চন্দ্র’মল্লিকা পর্ব-৮+৯

0
469

চন্দ্র’মল্লিকা ৮ + ৯
লেখা : Azyah_সূচনা

দিবা রাত্রির আবর্তনে নবীন বর্ষের আগমন।রূপ বদলেছে এই পারিপাশ্বিক অবস্থার সাথেসাথে প্রকৃতিও।এক নয়ের সমন্বয়ে বয়েস এখন ঊনবিংশ।একবার দর্শনের ইচ্ছায় কাতরে উঠেছে হৃদয়।হৃদয় মরুভূমি কন্ঠ শুনতে।নির্দোষ উভয় মানব মানবী।তবে দুঃখের ভাগটা শুধু একজনের কেনো?জীবনটা গল্প হলে কেমন হতো?পরিশেষে সুখের সমাপ্তি থাকতো।

‘ পরিবার ‘ কখনো সরল আবার কখনো অত্যন্ত জটিল শব্দ। দূর চোখে দেখতে জোট বন্ধন। কাছে এলেই দুর্বোধ্য।ভিন্ন ভিন্ন মানুষ, চরিত্র আর সম্পর্কে গড়ে ওঠা একটা ঘর।যেখানে এই মানুষগুলোর বসবাস।সমস্যা আছে, মতবিরোধ আছে।তারপরও সংঘবদ্ধ। সেটি একে অপরের প্রতি টান,ভালোবাসা।এই ঘরে বিষদানা ফুটে উঠলে করলার চেয়ে তেতো হয়ে উঠে সম্পৃক্তি। মাহরুর ও মল্লিকার দু পরিবারের মধ্যেও বিষাক্ততা মিশে গেছে। সম্পর্কের রুঢ় অবনতি।দেখা নেই সাক্ষাৎ নেই।রেগে গিয়ে অনেকবার ছেলেকে দেখতে চেয়েও পারেননি লিজা বেগম।ঢাকা গিয়েছিলেন মেয়ের কাছে। মাহরুরকে ফেরাতে পারেনি।শক্ত মূর্তির মতন জমিনে গেড়ে আছে পা জোড়া।ফিরবে না।মায়ের অহেতুক ইচ্ছা পূরণ করতে সে রাজি নয়।

“শুভ জন্মদিন সখী”

উদাস মন আলোকিত হয়। শশী এসেছে।এই একটা মানুষ যার প্রতি বছর মনে থাকে মল্লিকার জন্মদিন।ঠিক সময়ে চলে আসে।বিয়ের পরও এসেছে আজ।নেত্র তুলে তাকায় শাড়িতে পরিপূর্ণ নারী রূপে শশীকে।বিয়ের পর থেকেই শাড়ি পরে।দেখতে বড় দেখায়।চারমাস পর দেখলো তাকে।চোখ জুড়িয়ে আসে।জড়িয়ে ধরতে চাইলে শশী থামায়।

বলে, “এই এই থাম!তোর জন্য কি এনেছি জানিস?”

“কি?”

“মানুষ জন্মদিনে কেক কাটে।আমিও তোর দুলাভাইকে বলে তোর জন্য কেক এনেছি।আয় বসার ঘরে”

ভাগ্য করে একজন স্বামী পেয়েছে শশী। খাঁটি পুরুষ মানুষ।প্রতি সপ্তাহে দুয়েকবার নিজের ফোন দিয়ে রমজান সাহেবের নাম্বারে কল দেয়। শশীর সাথে কথা বলিয়ে দেয় মল্লিকার। কলেজেও ভর্তি করিয়েছে।শিক্ষিত মানুষের ভিন্ন চিন্তাধারা।পড়া আর সংসারের চাপে বাপের বাড়ির রাস্তা ভুলে যাওয়ার উপক্রম শশীর।

“আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই”

“এইতো মল্লিকা।কেমন আছো?”

“ভালো।আপনি কেমন আছেন?আর বাড়ির সবাই?”

আরিফ উত্তর দেয়, “একদম ফার্স্ট ক্লাস।সবার দোয়ায়।তোমার নাকি আজ জন্মদিন?তোমার বান্ধুবি এক সপ্তাহ আগ থেকে বলে বলে আমার কানের পোকা পচিয়ে ফেলেছে।বাধ্য হয়ে ছুটি নিয়ে আসলাম”

শশীর দিকে চাইলো মল্লিকা।কনুই এর গুতা দিয়ে বললো, “কিরে?কেনো জ্বালিয়েছিস দুলাভাইকে।আমরা জন্মদিন পালন করি কখনো?”

“করিস নাতো কি হয়েছে।এবার করবি? অষ্টাদশ পেরিয়েছিস বিশেষভাবে পালন কর”

বয়স বাড়লে কি হবে? মাহরুর ভাইকে পাওয়া যাবে?সেতো আরো দেড় বছর লাফিয়ে দূরে চলে গেলো।ধরা ছোঁয়ার বাহিরে চলে গেছে।মনে পড়ে না হয়তো তার চন্দ্রের কথা।ভুলে গেছে জাদুর নগরী ঢাকায়।

খোশগল্পে মেতে উঠলো শশী আর মল্লিকা। সর্বপ্রথম জিজ্ঞেস করলো, “মাহি ভাইয়ের কোনো খোঁজ আছে?”

“নাহ।হয়তো হারিয়ে গেছে কোথাও?”

“ফোন করেনা?”

“আব্বার ফোনে ফোন করেছিল কয়েকবার।আমাকে চায়নি”

স্বাভাবিক মুখ মল্লিকার। তারপরও একরাশ হতাশার ছাপ। অপ্রসন্নতা ঘেরা। ড্যাবড্যাব চোখের চাহনি শূন্যে।না জানে কত কষ্ট পুড়ে রেখেছে হৃদ গভীরে?

“এখনও ভালোবাসিস?”

“ভালোবাসা অপেক্ষার সাথে তীব্র হয়েছে।”

মল্লিকার কথার ধাঁচে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে শশী। হঠাৎ উঠে গেলো। আরিফের কাছ থেকে ফোন চেয়ে এনেছে।মল্লিকার পাশে বসে বললো,

“নে একটা কল দে।”

“কাকে?”

“তোর মাহরুর ভাইকে।”

নাম্বারটি মুখস্ত। ঠথস্ত।বাবার নাম্বারে যতবার কল এসেছে।ততবার একটু একটু করে টুকে নিয়েছে। দ্বিধায় থমকালো মল্লিকা।কল করা উচিত হবে?হতে পারে মাহরুর ভাই ব্যস্ত। শশীর জোরাজোরিতে কলটা মিলায় কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে।

“হ্যালো”

ব্যস্ত কন্ঠস্বর শুনে ধ্বক করে উঠে মল্লিকার হৃদপিণ্ড।বুকে হাত চেপে ধরে মল্লিকা।গলায় জট পাকিয়ে আসছে পরবর্তী কথা।

“হ্যালো কে বলছেন?”

এবারও উত্তর দিতে পারলো না মল্লিকা।ঝিম ধরে যাচ্ছে মাথায়।নিঃশ্বাসের আওয়াজে চট করে ধরে ফেললো মাহরুর।আগেও কল করে এভাবেই নির্বাক ছিলো সেই কন্যা।

ব্যস্ততা কাটিয়ে নরম গলায় ডাকলো, “চন্দ্র”

মাহরুরের ডাক মল্লিকার সমস্ত জট খুলে দিয়েছে।মুখ ফুটে বেড়িয়ে আসল, “কেমন আছো মাহরুর ভাই?”

“আছি….মোটামুটি”

মাহরুরের গলার স্বরে পরিবর্তন আসে শেষ কথাটায়।ভালো থাকার আড়ালে লুকিয়ে রাখা ক্লান্তিকে এড়ানোর চেষ্টা করছে।

“ভুলে গেছিস আমায় চন্দ্র?”

এই প্রশ্নতো মল্লিকার করার কথা।সেতো রোজ মনে করে তার মাহরুর ভাইকে।সে নিজেই ভুলে গেছে।

“তোমার কি মনে হয়?”

“আমি জানি না।রমজান চাচাকে কল করলে একটাবারও কথা বলতে আসিসনি।কেনো?আমার উপর রেগে আছিস?”

“আমি তোমার উপরে রেগে নেই মাহরুর ভাই। তুমিওতো কথা বলতে চাওনি।”

মাহরুরের বোধগম্য হলো দুজনেই একই নৌকায় ভেসে আসছে। উভয়েই চেয়েছিলো কথা বলতে।তবে বাঁধা ছিলো বিশাল।কাজের আড়ালে চোখ যায় ক্যালেন্ডারে।তারিখটা চিরচেনা। নীরব থেকেই বারবার মনে করতে চাইলো।কি আজ?চোখ বুজে মস্তিষ্কে জোর দেয়। খট করে মাথায় এসেছে।আজ চন্দ্রের জন্মদিন।

“জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা চন্দ্র”

প্রতীক্ষার দুঃখ কেড়ে এক চিলতে হাসি উপহার দিয়েছে মাহরুর।তার মনে ছিলো মল্লিকার জন্মদিনের কথা? আপ্লুত হয়ে উঠে মল্লিকা। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নেয় অল্প সময়ের জন্য।

মাহরুর প্রশ্ন করে, “তোর কত বছর হলোরে?”

“উনিশ”

“বাহ্!চন্দ্র বড় হয়ে গেছে”

“হুঁ”

“কি করছিস?”

“আমিতো দেড় বছর যাবত অপেক্ষাই করছি মাহরুর ভাই।আমার আর কোনো কাজ নেই।ফিরে এসো মাহরুর ভাই।আমার চেয়ে বেশি চাচী কান্না করে তোমার জন্য। অন্ততঃ তার জন্য ফেরো। ইদানিং শরীর ভালো থাকে না তার। কাল খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম তোমাদের বাড়িতে। দরজায় দাড়িয়ে ছিলাম। চাচী খাবারগুলো নেয়নি।খাওয়া দাওয়া করেনা ঠিকমতো।তুমি চাচীর কথা মেনে নাও।”

মল্লিকার এতগুলো কথার বিনিময়ে মাহরুর প্রশ্ন করে, “তুই কি জানিস আম্মা আমার কাছে কি চায়?”

“না মাহরুর ভাই।আর আমি জানতেও চাই না।আমার ভুলের কারণে তোমাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে।তুমি এসে মানিয়ে নাও চাচীকে।সে সত্যিই অসুস্থ।সেই সুবাদে আমিও তোমাকে একটু দেখে নিবো”

___

তিনদিন দোটানায় ভুগে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাহরুর।ফিরবে গ্রামে।এতটা রাগ দেখানো আবার বাড়াবাড়ি। নিশ্চয়ই মা এতদিন তার বিয়ের ব্যপারটা ভুলে গেছে।এক ঘণ্টার চিন্তায় টিকেট কিনে আনলো।জমিয়ে রাখা টাকা নিয়ে মার্কেটে টুকটাক কেনাকাটা করে বাসে উঠেছে।ওই মেয়েটাও অপেক্ষায়।তাকে আর কষ্টে রাখা অন্যায় হবে।এবার নিয়ে একটা ব্যবস্থা করবেই।গতবার অল্পতে রেগে গিয়েছিল বলে পরিস্থিতি খারাপ হয়।এইবার নাহয় সময় নিয়ে বোঝাবে মাকে।ছেলের ভালোবাসায় নিশ্চয়ই মানবেন।সবটা ঠিকঠাক করার আশা নিয়েই সকাল নয়টায় সেই পুরোনো গ্রামের গলিতে এসে পৌঁছায়।

“মাফ করে দাও আম্মা”

“কথা বলবি না তুই।এতদিন পর মনে পড়ছে আম্মার কথা?”

মায়ের কোলে জোর জবদস্তি মাথা পেতে শুয়েছে মাহরুর।যেমনি হোক।এটা চিরশান্তির জায়গা।ঢাকা এসেছিলেন দুইবার।ছেলে দেখা দিয়েছে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য।

“মনে পড়েছে।তাইতো বেশিদিনের ছুটিতে এসেছি।পুরো পনেরো দিন থাকবো।”

মিথ্যে রাগ দেখিয়ে লিজা বেগম বললেন, “তোর মালিক তোকে ছুটি দিলো এতদিনের?”

“কেনো দিবে না?এতদিন ওভার টাইম কাজ করেছি। ছুটির দিনেও ছুটি নেইনি।সব ছুটি জমিয়ে এবার অনেকদিন গ্রামে আরাম করবো”

“কর আরাম!”

“আম্মা দুপুরে টক ডাল আর শুটকি ভর্তা করবে?ঢাকায় খাবারের স্বাদ পাইনা”

ছেলের মাথা তুলে উঠে পড়লেন লিজা বেগম।আবদার করেছে।তাও এতদিন পর।পূরণ না করে পারে?আয়োজন করতে লাগলেন সবকিছুর। মাহরুর সারারাত ঘুমিয়ে এসেছে।দেহে ক্লান্তি নেই বললেই চলে।হাত মুখ ধুয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসে।

লিজা বেগমকে বলে, “আম্মা আমি চাচাদের বাড়ি যাচ্ছি।এগুলো দিয়ে আসি”

“কি এগুলা?”

“এইতো সবার জন্য টুকটাক এনেছি জিনিস। তোমারটা রাতে দিবো।”

“এতদিন পর আসছিস বলে বারণ করছি না।কিন্তু খবরদার!ওই মাইয়ার দিকে যেনো চোখ না যায়”

মায়ের কথা কানে তুললো না।রাগ দেখানো থেকে বিরত থাকার পণ করে এসেছে।সে দেখতে চায় চন্দ্রকে। এতোটা দিনে কি তার মধ্যে পরিবর্তন এসেছে নিশ্চয়ই। অপ্রাপ্ত বয়স থেকে প্রাপ্ত বয়সে পদার্পণ করা কন্যাকে কেমন দেখাবে দেখার জন্যে মনটা উশখুশ করলো।নিজেকে চলার পথে প্রশ্ন করেছে মাহরুর।কিসের এত তাড়া?কেনো এই অল্প সময়ের পথকে দীর্ঘ মনে হচ্ছে? চন্দ্রকে দেখবে বলে?সেতো ভালোওবাসে না চন্দ্রকে।তার মতন অনুভব করে না।তাহলে? মায়াটা কি এক ধাপ উপরে উঠলো তাহলে?

স্বাস্থ্যবতী এক মেয়ের দেখা মিলল।রোগা পাতলা গড়ন পরিবর্তিত হয়েছে। নারী রূপে ফুটে উঠার পূর্ব মুহূর্ত। রঙটা যেনো আরো উজ্জ্বলতায় ঝলকাচ্ছে। উচ্চতায় ব্যাপক পরিবর্তন।শুনেছে আঠারোর পর উচ্চতা বাড়ে না। তাহলে চন্দ্রের ক্ষেত্রে ভিন্ন কেনো?এক-দেড় বছর একটা মেয়েকে এত পরিবর্তন করতে পারে? বিপরীত দিকে মাহরুর ভাই দৃষ্টি গোচর হতেই ভ্রমে ডুবে যায় মল্লিকা।মন বলে দিলো তোর অনুরোধেই ফিরেছে।এই মুখ দর্শনের জন্যেই চোখ শুকিয়ে মরুভূমি হচ্ছিলো। কাছে এসে বলার জন্য তাড়না দিচ্ছে।

“এক বছর কেনো একশত বছর সময়ও তোমাকে আমার হৃদয় থেকে মুছতে পারবে না।”

সেটা মনের মধ্যেই রয়ে গেলো। ফরিদা বেগম গলা খাঁকারি দিয়ে মেয়েকে সরিয়ে নেন। মাহরুরকে ঘরে ডেকে নিলেও পুরোনো কথা তিনি ভুলেননি।কোনোভাবেই দুজনকে একে ওপরের মুখোমুখি করবেন না।সময় পেরোয় আর চন্দ্রের দেখা মিলল না। মেঘেরা আড়াল করে লুকিয়ে দেখছে তাকে। মাহরুরের নজরে যেনো গ্রহণ লেগে যাবে।হতাশ মাহরুর ফিরে আসে।

“তোর অপেক্ষা এখনও শেষ হয়নি চন্দ্র।তোর চোখ অল্প সময়ে অনেক কথা বলেছে আমায়।এতদিনেও তোর কোনো অভিযোগ নেই আমার প্রতি।আমার থেকে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মরিয়াও হোস নি।নিজের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছিস।আমাকে পেয়ে তুই না,তোকে পেয়ে আমি ভীষণ সৌভাগ্যবান হবো।অনেক ধৈর্য শেখার বাকি তোর থেকে।চেষ্টা করবো আমি।তোর মাহরুর ভাই চেষ্টা করবে যেনো তোর অপেক্ষারা ব্যর্থ না যায়।”

লেখাটি পড়ে মল্লিকা আনমনে হেসে ফেলে।একই পূর্ণতা পাওয়ার আগাম বার্তা? চন্দ্রমল্লিকার পূর্ণতা সমাবেশ? আন্দোলিত হৃদয়কে থামানোর কোনো পথ নেই।স্বল্প খুশি এলাহীভাবে উৎযাপন করতে শুরু করেছে।

___

মোতালেব হোসেন এসেছেন।সাথে আরো চারজন মানুষ নিয়ে।ঘরে পুরুষ মানুষ বলতে মাহরুর। মুরুব্বী হিসেবে লিজা বেগম।ছেলের আসার চারদিনের মাথায় তাদের ডেকে হাজির। চিনতে ভুল করলো না মাহরুর।খুব ভালো করেই চেনেন মোতালেব হোসেনকে।মায়ের দিকে কঠিন দৃষ্টি ছুঁড়ে চোয়াল শক্ত করে বসে রইলো।

লিজা বেগম চা নাস্তা এগিয়ে দিয়ে বললো, “দেখেন ভাই।লাখে একটা আমার ছেলে।আপনার অপছন্দ হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”

মোতালেব হোসেন তাল মিলিয়ে উত্তর দেন, “আপা আপনার ছেলেরে আমরা আগেই দেখে পছন্দ করছি।নাহয় বিয়ের প্রস্তাব দেই?”

“তা অবশ্য ঠিক।মেয়েরে বিয়ে দিছি ঢাকায়।আমার ছেলেও বিরাট চাকরি করে ঢাকায়।বিয়ের পর হিরাকেও সাথে নিয়ে যাবে।”

একেকটা কথায় বারংবার চমকিত মাহরুর।মায়ের মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে।এমনভাবে কথা বলছে যেনো বিয়ে ঠিকঠাক।এতগুলো মানুষের সামনে কোনো রকম সমস্যা তৈরি করতে চাইছে না বলেই দমে আছে।

মোতালেব হোসেন বললেন, “আমরা কি কথা পাকা ভাববো তাহলে?”

“আমার কোনো আপত্তি নাই ভাইজান।” লিজা বেগম দ্রুত সম্মতি দেন।

এবার মুখ খুললো মাহরুর।আর সহ্য হচ্ছে না এসব যন্ত্রণা।জেদকে আটকে থমথমে গলায় বললো, “চাচা আমাদের সময় দরকার একটু।এতবড় সিদ্ধান্ত এভাবেই নেওয়া যায় না।”

মোতালেব সাহেবের কপালে ভাজ পড়লো।দৃষ্টি তুলে তাকান লিজা বেগমের দিকে।লিজা বেগম দ্রুত মাহরুরের দিকে চেয়ে বললেন,

“কিসের ভাবাভাবি?হিরা হইলো আসল হিরা। খুব লক্ষী মাইয়া।দেখবি তোর সংসার গুছায় রাখবো।”

মোতালেব হোসেন বললেন, “আপনারা দুয়েকদিন সময় নেন।বিয়েতে আমরা ঝামেলা করবো না বেশি।যদি সব ঠিক হয় আগামী শুক্রবার জুম্মার দিনে তারিখ পাকা করেন আপা।”

থরথর কাঁপছে শরীরটা। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত হবে যেনো।মোতালেব সাহেব আর বাকিরা দৃষ্টি সীমানার বাহিরে যেতেই চেয়ার তুলে অন্যখানে ছুঁড়ে ফেলে মাহরুর।

“তোমার মাথা থেকে এই ভুত নামেনি আম্মা!আমি এসেছিলাম সব ঠিকঠাক করতে।আর তুমি এদের বাড়ি এনে হাজির করেছো?কি পেয়েছোটা কি?আমি করবো না এই বিয়ে ”

“কাকে করবি ওই কালনাগিনীকে।আমার ছেলেটারে আমার থেকে দূরে করছে যে মাইয়া?”

“আম্মা!আমি চন্দ্রকে যদি বিয়ে নাও করতে পারি তারপরও মোতালেব হোসেনের টাকার কাছে বিক্রি হবো না।সারাজীবন একা থাকবো।”

“আমি কথা দিয়া ফেলছি মাহি”

“রাখো তোমার কথা আম্মা।আর কি বললে বিরাট চাকরি করে তোমার ছেলে? দশ হাজার টাকা বেতন আমার।থাকা খাওয়া সব মিলিয়ে মাসের শেষে হিমশিম খাই।”

ছেলেকে মানানোর জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করেন লিজা বেগম। কেঁদে উঠলেন।পিঠ দেখিয়ে চলে যাওয়া ছেলের পানে নাটকীয়ভাবে বললেন, “তুই যদি বিয়েটা না করিস আমার মরা মুখ দেখবি।আর যদি তোর পছন্দ ওই চন্দ্র হয়।তাহলে হয় আমি থাকবো নয় চন্দ্র। এই কিরা কাটলাম।”

চলবে…

চন্দ্র’মল্লিকা ৯
লেখা : Azyah_সূচনা

পারিবারিক সমস্যা এক পর্যায়ে এসে বিরাট আকার ধারণ করে। মনোমালিন্য নামক ছোট বিষয়বস্তু থেকে শুরু হয়ে অনেক দূর এগিয়ে যায়। কর্ণকুহরে শুনতে স্বাভাবিক মনে হয়।তবে জটিলতার চরম পর্যায়ে।জোরতো স্ত্রী জাতির উপর হয়ে আসছে।নরম বলে জোর খাটিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয় তাদের উপর।এখানে পরিস্থিতি ভিন্ন। অনুভূতির ফাঁদে ফেলে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টায় লিজা বেগম।তার মতে সে সঠিক।ছেলের ভবিষ্যতে যেনো কোনো অভাব না থাকে সেই ব্যবস্থা করছেন তিনি।তার ভাষ্যমত এটাই।পারিবারিক যুদ্ধ আর মায়ের বারবার মৃত্যুর কথা শুনতে শুনতে মাহরুরের মস্তিষ্ক জঞ্জালে পূর্ন। দিশেহারা পথিকের ন্যায় অবস্থা।

একদিকে চন্দ্র অন্যদিকে তার মা। মধ্যিখানে আবদ্ধ সে নিজে। বুঝাতে বুঝাতে দিন পাড় করলেও মায়ের কোনো নড়চড় নেই। অন্ন ত্যাগ করেছেন।মেয়েকে ডাকিয়ে এনেছেন ঢাকা থেকে। বিয়ের ব্যাপারে সালিশ করবেন।

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেদোয়ান শাশুড়ি মার উদ্দেশ্যে বললো, “আম্মা মাহরুর একজন শিক্ষিত মানুষ।আজ নাহয় ওর কামাই অল্প।উপর ওয়ালা চাইলে একদিন সাফল্যের মুখ দেখবে।সেটাও নিজের চেষ্টায়।আপনার এই জেদটা ছেড়ে দিলেই ভালো হয় আম্মা।”

“আমি মোতালেবকে কথা দিয়ে ফেলেছি জামাই ”

“আমরা ক্ষমা চেয়ে নিবো আম্মা।”

মাহরুর চেয়ারে বসে থাকা মায়ের কাছে এসে জমিনে বসে।মায়ের হাতটা চেপে ধরে।যদি মনটা একটু নরম হয়?বললো,

“ও আম্মা?কি দোষ চন্দ্রের মধ্যে বলো? মিথ্যে বলবে না আম্মা।তুমিও জানো চন্দ্র খারাপ না।আর আমি কি করবো অন্যের ধনসম্পদ দিয়ে? বলো।তুমি তোমার ছেলেকে আর কয়টা বছর সময় দাও আমি দ্বিগুণ পরিশ্রম করবো।এই ধন সম্পদ আমাদেরও হবে।”

“আমি চন্দ্রকে তোর সাথে বিয়ে দিবো না।তোর বাপ কত কষ্ট করছে ওদের জন্য জানিস?এই ভাইয়ের দেখা শুনা থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত সব নিজে করছে।কোনো কাজ কাম করতো না রমজান।বসে বসে অন্ন ধ্বংস করছে।ভাইয়ের প্রতি এত দরদই আমাদের আজ সর্বহারা করেছে।”

শিরীন উত্তর দেয় মায়ের কথায়, “কেমন স্বার্থপরের মতন কথা বললা আম্মা?একটা ঘর আছে, ঘরে খাওয়ার জন্য তিনবেলা খাবার আছে।আর কি চাই?এত লোভ করা ভালো না আম্মা”

পূনরায় কাঁদতে লাগলেন লিজা বেগম।বলতে লাগেন, “এই দিন আসছে আমার।ছেলে কথার অবাধ্য হয় আর মেয়ে লোভী ডাকে।”

“এত বড় একটা ছেলেকে বিয়ের জন্য জোর করাও কি ঠিক নাকি?”

শিরীনকে থামিয়ে দেয় রেদোয়ান।একটা বাক্য মস্তিষ্কে নিতে রাজি নন লিজা বেগম। এ কেমন জেদ?ধরে বেঁধে নিজের ছেলের জীবন ভেস্তে দিচ্ছে।চন্দ্র আর মাহরুরের জীবনে ঝড় না তুলে ক্ষ্যান্ত হবেন না। লন্ডভন্ড করেই থামবে সব।

“এই জনমে বোধহয় মিলন মুশকিল চন্দ্র।তোর অপরাধী আমি। প্রার্থনা কর যেনো ভয়ঙ্কর শাস্তি পাই।”
___
বর্তমান,

“মিষ্টিকে পাচ্ছি না।আমাকে একটু সাহায্য করবেন?”

মেয়েলি গলার আওয়াজ পৌঁছেছে কর্ণ অব্দি। রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা মাহরুরের কোনো হেলদোল দেখা গেলো না।যেনো কিছুই শুনতে পায়নি।

“আপনি কি মিষ্টিকে আজ দেখেছেন?”

সময় পেরোয়।উত্তর আসেনি।সামান্য দুরত্বে দাঁড়িয়েও কি শব্দ যাচ্ছে না তার কানে?আবার ডাকলো,
মাহি ভাই?”

পূনরায় একই বাক্যে ফিরে চায় মাহরুর। ভীষণ বিরক্তিকর চাহনি। রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাড়ালো। হাতদুটো ট্রাউজারের পকেটে গুঁজেছে।

শাড়ি পরিহিত নারীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে, “কে মাহি?”

মলিন মুখ খন্ড। একেবারে নিরস।চোখের নিচে কালো কুচকুচে কালি পড়া।চোখে পড়ার মতন দুর্বল অঙ্গ।এমন একজন দাড়িয়ে সামনে।মিষ্টির মা সে। চিন্তিত, বিধ্বস্ত।মেয়ের জন্য হৃদয় ভীত। মহরুরের প্রশ্নে চোখ নামায়।এই অদ্ভুত প্রশ্নের উত্তর হয়না।

মাহরুর এগিয়ে আসে। ভিড়িয়ে থাকা দরজা মেলে দিলো তার সামনে।তিনটে বাচ্চা একে অপরকে জড়িয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শিরীনের ছেলে ও মেয়ে।এরমধ্যে মিষ্টিও আছে।সহি সালামতে মেয়েকে দেখে যেনো হৃদয় শীতল হলো।বুকে এতক্ষন ভারী পাথর এটে ছিলো।এত অভিমানী হলে হয়? এইটুকু মেয়ে!সামান্য কষ্ট পেলেই মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।হুমকি দেয় বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার।আজ ভেবেই বসেছিলো অভিমান করে কোথাও চলে গেছে।এবার সস্তি পেলো।ঘরে প্রবেশ করে মেয়েকে কোলে নেওয়ার জন্য উদ্যত হলে থামায় মাহরুর।

বলে, “ঘুমাচ্ছে ঘুমাক আর কিছুক্ষণ”

নিচু গলায় উত্তর আসলো, “সন্ধ্যা হচ্ছে বাড়ি ফিরতে হবে”

“ওই বাড়ি যেখানে তোকে অযথা অত্যাচার করা হয়?তোর মেয়েকে না খাইয়ে রাখা হয়?গায়ে হাত তোলা হয়?সেই বাড়িতে ফেরার এত তাড়া?”

“হুম”

“হুম?তুই জানিস মিষ্টিকে এখানে কেনো এনেছি?আমি জানতাম মিষ্টির খোঁজ করতে করতে ওর মাও এসে হাজির হবে এখানে।আর ওর মার সাথে আমার দরকারি কথা আছে”

“আমার হাতে সময় কম মাহি ভাই।মিষ্টিকে নিয়ে যাই।অন্য একদিন আসবো”

হাসছে মাহরুর।সামনে দাড়ানো নারীর কথার তাচ্ছিল্য করছে।কোনো কৌতুক বলেছে কি?অযথা হাসির কোনো মানে হয়না।

হাসি থামিয়ে মাহরুর বলে, “তুই আবার আসবি?এটাও আমার বিশ্বাস করতে হবে?”

“এত কথা আগ বাড়ানো হচ্ছে কেনো?আমি আমার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি যেতে চাই”

কন্ঠ খাদে নামায় মাহরুর।বলে উঠে, “কেনো পড়ে আছিস এই নরকে?কে আছে তোর এখানে আপন বলে?গ্রামে ফিরে যা চন্দ্র”

রুহ কেপে উঠে ‘ চন্দ্র ‘ ডাকে।অনেক দিন,অনেক কাল এই ডাক নিষিদ্ধ ছিলো। পুরোনো ক্ষত তাজা হওয়ার আগেই নিজেকে কঠিনত্যের আবরণ টানে।বলে উঠে,
“স্বামীর সংসার ফেলে যেতে চাই না।”

“যেখানে তোর কোনো মূল্য নেই,তোর সন্তানের কোনো মূল্য নেই সেটা কেমন স্বামীর সংসার?”

মিষ্টিকে কোলে তুলে চন্দ্র।বুকের সাথে লেপ্টে নেয়।এই বাচ্চাটা তার বেচে থাকার শেষ সম্বল।একে আকড়ে নিয়েই পাড়ি দেবে কঠিন পথ।যাওয়ার আগে বললো,

“আমি কোনকিছুর দিকে হাত বাড়ালে খুব শক্ত করেই আকড়ে ধরি। ঢিল দেওয়ার সুযোগ রাখিনা।সেইভাবেই আমার মেয়ে আর সংসারকে আকড়ে ধরেছি। মৃত্যুর আগ অব্দি ছাড়ছি না”

অতিশয় আকুলতা মিশিয়ে মাহরুর বলে, “আমার জেদ নিজের উপর কেনো?”

মাহরুরের কথায় আকাশ থেকে পতিত হয় মল্লিকা।জেদ?কিসের জেদ?সেকি আদৌ রেগে আছে?নাতো।একদমই নয়।উত্তর দিলো সেই ভঙ্গিতেই, “আমি কেনো জেদ দেখাবো?মাহি ভাই আপনি ভুল ভাবছেন।…আসি”

মাহরুর ভাই থেকে মাহি ভাই;তুমি থেকে আপনি?চোখে মরিচ পড়ার মতন জ্বালাপোড়া করলো।এই মুখটা কখনোই দেখতে চায়নি।এত অভিমান?পরপর নিজের উপর হাসলো মাহরুর। চন্দ্রের এমন মুখ, কথাবার্তায় বিপরীতে তার প্রশ্ন তোলা কতটা সমীচীন?পুরুষ হয়েও হাত গুটিয়ে বসে ছিলো? অকর্মা পুরুষ!
__

মা মেয়েকে রাত পৌনে আটটায় ঘরে ঢুকতে দেখে তেরে আসেন রেহালা।পূর্বের আঘাতের জায়গায় আরো সজোড়ে আঘাত করে বসেন।বলেন,

“নর্তকী তোরা মা মাইয়া?পথে নাচতে যাস?আমার চায়ের সময় হইছে মনে নাই?”

চন্দ্র আবেদনের সুরে বললো, “আম্মা মিষ্টির সামনে এইরকম শব্দ ব্যবহার করবেন না।আমাকে বলেন আমি শুনে নিবো।”

চন্দ্রের চুলের মুঠ শক্ত করে চেপে ধরে।বলে, “আমার মুখে মুখে তর্ক করস! কালনাগিনী।কুলাঙ্গার! বিয়া কইরা ঘরে পা রাখতে না রাখতে আমার পোলার ব্যবসা ডুবাইসোস। মাইয়া জন্ম দেওয়ার এক বছরে আমার পোলাটা খাইলি।আর কি চাস তুই ডায়নি?আমারে খাবি?খা! তোর আর তোর মাইয়ার জীবন নরক বানাইয়া তবেই আমি মরমু”

এখানের পরিবেশটাই তেতো!নতুন কিছু নয়।সহ্যের সীমা আগেই অতিক্রম করেছে।এখন নির্যাতন সীমা রেখার বাহিরে।ঘরের সব কাজ করে চন্দ্র।কাজের লোকের চেয়েও নিম্নে তার অবস্থান।ছোট জা সারাক্ষণ পায়ের উপর পা তুলে খাচ্ছে।তার স্বামীর সংসারেইতো চলে এই সংসার। কর্তাধর্তা সেই।

“এখানে পড়ে আছিস কেনো জানি না?আমার মরা পোলার ভাগের সম্পত্তি পাওয়ার লোভে এখনও মাইয়া নিয়া পইড়া আছোস।একটা কথা কান খুইলা শুইনা রাখ।এক কানা কড়িও পাবি না তোরা।”

দাদী চলে গেলে নির্শব্দ কান্নায় শব্দ জড়িত হয়।মায়ের সাথে এত খারাপ আচরণ কেনো করে দাদী।এটাই পাঁচ বছর বয়সী মিষ্টির প্রশ্ন।বাবা শব্দটা বোঝার আগেইতো তার বাবা চলে গেছে।মাও ঠিকঠাক যত্ন করতে অক্ষম। মিষ্টিকে দুপুরে বেচে যাওয়া ভাত খাইয়ে ঘুম পাড়ায় চন্দ্র।জানালার গ্রিল আকড়ে চন্দ্র বলতে লাগলো,

“আব্বা বলেছিলো আমাকে মিষ্টির বাবা তোমার থেকে হাজার গুন বেশি সুখে রাখবে।রাজরানী বানাবে।কই?কিছুইতো হলো না।সে আমাকে ভালোবাসতো না।শুধু চাহিদা মেটাতো নিজের।মিষ্টি জন্মের পর যাও তার মনে মায়া জন্মেছে।ওই মায়া নিয়েই আজীবনের জন্য ঘুমিয়ে গেলো।….তুমি গেলে আর আমায় দুঃখের কালো রঙ ঘিরে ফেললো মাহরুর ভাই।”

মাহরুরের বিয়ের দিন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল চন্দ্র। ছটফট করেছে মাটিতে পড়ে।পাগলের ন্যায় প্রলাপ করেছে।দেখেছে সবাই সবটা।সবার মায়া হলেও মন গলেনি লিজা বেগমের।গলায় ছুরি ধরে কার্য সিদ্ধি লাভ করেন তিনি সেইদিন।এত প্রয়োজন জীবনে শখ আহ্লাদ পূরণের?এত দরকার বিলাসিতা?ওই অপেক্ষারত মেয়েটিকে বুঝতেই দিলো না তার এই অপেক্ষা অহেতুক।কেড়ে নেওয়া হবে সবকিছু তার থেকে।কান্না জমে যায় এক মুহূর্তে। শরীর শক্ত হয়ে উঠে।নিজের চোখের সামনে মাহরুরকে কবুল বলতে শোনে কঠিন হয়ে দাড়িয়ে।যেখানে অধিকার তার ছিলো।তার নামে লিখিত হওয়ার কথা ছিল মাহরুরের।পাশে বসা নারীর পরিবর্তে চন্দ্রের থাকার কথা ছিল।কেমন যেনো বদলে যায় চন্দ্র। অসহায় মাহরুরকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটাও দেয়নি।একমাসে অন্যের সাথে সংসার গড়ে দেয় তার বাবা।মেয়েকে এভাবে ফেলে রাখলেও চলবে না।অন্যের যত্নে ঠিকই পুরোনো ঘা ভুলে যাবে চন্দ্রমল্লিকা।

মিষ্টিকে তার জায়গায় পেয়েছিলো।বাড়ির লোহার দরজায় আনমনা।সেই জানায় তার মাকে আজ অমানুষের মতন মারা হয়েছে।পিঠ বেয়ে রক্ত ঝরেছে।মা চিৎকার করে কেঁদেছে বেদনায়।এত নির্মমতা?ওই কোমল চাঁদের উপর?ওই শুদ্ধ চাঁদ যে আলোকিত করতে জানে।নিজে আধাঁরে তলিয়ে। ভালোবাসতে জানে অপেক্ষা করতে জানে। চন্দ্রের স্বামীর মৃত্যুর পরও মেয়ের জন্য পড়ে আছে।বাবা মায়ের কাছে অব্দি যাচ্ছে না।মায়ের কষ্টে মেয়েটিও ব্যথিত।বাচ্চা মনের ব্যথা আজীবনের প্রখর হয়।দাগ কাটে আজীবনের জন্য।ধীরেধীরে সেটা ঘৃণায় প্রবর্তিত হয়।

তমসাবৃত নির্জন কক্ষের চারদেয়ালে পুরুষালি ঢুকরে কান্নার ধ্বনি বাড়ি খায়। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে এই আওয়াজ আসছে।কতটা কষ্টে পুরুষ কাদে?কতটা আর্তনাদ থাকলে?আপন ভুলের মাশুল এই প্রকার?হার মানছে সমস্ত কিছু।বুক ফিরে হৃদপিণ্ড বেরিয়ে আসবে?

“আমাদের আবার আগমন হবে এই পৃথিবীতে?আবার আসবো দুজন দু দেহে?আবার প্রেমে পড়বো।সে বার তোকে সবকিছুর বিনিময়ে ছিনিয়ে নিবো।এই চিলেকোঠায় আমাদের একটা সংসার হবে তখন। মিষ্টি হবে আমার আর তোর অংশ।হবে এমনটা চন্দ্র?”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে