জীবনের থেকেও বেশি পর্ব-০৯

0
725

#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ০৯
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

ফারাবি বলল “আসসালামু আলাইকুম আমি ফারাবি রহমান।”

ঐশী বলল “ওয়ালাইকুম আসসালাম। জ্বি স‍্যার বলেন কি বলবেন।”

ফারাবি বলল “তুমি ভার্সিটি আসছ না কেন কি হয়েছে তোমার।”

ঐশী বলল “পারসোনাল প্রবলেম।”

ফারাবি বলল “কি হয়েছে তোমার”

ঐশী বলল “বললাম না আর আপনাকে আমি আগেই বলেছি আমার ব‍্যপারে মাথা ঘামাবেন না। তারপরেও কেন বিরক্ত করছেন। কতোবার বলব আমি বিবাহিত।” বলেই রেগে কল কেটে দিলো ঐশী।

ফারাবি করুন চোখে তাকিয়ে রইলো ফোনের দিকে।

ঐশীর হনহন করে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো তামিম সোফায় ল‍্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে আছে সে। হয় তো কিছু নিয়ে সে চিন্তিত কারণ ঐশী জানে তামিম চিন্তিত হলেই এমনটা করে থাকে। ঐশী কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামিমকে দেখছে। ছেলেটা এতো সুন্দর কেন। ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তামিম বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল

“কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাবে মেম। পরে তাকিয়ে থেকেন।”

তামিমের কথায় ঐশী লজ্জায় পরে গেল। কফির মগ এগিয়ে দিতেই তামিম কফির মগটা হাতে নিল। এমন সময় তামিমের ফোনটা বেজে উঠলো। ঐশী তাকিয়ে দেখলো নিলয় কল করেছে। তামিম কল রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো। হুট করে তামিম বসা থেকে দাড়িয়ে পরলো। আর তাড়াহুড়ো করে বলল

‘আমি আসছি এখনিই আসছি দাড়া।” বলেই কল কেটে ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলল

“আমাকে অফিসে যেতে হবে। তুমি সাবধানে থেকো।”

ঐশী চিন্তিত কন্ঠে বলল “কি হয়েছে আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন!”

তামিম গাড়ির চাবিটা নিতে নিতে বলল “অফিস থেকে এসে বলছি।” বলেই ঐশীর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে চলে গেল।

ঐশী চিন্তিত মুখে তাকিয়ে রইলো তামিমের যাওয়ার দিকে। ঐশীর মনটা কেন যেন কু ডাক দিচ্ছে। মনটা খচখচ খচখচ করলো।

ঐশী রুমে গিয়ে বসে রইলো। তার ফোনটা বেজে উঠলো। সে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ফোনে জ্বল জ্বল করছে ভাইয়া নামটি। ঐশীর কেমন যেন ভয় কাজ করলো । প্রথমে সে কলটা রিসিভ করলো না। কিন্তু অনবরত ফোনটা বাজতে দেখে কাঁপাকাঁপা হাতে কলটা রিসিভ করে কানে ধরলো ঐশী। ঐশী কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল “আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।”

নোমান গম্ভীর কন্ঠে সালামের উত্তর দিয়ে বলল “তুই এই কয়েকদিনের আশিকের সাথে ফুর্তি করবি নাকি অসুস্থ বাবাকে দেখতে আসবি।”

ঐশী দাড়িয়ে পরল আর বলতে লাগল “ভাইয়া কি হয়েছে আব্বুর বলো ভাইয়া।” ঐশীর প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে নোমান কল কেটে দিলো।

ঐশীর চোখ থেকে অনবরত নোনা জল গড়িয়ে পরতে লাগলো। সে ধপ করে বেডে বসে পরলো। তারপর হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে চোখের পানি মোছার ব‍্যথা চেষ্টা করে দৌড় দিতে লাগলো বাসার বাহিরের দিকে। গার্ডরা ওকে আটকানো চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হলো না ঐশী বেরিয়ে গেল। ঐশী একটা অটোরিকশা করে ওর বাসার দিকে রওনা হলো। শাড়ির আঁচল মাটির সঙ্গে মিশে রয়েছে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে রয়েছে তার। অটোরিকশা থেকে নেমে দৌড়ে সে বাসায় প্রবেশ করলো। বাসায় ঢুকেই আব্বু আব্বু করে ডাকতে লাগলো। দৌড়ে ওর আব্বুর রুমে গেল ঐশী ওর বাবাকে রকিং চেয়ারে চোখ বন্ধ করে থাকা অবস্থায় দেখতে পেল। তার মুখটা শুকিয়ে আছে। ঐশী গিয়ে হাটু গেড়ে ওর বাবার পায়ের কাছে বসলো। ওনি চোখ না খুলেই বললেন

“ওহ তুমি তাহলে এসেছ ওই অসামাজিক ছেলের কাছ থেকে। সে তাহলে ছাড়লো তোমাকে। আমি তো ভেবেছিলাম আমরা মরে গেলেও তুমি আসবে না। ”

ওনার কথা শুনে ঐশী আরো জোরে ফুপিয়ে উঠলো। আর বলল

“আব্বু কি হয়েছে তোমার ভাইয়া বলল তুমি নাকি অসুস্থ। আর তুমি এগুলো কি আজেবাজে কথা বলছ।”

নোমান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো “আব্বুর জন‍্য যখন এতোই টেনশন তাহলে তার কথা মতো তার পছন্দের ছেলের সঙ্গে বিয়ে কর।”

ঐশী বসা থেকে দাড়িয়ে গেল পিছাতে পিছাতে দেওয়ালের সঙ্গে পিঠ লাগিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো “না করবো না আমি। আমি বিবাহিত। আর আমি ওনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আর ওনিও আমাকে ভালোবাসে।”

নোমান তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলল “ভালোবাসা ওই ছেলে নাটক করে ওসব। ওর দ্বারা কখনো ভালোবাসা হয় নাকি। দেখ কোন মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করছে।”

ঐশী রাগান্বিত কন্ঠে বলল “না কখনই না। ওনি কখনোই নাটক করেন নি। তোমরা ভুল বুঝতেছ ওনাকে।”

নোমান বলল তাহলে “কল দিয়ে দেখ ধরে নাকি। ফুর্তি করার সময় তোকে পাত্তাও দিবে না।”

ঐশী তার ফোনটা নিয়ে কল দিলো তামিমকে। দুইবার রিং হতেই কলটা রিসিভ হলো। কল রিসিভ হতেই তার মুখে একটু হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু তার হাসি বেশিক্ষণ রইলো না। কারণ ফোনের ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এলো মেয়েটি বলল

“কে আপনি আমাদের প্রাইভেট টাইমে কেন বিরক্ত করছেন। আর কল দিবেন না।”

ঐশী রেগে বলল “কে তুই আর আমার তামিমের ফোন তোর কাছে কেন! আর কি আজেবাজে কথা বলছিস।”

মেয়েটি বলল “এই মেয়ে তুই করে বলছ কেন। আর তোমার তামিম মানে। তামিম শুধু আমার। ও শুধু আমার ভালোবাসা।আর তামিমও আমাকে ভালোবাসে।”বলেই হুট করে কল কেটে দিল মেয়েটি।

আর ঐশী নিস্তব্ধ হয়ে মেঝেতে বসে পরলো। সে নিজের কান কেও বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কিভাবে সম্ভব। ঐশীর যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছে। মাথাটা ফাকা ফাকা লাগছে। বুকের ভিতর কেমন যেন অসহ‍্য ব‍্যথা হচ্ছে তার। হাত পা কেমন যেন ঝিম মেরে আছে। কান্না গুলো যেন গলায় আটকে গিয়েছে।

নাফিস সাহেব উঠে ঐশীর কাছে এসে বলল “দেখলি তো তুমি কেমন মানুষকে ভালোবেসেছ। যার অন‍্য নারীর সঙ্গে চলাফেরা। শুধু তাই নয় সে খুনিও।”

ঐশী যেন পাথর হয়ে গিয়েছে। নাফিস সাহেব বললেন “তুমি এখন বড়দের কথা শুনো। বড়দের কথা শুনলে তোমার ভালোই হবে।” ঐশী চুপ করে রয়েছে।

নাফিস সাহেব আবার বলে উঠলেন “ছেলেটা ভালো ওকে বিয়ে করলে তুমি ভালো থাকবে।”

ঐশী এখনো চুপ। নাফিস সাহেব নোমানকে উদ্দেশ্য করে বলল “তুমি বিয়ে ঠিক করো।”

ঐশী এবার বলে উঠলো “না আব্বু আমি বিয়ে করবোনা করবোনা করবোনা।” বলেই মেঝে থেকে উঠে দৌড়ে রুম থেকে চলে যায়।

ঐশী আবার কল দিলো তামিমকে অনেকবার কল দেওয়ার পরেই কল রিসিভ হলো না। ঐশী আর ভালো লাগছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। আসলেই কি তামিম তার সঙ্গে বেইমানি.. না না কখনোই না। কিন্তু মেয়েটা ঐশীর চোখে ওর আব্বুর আম্মুর চেহারাও ভেসে উঠছে। তারা তো কখনই ওর খারাপ চাইবে না। তারা যা করবে সেটা অবশ্যই তার ভালো ভেবেই করবে। কিন্তু সে যে তামিমকে অনেক ভালোবাসে। তামিমকে না দেখে যে সে একদমই থাকতে পারবেনা। ঐশী হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো।

ঐশীর……

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে