চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৪৬+৪৭+৪৮

0
122

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৬
১৩৩.
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব,আবার মানুষ সৃষ্টির নিকৃষ্ট মানব।
আপনি এবং আপনার ছেলেকে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয়।তা আমি তন্নী তালুকদার খুব ভালো করেই জানি।আপনি আর আপনার আদরের ছেলে কি ভেবেছিলেন?আমাকে ধোঁকা দিবেন আর আমি চুপচাপ মেনে নেবো।হুহু,।আপনি ভুল জায়গায় হাত দিয়েছেন।আমার পরিবার কিংবা আমি অন্যায়ের সাথে আপসোস বিন্দু মাত্র করব না।প্রথমে এই প্রেম প্রেম পাগলামি দেড় বছর ধরে করবে।আমাকে বশে আনবে।তারপর অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইবে।এতটা বোকা নই আমি।সবটা জানতাম এবং খোঁজ নিয়ে এতটুকু বুঝতে পেরেছি।আপনি আর আপনার ছেলে কতটুকু ভালো।আমি তাকে ভালোবাসি।তাই ব’লে সব অন্যায়ের ক্ষমা হবে না।এক এক করে শাস্তি হিসেব বুঝে নিবো।আমি আমারটা বুঝতে জানি।ভাইয়ের আদরের বোন ব’লে কথা।প্রথমে গোপনে বিয়ে তারপর বাচ্চা।এবং ফাইনালি পরিবারের সকলের মতেই দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছি।ভবিষ্যতে আমার সাথে কিছু করার আগে মাথায় রাখবেন।আমাকে নিয়ে গেইম খেলার চেষ্টা করলে ফল খারাপ হবে।আমি পুতুল নই।আমি তন্নি,তন্নি তালুকদার।ওই মেয়েটি গ্রামের সহজ সরল ছিল তাকে নিয়ে সহজেই খেলতে পেরেছেন।আর সে চুপচাপ মেনে নিয়েছে।কিন্তু আমি মেনে নিবো না।কথাটা মাথায় রাখবেন।মাইন্ড ইট।

তন্নী অর্ধেক খাওয়া আপেলটা দেয়ালে ছুড়ে মেরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।এইদিকে জেফিন রওয়্যাড রাগে ফুঁসতে থাকেন।এই মেয়েকে কিছুতেই বাগে আনতে পারছে না।যা কিছু করার প্লান করেন।সব উল্টো হচ্ছে।একটু আগে জেভিন সিঁড়িতে তেল ফেলেন।পেটের বাচ্চা নষ্ট হবে ব’লে।কিন্তু হলো উল্টো সেই ফাঁদে তাকে ফেলে দিল।পায়ে হল চোট।এখন হাটতে তার কষ্ট হচ্ছে।

এইদিকে তন্নী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।পেটে হাত রেখে বলল,

তোমার মাম্মা তোমার কিছু হতে দিবে না।আই প্রমিজ ইউ।চোখ বুঝতেই দুই চোখের পানি ঝড়ে পড়ে।

হঠ্যাৎ ফোন বেজে ওঠে।তন্নী ফোনটা ধরতেই লিখাটা ভেসে উঠে।অর্পণ তালুকদার ইজ কলিং।

হ্যালো।

কি রে শয়তানের নানী আম্মা ভালো আছিস?বিয়ে করে বিদেশে গেলি আর তোও খবর নেই।

ভাই।তুমি এখনও নিজের অভ্যাস বদলালে না।আমি এখন বড় হয়েছি।দুই দিন পর মা ওহ হব।প্লিজ ভাই।

আরে দূর।তুই আমার কাছে সেই ছোট্ট তন্নি আছিস।তোকে মারব,বকবো।আর ভালোবাসব।তোর গলাটা এত ভারী লাগছে কেন?তুই কি কাঁদছিস?কিছু হয়েছে।

কই নাতো।

আমার থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিস? কি হয়েছে আমায় বল?

কিছুই হয়নি ভাই।আমি ঠিক আছি।আমি রাখছি পরে কথা হবে।

আরে তোকে আসল খবরটা দেওয়া হলো না।হ্যালো,হ্যালো।যা ফোনটা কেটে দিলো।অর্পণ কিছু চিন্তা করে কাউকে ফোন লাগায়।অপরপাশে কেউ ফোন তুলতেই,

তোমাকে যে কাজে রাখা হয়েছে।তার খবর কি?

ওইপাশ থেকে কিছু বলতেই অর্পণের মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়।

ওর দিকে খেয়াল রেখো।ওর গায়ে যদি একটা আচর লাগে আমি তোমার খবর করে ছাড়ব।বোন হয় আমার।তার সাথে কিছু করার চেষ্টা ওই পরিবারের কেউ যেনো ভাবতে না পারে।খেয়াল রেখো।রাখছি।অর্পণ ফোন কেটে দিল।

ভাই তুমি শুধুই চিন্তা করছো।আমাদের তন্নী ঠিক থাকবে।ওর সাথে ভুল কিছু হবে না।যার পাশে তোমার মতো ভাই আছে।তার কিসের ভয়?

হুম।আমি জানি আমার কাছের মানুষগুলো তাদের প্রাপ্ত হোক গুলো আদায় করতে জানে।কিন্তু আমার আদূরনী একটু নরম।তাকে আরো শক্ত হতে হবে।সেও নিজের হকের জন্য লড়তে পারবে।

যারা বড় বাড়ি,আর।লাক্সারী গাড়িতে করে চড়ে বেড়ায়।দামী হোটেলে খায়।নরম বিছানায় সুয়ে কোটি টাকা ব্যাংকে রাখার চিন্তা ভাবনা করে।তারা জনগনের কি সেবা করবে?এরা উল্টো জনগনের টাকা খেয়ে বসে আছেন।জনগনের কষ্ট বুঝতে হলে তাদের সাথে মিশতে হয়।জানতে হয়।এবং তাদের সকল সুযোগ সুবিধা ব্যাবস্থা দেখভাল করতে হয়।কিন্তু আমরা উল্টো করি।নাকে সরিষা তেল লাগিয়ে নরম গদিতে ঘুম।আরাম,হারামে পরিনত।মোটা ভুরি করছেন হারাম খেয়ে।আপনাদের কারণেই জনগন আমাদের ওপর থেকে বিশ্বাস,আস্থা হারিয়ে ফেলছে।আমি জনাব অর্পণ তালুকদার আজ এখানে দাঁড়িয়ে লিখিত বয়ানসহ বলছি।আমার সম্পত্তি ছিল।তিন কোটি আটান্ন লাখ পনেরো হাজার তিনশো টাকা।

অর্পণ তালুকদারের কথাটা মিটিং থাকা দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলে।নিজের আয় এবং ব্যায়ে হিসাব দেন।

জীবন অনেক কঠিন।রাজনীতি আসলেই নিজের একার কথা ভাবলে চলে না।দশের কথাটা ভাবতে হয়।একটা বার সৎ পথে নামুন।আরাম,হারামের হাত টা ছেড়ে নিজের টাকায় চলার চেষ্টা করুন।তখন বুঝবেন জনগনের আসলে কষ্ট কি?

অর্পণ চেয়ার ছাড়া আগে কাগজে লিখিত সই দিয়ে কনফারেন্স রুম ছেড়ে চলে যায়।

এইদিকে হোম মিনিস্টার সামনেই দাঁড়িয়ে অর্পণের করা বয়ান শুনায় তার পি এ খলিল।

নাতির এমন কাজে কি প্রকিয়া দিবেন বুঝতে পারছে না।তার নাতি তার বাপের সম্পত্তি যেটা তার নামে রয়েছে সেটার হিসাব লিখিতভাবে দিয়েছে।কিন্তু তার মায়ের বাড়ির পাওয়া সম্পত্তির হিসাব দেয়নি।সেই সম্পত্তি সে গ্রহণ করেনি।যদি সেটা দিতো তাহলে খুশি হতেন।নাতির এত জিদ একদম তার বাবা অসীম তালুকদারের মতো হয়েছে।নিজেদের সাথে হারাম জড়াবে না।এই পলিটিক্স কেউ সৎ থাকতে পারে না।না চাইতেও জড়াতে হয়।নাতির জন্য চিন্তা হয়।বড় আদরের নাতি ছিল।এক সময় নানাবাড়িতে যার যাতায়াত সব সময় লেগে থাকতো।একদিন এক দূর্ঘটনা পর থেকে আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেলো।

যতদিন আমি আছি।ততদিন তোমার ক্ষতি হতে দিব না।খলিল ওর দিকে নজর রেখো।যত টাকা যায় যাক।ওর গায়ে যেন আচর না লাগে।

জি,স্যার।

অপর পার্টি গোপন বৈঠকে বসেছে।তাদের মূল উদ্দেশ্য অর্পণ তালুকদার।এই ছেলে জবে থেকে এসেছে তবে থেকেই বাড়াবাড়ি করছে।এর একটা ব্যাবস্থা নেওয়া দরকার।

রোহিতপুর গ্রামে তার মামা,মামী,তার ভাইয়েরা পুতুলকে খুব মিস করছে।কখনো তাকে ছাড়া থাকে নিই।এই প্রথমবার তাঁকে ছাড়া থাকছে।কষ্ট পাচ্ছে।তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো পুতুলকে দেখতে যাবে।স্বাধীনের কথায় সবাই খুশি হলো।ঠিক হলো পরশু দিন রওনা দিবে শহরে।

অর্পণ তালুকদার রাগ নিয়ে দুমদাম করে রুমে প্রবেশ করে।ওয়াশরুমে ঢুকেই গোসল করতে থাকে।তার হঠাৎ এরকম বিভেবিয়ারের কারণে পুতুল হা হয়ে গেছে।রাতের জন্য ময়দা গুলিয়েছে।রুটি আর আলুর দম করবে।কিন্তু আজ এই মশাইয়ের কি হলো?একে তো আজ তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসেছে।তার ওপর কোনো কথাবার্তা ছাড়াই তাকে ইগনোর করে চলে গেলো রুমে।পুতুলের রাগ হলো।গাল ফুলিয়ে কিচেনে গিয়ে রুটি বেলতে লাগল।এইদিকে অর্পণ দেয়ালে হাত দিয়ে আঘাত করছে।চোখের সামনে তার ছোট্ট মামার কুৎসিত বিকৃত কথাগুলো মাথায় আসতেই রাগে শরীর কাঁপছে।অনেক হয়েছে।এবার সত্যিটা পুতুলকে জানাতে হবে।আমি এই দু-টানা আর নিতে পারছি না।ওহ নিশ্চয় আমাকে বুঝতে পারবে।আমি আজই বলব,

অর্পণ গোসল শেষ করে রুমে প্রবেশ করে।নিজের পোশাক কোনো রকম চেঞ্জ করে বাহিরে বের হয়।কিচেন রুমে পুতুল কে কাজ করতে দেখে এগিয়ে যায়।

নিজের পিছনে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে পুতুল ঘুরে তাকায়।অগোছালো কাপড় পরে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মাথার চুল থেকে এখনো পানি পড়ছে।পুতুল ইশারার বলল,

এসব কি?এমন এলেমেলো কেন?

পুতুলের কথার উওর দিলো না।বরং নিজের মাথার চুল মুছতে পুতুলের ওড়না কোনা টেনে ধরে নিয়েছে।পুতুল বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।এই লোকের কি হয়েছে আজ এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করে চমকে দিচ্ছে কেন?

পুতুলের কাজ শেষ হতেই তাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো।

একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল,

তুমি আজ যেমন করে আমার পাশে আছো।কাল আমার পাশে থাকবে তো।বিশ্বাস করবে আমায়।আমি কাউকে নিয়ে এত টেনশনে থাকি না।যতটা তোমায় নিয়ে থাকি।আমার খুব ভয়।তোমাকে হারানোর ভয়।নিজের রাজনীতির মাঠে শত্রুর অভাব নেই।তার ওপর আমার আপনজনদের মধ্যেই আমার শত্রু লুকিয়ে আছে।আমি বারবার তোমাকে কথাগুলো বলতে গিয়ে আটকে যাই।তোমাকে কিছু বলতে চাই।তুমি সবটা শুনবে তোও।অর্পণের কথায় কোনো আগামাথা বুঝতে পারছে না।তবুও মাথায় নাড়িয়ে সায় দিলো শুনবে।অর্পন কে সোফায় টেনে এনে বসিয়ে দিলো।তার এলেমেলো চুলগুলো চিরুনি বুলিয়ে ঠিক করে দিলো।

পুতুলের ডান হাতটা হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

পুতুল আমি জানি তুমি তোমার মা’কে খুব ভালোবাসো।তার জায়গাটা তোমার কতটা জুড়ে তা আমরা সকলেই জানি।পুতুল আমি আজ তোমার মায়ের সম্পর্কে কিছু বলতে চাই।আমি এই কথাগুলো বলবার পড়ে তুমি হয়তো আমাকে ঘৃনা করবে।তবু্ও আমি এটা আর নিতে পারছি না।আমি আজ বলব?আর তুমি শুনবে।সবটা ভেবেই তুমি তোমার রায় দিও।

অর্পণের কথার মধ্যে কিছু তোও আছে।বারবার থেমে যাওয়া ঢোক গিলে ফেলা’র মধ্যে কিছু রহস্যের বার্তা আসছে।তিনি কি বলতে চান?বুকের ভিতরটা কেমন ধরফর করছে।কি শুনাতে তার এতটা ব্যাকুলতা।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৭
১৩৪.
পুতুল আমার মামা জনাব শাফকাত খান।যার নামটা আমার নানু মা খুব শখ করে ভালোবেসে রেখেছিলো।সবার ছোট্ট সন্তান ব’লেই তার সব গুনা পার পেয়ে যেতো।তার ছোট্ট ছোট্ট ভুল গুলো কবে এত বড় হলো কেউ বিশেষ নজরে রাখেনি।তাঁকে ছোট্ট বেলা থেকে যদি অপরাধগুলো আঙুল তুলে দেখিয়ে দিত।সে ভুল।তাহলে ওই দিনটাই আসতো না।সেই সময় তোমার জম্ম হয়েছে।তুমি তোমার মায়ের সবে কোল জুড়ে।তখন তুমি একটা ফুটন্ত শিশু।যার চোখে ছিল শত মায়া আর ভালোবাসা।তোমাকে নিয়ে তোমার মা শত লড়াই করে তোমাকে নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছেন।

সময়টা ফ্লাগুন মাসের শেষের দিক।ছোট মামা বাংলাদেশে আসে ছুটি কাটাতে।তার জাপানে বিজনেস আছে।তোমার মা,বাবা যেখানে থাকতো।সেই গ্রামে ঘুরতে যান।তোমার মায়ের দিকে তার নজর পড়ে।তোমার মা,তোমার বাবাকে নিয়ে একটা ছোট্ট সংসার গড়ে ছিল।সেই ঘরে হাসি টুকু সে নষ্ট করেছে।হ্যা,পুতুল।তোমার মায়ের সৌন্দর্য দেখে তার মনে কু বাসনা জাগে।সে তখন এটাও জানতো।তোমার মা বিবাহিত তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।তবুও তার লালসা কমে নিই।তোমার মা’কে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন বাজে প্রস্তাব তোমার বাবা-র কাছে দেয়।সেই সময় তিনি তোমার মায়ের সঙ্গে তেমন মিল মোহাব্বত ছিল না।তোমার দাদীর জন্য যে দূরত্ব হয়েছে।সেটা আরো গভীর টেনে নিয়েছেন আমার মামা।আর তখন সংসারের ফাটল আরো বেশি ধরেছে।তোমার মা যখন এসব জানতে পারে তখন অলরেডি দেড়ি হয়ে গেছে।তোমার বাবা চওড়া সুদে মামার থেকে টাকা নিয়ে জুয়া খেলে।সেই সব জুয়া হেরেছে।মামা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।সাদা কাগজে তোমার বাবা আগেই টিপসই করে দিয়েছিল।তাই সে কাগজে মামা নিজের মতো কথা সাজিয়ে বয়ান লিখেছে।কাগজে লিখা রয়েছে তিন মাসের মধ্যে যদি টাকা পরিশোধ না করতে পারে।তাহলে তোমার বাবার জেল হবে।আর মোস্তফা সরোয়ার ভয় পেয়ে যান।শুরু হয় তোমার মায়ের ওপর অত্যাচার।চাপ দিতে থাকে বাপের বাড়ির টাকার এনে দেওয়ার জন্য।কিন্তু তোমার মা কখনোই তার বাবার বাড়িতে পা রাখেনি।তোমার মায়ের গহনাগুলো শেষমেষ বিক্রি করে দেওয়া হলো।মামাকে তিন ভাগের এক ভাগের টাকা দেওয়া হলো।কিন্তু বাকি দুইভাগের টাকা পরিশোধ হয়নি।যার ফলে মাসের পর মাসে গেল।সেই দুই ভাগের টাকা সুদের হারে বাড়তেই লাগল।আবার টাকা পরিমাণ আগের জায়গায় চলে গেলো।এরমধ্যেই মামা বিদেশে চলে গেছে।কিন্তু তোমার মা’কে পাওয়ার বাসনা ছাড়েনি।তোমার বয়স তখন পাঁচ বছর শেষ হয়ে ছয় পা পরেছে।তোমার মা দ্বিতীয়বার সন্তান ধারণ করেন।ভাবেন একটি সুস্থ সন্তান তাকে দিলে তিনি ঠিক হবেন।ভুল পথে আর চলবে না।কিন্তু তোমার মায়ের সব আশায় পানি পড়ে গেলো।তোমার দাদীর অত্যাচারে।তোমাকে অবহেলা করা।যা তাকে কষ্ট দিত।তোমার মুখে একটু ভালো খাবার তুলে দিতে গ্রামের নতুন বাড়ির কাজের জন্য লোক নেয়।হাজিরা আশি টাকা ছিল।
সেখানে তোমার মা নাম দিয়েছিল।তোমাকে আম গাছের নিচে খেলতে দিয়ে একটু দূরে সরে ইট ভেঙ্গেছেন পাথর দিয়ে।হাতে ফোসকা পড়েছে কিন্তু কষ্টকে দমিয়ে কাজ করেছেন।পেটের সন্তান তখন অপুষ্টিতে ভুগছে।সন্তানের মুখে খাবার তুলতে তাকে কষ্ট করতে হয়েছে।সকাল দশটায় কাজ শুরু হতো বিকেল পাঁচটায় কাজ শেষ করতো।দুপুরে একঘন্টা খাবারের জন্য বিরতি ছিল।
সকাল ডাকা ভোরে উঠে বাড়ির সব কাজ সেরে বাহিরে কাজ করেছেন।আবার সন্ধ্যার আগে বাড়িতে ফিরেছে।কিন্তু তার শান্তি কোথাও ছিল না।তোমার মা যে ক’টাকা পেতে সেগুলো তোমার মায়ের থেকে কেঁড়ে নিতে চাইতো তোমার বাবা।তাকে না দিলে চ*ড়,থা*প্পড়,গা*লি।তবুও তিনি ধৈর্য্য ধরেছিলেন।স্বামী ঠিক হবে এই আশায়।কিন্তু আমার মামা সাড়ে চার বছর পর আবার দেশের মাটিতে পা দেন।তোমার বাবাকে জুয়ার আড্ডা থেকে তুলে নিয়ে যান নিজের আস্তানায়।টাকার জন্য চাপ সৃস্টি করেন।পুলিশের ভয় দেখান।শেষে পরিকল্পিত হয় টাকা একসপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে। আর না হয় তার বউ রাজিয়াকে এখানে তার ঠিকানায় পাঠাতে হবে।যদি রাজি না হয়।তাহলে বাড়িতে ঢুকেই তার বউকে তুলে আনবে।এবং যতদিন তাদের মন না ভরবে।ততদিন রাজিয়াকে এই পুরাতন গোডাউনে পরে থাকতে হবে।তাদের আয়েশ মিটলেই ছেড়ে দেওয়া হবে।তোমার বাবা তার শর্তে রাজি হননি।কথায় দেয় টাকা ব্যাবস্থা করবেন।কিন্তু টাকার কোনো ব্যাবস্থা হয় না।শেষে তাদের পুকুরের সামনে বড় মাঠের জমিটাকে বন্দক দেওয়া হয়।ঠিক হয় তোমার মা,তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিলেই ছাড়াবেন।কিন্তু জমিটা হাত ছাড়া হলো।সময় মতো টাকা পরিশোধ না করতে পারায়।সেই রাগ গিয়ে পরে তোমার মায়ের ওপর।আটমাসের গর্ভবর্তী রাজিয়া মা’র খায়।তালাক হয়।অবশেষে আশ্রয় নেয় বাবার বাড়িতে।তোমার মা তোমাকে নিয়ে দূরে চলে যাওয়ার সাহস পায়নি।মোস্তফা এবং আমার মামার চুক্তি স্বাক্ষর থেকে শুরু করে সবকিছু সেই দিন অন্য কারো মাধ্যমে তোমার মা জেনে যায়।নিজের এবং নিজের অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করেই গ্রাম ছাড়া হয়।আর আমি এসব জানতে পারি আমার বড় মামার জনাব নাজিফ হুসাইন খান থেকে।ছোট মামার অপকর্মের কথা জানতে পেরে প্রচুর মারেন।নানীমা আদরের ছেলেকে মা’র খেতে দেখে অজ্ঞান হয়ে যায়।জ্ঞান ফিরে জানতে পারে তার ছোট ছেলেকে এই মাসের মধ্যে বিয়ে দিয়ে একেবারে জন্য জাপানে পাঠাবেন।যাতে আর কোনোদিন বাংলাদেশে পা না রাখতে পারে।ততদিন পর্যন্ত তাকে ঘরে আটকে রাখেন।বিয়ে হতেই এই দেশ ছাড়া করেন।বর্তমানে বউ,বাচ্চা নিয়ে তিনি বিদেশে স্যাটেল।নানাজান তাকে দেশে আনতে যান।কিন্তু আমি তার মুখটা দেখতে চাই না।তার কথা উঠলেই মনে হয় সে পাপী তার পাপের জন্য আমরা দায়ী।তার জন্য তোমার মায়ের এই করুন পরিনতি।তোমার মায়ের কষ্টের পেছনে আমাদেরও কোথায় না কোথাও দায়ী।পুতুল আমি জানি তুমি এসব শুনে ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাচ্ছো।কিন্তু আমি কি করব বলো?আমি তোমাকে না ব’লে থাকতে পারিনি।আমার মনে হয়েছে এটা তোমার জানা উচিত।আর তাছাড়া সত্যি কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না।সেটা একদিন না একদিন প্রকাশ পাবে।অর্পণ নিজের কথাগুলো শেষ করে পুতুলের দিকে ফিরে তাকাতেই চমকে উঠে।পুতুল ফ্লোরে বসে হাঁটুতে দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে ফুফিয়ে কাঁদছে।মায়ের কথা মনে পড়তেই তার ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে।আল্লাহ কি তার মায়ের কপালে একটু সুখ লিখে রাখেনি?এত কষ্ট সত্যি কি তার পাওনা ছিল?তার মা কোন সুখের আশায় ঘর বেঁধেছেন।কিসের আশায় বেঁচে ছিল।কি পেয়েছেন তিনি?শুধু কষ্ট।কষ্ট ছাড়া তার জীবনে একটু সুখ ধরা দিলে কি হতো?

পুতুলের অবস্থা দেখে অর্পণ তার সামনে ছুটে আসে।তাঁকে ধরে উঠাতে চাইলে পুতুল তার হাতটা ছাড়িয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজের ঘরের দিকে দৌড় দেয়।দরজা বন্ধ করে সেখানেই পিঠ লাগিয়ে কাঁদতে থাকে।অর্পণ হাজার চেষ্টা করেও পুতুলকে ঘর থেকে বের করতে পারেনি।অর্পণ একটা নিশ্বাস ফেলে পুতুলের দরজার সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে।পা দুটো দুই দিকে হালকা ছড়িয়ে বসে পড়ে।দিনের সূর্যের আলোটা রাতের আঁধার কালোতে সেই কখন হারিয়ে গেছে।দরজার দুই পান্তে দুই মানব মানবী বসে আছে।একজন কাঁদছে মায়ের জন্য।আর অন্য জন অপেক্ষা করছে।তার প্রিয়তমা কাঁদুক।কেঁদে মন হালকা হোক।তবুও দরজা খুলে তার কাছে আসুক।তার বুকে মাথা রেখে কাঁদুক।সে অপেক্ষা করবে।

১৩৫.
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া এ সময়
মানে না তার পরাজয়
জীবন পরে ধুলোতে,হারিয়ে সঞ্চয়
যার কথা ভাসে মেঘলা বাতাসে
তবু সে দূরে তা মানি না
জানি না কেন তা জানি না
জানি না.।

রাত বেড়ে যায় ধীর পায়
বাতাসেরা যেনো অসহায়
শুকনো পাতার নূপুরে কে জেনো ডেকে যায়
যার উষ্ণ আঁচে ভালোবাসা বাঁচে
সে হৃদয় ভাঙ্গে তা মানিনা
জানি না কেন তা জানি না
জানি না.।

প্রত্যেকটা সকালে প্রিয়তমাকে পাশে নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে দিনটা শুরু হতো।কিন্তু আজ দুইদিন ধরে পুতুল তার সামনে আসে না।তার ঘুম ভাঙ্গা আগেই ঘর ছাড়ে।আবার তার ফিরে আসার আগেই নিজের ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে থাকে।প্রিয়তমা অবহেলা তাঁকে পুড়ায়।তবে কি এই কথাগুলো জানিয়ে সে ভুল করলো?তার আপসোস হচ্ছে।কেন বলতে গেলো?কিছু কিছু কথা না ব’লে হয়তো জীবনটা অল্পতেই সুন্দর হতো।সেই বা কি করবে।না ব’লে থাকতেই পারছিল না।এই কথা আজ অর্পণের থেকে না শুনে কাল যদি অন্য কারো কাজ থেকে শুনতো।তখন কি হতো?পুতুলের কষ্ট পেতো।তাঁকে ভুল বুঝতো?হয়তো সে আমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি।তবুও ব’লে দিয়েছি।কষ্ট যখন আমার কারণে পেয়েছে।তখন আমি তার মান ভাঙ্গাবো।তার কাছে সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইবো।

সে হয়তো একদিন ঠিক বুঝতে পারবে।অর্পণ আজ নিজের কাজগুলো জলতি শেষ করে নিলো।তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে।পুতুলের সাথে তার অনেক কথা জমে আছে।

চলবে…

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৮
১৩৫.
রিফাতের গায়ে মারের দাগ।স্বাধীন ছোট্ট ছেলের এমন অবস্থা দেখে আঁতকে ওঠেন।কি করবেন বুঝতে পারছে না?হাঁটুর নিচে পচন ধরেছে।এমন জানোয়ার মতো মেরেছে তার ওপর তাদের একবারও জানানো হয়নি।আজ দুপুরে রিফাত কাঁপতে কাঁপতে বাড়ির উঠোনে রিকশা করে আসে।রিকশা থেকে নামতে গিয়ে মাটিতে পড়ে মা ব’লে কেঁদে ওঠে।রেনু গরুকে ঘাস দিতে নিয়ে হাত থেমে যায়।রিকশা থেকে রিফাত পড়ে গিয়ে মা ব’লে কেঁদে উঠেছে।সবটা দেখে কলিজা মুচড়ে ওঠে।তার আদরের সন্তানের এই অবস্থা কে করেছে।রেনু ঘাস ফেলে দৌড়ে ছুটে আসে।ছেলের মাথাটা মাটি থেকে উঠিয়ে উচ্চস্বরে কেঁদে উটে।বউয়ের কান্নার শব্দে স্বাধীন পুকুর পাড়ে মাছের জাল ফেলে ছুটে আসে।আর আসতেই এসব দেখতে পায়।ছেলেকে ঘরে রেখে ডাক্তার আনতে গঞ্জে যায়।

দেখুন,স্বাধীন সাহেব।সন্তানদের মানুষ করবেন ভালো কথা।কিন্তু সন্তান কোথায় আছে? কি করছে?এগুলো খেয়াল নিজে থেকে না করলে কেউ করবেনা।সন্তান আপনার,সে সন্তানকে এমন অমানুষের মতো মারবে আর আপনি চুপ করে থাকবেন।সন্তানের দোষ থাকলে তাকে শুধরানোর সুযোগ দিতে হয়।কিন্তু এভাবে মারাটা কোনো সমাধান নয়।ডাক্তার ওষুধ দিয়ে চলে যায়।রেনু ছেলের হাত ধরে বসে আছে।গায়ে একশ চার জ্বর। জ্বরটা আবার বেড়েছে।ছেলের কপালে জলপটি দিচ্ছে স্বাধীন।সে গম্ভীর মুখে বসে আছে।তার মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই।তার মনে কি চলছে?

এইদিকে ছোট ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে মিলন,সাজু রাগে ফুঁসছে।

আজ তিনদিন পর পুতুল নিজে থেকে দরজা খুলেছে।অর্পণের দিকে নজর না দিয়ে চেয়ার টেনে চুপচাপ টেবিলে খেতে বসে।পুতুলকে দেখে অর্পণ এর মুখে হাসি ফুটে।সে ও অপর চেয়ার টেনে খেতে বসে।খাওয়ার এক পর্যায় পুতুল চিরকুট এগিয়ে দেয়।অর্পণ চোখের ভ্রু নাচিয়ে বলল,এতে কি আছে? পুতুল ওহ অর্পণের দেখাদেখি ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় বলল দেখতে।অর্পণ চিরকুট খুলে।

আমি কাল বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।মামাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

পুতুলের লিখাটা পড়ে বলল,

কেনো?তোমার কেন যেতে হবে?আমাকে বলো।আমি তাদের এখানে আনছি।

পুতুল মাথা নাড়িয়ে না বলল,

তার শুধু মামাকে না সবাইকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।আর তার সাথে তার সেই ছোট গ্রামটাকেও খুব মিস করছে।

পুতুলের বলার ভঙ্গি দেখে অর্পণ বিরবির করে কিছু ব’লে।পুতুল শুনতে পায় না।সে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেছে।

গ্রামে এমন ঘটনা নিয়ে বিচার বসেছে।হুজুর কি করে এমন অমানুষের মতো ছাত্রকে মারতে পারে।এটা নিয়ে দুই এক কথায় সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।হুজুরকে ছেড়ে দেয়।তাঁকে দুইদিনের মধ্যে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেন।কিন্তু এতে মিলন,সাজু,কিংবা স্বাধীন এই ব্যাপারটা সহজভাবে নিতে পারে নিই।

রিফাত এর জ্ঞান ফিরে আসে।সে জানায় এই হুজুরের স্বভাব চরিত্র ভালো না।ছোট মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।মেয়েরা তার ভয়ে বাসায় কিছু বলে না।আর ছেলেদের শুধু মারতে থাকে।যতখন পর্যন্ত সে শান্তি না পায়।রিফাতকে ঘুম পাড়িয়ে দুই ভাই একসাথে মাদ্রাসা থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকে।তাদের দুইজনের হাতেই ঢোল কলমি লতা রয়েছে।রাতের আকাশে বড় থালার মতো চাঁদ উঠেছে।সেই চাঁদের আলোয় চকচক করছে কাঁচামাটির রাস্তা।মিলন,সাজু হুজুরের জন্য বিশেষ আয়োজন সাজিয়ে রেখেছে।সে এই পথেই আসবে।

মাথায় টুপি গায়ে সবুজ পাঞ্জাবি।গায়ে আতরের গন্ধে মৌ মৌ করছে।হাতে লাঠি।

হাউমাউখাউ মানুষের গন্ধ পাও।হি,হি,হি।

অদ্ভুত হাসিতে কানটা ধরে গেলো।হুজুর মশাই কিছুটা ভয় পেলেন।একে তো পূর্নিমা রাত।তার ওপরে কোনো মানুষজন নেই।এই ফাঁকা রাস্তায় কে এমন করে হাসে।মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলেন।কাঁপা অবস্থায় বলতে লাগল।

কে তুমি ভাই?সামনে আসছো ও না কেন?সাহস থাকলে সামনে আসো।

কি রে আবুল কালামের পোলা?কেমন আছোস তুই? আমারে ডাকোছ।আমি সামনে আইলে হুশ থাকব তোর।আমি এই বট গাছের পেতনী।তোর চৌদ্দ গুষ্টি শুদ্ধো আমারে ভয় পায়।আর তুই আমারে বেইজ্জত করস।তোর সাহস তোও কম না।আমারে দেখতে চাস।তাহলে এই দেখ আমি কে?

সাদা কাপড়ে বিশাল আকারের দৈত্যের মতো উঁচু হাওয়া ভেসে এসে একটু দূরে বিশাল লম্বা চুলগুলো ছেড়ে বসে আছে।দুই পা দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়েছে।এমন ভয়ংকর দৃশ্য দেখে হুজুরের কলিজা কেঁপে ওঠে।হুজুর কাঁপতে কাঁপতে বলে।

ওরে বাবা-রে এটা কি রে?

লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নী কুংতুু মিনাজ জোয়ালিমিন।হুজুর দোয়া পড়তে পড়তে ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যেতেই এক সাথে হি,হি,হি করে হেসে উঠে।

মিলন আমার কাঁধ থেকে তাড়াতাড়ি নাম।হুজুর মনে হয় বেহুশ।

দাঁড়া নামতাছি।মিলন সাজুর কাঁধ থেকে নেমেই নিজের মাথার ওপর থেকে কাক তাড়ুয়ার নামিয়ে সেটার ওপর থেকে লম্বা চুল এবং সাদা কাপড় সরিয়ে হুজুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

আরে বাশঁস।ভাই এই পল্টি মুরগী দেখি ভয়ের ঠেলায় মাঝ রাস্তায় এক নাম্বার কাম সাইরা লাইছে।হুমমম।ছি,কি বিচ্ছির গন্ধ?

মনে হয় ভয় পাইছে।

ভয় পাইছে মানে খুব ভয় পাইছে।তয় আমগো কাম এহন শেষ হয় নাই।আরো বাকি আছে।ওর জ্ঞান ফিরাও।

হুম।ফিরাচ্ছি।আবার আগের রুপে চল।মিলন,সাজু আবার নিজেদের আসল রুপে চলে আসলো।হুজুরের জ্ঞান ফিরে আসতেই।

কি রে আবুল কালামে পুত।কেমন দেখলি?আমি খুব সুন্দরী পেতনী।তাই না বলল,

হুম,হু..ম খু..ব সু..ন্দ..র

ওমা,তাই বুঝি।চল,এখনই চল।তুই আমারে বিয়া করবি।বিয়ার পর তোরে আমি মানুষের র*ক্ত পান করামু!হেব্বি মজা হইবো।তারপর তোর গাড় ম*টকায়।আমি তোরে ক*টমট করে খামু।আহা মা*নুষের মাং*স সেই স্বাদ।কতদিন হইলো মানুষের মাং*স খাইনা।হুজুর সামনে আরো কয়েক কদম বাড়াতেই।সে উঠে উল্টো পথে দৌড় দেয়।কিন্তু পালাতে পারে না।ঢোলকলমি বারি মারতে মারতে বলল,

কি’রে আবুল কালামের পোলা?আমারে বিয়া না কইরা কই যাস।তোর বিয়া করতেই হইবো।তুই বিয়া না করলে আজকে শেষ।খাড়া তুই।হুজুর নিজের জান নিয়ে পালাতে লাগল।কিন্তু ঢোলকলমি বাড়িতে তার, হাত,পা,পিঠ কোনো কিছু রেহায় পায়নি।তবুও কোনো রকম জান নিয়ে পালালো।হুজুরের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে গেছে মা’রের চোটে।সে পালিয়ে দূর হাওয়া হতেই মিলন,সাজু হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পড়ে।

হু,মিলন।বেডা খচ্চর।সেই ভয় পাইছে।আর জীবনেও এই গ্রামে আসব না।

১৩৬.
পুতুল গ্রামে যাওয়ার জন্য কাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে রাখল।সকালেই রওনা হবে।এইদিকে অর্পনের রাগ লাগছে,আবার কান্না পাচ্ছে।কিন্তু সে কাঁদবে না।বউ তার ভালোবাসা একটুও বুঝে না।কেমন পাষাণী মেয়ে।বরকে তোও একবার জিজ্ঞেস করতে পারতো।তুমি যাবে?কিন্তু না তা করিনি।উল্টো নিজে একাই মামার বাড়ি চলে যাচ্ছে।অথচ যার মামা শ্বশুর বাড়ি।তাকে একটিবার বলো না।নিষ্ঠুর প্রিয়তমা।

কাল রাতে যার মনটা ছিল খুব খারাপ।এখন তার মুখে হাসি।মুখে মধু।তার এমন পাগলামিতে পুতুল সায় দিলো না।তাতে অর্পণের কি?প্রিয়তমা অবশেষে তাকে নিয়ে যাচ্ছে।এতেই তার আনন্দ ধরে না।সে এত আনন্দ কোথায় রাখবে।কোলবালিশে নাকি কলিজার ভিতরে বুঝতে পারছে না।এই প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারটা জোস।

উঠোনে পা রাখতে বাড়ির বারান্দায় ছোট ভাইকে দেখতে পায়।পুতুল নিজে এগিয়ে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে সালাম দিলো।রিফাত ফ্যাকাসে মুখে একটু হাসি দিয়ে বোনের কোলে মাথা রাখল।রিফাতের কাজে পুতুল অবাকই হয়।রিফাত কখনো তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে না।আজ কি হলো?হয়তো ভাইয়ের মন ভালো নেই।তাই ছোট ভাইয়ের কপালে ভালোবাসার পরশ একে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

এইদিকে নতুন জামাই বাড়িতে আসছে।রেনু তাড়াতাড়ি লেবুর শরবত করে দিলো।অর্পণ লেবুর শরবত অর্ধেক খেয়ে বাকিটুকু রেখে চলে গেলো।পুতুল তার কাজ কর্ম সব দেখেছে।বাকি শরবত টুকু যে তার জন্য বরাদ্দ সেটা আগেই বুঝতে পেরেছে।তাই কোনো বনিতা ছাড়াই চুপচাপ খেয়ে নিলো।

স্বাধীনের সাথে অর্পণ বাজারে এসেছে।স্বাধীনকে কোনো বাজার করতে দেয়নি।বরং নিজের মন মতো বাজার নিয়ে বাসায় পথে এগিয়ে যাচ্ছে।আজ দুপুরে রান্না হবে।টুকরিতে এত বাজার দেখে রেনুর মাথায় হাত।

আল্লাহ এত বাজার কে খাবে?

কেন?আমরা সবাই খাবো।

তাই ব’লে এত বাজার।আল্লাহ এগুলো নষ্ট হইবো।শুধু শুধু এত বাজার করলে।

কোনো নষ্ট হবে না।যা আছে সব রান্না করেন।আজ আমার তিন শালা পেট পুড়ে খাবে।তাদের সাথে আমি,আপনি,আমরা সবাই থাকব।

পুতুল ওড়না দুই পেচ দিয়ে তরকারি কা*টঁতে বসে।রেনু বড় রুই মাছ কা*টছে।মাছের পরে মুরগী মাংস পিছ পিছ করে নিচ্ছে।গরুর মাংস আলাদা বোলে রাখা।মিলন,সাজু আদা,রসুন,এবং পিঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে রাখছে।স্বাধীন অর্পণের এমন বাজার করায় খুশি হয়নি।কিন্তু ছেলেটা খুশি মনে যখন করতে চাইছে তখন না করেনি।তবে অর্পণের পরিবারকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।তারা আসছে।

দুপুর দুইটা মধ্যে সব রান্না শেষ।সবাই মিলে একসাথে ভোজন করছে।পুতুল শ্বশুর বাড়ি সবাইকে আসতে দেখে সালাম বিনিময় করে।রাবেয়া ছেলের এবং ছেলের বউয়ের খোঁজ খবর নিলো।তারা পড়াশোনা।তার ঢাকার দুই কামরা ছোট্ট সংসার কেমন লাগল?পুতুলের খুশীতেই রাবেয়া খুশী হলেন।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে