চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৯

0
2003

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৯
লেখা আশিকা জামান

হোটেলের লবীতে অনন্যার অস্থির পায়চারি!
আরেকটু পরেই রওয়ানা হবে পোখারারার উদ্দেশ্যে। সাইমুন রাতেই হোটেল ম্যানেজারকে বলে পোখরার বাস টিকেট কেটে রেখেছিল।

এখন কেবল যাওয়ার অপেক্ষা। অনন্যা আর নিনিত ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে নেমে এসেছে। বাকি সবার আসতে একটু লেট হচ্ছে। নিনিতের মেজাজ চটে যাচ্ছে। তবে অনন্যাকে সেজন্য মোটেও বিচলিত দেখাল না। সে বরংচ দু’চোখ ভরা তৃষ্না নিয়ে অপেক্ষা করছে অঙ্কনকে একপলক দেখার। হয়তো আজই শেষ দেখা এরপর পোখরাতে তিনদিন থেকে ব্যাক করবে ঢাকার পথে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



অনন্যা অস্থির মস্তিষ্কে পায়চারি করতে গিয়ে ধাক্কা খায়। অবচেতন মন বলছিল অঙ্কন। কিন্তু না মেকাপ আর উগ্র সাজের ঝলকানিতে চোখে ধাধাঁ লেগে যায়। আবার তাকায় সেই রুপ আর ঐশ্বর্যের পসরা সাজানো আবেদনময়ী নারীটার দিকে। হন্তদন্ত হয়ে ছুটছিল।
” চেলসিয়া, আর ইউ ওকে! কিছু হয়নি তো!” পাশে থাকা মেয়েটির উৎকন্ঠায় মরি মরি অবস্থা।
এদিকে চেলসিয়া তীক্ষ্ণ চোখে অনন্যাকে পর্যবেক্ষন করছে। কোথায় দেখেছে চট করে মনে করতে পারছে না। লিসা নামক এটেডেন্সের কথায় তার চেতনা ফিরে। শান্ত গলায় বলে,
“ইট’স ওঁকে! চলো!”

অনন্যার লজ্জা করছে৷ চেলসিয়াকে দেখে মস্তিষ্ক জুড়ে এক অলিখিত তুলনা চলছে। এরকম গ্ল্যামারগার্ল রেখে অঙ্কন কেন তার মত সাধারণ মেয়ের দিকে ঝুঁকলো!
এতক্ষন অঙ্কনের জন্য যত ছটফটানি শুরু হয়েছিল ঠিক ততটুকুই লজ্জা এইমুহুর্তে তাকে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে। এই বাদরমার্কা ত্যাদড় রুপ নিয়ে অঙ্কনের সাথে এত গোয়ার্তুমি সে করে কী করে!
সুন্দরীরা রুপের ছটা ছিটিয়ে চারপাশ আলোকিত করে সামনে এগিয়ে গেল। পেছনে দীর্ঘশ্বাস পড়লো এককোণে দাঁড়ানো অনন্যা আর নিনিতের।

” অনন্যা,..!”
চেনা সুরের ডাকে অনন্যা সচকিত তাকায়।
অঙ্কন কাছে এসে দাঁড়ায়। ব্ল্যাক শার্ট, ব্রাশড জিন্স চোখে সানগ্লাস। ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি চিকচিক করছে। অঙ্কন ম্লান হাসছে,
” তোমরা এখনি বের হচ্ছো৷আচ্ছা সাবধানে যেও। আমাকে এক্ষুনি বের হতে হচ্ছে সবাই অপেক্ষা করছে।”

অনন্যা স্তিমিত গলায় বলল,
” ঠিকাছে। তুমি সাবধানে থেক। নিজের খেয়াল রেখো।”
এরমাঝেই সবাই হৈ হৈ করে নেমে পড়লো। সেদিকে একবার তাকিয়ে ফের অনন্যার দিকে মনযোগ দিল। কোন কথা সে বলতে পারলনা কেবল নির্বাক চেয়ে থাকল। যেন জন্ম জন্মান্তরের ভাষারা থমকে গেছে। এরপরের কয়েকটা মুহুর্ত চোখের পলকে শেষ হয়ে গেল। অঙ্কন ত্রস্ত পায়ে বিদায় নিল।

পোখরাকে নেপালের রাণী বলা হয়। কাঠমুন্ডু থেকে ২০০ কিলোমিটার। অনেক ট্যুরিস্ট বাস আছে। যেতে লাগে প্রায় ৮ ঘন্টা। সকাল সাত টায় সবগুলো বাস এক সাথে ছাড়ে। ওরা ৯শ রুপি করে সাতটা টিকেট নেয়। থামেল থেকে ১০ মিনিট হাটলেই বাস স্ট্যান্ড। লাগেজ নিয়ে হাটতে অনন্যার কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু কী করার অঙ্কন থাকলে লাগেজটা সেই নিতো। আর সেও অনীহার মত ময়ুরপঙখীর ন্যায় উড়ে উড়ে যেত। হঠাৎ অনন্যার অবস্থা দেখে একটি চাইনিজ ছেলে যে কীনা ওদের সাথেই যাবে। সে লাগেজ নিতে চাইল। অনন্যা অনেক বাধা দিতে চাইলো কিন্তু কোন কথা শুনলো না। নিজেই লাগেজ বহন করতে লাগল। তাই দেখে নেহা মনের দুঃখে বলল,
” সবার কী তোকেই চোখে পড়ে আমি কি দেখতে এতটাই খারাপ!”
” নারে তুইতো মহারাণী ভিক্টোরিয়া তোর ধারে কী যে সে পাত্র ঘেঁষতে পারে!”

” আমার এই চাইনাজ ছেলেটা হলেই হবে প্লিজ ম্যানেজ করে দে-না।”

” আমি কী করে ম্যানেজ করে দিব। লাইন মারতে চাইলে নিজে নিজে মার আমাকে কেন টানিস।” অনন্যা বিরক্ত হয়ে বলল।
তাতে যেন নেহা আরও বিরক্ত উঠল। বিরস মুখে বলল,
” ঠিক আছে, ঠিক আছে। তোরে কিচ্ছু করে দিতে হবেনা। যা করার আমি-ই করব।”

ওরা বাসের মাঝামাঝি বসল। অনন্যার পাশের সারিতে জাপানিজ ছেলের সিট পড়লো নেহার সাথে। যারপরনাই নেহা যেন সাপের পাঁচ পা দেখল। অনন্যা বিস্মিত হয়ে একটু পর পর ওদের দিকে তাকাচ্ছিলো। দুজন দুদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। মনে হয় যুগ যুগের ঝগড়া। ওদের অবস্থা দেখে অনন্যার হাসি পাচ্ছিল। পরক্ষণেই নেহা ঠোঁট বাঁকিয়ে ইশারায় দুঃখ প্রকাশ করছিল। অনন্যার মনে হলো এই চাইনিজ হামবড়া ছেলের বিরহে বান্ধবী তাহলে ভালোই কাহিল!

এরমাঝে রাস্তায় ৩বার গাড়ি ব্রেক করলো। মোটামুটি মানের খাবার হোটেল আছে। তবে দাম গলাকাটা। প্রায় তিনগুন। ওঁরা সাথে শুকনা খাবার আর পানি নিয়ে নিল। নেপালে সকল হোটেল আর ট্যুরিস্ট বাসে ওয়াইফাই থাকে। আর নেপালের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। দিনে ১২ ঘন্টাও লোড শেডিং হয়।

ওঁরা তখন পোখরার কাছাকাছি। দীর্ঘ জার্নির ধকলে সবাই কাহিল তখন অনন্যা সাইমুনের উদ্দেশ্যে বলল, ” হুট করেই কোন হোটেলে ঢুকে পরবিনা। বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, গরম পানি এবং ওয়াইফাই আছে কিনা ভালোভাবে জেনে নিবি।”
” তুমি রিলাক্সে থাকো। অত চিন্তা করা লাগবেনা। ” সাইমুন হাসতে হাসতে বলল।

পোখরাতেও হোটেলের লোকজনকে বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। একজনের সাথে কথা বলে ওরা ট্যাক্সিতে উঠে গেলো। নাম হোটেল কিং ফিশার। এসে মনে হলো অনেক ভালো পরিবেশ। চারপাশে ট্যুরিস্ট দিয়ে ভরা।পুরো এলাকাটিকে এইজন্যে ইউরোপ মনে হচ্ছে।যেহেতু ক্লান্ত তাই আজকে রেস্ট নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। হোটেলেই খাবারের ব্যবস্থা আছে। আপাতত তেমন সমস্যা নেই তবে আগেই দামাদামি করে নিতে হল না হলে গলা কাটবে এটা জানা কথা। অন্তত তিনগুন দাম বেশি চায় সব কিছুতে।

খেতে গিয়ে দেখা গেল ওদের খাবারের স্টাইল অনেকটা কোলকাতার মতো। কি সব মশলা দেয় তানভীর খেতে পারছিল না। তার উপর ছোট ছোট টাকী সাইজের মাছ। ভারী জ্বালা হলো। তার উপর ওদের ভাষা হিন্দি আর নেপালী মিক্স। স্টারপ্লাস সহ সকল হিন্দি চ্যানেল ওখানে আছে। ভেবেছিল বিদেশ গিয়ে অন্তত একটু শান্তিতে থাকবে। দেখা গেল স্টারপ্লাস এখানেও শান্তি দেবে না। হিন্দি থোরা থোরা পারে মনে হল এটা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিয়ে হবে। তানভীর হোটেলের লোকটাকে ডেকে বলল, ” দাদা মাছ ইতনা ছোটা কেয়া? একটু বড় সাইজ কা মাছ দিজিয়ে। ”
উনি বললেন, “ইন দেশকোতো বড় সাইজ মাছ নেহি হে। ”
সাইমুন চোখ কপালে তুলে বলল,” কিউ.. ইধারপে রুই, কাতল, হিলশা নেহি?”
উনি বললেন,” নেহি.. মেরা পাস মশুর কা মাছ, গোবিকা মাছ হে।”
মেয়েরা সব হাসতে হাসতে কাহিল। অনীহা তানভীরের পিঠে খোঁচা মেরে বলল,” গর্দভ এখানে ডালকে মাছ বলে।”

“আমিতো আর স্টারপ্লাস বিশেষজ্ঞ না। জানবো কি করে। ভাবলাম ডালকে যেহেতু মাছ বলে তাহলে মাছকে নিশ্চয়ই ডাল বলে।” তানভীর বিরস মুখে বলল।
হোটেলের লোকটা কী ভেবে যেন নিজেই বললেন, “আপ বড়া মাচ্ছি চাহিয়ে? ”
তানভীর খাওয়া ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠল,
“আরে মাছিও খায় নাকি ওরা? এরা শুকর খায় জানতাম, এখন দেখি মাছিও খায়। ”

অনীহা তানভীরকে হাত ধরে বসাতে বসাতে বলল,
“হিন্দীতে মাছকে মাছলি বলে।”
কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে মুখে মেকি হাসি টেনে তানভীর বলল, “ওকে বড়া মাছলি দিজিয়ে। আর মাছলির কারী না বানিয়ে ফুলকপি, আলু, শিম দিয়ে রান্না করে দিবেন। আর সম্ভব হলে শাকও দেবেন। লোকটি ওকে বলে চলে গেলো।”
পরের বার রাতে যখন খাবার আনলো ওঁদের চোখ তখন কপালে। ফুলকপি, বাধাকপি, আলু, শিম, পুইশাক, পালং শাক সব এক সাথে মাছ দিয়ে রান্না করে নিয়ে আসছে। এই খাবারের নমুনা দেখে সবাই একযোগে তেরছাভাবে তানভীরের দিকে তাকাল।
” তানভীরের বাচ্চা এইবার এই বিদঘুটে খাবারটা যদি তুই একাই না গিলিস তো তোর খবর আছে!” নিনিত একবাক্যে বলে উঠল।
” আরে খেতে তো ভালো ও লাগতে পারে। আগে টেস্ট কর।” অনন্যা পরিস্থিতি ম্যানেজ করার জন্য বলল। যদিও এই খাবার দেখে তার নিজেরও রুচি আসছে না
” ওরে কি বুঝাইলাম আর কি বুঝলো। তোরা অন্যকিছু অর্ডার করতি! আমি তোদের খাইতে বলছি।”
তানভীর হঠাৎ রেগে গেল। ওর এই একগুয়ে রাগটার কথা সবার জানা। তাই কেউ আর কিছু বললনা চুপচাপ খেতে লাগল।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে মুখে দিয়ে দেখা গেল কী টেস্ট! সত্যি অসাধারণ টেস্ট!
বাংলাদেশের রান্নার চেয়েও মজাদার ছিলো।
অনন্যা এটার নাম দিল,” মিক্স মাছলি।”
নিনিত লজ্জিতভাবে বলল,
” এরপর আরও একবার এই খাবারটা আমি টেস্ট করব। থ্যাংকু তানভীর!”
” তোর ঠ্যাং তুই খা! খেতা পুরি ঠ্যাং এর!” তানভীর মুখ বাঁকিয়ে বলল।
” তুই কী এখনো রেগে আছিস?” অনন্যা বলল।
” না তোরে ভাবি বানানোর আনন্দে ধেই ধেই করে নাচবো। তা হিরো সাহেবের বিয়েটা করার সময় কবে হবে?”
অনন্যা চট করে এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারলনা। এক অন্যরকম অস্বস্তিতে মাথাটা যন্ত্রণা করতে লাগল।
চলবে..
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে