চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৪৩+৪৪+৪৫

0
127

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৩
১২৭.
অর্পণ হঠাৎ এভাবে রাস্তার মধ্যে প্রপোজ করে বসবে পুতুল ভাবতেই পারে নিই।যে মানুষটাকে নিয়ে তার ভাবার কিংবা সময় দেওয়ার ইচ্ছে নেই।সে না চাইতেও তার সাথে কেন জুড়ে যাচ্ছে?সে এসব চায়না।সে তার স্বপ্ন নিয়ে খুশি ছিল।আজ কেন এরকম হলো?এসব হওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ছিল?
পুতুল নিজের চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করে।কিন্তু আড়াল করতে পারে না।অর্পণের চোখ দুটো তার চোখের মায়া আটকে যায়।অর্পণের থেকে দূরে যেতে চাইলে আজ দূরে যাওয়ার সাহস কেনোও হয়না?মনে মধ্যে কষ্টের ঢেউ।মা,বাবার বিচ্ছেদ।এবং নিজের বিয়ে ভাঙ্গা এসব তাকে আরো কঠিন হতে বাধ্য করে।বারবার মনে হয়!আমিও আমার মায়ের পথে চলছি।যা আমার জন্য সুখকর নয়।তা বরই দুঃখের।

পুতুল,অর্পণের হাত থেকে পালাতে চায়।বেঞ্চ থেকে ব্যাগটা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে চেষ্টা করে।কিন্তু অর্পন তার পিছুপিছু আসছে।পুতুলের পিছ আজ সে ছাড়বে না।তার ভালোবাসা,আজকে তাকে এমপি সাহেব থেকে রাস্তার প্রেম ভিখারি করে ছাড়লো।প্রেয়সীকে পাওয়ার জন্য তার হ্রদয়খানা আজ বড্ড ব্যাকুল।যার একটু ছোঁয়া অর্পণ তালুকদারের মন ঠান্ডা হবে।ফুটবে মুখে হাসি।কিন্তু সামনের নারীটি একটু বেশি অভিমানী একটু জিদ্দি।তবুও আজ সে হার মানবে না।তার ভালোবাসার জন্য আজ প্রেয়সীকে চায়।তার কঠিন আবরণ তৈরি এই শক্ত রুপটাও ভেঙে ফেলতে চায়,তার ভালোবাসা দিয়ে।

বৃষ্টি ইতিমধ্যে থেমে গেছে।একজন হাঁটছে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে।আরেকজন,অপরজনকে মানাতে ছুটছে পিছুপিছু।পুতুল কয়েকবার আঙুল তুলে ব’লেছে এখান থেকে চলে যেতে।কিন্তু অর্পণ মানছে না।একসময় পুতুল হাঁটা বন্ধ করে অর্পণকে চোখ রাঙিয়ে ইশারায় বলল,আপনি যাবেন।না-কি আমি পুলিশকে খবর দিব।

পুতুলের কথা মতো নিজের ভিজে যাওয়া ফোনটা পুতুলের হাতে দিয়ে বলল,

-;এই নেও কল কর!পুতুল আশ্চর্য হচ্ছে।পরবর্তী মনে হলো।এই বেডা নিজেই এমপি।তাকে পুলিশের কি ভয় দেখাচ্ছে?

পুতুল ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে কয়েক পা এগোতেই স্বাধীনের সামনে পরে গেলো।মামার মুখটা গম্ভীর করে তাকিয়ে আছে।

একবার পিছনে তাকায়।একবার সামনে তাকায়।পিছনে অর্পণ দাঁড়িয়ে।সামনে মামা দাঁড়িয়ে।পুতুল কি করবে বুঝতে পারছে না?এমন সময় হাঁচি আর কাশি একসাথে দিতেই দুইজন দুইদিক থেকে এগিয়ে এসে রুমাল আর গামছা ধরে।পুতুল অসহায় চোখে তাকিয়ে রয়।মনে মনে একটা ঢোকঁ গিলতে থাকে।চোখের পাতা ঝাপ্টিয়ে বলল,

-;লাগবে না।মামা গামছা নামিয়ে নিলেও অর্পণ পুতুলের হাতে রুমাল দিয়ে দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে পরে।এইদিকে পুতুলের মুখটা চুপসে গেলো।মামা চোখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

এই ছেলে।তুমি আমার মেয়ের পাশে কি করছো?তুমি না গ্রামে তোমার বোনের বিয়েতে ছিলে।তাহলে এখানে কি?

