#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৩২.
মাহতিম দীর্ঘশ্বাস নিল। বেরিয়ে যেতে চাইলেই অহনা বলল,’ যেওনা।’
আরিশ অবাক হয়ে বলল,’ যাচ্ছি না আমি। একটু পরে যাব।’
অহনা কথাটা মাহতিমকে উদ্দেশ্য করে বলল। মাহতিম থেমে যায়। কিছু বলছে না। ঘরে এক কোণায় দাঁয়সাড়া দাঁড়িয়ে থাকে।
আরিশ বলল,’ তোমাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। ঘামছো খুব। কিছু কি হয়েছে? তুমি কি একটু আগের ঘটনাটা নিয়ে চিন্তা করছ?’
‘ না, আমি ঠিক আছি। আসলে আপনার কথাই ভাবছিলাম।’
‘এটা কি সত্যি?’
‘কোনটা?’
‘ তুমি আমার কথা ভাবছিলে!’
‘আমি এক্সপ্লেইন করতে পারি না। আপনি কি বাড়ি যাবেন? আপনার মনে হয় এখানে কষ্ট হচ্ছে।’
‘ আমার কেন কষ্ট হবে? আচ্ছা দাঁড়িয়ে না থেকে এখানে বসো। তোমার সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি। কিছু কথা বলব।’
অহনা চুপ করে মাহতিমের দিকে তাকিয়ে থাকে। একদিকে মাহতিম কষ্ট পাচ্ছে অন্যদিকে আরিশও নতুন স্বপ্ন বুনছে। অহনা কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। বিয়ে সে কিছুতেই করবে না এটা ফাইনাল ডিসিশন। কিছু একটা করে আরিশকে দিয়ে বিয়ে ভাঙানোর মতলব করছে।
আরিশ পুরো ঘরটা এক নজর দেখে নেয়,’ বার বার কর্নারে দেখছ কেন?’
‘ কই নাতো।’
‘ আমি কয়েকবার খেয়াল করলাম। মনে হচ্ছে ওখানে কিছু আছে যা দেখে তুমি ভয় পাচ্ছ বা এমন কিছু।’
‘ তেমন কিছু না। অনেক রাততো হলো, আপনার বাড়িতে সবাই চিন্তা করছে। আপনার এখন যাওয়া উচিত।’
‘ কেউ জেগে নেই এখন। কোনো ব্যাপার না। তুমি কি আমাকে তাড়িয়ে দিতে চাইছ নাকি?’
‘ কি বলেন এসব? আমি কেন তাড়িয়ে দেব।’
‘ তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।’
‘ বলুন।’
মাহতিম আর দেখতে পাচ্ছে না এসব। তবে আরিশের প্রতি তার অনেক কৃতজ্ঞতা। তার অনুপস্থিতিতে অহনাকে সে বাঁচিয়েছে। মাহতিম এক মুহুর্তের জন্য ভেবে নেয়, সে না থাকলেও অহনা আরিশের সাথে সুখী থাকবে। তাদের সুখের জীবনে নিজেকে বাঁধা মনে করে। মাহতিম নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়। বাইরে বেরিয়ে যায়। অহনা বাঁধা দিতে গিয়েও পারে না।
আরিশ বলল,’ তোমাকে কেমন অন্যরকম লাগছে। একটু বসো।’
অহনা খাটের একপাশে গিয়ে বসে। আরিশ শুরু করে,’ কালকেই আমি চলে যাব। দেখা করার সময় পাব বলে মনে হয় না। তুমিও চলে যাবে। কবে দেখা হবে বলা যায় না। তুমি যদি তোমার ঠিকানাটা আর মোবাইল নাম্বারটা দাও তাহলে আমি মাঝে মাঝে দেখা করা ও কথা বলতে পারব।’
অহনা কুটিল হাসি দেয়। কি বলবে বুঝতে পারে না। কিন্তু কিছু করার নেই। অহনা নিজের নাম্বার দিয়ে দেয় আরিশকে এবং ঠিকানাও।
আরিশ অহনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকায়। চলে যাবে ভেবেও কেন যেন যেতে পারছে না। আলাদা কোনো শক্তি তাকে বাঁধা দিচ্ছে। আরিশ মনে মনে উচ্চারণ করল,’ আমি কি তাকে ভালোবাসি?’
কোনো উত্তর আসে না তার মন থেকে। আবারো বিভোর হয়ে দেখে। হালকা গড়নে মেয়েটিকে। একদম সাদামাটা। কোনো সাজ নেই তবুও তাকে অপরূপা লাগছে। যেকোনো পুরুষ দেখলেই কামনা জাগবে মনে। আরিশ মনে মনে শপথ করে, একবার বিয়েটা হয়ে গেলে সে তার বউকে এমনভাবে আগলে রাখবে যেন বাইরের কেউ না দেখে। অন্যের নজর থেকে বাঁচাবে।
‘ তুমি এত সুন্দর, চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে জনমভর।’
‘ তাহলে চেয়ে থাকুন।’
‘ সে সুযোগটা কবে পাব। আরো দু’মাস, আমি অপেক্ষা করতে পারছি না যেন।’
চোখে মুখে তৃপ্তির একটা উচ্ছাস ভেসে উঠে আরিশের,
‘ আমি তোমার হাতটা ধরব?’
অহনা চমকে উঠে আরিশের কথায়। বুকে হাতুড়ি পেটা শুরু হয়। আরিশ কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে অহনার কাছে এগিয়ে আসে,
‘ হাত ধরার অধিকারটা কি পাব?’
অহনা কি বলবে বুঝতে পারে না। নিজেকে সামলে নিতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিল। আরিশের ব্রুদ্বয় কুঁচকে আসে। কোনো উত্তর না পেয়ে লজ্জিত হয়। হাসার চেষ্টা করে বলল,’ ঠিক আছে। আসলে আমি….’
‘ আমি বলছিলাম, আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি, পরে না হয় ধরবেন।’
‘ কোনো ব্যাপার না। তোমার যা ইচ্ছা। আসলে তোমাকে দেখলেই আমার হুঁশ থাকে না। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য থাকি। কি বলতে কি বলে ফেলেছি। কিছু মনে করো না। আমার চলে যাওয়া উচিত।’
‘ হুঁ, যান তবে।’
‘ খুব শিঘ্রই সময়গুলো চলে যাবে। আবার দেখা হবে, তবে একেবারে নিজের করে পাব তোমায়। সে সময়টার অপেক্ষা করছি আমি।’
আরিশ আর এক মুহূর্তও দেরী করল না। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল। বাইরে গিয়েই সে হাঁফ ছেড়ে নিঃশ্বাস নিল।অহনার সামনে কেমন দুর্বল হয়ে পড়ল সে। এত কঠোর, রসকসহীন মানুষটাও একটা মেয়ের সামনে বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলল। নিজেকে সে ইচ্ছেমতো বকা দেয়।
অহনা বাইরে চোখ দেয়। দেখল মাহতিম উল্টোদিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছে। অহনার ডাকে তার ধ্যান ভাঙ্গে। ভেতরে আসে।
মাহতিম অহনার দিকে তাকায় না। অন্যদিকে ফিরে থাকে। অহনার কাছে এসেই তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। প্রশান্তি নিয়ে নিশ্বাস নিল। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় হাত দুটো মাহতিমের বুকের সাথে লেপ্টে রয়েছে। মাহতিম এক নজর অহনার কোমল হাতের দিকে তাকায়। এই স্পর্শ তাকে ভেতর থেকে আরো দুর্বল করে দিচ্ছে। প্রতিদিনকার ছোঁয়া তাকে এটা মনে করিয়ে দেয়, এই ছোঁয়া ক্ষণিকের, খুব শিঘ্রই তা অন্য কাউকে ছুঁতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। মনে হতেই মাহতিম অহনার হাত দুটো ছিটকে দূরে সরিয়ে দেয়,
‘ কেন এমন করছ? আমাকে কষ্ট দেওয়ার কি আর কোনো উপায় তোমার জানা ছিল না?’
‘ আমি…’
কথা জড়িয়ে আসে অহনার। ঠোঁট মিলিয়ে কান্না করে দেয়,’ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।’
‘হোক। এটাই আমাদের লিখন ছিল। তুমি আর কখনো আমাকে স্পর্শ করবে না। তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তুমি পরপুরুষকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে পারো না। আমিও পারি না অন্যের বউকে নিজের সাথে এভাবে মিশিয়ে নিতে।’
‘ আমাকে তোমার থেকে বঞ্চিত করলে আমি ম’রেই যাব।’
মাহতিম অহনার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চেপে ধরে,’ একদম এসব কথা বলবে না। ম’রে গিয়ে কেউ শান্তিতে নেই। মৃ’ত্যু কখনো তোমাকে তোমার কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারবে না।’
‘ আমি কি করব বলো? কিছুতো বলো, যা করলে আমি তোমাকে পেয়ে যাব সারাজীবনের মতো। কখনো যেন হারানোর ভয় না থাকে।’
‘এমনটা হবে না। তুমি চিন্তা করো না। আরিশ খুব ভালো ছেলে, সে তোমাকে অনেক সুখে রাখবে। তার বুকে মাথা রাখলেই দেখবে তোমার সব কষ্ট ধুয়ে গেছে। আমার কথা মনেই পড়বে না।’
‘ বাজে কথা বলো না। আমি চাই না তাকে। আমার তোমাকে চাই। আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চাই। তুমি কেন আমার সাথে এমন করো। আমার কষ্ট হয় তোমার কঠোরতা দেখলে।’
‘ কি করব? আমি পারিনা তোমাকে একটা ভালো জীবন দিতে। আমার কাছে কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমার আর তোমার জগত সম্পূর্ণ আলাদা। জীবিত আর মৃ’তদের খেলা। কিভাবে তুমি আমাকে চাও?’
‘ আজগুবি কথা বন্ধ করো। আমি তোমাকে চাই ব্যাস। এখন আসো জড়িয়ে ধরো।’
বাচ্চাদের মতো দু হাত বাড়িয়ে দেয় অহনা,
‘ কি হলো ধরো।’
‘ কিছুদিন পর অন্যের বউ হবে তুমি। এটা যে অন্যায় তা বুঝতে পারছ না। কলঙ্ক লেগে যাবে যে তোমার।’
‘ তবে তাই হোক। কলঙ্ক দিয়ে দাও আমায়। কেউ যেন আমাকে আর পেতে না চায়। তুমি কলঙ্ক দিলে আমি সেটা আঁকড়েই জীবন পার করে দিতে পারব।’
মাহতিম হাত দিয়ে দেয়ালে আঘাত করে। কষ্টে ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। অসহায়ের মতো এক ঝটকায় অহনাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। অঝোড়ে কেঁদে উঠে। শক্ত করে আলিঙ্গন করে ঘাড়ে নাক ঘষে। অহনাও তার পোশাক খামচে ধরে। এতক্ষণ নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলেও আর পারেনি। দুর্বল হয়ে পড়ল।
ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়। আটকে রাখা দায়। মধুময় স্পর্শে কেউই ছাড়তে নারাজ। অদ্ভুত এক অনুভূতির শহরে ভেসে বেরায় দুজন কপোত কপোতী।
অহনা মৃদু স্বরে বলল,’ আমার খুব বিষন্ন লাগে তুমি না থাকলে। অথচ তুমি এলেই সব বিষন্নতা দূর হয়ে যায়। আচ্ছা এটা বলো, তুমি কেন আমাকে মেনে নিতে চাও না? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না? আমি জানি কখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি, তাও।’
‘ হাজারবার বলেছি।’
‘ কি বললে তুমি?’
‘ বলছি আমি আর তুমি আলাদা, তাই আমাদের মিলন সম্ভব না।’
‘আমরা চাইলেই সম্ভব। তুমি আর কখনো অদৃশ্য থাকবে না। কালকেই বাবাকে বলব আমাদের বিষয়ে। বাবা না করবে না। আমাকে খুব ভালোবাসে। আমার জন্য সব করতে পারে। তোমাকেও মেনে নেবে।’
‘আমি মানুষ হলেই মেনে নিত। যুদ্ধ জয় করে হলেও তোমাকে পেয়ে নিতাম, কাউকে দিতাম না। ভুল করেও না।’
‘ তুমি না, অদ্ভুত কথা বলো। জানি তুমি ম্যাজিক জানো। তাই বলে নিজেকে মানুষ ভাবাও বাদ দিলে কেন? আচ্ছা তুমি কে বলো তো?’
‘ আমি সে, যার কোনো অস্তিত্ব নেই পৃথিবীর বুকে।’
অহনা মাহতিমের বুকে কি’ল বসিয়ে দেয়,’ মজা নিচ্ছ তাই না? আমিও একটু ম্যাজিক শিখে বলব আমি মানুষ না, আমি ভূ’ত। সবাই আমাকে ভয় করো।’
‘ তুমি বিশ্বাস করছ না।’
‘ কি বিশ্বাস করব শুনি, যে তুমি মানুষ না, তুমি একটা আ’ত্মা তাইতো?’
‘ হ্যাঁ এটাই সত্যি।’
‘ আবার ফাজ’লামো। কালকেই বাবাকে বলব। আরিশকেও আর ঠকানো হবে না। এমনিতেও তাকে আমি ঠকাতে চাই না। সব বলে দেব।’
‘তুমি এটা করবে না। আমার জন্য এসব করবে না তুমি। তুমি কি দেখতে পাও না আমার কোনো শরীর নেই। আমি নিজেকে তোমার কাছে উপস্থাপনের জন্য শক্তি হারাই। কেন বুঝতে চাও না।’
অহনা ভাবে। এটা সত্যি অহনাকে ছোঁয়ার পর থেকেই আস্তে আস্তে তার শক্তি কমে আসে। অহনা মাহতিমের বুকে মাথা রেখে বলল,’ কে তুমি?’
‘ আমি কোনো সাধারণ মানুষ নই। আমি একটা আ’ত্মা। আমার কোনো শরীর নেই। তোমার জন্যই দৃশ্যমান হই। আমি তোমাকে ঠকাতে চাই না তাই সত্যিটা বলে দিচ্ছি। আমার পুনরায় ফিরে আসার কারণ তুমি এবং আমার এই দেশ। যারা দেশ’দ্রো’হী’তা করছে তাদের আমি শাস্তি দিতে চেয়েছি, অবশেষে দিলামও। এখন আর কেউ বেঁচে নেই। আমি ভেবেছি তোমাকে পেয়ে যাব। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম এটা সম্ভব না কখনোই। মৃ’ত আর জীবিত মানুষের জগত আলাদা। চাইলেও আমি তোমাকে পাব না। তুমি বিশ্বাস না করলেও এটাই সত্যি।….
চলবে…..
#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৩৩.
কথাগুলো শেষ দিয়েই মাহতিম অহনার দিকে তাকায়। এতক্ষণে মধ্যরাত হয়ে গিয়েছে অহনার। কথাগুলো হয়তো মনোযোগ দিয়ে শুনেইনি। তার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। মাহতিম ঘুমন্ত অহনার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ। ভীষণ মোহনীয় লাগছে ঘুমন্ত অবস্থায়। সৃষ্টিকর্তার নিপুণতা আরো গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে তার মধ্যে। কতটা নিষ্পাপ লাগছে। মাহতিম একবার তার চোখের পাপড়ি ছুঁয়ে দেয়।
আরিশের সাথে কথা বলা শেষ করেই সবাই ঘরে আসে। মাহতিম সবার পায়ের আওয়াজ টের পেয়ে অহনাকে খাটে শুইয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
সকাল হতেই মোড়ল আসে দেখা করতে। পরপরই চলে যায় তারা। আটটার বাসেই চলে এসেছে। কলেজে যাবে বলে ঠিক করে অহনা।
সাড়ে নয়টা হতেই অহনা নিজের ঘরের দরজা লাগিয়ে বেড়িয়ে পড়ে কলেজের উদ্দেশ্যে।
রোস্তম একটা বাংলো ভাড়া নিয়েছে। আগের জায়গায় অহনা একটা রুমে থাকতো। এখন দুই রুমসহ একটা ছোট বাংলো নিয়েছে। কয়েকদিন অহনার সাথে থেকে রোস্তম চলে যাবে। গ্রামে তার সব পড়ে আছে। মেয়ের টানাটানির জন্য এসেছে। না হয় সব ছেড়ে ছুঁড়ে আসত না। কয়দিন থেকেই আবার চলে যাবে।
অহনা ঘরের বাহির হতেই দেখল সামনে মাহতিম দাঁড়িয়ে আছে। দেখল আশেপাশে অনেক মানুষ। তাই কথা না বলে এড়িয়ে যেতেই মাহতিম বলল,’ ভুল তোমাকে করতেই হবে তাই না?’
আপনি দাঁড়িয়ে যায়। সন্দিহান চোখে পরখ করে মাহতিমকে। মাহতিম আবার বলল,’ মোবাইল নাওনি। ভুলে গেছ, প্রতিবার আমাকেই মনে করিয়ে দিতে হয় সব।’
অহনা ব্যাগে হাত দিয়ে দেখে, সত্যি মোবাইল নেই। দৌড়ে ঘরে গিয়ে মোবাইল নিয়ে আসে। বাইরে এসে মাহতিমের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি দেয়। পাশ কেটে চলে যেতেই বলল,’ তুমিও আস। আমার বাড়িতে নিশ্চয় তোমার কোনো কাজ নেই।’
‘ আমার ডিউটি শুধু তুমি। তাই তোমার সাথেই যাব।’
‘ এখন কত সুন্দর কথা বলছ। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ তোমার কি যে হয়? পালিয়ে যাও নতুবা চলে যাওয়ার বাহানা খুঁজ। আমি তোমাকে একদম বুঝতে পারি না। তোমাকে কেমন সিক্রেট মনে হয়।’
‘আমি সিক্রেট, এটা সত্যি।’
হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ তারা কথা বলে। রাস্তার পাশে ফুচকা দোকান দেখে অহনা থেমে যায়। দৌড়ে গিয়ে বলল,’ মামা, ঝাল করে এক প্লেট ফুচকা দিন।’
মাহতিম নাক কুঁচকে নেয়। কেমন বমি ভাব এনে অহনাকে বলল,’ এই খাবার খাবে তুমি এখন?’
‘ কেন? কি হয়েছে খেলে?’
‘ কি নোং’রা সব। তোমার কি বমি পাবে না?’
‘ ইচ্ছে করছে টকের সাথে তোমাকে চুবিয়ে খেয়ে নিই। কেমন বি’চ্ছিরি কথা বলছ।’
‘বিচ্ছিরি না ঠিক বলছি।’
‘ চুপ করো।’
পাশে থাকা কয়েকটা মেয়ে থ হয়ে তাকিয়ে থাকে অহনার দিকে। অহনা একই একা কথা বলছে দেখে সবাই অবাক হয়। দোকানদারও হা করে তাকিয়ে থাকে। একটা মেয়ে অন্য একটা মেয়েকে বলল,’ দ্যাখ, কত সুন্দর, স্মার্ট মেয়েটা, অথচ মাথা খারাপ। মানা যায় এই বিষয়টা? আহারে!’
অহনা রাগে গর্জে উঠ। তাকে কেউ মাথা খারাপ বলল। মাহতিম পাশ থেকে হাসছে। অহনা উঠেই মেয়েটাকে বলল,’ আমার মাথা একদম ঠিক আছে। তোমরা নিজের কাজ করো, আমার দিকে নজর দিতে হবে না।’
ফুচকাওয়ালা অহনার দিকে আরেকবার তাকিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
অহনা মাহতিমের দিকে তাকিয়ে বলল,’ আর একটাও কথা বলবে না বলে দিলাম, না হয় খু’ন করব।’
‘ কেউ নিজে ইচ্ছে থেকে যদি এই নোং’রা খাবারগুলো খায়, তাহলে আমার কিছু করার নেই। তবে তুমি লোকটাকে জিজ্ঞেস করো খাবারটা কিভাবে বানায়।
অহনা নাক ফুলিয়ে মাহতিমের দিকে তাকায়। তারপর কি যেন ভেবে ফুচকাওয়ালাকে বলেই বসল,’ আপনি কি ভালো করে হাত ধুয়েছেন?’
ফুচকাওয়ালা এক গাল হেসে বলে,’ হ আপা। ধুইছি, তয় বেশি ধুইবার সময় পাই নাই। কাজ করতেই তো আছি, ধোব কিভাবে কন?’
মাহতিম পুনরায় বলল,’ আহি, তুমি তাকে জিজ্ঞেস করো টয়লেটে গেলে সে হাত ধোয় কিনা।’
অহনা রেগে যায়,’ এত ফা’লতু প্রশ্ন আমি করতে পারি না তুমি করো।’
‘ বলেই দেখো।’
অহনা পুনরায় বলল,’ আচ্ছা আপনি যখন টয়লেটে যান তখন কি হাত ধোন?’
‘ হ আপা। না ধুইবার কি আছে। সারাদিন মরিচ কাটি, ওখানে যাওয়ার আগে যদি না ধুই তাহলে তো বুঝতেই পারছেন।’
অহনা হেসে দেয়। মাহতিম পুনরায় বলল,’ জিজ্ঞেস করো টয়লেট থেকে আসার পর ধোয় কিনা।’
লোকজনের সামনে অহনা কিছু বলতেও পারছে না। এমনিতেও পাগ’ল উপাধি পেয়ে গেল। ফুচকাওয়ালাকে বলল,’ আপনি কি টয়লেট থেকে এসে হাত ধোন?’
‘ এত সময় কই আপা। কাস্টমার আইসা দাঁড়াই থাকে। তাই তারাতাড়ি চলে আসি। যাওয়ার সময় ধুই, কিন্তু বের হওয়ার পর না।’
মাহতিম হেসে উঠে। অহনা বসা থেকে উঠে যায়। গা গুলিয়ে আসে। ফুচকাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ আপনার ফুচকা আপনি খান। আমি গেলাম, ইয়াখ….’
যাওয়ার পথে মাহতিমের সাথে আর একটাও কথা বলল না।
ক্লাসে যেতে দেরী হয়ে যায় অহনার। বাংলা ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষক ক্লাস করাচ্ছেন। অহনা বলল,’ মে আই কামিং স্যার?’
মধ্যবয়সী শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম চশমার ফাঁক দিয়ে এক নজর দেখে নেয় অহনাকে। পরপরই চশমা নামিয়ে বলল,’ নো, স্ট্যান্ড লাইক দিজ।’
‘ স্যরি স্যার।’
‘ কাম এন্ড সিট ডাউন।’
‘ থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।’
অহনা সামনের একটা বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়ে। পেছনের সিটেই ইরা বসে ছিল, তার পাশে হৃদয়। অহনা ইরাকে বলল,’ স্যার কখন ক্লাস শুরু করেছে, কি কি পড়িয়েছে?’
শিক্ষক মহাশয় আবার দেখে নেয় অহনা কথা বলছে। আশরাফুল স্যারকে সবাই জ’ল্লাদ স্যার বলে অভিহিত করে। আজ সেই জল্লা’দের হাতে পড়েছে অহনা। স্যার বয়ান টেনে বলে,’ হোয়াই ইউ আর টকিং ইন দ্য ক্লাস?’
অহনা কাঁচুমাচু ভাব তুলে ধরে বেঞ্চ থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে,
‘ স্যার, আমি আসলে….’
‘ কথা বলছিলে তাইতো?’
‘ স্যরি স্যার। আর বলব না। আমিতো শুধু জিজ্ঞেস করেছি স্যার কি পড়িয়েছে।’
‘ ম্যানার পার্ট কমপ্লিট করে আসবে। আরেকবার সুযোগ দিলাম। কথা বলতে দেখলে জানালা দিয়ে বের করে ফেলে দেব।’
পুরো ক্লাসরুম উচ্চস্বরে হেসে উঠে। স্যার অগ্নিচোখে তাকায়। সবাই চুপ করে যায়। একটা পিন পড়লেও এখন আওয়াজ হবে খুব জোরে।
অহনা মনোযোগ দিয়ে স্যারের বয়ান শুনে। আচমকা টের পায় তার পাশে কেউ বসে আছে। দেখতে পাচ্ছে না। অহনা বুঝে নেয় এটা মাহতিমই হবে। তাই আরেকটু কাছে গিয়ে বসে। অহনা লাজুক হাসছে। শিক্ষক পেছনে তাকাতেই অহনার দিকে চোখ পড়ে। তিনি কিছু বললেন না।
মাহতিম অহনার কাছে এসে তার চুলে হাত বুলায়। অহনা তার হাত সরিয়ে দেয়। গলা নামিয়ে বলল,’ এখন বিরক্ত করো না। ক্লাস করতে দাও। না হয় স্যার বের করে দেবে।’
মাহতিম যেন এটাই চায়। আরো কাছে আসতেই অহনা সরে যায়। মাহতিম গা ঘেঁষে অহনার হাতে হাত রাখে, বলল,’ ভেবেছি অনেক, আমার তোমাকেই চাই। যেভাবেই হোক আমি চাই।’
‘ তোমার মতি গতির ঠিক নেই। কখন কি বলো, মূলত আমাকে কষ্ট দেওয়াই তোমার প্রধান এবং একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
অহনা সামনে তাকিয়ে দেখল আশরাফুল স্যার তার দিকেই ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে। অহনা মাহতিমের হাত ছেড়ে দেয়।
‘ গেট আউট!’
শিক্ষকের বয়ানে অহনা কেঁপে উঠে। অহনার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। আবারো ঝাঁঝালো কন্ঠে শুনল,’ বেরিয়ে যাও!’
অহনা আর কোনো কথা না বলে সোজা বেরিয়ে যায়। বারান্দায় এসে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। মাহতিম পেছন পেছন এসেছে। অহনা মুখ ফুলিয়ে তার দিকে থেকে নজর সরিয়ে নেয়,
‘ একদম আমার সাথে কথা বলার চেষ্টাও করবে না।’
‘ স্যরি ম্যাম। আমিতো সবসময় এভাবেই ডিস্টার্ভড করে তোমাকে বাইরে নিয়ে আসতাম। তোমার কি মনে নেই?’
‘ তুমি কত বা’জে কথা বলতে পারো। থামো আর আমার কাছ থেকে চলে যাও। তোমার জন্য স্যার রেগে গেছে।’
‘ চলো ,বাইরে গিয়ে ঘুরে আসি।’
‘ না, আমার ভালো লাগে না। তুমি অদৃশ্য থাক সবার থেকে, এটা আমার মোটেও সহ্য হয়না। কেউ দেখলে কি এমন হবে? কেন দেখা দাও না?’
মাহতিম কি উত্তর দেবে বুঝে না। রেলিং ধরে দাঁড়ায়। অহনাও তার পাশে এসে দাঁড়ায়। চার তলা থেকে নিচে নজর দিতেই অহনা আরিশকে দেখতে পায়।
চলবে….
#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৩৪.
আরিশকে দেখেই অহনা থমথম খেয়ে যায়। মনে মনে উচ্চারণ করল,’ এই আপ’দটা আবার কোথা থেকে আসল?’
ভাবতে ভাবতেই আরিশও দেখতে পেল অহনাকে। এগিয়ে এলো অহনার দিকে।
‘ তুমি এখানে?’
আরিশের প্রশ্ন শুনে অহনার ধ্যান ভাঙ্গে,’ সে প্রশ্ন আমারো। আপনি এখানে?’
‘আসলে গ্রামে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছিলাম অনেকদিন সেটার জন্যই পারমিশন নিতে এসেছি। এখনকার হেড এর সাথে দেখা করতে হবে। তারপর মন্ত্রীর সাথে দেখা করে তার অনুমতি নিতে হবে।’
‘ ওহ আচ্ছা। তাহলে আমি এখন যাই?’
‘ মাত্র দেখা হলো, কোথায় যাচ্ছ? এখানেই কি পড় তুমি?’
‘ হু।’
‘ক্লাসের সময় বাইরে কি করো?’
‘, স্যার বের করে দিয়েছে।’
আরিশ হেসে দেয়,’ তার মানে বাচ্চাদের মতো তুমিও কোনো অন্যায় করেছ!’
‘ একদম না। আমি কোনো অন্যায় করিনি। অন্যায় করেছে মাহ….’
অহনা থেমে যায়। মাহতিমের নাম উচ্চারণ করতে গিয়েও আর করল না, বলল,’ হ্যাঁ দোষটা আমারই। আমি ক্লাসে কথা বলছিলাম।’
‘ বের যেহেতু করে দিয়েছে, চলো আমরা বাইরে থেকে ঘুরে আসি। এখন আমারও কোনো কাজ নেই আপাতত। এখানে যেহেতু তোমাকে পেয়ে গেলাম তাই আর কোনো সমস্যা নেই।’
অহনা না বলতে চাইলে মাহতিম তাকে আটকায়। সোজা কথায় বলে দেয়,’ তুমি যাবে।’
‘ কিন্তু!’
‘ আজ কোনো কিন্তু না। তুমি তার সাথে যাবে। তুমি খেয়াল করেছ, তোমাকে দেখতে পেয়ে সে কতটা খুশি? এভাবে তার আশা ভেঙে দিও না।’
‘, তুমি যে কি বলো বুঝতেই পারি না। একবার বলো তোমার আমাকে চাই, আরেকবার অন্যের হাতে তুলে দাও আমাকে। সমস্যা কি তোমার?’
আরিশ ব্রু কুঁচকে তাকায়,’ কার সাথে রাগ করছ? এখানে তো কেউ নেই।’
অহনা মৃদু হাসে,’ কিছু না। চলুন আপনি।’
তারা দুজন মিলে একটা পার্কে যায়। একটা বেঞ্চে গিয়ে আয়েশ করে বসে পড়ে। অহনা আরিশের দিকে তাকাচ্ছে না। অথচ আরিশ এক নজরে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে। চোখের পলক পড়ছে না তার। মাঝে মাঝে আরিশ নিজেও অবাক হয়, কেন সে অহনাকে নিয়ে ভাবে? ভুলতে পারে না কোনোমতেই। যেখানেই যায় তার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। এই দুইদিন তার বিচ্ছিরি একটা অবস্থা হয়েছে। তার দিনরাতের ঘুম হরণ করে নিয়েছে অহনা। দু চোখের পাতা এক করলেই অহনার মুখ ভেসে উঠে। আরিশ ভুবনমোহিনী সুন্দরী অহনার দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি দিল। প্রেমময় ছন্দে বলল,
এই সময়কে সাক্ষী রেখে
প্রিয়তমা সঙ্গীকে ভালোবাসি….
আরিশের এহেন কথায় অহনা পাশ ফিরে তাকায়। আরিশের চোখে-মুখে ভালোবাসার হাতছানি। বিশ্ব জয় করা এক হাসি ঠোঁটের কোণে। অহনাও তার সাথে হেসে বলল,’ থ্যাঙ্ক ইউ আরিশ।’
আরিশের কপালে ভাঁজ পড়ে। ভালোবাসার প্রতিউত্তরে কারা থ্যাঙ্ক ইউ বলে তা তার জানা নেই, বলল,’ এটা কি ঠিক করলে?’
‘ কেন? কি করলাম আমি?’
‘ ভালোবাসি বললাম। আর তুমি কিনা থ্যাঙ্ক ইউ বললে।’
‘ তাহলে কি বলব?’
‘ তুমিও নিজে ফিলিংস জানাবে।’
‘ তো এটা কি ফিলিংস না?’
‘ ঠিক আছে, আমাকে আর বুঝাতে হবে না। আমি আসছি। একটু বসো।’
আরিশ চলে যেতেই অহনা আপনমনে বাদাম চিবোয় আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সবকিছু কেমন ফাঁকা লাগছে। কত কেউ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে একা অনুভব করছে।
পাশে তাকাতেই দেখতে পায় মাহতিম উরুর উপর হাত দুটো ভাঁজ করে বসে আছে। অহনা তার দিকে তাকিয়েও না তাকানোর ভান ধরে বসে থাকে। মাহতিম নিরবতা ভেঙ্গে বলল,’ তোমার তাকে হার্ট করা উচিত হয় নি। তারতো কোনো দোষ নেই। সে কেন অবহেলিত হবে তোমার কাছে?’
‘ তো আমি কি এখন দুইজনকে একসাথে বিয়ে করব? তোমার যদি ইচ্ছে হয় তাহলে করব। তুমি কি শ’তিন নিয়ে সংসার করতে পারবে?’
‘ শ’তিন মানে?’
‘ ছেলেদের একাধিক বউকে শ’তিন বলে। তাহলে মেয়েদের একাধিক স্বামীকে কি বলে?’
‘ ওহহো! কিসব বলছ? এমন কিছুই হবে না। কিন্তু ছেলেটাকে ঠকাবে না।’
‘ তুমিতো ছেলে, তাই তার জন্য মায়া হচ্ছে। এখন একটাই কাজ করা যায়, আমি তোমাদের দুজনকেই বিয়ে করি। তোমরা যদি মানতে পারো, আমার কোনো অসুবিধে নেই।’
মাহতিম কি বলবে বুঝতে পারছে না। অহনার মাথাটা গেছে। কি বলছে সে? কীভাবে কি করবে কারো মাথা কাজ করছে না। মাহতিম নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে করে অহনার থেকে দূরে সরে যেতে চায়। কিন্তু পারছে না। এই মুহূর্তে তার মস্তিষ্ক শূন্য। মনে মনে বলল, আর্মি অফিসার হয়ে আমার কোনো কাজই হয়নি। এই সামান্য বিষয়টারও সমাধান বের করতে পারছি না। না দেশের জন্য কিছু করতে পারলাম, না এই মেয়েটার জন্য।
দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মাহতিমের।
অহনা খেয়াল করল মাহতিম চুপ করে আছে। তার গায়ে ফুঁ দিয়ে বলে,’ তুমি এখনো সামনে আসছ না, এতো ভয় কিসের? কাকে ভয় পাচ্ছ? কেন পাচ্ছ? আমার নিজেকে পা’গল পা’গল লাগে তোমার কথা ভাবলেই।’
‘ কি করব বলো? আমার কাছে কোনো রাস্তা নেই। আমি কি করব? কিচ্ছু জানি না।’
এরই মাঝে হাজির হয় বন্ধুমহল। ক্লাস শেষ দিয়ে তারাও এসেছে আড্ডা দিতে। ইরা অহনার কাছে এসেই বলল,’জীজুকে দেখেছি সকালে কলেজে এসেই। তুই তো কিছু বললি না আমাদের?’
‘কি বলব আমি?’
‘ জীজু তোর জন্য এখানেও চলে আসল, সেটা তুই জানতি, কিন্তু আমাদের কিছুই বললি না। বাহ, বাহ এখনি আমাদের এত অবহেলা। বিয়ের পর মনে হয় আমাদের নামটাও ভুলে যাবি।’
‘ প্লিজ বিরক্ত করিস না। তোরা অন্য কোথাও গিয়ে সময় কাটা। আমাকে এখনো একটু একা থাকতে দে।’
‘ জানি, জীজু একটু পরেই আসবে। হয়তো তোর জন্য কিছু নিতে গেছে। তাই আমাদের সরিয়ে দিচ্ছিস? আমরা তো যাব না। এখানেই থাকব। দেখব জীজু কি করে? আমরা তার শা”লা/শা”লি আমাদের সাথেওতো সময় কাটাতে হবে নাকি?’
অহনা রেগে যেতেই মাহতিম বলল,’ ওদের সাথে রেগে কি করবে? ওরাতো ঠিকই বলছে, ওদের অধিকার আছে…’
মাহতিমের কথা শেষ হতে না হতেই অহনার কানে ভেসে আসে,
প্রণয়িনী প্রেয়সী নন্দিনী_
যতবার তোমায় দেখি_
ততবারই নতুন রুপে প্রেমে পড়ি_
পাগল প্রেমিক আমি_
তোমার মায়াময় সেই হাসি, হরিনাভ দুটি চোখ_
কপালের ভাঁজ, উজ্জ্বল মুখশ্রী_
সবকিছু আমায় ভাবতে শেখায়_
আমিও প্রেমে পড়েছি_
আমিও ফেঁসে গিয়েছি_
ভীষণভাবে ফেঁসে গিয়েছি_
অতএব ভালোবাসতে শিখেছি_
তুমিও কি আমাকে সেই ভালোবাসা দেবে_
যতটা আমি তোমাকে বেসেছি?
হাতে এক গাদা গোলাপ নিয়ে হাঁটু গেড়ে প্রেম নিবেদন করল আরিশ। অহনা স্থির নয়নে তাকিয়ে রইল। বাকহারা সে ছেলেটার পা’গলামো দেখে। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। সে’কি গ্রহণ করে নেবে নাকি ফিরিয়ে দেবে। দ্বিধান্বিত হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছুই মাথায় আসছে না….
চলবে….