ছোঁয়ার শিহরণ ২য় খন্ড পর্ব-৬৩+৬৪

0
1598

#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফাতিমা_আক্তার_অদ্রি
পর্ব-৬৩

টিয়া যখন বাবার মুখে শুনল তার শিহরণ চাচ্চু নতুন বউ নিয়ে এসেছে তখন থেকেই গাল ফুলিয়ে বসে ছিল। তবে সেটা খুব বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হলো না। নতুন বউ দেখতে যাওয়ার তাগিদ নেই কারো মধ্যেই না দেখতে পেয়ে সে ভীষণ দুঃখ পেল। বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে কোনো হেলদোল না দেখতে পাওয়ায় সে একটা পর্যায়ে কান্না জুড়ে দিল। সেই কান্না যেই সেই কান্না নয়, একেবারে গগণবিদারী চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল সে। অবশেষে আশফাক মেয়েকে কোলে নিয়ে বলল, ‘কাঁদে না মামুণি। আমরা এখনই যাব তোমার নতুন চাচিকে দেখতে।’

আমিরাহ বেশ কতক্ষণ হম্বিতম্বি করলেও সাজগোজ যথাসময়ে শেষ সম্পন্ন করে আশফাকের পেছন পেছন গাড়িতে উঠে বসল।

গন্তব্যে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই টিয়া বাবার কোল থেকে নেমে গেল। তারপরেই দিল ভোঁ দৌড়। আশফাক মেয়েকে দেখে গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আপাত দৃষ্টিতে সুখের সাগরে ভাসমান মনে হওয়া মানুষগুলোও বুকের গহীনে এক সমুদ্র বিষাদ নিয়েও হাসিমুখে ঘুরে বেড়াতে পারে। বাইরের চাকচিক্য কিংবা হাসি নামক মুখোশ তা প্রকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, বিষাদের নীলকে ঢেকে দেয় এক সমুদ্র খুশির চাদরে। যার দরুণ দুঃখী মানুষগুলোর বিষাদের নীলে গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করা হৃৎপিন্ড চারপাশের মানুষগুলোর নিকট অদেখাই রয়ে যায় চিরকাল।

বহ্নিকে দেখেই তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে
টিয়া আদুরে গলায় বলল, ‘আগুন, নতুন চাচি কোথায়?’

বহ্নি টিয়াকে ছোঁয়ার পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘এই তো নতুন চাচি।’

শিহরণ টিয়াকে দেখে বলল, ‘ওরে বাবা, আমাদের টিয়া মণি যে।’

টিয়া শিহরণের কাছে না যেয়ে ছোঁয়ার কাছেই থাকল। শিহরণ মন খারাপ করার ভঙ্গিতে বলল, ‘বাব্বাহ! এক ঝলক দেখেই চাচ্চুকে ভুলে গেছ, টিয়া?’

ছোঁয়া টিয়ার গালে চুমু খেয়ে বলল, ‘তোমার নামটা তো খুব মিষ্টি মামুণি।’

ছোঁয়ার সহাস্যে বলা কথাতে টিয়া খুব খুশি হয়ে গেল। তাই সে শিহরণের সেই কথার উত্তর না দিয়ে গাল ফুলিয়ে বলল, ‘চাচ্চুর সাথে রাগ করেছি আমি। আমাকে না জানিয়েই নতুন চাচিকে নিয়ে এসেছে। কিন্তু চাচি খুব ভালো। খুব মিষ্টিও।’

আমিরাহ এক অদ্ভুত ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাল ছোঁয়ার দিকে। এক মুহূর্তেই টিয়া ছোঁয়ার সাথে এভাবে মিশে যাওয়ায় তার খুব রাগ হলো। সে শিহরণের দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, ‘তো শেষমেশ এই মেয়েটাকে বিয়ে করলে। এই পঙ্গু মেয়েটার জন্য মান্নাতকে বিয়ে করোনি।’

শিহরণ বুঝতে পারল মান্নাতকে বিয়ে না করাতে ভাবির খুব রাগ তার উপর। তবে সে ভাবির রাগকে পাত্তাই দিল না। সবসময় সবকিছুকে পাত্তা দিতে নেই। কারণ কিছু মানুষ আজীবন ভুল করে বেড়ানোর প্রতিজ্ঞায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে। আমিরাহ তাদের মধ্যে একজন।

আশফাক প্রচণ্ড ক্ষোভের সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘অন্তত এখানে তোমার নিজের তামাশা বানিও না।’

আমিরাহের কথা শুনে ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলল। চোখের কোণে অবাধ্য অশ্রুকণা এসে সিক্ত করতে করে দিতে চাইছে। ছোঁয়া প্রাণপণে তা আটকাল। ভেঙ্গে পড়ার মতো কিছুই হয়নি। তাছাড়া মানুষ সব থেকে বেশি কষ্ট পায় আপনজন অবহেলা করলে। আমিরাহ তার আপনজন নয়। তাই তার কথায় কষ্ট পাওয়া বোকামি বৈ কিছুই নয়। এমনই এক অন্তর্দ্বন্দ্বে পড়ে গেল ছোঁয়া। শিহরণ ছোঁয়ার হাত ধরে হালকা চাপ দিয়ে আশ্বস্ত করল। এই আশ্বাসটুকুই তার দরকার ছিল। আর এতে সে নিজেকে খুব দ্রুতই সামলে নিতে পারল।

শিহরণ আশফাককে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘থাক, ভাইয়া। সবার সব কথাকে পাত্তা দিতে হয় না।’

তারপর উৎফুল্ল কণ্ঠে ছোঁয়াকে বলল, ‘এই সেই ভাই। যার কথা তোমাকে বলেছিলাম।’

ছোঁয়া বিস্ময় নিয়ে তাকাল আশফাকের দিকে। আশফাক অবাক বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বলল, ‘আমার কথা আবার কী বলেছিস? আমার ব্যাপারে বলার মতো কিছু আছে না-কি?’

‘কী সব বলো না ভাইয়া?’ শিহরণ গর্বের সাথে বলল, ‘আমার ভাইয়ের ব্যাপারে বলার মতো অসংখ্য বিষয় আছে। এটা তো আমার ব্যর্থতা যে আমি ঠিকমতো কিছুই ব্যক্ত করতে পারি না।’

‘যথেষ্ট হয়েছে। আর অতিরঞ্জিত করার দরকার নেই।’ আশফাক নিজেকে প্রকাশে ভীষণ অনীহা প্রকাশ করল।

______________

রাদিদ নিজেকে খুব কষ্টে সামলে রেখেছে। দু’হাতই মুষ্টিবদ্ধ। দাঁতে দাঁতে চেপে রেখে নিজের রাগকে সংবরণ করার প্রাণপণ চেষ্টা করছে সে। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে সে। আশফাককে দেখার পর থেকেই তার মেজাজ সপ্তমে চড়েছে। আশফাক শিহরণের সাথে কথা বলছে। রাদিদ সেদিকেই অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার ইচ্ছে করছে এখনি লোকটাকে মেরে মাটিতে লুটিয়ে দিতে।

হঠাৎ করেই বহ্নির চোখ গেল রাদিদের উপর। অদ্ভুত দেখাচ্ছে তাকে। ভীষণ রাগান্বিত। কিন্তু রাগের উৎস কী হতে পারে তা সে ভেবে পেল না! তাছাড়া এরকম একটা পরিবেশে রাগ হবেই বা কেন? রাদিদকে সে এরকম দেখেনি কখনও। তাই সে কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল, ‘কী হয়েছে, রাদিদ ভাইয়া?’

এতক্ষণ যাবৎ চোখ-মুখ কুঁচকে রাখা রাদিদ দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে কিছুই হয়নি এমন ভাব করে স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘আমি ঠিক আছি। কিছুই তো হয়নি।’

‘কিছু নিশ্চয়ই হয়েছে।’ বহ্নি জোর গলায় বলল, ‘তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? মনে হচ্ছে কারও উপরে ভীষণ ক্ষেপেছ!’

রাদিদ মুহূর্তেই প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ‘আসলে মাথাটা একটু ধরেছে। অস্থির লাগছে। এক কাপ চা পেতে পারি?’

রাদিদের বলার ভঙ্গি দেখে বহ্নি হেসে ফেলল। বলল, ‘কেন পাবে না? আমি এখনই দিচ্ছি।’

বহ্নি চলে যেতেই রাদিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বিড়বিড় করে নিজেকে প্রবোধ দেবার মতো করে বলল, ‘স্যরি, বহ্নি। তোকে মিথ্যে কথা বলতে হলো।’

__________

সবাই যখন গল্পে মশগল ঠিক তখন অতল বহ্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল বাগানে। বহ্নি তৎপর হয়ে বলল, ‘করছটা কী? বাড়িতে এত মানুষ দেখছ না?’

অতল বহ্নির কথা শুনেও যেন শুনল না। সে বাগানের একটা চেয়ারে বসে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
‘আগুনমণি, আমার কেমন যেন লাগছে!’

‘কেমন লাগছে? খারাপ লাগছে?’ বহ্নি জানতে চাইল, উত্তেজিত হয়ে।

‘কোনোকিছুতে মন বসছে না। কিছুই তো ভালো লাগছে না।’

‘কেন?’

‘শিহরণ বিয়ে করে ফেলেছে। আমারও তো ইচ্ছে করতে পারে, তাই না? তুই বুঝতে পারছিস না?’

‘ওহ্, তাহলে এই সমস্যা।’

‘এটাকে হালকা সমস্যা ভেবে, প্যারাসিটেমল দিয়ে বিদায় করার চিন্তা করিস না কিন্তু।’ অসহায় মুখ করে বলল, অতল।

‘হালকা!’ বহ্নি গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল, ‘তোমার কোনো সমস্যাকে হালকা ভাবার মতো স্পর্ধা কি আমি দেখাতে পারি? এমন গুরুতর ভুল তো আমি করতে পারি না। তাই না?’

‘তুই হালকাই তো ভাবছিস, এঞ্জেল।’ হতাশ গলায় বলল, অতল।

বহ্নি প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলল,’ঠিকমতো পড়াশোনা করো। জবটা হয়ে যাক। তারপর তোমার এঞ্জেলকে তোমার কাছে যাওয়া থেকে কেউ বাধা দিতে পারবে না?’

‘তুই যা যা বলিস তার সবটাই করতে চাই। কিন্তু পারছি না তো।’

‘কেন?’

‘শয়নে-স্বপনে কিংবা জাগরণে নীল পরী এসে ভীষণ জ্বালাতন করে তাই।’

‘সবসময় ফাইজলামি! একটু তো সিরিয়াস হও।’ শান্ত স্বরে বহ্নি বলল,’প্লিজ, এবার এমনভাবে পড়াশোনা করো যেন জবটা হয়ে যায়।’

__________________

রাদিদ যেই সুযোগটা খুঁজেছিল এতক্ষণ ধরে। সেই সুযোগটা শেষমেশ পেয়েই গেল। তার হাত মুষ্টিবদ্ধই আছে এখনও। যেন প্রাণপণে নিজের ক্রোধ, ক্ষোভ আটকে রেখেছে সে।

আশফাক ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র। তার কিছুই ভালো লাগছে না। ভীষণ কষ্টে কাটছে তার প্রতিটি মুহুর্ত। পছন্দের মানুষ সঙ্গী হলে জীবন যতোটা রঙিন হয়, অপছন্দের মানুষ সঙ্গী হলে জীবন ততোটাই রঙহীন হয়ে যায়। ঠিক যেন একটা বিবর্ণ রংধনুর মতো! আকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল তার। তবুও যেন সে কিছুই দেখছে না। পুরো অন্তরীক্ষে জ্বলন্ত সমস্ত নক্ষত্ররাজি যেন তার দিকে তাকিয়ে উপহাস করছে। নক্ষত্রের মিটিমিটি জ্বলতে থাকা যেন সেই উপহাসের নামান্তর।

‘এত বড়ো অন্যায়টা কেন করেছেন আপনি?’

হঠাৎ পেছন থেকে কারও আওয়াজ পেয়ে সে ঘুরে দাঁড়াল। দেখল একটা ছেলে তার দিকে মারমুখো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ। যেন বহুকষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে।

আশফাক দ্বিধান্বিত কণ্ঠে প্রশ্ন করল, ‘তুমি কি আমাকে কিছু বলছ?’

‘এখানে আপনি ছাড়া তো আর কেউ নেই। তাই না?

‘তা নেই। তবে তোমাকে তো আমি চিনতে পারলাম না।’

‘মানুষ অন্যের উপরে অন্যায় করে তা ভুলে যেতেই ভালোবাসে। কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।’

‘ঠিক বুঝলাম না। পরিষ্কার করে বলো তো।’

রাদিদ তার পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল। তারপর গ্যালারি থেকে একটা ছবি বের করে আশফাকের দিকে এগিয়ে দিল। আশফাক রাদিদের হাত থেকে মোবাইলটা প্রায় ছিনিয়ে নিল। সেই মুখ, সেই চোখ আবারও তার সামনে আসবে তা সে কখনও ভাবেনি। নীলার ছবি দেখে আশফাকের চোখের কোণে জল জমে গেল। সে ছবিটা দেখে ঘোরের মধ্যে চলে গেল। তারপর আচমকা মোবাইলটাকে বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ বুকের সাথে চেপে ধরে রাখল। এসব দেখে রাদিদের গা জ্বলে যাচ্ছে। সে বলল,’ এসব নাটক বন্ধ করুন তো। আপনার নাটকের কারণে আমার বোনের আজ করুণ অবস্থা।’

আশফাক একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকাল তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটির দিকে। তার গায়ে অ্যাশ কালারের শার্ট, ব্লু জিন্স। শার্টের হাতা ফোল্ড করে রাখা, বুকের সামনে তিনটে বোতাম খুলে রাখা। তবে চোখ দুটোতে সে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড দেখতে পাচ্ছে। যেন ধপ করে সেই অগ্নি জ্বলে উঠে ভস্ম করে দিবে সবকিছু।

আশফাক মনে করার চেষ্টা করছে তার অতীতের সমস্ত স্মৃতি। চোখ বন্ধ করে ভাবল সে কিছুক্ষণ। তারপর মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল, ‘নীলা তোমার কি হয়?’

রাদিদ মুখেতাচ্ছিল্যের হাসি দেখা দিল। সে তাচ্ছিল্যের সুরেই বলল,’নামটা ভুলেননি তাহলে? পুরো মানষটাকেই তো ভুলে গেছেন নাম মনে রাখলেন কেন?’

‘হেঁয়ালি বাদ দিয়ে আমার কথার উত্তর দাও।’

‘আমার বোন হয়। এবার তো বলুন তাদের ছেড়ে নতুন বিয়ে করে সুখে শান্তিতে থাকার কারণ।’

‘তুমি কি রাদিদ? নীলার সেই পিচ্চি?’

রাদিদ অনীহা সত্ত্বেও বলল, ‘হুম, আমিই রাদিদ।’

আশফাক ডুকরে কেঁদে ফেলল। সহসা জড়িয়ে ধরল রাদিদকে। এই রকম একজন লোক এভাবে কাঁদতে পারে তা জানা ছিল না রাদিদের। সে না চাইতেও দূরে সরে গেল না।

আশফাক রুদ্ধশ্বাসে বলল, ‘নীলার জন্য এখনও আমার মন কাঁদে। ও এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তা আমি ভাবিনি, রাদিদ। তোমরা সবাই কেমন আছ? আম্মার স্বাস্থ্য কেমন আছে?’

রাদিদের রাগ যেন হুট করেই আবার বেড়ে গেল। সে চেঁচিয়ে বলল, ‘আপনি আপনার এইসব সস্তা নাটক বন্ধ করুন তো। আমাকে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।’

রাদিদ এতক্ষণ যাবৎ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। আচমকা সে আশফাকের বলা কথা খেয়াল করে বলল, ‘আপু আমাদের ছেড়ে চলে গেছে মানে কী বলতে চাইছেন আপনি?’

আশফাক রাদিদকে ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘নীলার এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার কথা বলছি। আমি যখন তোমাদের খোঁজ করলাম তখনই জানতে পেরেছি। তবুও তোমাদের অনেক খুঁজেছি কিন্তু…!’

‘কীসব আবোল তাবোল বকছেন?’

‘কেন?’

‘আপু বেঁচে আছে।’
এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিল আশফাককে পাথরের মূর্তির ন্যায় অবিচল করে দেওয়ার জন্য।

বেশ অনেকক্ষণ অতিবাহিত হবার পরে সে বলল, ‘নীলা বেঁচে আছে?’

‘আপু বেঁচে আছে। এখনও আপনার পথ চেয়ে অপেক্ষা করছে সে। আর পিউ সে তো আপনার জন্য প্রতিটা দিন চিঠি লিখে। আপনার একটা মাত্র ছবি নিয়ে কত বায়না যে করে। অথচ আপনি তো দিব্যি ভালো আছেন। নতুন বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করছেন।’

‘আমাদের মেয়ে আছে!’ আশফাক বিস্ময়াভূত হয়ে বললে, ‘পিউ, পিউ আমার মেয়ে?’

‘এখন তো ভালোবাসার অভিনয় বন্ধ করুন। এখানে তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই। নিজে আসল রূপটা দেখাতে কেন ভয় পাচ্ছেন? কী হারানোর ভয় পাচ্ছেন। অর্থ-সম্পদ না-কি মান-সম্মান?’

আশফাক এবার সবকিছু বুঝতে পেরে বহুকষ্টে বলল, ‘কোনোটার ভয়ই আমি পাচ্ছি না। আমার বাবা-মা ষড়যন্ত্র করে আমাদের আলাদা করে দিয়েছে।’

তারপর হুট করেই রাদিদের হাত ধরে ফেলল আশফাক। ব্যথাতুর গলায় বলল, ‘আমাকে নিয়ে যাবে আমার নীলা আর পিউর কাছে। প্লিজ, আমি ওকে সবকিছু জানাতে চাই।’

‘জানিয়ে কি হবে বলুন তো? আপনি কি আমার বোনকে নিজের পরিচয় দিতে পারবেন? তাকে
সম্মান দিতে পারবেন? পিউকে বাবার পরিচয় দিতে পারবেন?’ রাদিদে কণ্ঠ উপচে পড়ছে এক সমুদ্র কষ্ট।

আশফাক রাদিদের কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘সবকিছুই ফিরিয়ে দিতে পারব শুধু হারানো সময়টুকু ছাড়া। আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি সবটা ঠিক করে দিব।’

_________

সবাই যখন নিজ গন্তব্যে চলে যাচ্ছিল ঠিক তখন প্রিয় হুট করে সাইফের সামনে এসে দাঁড়াল। আচমকা এভাবে সামনে আসাতে সাইফ দু এক কদম পিছনে চলে গেল। প্রিয় হাঁপাতে হাঁপাতে অবাক বিস্ময়ে বলল, ‘আপনি প্রিন্স অফ ওয়েলস না?’

সাইফ এবার আরও অবাক হয়ে গেল। তোতলাতে তোতলাতে বলল, ‘কী?’

‘বাংলা বুঝেন না?’

‘কেন বুঝব না?’

‘তাহলে আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেন?’ প্রিয় বহু কষ্টে হাসি চেপে রেখে বলল, ‘আপনি কি প্রিন্স অফ ওয়েলস?’

সাইফ এবার প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে গেল। বলল, ‘সরেন তো। আপনি একটা পাগল। পাগলের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না।’

প্রিয় রেগেমেগে বলল,’কী! আমি পাগল?’

‘তা নয়তো কী?’

‘আমি বড়ো জোর পাগলি হতে পারি। পাগল কী করে হই বলুন তো?’ বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল প্রিয়।

সাইফ এবার হেসে ফেলল। কণ্ঠস্বর নম্র করে বলল, ‘আচ্ছা, বলুন কী বলতে এসেছেন?’

‘আপনার ধারণা ঠিক।’ প্রিয় কথাটা বলেই আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। হুট করেই সাইফের চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল।

সাইফকে এবার আরও বেশি বিভ্রান্ত দেখাল। সে ভাবতেই থাকল। এই মেয়েটাই তাকে প্রপোজ করেছিল! তার চিনতে ভুল হয়নি।
_____________________

#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফাতিমা_আক্তার_অদ্রি
পর্ব-৬৪

এত বছর পরে আশফাককে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীলা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। তার দম বন্ধ অনুভূতি হচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এক পশলা বৃষ্টির পরশ পেলে যেমন প্রকৃতির সতেজ হতে কিছু সময় লাগে নীলার ও বেশ কিছুক্ষণ সময় নেবে আশফাককে সামনে দেখার পর। এই বিষয়টা আশফাকের কাছে অজানা নয়। তাই সে বেশ কিছুক্ষণ নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নীলার ঘোর কাটার অপেক্ষা করতে লাগল। অনেক্ষণ পরে সে স্নিগ্ধ শীতল স্বরে বলল, ‘নীলু, আমি এসেছি।’

এতক্ষণ পরে নীলার ঘোর কাটল। আশফাক দু’হাত বাড়িয়ে দিল। নীলা আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করল না। সে ছুটে এসে আছড়ে পড়ল আশফাকের প্রশস্ত বুকে। ব্যস, শুরু হয়ে গেল বিরহের তপ্ত স্রোতের ধারা, যা এতদিন রুদ্ধ ছিল, তার আজ বয়ে যেতে নেই কোনো বাধা।

সময় থেমে থাকে না, বয়ে যায় নিজ ছন্দে, নিজ প্রবাহে। সময়ের দ্রুততা কিংবা ধীরগামীতা সবটাই মানুষের অনুভূতি কেবল। সুখের অনুভূতিটুকু মানুষ সর্বক্ষণ অনুভব করতে চায় বিধায় তা দ্রুত বয়ে যায় বলেই ধারণা করে। আর দুঃখ কিংবা কষ্টানুভূতির সময়টুকু মানুষ যতটা দ্রুত সম্ভব কাটিয়ে উঠতে চায় বিধায় তা ধীরে কাটে বলেই ধারণা করে। অথচ দ্রুততা কিংবা ধীরতায় সময়ের কোনো হাত নেই। সবটাই অনুভূতিপ্রবণ মানুষের ধারণা।

আশফাক তার বলিষ্ঠ বাহু দ্বারা আবদ্ধ করে নিল নীলাকে। নীলা তার পরম আশ্রয় খুঁজে পেল অবশেষে। অশ্রুরও বাঁধ ভেঙ্গে গেছে, এই পরম সুযোগ লাভের কারণে। বেশ কিছুক্ষণ পরে নীলা দূরে সরে দাঁড়াল। ব্যাথাতুর কণ্ঠে বলল, ‘কোথায় ছিলে এতদিন?’

আশফাক নীলার দু’বাহু ধরে বলল, ‘আমি জানতাম না তুমি আছ, নীলু! আমাকে মাফ করে দাও।’

‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’

‘বলব তোমাকে সবকিছু। আগে আমি আমার মেয়েকে দেখতে চাই।’

ঠিক তখনই তিড়িং বিড়িং করে নাচতে নাচতে পিউ ঘরে ঢুকল। ঘরের মধ্যে অপরিচিত মানুষ দেখে মায়ের পেছনে লুকিয়ে বলল, ‘মা, এই আঙ্কেলটা কে?’

আশফাক ইশারায় পিউকে কাছে ডাকল। পিউ এক বিন্দু পরিমাণও নড়ল না। নীলা বলল, ‘তোমার বাবা, পিউ। বাবা ডাকছে তো, যাও।’

পিউ ভীষণ অবাক হলো। সে ঘরে ঢোকার আগে একটা দামী কার দেখে এসেছে। তাই সে বলে বসল, ‘বাইরের গাড়িটা কি আপনার?’

আশফাক মেয়ের বাচ্চামো দেখে হাসল। বলল, ‘হ্যাঁ, মামুণি।’

‘ওটা আনতেই কি এত দেরি হয়েছে, বাবা?’

আশফাক মাথা নাড়ল। মৃদুস্বরে বলল, ‘হুম।’

পিউর চোখে-মুখে খুশি উপচে পড়ছে। সে তৎক্ষণাৎ দৌড়ে বাবার কোলে উঠল। বলল, ‘বাবা, আমরা কি প্রতিদিন গাড়িতে চড়ব? আমাকে তুমি প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাবে তো?’

পিউর ছেলেমানুষিতে আশফাকের চোখ জোড়া অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। বলল, ‘হ্যাঁ, মামুণি। আমিই প্রতিদিন তোমাকে স্কুলে নিয়ে যাব।’

পিউ মাথা নিচু করে বলল, ‘তাহলে এখন থেকে আমাকে কেউ বলবে না আমার বাবা নেই।’

পিউর এমন কথা শুনে আশফাক পিউকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,’না, আর কেউই বলবে না। বাবা, চলে এসেছি তো।’

রাদিদ এতক্ষণে ঘরে ঢুকল। নীলা বলল, ‘আমি জানতাম তুই একদিন না একদিন খুঁজে পাবি ওকে। এবার মিলল তো।’

বোনের আবেগ ভরা কণ্ঠে উপচে পড়া আনন্দ দেখে রাদিদ খুশি হলো কি না তা বোঝা গেল না। তাকে নির্বিকার দেখা গেল। আবির আর সাবরিনা অবাক হয়ে দেখছে। ফাইজা বেগম আশফাককে দেখে ক্রোধান্বিত হয়ে গেলেন। রাদিদ তার মাকে সামলে নিল। শান্ত স্বরে বলল, ‘আগে সবটা শুনো, আম্মা।’

নীলা ব্যাকুল হয়ে জানতে চাইল, ‘এখন কি আমাকে বলবে সবকিছু ?’

আশফাক বলল, ‘তোমার কথা বাবা-মাকে জানানোর পরে তারা না করে দিল। তখন আমি জেদের বশেই তোমাকে বিয়ে করে ফেলি। তারপর বাবা-মাকে আমাদের বিয়ের কথা জানালামও। আমি ভেবেছিলাম, বিয়ে করে ফেললে বাবা-মা আর কোনো আপত্তি করবে না। কিন্তু তাদের লোভটা ছিল উচ্চতর পর্যায়ের। তারা আমাকে সাফ জানিয়ে দিল তোমাকে মেনে নেবে না বলে। আমিরাহ তখন আমার জন্য পাগল প্রায়। ওর ফ্যামিলি আমাদের আত্মীয়ের মধ্যেই পড়ে। ধনী ঘরের মেয়ে হওয়ায় বাবা-মা আমাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন আমাকে আমিরাহকেই বিয়ে করতে হবে। কিন্তু বাবা-মায়ের কথাতে আমি কোনোভাবেই রাজী হলাম না। অবশেষে বাবা-মা দুজনেই আমার সাথে একটা গেম খেলল।’ একটু থেমে আশফাক ব্যাঙ্গাত্মক হাসল, ‘আমি বিশ্বাস করে ফেললাম। আমার লোভী বাবা-মাকে বিশ্বাস করাটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়াল। বাবা আমাকে বলল তারা তোমাকে মেনে নিবে। তবে কিছুদিন পরে একেবারে অনুষ্ঠান করে ঘরে তুলতে চায়। বাবা আমাকে এটাও বলেছিল যে, তারা দুজনেই তোমার বাসায় আসবে। তবে তার আগে আমাকে একটা প্রজেক্টের জন্য দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। আমিও বোকা বনে গেলাম। আপনজনদের দেওয়া ধোঁকা মানুষ ধরতে পারে না, বিশ্বাসের স্তম্ভ সেখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়। এরপরের ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে গেল। আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। বাবা এতোটাই পাকাপোক্ত প্ল্যান করেছিলেন যে আমি ফ্লাইটে ওঠার আগে তোমার সাথে দেখাও করতে পারলাম না। তোমাকে জানাতেও পারলাম না কিছু। বাইরে থেকে আসার পরে বাবা আমাকে জানাল তুমি মারা গেছ এক্সিডেন্টে। আর তোমার পরিবার অন্য কোথাও চলে গেছে। আমি বাবার কথা বিশ্বাস করতে চাইনি। তোমাদের অনেক খুঁজেছিলাম, কিন্তু পাইনি। তোমরা ছিলে না। আশেপাশের সবার মুখ বন্ধ করে দিল বাবা। আমিও এক সময় বিশ্বাস করে বসলাম, বাবার সজানো ঘটনা। যাদের কাছ থেকে আমি তোমার সম্পর্ক জানতে পারতাম তাদের সবার মুখ টাকা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলেন।’

নীলার চোখে পানি। সে ব্যাথাতুর কণ্ঠে বলল, ‘এর পরের ঘটনা আমি বলছি।’

সবাই কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে। নীলা বলতে শুরু করল, ‘বাবার অফিসে আগুন লেগে যাওয়ার খবর পেলাম মাঝরাতে। কিন্তু সেদিনই অফিসে পৌঁছানোর আগেই বাবার এক্সিডেন্ট হলো। খবর পেয়ে আমরা সবাই ছুটে গেলাম। বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করালেও বাবা আর ফিরলেন না আমাদের মাঝে।’ নীলা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল। রাদিদের একটা হাত শক্ত করে ধরে বলল, ‘তারপর থেকে আমার এই ছোট্ট ভাইটা তার জীবনের সমস্ত আনন্দ বিসর্জন দিয়ে আমাদের পরিবারের হাল ধরেছে। আমরা আশ্রয় নিলাম গ্রামের জরাজীর্ণ এই বিল্ডিং এ। এখানেও চাচা-চাচীরা হস্তক্ষেপ করেছিল। যার কারণে আমরা শুধুই উপরের এই ফ্লোরটাতে কোনোরকমে থাকছি। অন্য ফ্লোর চাচা দখল করে ফেলেছে। অথচ এইটাতে তাদের কোনো অবদান নেই। সমস্ত কিছু আমার বাবার কষ্টের উপার্জনে তৈরী। তবুও আমরা তা থেকে বঞ্চিত।’

ফাইজা বেগম নিঃশব্দে কাঁদছেন, কাঁদছে ছোট্ট পিউও। আশফাকের চোখ জোড়াও সিক্ত হয়ে উঠছে বারেবারে। আবির আর সাবরিনার চোখে কেবলই বিস্ময়, সেখানে অনুতাপ আছে কি না তা বোঝার উপায় নেই। রাদিদ মায়ের একটা হাত শক্ত করে ধরে আছে।

