চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৮

1
2304

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৮

লেখা আশিকা জামান

রাত্রি নিঝুম! ব্যাস্ত ঘুমের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো পুঞ্জীভূত হয়ে অসীম নিদ্রায় সবাই। কেবল অনন্যার চোখেই ঘুম নামক বস্তুটা ধরা দিচ্ছে না। নিরুদ্দেশ ফেরারি ঘুমকে খুঁজার মত ইচ্ছে আর মনোবল কোনটাই আর অবশিষ্ট নেই।

সে বরংচ হা হয়ে তাকিয়ে আছে ক্লান্ত শ্রান্ত নির্জীব অঙ্কনের দিকে। কপালের চুলগুলো বারবার উড়ে এসে ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে প্রশস্ত ললাট। শৈল্পিক কায়দায় চোখ দু’টো বুজে আছে। দেখেই মায়া মায়া লাগছে। এত মায়া অবলীলায় ফেলে কী ঘুমানো শোভা পায়! হয়তো আজই শেষ রাত। হয়তবা এই নিষ্পাপ ঘুমন্ত মুখটা আর দেখা হবেনা। এমন অর্থবহ রাতটাকে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়ার পক্ষপাতি অনন্যা নয়।
একধ্যানে তাকিয়ে থেকে থেকে অনন্যার চোখ বুজে আসতে চাইছে। কিন্তু আজতো সে ঘুমোবে না! বিছানা থেকে নিঃশব্দে নেমে আসে। তার খামখেয়ালীপনায় যেন ঘুম না ভেঙে যায় সেদিকেও নজর দিতে হয়।
উঠে আসে ব্যালকনির গ্লাস টেনে দিয়ে । চলে যায় একদম কর্ণারে যেখানে কেবল সারি সারি লাইট অন্ধকারে তারার ন্যায় জ্বলজ্বল করছে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



*********

” তানভীর আজ রাতটা রিসোর্ট এ থাকলে কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত? সেইতো এসে সবাই ঘুমই দিয়েছে।”
” তোমার ভাই আর উড বি ভাবি কিছুতেই রাজি হলোনা। ওঁরা চলে যাবে আমরা থাকব এটা ভালো দেখায় না।”
” সব ওই নিনিতের জন্য একেবারে যেন অনন্যার জান প্রাণ! অনন্যা থাকছে না তাই সেও থাকবে না৷ কী হাস্যকর কথাবার্তা। এত অনন্যা অনন্যা যে করছো সবাই সেকি তোমাদের পাত্তা দিচ্ছে! সেইতো আমার ভাইয়ের গলা ধরে ঝুলছে! ”
তানভীর হঠাৎ চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
” অন্য কারো গলা ধরে ঝুললে কী বেশি ভালো হতো!”
” সে-কি তোমাদের অনন্যার আরও চার-পাঁচটা গলা ধরার মানুষ আছে নাকি! ”

” ওহ্ শেট-আপ অনীহা। আসলে জগতের সব ননদরাই এমন ভাইয়ের বউ এর পিছনে না লাগলে না তাদের পেটের ভাতই হজম হয়না।”
” হ্যাঁ ঠিক বলেছো। এই যেমন তোমার মা সারাক্ষণ আমার মায়ের পেছনে লাগে।”
তানভীর রাগে চোখমুখ লাল বানিয়ে বলল,
” এইজন্যেই এক আত্নীয়ের ভেতর আবার আত্নীয় করতে হয়না।”

” তার মানে আমাকে বিয়ে করে তুমি খুব ভুল করেছো তাই না!”
” তোমার যদি মনে হয় এই কথার মানে এই, তাহলে তাই!”
অনীহার মনে এক জটিল চক্রাকার প্রশ্নবোধক চিন্হ একে দিয়ে তানভীর নির্লিপ্তভাবে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

**********

ইদানীং খুব বদঅভ্যাস হয়ে গেছে।
গভীর রাতে কিঞ্চিৎ অবচেতনে অঙ্কনের ঘুমন্ত হাত বার বার অনন্যার শরীর খুঁজে বেড়ায়। আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না। আকাঙ্ক্ষিত বস্তুকে না পেয়ে অঙ্কন ধরফরিয়ে বিছানায় উঠে বসে। টেবিল ল্যাম্পের মৃদু আলোয় অনন্যার অস্তিত্ব কোথাও পাওয়া গেল না। সহসায় ব্যালকনিতে চোখ আটঁকে যায়। কলাপাতা রঙ্গের সোনালি জরি পাড়ের শাড়ি! হ্যাঁ এই শাড়িটাইতো পড়তে বলেছিল। আস্তে আস্তে মনে পড়ছে। খোলা চুল উড়িয়ে সে দিগন্তের পানে তাকিয়ে আছে। হয়তো অভিমানে গাল ফুলিয়েছে। অঙ্কনের নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সাড়ে তিনটে বাজতেছে। কেন ঘুমায়নি! কেন জেগে আছে! এই প্রশ্নগুলোর উত্তরতো তার জানা।
সে কীভাবে পারলো এভাবে অঘোরে ঘুমাতে। বলেছিল সেজেগুজে সামনে আসতে, কী হাস্যকর এর মাঝে সে নিজেই ঘুমিয়ে গেল।
ভরা জোছনায় চাদের আলো গায়ে মেখে যেন স্বয়ং স্বর্গপরী নেমে এসেছে। কতক্ষণ মুগ্ধ চিত্তে তাকিয়ে থেকে অঙ্কন পেছন থেকে কোমড় জড়িয়ে ধরে। অনন্যার সমস্ত ভাবনার সাঙ্গু ঘটে চেনা হাতের আচমকা স্পর্শে।
দীঘল কালো কুচকুচে মেঘবতী কেশগুচ্ছে অঙ্কন নাক ডুবিয়ে দিলো। মাতাল করা সেই ঘ্রাণ যেন ওকে সম্মোহন দৃষ্টিতে কাছে টানছে। আরও শক্ত করে জাপটে ধরলো।
ভালোলাগায় বুদ হয়ে যেতে নিয়েও অনন্যা সচকিত চোখে তাকায়। স্তিমিত গলায় বলল,
” হঠাৎ উঠে এলে কেন?”
কথাটা বলেই তার দিকে ঘুরতে চেষ্টা করল। অঙ্কন তাই দেখে অনন্যার চিবুক দুই হাতে শক্ত করে চেপে ধরলো।
অনন্যা তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকানো দু’চোখের দিকে তাকাল। ঘুম জড়ানো লাল টকটকে চোখ দুটো যে তাকেই দেখছে অপূর্ব সম্মোহন দৃষ্টিতে।
” সরি!” অঙ্কন ফিসফিসিয়ে উঠে।
” কিন্তু কেন?”
” শস্ -স-স” অনন্যার ঠোঁটে আচমকা আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিয়ে অঙ্কন বলল।

কিছুক্ষণ অঙ্কনের অস্বাভাবিক ফুলে উঠা চোখ মুখের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থেকে অনন্যা হঠাৎ অধৈর্য্য গলায় বলল,
” কী হলো! উঠে আসলে কেন?”
এ-কথার উত্তর সে একটু অন্যভাবে দিলো। অনন্যার অধরযুগল অভিজ্ঞহাতে টেনে নিলো নিজের অধরের মধ্যস্থলে। অনেকটা সময় নিয়ে শুষে নিতে থাকলো অমৃতসুধা। প্রথমে কিছুক্ষণ ছটফট করে বাঁধা দিতে চাইলেও পরক্ষনেই গভীর অনুরাগে জড়িয়ে ধরে অঙ্কনের কাধসন্ধি।
এর ঠিক কিছুক্ষণ পর অঙ্কন হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
” অনন্যা আমার না ঘুম পাচ্ছে। আমি না উঠতেই চাইনি।”

ভালোলাগার আবেশটা তখনো অনন্যার কাটে নি। এমন অসংলগ্ন কথাশুনে সে তেরছাভাবে তাকায়। মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে,
” তাহলে আসলে কেন?”
” আর বলোনা। ঠোঁটদুটো বড় বেহায়া হয়ে গেছে বুঝছো তো! খেয়ালবশত তোমার ঠোঁটদুটো খুঁজে বেড়াচ্ছিলো। ভাগ্যিস তুমি ঘুমিয়ে যাওনি। তাহলে ঘুম ভাঙ্গানোর অপরাধে আমার আমৃত্যু তোমার গোলাম হয়ে যেতে হত। অবশ্য আমি রাজিই ছিলাম। কিন্তু কী বলোতো এই যে তোমার লাল টকটকে ঠোঁট এইটা না আরো বেহায়া! দেখলে কেমন তোমাকে ঘুমাতে দিচ্ছেনা। কখন আমি চুমু খাব সেই আশায় এখনো জেগে আছে। বেচারি! ”
অঙ্কন মুখটা কাঁচুমাঁচু করে দুঃখী দুঃখী ভাব করল।
” আমার ঠোঁট বেহায়া! আমি বেহায়া। তুমি কখন আদর করবে সেই আশায় আমি এখনো ঘুমাইনি। এটাই বলতে চাইছো-তো! মানে এটাই দাঁড়ালো তো।” অনন্যা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে অঙ্কনের দিকে তেড়ে আসে।

” যার মনে যা ফাল দিয়া উঠে তা।” কথাটা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল।
খুব কি বেফাঁস কিছু বলে ফেলেছে। নিজেই নিজেই প্রবোধ দিয়ে অঙ্কন মিনমিন করে বললো,
” না-মা-নে অনন্যা! হয়েছে কী?”
” কী হয়েছে। কচু হয়েছে। তোমাদের মত ছেলেদের মাথায় না খাওয়া আর শোয়া এই দুটো’ ছাড়া জীবনেও ভালো কিছু আসবে না। ”

” উফ্ অনন্যা! মজা করেছি তো!”
অনন্যা, অঙ্কনের দিকে তেড়ে আসতে লাগলে সে এক দৌড়ে রুমে ঢুকে বিছানায় উঠে বসে।
অনন্যাও বিছানায় উঠে অঙ্কনকে ধরে ফেলে। নাকের পাটা ফুলিয়ে বুকে ক্রমাগত নরম হাতে কিল দিতে থাকে। অঙ্কন কিছুক্ষণ মার হজম করে অনন্যার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। চোখে চোখ রেখে বলে,
” এইসব না বললে তো আপনি রুমে আসতেন না! ঠান্ডা লাগানোর ধান্দায় ঘুরতেছেন। আমি তো আপনাকে চিনি তাই না! নিন এবার হাত ছাড়িয়ে নিন। আর যত পারেন মারেন।”
অনন্যা হাত ছাড়াতে চায় কিন্তু শক্তিতে পেরে উঠে না।
অঙ্কন মৃদু হেসে অনন্যার টমেটোর মত টকটকে লাল চিবুকের দিকে তাকায়। নাহ্ দেখতে বেশ লাগছে। হঠাৎ করেই স্কুলে পড়াকালীন ছেলেমানুষী এক ছন্দ মনে পড়ে যায়। বিড়বিড় করে আওড়ে গেল,
” কাঁচামরিচ ঝাল
টমেটো লাল
তার চেয়ে বেশী সুন্দর
রাগকুমারীর গাল।”
কিন্তু অনন্যা শুনতে পেল। অনন্যার মুখ অজান্তেই হাঁ হয়ে যায়। খিলখিল করে হেসে উঠে।
হৃদয়হরা হাসিতে অঙ্কনের মনে তখন ভালোবাসার ফুল ফুটে। হাতের বাধন আলগা হয়। তবে একেবারে ছেড়ে দেয়না। চেপে ধরে দুই কাধ। লুটিয়ে পড়ে বিছানার ঠিক মাঝখানে।
কোনরকম প্রস্তুতি বিহীন এমনতর আক্রমনে অনন্যা তখন দ্বিধাগ্রস্থ। স্তিমিত গলায় বলল,
” অঙ্কন, কী হচ্ছে! ”
” কী আবার বেহায়া হাসি দিয়ে মাথা নষ্ট করার শাস্তি দিচ্ছি।”
অনন্যার গলার ভাজে মুখ গুজতে গুজতে অঙ্কন বলল।
অনন্যা তখন ছটফট করে উঠে। সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু ছয় ফুট দুই ইঞ্চির পাহাড় সহ দেহের নিচে পড়ে ছটফট করা আর মুখে বুলি ফুটানো ছাড়া আর কোন মুখ্যম অস্ত্র আপাততঃ নেই। কিন্তু সেটাও সম্ভবত এখন আর কাজে দিবে না।
” তুমি আমাকে আরও একবার বেহায়া…..
কথাটা তার আর শেষ করা হয়না। আজকের মত মুখটা আপাতত সিলগালা করে দিল অঙ্কন। এইমুহুর্তে ভালোবাসি ছাড়া বাড়তি কথা শুনতে সে ভারী নারাজ।
চলবে….

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে