ছন্দময় সংসার পর্ব-০১

0
728

#_সূচনা_পর্ব_
#_ছন্দময়_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_

–” দেখো রোজ রোজ এতো অশান্তি ভালো লাগে নাহ। আমাদের যখন কোনো কিছুতেই মিলমিশ হচ্ছে নাহ। তাহলে মিউচুয়ালি ডিভোর্স হয়ে যাওয়ায় ভালো।”

তরির দিকে তাকিয়ে কথাটাহ বলে ওঠে কুশান। তরি কিছু নাহ বলে কুশানের দিকে তাকিয়ে থাকে। হালকা হাসে তরি। কুশান তরির এই শান্ত দৃষ্টির সাথে নিজের দৃষ্টি মিলাতে নাহ পেরে অফিস যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।

তরি কিছু সময় ডাইনিং টেবিলে বসে থাকে। সামনে একটা প্লেটে রুটি তরকারি আছে। কিন্তু,, খাবার যেন মুখে উঠছে নাহ তার। যন্ত্রণা হচ্ছে তরির,, বুকের মাঝে এক অদৃশ্য ব্যাথা অনুভব হচ্ছে তার। আর খেলো নাহ তরি,, হাত ধুয়ে জানালার পাশে দাড়ায়।

কুশানের কথা ভাবছে তরি। কত সহজেই ডিভোর্সের কথা বলে দিলো কুশান। বিয়ে হয়েছে আজ ছয় বছর হতে গেলো। একটা চার বছরের ছেলেও আছে তার। কুশান কোনো কিছু নাহ ভেবেই,, ডিভোর্সের কথা বলে দিলো? কিভাবে পারলো সে? পরিবার থেকে দেখে শুনেই বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তাকে,, কোনো কিছু নাহ ভেবেই পরিবারের এক কথায় কুশানকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো তরি। তার এমন প্রতিদান পেলো তরি?

” মাম্মাম ” কান্নামেশানো রিনরিনে আওয়াজে ধ্যান ভাঙে তরির। তাড়াতাড়ি দৌড়ে রুমে আসে তরি। শিশির উঠে গেছে। শিশির কুশান আর তরির এক মাত্র ছেলে। শিশির বিছানার উপর বসে বসে চোখ ডলছে। মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। উঠে মাকে নাহ দেখতে পেলে এই চার বছর বয়সে এখনও কান্না করে শিশির।

তরি এগিয়ে আসে ছেলের কাছে,, শিশির মাকে দেখে একটু মিষ্টি হাসি দেয়। তরি শিশিরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই শিশির এগিয়ে এসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে। তরি শিশিরের কপালে একটা চুমু একে দেয়,, তারপর আগলে নেয় নিজের নাড়ি ছেড়া কষ্টের মানিককে।


কুশান নিজের কেবিনে বসে অফিসের কাজ করছে। আজকাল কুশানের মন মেজাজ বড্ড খিটখিটে হয়ে থাকে। বাসায় এতো অশান্তি থাকলে,, মন মেজাজ ভালো থাকে কার?

আজকাল,, নাহ! বেশ অনেকদিন যাবত তরির সাথে তার ঝগড়া লেগেই থাকে। সব কিছুতেই তাদের মাঝে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। আর ভালো লাগে নাহ এইসব কুশানের।

কুশান এক দৃষ্টিতে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এমন সময় দরজায় কেউ নক করলে,, কুশান তাকে ভেতরে আসার অনুমতি দেয়। কুশান দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রিমি। রিমি হলো কুশানের পি.এ।

রিমি কুশানের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। কুশানও হালকা হাসে। রিমি এগিয়ে আসতেই কুশান বলে ওঠে,
–” বসো।”

রিমি হালকা হেসে কুশানের অপোজিট চেয়ারে বসে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” স্যার! ফাইল গুলো কমপ্লিট হয়ে গেছে।”

কুশান হাত বাড়িয়ে ফাইল গুলো নিয়ে দেখতে থাকে। রিমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কুশানের দিকে। কুশানকে বেশ ভালো লাগে রিমির। অনেক সুদর্শন একজন পুরুষ কুশান। রিমি এইটাও জানে,, কুশান বিবাহিত এমনকি বাচ্চাও আছে। কিন্তু,, তাও নিজের ভালো লাগা কে আটকাতে পারে নাহ রিমি।

আজ কুশানকে একটু ফ্যাকাশে লাগছে। রিমি দেখতে পাচ্ছে,, কুশানকে আজ বড্ড গোমড়া লাগছে। রিমি কিছুটা ভ্রু কুচকিয়ে তাকায় কুশানের দিকে। কুশান খুব মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখছে। রিমি আস্তে করে বলে ওঠে,
–” স্যার!”

কুশান ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে রিমির দিকে তাকায়। রিমি কুশানের দিকে তাকিয়ে হালকা ভাবে বলে ওঠে,
–” আজ আপনাকে খুব মন মরা লাগছে। কিছু হয়েছে? কোনো সমস্যা?”

রিমির কথা শুনতেই কুশানের তরির কথা মনে পড়ে। আজ সকালে মেয়েটাকে ডিভোর্সের কথা বলে এলো সে? এইটা কি ঠিক করলো? কিন্তু কি করবে সে? রোজ রোজ সামান্য বিষয় নিয়েও কথা কাটাকাটি হয়,, ঝামেলা হয়,, ঝগড়া হয়,, ভালো লাগে নাহ কুশানের।

রিমি কুশানের দিকে তাকিয়েই আছে। কুশানকে বেশ অন্যমনস্ক লাগছে তার কাছে। রিমি আরও কিছু সময় চুপ থেকে আস্তে করে বলে ওঠে,
–” স্যার!”

রিমির ডাকে ধ্যান ভাঙে কুশানের। রিমির দিকে একপলক তাকিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” তেমন কিছু নাহ। আমি ঠিক আছি।”

রিমি আর কিছু বলতে গিয়েও বললো নাহ। কুশান ফাইলে আরও কিছু সময় চোখ বুলিয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যা! দেখলাম। ঠিক আছে সব কিছু। আমি নিউ ফাইল পাঠিয়ে দিবো তোমার কাছে।”

–” ঠিক আছে। আমি তাহলে আসি?”

–” হুম!”

রিমি চলে যায়। কুশান ল্যাপটপ টাহ অন করে আবার কাজ শুরু করে দেয়। কিন্তু,, কেনো জানি আর কাজে মন বসছে নাহ কুশানের। ল্যাপটপ বন্ধ করে কিচেনে কল করে কফি আনতে বলে কুশান।


#_রাত_৯_টাহ_৪৫_মিনিট_

তরি শিশিরের সাথে খেলা করছে। শিশির একটা গাড়ি নিয়ে খেলতে খেলতে তরির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মাম্মাম! পাপা আসে নাহ কেন এখনো?”

তরি ছলছল চোখে ছেলের দিকে তাকায়। কুশান সাধারনত ৯ টার আগে আগেই বাসায় চলে আসে। কিন্তু,, আজ যে বড্ড দেরি করছে। শিশির এগিয়ে এসে তরির মুখ ধরে বলে ওঠে,
–” মাম্মাম! বলো নাহ,, পাপা কই? পাপা আসে নাহ কেন?”

তরি কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি জানি নাহ বাবা।”

–” চলো নাহ,, মাম্মাম! আমলা পাপাকে কল কলি।”

–” আমি কল করে দিচ্ছি,, তুমি কথা বলো,, ঠিক আছে বাবা?”

–” ঠিক আছে।”

কুশান আর তরি কখনো শিশিরের সামনে কথা কাটাকাটি করে নি। তাই,, শিশিরের এই ঝগড়ার ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তরিও যতটা সম্ভব ছেলেকে এইসব থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু,, আজকাল সব কিছু যেন হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে।

কল বেজে যাচ্ছে কুশানের। কিন্তু,, রিসিভ হচ্ছে নাহ। আবারও কল দেয় তরি। এইবারও কল রিসিভ হলো নাহ। তাহলে,, কি কুশান ইচ্ছে করে তরির কল এভয়েড করছে? শিশির বিছানার উপর দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” মাম্মাম! আমাকে ফোন দাও,, আমি কথা বলি,, পাপাল সাতে।”

তরির বুকের ভেতর টাহ ধুক করে উঠে। কি উত্তর দিবে এখন তরি এই বাচ্চা ছেলেকে? ওযে এইসব ব্যাপারে এখনো কিছুই বুঝে নাহ। শিশির আগ্রহ হয়ে আবার ওঠে,
–” কি হলো মাম্মাম? দাও।”

তরি নিজেকে একটু সামলিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” তোমার পাপা আজ খুব ব্যাস্ত সোনা! আসতে একটু দেরি হবে। তুমি আজ ঘুমিয়ে পড়ো।”

শিশির একটু খুত খুত করতে করতে বলে ওঠে,
–” আমাল তো পাপাল জন্য মন কেমন কলে মাম্মাম!”

–” পাপা আজ খুব ব্যাস্ত যে। চলো,, আজ মাম্মাম বেশি বেশি আদর করবে তোমাকে।”

তরি শিশিরকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ছেলেকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।

#_রাত_১০_টাহ_৩০_মিনিট_

শিশির ঘুমিয়ে গেছে। অনেক খুঁতখুঁত করেছে আজ কুশানের জন্য। তরি ঘড়ির দিকে তাকায়। এখনো এলো নাহ কুশান। তরি শিশিরের দিকে তাকায়। পুরো বাবার মতো দেখতে হয়েছে ছেলেটা। হালকা হাসে তরি। শিশিরের কপালে এক ভালোবাসার পরশ একে দেয় তরি।

এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজে চমকে উঠে তরি। কুশান এসেছে। আজ এতো রাত করে এলো,, কেন? রাগ করে? তরি দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে কুশানকে দেখে বুক টাহ ধুক করে উঠে তরির।

কুশানকে বড্ড অগোছালো দেখা যাচ্ছে। চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে,, শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে,, শার্টের উপরের তিনটা বাটনই খোলা,, ব্লেজার টাহ হাতে ঝোলানো,, চুল গুলোও উসকোখুসকো হয়ে আছে,, ফর্সা মুখটাহ ফ্যাকাশে হয়ে আছে,, খুবই ক্লান্ত দেখা যাচ্ছে কুশানকে। কুশান শান্ত ভাবে বলে ওঠে,
–” ভেতরে যেতে দিবা নাহ?”

তরি কোনো কথা নাহ বলে দরজা থেকে সরে দাড়ায়। কুশান ভেতরে চলে গেলে তরিও দরজা বন্ধ করে কুশানের পেছন পেছন আসে। কুশান ভেতরে গিয়ে দেখে বিছানার উপর শিশির ঘুমিয়ে আছে। রোজ রাতে ছেলেটার সাথে অনেক সময় খেলা করে কুশান। আজ ছেলেটাহ ঘুমিয়ে গেছে।

কুশান ব্লেজার টাহ পাশে রেখে শিশিরের দিকে এগিয়ে যায়। শিশির কত সুন্দর শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। কুশান শিশিরের কপালে একটা চুমু একে দেয়। তরি কিছুটাহ দুরে দাড়িয়ে দৃশ্যটাহ দেখে। কিন্তু কিছু বলে নাহ।

কুশান একপলক তরির দিকে তাকিয়ে নিজের শার্ট খুলে পাশে রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। তরি এগিয়ে এসে শার্টটাহ নিয়ে ময়লার কাপড় রাখার জন্য বাস্কেটে রাখতে গিয়েও রাখে নাহ। শার্টটাহ নাকের কাছে নিতেই,, ঘামের গন্ধের সাথে সিগারেটের গন্ধও আসে। কুশান সিগারেট খাচ্ছে? কই আগে তো খেতো নাহ,, তাহলে? কবে থেকে খাচ্ছে সিগারেট?

#_চলবে………🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে