#জোড়া_শালিকের_সংসার
#মুন্নী_আরা_সাফিয়া
#পর্ব_২৫ (অন্তিম পাতা–দ্বিতীয়াংশ)”শেষ”
ওয়াশরুমের দরজা খুলে নির্ঝর বের হলো।সাইমুনকে মায়ের শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে দেখে মুচকি হাসে।পরমুহূর্তে অভিমানী সুরে বলে,
__’শুধু মায়ের সেবাযত্ন করলে চলবে বাপ?এদিকে বুড়ো বাপটাকে তো একবার চেয়ে দেখতে হবে, নাকি?’
নির্ঝরের কন্ঠে সাইমুন পেছন ঘুরে তাকায়।ততক্ষণে মায়ের কুঁচি ঠিক করা হয়েছে।খেয়া নির্ঝরের দিকে চেয়ে চোখ পাকায়।সাইমুন বাবার দিকে এগিয়ে বলে,
__’বাবাই,টাওয়ালটা আমার হাতে দাও।মাথা মুছিয়ে দিই!’
নির্ঝর হাসিমুখে ছেলের হাতে টাওয়াল দিয়ে সোফায় বসে পড়ে।সাইমুন পরম মমতায় বাবার মাথার চুল মুছে দেয়।
খেয়া আজ হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছে।নিজের শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে নির্ঝরের পাঞ্জাবি বের করে ফের ওয়ারড্রবে রেখে দিল।এত মানুষের ভেতর ম্যাচিং জিনিস পর্যন্ত কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।সে নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি এনে নির্ঝরের সামনে মেলে বলল,
__’টিশার্ট খুলে এটা পড়ো তো!’
সাইমুন উঠে দাঁড়ায়।বাবার মাথা মুছা শেষ।তাকে এখন বের হতে হবে।সে জানে এই বিশেষ দিনে তার বাবা এখন নিজ হাতে তার মাকে সাজাবে।
সাইমুন দুজনকে তাড়াতাড়ি নিচে নামতে বলে বের হয়।
এবার নুহা আপুর রুমের দিকে পা বাড়ায়।দরজার কাছে পৌঁছাতে পেছন থেকে কেউ ডাক দেয়।সাইমুন তাকিয়ে দেখে রাহাত আঙ্কেল।
__’সাইমুন?’
__’জ্বি আঙ্কেল?বলুন!’
__’তোমার মিতু আন্টিকে দেখছি না।কোথায় বলতে পারো?’
__’না।তবে আপনি চাইলে খুঁজে দেখতে পারি।’
__’খুঁজবে?আচ্ছা, তাহলে একটু খুঁজে বের করে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ো তো।আসলে আমার পাঞ্জাবিটা কোথায় রেখেছে খুঁজে পাচ্ছি না।’
রাহাত সাইমুনের দিকে চেয়ে হাসার চেষ্টা করলো।সাইমুন নিজেও একটু হেসে নুহার রুমে ঢুকে গেল।
__’নুহাপু।’
নুহার রুমে তার বান্ধবী গিজগিজ করছে।সবার মাঝে নুহা যেন পদ্মের মতো প্রস্ফুটিত হয়ে আছে।কি সুন্দর লাগছে তাকে!
সাইমুনকে দেখে নুহা উঠে এসে জড়িয়ে ধরে।ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
__’সকাল থেকে কোথায় ছিলি?কত খুঁজছি তোকে!’
__’বলো কি বলবে?’
__’এত মানুষের ভিড়ভাট্টা।সকালে খেয়েছিস তো তুই?’
__’হুঁ আপু।তুমি তো খেয়েছো নিশ্চয়ই?’
__’হ্যাঁ রে।মা বাবাই কি করে?’
__’তারা সাজুগুজু করছে।এখন শুনো আপু।তোমার উনি ছাদে দেখা করতে বলেছে।’
নুহার মুখটা লাল হয়ে গেল।এই দিশানটা এমন কেন?ছি!
সে জোর করে বলল,
__’দেখা করতে বললেই দেখা করতে হবে নাকি?এই দিনেরবেলা এত মানুষের আনাগোনার ভেতর কেমনে দেখা করবো।’
__’তুমি চাইলে আমি ছাদের সিঁড়িতে কিছুক্ষণ পাহারা দিতে পারি।কি বলো আপু?আমার বিয়ের সময় না হয় পুষিয়ে দিয়ো।’
সবাই হেসে ফেলল।নুহা সাইমুনের মাথায় চাটি মেরে নিজেও হেসে ফেলল।তার ভাইটা ছোটবেলা থেকে কেমন পাকনা পাকনা কথা বলে!
৩৭.
ছাদের এক কোণায় দিশানকে দেখতে পেল নুহা।এগিয়ে গিয়ে বিরক্তি নিয়েই বলল,
__’পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছো কোন দুঃখে?আজ কি বিয়ে?ভুলে গেছো যে আজ শুধু আংটি পড়াবে?আর বিয়ে কম সে কম তিন বছর পর?’
দিশান ঘুরে নুহার দিকে তাকায়।তার টিকটিকি আজ ল্যাহেঙ্গা পড়েছে।হঠাৎ করেই তাকে বেশ বড় বড় লাগছে।সাথে কি মিষ্টি চেহারা!নুহা এত বেশি সুন্দর কেন?নাকি শুধু তার চোখে সুন্দর?দিশান জানে না।জানতে চায়ও না!
__’টিকটিকি!আই লাভ ইউ।’
__’এসব বলার জন্য ডেকেছো?’
__’রেগে যাচ্ছো কেন?এমনিতেই দেরি করে এসেছো।রাগ দেখানোর কথা আমার,উল্টো তুমি দেখাচ্ছো।ফিজিক্স বইয়ে পড়োনি?Every action has an equal and opposite reaction. এই সূত্র দিয়ে পুরো দুনিয়া চলে।এর একটা মোস্ট দিক হলো ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া একই বস্তুতে সংগঠিত হবে না।তুমি ক্রিয়া করলে আমি প্রতিক্রিয়া করবো।অর্থাৎ তুমি এক ঘন্টার মতো আমাকে ছাদে দাঁড় করিয়ে রেখেছো।আমার রাগ করার কথা।সেটাও তুমি করছো!’
__’দিশান আমি কিন্তু চলে যাবো এখন।’
__’ইয়ে না মানে নুহা বেবি।এমন করে না।তুমি না হয় সারাজীবন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া একাই করো।আমি তোমাকে শুধু সামলে রাখব।এখন,একটু হাতটা ধরি?’
__’চুপচাপ যেখানে দাঁড়িয়ে আছো ওখানেই থাকবে।না হলে ভালো হবে না কিন্তু।এই,তোমার পরিবার তোমার মতো এই পিচ্চি ছেলের বিয়ে এত তাড়াতাড়ি পাকাপোক্ত কেন করলো?তোমার জন্য আমাকেও বলিদান হতে হচ্ছে।’
__’তুমি আমার টানা ১১ ঘন্টা অনশনের ফসল।এমনেই বাবা মা বিয়ে ঠিক করতে রাজি হয়নি।তবে আমি অনেক ভয়ে ছিলাম।তোমার বাবাই রাজি হবে কি না সেটা নিয়ে।ভাগ্যিস শ্বশুরমশাই রাজি হয়েছে।’
__’দিশান,তুমি জানো মা- বাবাই কিন্তু আমার বায়োলজিক্যাল বাবা মা নয়।তবুও তারা কত আদর করে আমায়।সাইমুন আর আমাকে কখনো আলাদা নজরে দেখে না।মাঝে মাঝে মনে হয় আমার নিজের বাবা মাও এতটা ব্যাকুল হয়ে ভালোবাসতো না।আমি কতটা লাকি!’
__’জানি!’
নুহার চোখ ভিজে উঠে।দিশান একটু এগিয়ে ডান হাত দিয়ে নুহার হাতটা শক্ত করে ধরে।এ জনমে আর ছাড়বে না!
রাহাত ছাদে উঠতে নিতে কয়েক সিঁড়ি পেরুতেই দিশান আর নুহাকে চোখে পড়ে।সে দ্রুত পায়ে নিচের দিকে নেমে যায়।বিড়বিড় করে বলে,
__’কত সাহস বাচ্চা কাচ্চার!বিয়ের তিন বছর আগে থেকেই হাত ধরা শুরু করেছে।আর আমি!এই রাহাত আহমেদ কি না বিয়ের তিন মাস পর প্রথম হাত ধরেছে?মানা যায় এসব?’
সে বিড়বিড় করে এসব বলে মিতুর রুমের দিকে পা বাড়ায়।এ বাসায় মিতুর জন্য একটা রুম আজও বরাদ্দ।তার শ্বাশুড়ি আজও এ বাসাতেই থাকে।নির্ঝর খেয়া তাকে বহু আগেই মায়ের আসনে বসিয়েছে।
মিতু রুমে চুল বাঁধছিল।এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।বিকেল হবে হবে।গেস্টরা সব অনেক আগে এসে গেছে।টুকটাক কাজ করতে করতেই তার দেরি হয়ে গেল।সে আজ কনেপক্ষ হয়েছে।
রাহাত দরজার ছিটকিনি লাগাতেই মিতু অবাক হয়ে বলল,
__’বাসায় এত মানুষ আর তুমি দরজার ছিটকিনি লাগাচ্ছো কেন?সবাই কি ভাববে?’
রাহাত তাকে জোর করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।ঘাড়ে মাথাটা রেখে বলে,
__’আমি অনেক ক্লান্ত রাগিনী।রিচার্জ করছি।’
__’ঢং বাদ দাও তো।দেখো, মিষ্টি কোথায়!’
__’মিষ্টি সাইমুনের পেছন পেছন ঘুরে বেড়াচ্ছে।দেখো,তোমার মেয়েটা বড় হয়ে সাইমুনের ঘাড়েই ঝুলে পড়ে কি না!মন্দ হয় না!’
__’থামো তো।ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এসব কি ধরনের ফাজলামো?’
__’আমি সত্যি বলছি।আচ্ছা যাও।এবার ঘুরো তো আমার দিকে!’
রাহাত মিতুকে নিজের দিকে ঘুরায়।রাহাতের চোখে চোখ পড়তে মাথা নিচু করে সে।রাহাতের চোখে না চেয়ে সে অনেক কিছু বলতে পারে।চাইলেই সব ভাবনা ফুস!
৩৮.
রাতের বেলা ক্লান্ত শরীরে খেয়া বেডে হেলান দিয়ে বসে।তার হাতে একটা টেলিগ্রাম।বিদেশ থেকে জাহিদ পাঠিয়েছে।তথ্য প্রযুক্তির যুগে এসেও জাহিদ হঠাৎ হঠাৎ চিঠি পাঠায়।ফোনে কখনো যোগাযোগ করে না।বিগত বছরগুলোতে দু বার চিঠি পাঠিয়েছে।
নির্ঝর একটু দূরে ফ্লাক্স থেকে গরম পানি ঢেলে কফি বানাচ্ছিল।খেয়া তার দিকে চেয়ে বলল,
__’রাত দেড়টার মতো বাজে।এখন কফি খাবে?’
__’আমি একা না,সাথে তুমিও খাবে।সারাদিন অনেক ধকল গেছে।এত তাড়াতাড়ি বসে যাওয়া শরীর নিয়ে ঘুমানো ঠিক হবে না।’
নির্ঝর ধোঁয়া উঠা গরম কফি হাতে খেয়ার পাশে বেডে বসলো।কফিতে এক চুমুক দিয়ে খেয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়।খেয়া নির্ঝরের হাতে থেকেই এক চুমুক দেয়।
নির্ঝর বলে,
__’এবার জাহিদের চিঠিটা খুলো।’
খেয়া আস্তে আস্তে চিঠির খাম খুলে।ভাঁজ করা চিঠির সাথে একটা চকচকে ছবি।ছবিতে জাহিদের সাথে একটা মহিলা।সাথে একটা পাঁচ -সাত বছরের বাচ্চা মেয়ের ছবি।মেয়েটা জাহিদের কোলে।
খেয়া জাহিদের চিঠিটি খুললো।চিঠির শুরতে কোনো সম্বোধন নেই।গোটা গোটা অক্ষরে অবিন্যস্ত ভাবনার প্রতিকৃতি,
“তোমরা সবাই কেমন আছো?আমি কেমন আছি তা তো ছবি দেখেই বুঝতে পারছো।বেশ আছি।ছবির মেয়েটা বাঙালি।কিন্তু বাংলাদেশের নয়।ও ভারতের শিলিগুড়ির।এখানে এসে পরিচয়।ওর নাম লিজা।ভারী মিষ্টি।সাথের পিচ্চি বাচ্চাটা ওর প্রাক্তন স্বামীর।বুঝতেই পারছো নতুন করে আবার কারো মায়ায় জড়িয়েছি।আমি মানুষটাই এমন।চট করে অন্যের মায়ায় আটকে যাই।তবে এ জীবনে এটাই শেষ মায়া হয় যেন।আর কারো মায়ায় জড়াতে চাই না।অর্ধেকের বেশি জীবন তো পার হয়েই গেল।তবে মাঝে মাঝে আমি বেঁচে থাকার কারণ খুঁজি।উল্লেখ যোগ্য কোনো কারণ খুঁজে পাই না।একবার মনে হয় এই সংসার, প্রেম, ভালোবাসা, মায়া এসবই আপেক্ষিক।আবার অন্য সময় মনে হয় এসব আছে বলেই মানবজীবন বিষাদময় হয়ে উঠে না।
পরিশেষে, সন্তানের নাম আমার নামে রেখেছো শুনে খুব খুশি হয়েছি।অনেক দোয়া থাকবে সবার জন্য।এই বিদেশ বিভুইয়ের জন্য এক চিলতে দোয়া কোরো সবাই।’
আর কিছু লেখা নেই।নিচে শুধু ছোট্ট করে জাহিদ লেখা।খেয়ার চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে গেল।নির্ঝর হাত বাড়িয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নিল।
নির্ঝর বেলকনি দিয়ে বাইরে তাকাল।আজ জোসনা উঠেছে।বাইরে জোসনার আলো কেমন ঢেউ খেলে যাচ্ছে।সে খেয়ার মুখটা সামনে এনে কপালে চুমু দিল।বলল,
__’আজ আকাশে মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে।আসো বেলকনিতে যাই।’
__’হেঁটে যাবো না। কোলে নিয়ে যাও তাহলে।’
__’যার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল সে এখনো এতটা বাচ্চামো কিভাবে করে?দুদিন পরে নানু-দাদু হয়ে যাবে সে খেয়াল আছে?’
__’কোলে নিবে কি না বলো!’
নির্ঝর হাসিমুখে খেয়াকে কোলে তুলে নিল।খেয়া তার গলা জড়িয়ে মাথার চুল এলোমেলো করে দেয়।
নির্ঝর বেলকনিতে বসে খেয়াকে নিজের হাঁটুর উপর বসায়।এখান থেকে অনেকখানি আকাশ দেখা যায়।সম্পূর্ণ চাঁদটাই দেখা যাচ্ছে।নির্ঝর আকাশের দিকে আঙুল তুলে খেয়াকে বলল,
__’ওই যে অংশ দেখছো ওটা সপ্তর্ষিমন্ডল।’
__’হুঁ।’
__’সপ্তঋষিতে কি কি তারা আছে জানো?’
__’হুঁ।তুমি এর আগে একবার বলেছিলে।সেদিনও আকাশে এমন জ্বলজ্বলে লক্ষ কোটি নক্ষত্র ছিল।সপ্তঋষির তারা গুলো হলো অন্ডু,পুলহ,পুলস্ত্য,অত্রী, অস্টিরা,বশিষ্ট,মরীচ।অরুন্ধতী নামের আরো একটা তারা আছে।বশিষ্টের পাশের তারাটা অরুন্ধতী।চোখের দৃষ্টি ভালো না হলে অরুন্ধতী দেখা যায় না।’
খেয়া নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো।খেয়ার হাসি নির্ঝরের বুকে গিয়ে লাগে।দিনের মধ্যে হাজার বার সে এই হাসিতে ঘায়েল হয়।সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে।
সে অপলক চেয়ে থাকে।চাঁদের রূপালি আলো এসে খেয়ার সারামুখে পড়েছে।কি ভয়ংকর সুন্দর লাগছে তাকে।দিন দিন কি খেয়ার রূপ বেড়ে যাচ্ছে?
