#চিলেকোঠার_ভালোবাসা
#পর্ব_৭
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
আপনি তো কিছুই বুঝতে পারেন না তাইনা!
কেউ আপনার সাথে প্রতারনা করলেও বুঝতে পারেন না, কেউ আপনাকে মন থেকে ভালোবাসলেও বুঝতে পারেন না।
কেউ অভিমান করে থাকলেও বুঝতে পারেন না যে, তার অভিমান আপনাকে এখন ভাঙাতে হবে।
সবকিছুই আপনাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে তাইনা?
এখন আবার কি হলো, হাসছেন কেনো আপনি?
আমাকে পাগল মনে হয় আপনার, বলা নেই কওয়া নেই আমার উপর হাসার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে!
কথা বলবেন না আপনি আমার সাথে।
চলে যান এখান থেকে, কেনো এসেছেন আমার কাছে আপনি!
আমার অনূভুতির তো কোনো দাম নেই কারো কাছে।
ঘৃণা করি আপনাকে আমি খুব ঘৃণা করি।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে কথা কাঁদতে কাঁদতে ছাঁদ থেকে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই আমি দ্রুত কথার হাত শক্ত করে ধরলাম।
কথা পেছন ফিরে কান্না থামিয়ে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
হয়তো বিশ্বাস করতে পারছেনা আমি তার হাত ধরেছি।
আমিও জানিনা আমি কি করছি, শুধু এতটুকু জানি কথাকে আমি আর ফিরিয়ে দিতে পারবো না।
মেয়েটা বড্ড ভালোবাসে আমাকে, আমিও কথাকে ছাড়া আর এক মুহুর্ত থাকতে পারবো না।
ভালোবাসা না মায়া কিছু জানিনা, শুধু এতটুকুই বুঝতে পারছি ‘এই বাচ্চা মেয়েটাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ’।
আমি হাত না ছাড়লে এভাবে ছোটাছুটি করে লাভ নেই ব্যাথা পাবে হাতে, বরং চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।
বলছি যে, রাগ সামলাতে না পেরে বাচ্চাদের মতো এমন কথার মাঝখানে হুট করে কেঁদে ফেলার অভ্যাসটাকি তোমার বহু পুরোনো; নাকি শুধু আমার সাথেই দেখাচ্ছো?
আমি কিন্তু এমন হুটহাট কেঁদে ফেলা মেয়েকে একদমই সামলাতে পারবোনা, এই বলে দিলাম।
আমার কথা শুনে ‘কথা চুপচাপ মুখ হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
বুঝতে পারছি আমার হুট করে একেবারে ভবিষ্যতের কথা বলাটা নিতে পারছেনা মেয়েটা, তাইতো হা করে তাকিয়ে আছে।
হা করে কি দেখছো?
যা ভাবছো তাই, এতদিন বোকা ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি।
এসব ব্যাপারে আমি একটু টিউবলাইট কিনা।
এই মেয়ে, এই বোকা ছেলেটাকে সামলাতে পারবেনা তুমি?
ভালোবাসি কথা, কতটুকু ভালোবাসি জানিনা।
শুধু জানি ভালোবাসি।
আমার কাছে তেমন কোনো ভাষা নেই যা আমি তোমাকে বলবো।
এমন কোনো গল্প নেই যা তোমাকে স্তব্ধ করে দিবে।
এমন কিছুই নেই যা তোমাকে অবাক করে দিবে।
আমি নিতান্তই সাধারণ একটা ছেলে গেয়ো, অসুন্দর আরও কত কি!
আমার মধ্যে তেমন কোনো গুণ নেই যা দেখে তুমি আমার প্রেমে পড়বে।
কিছুই পারি না আমি, কিছুই না।
তবে একটা জিনিস খুব ভালো পারি; “ভালো শ্রোতা হয়ে থাকতে”।
দিনভর তুমি কথা বলবে আর আমি শুনবো!
ঐ যে, তোমার ঐ সাহিত্য মাখানো কথাগুলো।
প্রতিদিন নিয়ম করে শুনবো, শোনাবেনা আমাকে?
কথা, আমার কি খুব বেশিই কি দেরি হয়ে গেছে তোমার কাছে ধরা দিতে?
এসোনা প্লিজ, দু’জন নতুন করে পথ চলা শুরু করি!
এক ঝটকায় আমার হাত থেকে কথা হাত ছাড়িয়ে নিলো।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো– “ঘৃণা করি আপনাকে”
বলেই শাড়ির আচল ধরে দৌড়ে চিলেকোঠার রুম পেড়িয়ে নিচে নেমে গেলো।
আমার ঠোঁটের কোনে প্রাপ্তির মুচকি হাসি।
মেয়েটা বড্ড অভিমানী, বাচ্চা মেয়ে তো তাই।
তুমি আমাকে ভালোবাসো কথা, হয়তো একটু বেশিই!
ভাবছি ভবিষ্যতে কি যে অপেক্ষা করছে আমার জন্য কে জানে!
এই বাচ্চা মেয়েকে কি করে আমি সামলাবো তাই ভাবছি।
🍂
🍂
🍂
মাইকে আমার নাম ধরে ডাকতেই সবাই করতালি দিয়ে উঠলো!
কেউ কেউ তো আবার শীষ বাজাচ্ছে।
এভাবে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকাতে বেশ লজ্জাই লাগছে আমার।
রজনীগন্ধার সাথে গোলাপ ফুলের স্টিকটা হাতে নিতেই আমার হাতে মাইক ঠেশে দিলো।
এভাবে সবার সামনে মাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ভাবতেই কেমন লজ্জা লাগছে।
ফেরওয়েল বলে কথা, কিছু একটা তো বলতেই হবে।
অপ্রস্তুত হলেও কাপা কাপা কন্ঠে বললাম–
কতগুলো বসন্ত কাটিয়ে দিয়েছি এই ক্যাম্পাসের প্রঙ্গণে।
কতশত মুহূর্ত, হাজারো অনূভুতি জড়িয়ে আছে।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু মানুষের আবেগঘন মুহূর্ত, প্রতারনা, বিশ্বাস।
কেউ চলে গেছে, কেউ বর্তমান আছে।
তবে এত নিয়ম শৃঙ্খলার মাঝেও নতুনত্বের আগমন ঘটতে কিন্তু দেরি হয়নি।
কথায় আছে ‘আমাদের ব্রেন নতুন কিছু মনে রাখার জন্য পুরোনো কিছুকে ভুলিয়ে দেয়’!
আমিও ভুলে গেছি পুরোনো কাউকে।
নতুন কেউ একজন খুব যত্ন কর ভুলিয়ে দিয়েছে।
আর আজ যখন পুরোনো স্মৃতিকে ভুলে নতুন কিছুকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছি তখন সেও অবহেলায় দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
আমি বোধহয় অবহেলারই যোগ্য।
এই প্রঙ্গণে দাঁড়িয়ে বলছি, সে শুনছে আমায়।
পাহাড়সম অভিমান নিয়ে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে আমাকে।
তবে, শেষ বেলা অবহেলা করো না প্রিয়।
ঝরতে ঝরতে স্মৃতির সমস্ত পাতা ঝরে গেছে।
উপেক্ষার দহনে পুড়ে গেছে আকাঙ্ক্ষা;
তাশের ঘরের মতো ভেঙে গেছে সকল স্বপ্ন।
ফুরিয়ে আসছে সময়, আঁধার নামছে চোখে।
এই যে তাচ্ছিল্যের সাগরে ফেলে মুখ ফিরিয়ে আছো; আমায় যে তুমি, বন্ধুত্বের উঠানেও জায়গা দিচ্ছো না।
অবশ্য অসফলদের নিঃশ্বাসে যে অবহেলা
মিশে যায় এ আর বুঝতে বাকি নেই আমার।
বুকের মাঝে এক সমুদ্র অবহেলা নিয়ে বেঁচে আছি।
অবজ্ঞাদের এক পাক্ষিক আঘাত সইতে সইতে পলকেই যে কেটে গেলো গোটা কয়েকটা বসন্ত।
নিঃশ্বাসের অনুমতি যে এবার শেষের পথে,
জেনে রাখো, প্রস্থানের পালকিটাও আজ দ্বারপ্রান্তে।
উপেক্ষাদের দহনে পুড়ে নিঃশব্দে নিজের চিৎকার গিলে যাচ্ছি।
বিদায় বেলায় তাইতো এবার সঙ্গে করে
খানিক মলিন স্মৃতি’ই নিতে চাচ্ছি।
না না আমায় ভালোবাসতে হবে না!
অসফলদের ভালোবাসতে নেই, তুমি বরং এ বেলায় আমায় বন্ধু বলেই স্বীকৃতি দিয়ো।
তাতেই না হয় তুলবো তৃপ্তির ঢেকুর।
এক জীবনের সকল অবহেলা ভুলে হাসি মুখে বিদায় নেবার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করো প্রিয়।
মাইক রেখে ধির পায়ে চলে এলাম স্টেজ থেকে নেমে।
দূর থেকেও কথাকে আমি ঐ শেষ লাইনের চেয়ারটাতে বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি।
মেয়েটার অভিমানটা একটু বেশিই বোধহয়।
কিন্তু আর না,খুব দ্রুতই আমাকে কথার অভিমান ভাঙাতে হবে।
কথার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি, আজ যে করেই হোক কথার অভিমান আমাকে ভাঙাতে হবেই।
অনেক কথা বলার আছে যে তার সাথে।
কথার দিকে যত এগিয়ে যাচ্ছি ততোই তার অস্থিরতা বাড়ছে, মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কথার অস্থিরতা।
হুট করেই কোথা থেকে নিলা কান্নারত অবস্থায় আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
আচমকা এভাবে সামনে এসে পড়ায় বেশ অবাক হলাম আমি।
পরক্ষনেই নিজেকে সামনে নিলাম।
আজ নিলার চোখের পানি আমাকে এক বিন্দু পরিমানও বিচলিত করছে না।
আড় চোখে কথার দিকে তাকাতেই দেখি কথা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
কথার ঐ দৃষ্টি আমাকে সব কিছুই বুঝিয়ে দিচ্ছে।
দেখে মনে হচ্ছে যেনো এখনই মেয়েটা কেঁদে দেবে।
বুঝতে পারছি কথার মনে এখন কি চলছে!
🍂
— শেষবারের মতো একটা সুযোগ কি আমাকে দেবে ফায়াজ?
আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, তোমার সাথে আমি অন্যায় করেছি।
আমাকে ক্ষমা করে দাও ফায়াজ, এই দেখো কান ধরছি, আর কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
আমাকে তো তুমি ভালোবাসো তাইনা!
আমিও তোমাকে…
হাত উপরে উঠিয়ে নিলাকে থামিয়ে দিলাম।
আর কিছু বলার আগেই মুচকি হেসে নিলার হাত ধরে বললাম–
এসো আমার সাথে।
আমার কথা শুনে নিলা অবাক হয়ে গেলো।
বোধহয় ভাবেনি এত সহজেই আমাকে কনভেন্স করতে পারবে।
নিলার মুখে বিজয়ের হাসি, যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।
চোখের পানি মুছে নিলা আমাকে বললো—
— সত্যিই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো ফায়াজ?
আমি জানতাম তুমি এখনও আমাকে অনেক ভালোবাসো, সেজন্যই তো আমি আসতেই তোমার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
চলবে…
(বানানের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কবিতাটি লিখেছেন সাকিব মৃধা। গল্পের সৌন্দর্য রক্ষার্থে কবিতাটি কিছুটা ইডিটিং করা হয়েছে।)