চলো না হারিয়ে যাই পর্ব-০৮

0
301

চলো_না_হারিয়ে_যাই [৮]
লেখকঃ জয়ন্ত_কুমার_জয়

ঘরের মেঝেতে র”ক্তের স্রোত।মিষ্টির নিথর দে’হ মেঝেতে পড়ে আছে।

হসপিটালে মিষ্টিকে যখন নেওয়া হয় তখন মিষ্টি একদম নুয়ে গেছে।দ্রুত তিনজন নার্স মিষ্টিকে কোথায় যেন নিয়ে গেলো।মিষ্টির মা অঝোরে কান্না করছে,মিষ্টির বাবা নির্বাক।

কিছুক্ষণ বাদে ডাক্তার এসে বললো ” র’ক্ত যে হারে বেড়িয়েছে,আর একটু দেরি হলে হয়তো প্রেগ”ন্যান্সিটা ড্রপ যেতো।তবে আমরা এখনো সিওর বলতে পারছি না।বেবি জন্ম নিলে প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ”

কথাটা শুনে মিষ্টির বাবা,মা’য়ের পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেলো।প্রেগ”ন্যান্সি মিস যাবে মানে কি? ডাক্তার কি মিষ্টির বদলে অন্য কোনো মেয়ের কথা ভুলে এখানে এসে বলছে? মিষ্টির বাবা চোখ থেকে চশমা সরিয়ে বিষ্মিত হয়ে বললো

” আপনার মনে হয় ভুল হচ্ছে,আমার মেয়ে প্রে”গন্যান্ট না তো! ”

ডাক্তার ভ্রু কুঁচকে বললো ” কি বলেন! আমরা তো টেস্ট করে দেখলাম, উনি প্রেগ”ন্যান্ট!রোগীকে দেখেই বুঝেছি প্রে”গন্যন্ট,শরীর ফোলা ফোলা ভাব।সে যাই হোক,রোগী এখন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত,কিছুক্ষণ পর আমার কেবিনে একবার আসবেন ”

কথাটা বলে ডাক্তার চলে গেলো। মিষ্টির বাবা চোখ বড়বড় করে মিষ্টির মায়ের দিকে তাকালো।মিষ্টির মা থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে,কিছু বলছে না।মিষ্টির বাবা কাঁপা গলায় বললো

” এটা কি বললো ডাক্তার! মিষ্টি এরকম একটা কাজ করেছে! আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না ”

” ডাক্তার ভুল বলছে,আমাদের মেয়েকে আমরা চিনি তো,এরকম কিছু মিষ্টি কখনোই করবে না ”

মিষ্টির বাবা লক্ষ্য করলো বিষণ্ন নেই। তিনি আশেপাশে বিষণ্নকে খুঁজলেন,পেলেন না।মিষ্টির মাকে বললেন ” মিষ্টির ওই বন্ধুটা কই? ”

মিষ্টির মা চোখ মুছে বললো ” তাই তো,বিষণ্ন কই গেলো! ”

___________

ফাঁকা রাস্তায় বিষণ্ন হাঁটছে।তার শার্ট ভিজে আছে র”ক্তে।শার্টটা খুলে কো ম’রে বাঁধতে বাঁধতে বিষণ্ন হাটছে মাথা শূণ্য অবস্থায়।পকেট থেকে বেড় করলো সাদা কাগজটা।কাগজে মিষ্টির এলোমেলো হাতের লেখা।

কাগজটার দিকে তাকিয়ে বিষণ্ণ ঠো’ট বাকিয়ে হাসলো।এ হাসি হতাশার,দুঃখের,রাগের।কাগজটা পেয়েছিলো মিষ্টির হাতে।দরজা ভেঙ্গে বিষণ্ণ যখন মিষ্টির কাছে আসে তখন তার বাম হাতের মুঠোয় কাগজটা ছিলো।বিষণ্ণ কাগজটা নিয়ে পকেটে রেখেছিল।হাসপিটালে মিষ্টিকে যখন নার্সরা নিয়ে গেলো তখন বিষণ্ণ কাগজটা খুললো।কাগজে এলোমেলো অক্ষরে লেখা

আমি আর সইতে পারছি না বাবা।আমার পে’টে অবৈধ সন্তান বড় হচ্ছে।সেরাতে আমি যখন অজ্ঞান ছিলাম তখন জায়ান আমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়েছে,ফল স্বরুপ আমি প্রেগন্যান্ট।জায়ান পুরে বিষটা অস্বীকার যাচ্ছে।আড়ষ্টে,ঘৃনায়,লজ্জায় কথাটা কিছুতেই তোমাদের বলতে পারিনি।নিজের কাছেই নিজেকে নর্দমার মতো মনে হতো।আর লিখতে পারছি না,হাত থেকে র”ক্ত বেরোচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে।ভালো থেকো তোমরা।

বিষণ্ন এই নিয়ে লেখাটা তিনবার পড়লো।খুব সম্ভব কাল সকালের নিউজের হেডলাইন হতে যাচ্ছে জায়ান।বিষণ্ণ লক্ষ্যই করেনি প্রাইভেট কারে বসে দু’জন লোক তার উপর নজর রাখছে।বিষণ্ণ যখন কাগজের দিকে তাকিয়ে মিষ্টির কথা ভাবছে ঠিক সেই মুহুর্তে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন বিষণ্ণর মুখ চেপে ধরলো।বিষণ্ণ কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্যুট পড়া একজন বিষণ্ণকে গাড়িতে তুললো।

___________

মিষ্টির বাবা সকাল থেকে ডাক্তারকে রিকুয়েষ্ট করেও মিষ্টির সাথে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছে না।একপর্যায়ে রেগে গিয়ে মিষ্টির বাবা বললো ” আমাকে আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে দিচ্ছেন না কেন? ”

” আসলে রোগীর অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল,এখন কাউকে দেখা করতে দেওয়া সম্ভব না ”

কথাটা বলেই ডাক্তার চলে গেলো বোর্ড কনফারেন্স।সব ডাক্তার,নার্স সেখানে অপস্থিত।সিনিয়র ডাক্তার গম্ভীর স্বরে বললো ” এতো লোকের চোখ এড়িয়ে রোগীকে নিয়ে নিয়ে চলে গেলো! রোগীর বাবা তো অস্থির হয়ে গেছে মেয়েকে দেখার জন্য ”

উপস্থিত ডাক্তারদের মধ্যে একজন বললো ” এবার পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত ”

” পুলিশকে খবর দিলে,আর মেয়ের বাবা যদি বেকে বসে তাহলে আমাদের লাইসেন্স কা”টা যাবে।এ তো ভারী মুশকিলে পড়া গেলো।মেয়েটিকে কিডন্যাফ করা হয়েছে।এসব জানাজানি হলে বুঝতে পারছেন কি হবে? ”

মিষ্টির যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলো সে লাল টকটকে চাদর বিছানো একটা বিছানায় শুয়ে আছে।ওঠার চেষ্টা করলো,হাতে ব্যাথা থাকার কারণে উঠতে পারলো না।চারদিক দমকা হাওয়া।জানালা দিয়ে চোখ যতদূর যায় সব কুয়াশায় ঘেরা।

মিষ্টি বিড়বিড় করে বললো এটা কোন যায়গা?আমি এখানে কেন? আশপাশের পরিবেশ বেশ স্যাঁতস্যাঁতে।মিষ্টির শরীর ধীরে ধীরে হীম হয়ে এলো…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে