জীবনের থেকেও বেশি পর্ব-১৩

0
655

#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ১৩
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

তামিম বলল “হুম আমার আম্মুকে ওরা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে ওরা।” বলেই ঐশীকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। হাউমাউ করে কান্না করছে তামিম। ছেলেরা সহজে কান্না করেনা। যখন তাদের সহ‍্যেরসীমা তখনই কান্না করে। ঐশী থামনোর চেষ্টা করলো না। কারণ ও জানে এই চাপা কান্না সহজে কারো কাছে প্রকাশ করা যায় না। যার কাছে সেটা প্রকাশ করা যায় সেই প্রিয়মানুষ।

তামিম কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলিয়ে দুইজন মিলে কফিটা খেয়ে নিলো। তারপর আবার তামিম বলল “জানো আরেকজন কে ছিলো।”

ঐশী প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল “কে সে আর আপনাকে সে ছেড়ে গেল কেন!”

তামিম বলল “জানো তো আমার ওই প্রিয় বন্ধুর বাবা নাকি আমার আম্মুর মৃত্যুর জন‍্য দায়ী। এটা যখন আমি জানতে পারলাম তখন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল যেন। এটা যখন আমি জানতে পারি তখন আমি একদম পাথর হয়ে যাই। আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারিনি এই কারণে। কারণ আমি দুই দিন আগেই এই কথা জানতে পারি।”

ঐশী বলল “কিন্তু ওনি আপনার আম্মুকে কেন খুন করেছেন।”

তামিম বলল “জানো ছোট থেকে আমরা দুইজন প্রায় কম্পিটেটর ছিলাম। প্রায় সবসময় আমি প্রথম আর ও দ্বিতীয় হয়ে এসেছে। এই নিয়ে ওর আব্বু আমার উপর রেগে ছিলেন। এমনই কলেজে এবং ভার্সিটিতেও এই রকম হয়ে এসেছে। আমার একমাএ দুর্বল পয়েন্ট ছিল আমার আম্মু। কারণ তিনি সবসময় আমাকে উন্নতির পথ দেখাতেন। ওর আব্বু সেটা বুঝেই খুন করেছেন। জানো তো বিজনেস লাইফেও এখন আমরা কম্পিটেটর।”

ঐশী কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল “মানে আচ্ছা ওই ছেলেটার নাম কি ছিলো।”

তামিম আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “ছেলেটা আর কেউ না নোমান।”

ঐশী ছলছল নয়নে তামিমের দিকে তাকালো। আর বলো “এটা কি বলছেন আপনি!”

তামিম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “থাক না বাদ দেও এসব।”

ঐশী হুট করে তামিমকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।

তামিম বলল “জানো তো আম্মু খুন হওয়ার পর থেকে আমি আর চুপচাপ থাকিনি। যে আমার সঙ্গে লাগতে এসেছে অন‍্যায় ভাবে তাকে আমি আর ছেড়ে দেইনি। তারপরই লোকজন আমাকে খারাপ বলতে লাগলো। তাদের ধারণা হয়ে গেল আমার সঙ্গে লাগতে আসলেই সে শেষ। আমি সাইকো। আমি খারাপ। আমি খুনি ইত্যাদি ইত্যাদি।”

ঐশী বলল “আমি জানতাম না ভাইয়ার সেই শত্রু আপনি। সে যাইহোক আর যেই ধোকা দিক বা বেইমানি করুক আপনার সঙ্গে। আমি কোনোদিন আপনার সঙ্গে এমন কিছু করবো না যাতে আপনি কষ্ট পান।”

তামিম শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ঐশীকে নিজের বুকে আর বলতে লাগলো “ভালোবাসি জান। অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমাকে জান।”

ঐশী লজ্জামাখা মুখে মুচকি হাসি দিয়ে বলল “আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি।”

——————–

কেটে গেছে কয়েক মাস। এই কয়েকমাসে ঐশী আর খোঁজখবর নেয়নি তার বাবা ভাইয়ের কিন্তু তার মন কাঁদে তার মায়ের জন‍্য। সেইদিনের পর আর কথা হয়নি তার মায়ের সঙ্গে। তামিম আর ঐশীর ভালোবাসা দিন দিন যেন বাড়ছে। দুইজন দুইজনের কেয়ারের কোনো কমতি রাখেনি। তামিমের দুঃখকে ভাগ করে নিয়েছে ঐশী। এখন আর কোনো দুঃখ না কোনো কিছু হারানোর আফসোস নেই। তামিমের সব নেশা ছাড়িয়েছে ঐশী। এখন আর ড্রিংকস করে না তামিম। দরকারি পরেনা তার। ঐশী প্রতিটা ওয়াক্তের নামাজ পরায় তামিমকে। এখন তামিমের ও অভ‍্যাস হয়ে গিয়েছে নিয়মিত নামাজ পরার। ভালোই চলছিলো দিন। তামিম ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে এসে ঐশীর হাসি মাখা মুখ দেখে সব ক্লান্তি দূর করতো। প্রতিদিন অফিস থেকে এসে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিতো ঐশীকে। কিন্তু আজকে তামিমের মুখে সেই হাসি না দেখে ঐশীর মনটা কেমন যেন কু ডেকে উঠলো।

ঐশী তামিমের কাছে গিয়ে বলল “কি হয়েছে আপনার। এমন দেখাচ্ছে কেন আপনাকে।”

তামিম লাল চোখ নিয়ে ঐশীর দিকে তাকালো। দেখে বোঝা যাচ্ছে ছেলেটা হয় তো কান্না করেছে।

তামিমকে সোফায় বসিয়ে ঐশীও পাশে বসিয়ে বলতে লাগলো “কি হয়েছে আপনার বলেন আমাকে।”

তামিম বলল “জানো তো নিজের মাকে হারিয়ে এমন একজনকে পেয়েছিলাম যে কিনা আমার মুখ দেখেই বুঝে গিয়েছিল আমি খেয়েছি কিনা। মায়ের মতো মমতা নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিয়েছিলো। ওরা আমার কাছ থেকে তাকেও কেড়ে নিয়েছে।”

ঐশী বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। আর বলল “আপনি কি বলছেন ক্লিয়ার করে বলেন প্লীজ।”

এমন সময় নিলয় দৌড়ে এলো। আর বলতে লাগলো “তামিম ওদের ফেলে যাওয়া জায়গা থেকে উদ্ধার করে এনেছি ওনাকে। এখনো জীবিত আছেন তিনি। অনেক দিন না খাইয়ে আর বিভিন্ন নির্যাতনের ফলে ওনার নার্ভ কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওরা ঠিকমতো চেক না করে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল জঙ্গলে।”

তামিমের চোখমুখ চিকচিক করে উঠলো। ও উঠে দাড়ালো। আর ঐশী একবার তামিমের দিকে আরেকবার নিলয়ের দিকে তাকাচ্ছে। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছেনা সে।

তামিম ঐশীর হাত ধরে দৌড়ে গাড়ির কাছে যেতে যেতে বলল “নিলয় আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি ওনার সব চিকিৎসা আমার বাসায় হবে তুই ব‍্যবস্থা কর।”

নিলয়ের কোনো জবাব ঐশীর কর্ণপাত হলো না। তামিম ঐশীকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে এলো।

ঐশী বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে। তামিম কি করছে।

তামিম এসে হুড়মুড়িয়ে একটা কেবিনে প্রবেশ করলো। ঐশী কেবিনের বেডে তাকাতেই থমকে গেলো। ও যেন পাথর হয়ে গেল। কি দেখছে সে। এমন দৃশ‍্য দেখে অজান্তেই ঐশীর চোখ বেয়ে নোনা পানি গড়িয়ে পরতে লাগলো।

তামিম ছুটে গিয়ে বেডের পাশের টুলে বসে বেডে থাকা মানুষটার হাত ধরলো। তার চোখ দুটোও লাল হয়ে আছে। হয় তো সে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছে।

ঐশী এখনো দাড়িয়ে আছে কেবিনের দরজায় পাথর হয়ে। তার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে যেন। মাথাটা খালি খালি লাগছে। কেমন যেন চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। ঝাপসা দেখছে সবকিছু। সবকিছু যেন ঘুরছে তার। গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গিয়েছে তার।

হঠাৎ করে ঐশী পরে গেল। তামিম দৌড়ে ঐশীর কাছে এসে ওকে ডাকতে লাগলো। ঐশী জ্ঞান হারিয়েছে। তামিম অস্থির হয়ে গেল। ফট করে ঐশীকে কোলে নিয়ে কেবিনের সোফায় ওকে শুয়ে দিলো। আর পাগলের মতো ডাক্তার ডাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। ডাক্তার এসে ঐশীকে চেকআপ করতে লাগল।

ডাক্তারের দিকে চিন্তিত মুখে তাকিয়ে আছে তামিম। চিন্তায় যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে ছেলেটা। সে উতলা হয়ে ডাক্তারকে জিঙ্গেস করলো

“ডাক্তার ঐশী হঠাৎ এমন করে জ্ঞান হারালো কেন? কি হয়েছে ওর। আমারই দোষ হঠাৎ করে এমন শক দিয়ে দিয়েছি ওকে। আগে বুঝিয়ে বলতে হতো ওকে। মেয়েটা মনে হয় রাতের খাবার টাও খায়নি। শিট আমার দোষ। আমি এতোটা কেয়ারলেস হলাম কি করে।”

ডাক্তার তামিম কাধে হাত রেখে ওকে বলল….

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে