’জন রুমের ভিতর ঢুকে পরলো। রুমে ঢুকে ইকরা সোহানের দিকে একটা তোয়ালে এগিয়ে দিলো। সোহান হাত মুখ তা দিয়ে মুছে নিয়ে ইকরার দিকে বাড়িয়ে দিলো। ইকরা তা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিলো। এসব দেখে মিলু মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললো আমি শুনেছি খাবার ভাগ করে খেলে ভালোবাসা বেড়ে যায়, আচ্ছা একই তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছলে কি তা বাড়ে না?
ইকরা:- মিলুর কান টেনে ধরে বেশী পাকনামি হচ্ছে তাই না?
— এমন সময় রাসেল ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কিরে তোরা কি করছিস? আর কে পাকনা হয়ে গেছে?
ইকরা:- তাড়াতাড়ি মিলুর কান ছেড়ে দিয়ে কিছু না ভাইয়া বসো এমনি দুষ্টমি করছিলাম আমরা। হঠাৎ তুমি আমাদের এদিকে?
রাসেল:- হুম ঘরে একা একা ভালো লাগছিলো না। বাহিরে বের হবো তারও কোন উপায় নেই বৃষ্টির জন্য।
মিলু:- হুম হুম কি সুন্দর ওয়েদার একা একা কি আর ঘরে থাকতে মন চায়, তাড়াতাড়ি বিয়ে করে একটা ভাবী নিয়ে আসো ভাইয়া বুঝলে।
ইকরা:- বুঝলেতো কে পেঁকেছে? এই যে এই বু্ড়িটা পেঁকেছে।
— ইকরা আর মিলুর কথায় সোহান আর রাসেল হেসে দিলো।
সোহান:- হাসতে হাসতেই বললো ওর কথায় কিন্তু যুক্তি আছে, ভাইয়ার আসলেই বিয়ে করা উচিৎ।
রাসেল:- বুঝছি তোদের এখানে আর বসে থাকা যাবে না। তোদের সব কয়টার মাথায় বিয়ের ভুত চাপছে।
— কথাটা বলেই উঠে দাঁড়িয়ে রুমে বাহিরে যেতে শুরু করলো। রাসেল চলে যেতেই সকলে হেসে দিলো।
সোহান:- দিলোতো ভাইয়াকে লজ্জা পায়িয়ে তোরা।
ইকরা:- কি আমরা না তুমি?
সোহান:- তোরা।
— তিনজন ঝগড়া করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। মিলু বললো হইছে হইছে এবার চুপ করো। দিনটা পার করলে ঝগড়া করে। কোথায় এই বয়সে একটু রোমান্স হবে তা না সারাদিন শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া।
— মিলুর কথায় সোহান আর ইকরা বড় বড় চোখ করে মিলুর দিকে তাকালো। মিলু ভয়ে ভয়ে আমি আবার কি করলাম?
চলবে..