নির্ঝরের কপালেও যে এমন একটা সময় লেখা ছিল তা সে জানতো না।এই যে খেয়াকে পাশে পাওয়া, নিজের বুকে আগলে রাখা,রোজ সকালে তার মিষ্টি মুখ দেখে ঘুম ভাঙা,হুটহাট অভিমান করলে তার রাগ ভাঙানো সব কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হয়।স্বপ্ন হলেও এমন স্বপ্নের সময়সীমা যেন এ জনমে শেষ না হয়।সে খেয়ার মায়া এ জীবনে কাটিয়ে উঠতে পারবে না।
তীব্র দুঃখের চেয়ে একটুখানি সুখানুভূতির জোর অনেক বেশি।খেয়াকে পাশে পেয়ে সে সুখী
চরম সুখী!আপাদমস্তক সুখী একজন মানুষ।
এমন একটা জীবনের জন্য সে জাহিদ নামক মানুষটার উপর কৃতজ্ঞ।চিরকৃতজ্ঞ!!
খেয়া নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
__’আমি তোমাকে ভালোবাসি।অনেক বেশি ভালোবাসি।’
নির্ঝরের ঘোর কাটতে চায় না।সেও ফিসফিস করে বলে,
__’আমিও তোমাকে ভালোবাসি।ভালোবাসি আমার খেয়াতরীকে।আমার এভারগ্রিন খেয়াতরীকে!’
খেয়া নির্ঝরের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়।গলার স্বর আরো খাদে নামিয়ে বলে,
‘আমার শহরে আমি মানা,সর্বত্র তোমার আনাগোনা
ভালোবেসে হাতটি ধরেছি একবার
গড়েছি দুজনে মিলে, সুখ দুঃখের প্রেম ঝিলে
জোড়া শালিকের সংসার!! ‘
|সমাপ্ত|
আসসালামু আলাইকুম!খেয়া নির্ঝরের #জোড়া_শালিকের_সংসার কে আজ সবাই মিলে বিদায় জানালাম।আমাদের চক্ষুর অগোচরে তারা ভালোবাসার খুনশুটিতে সংসার করে যাক!
কিছু কথা।আমার কোনো গল্পেই ভিলেন থাকে না বা নেগেটিভ চরিত্র থাকে না।নায়িকা তরকারি রান্না করলো আর নায়কের এক্স গিয়ে সেখানে এক কেজি লবণ ঢেলে দিল এমন নেতিবাচক চরিত্র থাকে না।অনেকটা ইচ্ছেকৃত ভাবেই দেই না।বাস্তব জীবনে মানুষ তো অহর্নিশি কষ্ট পেয়েই যাচ্ছে।আমাদের কল্পনাতে না হয় ভালো কিছু, পজিটিভ কিছু হোক!তাতে মন্দ কি!
প্রখ্যাত নোবেল বিজয়ী জন স্টেইনবেক (আমার প্রিয় লেখকদের একজন) ১৯৫২ সালে তার নোবেল আনতে গিয়ে বলেছিল, ‘আমি মনে করি যে ব্যক্তি মানুষের নিখুঁত ও ত্রুটিহীন হয়ে উঠবার সম্ভাবনায় আস্থা স্থাপন করে সাহিত্যের প্রতি তার কোনো আনুগত্য নেই।সাহিত্য সদস্য হওয়ার তার কোনো যোগ্যতা নেই!’
তার এই মহান বাণীটি আমি ভীষণ ভাবে মেনে চলি।আমি ইতিবাচক চরিত্রে বিশ্বাসী।হোক সেটা গল্পে বা বাস্তব জীবনে!
আরেকটা কথা।অনেকে চেয়েছেন, জাহিদের স্যাক্রিফাইজের কথা যেন খেয়া, নির্ঝর জানতে পারে।আমার মনে হয় এতে দিনশেষে খেয়া,নির্ঝরের মনে অপরাধ বোধ জেগে উঠবে।তার চেয়ে একজন কষ্ট পাক।কি দরকার,তিনটা প্রাণকে কষ্ট দিয়ে?তাছাড়া আমাদের নিজেদের জীবনেও এমন কিছু কথা থাকে যা আমরা এ জীবনে অন্য কাউকে বলি না,এমনকি নিজের অবচেতন মন সচেতন মনকে বলতে ভয় পায়।জাহিদের ব্যাপারটুকু না হয় খেয়া, নির্ঝরের অাড়ালে থেকে যাক!