চোখের আড়ালে পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
715

#চোখের আড়ালে
#Maishara_jahan
Part………18 ( শেষ পার্ট)

মাহুয়া কিছু বুঝে উঠার আগে তাকে ছেড়ে বলে _ কখন ধরে অনেক ইচ্ছে করছিলো। অনেক ক্ষন ধরে কন্ট্রোল করছিলাম। এখন আর সম্ভব হয়নি।
বলে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মাহুয়া শক হয়ে বসে আছে।

বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। রিমির আর ফারহানের বিয়ের সাথে তাদের বিয়েটাও হয়ে যাবে। সবাই বিয়ে ঠিক করে তাড়াতাড়ি চলে যায়। বিয়েতে অনেক কাজ আছে তাই। সবাই বিয়ের কাজে ব্যস্থ হয়ে যায়। দেখতে দেখতে গায়ের হলুদের দিন চলে আসে।
সবাই অনেক খুশি। রিমি হলুদ লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে৷ সাইডে রিমান হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে বসে আছে। নাচ গান তোহ আছেই। সমস্যাটা হয়েছে আরাবের। সে রিমানের হলুদ এ যাবে নাকি ফারহানের বুঝতে পারছে। তাই আরাব ঠিক করে অর্ধেক সন্ধ্যা রিমানের সাথে থাকবে আর রাতে ফারহানের।

রিমান রিমির হলুদ দেওয়ার সময় ফারহান ঢোল বাজিয়ে নেচে আসে। আরাব আর রিমান ফারহানকে দেখে ওরাও উঠে ফারহানের সাথে নাচতে চলে আসে। ওদের নাচ দেখে রিমিও উঠে আসতে চাই কিন্তু মা জোর করে বসিয়ে রাখে।

ফারহান ঢোল বাজানো শেষ করে জোরে বলে_ আমি এসে গেছি।
রিমানও হেঁসে জোরে বলে _ কিন্তু কেনোওও?
ফারহান _ রিমিকে দেখতে না মানে তোকে দেখতে।
রিমান _ আমাকে দেখার কি আছে?
_ আরে তোকে হলুদ লাগাতে এসেছি। আমার বন্ধুর হলুদ আর আমি লাগাবো না, তা কি হয়।

আরাব ফারহানের কাঁধে হাত রেখে বলে _ একদমি হয় না। তোকে মিস করছিলাম।
ফারহান আরাবের দিকে তাকিয়ে, চোখ দুটো ছোট করে, আস্তে করে আরাবের হাতটা তার কাধ থেকে নামিয়ে দেয়। আরাব ফারহানের রাগান্বিত চেহেরা দেখে ওর থেকে একটু দূরে সরে বলে _ কি হয়েছে?

ফারহান আরাবকে মারতে যায় আরাব রিমানের পিছনে লুকিয়ে যায়। আর রিমান বার বার আস্তে করে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু আরাব রিমানকে ধরে রেখেছে। ফারহান রিমানের সামনে দাঁড়িয়ে আরাবের দিকে তাকিয়ে বলে _ শালা, আজ প্রমান হয়ে গেলো তো যে, তুই রিমানকে বেশি গুরুত্ব দিস। ওকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিস আমাকে শুধু ফ্রেন্ড।

আরাব রিমানের পিছন থেকে বেরিয়ে এসে বলে _ মানে।
ফারহান আবার মারতে যায়, আরাব আবার তাড়াতাড়ি রিমানের পিছনে গিয়ে তাকে ধরে রেখে বলে _ তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি তোকেই বেশি গুরুত্ব দিস।

এটা শুনে রিমান আরাবের হাত ছাড়িয়ে বলে _ কিহহহ?
আরাব কনফিউজড হয়ে বলে _ আরে, আমি তোদের দুইজনকেই সমান গুরুত্ব দেয়, আর তোরা দুজনি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

ফারহান _ আচ্ছা, তাহলে আজকে হলুদ তো আমারো ছিলো কই গেলি না তো?
আরাব _ হলুদ কি শেষ হয়েছে। আমি ভেবেছি রিমানকে আর রিমিকে হলুদ লাগিয়ে তোর বাসায় চলে যাবো। কিন্তু আন্টিদের জন্য চান্সই পাচ্ছি না।

ফারহান _ সত্যি?
রিমান _ ঠাডা পড়া মিথ্যা কথা। ওর যাওয়ার কোনো নিয়ত ছিলো না। তোর সামনে এমনি চাপা মারছে।
আরাব পিছন থেকে রিমানের মাথায় মেরে বলে _ সব নষ্টের গোড়া তুই। বিয়ে তোর কিছু দিন পরে করলে কি হতো?

রিমান _ তুমি তো বলবেই, তোমার বিয়েটা যে আগে আগে হয়ে গেছে। আমি এটা বুঝলাম না লেখিকা তোর বিয়েই কেনো সবার আগে করায়? আমাকে কি চোখে দেখে না?

ফারহান _ আমারো একি প্রশ্ন। তোকে না দেখলেও আমাকে তো দেখার কথা।

আরাব _ আমার বিয়েতে নজর না লাগিয়ে, নিজেদের হলুদে নজর দে।

ফারহান রিমির দিকে তাকায়। রিমি হাসি দিয়ে ফারহানের দিকে তাকায়। ফারহান রিমির দিকে তাকিয়ে হাতে হলুদ নেয়। রিমি লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। ফারহান রিমির দিকে যেতে নিয়ে, ইউটান মেরে রিমানের কাছে গিয়ে রিমানের পুরো মুখ মাখিয়ে দেয়। রিমি এটা দেখে অভাকের শেষ সীমানায় চলে যায়।

রিমান ও হলুদ নিয়ে ফারহানকে মাখিয়ে দেয়। আর দুজনে মিলে আরাবকে মাখায়। সবার মাঝে হলুদ নিয়ে যুদ্ধ বেঁধে যায়। একটু পর রিমান হাত পিছনে রেখে রিমির দিকে এগোতে থাকে। রিমি রিমানের দিকে বিস্ময়কর চেহেরা নিয়ে তাকিয়ে বলে _ ভাইয়া অনেক টাকা খরচ করে পার্লার থেকে সেজেছি কিন্তু।

রিমান রিমির কাছে গিয়ে, তার পুরো মুখ মাখিয়ে বলে _ তো কি হয়েছে, হাজারটা পিক তো তুলেছিস আর কতো।
রিমি নেকা কান্নার মতো আওয়াজ করে বলে _ আআআ শয়তান আমার আরো পিক তোলার বাকি ছিলো। আমার সাজ শেষ। কুত্তাআআআ

রিমি রাগে সামনে বাটিতে সুন্দর করে সাজানো হালুয়া ছিলো সেটা নিয়ে মাখিয়ে দেয়। রিমান লাফ দিয়ে উঠে যায়। রিমি ফল নিয়ে রিমানে গায়ে মারছিলো।

আরাব হাতে হলুদ নিয়ে তৃষার দিকে এগোতে থাকে। তৃষা পিছাতে পিছাতে বলে _ আর না পিল্জ। সবাই ভুত বানিয়ে দিয়েছে, এখন যতোটুকু আছে আপনি নষ্ট করেন না পিল্জ।
_ আমার বউকে আমি ছাড়া সবাই হলুদ দিয়েছে এটা কেমন না। তাছাড়া এটা আমি মানতে পারবো না। তাই হলুদ তো আমি লাগাবো। সেটা তোমার ইচ্ছাই হোক বা অনিচ্ছায়।

তৃষা দাঁড়িয়ে বলে _ আচ্ছা লাগান তাহলে, কিন্তু পুরো মুখ মাখবেন না প্লিজ।
তৃষা চোখ বন্ধ করে মুখ এগিয়ে দিয়েছে। আরাব মুচকি হেঁসে বলে _ কোথায় দিবো জায়গায় তো নেয়।
তৃষা চোখ বন্ধ করেই বলে _ সেখানে খুশি দিয়ে দিন।
আরাব হেঁসে বলে _ ঠিক আছে।
এটা বলে আরাব আঁচলের তল দিয়ে হাত ঢুকিয়ে পেটে হলুদ দিয়ে চলে যায়। তৃষা চোখ খুলে আগে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেও দেখেছে কিনা।

সবাই নাচা নাচি করে হয়রান হয়ে যায়। রিমি যায় গোসল করতে। রিমান আর ফারহান ও যায় গোসল করতে।

আরাব গোসল করতে যেতে নেয়, তৃষা পিছন থেকে আরাবের পাঞ্জাবির কর্লার ধরে টান দিয়ে পিছনে নিয়ে বলে _ আগে আমি যাবো।
আরাব _ তোমার গোসল করতে লেইট হয় অনেক। তাই আমি আগে যাবো।
_ তো কি হয়েছে তাও আমিই আগে যাবো। সবাই নাচবে একটু পরে আর আমি মিস করতে চাই না।
_ আমিও চাই না। আমি যাবো দেখি কে আটকায়।

তৃষা একটু ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলে _ দেখেন রাত হয়ে গেছে। গোসল করতে বেশি লেইট করলে ঠান্ডা লেগে যাবে আমার। তাই আমি আগে যায় পিল্জ।
আরাব ও ইমোশনাল ভাব নিয়ে বলে _ তাও ঠিক কথা। ঠিক আছে যাও।
তৃষা যেতে নেয় আরাব হাত ধরে বলে _ আমি লেইট করে গোসল করলে তো আমারে ঠান্ডা লেগে যাবে। চলো এক সাথেই গোসল করে ফেলি।
_ মানে,,

আরাব তৃষাকে নিয়ে গোসল খানায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। বাকিটা ইতিহাস।

অনেক ক্ষন পর রিমান আর ফারহান আরাবের রুমে আসে। আরাব গোসল করে বের হয়ে ওদের দেখে বলে _ তোরা এখানে কেনো?

রিমান বিছানায় বসে বলে _ কাজের জন্য এসেছি।
আরাব _ কি কাজ?
ফারহান _ ভুলে গেলি নাকি? আর এতো লেইট হয় তোর গোসল করতে?
_ কিসের জন্য এসেছিস ঐটা বল।
রিমান _ আমি মাহুয়াদের বাসায় যাবো ছদ্ম বেসে। ওকে হলুদ দিয়ে আসবো। তুই নিয়ে যাবি আমাকে।
_ ও আচ্ছা তুই রেডি হ আমি আসছি।
_ কি রেডি হবো৷ ফারহান আমার জন্য বোরখা নিয়ে আসছে। আর কিছু পেলো না।
_ ঐটাই পড়ে নে, কেও বুঝবে না। যা যা এখন বের হ।
ফারহান _ আমাদের তারিয়ে দিচ্ছিস কেনো? কি ব্যাপার?
_ কিছু না, এমনি।

তখনি তৃষা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়। ফারহান
আর রিমান আরাবের দিকে তাকিয়ে আছে। তৃষা দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে _ আপনারা কখন আসলেন?
ফারহান _ এখনি, আরাবকে ডাকতে এসেছিলাম। আরাব তারাতাড়ি নিচে আয়।

বলে দুজন তাড়াতাড়ি চলে যায়। রিমানকে অনেক জোর করে বোরকা পড়ানো হয়। সে বোরকা পরে গাড়ির ভিতরে বসে থাকে। আরাব আসার পর গাড়িতে বসে হা হা করে হেঁসে দেয়। রিমান মুখটা বের করে বলে _ চুপ একদম হাসবি না।

মুখ দেখার পর আরাব আরো জোরে হেঁসে দেয়। আরাবের দেখা দেখি ফারহান ও হেঁসে দেয়। রিমান পারে না দুজনকে মেরে ফেলতে। তিনজনে কোনো মতে হলুদে পৌঁছে যায়। তিনজনে গাড়ি থেকে নেমে যেতে থাকে হঠাৎ ফারহান আর আরাব থেমে যায়। রিমান একটু এগিয়ে আবার ফিরে এসে বলে _ কিরে যাবি না?

ফারহান _ তোকে কেমন দেখা যাচ্ছে যানিস?
_কেমন?
আরাব _ বোরকা পড়া মুসটান্ডা দেখা যাচ্ছে ।
_ মানে?
ফারহান _ একটু মেয়েদের মতো হাট। এমনিতেই কতো লম্বা দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে ছেলেদের মতো হাঁটছিস।
_ তো কি এখন৷ কমর নাচিয়ে নাচিয়ে হাঁটবো।
আরাব_ হ্যাঁ
_ সর পারবো না, চলে যাবো চল।
আরাব_ চল।
রিমান একটু গিয়ে বলে _ তোরা আমাকে আটকাবি না?
ফারহান _ না।
_ তোরা অনেক খারাপ।

