চন্দ্র’মল্লিকা ২
লেখা : Azyah_সূচনা
“কিশোরী মন বোঝার আগেই হারিয়ে ফেললামরে তোকে।ছয়টা বছর চেষ্টা করেছি অন্যকে তোর জায়গায় বসানোর।পেরেছিলাম হয়তো।আবার শূন্যে হয়ে গেলো।আমি আছি এক ভ্রমজালে।আমার বুঝদার পুরুষ মন তোর চেয়ে বেশি নাদান।তোকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছি চন্দ্রমল্লিকা।কেমন আছিস কে জানে?আদৌ ভালো আছিস?আমাকে ক্ষমা করতে পারিসনি হয়তো।আমি জানি”
বুকে চিনচিন ব্যথার অনুভব হলো।এই ব্যথার কোনো ঔষধি নেই। উপশমের কোনো উপায় নেই। ব্যর্থ নিজের দায়ে। দগ্ধা হচ্ছে ভেতরটুকু।ফিরে দেখার কোনো সুযোগ নেই।নিজ হাতে মাটি চাপা দেওয়া সম্ভাব্যতা আবার জমিন খুঁড়ে বের করবে নাকি?তার চেয়ে বেশ হয় কল্পনা করুক।যে সময়টুকু পেয়েছিলো ওই অবুঝ মেয়ের সান্নিধ্যে?যখন হৃদয় ছিলো তার অনুভূতির অবান্তরে? সেই সময়ের পুনঃপ্রচার মস্তিষ্কে।
“মা বলে মেয়েদের সাংসারিক হতে হয়।বয়স দশের চৌকাঠ পেরোলে ঘরের কাজে হাত লাগাতে হয়।আমি বেশি দেরি করে ফেলেছি।আজ আমি প্রথম ভাপা পিঠা বানালাম।তোমাকে আগে খাওয়াতে চাই।”
নতুন নতুন স্মার্টফোন হাতে পেয়েছে মাহরুর।নতুন নয় পুরোনো।বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুর ব্যবহারকৃত। আড়াই হাজার টাকায় কিনে এনেছে।প্রথম এমন যন্ত্র হাতে পেয়ে ভেতরের সব কিছু ঘেঁটে ঘেঁটে দেখছিলো। অর্ধেকটা দেখেছে বাকি অর্ধেক পূর্ন হওয়ার আগেই এসে হাজির সেই কিশোরী। হাতে গরম গরম ধোঁয়া ওঠানো ভাপা পিঠা।ঘ্রাণ ভেসে আসছে মাহরুরের নাক অব্দি।
উঠে বসতে বসতে বললো, “আয় দেখি কেমন পিঠা বানিয়েছিস?”
চন্দ্রের খুশির ঠিকানা নেই।মুখ জুড়ে মায়াবী হাসির ছড়াছড়ি।যেই ইচ্ছে পোষণ করে এসেছিল সেটা বুঝি এত দ্রুত পূর্ণ হলো?প্লাস্টিকের ঢাকনা তুলে দুটো ভাপা পিঠা রাখলো মাহরুরের সামনে।সেও বসেছে মুখোমুখি।যতনে মনের কোণে জায়গা দেওয়া এক অমায়িক পুরুষকে দেখবে।
মাহরুর গরম গরম পিঠা দুইভাগ করে মুখে পুড়ে নেয়।তার খাওয়ার ধরনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কিশোরী সান্নিধ্যে বসে। অপেক্ষার ভিড় জমলো হটাৎ।কেমন হয়েছে স্বাদ জানতে চায়।
“ভালো”
আকস্মিক চমকে উঠলো।মাত্রই মনে বিনা শব্দে যে প্রশ্ন এসেছিল সেটার উত্তর ঢাক বাজিয়ে দিলো মাহরুর। প্রতিক্রীয়াশূন্য মেয়েটি হটাৎ মুখে হাসি ফোঁটায়।ভীষণ খুশি।নিচের ওষ্ঠ দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে।
হটাৎ চোখ যায় মাহরুরের ডান পাশে রাখা ফোনটির দিকে। কৌতূহলি সুরে জানতে চাইলো, “এটাতো দামী ফোন মাহরুর ভাই।তুমি কোথায় পেলে?”
“আকার ইঙ্গিতে গরীব বলে খোটা দিচ্ছিস?আমি দামী ফোন কিনতে পারি না?”
ঘাবড়ে উঠে নরম মুখশ্রী। তড়িৎ গতিতে বলে উঠে, “না না আমি সেটা বুঝাই নি।আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো মাহরুর ভাই?আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।”
মাহরুর হেসে উত্তর দেয়, “পাগলী মেয়ে।আমি মজা করছিলাম।শান্ত হ।”
“ঠিক আছে মাহরুর ভাই।তোমার পিঠা পছন্দ হয়েছে?”
ইতিমধ্যেই দুটো পিঠা গপাগপ গিলেছে মাহরুর।কথার মধ্যেই খেয়ে সাবার।প্রথমবার অনুযায়ী বেশ ভালো হয়েছে। মাহরুর তাকে জ্বালাতন করার উদ্দেশে বললো,
“অনেক পছন্দ হয়েছে।আর দু চারটে নিয়ে আয়।”
একই সময় কত রকম মুখের ঝলক পাওয়া যায়?মেয়েটি রূপ বদলায় ক্ষণেক্ষণে। আবারো মুখটা মলিন হয়ে গেলো। অবলীলায় চোখে চোখ রেখে বললো, “মাহরুর ভাই।আমিতো গুনে গুনে চারটা পিঠে বানিয়েছিলাম। ঘরে গুড় শেষ।একটা আব্বার একটা আম্মার।আর দুটো তোমার জন্য এনেছি।”
“আর তোরটা?”
“আমারটা তোমাকে দিয়ে দিয়েছি”
সামান্য হা করে চেয়ে রইল মাহরুর।না জেনেই ষাঁড়ের মতো খেয়ে ফেললো?জানতেও চাইলো না?চন্দ্রের ভাগের পিঠাটুকু খেয়ে নিয়েছে। অপরাধবোধ হলো খানিকটা। অদ্ভুত মেয়েটি।কে বলেছিল নিজেরটুকুও বিলিয়ে দিতে?
“তোকে আমি বলেছি তোর ভাগের পিঠা আমাকে খাওয়াতে? এখনতো খেয়ে নিলাম।তুই কি খাবি?”
“আমি খাবো না মাহরুর ভাই”
“আচ্ছা তুই আমাকে পুরো নামে ডাকিস কেনো?সবাই মাহি বলে ডাকে।”
“তোমার পুরো নামটা সুন্দর তাই ডাকি।তোমার শুনতে খারাপ লাগে?ডাকা বন্ধ করে দিবো?”
“আরেহ নাহ।ভালো খারাপের জন্য বলিনি।তোর ছোট্ট মুখে এত ভারী নাম বলতে কষ্ট হয়না?”
মাথা দোলায় চন্দ্র।বলে, “হয় না”
পরপর ঠোঁট প্রসারিত করে প্রশ্ন করলো, “আমার নামতো মল্লিকা।তুমি আমায় চন্দ্র ডাকো কেনো? চন্দ্র অর্থতো চাঁদ।আমিতো চাঁদ নই ”
“আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি।সেই ছোট বেলা থেকে ‘ ও চন্দ্র ‘ বলে ডেকে পুরো মহল্লা তোলপাড় করেছে।”
“চাচিতো এখন আর আমায় চন্দ্র ডাকে না।”
“কে জানে কেনো ডাকে না। আমারতো বাপু অভ্যাস হয়ে গেছে।”
মাত্র হেলান দিয়েছিল চৌকিতে।আবার কি যেনো হলো তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে মাহরুর।সদ্য কেনা ফোনটি হাতে নিয়ে অন করে নেয়।ক্যামেরা বের করে বললো,
“চন্দ্র?এই সেলফোনে ছবি তোলা যায়।আয় তোর একটা ছবি তুলি”
চন্দ্রমল্লিকার উৎসুক নেত্রবিশিষ্ট।দ্রুত হাতে নিজের চুলগুলো সেটে নেয়।মাথায় কাপড় টানে।মুক্ত হাসি দিয়ে তাকায় ক্যামেরার দিকে। মাহরুরও কয়েক চাপে বেশ কিছু ছবি তুলে নিলো।
“দেখি দেখি কেমন হয়েছে?”
মাহরুর এগিয়ে দেয়। তর্জনি আঙ্গুল ফোনের স্ক্রিনে ছুঁয়ে ছবিগুলো দেখে নিলো।হাসিমুখ তুলে আবদার করলো,
“আমাকে এই ছবিটা বাঁধাই করে দিবে মাহরুর ভাই?”
মাহরুর সায় দিলো, “হাতে টাকা আসুক।দিবো”
“আচ্ছা আমি যাই?”
“তোকে কি আমি আটকে রেখেছি?যা”
সবশেষে করুন মুখটাও দেখা গেলো কিশোরীর।তারপরও
কোনো অভিযোগ করলো না। কাদো মুখটা অব্দি বানায়নি।
এক টুকরো কল্পনার রাজ্য থেকে নিজেকে ফেরায় মাহরুর।সব একদিনে কল্পনা করলে কি চলে?বাকি জীবন পড়ে আছে এই অলীক কল্পনার জন্য। বেঁচে থাকার খোড়াক। মানিব্যাগ বের করে পুরোনো খসখসে ছবিটা বের করে হাতে নেয়,
“তোকে আমি অবুঝ ভাবতাম চন্দ্র।অথচ আমার চেয়ে দ্বিগুণ বোধশক্তিসম্পন্ন ছিলি তুই”
___
অতীত,
“তুইতো আমার ছোটবেলার সাথী।আমাকে সাহায্য করবি?”
“কেনো করবো না?”
পুকুর ঘাটে অর্ধেক পা ভিজিয়ে বসে থাকা দুজন তরুণী। পুরোনো দিনের বন্ধুত্ব তাদের।একই সাথে কোনো মতে ম্যাট্রিক পাস করিয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের পড়ালেখার সুযোগ থাকলেও বিয়ে দিয়ে দেওয়াকে মুখ্য মনে করেন তারা।তাই আর লেখাপড়ায় এগোতে পারেনি কেউই।দুজনে যেনো একই নৌকায় ভেসে চলেছে।
“পাশের বাড়ির তনু আপুকে দেখলাম। ওনার বয়স মাত্র বিশ তার বিয়ে হয়েছে পঁয়ত্রিশ বছরের এক লোকের সাথে। গুনেগুনে পনেরো বছরের বড়।কিন্ত মাহরুর ভাই? সেতো মাত্র আমার থেকে আট বছরের বড়।আমাদের কি একসাথে মানায় না?”
“ভাই শিক্ষিত মানুষ।অবশ্যই সেও শিক্ষিত কাউকে বিয়ে করবে।তুই বরং মাহি ভাইকে নিয়ে ভাবা বন্ধ কর”
“আমাকে অবুঝ মনে করিস?আমি কখনো তাকে বিরক্ত করিনাই।অনেকবার চেয়েছি তাকে নিয়ে আর ভাববো না।কিন্তু হয় না।”
শশী মুখ ভেংচিয়ে বললো, “বড্ড অবাধ্য তোর মন”
“মাহরুর ভাই যদি আমাকে কখনো নাও মেনে নেয় আমি জোর করবো না জানিস।কিন্তু আমি তাকে নিয়ে সারাক্ষণ ভাববো।আমার ভালো লাগে।”
“ভাবতে থাক।একদিন বিরক্ত হয়ে পড়বি ভাবতে ভাবতে।”
“হবো না শশী।”
“তোরও আজ নাহয় কাল বিয়ে হবে।তোর স্বামী যদি জানতে পারে তুই অন্য কাউকে নিয়ে ভাবিস তাহলে কি হবে?”
“আমি বিয়ে করবো না শশী।”
ফরিদা বেগমের ডাকে উঠে দাড়ায় মল্লিকা।সন্ধ্যা নামবে।তাই মায়ের এই ঝাঁঝালো ডাক।বিকেলের আগে আগে ঘরে ফেরার কঠোর আদেশ।এক দৌড়ে ছুটে গেলো ঘরের দিকে। টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার দিচ্ছেন।বুঝে উঠতে পারলো না এই খাবার কার। বাবাতো তার আজ ঘরেই আছে।তাহলে?
“মা এই খাবার কার জন্য?”
“মাহির জন্য।একটু গিয়ে দিয়ে আসবি সে বাড়িতে।তোর চাচীর হাত পুড়েছে।”
মনটা খুশিতে গদগদ করে উঠলো।আরেকটা সুযোগ মাহরুরের সাথে সাক্ষাতের।সেদিন পিঠা দিয়ে আসার পর থেকে আজ পাঁচদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই।অযথা আগ বাড়িয়ে যায়নি মল্লিকা।কি দরকার বিরক্ত করার?এই তার চিন্তাধারা।কিন্তু আজতো কাজ পড়েছে।যেতেই হবে। একবার চোখ বুলিয়ে আসা হবে তার মাহরুর ভাইয়ের মুখে।
খুব সাবধানে টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে হেঁটে চলেছে।ঝোল ওয়ালা তরকারি আছে এতে।বেশি ছটফট করলে যদি পড়ে যায়?
বাড়ির সামনে গিয়েই চাচীকে উঠোনে বসে থাকতে দেখে মল্লিকা বলে,
“আসসালামু আলাইকুম চাচী।”
ভার মুখে হাসি টেনে লিজা বেগম উত্তর দেন, “ওয়ালাইকুম আসসালাম।এসেছিস?”
“হ্যা চাচী।এইযে খাবারটা।মা মাহরুর ভাইয়ের জন্য দিয়েছে।”
পাশের জায়গা দেখিয়ে লিজা বেগম বললেন, “রাখ এখানে।”
এরই মাঝে বেরিয়ে আসে মাহরুর।কাধে কালো রঙের বড় একটা ব্যাগ ঝুলানো। তরিহরি করে বেরিয়ে এসে মল্লিকা দিকে চেয়ে অমায়িক হাসি দেয়। দ্রুত গতিতে মায়ের পায়ে সালাম করে বলে,
“আসি মা”
“এই দাঁড়া।খাবারটা নিয়ে যা”
“খাবার কোথা থেকে আসলো মা? আমি বললামতো গাড়ি কোথাও থামলে খেয়ে নিবো”
“নাহ নাহ অযথা টাকা খরচ।আর হোটেলের লোকেরা কি ভালো খাবার বানায়? ফরিদা রেধে পাঠিয়েছে।নিয়ে যা”
দুজনের কথোপকথন চলছে।নির্বাক শ্রোতা হয়ে দাড়িয়ে তাদের কথা শুনছে মল্লিকা।বুঝে উঠতে পারলো না কি হচ্ছে? কোথায় যাচ্ছে মাহরুর?
মাহরুর এগিয়ে আসতেই মল্লিকা জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যাচ্ছ মাহরুর ভাই?”
“ঢাকা যাচ্ছিরে।”
ছ্যাঁত করে উঠলো নরম মনটা।ঢাকা অনেক দুর।এত দূর কেনো যাচ্ছে মাহরুর ভাই?আকষ্মিক কষ্টের আনাগোনা শুরু হয়ে যায় হৃদগহ্বরে।অতি মাত্রায় কাতর দৃষ্টি মাহরুরের দিকে রেখে প্রশ্ন করে,
“কেনো যাচ্ছো?”
“চাকরির জন্য।এক জায়গা থেকে ডাক এসেছে।দুআ করিস যেনো চাকরিটা পেয়ে যাই।তোর জন্য উপহার আনবো”
মাহরুর হাটতে শুরু করে মাকে আরেকবার বিদায় দিয়ে।তার পিছু পিছু হাঁটছে মল্লিকা। মাহরুর ভেবে নেয় হয়তো সে পা বাড়াবে বাড়ির দিকে।তাকে ভুল প্রমাণিত করে অনুসরণ করছে তার কদম। আচ পেয়ে মাহরুর হাটা থামায়।
পিছু ঘুরে প্রশ্ন করে, “তুইও আমার সাথে যাবি নাকি?”
“নিবে মাহরুর ভাই?”
চাঁচল্য কণ্ঠে মিশ্রিত।অধিক মাত্রায়। চট করে ধরে ফেললো মাহরুর।মেয়েটি ব্যথিত।কিন্তু কেনো?তার চলে যাওয়াটাইতো এর কারণ নয়?
শক্ত গলায় বলে, “বাড়ি যা চন্দ্র”
“তুমি কবে ফিরবে?”
কথার পিঠে প্রশ্ন।অবাক হলো মাহরুর।এই মেয়েটি কখনো এভাবে কথা বলেনি।যা আদেশ করেছে সবটা মাথা পেতে নিয়েছে।আজ এমন রূপ কেনো?
“দেরি হবে।আর চাকরিটা হয়ে গেলো অনেক দেরি হবে।”
ছলছল করছে ইতিমধ্যে নেত্রযুগল।ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস।তার আগেই নিজেকে সামলায় মল্লিকা।বলে,
“আমি অপেক্ষা করবো মাহরুর ভাই।সাবধানে যেও”
“তুই কাঁদছিস চন্দ্র?”
গলির মোড়ের আবছা আলোয় চন্দ্রমল্লিকার চোখ দুটো দৃশ্যমান।দ্রুত পিছু হতে যায়। আধাঁরে ডুবে গিয়ে বললো,
“নাহ মাহরুর ভাই।আমি খুশি হয়েছি।আমি জানি তোমার চাকরি অবশ্যই হবে।গেলাম আমি।তুমি দেখে শুনে যাবে কিন্তু।”
___
বিশটা দিন! এমনি এমনি কেটে গেছে। মাহরুর ইবনাতের কোনো খোঁজ নেই।নাহ!আছে সেটা একান্তই তার মা জানে। সেইতো জানার কথা। সাত রাজার ধন সে। মায়ের আদরের পুত্র।শুনেছে প্রতিরাতে ফোন করে নাকি খবর নেয় মায়ের। জ্বরে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া মেয়েটির কথা কি মনে পড়ে?সেকি জানে কিশোরী মনের পাশাপাশি দেহেও জ্বরের উত্তাপ। চন্দ্র থেকে জ্বলন্ত সূর্য হয়ে গেছে ছিমছাম দেহটা।কেদে ফেলে শশীর হাত চেপে।
বলে, “মাহরুর ভাইতো ভালো মানুষ।কিন্তু হঠাৎ এমন স্বার্থপরের মতন আচরণ করছে কেনো?মায়ের ফোনে একটা ফোন করতে পারতো? আমরা কি তার পর?”
শশী উত্তর দেয়, “হয়তো সে ব্যাস্ত।তুই কাঁদিস নাতো”
“আমার কান্না পাচ্ছে অনেক কি করবো?”
“মাহি ভাই আসলে তার সামনে বসে কাঁদিস”
দুহাতের পিঠের সাহায্যে চোঁখদুটো মুছে মল্লিকা বলে উঠলো, “কক্ষনো না। মাহরুর ভাই আমাকে ছিঁচকাদুনে ভাববে।”
“বোকার মতন আচরণ করিস আর কথা বলিস পূর্ণবয়স্ক মানুষের মতন।কেমন রে তুই মল্লিকা?”
স্মিথ হাসির রেখা এসে জড়ো হয় মল্লিকার ঠোঁটে। স্বল্পক্ষণের।এসেই চলে গেলো।বললো,
“জানিস তনু আপু বাড়ি এলে আমার সাথে কথা হয়।সে তার সংসারের কত আলাপ করে আমার সাথে। একদিন কথায় কথায় এটাও বলেছে পুরুষ মানুষ নাকি অত্যন্ত জটিল অংক। এরা যা বলে সাথেসাথে শুনতে হয়।অযথা কাদতে হয় না।বোকার মতন আচরণ করতে হয় না তাদের সামনে। ধৈর্য্য ধরা অনেক জরুরী।আমিও সেটাই চেষ্টা করছি।”
“এত যে চেষ্টা করছিস?শেষমেশ কি পাবি তাকে?”
“জানি নাতো”
চলবে…