নীলার চোখের পানি মুছে নিয়ে পুনরায় বলতে শুরু করল, ‘সবার জীবনই ঠিক আছে, শুধু আমার মায়ের বড়ো খোকার জীবনটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। আবির, সাবরিনা ওরা আমাদের নিজের রক্তের হয়েও আমার ভাইটার কষ্ট কোনোদিন বুঝল না। সবসময় ওকে আর আমাকে অবহেলা করেছে, আবহেলা করেছে আমার ছোট্ট মেয়েটাকেও। বন্ধুদের সামনে ওরা আমাদের পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। তোমাকে খুঁজে না পাওয়ায় আমিও দুর্বল ছিলাম। নয়তো ওরা আমাদের কী পরিচয় দেবে? আমি নিজেই ওদের ভাই-বোন হিসেবে অস্বীকার করি। ওরা কোনোভাবেই আমাদের বাবা-মায়ের সন্তান হতে পারে না। রাদিদের বন্ধুরা সবাই কত ভালো ভার্সিটিতে পড়াশুনা করে কত শত ডিগ্রি অর্জন করেছে। অথচ আমার ভাইটা কোনোমতে একটা ডিগ্রি কলেজে পড়ে পড়াশুনা শেষ করল, তাও আমার আর মায়ের জোরাজুরিতে। এই রাদিদকে তার বন্ধুরা কেউ পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে না। অথচ তার নিজের ভাইবোন লজ্জা পায়।’ নীলা হাসল। তাচ্ছিল্য ভরা সেই হাসি।

রাদিদের চোখেও জল এলো। সে অশ্রু সংবরণ করে বিরক্ত কণ্ঠে বলল, ‘আপা, এসব কী শুরু করেছিস? এসবকিছুই তোর ভুল ধারণা। বাদ দে তো ওসব কথা। ওরা দুজন আমাদেরই ভাই-বোন তা ভুলে গেলে চলবে না।’

নীলা বলল, ‘বাদ তো দেবই।’ আবির আর সাবরিনার দিকে জহুরি চোখে তাকিয়ে তাদের অভিব্যক্তি পরখ করে নীলা আবারও বলতে শুরু করল, ‘তবে ওদের কাছে একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই। একদিন তোরা আমার এই ভাইটার পরিচয় নিজেরা যেচেপড়ে সবার কাছে বলে বেড়াবি। কথাটা মনে রাখিস।’

রাদিদ আশফাককে ইশারা করল। নীলা তা দেখে বলল,’তোরা ইশারায় কী বলছিস?’

রাদিদ পিউকে কোলে তুলে নিয়ে বলল, ‘ভাইয়া তোকে সব বলবে। উনাকে তোর রুমে নিয়ে যা। আমি আর পিউ বাইরে থেকে ঘুরে আসছি।’

পিউ কান্নার সুরে বলল, ‘আমি বাবার কাছে থাকতে চাই বড়ো মামা।’

রাদিদ মন খারাপের সুরে বলল,’বাবাকে পেয়ে মামাকে ভুলে গেলি, পিউ?’

আশফাক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘আজকে আমি সব বলব তোমাকে। তুমি নেই জানার পরে বাবা-মা আমাকে বাধ্য করলেন আমিরাহকে বিয়ে করার জন্য।’

নীলা বিস্ময় নিয়ে বলল,’তুমি বিয়ে করেছ?’

আশফাক মাথা নেড়ে বলল,’হুম, আমিরাহকে বিয়ে করতে হয়েছে। আর আমাদের একটা ছোট্ট মেয়েও আছে। ওর নাম টিয়া।’

নীলার সেদিনের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেল। সে ধপাস করে বিছানায় বসে পড়ল। সে ব্যাথাতুর কণ্ঠে আক্ষেপ করে বলল, ‘এখন কী হবে?’

আশফাক গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘এবার সবকিছুই ঠিক করে দেব আমি। এখন আর কোনো পিছুটান নেই। আমরা একসাথে থাকব। তবে তার আগে আমাকে কিছু বিষয় মীমাংসা করতে হবে।’

আশফাকের দেওয়া আশ্বাস পেয়ে নীলার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠল। বলল, ‘সত্যি বলছ?’

আশফাক বলল, ‘সত্যি বলছি। তবে আমাকে একটা কথা দিতে হবে তোমার।’

‘কী কথা?’

‘পিউকে যেমন ভালোবাসো ঠিক তেমনিভাবেই টিয়াকেও ভালোবাসতে হবে। মেয়েটা জানেই না মায়ের ভালোবাসা কী! ওর মা ওকে ভালোবাসে না।
পারবে না আমার ছোট্ট মেয়েটাকে মায়ের ভালোবাসা দিতে?’

নীলা মাথা নেড়ে বলল, ‘পারব। তুমি পাশে থাকলে আমি সব পারব।’

নীলার সম্মতিতে আশফাক স্বস্তি অনুভব করল। এতদিন ধরে বুকের উপরে চেপে থাকা পাথরটা সরে গেল। হয়তো তার জীবনে শুভদিন আসছে…।

_____________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে