#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফতিমা_আক্তার_অদ্রি
পর্ব-২৬
রাতেও মায়ের হাতের রান্না খেয়েছে রাদিদসহ বাড়ির সকলে। মায়ের হাতের রান্না খেয়ে সে বহুদিন পরে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছে। মা অসুস্থ তাই সে সত্যিই চায় না মা রান্না করুক। কিন্তু মনে প্রাণে সে মায়ের রান্নাকে ভীষণ মিস করে। প্রতিটি সন্তানই তার মায়ের হাতের রান্না মিস করে। মায়ের হাতে তৈরী খাবারের স্বাদ, গন্ধ কখনোই ভুলার নয়। আর মা যাই রাঁধুক না কেন তা সবসময় অমৃত তুল্য হয়ে থাকে। এই যেমন আজ রাদিদের মনে হলো সে অমৃত খেয়েছে। এখনও স্বাদ জিহ্বাতে লেগে আছে। আজ অনেক দিন পরে অতীতের ধুলো পড়া মোটা স্তরের বর্তমানের মরচে পড়া জীবনের সামান্য স্তর যেন কিছুটা পরিষ্কার হলো।
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে, কাপালের উপর ডান হাতটা রেখে ভাবনায় মশগুল ছিল সে। হঠাৎ করেই পিউর ‘বড়ো মামা’ বলে চিৎকার শুনতেই কপাল থেকে হাতটা নামিয়ে দরজার দিকে তাকাল। রাদিদ কিছু বুঝে উঠার আগেই পিউ হুড়মুড় করে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল রাদিদের উপর। রাদিদ ধড়ফড়িয়ে উঠল। পেটের উপর ব্যথাও পেয়েছে সে। কিন্তু তা পিউকে বুঝতে দিল না। আদুরে গলায় পিউকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলল,’এটা কী হলো, চ্যাম্প? এভাবে কি কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ে? একটু হলেই তো ব্যথা পেতে।’
‘একটুও ব্যথা পাইনি আমি।’ পিউকে একটু চিন্তিত দেখাল। পরক্ষণেই বলল, ‘তুমি ব্যথা পেয়েছ, বড়ো মামা?’
রাদিদ পিউকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘একটুও না, চ্যাম্প।’
‘সত্যি বলছ তো?’ পিউ সন্দিগ্ধ কণ্ঠে জানতে চাইল।
‘একদম সত্যি।’ রাদিদ পিউর নাকটা টেনে দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা, চ্যাম্প! তুমি আজ এত রাত অবধি জেগে আছ কেন?’
‘ঘুম আসছে না তো।’ ঠোঁট উল্টে আদুরে ভঙ্গিতে বলল, পিউ।
‘মা কোথায়?’ রাদিদ পিউর এলোমেলো চুল ঠিক করতে করতে প্রশ্ন করল।
‘মা তো কবেই ঘুমিয়ে পড়েছে।’ পিউ হাত নেড়ে নেড়ে হতাশ ভঙ্গিতে বলল।
‘তাহলে তুমি কীভাবে এলে?’ রাদিদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল পিউর দিকে।
পিউ নিজের মুখটা রাদিদের কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘আমি চুপিচুপি দরজা খুলে চলে এসেছি।’
‘এটা তো ভারি অন্যায়।’ রাদিদ কপট রাগ দেখাল। পরক্ষণেই আবার বলল, ‘তা কেন এসেছ চুপিচুপি? কারণটা কি জানতে পারি?’
‘আগে বলো, তুমি বকবে না তো?’ পিউ একটা হাত এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘প্রমিস করো।’
‘বকা দেবার মতো কোনো কথা কি?’
‘বলো না বকবে না তো?’ পিউ অধৈর্য গলায় বলল।
‘আচ্ছা, চ্যাম্প! বকব না। এবার তো বলো কী বলতে এসেছ এত রাতে এসেছ?’
‘আগে প্রমিস করো।’ পিউ একটা হাত এগিয়ে দিয়ে পুনরায় বলল।
‘আচ্ছা, প্রমিস করলাম।’ রাদিদ অগত্যা পিউর হাতে হাত রাখল শেষমেশ।
‘আচ্ছা, বড়ো মামা! আমার বাবা কোথায়?’ পিউ চোখদুটো পিটপিট করে রাদিদের দিকে তাকিয়ে করুণ স্বরে জানতে চাইল।
রাদিদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। এই প্রশ্নটা পিউর মাথায় আসাটা অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয় কিন্তু রাদিদ কী জবাব দেবে? তার কাছে তো কোনো উত্তর নেই। নিজেকে খুব আসহায় মনে হচ্ছে তার।
পিউ রাদিদের হাত ঝাঁকুনি দিতে দিতে পুনরায় প্রশ্ন করল,’বলো না বড়ো মামা, বাবা কোথায়? বাবা দেখতে কেমন?’
‘পিউ! কেউ কিছু বলেছে বাবাকে নিয়ে?’
পিউ মাথা নিচু করে ফেলল। রাদিদ তার মুখটা এক হাত দিয়ে তুলতেই দেখতে পেল পিউর চোখে জল।
‘কাঁদছে কেন আমার চ্যাম্প? পিউর চোখে এরকম জল একদম ভালো লাগে না। এবার চ্যাম্পের জন্য অনেক চকলেট আনব। ঠিক আছে?’ রাদিদ প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করল।
পিউর কান্নার দমক এবার বেড়ে গেল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল সে। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘না! পিউর চকলেট চায় না, পিউর বাবা চায়।’
রাদিদ বাকরুদ্ধ । পিউকে জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘বাবা পরীর দেশে গেছে, পিউ তো পরীর মতো দেখতে কিন্তু পিউর কোনো ডানা নেই। বাবা তার পরীর মতো দেখতে মেয়ের জন্য ডানা নিয়ে আসবে।’
‘সত্যি?’ আহ্লাদী গলায় বলল, পিউ।
‘একদম সত্যি।’ রাদিদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। এবারের মতো বাঁচাতে সে নিজে রিল্যাক্সড ফিল করছে। তবে এরকম আর কত দিন? এই প্রশ্নটাই তার মাথাতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
‘তাহলে কবে আসবে বাবা?’
‘খুব তাড়াতাড়ি।’
পিউ ঘুমিয়ে পড়াতে রাদিদ তার বিছানাতেই শুইয়ে দিল তাকে। আগের মতো করেই সে নিজেও শুয়ে পড়ল। তার গলার কাছটাতে কাঁটার মতো কিছু একটা বিঁধছে। কী সেটা? বাচ্চা মেয়েটার মনে এত কষ্ট! যদি রাদিদের এমন কোনো জাদু জানা থাকত, যা দিয়ে সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করা যায় । তবে সে পিউর সবগুলো ইচ্ছেকেই আগে পূর্ণ করে দিত।
এসব আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতেই তার মনে পড়ল সে মোবাইলটা চেক করেনি দুদিন যাবৎ। সেদিন কেউ একজন মেসেজ পাঠিয়েছে তাও দেখা হয়নি। তাই শোয়া থেকে উঠে সে ওয়্যারড্রবের ওপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে তার রুমের সাথে লাগোয়া ছোট্ট বারান্দাটাতে গিয়ে বসল । আজকের বাতাসটা গায়ে লাগতেই কেমন শীত শীত লাগছে। একদম শরীরের চামড়াতে গিয়ে আঁচড় কাটছে রাতের শীতল সমীরণ। তবে রাদিদের এতে মন্দ লাগছে না বরং বেশ ভালোই লাগছে।
মোবাইলের ম্যাসেজ বক্সটা খুলতেই দেখল বেশ কয়েকটা মেসেজ জমা হয়েছে। কলও এসেছে কয়েকটা। মেসেজের অধিকাংশই নীরার কাছ থেকে এসেছে। কলও সেইম, নীরাই করেছে। ফিডব্যাক না পেয়েই কল করেছে, তা বুঝতে রাদিদের কষ্ট হলো না। এক পর্যায়ে সে মেসেজগুলো পড়তে শুরু করল।
জন্মদিনের উইশ করা মেসেজ এসেছে একটা। কিন্তু নাম্বারটা অপরিচিত। আজ তার জন্মদিন? তার এই ব্যাপারে কোনো খেয়ালই ছিল না। এই জন্য মা এত কষ্ট করে তার প্রিয় সব খাবার রেঁধেছে! অপরিচিত নাম্বারটা কার তা জানার জন্য কৌতূহল হলো না রাদিদের। সে নীরার পাঠানো সবগুলো মেসেজ পড়ল এক নাগাড়ে। সব মেসেজের সারমর্ম হলো নীরা বহ্নির সাথে নিজ দায়িত্বে দেখা করে তার নাম্বার নিয়েছে এবং একদিন তাকে কল করে নিজের পরিচয়টাও দিয়েছে। রাদিদ মনে মনে বলল, ‘কেন যে এই নীরাটা এসব করছে! সবকিছুই অযথা। শুধু শুধুই নিজের সময় নষ্ট করছে মেয়েটা।’
এরপর অপরিচিত নাম্বারটা ওপেন করতেই সেই নাম্বার থেকে পাঠানো মেসেজটা পড়তে শুরু করল রাদিদ।
ব্যর্থতা নামক শব্দটা কখনো না আসুক,
সফলতা নামক শব্দটা তোমাকে ঘিরে রাখুক।
তোমার মুখের প্রাণোচ্ছল হাসিটা রেখো;
আর কিছু রাখো আর না রাখো
এই হাসিটাই যে তোমার বিশেষত্ব।
তোমার জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে
আনন্দের ঝলকানি যেন থাকে ভাঁজে ভাঁজে।
এটাই কামনা, এটাই চাওয়া, এটাই প্রার্থনা।
শুভ জন্মদিন 🎂
ইতি
তোমার কেউ না।
বি.দ্র. আমি কি কখনও তোমাকে বলেছি যে তুমি হাসলে তোমার চোখও হাসে? যদি বলে থাকি তবে ভুল বলেছি। এখন তোমার চোখ হাসে না, কারণ তুমিই তো হাসো না। কী ভেবেছ? তোমাকে হাসতে বলব? বলব না। আমি এখন হস্তক্ষেপ করা ছেড়ে দিয়েছি। তোমরা তো আমায় আপন ভাব না তাহলে আমি কেন ভাবব?
এই ক্ষুদে বার্তায় কিছু তো ছিল। যা রাদিদের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসির কারণ হয়ে গেল মুহূর্তেই।
রাদিদ মনে মনে বলল, ‘ ইতি তোমার কেউ না কে বলেছে? ইতি তোমার সবকিছু হবে কথাটা।’
আমার শহরটা লণ্ডভণ্ড
এই শহরে আসতে বারণ
অট্টালিকায় থাকা রাজকন্যার।
আমার শহরে ছড়িয়ে থাকা হারানো বিজ্ঞপ্তি
শুধু পাগলাটে খ্যাপাটে বাতাসে উড়ে বেড়ায়
শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ;
হারিয়ে যাওয়া মানুষটার খোঁজ মেলে না।
এই এলোমেলো, অগোছালো শহরে
পরীদের আসতে বারণ
আমার শহরেই আমি একাই আছি বেশ।
রাদিদ এই কবিতা লিখে ফেলল যেন ঘোরের বশে। লিখে ফেলার পরেই আচমকা ভাবতে থাকল, ‘আমি এটা কেন লিখলাম?’
ভাবুক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ। কতক্ষণ কে জানে? উদাস নয়ন জোড়া শুধু হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে কাঙ্ক্ষিত মানুষকে। হঠাৎ ভুলবশত হাতের চাপ লাগল মেসেজ অপশনের সেন্ড বাটনে। ব্যস, রচিত কবিতাখানা নিজ গন্তব্যে পৌঁছে গেল মুহূর্তেই।
_______________________________
অতল ঘরে এসে পৌঁছাল কেবল। দুইবার ঘরের বেল চাপতেই মেহেরুন নাহার এসে দরজা খুলে দিলেন। পাশাপাশি এটা ওটা প্রশ্ন করতেই আছেন। অতলকে কোনো কথার উত্তর না দিতে দেখে তিনি শেষমেশ বললেন, ‘ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি খাবার দিচ্ছি।’
অতল বেসিন থেকেই মুখে পানির ঝাপটা দিলো। ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ল। মেহেরুন নাহার বললেন, ‘একটু বোস। আমি খাবারটা গরম করে দিচ্ছি।’
আশরাফ হোসেন হঠাৎ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলেন। তার চেহারায় স্পষ্ট ক্রোধের ছাপ। অতল তা দেখেই চোখ নামিয়ে নিল।
‘এত রাত পর্যন্ত কি বাইরে থাকে কোনো সভ্য পরিবারের ছেলে?’ আশরাফ হোসেন উত্তেজিত গলায় বললেন।
অতল মাথা নিচু করে আছে। কী বলবে সে? তার তো বলার কিচ্ছু নেই। কেউ শোনার নেই, তাই বলারও নেই।
‘কী হলো?’ আশরাফ হোসেন বজ্রকণ্ঠে জানতে চাইলেন,’কথা বলছ না কেন? দিন দিন বেয়াড়া হয়ে উঠছ শুধু। এখনও একটা চাকরি পর্যন্ত যোগাড় করতে পারলে না। সারাদিন যে কি কি করে বেড়াও তা তো আমার মুখে আনতেও লজ্জা লাগছে।’
অতলের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেছে এবার। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর কণ্ঠস্বর যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখেই সে প্রশ্ন করল, ‘আমি কী করেছি বাবা?’
‘কী করেছ?’ গগণবিদারী চিৎকার দিলেন আশরাফ হোসেন। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন, ‘কোনো কাজ তো তোমার দ্বারা হয় না। আবার মুখে মুখে তর্ক করছ! বড়োদের নূন্যতম রেসপেক্ট দেবার জ্ঞানটুকুও কি নেই তোমার?’
‘আমি কী করেছি সেটা তো একবার বলেন?’ অতল অসহায় মুখ করে করুণ স্বরে জানতে চাইল।
‘তুমি আসলেই আমার পরিবারের জন্য একটা ব্যাধি। সংক্রামক ব্যধি । তোমার থেকে কার মধ্যে যে ছড়াবে সেই চিন্তায় রাতে আমার ঘুম আসে না।’ আশরাফ হোসেন রাগে গজগজ করতে করতে বললেন।
অতলের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। মাত্র খেতে বসেছিল সে। খাবার এখনও বাড়া হয়নি। কিন্তু এখন আর খাবার গলা দিয়ে নামবে না। আজ রাতে না খেয়েই থাকতে হবে তা বেশ বুঝতে পারছে সে।
‘কী শুরু করেছেন আপনি? মাত্র তো খেতে বসেছে ছেলেটা। খাওয়াটা অন্তত শেষ করুক।’ মেহেরুন নাহার ভাতের প্লেটটা অতলের দিকে দিয়ে শান্ত গলায় বললেন।
‘তুমি চুপ করো। এত আদর দিতে যেও না। আদর দিয়ে দিয়েই তো এমন হয়েছে।’ মেহেরুন নাহারকে প্রচণ্ড এক ধমক দিলেন আশরাফ হোসেন।
বাবার চিৎকার চেঁচামেচিতে আতিক আর তানিয়া এসে দাঁড়াল ডাইনিং স্পেসে। অতল যেন কোনো এক হাস্যকর বস্তুতে পরিণত হয়ে গেল। কখনো করুণার, তো কখনো কারো হাসির খোরাক। অসহ্য! এ জীবন। অসহ্য সবকিছু। আজ ‘জীবন’ নামক শব্দটা বড্ড ভারী মনে হলো অতলের। মায়ের দু’চোখের কোণে কী যেন চকচক করে উঠল। বাল্বের আলোতে, নিজের চোখের ঝামসা দেয়ালও তা দেখা হতে তাকে বিরত করতে পারল না।
আশরাফ হোসেন রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলেন। অতল ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। তানিয়া বলল, ‘ভাইয়া! আজ আব্বুর মেজাজ গরম ছিল তাই বকেছে। তুই কিছু মনে করিস না। এসব বাবার মনের কথা নয়।’
আতিক এসে বলল, ‘আব্বু যেমন চায় তেমন করে চললেই তো পারিস। এত রাত অবধি বাড়ির বাইরে থাকার কী দরকার ছিল? যত্তসব আজাইরা কাজ করে বেড়াস সারাদিন। রাতের বেলাও কি এসব আজাইরা ঘোরাঘোরি না করলে তোর চলে না? তোর জন্য আমার ঘুমের বারোটা বেজে গেছে।’
অতল নিশ্চুপ। তার মাথা কাজ করছে না। শুধু চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। তানিয়া আতিকের দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল, ‘কী শুরু করছিস ভাইয়া? দেখলি না অতল ভাইয়াকে বাবা বকেছে। তুই এসেছিস কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে? অদ্ভুত লাগছে তোর এই ধরনের আচরণ আমার কাছে।’
‘এই তুই চুপ কর। বেশি কথা শিখেছিস তাই না? অতলের চামচি কোথাকার। আমার সাথে গলা উঁচু করে একদম কথা বলবি না। আমি এসব মোটেই সহ্য করব না। বলে দিলাম।’ তানিয়াকে পাল্টা ধমক দিয়ে বলল, আতিক ।
‘তোমাকে ডরাই না-কি আমি? একশ বার বলব।’ তানিয়াও ছেড়ে কথা বলল না।
‘এই তোরা ঘরে যা। আর কোনো কথা বলার দরকার নেই।’ মেহেরুন নাহার বললেন, ভাঙা গলায়। একটু কান্না করলেই তার গলাটা ভেঙে যায়।
মেহেরুন নাহার অতলের কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘বাবার কথায় রাগ করে থাকিস না বাবা। এসব তোর বাবার মুখের কথা। এখন খেতে বোস।’
‘জানো মা! আমার খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু এখন আর গলা দিয়ে খাবার নামবে না।’ অতল বলল দুর্বল কণ্ঠে, মাকে জড়িয়ে ধরে।
‘এমন কথা বলিস না বাবা। না খেলে শরীর খারাপ করবে তো।’ মেহেরুন নাহার বললেন, উদ্বিগ্ন কণ্ঠে ।
‘আমি ঠিক অছি মা। আমাকে আজকে অন্তত খেতে বলো না। আমি পারব না, মা।’
‘বোস না বাবা, আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছি। আজ তোর প্রিয় তরকারি রেঁধেছি। রূপচাঁদা মাছের কোফতা খুব পছন্দ করিস না? ওটা দিয়ে আজ তোকে আমি নিজ হাতে খাইয়ে দেব। বোস না, বাবা অতল।’ মেহেরুন নাহার আকুতি ভরা কণ্ঠে বললেন।
‘মা, আমাকে ক্ষমা করো। আমি আজ কোনোভাবেই খেতে পারব না। ‘ অতলকে বিপন্ন দেখাল। তারপর দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের রুমে চলে গেল।
মেহেরুন নাহার শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে কান্না আটকে দ্রুত পা চালালেন নিজের রুমের দিকে। ছেলেটার কষ্টে তার নিজের বুকের ভেতর প্রচণ্ড ব্যথা করছে। মাঝেমধ্যে একের দোষের বোঝা অন্যকে বয়ে বেড়াতে হয়। যেমন তার ছেলেটা বয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ তিনি কিছুই করতে পারছেন না। তার কিছুই করার নেই, নীরবে তাকিয়ে থাকা ছাড়া। নিজের রুমে গিয়েও ছেলের চিন্তাতে তার ঘুম আসছে না। তাই ছেলের রুমে গেলেন ঘুমিয়েছে কি না দেখার জন্য। অতল বসে ছিল। তার কাছে সবকিছু বিষাক্ত লাগছে।
মেহেরুন নাহার আদর মিশ্রিত কণ্ঠে জানতে চাইলেন, ‘এখনও ঘুমাসনি কেন, বাবা?’
‘ঘুম আসছে না, মা।’ অতল বলল, বিষণ্ণ কণ্ঠে।
‘তুই শুয়ে পড়। আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।’
অতল বাধ্য ছেলের মতো শুয়ে পড়ল। মেহেরুন নাহার ছেলের শিয়রে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। অনেক দিন পরে মায়ের হাতের ছোঁয়া পেয়ে অতলের ভীষণ ভালো লাগছে। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। মনের আকাশে জমে থাকা মেঘও হয়তো কমতে শুরু করবে। কেবল বৃষ্টি নামার অবকাশ।
___________________________
#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফতিমা_আক্তার_অদ্রি
পর্ব-২৭
আজকের আবহাওয়াটা খুব দারুণ। সমীরণের স্নিগ্ধ আবেশ ছড়িয়ে পড়ছে শরীর থেকে মনে। বহ্নি উৎফুল্লতার সহিত মেসেজ পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে বসে অ্যাসাইনমেন্ট করছিল। তার পরীক্ষার খুব দেরি নেই। তার জন্য পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে সে। এর মধ্যেই আবার তাদের আশ্রমের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কোম্পানি থেকে বিশাল একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। সে চাইলেও খুব বেশি কিছু করতে পারবে না এবার। অন্যান্য সময় সে নিজে সকলের সাথে মিলে সাজানো-গোছানোর কাজগুলো করত। তবে এবার তা হবে না। শিহরণকে সে আগেই বলে দিয়েছে তার অপারগতার কথা। জবাবে শিহরণ হেসে বলেছিল, ‘বুঝলাম, বার্বি ডল। এবার আমার বার্বি ডলটা সত্যিকারের বার্বি ডল হয়ে বসে থাকবে। আর অনুষ্ঠান উপভোগ করবে।’
বহ্নি কপট রাগ দেখাতেই শিহরণ পুনরায় গম্ভীর কণ্ঠে বলেছিল, ‘আমার ছোট্ট বোনটি এবার আমার গেস্ট হতে চাইছে। তাকে আমি নিজেই না হয় অভর্থ্যনা জানাব।’ একটু থেমে ভ্রু কুঁচকে বহ্নির দিকে তাকিয়ে বলেছে, ‘এবার ঠিক আছে, কাপকেক?’
পরক্ষণেই বহ্নি আহ্লাদী গলায় প্রশ্ন করেছিল, ‘আমি হোস্ট হতে পারছি না বলেই আমাকে গেস্ট বানিয়ে দিলে?’
‘একদম না।’ শিহরণ প্রশস্ত হেসে বলেছিল, ‘তোকে গেস্ট বানিয়ে তোর সেবা করার সুযোগ খুঁজছি। হাজার হলেও প্রিন্সেস বলে কথা। আমি তো ভাই সবসময়ের প্রজাস্বরূপ মানব । তাই সর্বদা সেবা করার সুযোগ খুঁজে বেড়ায়।’
শিহরণের বলা কথা মনে পড়তেই বহ্নি একচোট হাসল। তারপরেই তার ভাবনাতে উঁকি দিলো রাদিদ।
সে ভাবতে লাগল, রাদিদ ভাইয়া কি বুঝতে পারবে, কে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে! বুঝতে না পারার তো কিছু নেই। নীরা নিশ্চয়ই জানিয়েছে; নাম্বার দেবার কথাটা। এসব আকাশ পাতাল ভাবনার মধ্যে হুট করে তার মোবাইলটা বিপ বিপ শব্দ করে নড়ে উঠল। দ্রুত হাতে সে মোবাইলটা নিল। মেসেজ তো হরহামেশাই আসে। তূর্ণ, সায়মা তো সবসময় মেসেজ পাঠাতে থাকে। তাই মেসেজ চেক করার তাড়া কখনোই থাকে না। তবে আজ কী মনে করে যেন সাথে সাথে মেসেজ বক্সটা খুলে দেখল সে! রাদিদের নাম্বার থেকে মেসেজটা এসেছে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে। বহ্নি কৌতূহল আর চেপে রাখতে না পেরে, মেসেজটা ওপেন করল।
আমার শহরটা লণ্ডভণ্ড,
এই শহরে আসতে বারণ!
অট্টালিকায় থাকা রাজকন্যার।
আমার শহরে ছড়িয়ে থাকা হারানো বিজ্ঞপ্তি
শুধু পাগলাটে, খ্যাপাটে বাতাসে উড়ে বেড়ায়
শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত!
তবুও হারিয়ে যাওয়া মানুষটার খোঁজ মেলে না!
এই এলোমেলো, অগোছালো শহরটাতে
পরীদের আসতে বারণ
আমার শহরেই আমি একাই আছি বেশ।
কবিতার চরণের মতো কিছু লাইন । কবিতা বলা যায়। তবে তা দেখে বহ্নির মনে প্রথমেই প্রশ্ন জাগল, রাদিদ ভাইয়া কবে থেকে কবিতা রচনা শুরু করেছে? করলে করতেও পারে। তবে এই কবিতা তাকে পাঠানোর মানে কী?
রাদিদের নাম্বার থেকে পাঠানো মেসেজটা পড়তেই বহ্নি কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। তার কাছে সবকিছু কেমন যেন ঘোলাটে, আবছা আর অন্ধকারাচ্ছন্ন লাগছে । কবিতার চরণের অর্থ কোনোভাবেই সে বুঝতে পারছে না। আর তাকে পাঠানোর মানেটাই বা কী! ভাবনাতেই মশগুল ছিল অনেকক্ষণ। তবুও কোনো উত্তর মেলেনি। হঠাৎ তার মনে হতে লাগল তার প্রিয় মানুষগুলো রহস্যে ঘেরা। বড়ো হবার পর কাছ থেকে সে তাদের জানার সুযোগ পায়নি তা ঠিক। তবে একটা সময় তো তারা তার কাছের মানুষ, আপনজনের মতোই ছিল। অথচ দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান ও দূরত্ব সবকিছুই যেন পরিবর্তন করে দিয়েছে। এই যেমন, অতল আর রাদিদ। এই দুজনের পরিবর্তন তাকে বেশ ভাবিয়ে তুলে। তবে এর রহস্য ভেদ করার জন্যে তো তাদের কাছে থাকা আবশ্যক। তবে কারণ যাই হোক না কেন ওদের মধ্যেকার পরিবর্তন বহ্নির কাছে কখনোই খারাপ ঠেকেনি। মনে হয়েছে; এটাই সকলের জন্য ভালো ছিল।
লণ্ডভণ্ড! সত্যিই কি লণ্ডভণ্ড? রাদিদ ভাইয়ার কি বড়ো কোনো সমস্যা আছে? উফ! কী দুর্বিসহ এসব চিন্তা। একটা প্রশ্নের উত্তরও তার কাছে নেই। নিজেকে একলা একাকী পথিকের মতো দিশেহারা লাগছে। বহ্নি বুঝতে পারল তাই তার মস্তিষ্ক কবিতার চরণগুলোর অর্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই দিশেহারা অবস্থা থেকে বের হতে সে মেসেজটির চিন্তা বাদ দিয়ে পুনরায় অ্যাসাইনমেন্টে মনোযোগ দিলো।
‘আসব?’ বহ্নির দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, রাফি।
বহ্নি চকিতে তাকাল। রাফি দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। বহ্নি নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল, ‘কিছু বলবে, রাফি ভাইয়া?’
‘হুম, বলার তো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু তুমি শুনতে চাও না! এটাই আমার দুঃখ।’ রাফি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মলিন কণ্ঠে বলল।
‘কোনো কাজের কথা হলে বলতে পারো। নয় তো যেতে পারো।’ বহ্নি চোয়াল শক্ত করে কণ্ঠে কাঠিন্য ঢেলে দিয়ে বলল।
‘কাজের কথাই তো বলেছি এতদিন । তবে তুমি সেটাকে কাজের কথা মনে করছ না। এটাই সমস্যা।’ হতাশ কণ্ঠে বলল, রাফি।
‘এসব আবোলতাবোল কী বলছ?’ বহ্নি পাল্টা প্রশ্ন করল, ক্রুদ্ধ হয়ে।
রাফি এবার রুমে ঢুকল, ধীর পায়ে। একটা চেয়ার টেনে পায়ের উপর পা তুলে বসল। তারপর মুখের নিচে ডান হাতটা ঠেকিয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল বহ্নির দিকে। বহ্নি অধৈর্য গলায় বলল, ‘কী হয়েছে? তুমি এরকম করে কী দেখছ? তুমি কি যাবে না-কি আম্মুকে ডাকব?’
রাফির কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। মোহাবিষ্টের মতো তাকিয়েই আছে। বহ্নি এবার চেঁচিয়ে বলল, ‘কী হয়েছে? এমন পাগলের মতো আচরণ করছ কেন? অদ্ভুত লাগছে আমার কাছে তোমার এমন আচরণ।’
‘পাগল!’ রাফি এবার মুখ খুলল। মোহাবিষ্ট গলাতেই বলল, ‘পাগল আমাকে তুমি বানিয়েছ, বহ্নি! এটা কি তুমি বুঝতে পারছ না?’
বহ্নির মাথাটা যেন ঘুরে উঠল। চারপাশটা মুহূর্তেই আবছা হতে থাকল। এই মুহূর্তটার ভয়েই সে রাফিকে এভয়েড করত সবসময়। অথচ তার এতসব কিছু সত্ত্বেও মুহূর্তটার মুখোমুখি তাকে হতেই হলো। আত্মীয়তার সম্পর্কের জেরেই সে সবচেয়ে সহজ উপায়টা বেছে নিয়েছিল। তারপরেও…!
‘আই এম ইন লাভ উইথ ইউ, বহ্নি।’ রাফি চেয়ার থেকে উঠে বহ্নির সামনে দাঁড়িয়ে হিম শীতল গলায় বলল।
‘স্টপ, রাফি ভাইয়া।’ বহ্নি পরিস্থিতি সামালানোর জন্য ঠান্ডা গলায় বলল, ‘আমি তোমাকে কেবল ভাই হিসেবেই দেখি। এর থেকে বেশি নয়। আজকে যা বলেছ, তা আর কখনোই মুখে আনবে না। এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ।’
‘প্লিজ, বহ্নি। এভাবে আমার ভালোবাসাকে তিরস্কার করো না। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।’ আকুল কণ্ঠে বলল, রাফি।
‘রাফি ভাইয়া!’ বহ্নির রাগ যেন তার কণ্ঠে উপচে পড়ছে। ক্রোধান্বিত কণ্ঠে সে বলল, ‘তোমার এসব নাটক বন্ধ করো। আর কখনোই আমার সামনে এই ধরনের নাটক করবে না। আর আজকে যা বললে তা কখনোই আমার সামনে বলার সাহস করবে না। প্রথমবারের মতো তোমাকে আমি ক্ষমা করলাম। দ্বিতীয় বার এই ধরনের স্পর্ধা দেখালে আব্বুর কানে কথাটা যেতে সময় লাগবে না। আর আব্বু ক্ষেপে গেলে তোমার কী হাল হতে পারে তা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়।’
রাফি বহ্নির রাগান্বিত কণ্ঠে তব্দা খেয়ে গেল। এরকম রিয়েক্ট করবে তা সে ভাবেনি। নির্বাক হয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। কিছু বলতে চাইছে, তবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
বহ্নি তার কণ্ঠে কাঠিন্য বজায় রেখে আবারও
বলতে শুরু করল,’মনে নেই আমাদের কলেজের ফাহাদের কথা? আমার পিছু নেবার অপরাধে তাকে যে শাস্তি পেতে হয়েছিল তা নিশ্চয়ই তুমি পেতে চাইবে না?’
রাফি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এভাবে তার কাজ হবে না। ভালো সাজাটা তাকে স্যুট করছে না। এবার তার কাছে বিষয়টা স্বচ্ছ জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। বহ্নিকে সে সত্যিই পছন্দ করে। কিন্তু এই কথাটা তাকে বিশ্বাস করানোটা পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজ মনে হচ্ছে তার কাছে। রাফি মনে মনে ভাবল, ‘সঠিক সময়ের অপেক্ষা তাকে করতেই হবে।’
রাফি ঘর থেকে বের হবার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই
বহ্নি হিম শীতল গলায় বলল, ‘আমার বলা কথাগুলো মনে রেখ। তাতে তোমারই মঙ্গল হবে।’
বহ্নির কথার প্রত্যুত্তরে কোনো কিছু না বলে রাফি একটা বাঁকা হাসি হেসে বেরিয়ে পড়ল।
_________________________________
ফাহমিদা বেগম এখন পুরোপুরি সুস্থ। বাসায় এসেছেন দুদিন হলো। তবে তিনি খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন সবসময়। একদম অন্যমনস্ক হয়ে থেকে কী যেন ভাবেন সর্বক্ষণ! ছোঁয়া তার মায়ের পুরোপুরি খেয়াল রাখছে তবে মাকে এরকম দেখতে তার নিজের খুব খারাপ লাগছে। ছোঁয়ার সাথে সাথে হিয়াও যথাসম্ভব খেয়াল রাখছে। অহনা তার নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল তবে এক দুইবার এসে মায়ের খবর নিতে ভুলেনি। মায়ের মন ভালো করার উদ্দেশ্যেই ছোটোখাটো একটা আয়োজন করে ফেলল হিয়া, সাইফ, মায়া, ছোঁয়া আর অহনা।
ফাহমিদা বেগম নিজের বিছানায় শুয়ে ছিলেন।
ছোঁয়া এক বাটি ভেজিটেবল স্যুপ তৈরী করে এনে মায়ের দিকে এগিয়ে বলল, ‘মা এটা তাড়াতাড়ি শেষ করো তো।’
ফাহমিদা বেগম শোয়া থেকে উঠে বসে উদাস নয়নে তাকালেন ছোঁয়ার দিকে। তার মেয়েটাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। একদম যেন পরীর মতো। সাদা ফুল স্লিভ ব্লাউজের সাথে আকাশী রঙের জামদানি শাড়ি পরেছে ছোঁয়া। চুলগুলো খোপা করেছে। সামনের কয়েক গোছা ছোটো ছোটো চুল অবাধ্য হয়ে মুখের সামনে চলে আসছে বারেবারে। তা দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। আনন্দে আটখানা হয়ে বললেন, ‘শাড়িটাতে তোকে একদম নীল পরীর মতো লাগছে।’
‘এসব বলে আমাকে ভোলানো সম্ভব হবে না, মা। একটু আগে হিয়া আর মায়া দুজনে জোর করেছে এই শাড়িটা পরার জন্য। তাই বাধ্য হয়েই পরতে হলো।’
ফাহমিদা বেগম প্রচণ্ড অনীহা ভরা কণ্ঠে বললেন, ‘এখন আর খাওয়া সম্ভব নয়। একটু আগেই তো নাস্তা করলাম।’
‘মোটেই একটু আগে খাওনি। প্রায় দু’ঘন্টা আগে নাস্তা করেছ। এখন ঝটপট খেয়ে শেষ করো প্লিজ মা।’ ছোঁয়া বলল, ব্যস্ত ভঙ্গিতে।
হিয়া দ্রুতবেগে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল, ‘ছোঁয়া আপু! বিরিয়ানি রাঁধবে না তুমি? মায়া আপু ডাকছে তোমাকে।’
‘আসছি হিয়া। মা স্যুপ খেয়ে শেষ করুক তারপর আসছি।’
হিয়া মায়ের পাশে বসে বলল, ‘আচ্ছা, কী হয়েছে মা? এরকম মনমরা হয়ে থাকছ কেন?তোমার জন্যই তো আজকে ছোটোখাটো এই আয়োজন করা হয়েছে। এখন তুমি যদি এরকম মন খারাপ করে বসে থাকো তাহলে কীভাবে হবে বলো তো?’
‘আমি একদম ঠিক আছি।’
‘তুমি ঠিক নেই মা।’ হিয়া বলল, মায়ের কোলে মাথা রেখে।
‘ঠিক আছি বলছি তো মামণি। আচ্ছা দে আমি এখনই খাচ্ছি।’ ফাহমিদা বেগম ছোঁয়ার হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিলেন।
‘তাহলে এমন অন্যমনস্ক হয়ে থাকছ কেন?’ হিয়া বলল, অভিমানী গলায়।
‘সত্যি বলতে আমার উপর কে এট্যাক করল সেটা নিয়ে ভাবছি। আমার জীবনের কালো অধ্যায়টা কি আবার খুলতে যাচ্ছে!’ ফাহমিদা বেগম চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন।
‘এসব নিয়ে একদম ভাববে না মা। এরকম কিছুই হবে না। আমি তোমাকে বলছি তো।’ ফাহমিদা বেগমকে আশ্বস্ত করার জন্য বলল ছোঁয়া।
‘যদি হয়ে থাকে তো?’ ফাহমিদা বেগম সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বললেন।
‘প্রথমত এরকম কিছুই হবে না। আর যদি হয়েও থাকে তবে আমরা আছি তো তোমার পাশে। একবার যখন সব ঠিক হয়েছে তখন দরকার হলে আবার ঠিক করব। আর পুলিশ কিন্তু তাদের কাজ করছে। তাই
এটা নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করো না তো মা।’ ছোঁয়া বলল, সতর্ক গলায়।
‘আচ্ছা ঠিক আছে। আর টেনশন করব না।’ পরাস্ত ভঙ্গিতে বললেন, ফাহমিদা বেগম।
‘কথা দিচ্ছ তো?’ ছোঁয়া প্রশ্ন করল, সন্দিগ্ধ কণ্ঠে।
ফাহমিদা বেগম ছোট্ট করে জবাব দিলেন, ‘হুম।’
‘হিয়া, মায়ের পাশে বস তুই। আমি কিচেনে যাচ্ছি। মা স্যুপ শেষ করলে মাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসিস। সবার সাথে কথা বললে মায়ের খুব ভালো লাগবে।’ হিয়াকে কথাগুলো বলেই ছোঁয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
মায়া চুলো থেকে চিংড়ির দোপেয়াজা নামিয়ে রাখল। ছোঁয়াকে রুমে ঢুকতে দেখে সে বলল, ‘বিরিয়ানি কখন বসাবি? দুপুর হয়ে যাচ্ছে তো।’
‘তুই একটা কাজ কর পেঁয়াজ আর মরিচগুলো কেটে দে। আমি বাকিসব রেডি করে চুলোয় বসিয়ে দিচ্ছি।’
‘এতক্ষণ লাগে এসব করতে? আমি হলে এতক্ষণে সব রান্না শেষ হয়ে যেত। খেয়ে ভাত ঘুমও হয়ে যেত। এরপর বিকেলে চা নাস্তা করে গল্পের আসর জমাতে পারতাম।’ সাইফ বলল, কিচেনে ঢুকতে ঢুকতে।
‘চাপাবাজি কি শেষ? শেষ হলে যেতে পারেন।’ ছোঁয়া বলল, ব্যঙ্গ করে।
‘সত্যি কথা বললেই চাপাবাজি!’ অসহায় মুখ করে বলল, সাইফ।
‘মায়া তোর পেঁয়াজ কাটা লাগবে না সাইফ কাটবে। ওর তো পেঁয়াজ ধরা মাত্রই কাটা হয়ে যাবে। তাই না, সাইফ?’ ছোঁয়া ত্যাড়ছা চোখে তাকিয়ে দেখল সাইফের দিকে।
পেঁয়াজ কাটার কথা শুনে সাইফের চেহারার রঙ পাল্টে গেল মুহূর্তেই। তারপরেও প্রেস্টিজ রক্ষার্থে তোতলাতে তোতলাতে বলল, ‘আচ্ছা দে। তোদের থেকে দ্রুত চপ করতে পারব । এতে কোনো সন্দেহ নাই।’
সাইফ কিচেনের একপাশে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কাটছে আর একটু পর পরই চোখ মুছছে। তা দেখে মায়া আর ছোঁয়া ঠোঁট টিপে হাসছে। কিন্তু হিয়া কিচেনে এসে তা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। তারপর বলল, ‘সাইফ ভাইয়া! পেঁয়াজ কি জীবনে প্রথম কাটছ? কাটতে যখন পারো না তখন কেন যে বাহাদুরি দেখাতে যাও বলো তো?’
সাইফ হিয়াকে ধমকে উঠে বলল, ‘এই চুপ কর। তুই কি আমার থেকে বেশি পারিস?’
‘আরেহ্ না, হিয়া! ও সবসময় কাটে । এসব ওর জন্য কোনো ব্যাপার না। তাই না সাইফ? ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলল, মায়া।
সাইফ রাগে ছুরি ফেলে দিয়ে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে ক্রমাগত। আর বলছে, ‘উফ্! কী যে জ্বালা করছে চোখ দুটো। একে তো তোদের সাহায্য করতে এলাম আর তোরা মজা নিচ্ছিস আমার সাথে।’
‘মুখে অনেকে অনেককিছুই বলে দিতে পারে। তবে কাজ করতে গেলেই বুঝা যায় কোন কাজটা কত কঠিন আর কোন কাজটা সহজ। কাজ না করার আগ পর্যন্ত কঠিন আর সহজ নির্ধারণ করা বোধহয় সম্ভব নয়। তাই না মায়া?’ ছোঁয়া বাকি পেঁয়াজ কাটতে কাটতে বলল।
‘একদম ঠিক।’ মায়া বলল, উৎফুল্ল কণ্ঠে ।
অনেক দিন পরে সবাই একসাথে খাবার খেতে বসে খুব উৎফুল্ল অনুভব করল। খাবারের প্রশংসা করে ফাহমিদা বেগম বললেন, ‘ছোঁয়া মামণি! বিরিয়ানিটা জাস্ট অসাধারণ হয়েছে।’
ছোঁয়া প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসল। সাইফকে উদ্দেশ্য করে মায়া বলল, ‘সাইফ তোকে আরেকটু বিরিয়ানি দিব?’
সাইফ ত্যাড়ছাভাবে বলল, ‘আমার লাগলে আমি নিজেই নিতে পারব।’
‘ভালা মাইনষের দাম নাই! হাহ্! কথাখান হাছাই কইছে।’ মায়ার কথা শুনে এবার সবাই হাসল।
সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছোঁয়া বলল, ‘বিরিয়ানি খাবার পরে ডেজার্ট খেতে হবে। আজকে সবাইকে ছোঁয়া স্পেশাল ডেজার্ট খাওয়াব। তাই সবাই একটু করে জায়গা খালি রাখিও। আ’ম ফুল বললেও তখন আমার কিছু করার থাকবে না জোর করে খাওয়ানো ছাড়া। সো আগে থেকেই সতর্কবাণী দিয়ে দিলাম।’
হঠাৎ মায়া ভুলবশত বলে বসল, ‘আজকের আয়োজনে শিহরণ থাকলে একদম পূর্ণ হতো।’
হিয়া বলল, ‘মায়া আপু একদম ঠিক বলেছ। আমার মনে ছিল না। মনে থাকলে আমি নিজেই তাকে ইনভাইট করতাম। মায়ের অসুস্থতার সময় শিহরণ ভাইয়া অনেক হেল্প করেছে। আমি তো কখনোই তার এই সাহায্য ভুলব না। অবশ্য এটা ভোলার মতোও নয়।’
অহনা এবার মুখ তুলে তাকাল। বলল, ‘ইশ! আমিও ভুলে গিয়েছিলাম। নয়তো আমি নিজেই ইনভাইট করতাম শিহরণকে।’
হঠাৎ নাম ধরে ডাকার কারণে ছোঁয়া, মায়া আর হিয়া তিন জন একসাথে তাকাল অহনার দিকে। তিন জোড়া চোখকে সে মোটেই পরোয়া করল না। আবার খেতে শুরু করল।
ফাহমিদা বেগম কৃতজ্ঞ কণ্ঠে বললেন, ‘আসলেই ছেলেটা আমার জন্য অনেক খাটুনি খেটেছে। অথচ আমি ছেলেটাকে একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলাম না। ওকে আজ আসতে বলা দরকার ছিল। আমার মাথাতেও তো আসলো না কথাটা।’
ছোঁয়া মাকে আশ্বস্ত করে বলল, ‘পরে কোনো একসময় জানিয়ে দিও। তাহলেই তো হলো। এতো আপসেট হবার কিছু নেই। ও এসব কিছু মনে করে না। মনে রাখেও না।’
সাইফ অবাক দৃষ্টিতে তাকাল ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়ার বলা কথাতে সে শিহরণের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস, ভরসা আর নির্ভরতা খুঁজে পেয়েছে। তবে কি তার ধারণাই ঠিক?
______________________________
#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফাতিমা_আক্তার_অদ্রি
পর্ব-২৮
শিহরণ অস্থির হয়ে পায়চারি করছে। মান্নাতের পরিবার আসাতে তাদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত তার মা। অথচ মায়ের সাথে তার খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল। সে যা শুনেছে তা যদি সত্যি হয়? এটা ভাবতেই সে অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ছে। কখনও মায়ের অবাধ্য হয়নি সে। ছোটোখাটো দুষ্টামির মধ্যেই সবকিছু সীমাবদ্ধ ছিল। সেগুলোর জন্য পর্যন্ত মা বকতে ভুলেনি। আর এখন তাকে না জানিয়ে মা যদি তার জীবনের এত বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তবে সে কী করবে? আর বাবা যদি মাকে সমর্থন করে তো? তবে তাকে অবাধ্য হতেই হবে। কিন্তু সে অবাধ্য হতে চায় না। তাই ব্যাপারটার সত্যতা যাচাই করাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। অথচ সে কোনো সুযোগই পাচ্ছে না মায়ের সাথে কথা বলার। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে কথা বলার। একটিবারের জন্যেও সুযোগ পায়নি সে।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে কিছুটা সময় পার করল সে। কিন্তু তাতেও মন বসছে না। তারপরও অবহেলায় স্ক্রল করতেই থাকল। একসময় কয়েকটা ছবি দেখে সে থমকে গেল। তার মনে এক ধরনের প্রশান্তি বয়ে গেল। ছবিগুলো আপলোড করেছে মায়া। মোট তিনটে ছবি আপলোড করেছে সে। একটাতে ছোঁয়ার পুরো ফ্যামিলি, অন্য দুটোর মধ্যে একটাতে ছোঁয়া, মায়া আর সাইফ, অপরটাতে শুধু ছোঁয়া। কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে দাঁড়িয়ে কফি মেকারে কফি বানাচ্ছে এমন সময় তোলা একটা ছবি। আকাশী রঙের শাড়িটাতে ছোঁয়াকে এক চিলতে নীল আকাশ মনে হলো শিহরণের। যে আকাশে সে একা বিচরণ করতে চায় সারাজীবন। সে ভাবল, নিশ্চয়ই ছোঁয়ার নাকের উপর জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এই ঘর্মবিন্দুর প্রতিও তার ভীষণ হিংসে হলো। তারা যখন তখন ইচ্ছে হলেই ছুঁয়ে দিতে পারে অথচ সে চাইলেও পারে না! এই প্রথম ছোঁয়াকে শাড়ি পরা দেখল সে। কিন্তু সামনাসামনি না দেখতে পাওয়ায় তার ভীষণ আফসোস হচ্ছে।
শিহরণ ছোঁয়ার ছবিটা সেভ করে রাখল। এখন এটাই তার মন ভালো করার ওষুধ। অন্ততপক্ষে যতদিন তার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত।
মেসেঞ্জারে ঢুকতেই মায়াকে একটিভ দেখে শিহরণ ঝটপট করে থ্যাঙ্কস লিখে পাঠিয়ে দিল। সাথে সাথে রিপ্লাই এলো, ‘ইট ওয়াজ আপলোডেড ফর ইউ।’
‘ধন্যবাদও সে কারণেই দিয়েছি।’
‘তুমি বুঝতে পেরেছ?’
‘না পারার কিছু নেই।’
‘ব্রিলিয়ান্ট!’
‘আর শুনতে ভালো লাগে না।’
‘মিথ্যে বলব? আচ্ছা, ঠিক আছে। ডাফার বলব এখন থেকে।’
‘আমাকে ইনভাইট করেনি কেন তোমার বান্ধবী? ইনভাইট করলে আজকের দিনটা আমাকে মিস করতে হতো না।’
‘তাকেই বরং জিজ্ঞেস করিও।’
‘জানতে চাইলেই কি সে বলবে? যেমন ঘাড়ত্যাড়া হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। অবশ্য সব ত্যাড়ামি খালি আমার সাথেই করে।’
‘তুমিও কি কম ত্যাড়া?’
‘আমি মোটেই ত্যাড়া না। আমি একদম ইনোসেন্ট।’
‘ইনোসেন্ট শব্দের অর্থটা আরেকবার পড়ে নিও।’
‘এত করে বলছ যখন তখন পড়ে নিব না হয়।’
মায়া কফি খেতে খেতে শিহরণের সাথে চ্যাট করছিল। তাকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত দেখে ছোঁয়া বলল, ‘কী রে! আমার দুলা ভাইয়ের সাথে চ্যাট করছিস না-কি?’
‘না! আমার দুলাভাইয়ের সাথে চ্যাট করছি।’ মায়া সহাস্যে বলল, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি রেখে।
‘মানে?’ ছোঁয়া অবাক হয়ে জানতে চাইল।
‘মানে কিছু না।’ প্রশস্ত হেসে মায়া বলল, ‘মজা করছিলাম তোর সাথে।’ এটুকু বলেই সাথে সাথে মোবাইলটা রেখে দিল সাইড টেবিলের উপর।
‘তুইও যা শুরু করেছিস ইদানিং! যখন তখন দেখি মোবাইল নিয়ে কীসব করিস। জানতে চাইলেই বলিস, কিছু না। এটা কিন্তু একদম ঠিক না। বন্ধুদের সাথে এরকম মিথ্যা বলা একদম উচিত না। আর তুই তো জানিস আমি মিথ্যা বলা একদম পছন্দ করি না। যে মিথ্যা বলে তাকেও পছন্দ করি না।’ ছোঁয়া বলল, গম্ভীর গলায়।
কেমন একটা গমগমে পরিবেশ হয়ে গেল মুহূর্তেই। ছোঁয়া এরকম সিরিয়াস হয়ে যাবে তা মায়া বুঝতে পারেনি। সাইফ বুঝতে পারল মায়ার বিহ্বল অবস্থা । পরিস্থিতি সামলাতে সে বলল, ‘তুই এত সিরিয়াস হয়ে যাস কেন সবসময়?’ পরক্ষণেই কৌতুক মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, ‘স্যান্ডউইচ বানিয়েছিস না-কি স্যান্ড দিয়ে উইচ বানিয়েছিস। খাওয়া যাচ্ছে না পর্যন্ত।’
‘কী!’ ছোঁয়া ভীষণ অবাক হয়ে বলল, ‘কেউ তো বলেনি খেতে খারাপ হয়েছে। তাছাড়া আমার নিজেরও তো ভালো লেগেছে।
‘তুই কষ্ট পাবি বলে কেউ বলেনি আরকি। গোয়ালার গরুর দুধ কি সে কখনও খারাপ বলে? আমি তো বাবা ঠোঁট কাটা মানুষ । তাই সবকিছু স্পষ্ট বলে ফেলি।’ সাইফ গম্ভীর হবার ব্যর্থ চেষ্টা করে বলল।
হিয়া বলল, ‘সাইফ ভাইয়া মিথ্যা কথা বলছে ছোঁয়াপু। খেতে অনেক ভালো লাগছে।’
ছোঁয়া তিরিক্ষি মেজাজে বলল, ‘খেতে যখন ভালো হয়নি তখন খাচ্ছিস কেন? যা খেয়েছিস পারলে সব বের কর। আর একটা স্যান্ডউইচও খাবি না। আমি এগুলো সব অন্যদের খাওয়াব। যারা এটা পেয়ে খুশি হবে তাদেরকে দিব। তুই একটাতেও হাত দিবি না আর।’ এটা বলেই ছোঁয়া সাইফের হাতের স্যান্ডউইচটা কেড়ে নিল। সামনের প্লেটটাও সরিয়ে নিল।
সাইফ বিড়বিড় করে বলল, ‘যাক বাবা! মায়াকে বাঁচাতে গিয়ে আমি নিজেই ফেঁসে গেলাম। এখন অভুক্ত থাকতে হবে।’ মনে মনে প্রচণ্ড আফসোস করে বলল, ‘ খাবারের বদনাম করাটা ঠিক হয়নি। এখন তো জান গেলেও তাকে খেতে দিবে না। অন্ততপক্ষে আজকের জন্য খাবার অফ।’
মায়ার দিকে সাইফ অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল। সাইফের অসহায় দৃষ্টি দেখে সবাই হো হো করে হেসে উঠল।
_______________________________
সকালের দিকে ছোঁয়া অফিসে আসলে শিহরণ তাকে সরাসরি বলল, ‘এবার আমাদের কাজে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কী বলেন?’
‘অবশ্যই, স্যার।’ পুনরায় আপনিতে পদার্পণ হতে দেখে ছোঁয়া নিজে এবার বিষম খেল। শিহরণ তার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল, ‘আন্টি এখন কেমন আছেন?’
‘ভালো।’ ছোঁয়া বলল, মলিন কণ্ঠে। তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
শিহরণ ভরসা দেবার ভঙ্গিতে বলল, ‘আশা করছি তিনি শীঘ্রই একদম পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন।’
‘হুম।’ ছোট্ট করে জবাব দিল ছোঁয়া ।
‘কে এট্যাক করেছে তা পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি। আসলে কোনো ক্লু-ই তো পাওয়া যায়নি। আর আপনার পরিবারের সাথে কারও কোনো পুরনো শত্রুতা আছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে আপনার মা বলেছেন, আপনাদের কোনো শত্রু নেই। সন্দেহের তালিকাতেও কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই আপাতত কেসটা বন্ধ করতে হয়েছে।’ শিহরণ বলল, এক নাগাড়ে।
‘জি, স্যার। এটাই ভালো হবে সবার জন্য। আসলে মা তার অতীত সম্পর্কে মনে করতে চায় না। সঙ্গত কারণেই তিনি এসব কাউকে বলতে রাজী নন। তাই এই কেসটা বন্ধ করে দেওয়াটাই মঙ্গল। তাছাড়া এটা হয়তো চুরির ঘটনাই ছিল। আমরা সবাই এটাকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েছি তাই মাও আতঙ্কে ছিলেন, সাথে আমরাও।’ ব্যাখ্যা করল ছোঁয়া ।
‘অতীতটা কি আমি জানতে পারি? অবশ্যই যদি আপনার আপত্তি না থাকে।’ দ্বিধান্বিত কণ্ঠে প্রশ্ন করল শিহরণ।
‘আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি এই ব্যাপারে আপনাকে জানাতে পারছি না বলে।’ ছোঁয়া বিব্রত ভঙ্গিতে নিজের অপারগতার কথা জানাল।
‘আপনি বিব্রতবোধ করছেন কেন? বলতে না পারলে কোনো সমস্যা নেই।’ শিহরণ বলল, দ্বিধাহীনভাবে।
‘যাইহোক, এই বিষয়টা ক্লোজ। এবার আমাদের মেইন টার্গেট হলো আমাদের অনুষ্ঠানটা ভালোভাবে আয়োজন করা। কী বলেন?’ প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, শিহরণ।
‘অবশ্যই, স্যার।’ ছোঁয়া দৃঢ় কণ্ঠে সম্মতি জানাল।
‘তাহলে যাওয়া যাক।’ শিহরণ নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল।
‘কোথায়?’ বিহ্বল দেখাল ছোঁয়াকে।
‘যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে।’ ভ্রু উঁচিয়ে বলল, শিহরণ।
‘ওকে। আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি।’ ছোঁয়া বুঝতে পেরে বলল।
আশ্রমে পৌঁছে স্টেজ সাজানোর সমস্ত জিনিস স্তুপাকারে দেখতে পেল ছোঁয়া আর শিহরণ। কাজ প্রায়ই শেষের দিকে। ফরিদ আর রাফি সেখানেই ছিল। তাদের দুজনকেই কাজের তদারকি করার দায়িত্ব দিয়েছে শিহরণ।
ছোঁয়ার মায়ের উপর এট্যাক হওয়ার কারণে শিহরণ একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে কাজ দিয়ে দিয়েছে। এই কারণে সে এতদিন নিশ্চিত ছিল। স্টেজটা তৈরী করা হয়ে গেছে। আশ্রমের কয়েকজন ছেলেমেয়েও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের লোকদের সাথে কাজে যোগ দিল। বিকেল হতে হতে সবাই মিলে সব কাজ শেষ করে ফেলল। সারাদিনের কাজের শেষে সবাই ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গেছে। সবাই যখন স্ন্যাকস খাওয়াতে ব্যস্ত তখন ছোঁয়া একাই হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।
অনেকগুলো বাচ্চা একসাথে খেলছিল। ছোঁয়া সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের খেলা দেখছে। খেলা শেষে অল্পক্ষণের মধ্যেই ছোঁয়ার সাথে জমে গেল আশ্রমের বাচ্চাগুলোর সাথে। ছোঁয়া ঘাসের উপর বসে বাচ্চাগুলোর সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
বাচ্চাদের মধ্যে আরাভ নামের এক পিচ্চি বারবার এসে ছোঁয়ার সাথে কথা বলছে। ছেলেটার বয়স আট কি নয় হবে হয়তো। অল্পক্ষণের মধ্যেই সে ছোঁয়ার সাথে বেশ ভাব জমিয়ে ফেলল। ছোঁয়াকে খুঁজতে খুঁজতে শিহরণও সেখানে এসে দাঁড়াল। আসার সময় সব বাচ্চাদের জন্য চকলেট নিয়ে এসেছে ছোঁয়া। ব্যাগ থেকে বের করে সবাইকে চকলেট দিল। কিন্তু আরাভ নিল না। সে খুব ভাব দেখিয়ে বলল, ‘আ’ম নট আ কিড।’
ছোঁয়া অবাক হয়ে বলল, ‘তাহলে তুমি কি?’
আরাভ বলল, ‘আমি এখন অনেক বড়ো হয়েছি।’
আরাভের কথা শুনে ছোঁয়া অনেকক্ষণ হাসল। অন্য বাচ্চাগুলোও বেশ মজা পেল। তবে আরাভের একটুও ভালো লাগেনি। তা তাকে দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে।
ছোঁয়া তা বুঝতে পেরে বলল, ‘ওকে। তোমাকে কি বলে ডাকা যায় বলো তো?’
আরাভ প্রশস্ত হেসে বলল, ‘আমাকে শুধু আরাভ বলে ডাকবে।’
শিহরণ দাঁড়িয়ে থেকে আরাভের কাণ্ড দেখছে । আরাভ আশ্রমের পাশের একটা আবাসিক এলাকায় থাকে। প্রতিদিন বিকেলে আশ্রমের বাচ্চাদের সাথে খেলার জন্যই সে এখানে চলে আসে। এই আরাভ হচ্ছে একটা বদের হাড্ডি; শিহরণের তা অজানা নয়। পুঁচকে বাচ্চা হলে কী হবে! নিজেকে বাচ্চা বলে সে মানতেই চায় না।
শিহরণ এক পর্যায়ে আরাভকে ডেকে বলল, ‘সমস্যা কী তোর?’
আরাভ ডোন্ড কেয়ার ভাব দেখিয়ে আদুরে গলায় বলল, ‘শিহরণ ভাইয়া! আমার কোনো সমস্যা নেই।’ তারপর চিন্তিত সুরে বলল, ‘কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সমস্যা আপনার!’
শিহরণ যারপরনাই অবাক। কোনোরকমে বলল, ‘আমার আবার কীসের সমস্যা?’
‘দ্যাট নাইস লেডি ইজ ইওর প্রবলেম । রাইট? আমাকে তোমার চাইতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তাই তোমার ভয় হচ্ছে।’ আরাভ গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সাথে বলল।
আরাভের কথা শুনে শিহরণ বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেল। তোতলাতে তোতলাতে বলল, ‘আমার ভয় হচ্ছে। কেন?’
‘তোমাকে যদি ছেড়ে দেয় আমার জন্য। সেই ভয়।’ আরাভ প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল, ‘আফটার অল আ’ম মাচ মোর হ্যান্ডসাম দ্যান ইউ।’
শিহরণ আরাভের কথা শুনে বোকা বনে গেল। এই বয়সেই এত এডভান্সড এই ছেলে সামনে কী করবে সে!
‘আরাভ! বাবু তুমি কোথায়?’ আরাভের মা তাকে ডাকতে ডাকতে এগিয়ে এলো।
মাকে দেখতে পেয়ে আরাভ খুব বিরক্ত হলো। এই সময়েই তার মাকে এন্ট্রি নিতে হলো! সে এখনও একটু কথা পর্যন্ত বলতে পারল না। তার মধ্যেই মা খুঁজতে চলে এলো। আর দশটা মিনিট পরে আসলেই তো হতো। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে আরাভ বলল, ‘আম্মু! তোমাকে কতোবার বলেছি আমাকে বাবু ডাকবে না। আমি তো বড় হয়েছি। তাই না?’
‘আচ্ছা, বাবু! আর বাবু বলে ডাকব না।’
‘উফ্! আম্মু। তুমি তো আবারও বাবু বলেই ডাকছ।’ আরাভের প্রেস্টিজ ধুয়ে দেওয়াতে তার খুব রাগ হলো।
শিহরণ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। আরাভ চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল তার দিকে। যেন চোখ দিয়েই তাকে খুন করবে। শিহরণ নিজের হাসি আটকে গম্ভীর গলায় বলল, ‘বাবুকে বাবু বলেই তো ডাকবে। বাবু এবার আম্মুর সাথে বাসায় যাও।’
‘হ্যাঁ, বাবু চলো।’ আরাভের মা শিহরণের সাথে গলা মেলাল।
‘আম্মু, আমি এই নাইস লেডিকে একটু চারপাশটা ঘুরিয়ে দেখাই তারপর বাসায় আসব।’ আরাভ ঠোঁট বাঁকিয়ে মিনতি করে বলল।
ছোঁয়া বেশ মজা পাচ্ছিল। বাচ্চাটাকে বেশ মজার লাগল তার । সে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময়
শিহরণ বাগড়া মেরে ছোঁয়ার হাত ধরে বলল, ‘সো নাইস অফ ইউ। তোমার এই নাইস লেডিকে আমিই চারপাশটা ঘুরিয়ে দেখাব। ঠিক আছে?’
‘একদম ঠিক নেই। মাম্মি, প্লিজ। লেট মি ডু ইট।’ মায়ের কাছে মিনতি করতে করতে আরাভ চোখ রাঙিয়ে একবার তাকাল শিহরণের দিকে। যেটা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি ছিল শিহরণ যাতে ছোঁয়ার হাত ছেড়ে দেয়।
‘তোমার টিচার আসবে এখন। বাসায় চলো। শিহরণ ভাইয়া তোমার আপুকে ঘুরিয়ে দেখাবে।’ আরাভের মা বলল, আরাভকে আশ্বস্ত করতে।
‘আপু! প্লিজ মম, ডোন্ট কল হার আপু। শি ইজ সো ইয়াং অ্যান্ড আ ভেরি বিউটিফুল লেডি আফটার অল।’ আপু বলাতে আরাভ যেন খুব কষ্ট পেল।
আরাভের মা তাকে টেনেটেনে নিয়ে যাচ্ছে। আরাভ বারবার পেছনে ফিরে দেখছিল ছোঁয়াকে। ছোঁয়া সহাস্যে তাকে হাত নেড়ে নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে। একটা গোলাপ গাছ দেখতেই আরাভ তার মায়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে গোলাপ গাছটা থেকে একটা লাল গোলাপ ছিঁড়ে নিয়ে ছোঁয়ার দিকে
দৌড়ে আসল। তারপর গোলাপ ফুলটা ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘দিস রোজ ইজ ফর এনাদার বিউটিফুল এন্ড এলাইভ রোজ।’
ছোঁয়া তার হাত থেকে গোলাপটা নিল। তারপর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘থ্যাংক্স ইউ লিটল স্টার।’
আরাভ গাল ফুলাল। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, ‘প্লিজ, রোজ! ডোন্ট কল মি লিটল স্টার। ওয়ান ডে আই উইল ম্যারি ইউ। রিমেম্বার ইট।’
ছোঁয়া হাসতে হাসতে বলল, ‘ওকে। আমি অপেক্ষা করব তোমার জন্য।’
আরাভের মা এসে তাকে নিয়ে গেল। আরাভ যেতে যেতে শিহরণকে ওয়ার্ন করে গেল। তার কাছে এসে কানেকানে বলল, ‘শী ইজ মাইন। ডোন্ট ফরগেট ইট। আমার রোজের কাছ থেকে দূরে থাকবে শিহরণ ভাইয়া।’
আরাভ চলে যেতেই শিহরণ বলল, ‘তোমার নতুন প্রেমিককে দিয়ে আমাকে তো ভালো মতোই শাসালে।’
ছোঁয়া অবাক হয়ে তাকাল তার দিকে। বলল, ‘প্রেমিক! ও একটা বাচ্চা ছেলে, শিহরণ।’
‘বাচ্চা! বাচ্চা আর সে! ছোটা প্যাকেট বড়া ধামাকা।’ শিহরণ বলল, স্মিত হেসে।
প্রথম যেদিন এসেছিল সেদিনই ছোঁয়ার খুব ইচ্ছে ছিল পুরো জায়গাটা ঘুরে দেখার। কিন্তু তা হলো না। কিন্তু এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। এখন তো অনায়াসেই ঘুরে দেখা যায়। হাঁটতে হাঁটতে আশ্রমের পেছনের দিকে পৌঁছে গেল সে। ছোঁয়ার পেছন পেছন হাঁটছে শিহরণও। একজন গভীরভাবে নিবিষ্ট প্রকৃতির মাঝে, অপরজন নিবৃষ্ট তার প্রকৃতিপ্রেমী প্রিয়তার মাঝে।
আশ্রমের পেছন দিকটাতে বয়ে গেছে একটা নদী।
নদীতে ঘাট বাঁধা। ছোঁয়া সেখানে গিয়ে বসল। আশেপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে নাম না জানা হরেক রকমের গাছগাছালি। মৃদু বাতাসে গাছের হালকা ডালগুলো নড়ে উঠছে। কিছু নাম না জানা পাখি থেকে থেকে ডেকে উঠছে তারস্বরে। বিকেলের রোদটা মরে এসেছে। ছায়াশীতল পরিবেশ আরও বেশি মনোমুগ্ধকর হয়ে গেছে শীতল স্নিগ্ধ বাতাসে। আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। ছোঁয়া মুগ্ধ হয়ে
সেদিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ।
‘ভালো লাগছে এখানে?’ শিহরণ জানতে চাইল, মৃদু স্বরে ।
ছোঁয়া ফিরে তাকাল না। জানে তার আকাঙ্ক্ষিত মানুষটাই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আর তা তার দেখার প্রয়োজন নেই। সে না দেখেই বেশ অনুভব করতে পারে।
বেশ কিছু সময় পরে শিহরণ ছোঁয়ার পাশে বসল। ছোঁয়ার দৃষ্টি তখন নদীর ঠিক মধ্যেখানে ফুটে থাকা পদ্মফুলের দিকে। নদীটাতে যেন পদ্মফুলগুলো রাজত্ব করছে। কী মোহনীয় লাগছে ফুলটাগুলোকে। আরাভের দেয়া গোলাপটা এখনও ছোঁয়ার হাতেই শোভা পাচ্ছে। ছোঁয়া পদ্মফুল থেকে নজর সরিয়ে গোলাপ ফুলটা দেখতে থাকল।
__________________________