রিমান একটু কমর দুলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছি। ফারহান আর আরাব অনেক কষ্টে হাসি আটকিয়ে রেখে যাচ্ছে। তাদের দেখে মাহুয়ার একটু সন্দেহ হয়। মাহুয়ার বাবা খুশে হয় অনেক। তারা দুজন ও হলুদ লাগায়।

রিমান বোরকা পড়ে গিয়ে মাহুয়াকে হলুদ লাগিয়ে ছবি তোলার সময়, রিমান তার হাত মাহুয়ার পিছনের দিক দিয়ে নিয়ে তার কমরে চিমটি মারে। মাহুয়া অভাক হয়ে রিমানের দিকে তাকায়। রিমান মাহুয়ার কানের কাছে গিয়ে বলে, আমি রিমান উপরে গিয়ে আমার সাথে দেখা করো।

মাহুয়া হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তার বাবাকে ডাক দিয়ে বলে _ বাবা দেখো আমার হলুদে রিমান বোরকা পড়ে এসেছে।

সবাই রিমানের দিকে তাকিয়ে আছে। রিমান দাঁড়িয়ে বোরকা খুলে বলে _ আমার বউকে আমি হলুদ দিতে এসে সারপ্রাইজ দিয়েছি তো কি হয়েছে।
সবাই অনেক এক্সাইটেড হয়ে চিৎকার করতে থাকে। রিমান আস্তে করে বলে _ গাধা তুমি কি ভেবেছো তোমার বাবা রাগ করবে ? আর আমাকে বকা দিবে? সিলি গার্ল।

রিমান মাহুয়ার সাথে বসে ছবি তুলে। অনেক জন এসে রিমানকেও হালকা করে হলুদ লাগায়। পরে তিনজন খেয়ে চলে আসে ফারহানের বাড়িতে। সেখানে সব ফ্রেন্ডরা মিলে একসাথে পার্টি করতে থাকে। রিমান সেখানের ঘুমিয়ে যায়।
_____
দেখতে দেখতে বিয়ের সময় এসে পড়ে। রিমি, মাহুয়া বউ সেজে বসে আছে। ওরা বড়ো একটা কমিনিসেন্টার বুক করে। সবাই মিলে সেখানে যায়। যখন মাহুয়া আর রিমিকে এক সাথে বউ রুপে ফারহান আর রিমানের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। দুজনেই হা করে দাঁড়িয়ে থাকে। আরাব এসে বলে _ মুখ বন্ধ কর দুজনে মশা ঢুকে যাবে।

ফারহান _ কিছু ক্ষন আগে কে যেনো তৃষা ভাবীকে কালো শারীতে দেখে দুই ঘন্টা হা করে ছিলো।
রিমান _ তোর মুখে তো মশা ঢুকে, ঘুরে বেড়িয়েও গেছে।
আরাব _ আমার বউ আমি হা করতেই পারি।
রিমান _ তো আমরা কি অন্য জনের বউকে দেখছি নাকি। সাদা লেহেঙ্গায় একদম পরী লাগছে।
ফারহান _ আচ্ছা এখন যদি আমি গিয়ে রিমিকে জরিয়ে ধরি কেও কি কিছু বলবে? আমার অনেক ইচ্ছে করছে।
রিমান _ কারো কথা জানি না, আমি অনেক কিছু বলবো না, করবো। আমার বোনের থেকে দূরে থাকবি।
ফারহান _ এখন তো আমার বিয়ে হচ্ছে তোর বোনের সাথে তাহলে প্রবলেম কি?
_ এখনো হয়নি,আগে হয়ে যাক তারপর।

কিছু ক্ষন পর তাদের বিয়েও হয়ে যায়। আগে রিমির বিয়ে হয় তারপর রিমান বিয়ে করে। বিয়ে শেষ সব শেষে এখন বিদায় এর পালা। এই মূহুর্তটা সব মেয়ের জন্য একটু কষ্টের হয়। নিজের জীবন সঙ্গীকে পাওয়ার সুখটা বাবা মার থেকে দূরে চলে যাওয়ার কষ্টটা ভুলাতে পারে না। মাহুয়াও কান্না করছে, আর রিমিও।

রিমি কান্না করে রিমানকে বলছে _ এখন তো তুই খুশি, তোকে আর কেও জ্বালাবে না।
রিমানের চোখেও পানি চলে আসে। চোখের পানি আড়াল করে রিমান বলে _ তুই এই কথা বলছিস আর আমি তো ভাবছি আমি, এখন থেকে কাকে জ্বালাবো।

কিছু ক্ষন ইমোশনাল হয়ে রিমান রিমিকে জরিয়ে ধরে থাকে। কারন রিমি অনেক কান্না করছে। রিমান রিমিকে ছেড়ে বলে _ একটা অফার আছে তোর জন্য।
রিমি নাক টানতে টানতে বলে _ কি?
_ বিয়ে হয়ে গেছে তো কি হয়েছে। চল বাসায় চলে যায়। ফারহানের যখন ইচ্ছে হবে ও চলে আসবে৷

ফারহান মাঝখানে এসে বলে _ রিমি চল, ঐখানে তোকে সবাই ডাকছে।
রিমির বাবা চোখে পানি এনে বলে _ দূর এটা কিসের বিয়ে। মানি না আমি এই বিয়ে। চল মা তুই আমার বাসায় থাকবি। কোথাও যাওয়ার দরকার নেয় তোর।
ফারহান মাথা ধরে বলে _ আল্লাহ আমার মাথা ঘুরছে। সবাই পাগল হয়ে গেছে।
তখন রিমির মা এসে বলে _ দুইজন কি পাগল হয়ে গেছে নাকি। বিয়ের পর সব মেয়েদেরই স্বামীর ঘরে যেতে হয়।

রিমান _ রিমি যাবে না।
বাবা_ হুম হুম
মা _ তাহলে মাহুয়াকেও তার বাবার বাসায় নিয়ে যাক।
রিমান _ কেনো ও কেনো যাবে? ও তো আমার বউ আমার সাথেই যাবে।
বাবা _ হুম হুম
ফারহান _ আচ্ছা তাহলে রিমি তো আমারো বউ। তাহলে ও তোদের সাথে কেনো থাকবে?
রিমান _ কারন ও আমার বোন।
বাবা_ হুম হুম

রিমানের মা ধমক দিয়ে বলে _ মাহুয়ার ও ভাই আছে কিন্তু। এক কাজ করি মাহুয়াকে ওর বাবার বাসায় দিয়ে আসি। আর হুম হুম এর বাচ্চা আমিও বাবার বাসায় চলে যায় আমার বাবা মা, ভাই বোনের কাছে? রিমি যা ঐদিকে গিয়ে বস যা।

রিমান আর তার বাবা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফারহান একটা ইনোসেন্ট হাসি দিয়ে বলে _ আপনার মতো শাশুড়ী মা যেনো ঘরে ঘরে হয়।
___
মাহুয়াও কান্না করছে। রিমান মাহুয়া সামলিয়ে নিয়ে আসে। সবাই যার যার বাসায় চলে যায়। রিমি তার শশুর বাড়ি আর মাহুয়া তার শশুর বাড়ি চলে আসে।

মাহুয়া বাসর ঘরে বসে আছে। সবাই অনেক হাসি ঠাট্টা করছে। দেখতে দেখতে রাত ১২ টা বেঝে যায়। রিমান বাসর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই, মাহুয়া মাথার ওড়নাটা ফেলে দাঁড়িয়ে পড়ে। রিমান একটু দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে _ আমার বউ দেখি আমার থেকে বেশি এক্সাইটেড।

মাহুয়া বিরক্তি নিয়ে বলে _ কচু এক্সাইটেড। এই লেহেঙ্গা, এতো মেকাপ আর এতো গহনা পড়ে থাকতে আমার ভালো লাগছে না।

রিমান হাসি দিয়ে বলে _ তাহলে খুলে ফেলো।
মাহুয়া ধমক দিয়ে বলে _ চুপ, আমাকে এগুলো খুলতে সাহায্য করো।
রিমান আবারো মাহুয়ার কাছে গিয়ে বলে _ এখনি লেহেঙ্গা খুলে দিচ্ছি।

মাহুয়া রিমানকে ধাক্কা দিয়ে বলে _ লাগবে না আপনার সাহায্য, আমি একাই পারবো।
_ আচ্ছা, আচ্ছা আর দুষ্টমি করবো না।

রিমান মাহুয়াকে আয়নার সামনে বসিয়ে মাহুয়ার মাথায় লাগানো সব ক্লিপ, ফুল আস্তে আস্তে করে খুলে দিচ্ছে। তারপর সব গহনাও খুলে দিয়েছে। মাহুয়া এবার দাঁড়িয়ে বলে _ আমি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসি।
_ হুম ঠিক আছে।

একটু পর মাহুয়া ফ্রেশ হয়ে একটা নরমাল নাইট ড্রেস পড়ে আসে। রিমান তার বুকে হাত দিয়ে বলে _ ইশশশ নাইট ড্রেসেও কেয়ামত লাগছো।

_ হুম সরেন আমি ঘুমাবো।
_ ঘুমাবে মানে। ওও বেশি টায়াট লাগছে তাই না? ঠিক আছে তাহলে।
_ না আমি একদমি টায়াট নয়।
_ তাহলে?
_ এমনি আমি ঘুমাবো।
_ তাহলে তো তোমাকে ঘুমাতে দেওয়া যাবে না।

মাহুয়া শুয়ে পড়ে, রিমান মাহুয়াকে টেনে উঠে বসিয়ে বলে _ মাহু পিল্জ আর রাগ করে থেকো না। আম সরি,আর কখনো এমন ভুল জীবনেও হবে না। এই কানে ধরছি।

মাহুয়া শুতে নেয় রিমান আবার টেনে উঠিয়ে বলে _ তুমি কল্পনাও করতে পারবে না আমি তোমাকে কতোটা ভালো বাসি।
_ আচ্ছা আমি তো কখনো দেখিনি।
_ কারন আমি দেখায়নি। তোমাকে হাড়ানোর কষ্টটা আমি প্রতিদিন পেয়েছে। অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে মন থেকে সরানোর। কিন্তু পারিনি। নিজেকে ভুলা সম্ভব কিন্তু তোমাকে না। আমি কোনো মেয়ের সাথে আজ পযন্ত ভালো করে কথা বলিনি। তোমার সামনেই মিথ্যা মিথ্যা এমন করতাম। তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি তোমার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছি। আই লাভ ইউ।

_ সত্যি, কিছু দিন পর আবার ভুলে যাবেন না তো?
রিমান মাহুয়ার হাত ধরে বলে _ মরে গেলেও না। এই তোমার হাত ধরলাম আর কোনো দিন ছাড়বো না। যাই হয়ে যাক না কেনো।

_আর এমন কিছু করলে কিন্তু আমাকে আর ফিরে পাবেন না এবারের মতো।
_ ঠিক আছে।
_ হুম আই লাভ ইউ টু।

রিমান মাহুয়াকে জরিয়ে ধরে। রিমান মাহুয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। মাহুয়াকে ছেড়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে _ কেন আই?

মাহুয়া লজ্জায় মাথা নাড়িয়ে হুম বলে। রিমান সাথে সাথে মাহুয়ার ঠোঁট নিজের করে নেয়।
____
রিমি বসে গোমটা দিয়ে। ফারহান এসে দরজা বন্ধ করে সোজা বিছানায় শুয়ে পরে। রিমি গোমটা খুলে ফারহানকে বলে _ সোজা শুয়ে পড়লে যে?

_ তোহহ কি করবো?
_ আজকে আমাদের বাসর রাত।
_ তোহহ?? তুই তো আর আমাকে ভালোবাসিস না। সো চুপচাপ শুয়ে পর।
_ কে বলেছে ভালোবাসি না অবশ্যই ভালোবাসি। শুধু প্রকাশ করিনি। অনেক অনেক ভালোবাসি।

ফারহান রিমির দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিকে ফিরে বলে _ ভালো।

রিমি টান দিয়ে ফারহানকে তার দিকে ফিরিয়ে বলে _ ভালো মানে। সরি তো বলেছি। ভুল হয়ে গেছে। এখন এই জন্য কিন্তু আমার বাসর রাত খারাপ করবেন না।
_ হুমম।
_ আমার গিফট কই।
_ টেবিলে রাখা আছে দেখেনে। আমি ঘুমায়।
_ ঘুমাবেন মানে, আপনি আমার কাছে আসবেন না। সিউর।
_ 100%
রিমি ফারহানের হাতে আঙুল ঘুরিয়ে মধুর কন্ঠে বলে _ আমাকে দেখে আপনি ঠিক থাকতে পারবেন তো?
ফারহান একটা ডোগ গিলে বলে _ অবশ্যই পারবো। আমি একটা একদম শক্ত মনের ছেলে।

_ তাই নাকি। ওকে ভালো তাহলে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

রিমি চলে যায়। ফারহান শুয়ে বলছে _ আমার কি রাজি হয়ে যাওয়া উচিত ছিলো ? দূরু না, বাসর কিছু দিন পরে করলে কোনো সমস্যা নেয়। এতো দিন দূরে ছিলাম এখনো পারবো।

একটু পর রিমি একটা ছোট কালো নাইট ড্রেস পড়ে বের হয়ে একটা কাশি দেয়। ফারহান চোখ খুলে একটু দেখে, সাথে সাথে উঠে বসে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। রিমি হেঁটে আসছে ফারহান রিমির পায়ের দিকে এক তালে তাকিয়ে থেকে শান্ত গলায় বলে _ এটা কেমন ড্রেস। লজ্জা করে না এসব পড়ে আসতে।

_ কেনো করবে। তাছাড়া এই নাইট ড্রেসে ঘুম অনেক ভালো হয়। আর তাছাড়া আপনার কি আপনি তো শক্ত মনের মানুষ। আপনার তো কিছু হবে না।

এটা বলে রিমি বিছানায় অন্য দিক হয়ে শুয়ে পড়ে। ফারহান এখনো রিমির লম্বা পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রিমি ঐ দিক ফিরেই বলে _ আমার পায়ের দিকে না তাকিয়ে থেকে ঘুমান।

ফারহান চোখ ফিরিয়ে বলে _ কে তাকিয়ে আছে, কেও না।

একটু পর ফারহান বার বার রিমির দিকে তাকাচ্ছে। আর এদিক সেদিক করছে। ফারহান আর না পেরে আস্তে আস্তে রিমির দিকে সরে যেতে থাকে। যেতে যেতে রিমির অনেক কাছে চলে যায়। রিমির গায়ের গন্ধ ফারহানকে পাগল করে দিচ্ছে। রিমি হঠাৎ করেই ফারহানের দিকে ফিরে যায়। দুজন একদম কাছা কাছি। দুজনের নিশ্বাস এখনো ভাড়ী হয়ে যাচ্ছে। রিমি ফারহানের ঠোঁট হাল্কা করে একটা কিস করে সরে যেতে নেয় ফারহান আর সরতে দেয় না।
_____
আরাব গোসল করে বের হয়ে নিচে গিয়ে দেখে তৃষা ফ্রিজ থেকে বের করে পানি খাচ্ছে। আরাব গিয়ে বোতল নিয়ে বলে _ এভাবে খেতে না করেছি না। নরমাল পানি খাবে আর না হলে ঠান্ডা লাগবে।

_ নরমাল পানি খেতে ভালো লাগে না।
_ তাও খেতে হবে।
_ এতোও খেয়াল রাখতে হবে না আমার।
_ কেনো হবে না। অবশ্যই হবে। বেশি বেশি খেয়াল তো রাখতেই হবে। আর না হলে তুই বলবে আমাকে মাফ করে ভুল করেছো।
_ বলবো না৷
_ আচ্ছা শুনো, বাড়িটা তোমার খালি খালি লাগে না?
_ খালি খালি না, এতো বড় বাড়িতে নিজেকে একা একা লাগে যখন আপনি থাকেন না।
_ সেটাই তো, এখন যদি এই বাড়িতে কয়েকটা বাচ্চা দুষ্টমি করে তাহলে তো আর একা একা লাগবে না তাই না। তুমি ওদের পিছনে দৌড়াবে ছুটো ছুটি করবে। কতো ভালো লাগবে।
_ কি বলতে চাও সেটাই বলো।
_ বলছিলাম আমাদের বাচ্চা হলে কেমন হবে।

তৃষা হেঁসে বলে _ অনেক ভালো হবে।
_ তাহলে আর দেড়ি কিসের চলো, বাচ্চা আসার সুযোগ তো করে দিতে হবে।

বলে তৃষাকে কোলে নিয়ে উপরে যেতে থাকে আরাব।

[ সমাপ্তি ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে