চন্দ্রকিরণ পর্ব-০৮

0
446

#চন্দ্রকিরণ
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৮

ঘটঘট আওয়াজ করে মাথার উপরে ফ্যান চলছে। আরিয়ান চুপচাপ জাহানের হাত ধরে বসে আছে। মেয়েটার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। পায়ের তালুতে তিনটা সেলাই লেগেছে। ছোটছোট টুকরো কাঁচ ভেতরে ভেঙে ছিল। জ্ঞান থাকলে হয়তো চিল্লাচিল্লি করতো। আরিয়ান বেশ ঘাবড়ে গেছে। জীবনে প্রথমবার মনে হয়েছিল ও একা না। চনচল বুদ্ধিমতি চমৎকার মেয়েটা ওর স্ত্রী। একান্ত নিজের মানুষ। সুখে দুঃখে পাশে থাকবে। কিন্তু আজকে সবটা এলোমেলো হয়ে গেলো। এই মেয়েটাকে বাঁচাতে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরিয়ে দিতে হবে। কাটা জায়গাতে বিষাক্ত তরলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করার ফলে খুব একটা সমস্যা হয়নি তবে ভুগতে হবে অনেক। আরিয়ান বাড়িতে ফিরে এর একটা ব্যবস্থা করবে। ইব্রাহিম খানকে জানাতে পারেনি। গভীর ভাবনায় বিভোর ছিল তখনই জাহান নড়েচড়ে উঠলো। পিটপিট করে চোখ খুঁলে বলল,

> বেঁচে গেছি আমি?

আরিয়ান চমকে উঠে নিজেরে ধাতস্থ করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো,

> যমের দুয়ার থেকে ফিরেছেন। পা দুটোর বিশ্রামের ব্যবস্থা হয়েছে। বেশি না মাত্র তিনটা সেলাই লেগেছে। আশাকরি মাস খানিকটা চুপচাপ বিছানায় বসে থাকলেই চলবে। আমার মনে হচ্ছে এটা খারাপ না বেশ ভালো হয়েছে। কতবার বলেছিলাম সাবধানে থাকবেন? চোখ কোথায় ছিল আপনার? আমি বলেছিলাম না যখন যা প্রয়োজন হবে আমাকে বলবেন। কেন এমন করলেন? একটুও শান্তি দেননা।

আরিয়ান বেশ চটেছে।শান্ত মানুষ হঠাৎ রেগে গেলে ভয়ঙ্কর লাগে। জাহান চুপসে গেলো। মিনমিন করে বলল,

> আরে শুনবেনতো? কাঁচ যখন ফুঁটেছিলো অতটা গভীরে যায়নি। আপনাদের ফুলি বোকামি করে কাঁচ ঘুরিয়ে তুলতে গিয়ে আরও গভীর হয়ে গেছে। তারপর ও কি একটা ওষুধ লাগিয়ে দিলো। আমি ব্যথায় চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করলাম। আচ্ছা ফুলি কি জানতো তখন আমার পা কে*টে যাবে যে ওষুধ প্রস্তুত করে রেখেছিল?

জাহানের কথা শুনে আরিয়ান চোখ বন্ধ করলো। প্রশ্ন গুলো ওর মাথাতে আসেনি তেমন না কিন্তু সেসব অস্বীকার করে বলল,

> বাদ দিন। ঘুমানোর চেষ্টা করুন আমি আপনার বাবাকে ফোন করবো। আপনার বিষয়ে জানানো হয়নি। মুখ রাখলেন না।

> প্রয়োজন নেই। সামান্য কেটেছে আমি আগামীকাল থেকেই দৌড়ে বেড়াবো। দেখবেন আপনি?

> একদম না। আমাকে অন্ততপক্ষে শাস্তি দিতে হলেও চুপচাপ ঘুমান। জানেন কতটা ভয় পেয়েছি?আমার কপাল আবার খুব একটা ভালো না। মনে হয় ভাগ্য বিধাতা আমার ভাগ্যলিপি লেখার সময় অন্যমনা ছিলেন। অভিশপ্ত জীবন। সুখ পাখির ধরা দিয়েও যেনো দেয়না।

আরিয়ানের কণ্ঠ ধরে আসছে। জাহান ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে। মানুষটাকে দেখলে এতো ভালো লাগে বলার মতো না। রাগ দুঃখ যন্ত্রণা সবটা কেমন নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে। যন্ত্রণার আগুনে জ্বলেপুড়ে মরবে কিন্তু আশেপাশের মানুষের উপরে আঘাত আসতে দিবে না। জীবন সঙ্গী হিসেবে এরকম মানুষকেই প্রয়োজন। সুখী হওয়ার জন্য এতো কিছুর প্রয়োজন নেই। জাহান ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। আরিয়ান ইব্রাহিম খানকে ফোন করে ফিরোজকে বিষয়টা জানালো। আপাতত একটা দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। বিষের প্রভাবে কতটা ক্ষতি হয়েছে ব্লাড টেস্ট করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট এখনো আসেনি। ঘন্টা খানিকটা পরে হুড়মুড় করে ভেতরে প্রবেশ করলো ইব্রাহিম খান আর উনার স্ত্রী লতিফা বানু। দুজনেই মেয়ে বলতে পাগল। আরিয়ান উঠে উনাদের জায়গা করে দিল। লতিফা বানু মেয়ের হাতে বারবার চুমু দিচ্ছেন আর কাঁদছেন। ইব্রাহিম খান জাহানের মাথায় হাত বুলিয়ে চলেছেন। আরিয়ান অবাক চোখে সবটা দেখলো। বাবা মায়ের ভালোবাসা বুঝি এমনিই হয়। জাহান সত্যি সৌভাগ্যবতী। আরিয়ানের ধ্যান ভাঙলো ইব্রাহিম খানের ডাক শুনে,

> বাবা কি অবস্থা এখন? আমার মেয়েটা সুস্থ অবস্থায় তোমার ভরসাতে রেখে এসেছিলাম। এসব কি করে হলো বলবে?

আরিয়ান মাথা নিচু করে নিলো। দায়িত্ব পালন করতে পারেনি ভেবে লজ্জা পাচ্ছে। তাই কোনোরকমে মিনমিন করে বলল,

> আঙ্কেল আমি চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি তবুও আমার গাফিলতির জন্য সবটা হয়েছে।প্লিজ রাগ করবেন না। আমি চেয়েছিলাম ওকে সকালেই পাঠিয়ে দিতে। কেউ যদি ইচ্ছে করে ক্ষতি করতে আসে তাহলে কিভাবে বারবার রক্ষা করবো বলুন?

> বাইরে চলো তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে। তোমার আন্টি মেয়েটার কাছে থাক। এমনিতেই গতকাল থেকে পাগলামি করছে। আজেবাজে স্বপ্ন দেখে অস্থির হয়ে আছে।

আরিয়ান মাথা নেড়ে ইব্রাহিম খানের সঙ্গে বেরিয়ে আসলো। আরিয়ান কাঁচের টুকরো আর ওষুধ ল্যাবে পাঠিয়েছিলো পরীক্ষার জন্য। সেটা চলে এসেছে। ওষুধে বিষ পাওয়া যায়নি। ভাঙা কাঁচে বিষ ছিল। হোমিওপ্যাথি তরল ওষুধের মধ্যে ঝাঝালো কিছু একটার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যেটা বিষাক্ত না কিন্তু ঝাঝালো তাই ওটার প্রলেপ লাগানোর জন্য জাহান জ্ঞান হারিয়েছিলো। ইব্রাহিম খান সবটা শুনে নিলো। প্রাইভেটে হাসপাতালের বারান্দায় দুজনে চেয়ার পেতে বসলো। বাইরে গার্ড পাহারা দিচ্ছে। ইব্রাহিম খান বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি। এমপি মানুষ শত্রুর অভাব নেই। আরিয়ান উনার মুখের দিকে চেয়ে বলল,

> কিছু বলবেন আঙ্কেল?

ইব্রাহিম খান মলিন হাসলেন। আলগোছে আরিয়ানের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন,
> বাবা আমাকে ভুল বুঝোনা। আমার মেয়েটা তোমাকে পছন্দ করে আমি অস্বীকার করছিনা। স্বার্থপরের মতো তোমাদের সম্পর্ক মানছিনা বলেও কখনও অহংকার করবো না। বিয়েটা মজার বিষয় না। কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে আমার মেয়েকে রাখতে ভরসা পাচ্ছি না। তুমি তোমার ফুফিমায়ের সঙ্গ ত্যাগ করো। কথা দিচ্ছি তোমাকে কখনও অবহেলা করবো না। ঘর জামাই হতে হবে না। আমি তোমাদের জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করবো। তুমি ব্যবসা ভালো বুঝো আমি তোমার জন্য যতটুকু পারি ততটা করবো। তোমার আন্টিকে দেখছো সে মেয়ের জন্য পাগল। আমাদের একটা ছেলে ছিল। পাঁচ বছর বয়সে পানিতে ডুবে মা*রা গেছে। মানুষটা খুব ভেঙে পড়েছিল। কত চেষ্টা করেছি ডাক্তার কবিরাজ কিছু বাদ রাখিনি তবুও আমাদের কোনো সন্তান হলোনা। তখনই জাহান আমাদের কাছে আসলো। এক দিনের এইটুকু বাচ্চা। লতিফা ওকে বুকে আগলে ধরলো। ভেবেছিলাম বোনের মেয়েকে বোধহয় অবহেলা করবে কিন্তু বিশ্বাস করো সে মানতে নারাজ এটা আমার বোনের মেয়ে। সব সময় বলে আসছে এটা ওর মেয়ে। আমরা দুই ভাইবোন ছিলাম। বোন দেখতে সুন্দরী ছিল। চৌধুরী বাড়ির প্রভাব প্রতিপত্তি দেখে আমার বাবা মেয়েকে ওই বাড়িতে বিয়ে দিয়েছিলেন। বোন সুখেই ছিল। মেহের বোনের প্রথম সন্তান। মেহেরের যখন চৌদ্দ বছর বয়স তখন বোন জানতে পারে আবারও নতুন অতিথি আসছে সংসারে। মেহের জাহানের মতো হুবহু দেখতে। ততদিনে আমার বাবা মা গত হয়েছেন। জমি নিয়ে বোনজামাইয়ের সঙ্গে আমার একটু ঝামেলা হয়েছিল সেই সুত্র ধরে ওরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু আমি খোঁজ রাখতাম। বোনের সঙ্গে লুকিয়ে কথা হতো। আসলে বোন চাইছিল না ওর অংশের জমি বিক্রি করতে। যাইহোক মেহেরের বিয়ের দিন রাতে হঠাৎ বোন ফোন করলো মেহেরকে বাঁচাতে। আমি দিব্যজ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটে এসেছিলাম চৌধুরী বাড়িতে কিন্তু ততক্ষণে মেহের মা পৃথিবীতে নেই। আমার বোনের খোঁজ করতে গিয়ে থমকে গেলাম। বোনও পৃথিবীতে নেই। বোন জাহানের জন্মের পরেই মা*রা গেছে। বোনের কাছে যে কাজের মহিলা ছিলেন উনি লুকিয়ে আমার হাতে জাহানকে তুলে দিলেন। এই বাচ্চার খবর দুনিয়ার কেউ জানলো না। কাজের মেয়েটা বলে দিলো বাচ্চার জন্মা হয়নি। বাচ্চা নিয়েই আমার বোনের মৃ*ত্যু হয়েছে। আমি জাহানকে নিয়ে চলে এসেছিলাম। বোনের দা*ফন পযর্ন্ত করিনি। শুধু একটাই চিন্তা ছিল যে চলে গেছে সে আর ফিরবে না কিন্তু যে আছে তাকে আমার বাঁচাতে হবে। ওই বাড়িতে একটা সমস্যা আছে। পরপর নয়জন মেয়ের রহস্যজনকভাবে মৃ*ত্যু হয়েছে। বাকিটা তুমি নিশ্চয়ই জানো?

ইব্রাহিম খানের চোখে পানি ঝরছে। বহুকাল পরে আবারও পুরাতন ক্ষত তাজা হয়ে চোখের সামনে ভাসছে। আরিয়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওই পরিবারের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষগুলোর মনে একটুও শান্তি নেই। কথাটা ভেবে ও উত্তর দিলো,

> আমাকে নিয়ে আপনি ভাববেন না। জাহানকে আপনি নিজের কাছে রাখুন। স্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা আমার আছে। সেই ছোট থেকে কাজকর্ম করছি। নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন আমি। একটা পরিবারের স্বপ্ন আমারও আছে। আমাকে খানিকটা সময় দিন সবটা গুছিয়ে ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো। ক্ষমা করবেন আপনার সাহায্য নিতে আমি পারবো না। উপযুক্ত যুবকের নিকট এটা সত্যি অপমানজনক। আঙ্কেল ভুল বুঝবেন না।

আরিয়ানের কথা শুনে ইব্রাহিম খান আবেগপূর্ণ হয়ে উঠলেন। অর্থের লোভে নিজের কাছের অনেকেই মেয়ের বিয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। নিজের আপন শালক পযর্ন্ত আজও লোভ করে আছে। জাহানকে ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবার জন্য। অথচ এই ছেলেটা কি সুন্দর সবটা প্রত্যাখ্যান করলো। মেয়ের সুখের কথা ভেবে উনার চোখে পানি ঝরছে। কিছুটা এগিয়ে এসে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরলেন। মাথার হাত রেখে বললেন,

> আমার মেয়েটার সৌভাগ্যে যেনো কারো নজর না লাগে। আমি কিছু মনে করিনা। কিন্তু আমার সবটা তোমাদের। জাহান আমার মেয়ে। জন্ম দিলেই কি বাবা মা হওয়া যায় বলো? কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। সারাদিন দেশের সমাজের কাজ করেছি রাতে ওকে নিয়ে বসে থেকেছি। ছোট থাকতে খুব অসুস্থ থাকতো। মা ম*রা মেয়ে আমার। ছোট থেকেই আহ্লাদী। তোমার জন্য আমার খারাপ লাগে। চিন্তা করোনা সব সময় তোমার পাশে থাকবো আমি। আমার বাড়িটা তোমার জন্য উন্মুক্ত। যখন ইচ্ছা চলে যাবে।

আরিয়ান মলিন হাসলো। আরও কিছুটা কথাবার্তা বলে বেরিয়ে আসলো হাসপাতাল থেকে। জাহান বাবা মায়ের সঙ্গে ভালো থাকবে।
*********
চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে আরিয়ান। বাড়ির সকলেই সেখানে উপস্থিত। কমোলিনির মন মেজাজ অনুমাত্র করা যাচ্ছে না। কিছু একটা ভেবে চলেছে। নির্জনতা ভেঙে আরোহী বলে উঠলো,

> ওই মেয়েটার জন্য তুমি নাওয়া খাওয়া ভুলে হাসপাতালে পড়ে ছিলে? তুমি হাসপাতালের বাজে গন্ধ সহ্য করতে পারতে না বলে আমার পা ভাঙার সময়ে একবারও দেখতে যাওনি ভুলে গেছো? তুমি সত্যি খুব খারাপ আরিয়ান। আমার জন্য তোমার একটুও মায়া নেই।

আরোহী ফ্যাচ ফ্যাচ করে নাক টানছে আর কাঁদছে। আরিয়ান পাত্তা দিলোনা। সোজা কমোলিনির দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,

> ড্রয়িং রুমে আজকাল বিষা*ক্ত কাঁচের বোতল ভাঙা পড়ে থাকে কেনো ফুপিমা? কাজকর্ম করার জন্য কি বাড়িতে কেউ ছিল না?

কমোলিনি বিরক্ত হচ্ছেন। কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। কিছুটা রাগি কণ্ঠে বললেন,

> আমাকে তোমার কাজে মহিলা মনে হয়? তুমি জানোনা আমি নয়টার আগে ড্রয়িং রুমে আসিনা? ফুলি বড্ড বেখেয়ালে থাকে। এটা ওটা ওর হাত থেকে পড়ে যায়। হয়তো ওর থেকেই পড়েছে।

ফুলি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করলো,

> ভাইজান আমি আল্লাহর কছম করছি এই কাম আমি করিনি। বিশ্বাস করেন। যদি একবার জানতাম কিছুতেই ভাবির পা কাঁ*টতে দিতাম না। উপরে আল্লাহ আছে।

ফুলি আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু কমোলিনি ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন,

> একদম মিথ্যা বলবি না। তুই বোতল ভেঙেছিস ঠিক আছে কিন্তু ওই ওষুধ কেনো দিয়েছিস মেয়েটার পায়ে? কি উদ্দেশ্য ছিল বল?

ফুলি কান্না জড়িত কণ্ঠে পূণরায় বলল,

> গতকাল ওই ওষুধ নিয়ে আপনারা আলোচনা করছিলেন কাঁটা জায়গায় লাগালে তাড়াতাড়ি র*ক্ত বন্ধ হয়। তাইতো লাগিয়েছি আমার কি দোষ?

ফুলির বলতে দেরি হলো কিন্তু গালে থা*প্পর পড়তে দেরি হলো না। কমোলিনি গর্জন করে উঠলেন,

> ছোট লোকের বা*চ্চা,কাজ কারার আগে শুনবি না? ওইটা সেই ওষুধ না। তুই আজকের মধ্যেই বাড়ি ফিরে যাবি। এই বাড়িতে তোর কাজ নেই। মানুষ মা*রার কৌশল শিখেছিস?

আরিয়ান থামিয়ে দিলো। বুঝতে পারলো সহজে আসলে অপরাধীর খোঁজ পাওয়া সম্ভব না তাই বলল,

> ফুপিমা যা হয়েছে বাদ দিন। ফুলির একটা ভুলে ওকে তাড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা। আপনি চিন্তা করবেন না। ইব্রাহিম আঙ্কেল জাহানকে নিয়ে গেছেন। মেয়েটা চনচল এখানে থাকলে ঝামেলা হবে। তাছাড়া আমি ভেবেছি এই বিয়েটা নিয়ে এতো ঝামেলা হচ্ছে তাই ভেবেছি আমরা আলাদা থাকব। আপনি কি আমার সিদ্ধান্তে অখুশি?

কমোলিনি উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। আনন্দের ঝিলিক খেলছে চোখে মুখে।

> তোমাকে আমি কোনো কাজে আজ অবধি বাঁধা দিয়েছি বাবা? আমারই ভুল তখন না জেনে বুঝে বিয়েটা দিয়ে তোমার জীবন নষ্ট করা উচিৎ হয়নি। কিন্তু বাবা ওই পঞ্চাশ বিঘা জমির বিষয়টা নিয়ে একটু ঝামেলা হচ্ছে। ওখানে বিল্ডিং তৈরির কাজ চলছে। তুমিতো জানো কতগুলো টাকা খরচ হলো। এখন কি করবে? বলছিলাম ইব্রাহিম খানকে বলো জমি বিক্রি করতে। আমি ভাবছি এখানকার কিছু জমি বিক্রি করে ওই জমিটা নিয়ে নিব। সবটা উনার দোষ। না মানলে আমরা প্রতারণার মামলা করবো। এমপি মানুষ নিশ্চয়ই জনগণ এসব জানলে উনার সুনাম হবেনা?

আরিয়াস মৃদু হেসে বলল,

> সেতো মামলা উনারাও করবেন বলেছে। জাহানের শরীরে বি*ষ পাওয়া গেছে। কাজটা কে করেছে জানার জন্য এমপি সাহেব মরিয়া। কি করবেন ভেবে সিদ্ধান্ত নিন।

আরিয়ান উঠে আসলো। ইচ্ছে করেই শেষের কথাগুলো বলল। দোষী নিশ্চয়ই এবার টেনশনে ভুলভাল কিছু কববে। সিঁড়ি পযর্ন্ত এসেই থমকে গেলো। আরোহী আবারও শুরু করেছে,

> তুমি ওকে ডিভোর্স দিচ্ছো? তাড়াতাড়ি দিয়ে আপদ বিদাই করো। আম্মা তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে দিবে। আমি তোমাকে ভীষণ খুশী রাখবো।

আরিয়ান এবার চুপ থাকতে পারলোনা। এই মেয়েটার মাথা সত্যি দিনদিন খারাপ হচ্ছে। তাই শীতল কণ্ঠে বলল,

> আরু আমি সংসার ধর্ম ত্যাগ করে সন্যাস নিচ্ছি। হিমালয় গিয়ে তপস্যা করবো। দয়াকরো এই তপস্বী আরিয়ান শাহারিয়ারের উপরে। তুমি বরং অষ্ট্রেলিয়া গিয়ে বিয়ে করে সংসার করো। ফুপিমা তোমার জন্য নিশ্চয়ই ভালো পাত্রের সন্ধান করেছেন। আমাকে আর বিরক্ত করবে না। বিবাহিত পুরুষের উপরে নজর দিলে পাপ হয়।

আরিয়ানের কথা শুনে আরোহী চোখ বড় বড় করে ফেলল। সন্যাসীদের সম্পর্কে ওর ভালো ধারণা আছে। ইন্ডিয়ান সিরিয়াল আর হিন্দি মুভির দৌলতে পুরোটা জানা। সোফা ছেড়ে উঠে এসে বলল,
> তুমি এরকম ওই মেয়েটার জন্য করবে তাইনা? তুমি কি একটুও আমাকে ভালোবাসো না? প্লিজ আমাকে একটু বুঝো।
আরিয়ান অসহায় দৃষ্টিতে কমোলিনির দিকে চাইলো। এই আপদ কবে অষ্ট্রেলিয়া যাবে সেটাই ভাবছে। আরিয়ান মৃদু কণ্ঠে উত্তর দিলো,
> তোমাকে আমি নিজের বোনের মতোই ভালোবাসি আরু। ভাইবোনের সম্পর্ক অনেক পবিত্র হয়। তুমি আমাকে ভাইজান বলে ডাকতে পারো দেখবে ভালো লাগছে।
আরিয়ান কথা বলতে বলতে নিজের কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। শান্ত থাকার যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আরেকটু হলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতো। ফুপি মায়ের সামনে নিজেকে ভালো রাখতে এরকম রাগ মাটি করতেই হতো। কথাগুলো ভেবে ফোন হাতে করতেই ছোট একটা টেক্সট আসলো,
> পুড়ছে টাকা,উড়ছে ধোয়া কপালে হচ্ছে ঝরাঝরা।
আরিয়ান সেদিকে চেয়ে মৃদু হেসে সোফায় গা এলিয়ে দিলো। কথায় বলে,রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে