#চিলেকোঠার_ভাঙ্গা_ঘর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৭
#ফিজা_সিদ্দিকী
(❌ কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত❌)
“তুমি বলেছিলে এই প্ল্যানে সামিল ছিলো দুইজনে। তবে আর একজন কে?”
“এক আমি। আর এক আমার মন। এই দুইয়ের ষড়যন্ত্রে ঘটেছে এসব।”
সার্থক স্বাভাবিক। যেনো খুব সাধারণ কোনো কথা বলেছে সে। কিন্তু তার কথা শুনে আচমকা আসমান থেকে ঠাস করে জমিনে আছড়ে পড়লো যেনো স্নিগ্ধা। বিস্ময়ে হাসা উচিৎ নাকি তৎক্ষণাৎ তার কলার চেপে ধরে রাগ দেখানো উচিৎ বোধগম্য হচ্ছেনা তার। অতঃপর মৌন থাকার সিদ্ধান্ত নিলো সে। যেনো আসলেই কিছু হয়নি।
১৮.
ছুটি পেলেই শ্রেষ্ঠা চলে আসে বোনের কাছে। বোনকে সে বোধহয় মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। মায়ের শূন্যতার চেয়ে বেশি ছারখার হয় একমাত্র বড়ো বোনের শূন্যতায়। এইযে কতোগুলো দিন দেখা পায়না তার। জড়িয়ে ধরে আয়েশ করে ঘুমানো হয়না। এতে ভীষণ মন খারাপ হয় তার। কিন্তু নিয়তির কাছে বরাবরের মতো হার মানতে হয় আমাদের। নিষ্ঠুর নিয়তির জন্য নিজের পড়াশোনা ছেড়ে একবারের জন্য থেকে যেতে পারেনা স্নিগ্ধার কাছে। তবে দুই এক মাস পর পরই ছুটি পাওয়া মাত্র ব্যাগ পত্র গুছিয়ে হাজির হয় বোনের ফ্ল্যাটে। স্নিগ্ধাও মাতৃস্নেহে বুকে টেনে নেয় তাকে। আদরে আদরে ভরিয়ে দেয় আদরের ছোটো বোনকে। যে কয়টা দিন শ্রেষ্ঠা থাকে জীবনটা ভীষণ প্রানবন্ত লাগে তার। পড়াশোনার উপযোগী কথাবার্তা থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠা বয়সের বিভিন্ন অসম সমীকরণ, সবকিছু নিয়েই আলোচনা হয় তাদের মাঝে।
শ্রেষ্ঠা সবেমাত্র ডগমগে পায়ে হাঁটতে শুরু করেছে মরীচিকা স্বরূপ যৌবনের রাস্তায়। চারিপাশে মুখোশধারী মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। ফলে তাকে সেই পথে পাড়ি দেওয়ার মতো উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে স্নিগ্ধা।
তপ্ত দুপুরে উত্যক্ত রোদ্দুর। ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে স্নিগ্ধা। রুমের মধ্যে অবস্থিত ছোটো বুকশেলফ ভর্তি বইগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে শ্রেষ্ঠা। মূলত সেখান থেকে একটা উপন্যাস পড়ার ইচ্ছে হচ্ছে তার। দেখতে দেখতে একটা ইংরেজি নামের উপর চোখ আঁটকে যায় তার। যেখানে লেখা,” ফিফটি শেডস অফ গ্রে”। নাম সম্পর্কে কৌতূহল হয় তার। সেই সাথে উপন্যাসের ভেতরের কাহিনী সম্পর্কে আগ্রহ বোধও। শেলফ থেকে বইটা বের করে কভারপেজ দেখে খানিকটা ইতস্ততবোধ হয় তার। এক তরুণীকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে মূলত কিস করার চেষ্টা করছে এক তরুণ। কভার পিক দেখে ধারণা করা যায় এটা একটা রোমান্টিক উপন্যাস। আর ইংলিশ রাইটারদের লেখা একটু খোলামেলা হয়। শ্রেষ্ঠা আগেও পড়েছে ইংলিশ উপন্যাস। তবে সেটা ছিলো থ্রিলারধর্মী। কভারের পিক দেখে পড়বে কি পড়বে না খানিকটা দোটানায় ভুগছিলো সে। অতঃপর মনে পড়ে জর্জ ইলিওট নামক এক রাইটারের লেখা একটা বাক্য, ” ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কভার।”
এরিকা লিওনার্ড জেমস্ নামক একজন বিখ্যাত লেডি রাইটারের লেখা বই “ফিফটি শেডস অফ গ্রে” বইটা নিয়ে বিছানায় আয়েশ করে বসলো শ্রেষ্ঠা। বইটা খুলে মাত্র পড়তে শুরু করবে এমন সময় হটাৎ করে কলিং বেল বেজে ওঠার শব্দে খানিক বিরক্ত হলো সে। বইটা একপাশে রেখে একবার তাকালো ওয়াশরুমের বন্ধ দরকার দিকে। ভেতর থেকে পানির শব্দ ভেসে আসছে। তার মানে স্নিগ্ধার বের হতে সময় লাগবে। তাই বিরক্তিকর ভাবটা মন থেকে সরিয়ে সে নিজেই চলে গেলো গেট খোলার উদ্দেশ্যে।
দরজার সামনে দাঁড়ানো বলিষ্ঠদেহী একজন পুরুষ আস্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে শ্রেষ্ঠাকে। শুধু জড়িয়ে ধরেই খান্ত নয় সে। বরং অনবরত একের পর এক চুমু খেয়ে যাচ্ছে তার গলায়, ঘাড়ে। তার দুইহাত নির্লিপ্তভাবে ছুটে চলেছে শ্রেষ্ঠার দেহের বিভিন্ন বাঁকে। আকস্মিক এহেন আক্রমনে বিস্ময়ে কিংকর্তবযবিমূঢ় সে। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেও বলিষ্ঠদেহী একজন পুরুষের সাথে ধস্তাধস্তি করে পেরে উঠছে না সে। অতঃপর পায়ের সাহায্যে পুরুষটির স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করতেই দ্রুত তাকে ছেড়ে দেয় সে। ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেকে নিয়ে। যদিও খুব বেশি জোরে হিট করেনি সে। শুধুমাত্র নিজের আত্মরক্ষার জন্য তার থেকে ছাড়া পেতে যেটুকু ব্যথা দেওয়ার প্রয়োজন সেটুকুই দিয়েছে।
খানিকটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে দুটো মানুষ। একজনের চোখে মুখে স্পষ্ট অনুতাপ আর অপরজনের রাগী দৃষ্টি। এতক্ষণে যেনো একে অপরকে খেয়াল করেছে তারা। ছেলেটাকে শ্রেষ্ঠা চেনে। স্নিগ্ধার বন্ধুমহলের একজন সে। নাম সার্থক। সার্থকও শ্রেষ্ঠাকে চিনেছে বেশ ভালো করেই। স্নিগ্ধা তার পরিবারের সকলের ছবি বেশ কয়েকবার দেখিয়েছিল তাকে। সেখানেই দেখেছিল সে শ্রেষ্ঠাকে। তবে দুজনের প্রথম পরিচিতি এভাবে হবে তা কল্পনাতীত ছিলো। আড়ষ্টতা ভেঙ্গে প্রথমে কথা বললো সার্থক।
“আই অ্যাম সরি। এক্সট্রিমলি সরি। বিশ্বাস করো, আমি ভ্রুনাক্ষরেও টের পাইনি যে দরজার এপাশের মানুষটা স্নিগ্ধা না হয়ে অন্য কেউ। অভ্যাসবশত এভাবে..”
তার কণ্ঠে অপরাধবোধ। সেইসাথে খানিক দ্বিধা।
“অভ্যাসবশত মানে? সত্যি করে বলুন আপনাদের মাঝে সম্পর্ক কী?”
সার্থক আশপাশে তাকাচ্ছে বারবার। শ্রেষ্ঠার উচ্চকণ্ঠের শব্দ বাইরে যাচ্ছে। ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই দরজা লাগিয়ে সার্থককে ভেতরে আসতে ইশারা করলো সে। এই বাড়ির একটাই রুম। একটা কিচেন, একটা ওয়াশরুম। একপাশে বাইরের দিকের খানিকটা অংশ জুড়ে ফাঁকা ঝুলন্ত ব্যালকনির মতো। অগত্যা সার্থক বেডরুমে এসে বসলো। তার পাশেই বেডে উপুড় করে রাখা রয়েছে ফিফটি শেডস অফ গ্রে বইটা।
“বইটা তুমি পড়ছিলে?”
বইটা হাতে নিয়ে ওলোট পালোট করে দেখতে দেখতে সার্থক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো শ্রেষ্ঠার দিকে। সার্থকের স্বাভাবিক কণ্ঠ শুনে বেশ অবাক হলো শ্রেষ্ঠা। কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত এই কণ্ঠে ছিলো রাজ্যের অপরাধবোধ। কেমন যেনো লজ্জায় গুটিয়ে যাওয়ার এক মনোভাব। কিন্তু আচমকাই যেনো রং বদলে গেলো তার। কণ্ঠ স্বাভাবিক। যেখানে নেই কোনো অপরাধবোধের ঠাঁই।
“হুম। কিন্তু আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করেছিলাম।”
“উমম, তা করেছিলে বৈ।”
সার্থকের নির্লিপ্ততা দেখে অবাক না হয়ে পারেনা শ্রেষ্ঠা। অতঃপর রাগী কণ্ঠে বলে,
“কিন্তু কোনো জবাবদিহিতার প্রবণতা দেখছি না আপনার মাঝে।”
শ্রেষ্ঠার কণ্ঠ গম্ভীর। কাট কাট তার জবাব। এসবের মাঝেও হাসলো সার্থক। ঠোঁট চেপে হেসে বললো,
“কিছুক্ষন আগেও বাচ্চাসুলভ স্বভাবের ভাবা মানুষটাকে দেখে আমার অপরাধবোধ হচ্ছিলো। খুব অনৈতিক একটা কাজ করে ফেলেছি ভেবেই গিল্টি ফিল হচ্ছিলো। বাট আই ওয়াজ টোটালি রং। অ্যাডাল্ট স্টোরি পড়া মানুষটা কখনো বাচ্চাসুলভ হতে পারে না। আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সাথে এটুকু মজা তো করাই যায়। তাইনা?”
কথাটা শেষ করেই শ্রেষ্ঠাকে চোখ টিপ দিলো সার্থক। রাগে উত্তেজনায় প্রায় হিশহিশিয়ে উঠলো শ্রেষ্ঠা।
“বিশ্বাস করুন, আপনার চেয়ে খারাপ মানুষের সাথে আমার এতো বছরের জীবনে কখনো পরিচিতি ঘটেনি। আর না কখনও ঘটবে।”
কথাটাতে যেনো বেশ মজা পেলো সার্থক। হাসতে হাসতেই বললো,
“ইউ আর ড্যাম অ্যাট্রাক্টিভ। তোমার বোনের চেয়েও দারুন বডি। আর…”
“ছিঃ! লজ্জা করছে না আপনার। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, রাগের চেয়ে বেশি বিস্মিত হচ্ছি আমি ক্ষণে ক্ষণে। আমার আপু ছোটো থেকে প্রতিটা পরীক্ষায় প্রথম হয়ে এসেছে। অথচ জীবনের এতো বড়ো একটা পরীক্ষায় তার এভাবে ফেল করে যাওয়া অবিশ্বাস্য লাগছে আমার।মানলাম আপুর সাথে আপনার বিশেষ কোনো সম্পর্ক রয়েছে। তাই বলে আমাকে যাচ্ছেতাই বলার কোনো অধিকার রাখেন না আপনি। আমি স্নিগ্ধা আপু নই। আর না আপুর মতো এতো সহজ সরল। তাই সাবধান। নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে।”
“উমম, লঙ্কায় যতো ঝাল হবে মিষ্টির সুইটনেস ততো তীব্রভাবে বোঝা যাবে।”
ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকায় দুজনে। শাওয়ার থেকে বের হয়ে সার্থককে দেখে আচমকা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় স্নিগ্ধা। সার্থকের আজ এখানে থাকা স্বাভাবিক। যেটা অস্বাভাবিক সেটা হলো শ্রেষ্ঠার হুট করে চলে আসা। কাল রাতেই কোনো রকম আগাম বার্তা না দিয়েই দুইদিনের ছুটি নিয়ে তার কাছে চলে আসে শ্রেষ্ঠা। রাত তখন প্রায় আটটা। এতরাতে একা শ্রেষ্ঠাকে আসতে দেখে বেশ বিচলিত হয়ে পড়ে সে। এই কারণে ব্যাপারটা সম্পর্কে সার্থককে অবগত করার কোনো সুযোগ পায়নি। আর সকাল থেকে সার্থকের ফোন বন্ধ। তাই কোনোরকম ভাবেই যোগাযোগ না হওয়ায় শ্রেষ্ঠার আসার খবরটা দেওয়া হয়নি তাকে। এদিকে রোজকার মতোই ক্লাস শেষে স্নিগ্ধার ফ্ল্যাটে এসে উপস্থিত হয় সার্থক। ফলে গেট খুলতে যাওয়া মানুষটা স্নিগ্ধা না হয়ে অন্যকেউ হবে, এই বিষয়টাও মাথায় আসেনি তার।
#চলবে!