বোনের বিয়ে কালকে খাওয়া শেষ।তাই বাসায় একটু বিশ্রাম নিতে চাইছিলাম।কিন্তু আপনার মেয়ে জন্য পারলাম কই?তালেপুর থেকে সেই ঢাকায় টেনে এনেই ছাড়লো।

-;মানে।আমার মেয়ে তোমাকে কি করলো?যার জন্য তুমি গ্রাম ছেড়ে ঢাকায়।

-;কি আর করবে?আমার হ্রদয় চুরি করেছে।আর সেই হ্রদয় চুরি করে পালিয়ে যাচ্ছে ।

অর্পণের এমন কথায় স্বাধীনের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।একবার অর্পণের দিকে তাকায়।আবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,

এসব কি ব’লে?পুতুল দুই পাশে মাথা নাড়িয়ে বলল,সে জানে না।মাথার একসাইডে হাতে রেখে ইশারায় বলল,মনে হয়,পাগল হয়ে গেছে।

পুতুলের ভাবভঙ্গি দেখে অর্পণ বিরক্ত হলো।

-;ওহ কি বলবে?বছরের পর বছর চরকি মতো আমায় দোল দোল দুলুনি,দুলিয়ে বলছে।আমি পাগল।মানে আমি পাগল হয়ে গেছি।এমপি সাহেব একটা পাগল।এই এমপি দ্বারা রাজ্য এতদিন চললো কি করে?জনগণ শেষ পর্যন্ত পাগল এমপিকে ভোট দিয়ে জয়লাভ করালো।

পুতুল তুমি নিষ্ঠুরতমা প্রিয়া সেটা জানতাম।কিন্তু তুমি নিষ্ঠুরতমা পাষাণী সেটা জানতে পারলাম আজ।ইয়া আল্লাহ এ আমি কার প্রেমে পড়লাম?কারে আমি আমার মন,প্রাণ দিলাম।সে এমন ভাব করছে।মনে হচ্ছে আমি ক্রিমিনাল।আর এরা বাপ,বেটি সিআইডি অফিসার।আর আপনি মামু এত গোয়েন্দাগিরি করেন কেন?কোথায় মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে বলবেন।বাবা,দীর্ঘঞ্জীবী হও,সুখী হও।

অর্পণের কথা শেষ হতে দেড়ি,পুতুল হাতদুটো দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে।এই লোকটা কি উল্টোপাল্টা বকবক করে চলছে।এইদিকে স্বাধীন হতভম্ব হয়ে গেছে।অর্পণ বুকের কাছে দুই হাত ভাজ করে বলল,

শুনন মামা মশাই।আমি জনাব অর্পণ তালুকদার।আপনার কন্যা স্বরূপ ভাগ্নীকে বিবাহ করিতে প্রস্তুত।ছেলে হিসেবে মন্দ নই।লাখে আমি এক পিস।মেয়ে আপনার সুখেই থাকিবে।তাহার কোনো কষ্ট করিতে হইবে না।আমি তাহাকে রাজরানি করে রাখিব।

অর্পণের কথার কোনো জবাব না দিয়ে স্বাধীন,পুতুলের হাত টেনে নিতে নিতে বলল,

বাসায় চল।আর তুমি বাসায় যাও।এসব বিষয়ে পরে কথা হবে।

পরে কেন হবে?সবকিছু আজই হবে।আপনার মেয়ে একটা চোর।আমার মনটা চুরি করে সব সময় পালিয়ে যাওয়ার ধান্ধায় থাকে।তা কি আমি বুঝি না ভেবেছেন?

স্বাধীন,পুতুল,ট্রেনে চড়তেই।অর্পণ ভিজা শরীরে বাইকে করে গ্রামে ছুটে।

১২৮.
স্বাধীনের বাড়িতে তালুকদার বাড়ির সবাই হাজির।অসীম তালুকদার ছেলের কাজে বিরক্ত হয়ে বসে আছেন।কিন্তু রাবেয়া খুশিতে বাক-বাকুম।ছেলে বিয়ের জন্য আর অপেক্ষা করতে চায় না।তাইতো ফল,মিষ্ট,দই এবং কাজীকে সাথে করে নিয়ে আসছে।এইদিকে পুতুল গোসল করে মাথা গামছা দিয়ে ভিজা চুলগুলো মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করে।বাহিরে অনেকের গলা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।
নাকে মুরগী মাংস এবং পোলাও সুগন্ধ আসছে।মিলন,সাজু আজ বেশ আনন্দে রয়েছে।পুতুলের ভাবনার মাঝেই দরজায় ঠকঠক করে কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে মাথায় ওড়না দেয়।স্বাধীন রুমে প্রবেশ করে।স্বাধীনের হাতে লাল বেনারসি।যেটা রাজিয়ার বিয়ের জন্য কি না হলেও দেওয়া হয়নি।আজ মেয়ের জন্য সেটা বের করেছেন।পুতুল অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।মামার মুখটা কেমন যেনো।না হাসি,আর না গম্ভীর মুখ।

আম্মা আপনি বড় কেন হলেন?ছয় বছরের সেই ছোট্ট পুতুল কেনো রইলেন না।আপনি আমার এই কাচা মাটির ঘরে ছোট ছোট পা’য়ে যখন হেঁটে হেসে খেলে বেড়াতেন।আমার খুব আনন্দ হতো।মনে হতো আমার আম্মা আপনার মাঝে ফিরে এসেছে।সেই মায়ের প্রতিবিম্ব আপনার মাঝে দেখে কতটা শান্তি পেতাম।কতটা রাত আমি আরামে ঘুমিয়ে কাটিয়েছি তার হিসেব নেই।কিন্তু আজ আপনাকে এই দুই হাত দিয়ে বিদায় জানাতে কষ্ট হচ্ছে।আমি বোধয় মেয়ের বাপ ব’লেই এই কষ্টটা পাচ্ছি।আমার আম্মার জন্য দোয়া রইলো।সে যেনো সুখী হয়।তার সুখেই আমার সুখ।স্বাধীন চোখের পানি মুছে বলল,

তৈরি হয়ে নিন।আজ আপনার বিয়ে।বরপক্ষ চলে আসছে।ওরা আপনাকে নিতে এসেছে।আর আমি আজ সবটা জেনেই তাদের হাতে সহ ইচ্ছায় আপনাকে তুলে দিচ্ছি।আপনার ব্যাপারে কোনো কিছু লুকানো হয়নি।তারা সবটা জেনেই গ্রহণ করতে প্রস্তুত।স্বাধীন চলে যেতেই পুতুল ঠাসস করে বিছানা বসে পড়ে।কি হচ্ছে এসব?সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
রেনু পুতুলকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে আঁচল একটু বড় করে টেনে দিলো।মাথায় কালো হিজাব পরিধান করিয়েছে।একেবারে কনে সাজিয়ে রুপান্ত করার চেষ্টা।এই কনের হাতে মেহেদী নেই।চুলগুলো হাত খোপা করে রাখা।চেহারায় সাজ গোছের কোনো প্রশাদর্নী নেই।তার দুই হাতে ছেলে পক্ষ থেকে দুই জোড়া চিকন দামী চুরি।গলায় কোনো অল্ঙ্কার নেই।নাকে ছোট্র নাকফুল।একদম ঘরোয়াভাবেই এবং ময়মুরুব্বি সামনেই খুরমা খেজুর দিয়ে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়েছে।

পুতুল এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।মামা তার সাথে এটা কেন করলো জানা নেই? তবে এর পিছনে বড় কারণ অবশ্যই রয়েছে।তা না হলে যে ছেলেকে দুইদিন আগেও সয্য করতে পারতোনা।আজ তার সাথে বিয়ে দিলো।আজ একটু আগেই সে অন্য কারো বউ হয়েছে।সে অর্পণ তালুকদারের বউ।বিশ্বাস করতে পারছে না।পুতুল নিজের ঘরে ছিল।দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে চোখ তুলতেই দেখে অর্পণ তালুকদারকে।পুতুলকে অবাক শেষ চূড়ায় উঠিয়ে পুতুলকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে নাচতে লাগলো।পুতুলের কপালে প্রথম চুমু বসিয়ে দিলো।

একটু আগে যখন আমি কবুল বলছিলাম।বিশ্বাস করো মনে হচ্ছিল আমি কল্পনা দেখছি।তুমি আমার বউ।এটা ভাবতেই কি যে আনন্দ লাগছে বউ।আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাব।আজ অবশেষে তোমায় পেলাম।আমার ভালোবাসা।আমার প্রেয়সী আমার ঘরের ঘরণী হয়ে এলো।এতদিন তোমাকে দূর থেকে দেখেই আমার চোখের তৃষ্ণা মিটিয়েছি।আজ সামনে থেকে দেখতে পারব।অর্পণ বকবকানি করছে।এইদিকে পুতুল নিজের সদ্য হওয়া স্বামীর রিয়াকশন দেখে মাথা ঘুরছে।প্রথমে চরকি মতো ঘুরানো এবং তারপর চুমু তার কপালে দিতেই পুতুল বেহুশ হয়ে তার বক্ষে জুড়ে পড়ে আছে।অর্পণ যখন বুঝতে পারলো।তার আনন্দ হাওয়া ফুস।বউকে খাটে শুইয়ে হাত পাকা দিয়ে বাতাস করতে লাগল।

হায় আল্লাহ,আমার চুমুতে এত পাওয়ার,যে বিয়ের প্রথমদিনই বউ বেহুশ।আর আমি তার সেবায় এখন নিয়োজিত।

চলবে…..

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৪
১২৯.
পুতুল অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পরে আছে।রাবেয়া চেক-আপ করে ছেলের মাথায় হালকা করে থাপ্পড় লাগিয়ে বলল,

বেয়াদব।সত্যি করে বল কি করেছিস?তোর কারণে মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গেছে।

আমি,আমি আবার কি করলাম?একটু লাটিমের মতো ঘুরিয়ে শেষ পাতে একটা চুমু দিয়েছি।ব্যাস এতুটুকুই।

তোর এতটুকুই তার জন্য ভারি পড়ে গেছে।বিয়ে হতে দেড়ি বউকে ঝাটকা দিতে দেরি নেই।

বারে বউ আমার।আমি একটু আদর দিতেই পারি।এতে এত শকটের কি হলো?আর এক চুমুতে বউ অজ্ঞান হলে আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হবে?আমি কি এই জম্মে বাবা ডাক শুনব না?ছেলেকে বিরবির করতে দেখে আরেক থাপ্পড় তার বাহুতে লাগিয়ে বলল,যা বাহিরে যা।পরে আসবি।অর্পণ মন খারাপ করে বাহিরে চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পরে পুতুলের জ্ঞান ফিরে আসে।চোখ মেলে সেই বউ পাগলকে না দেখে সস্তির নিশ্বাস ফেলে।মামা তাকে এ কোন পাগলের গলায় দিল।

আম্মু আপনি ঠিক আছেন?রাবেয়ার ডাকে পুতুল তাকিয়ে ইশারায় বলল,

সে ঠিক আছে।

সারাদিন পেটে কিছু না পড়ায়।আর অতিরিক্ত দূর্বলতার জন্য এমন হয়েছে।কিছু খেয়ে নিন।রাবেয়া হাত ধুয়ে পুতুলের মুখের সামনে খাবার ধরে বলল,নেও হা কর!এমন রোগা-সোগা মেয়ে মানুষকে আমি আমার বাড়িতে ছেলের বউ করে ঘরে তুলবো না।রাবেয়া বক্তব্যে পুতুল অবাক চোখে তাকিয়ে।পুতুলের কৌতুহল বুঝতে পেরে বলল,

আমি অর্পণের আম্মু।তালুকদার বাড়ির বড় বউ রাবেয়া।অসীম তালুকদার আমার স্বামী।

অর্পণের মায়ের কথায় পুতুল আরেকদফা চমকে উঠে।

আর তুমি আমাদের বউমা নও।আমাদের মেয়ে হয়ে যাবে।তবে সেটা আজ নয়।তোমার স্বপ্ন,তোমার লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পর।এই বিয়েটা সবকিছু বিবেচনা করেই ঘরোয়াভাবে দেওয়া হ’য়েছে।কি করতাম?একদিকে আমি যেমন অর্পণের মা।আরেকদিকে তোমারও মা হ’য়েছি।দায়িত্ব ও কর্তব্য দু’টোই নিষ্ঠার সাথে পালন করতে চেয়েছি।কাউকে আঘাত করে তার স্বপ্ন ভঙ্গ করে বউ করে নিতে আসতে চাইনি।কিন্তু ছেলের পাগলামি।আর তোমার কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।একদিন বিয়ে যখন করতেই হবে তখন সেটা আজ করলে ক্ষতি নেই।নিয়মমতো তুমি তোমার মামার কাছেই থাকবে।কিন্তু শরীয়ত মতে তুমি বিবাহিত।এবং তোমার ঘর,বর দু’টোই আছে।তোমার যখন ইচ্ছে যা খুশি করতে পারো।আমি তোমাকে পুরো স্বাধীনতা দিচ্ছি।
নেও এখন খেয়ে শরীর ঠিক রাখ।নিজের লক্ষ্যে যাওয়ার জন্য।পুতুল খেতে চাইছে না।মুখটা তিতা হয়ে আছে।রাবেয়া মিষ্টি করে হেসে প্লেটের ভাত গুলো ভাগ ভাগ করে নিলো।

একটা লোকমা তুলে বলল,

এটা রাজিয়ার নামে।তোমার জন্মদাত্রী মায়ের জন্য।খেয়ে নেও।মায়ের কথা শুনতেই পুতুল প্রথম লোকমা মুখে নিলো।তার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।রাবেয়া নিজের আঁচল টেনে পুতুলের চোখের পানি মুছে কপালে চুমু একে দিলো।

ভাত সামনে নিয়ে কাঁদতে নেই।এতে আল্লাহ নারাজ হন।রাবেয়া দ্বিতীয় লোকমা তুলে বলল,
এটা তোমার মামার নামে।যে মামা ছোট্ট থেকে পুতুলকে আজ এত বড় অবধি করেছেন।যার জন্য আমি আমার মেয়েকে পেয়েছি।তার আম্মাজান।আজ আমার ঘরের
রাজকন্যা হয়েছে।তার স্বপ্নে চলার দিনগুলোতে সাহস দিয়েছে।তার পাশে সব সময় রয়েছে।পুতুল হাসি মুখে দ্বিতীয় লুকমা মুখে নিলো।

তৃতীয় লুকমা পুতুলের সামনে তুলে বলল,

এটা সেই ছোট্ট জানের জন্য।যাকে বাবা নামক অমানুষ পিতার হাত থেকে বাচাঁতে তুলে দিয়েছে মামা,মামীর কোলে।সাজু,সাথে তার ঠাঁই হয়েছে মামী নামক আরেক মায়ের সঙ্গে।তার জম্মের সময়ে তার মা নামক রমনী মৃত্যু হয়েছে।সে জানে না।কিন্তু আমার এই আম্মু তোও সব জানে।আজ জেনেও চুপ শুধু মাত্র মিলনের জন্য।এত বছর ধরে যাদের মা,বাবা জেনেছে।আজ যদি অন্য কেউ তার মা,বাবা এটা শুনে।সে মানতে পারবে না।কষ্ট পাবে ব’লে চুপ।রাবেয়া সাথে কথা বলতে বলতে অনেকটা সময় চলে গেছে।পুতুলের খাওয়া শেষ আরো আগেই।রাবেয়া বলা কথাগুলো তাকে সেই পূরনো ক্ষত মনে করিয়ে দিয়েছে।না চাইতেও রাবেয়া বুকে পরে কান্না করছে।

এই কান্না আজকেই শেষ।এরপর আর কান্না নয়।শুধু হাসি,আর আনন্দ থাকবে।আমি জানি আজ কথাগুলো বলায় তুমি কষ্ট পেয়েছো।বিশ্বাস কর বলতে চাইনি।কিন্তু আমার মনে হলো,তুমি ভাবছো এই বিয়েটা তোমায় করুণা করে দেওয়া হয়েছে।সবাই করুনা করেছে।কিন্তু এসব মিথ্যে।আমরা প্রথম থেকেই সবটা জেনেই মেনেই নিয়েছি।

এতখন হয়ে গেছে পুতুলের কোনো খবর নেই অর্পণ অস্থির হয়ে গেছে।আর থাকতে না পেরে দুম করে রুমে ঢুকে পরে।রুমে প্রবেশ করতেই মায়ের কোলে পুতুলকে দেখতে পায়।তার বক্ষ জুড়ে একটা শীতল হাওয়া বয়ে গেছে।ভীরু পায়ে এগিয়ে আসতেই দেখে তার আদূরনী ঘুমিয়ে আছে।মায়ের কোলে নিজের বউকে এভাবে পরম মমতাময় কোলে ঠাঁই পেতে দেখে নিজেরও লোভ লাগছে।মায়ের অপর পাশে বসে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রয়।এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সেও ঘুমিয়ে পরে।বোনের বিয়ের দুই রাত জাগ্রত ছিল।কিন্তু আজ সব কিছুর সমাধান হয়েছে।তার আদূরনী তার অর্ধাঙ্গিনী তার হয়ে গেছে।একে অপরের সঙ্গে বাঁধা পড়েছে।বিবাহ নামক মিষ্টি সম্পর্কে।যেখানে হালাল করে প্রিয়তমাকে পাওয়া হয়েছে।এই স্বামী,স্ত্রী মিষ্টি সম্পর্ক সত্যি সুন্দর।

১৩০.

ঢাকা কাজের শহর কিংবা বেঁচে থাকার চাবিকাঠি।হ্যা ছোট ছোট গ্রাম থেকে অনেক ছেলেরা জীবিকার তাগিদে এই শহরে মাটিতে পা রাখে।নিজের পরিবার আপনজনের থেকে দূরে ফেলে আসে।তারা সকাল সাতটা মধ্যে কাজের জন্য বের হয়।আর ব্যাচেলার রুমে ফিরে রাত নয়টা কিংবা দশটায়।আবার কখনো কখনো নাইট ডিউটি করে কিছু বাড়তি অর্থর আশায়।এই দুনিয়ায় টাকা যার কাছে আছে।সে মূল্য আরকদর বেশি হয়।যার পকেটে টাকা নেই।তার মুল্য নেই।কারণ সবাই জানে সে ফকির।আজ পুতুল এই শহরে মামাকে ছাড়া প্রথমবার পা রাখছে।তার পাশে রয়েছে অর্পণ তালুকদার।তার হাতের মুঠোয় নিজের ছোট্ট হাতটা শক্ত ধরে রাখা।মনে হচ্ছে সে হাত ছাড়লেই পুতুল হারিয়ে যাবে।সে নিজের প্রিয়তমাকে আগলেই রেখেছে।এমনকি তার স্বপ্ন পূরণ করতে সব কাগজ পত্র তৈরি করে বলল,

সই করতে।পুতুল পুরো কাগজটা পড়ে সই করে দিল।আজ তার মেডিকেল কলেজের প্রথমদিন।সবকিছু আলহামদুলিল্লাহ ভালো হচ্ছে।নিজের স্বপ্নটা এত কাছেই সে ছুটেছে।
পুতুল চোখের পাতা বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কাল রাতের দৃশ্যটি।মামা তাকে মেডিকেলে ভর্তি করতে নিজের শেষ সম্ভবলটুকু বিক্রি করতে গঞ্জে যায়।সেই খবর অর্পণের কানে আসে।সে কিছুতেই শেষ অবলম্বন তাদের চাষের জমিটুকু বিক্রি করতে দেয়নি।সে নিজের বিবি ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে যানে।তাই বিয়ে যখন হয়েছে এখন পুতুল মানুক কিংবা না মানুক।অর্পণ তালুকদার তার স্বামী।তাই শরীয়ত মতে সে নিজের স্ত্রী দায়িত্ব নিবে।স্বাধীন প্রথমে দ্বিধা করলেও অর্পণের বুঝে তাকে থামতেই হয়।স্বাধীন বলল,

বউয়ের সব দায়িত্ব যখন তুমি নিয়েছো।তাহলে তাকে নিরাপত্তার দায়িত্ব তোমার।কালকে তুমি নিজে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাবে।স্বাধীনের কথায় অর্পণ সায় দেয়।
আর আজ তারা ঢাকায়।সবকিছু সম্পূর্ণ হতেই পুতুলকে নিয়ে নিজবাস ভবনে উঠে।
একটা তিন কামরার রুম।এড জাস্ট বাথরুম, গোসলখানা।রান্না ঘর আলাদা।এ-ই রুম গুলো তাদের বাড়ির তিন রুমের এক রুমের সমান।এত বড় বাড়িতে এই লোকটা একা থাকতো।পুতুল সবকিছু নিজের হাত দিয়ে ছুয়ে দেখতে লাগলো।কিচেন রুমে এসে পুতুল অবাক।কি সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।অর্পণ ফ্রেশ হয়ে এসে বলল,

তুমি এখানে কি করছো?খিদে পেয়েছে।আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হও।আমি রান্না বসিয়ে দিচ্ছি।পুতুলকে যেতে ব’লে অর্পণ ফ্রীজ থেকে মাংস বের করে ভিজিয়ে নিলো।গ্যাস চালু করে ডাল বসিয়ে দিলো।অপর চুলায় ভাত বসানোর জন্য পানি ফুটিয়ে চাল ধুয়ে দিল।এইদিকে পুতুলের মুখটা হা হয়ে গেছে।এই বান্দা রান্না করতে জানে।সবকিছু এত নিখুঁতভাবে কিভাবে করছে।পুতুল চোখ দুটো চুলকে আবার তাকিয়ে রয়।অর্পণ ছু*রির সাহায্যে পিয়াজ কুচি করছে।টমেটো কাটছে।মরিচ,আলু কাটছে।পুতুল দা,বটি দিয়ে কা*টাকা*টি করলেও ছু*রির সাহায্যে কখনো করেনি।আজ স্বামী রুপে এই মানুষকে দেখে হতভম্ব হচ্ছে।এই লোকটা ছোট বেলায় নাকি বাদর ছিল।তার মায়ের মুখে শুনা বানী।পুরো গ্রামের মানুষকে জ্বালিয়ে মারতো।কারো গাছের ফল তোও কারো মুরগী,কবুতর,ছাগল চুরি করতো।তার হাত থেকে কিছুই রেহাই পেতো না।অবশ্য তাদের বাড়িতে গিয়েও রানীকে চুরি করে।আর সেইদিন সে রাগে তার জুতা ছুড়ে মেরেছিল।তখন কি জানতাম?এই লোকটা ভবিষ্যতে আমার জামাই হবে।আবার পড়াশোনা করেছে।রাজনীতি করছে।তাহলে এসব রান্নাবান্না ঘরের কাজ কবে শিখলো?অর্পণ নিজের কাজের মাঝে একবার ঘুরে পিছনে তাকায়।

তুমি এখনো দাঁড়িয়ে কেনো?যাও ফ্রেশ হও।

পুতুল মাথা নাড়িয়ে বলল যাচ্ছি।যেতে যেতে আরেকবার ঘুরে তাকিয়ে গেলো।

চলবে…

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৫
১৩১.
জীবনে কি পাব না
ভুলেছি সে ভাবনা
সামনে যা দেখি,জানি না সেকি
আসল কি নকল সোনা?

মিলন আস্তে চল।সামনে লাল গরু দাঁড়িয়ে আছে।মনে হয় তোর গান পছন্দ হয়েছে। দেখ কেমন করে তাকিয়ে আছে?

কি বলিস সত্যি না-কি?মিলন গান বন্ধ করে লাল গরুর সামনে দাঁড়িয়ে বললো।

এই যে লাল টু মিয়া আড়ে আড়ে চাও কেন?আমি তোমার গালফ্রেন্ড নই বুঝলে।মিলনের কথায় গরু কিছু বুঝুক বা না বুঝুক।

হাম্বা ব’লে লেজ নাড়াতে লাগলো।

হুহ,ছি কি গন্ধ?ওই দূর্গন্ধ আসে কোথা থেকে?

সামনে দিকে তাকা।তোর লাল টু মিয়া কাম সাড়তাছে।মিলন তাকাতে দেখে গরু মলমূত্ত ত্যাগ করছে।

ওরে শালা।এই খাট্রাস গরু।তোর শরম করে না।আমার সামনে পটি করিস।ছি গিলুহীন গরু।মাথাটা মোটা কোথাকার?মাথায় নাই বুদ্ধি।দেখ আমার সামনে কি করলো?ওরে তোর শরম নাই আমার তোও শরম আছে।তোরে আদর করে ডাকলাম লাল টু মিয়া।আর তুই আমারে বেইজ্জতি করে ছাড়লি।যা সর।তোর মুখ আমি দেখবো না।সাজু চল চলে যাই।সাজুকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে চলে যাচ্ছে।এমন সময় গরু হাম্বা,হাম্বা করতে করতে মিলনের পিছনে রশি ছুটিয়ে দৌড়ে আসতে থাকে।সাজু চিতকার করে বলল।

মিলন,পালা।গরু গুতা দিতে আসছে।সাজুর কথায় দেখার সময় কই?সে লুঙ্গি কাছা মেরে দৌড় দিতে লাগল।পিঁয়াজ ক্ষেত,মরিচ ক্ষেত তালগাছের মাঠ ছেড়ে নদীতে লাফিয়ে পড়ে।

পানির নিচে চল্লিশ সেকেন্ড থেকেই পানির ওপর ভেসে ওঠে।গরুর দেখা না পেয়ে স্ততির নিশ্বাস ফেলে উপরে উঠতেই মাথায় হাত।তার লুঙ্গি কই গেলো?এমন অলিম্পিক দৌড়ে আসছে।বেচারার লুঙ্গি কখন খুলে পড়ছে বুঝতে পারে নাই।এখন উপায়।সে বাসায় ফিরবে কি করে?

এইদিকে সাজু,মিলনকে খুঁজে ফিরছে।কোথায় যে গেলো?খবর নেই।

তোমার নিয়ত যদি ঠিক থাকে একদিন তোমার লক্ষ্য অবধি পৌছাতে তুমি পারবে।
সে যতই বাঁধা বিপদ আসুক না কেনো?

পুতুল মনযোগ দিয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ছে।সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছে।ততোই তার স্বপ্ন,আশার হাতছানি পাচ্ছে।পুতুলের নিরাপত্তা পুতুলের সব দায়িত্ব এখন তার স্বামী অর্পণ তালুকদারের।বউ খোজঁ খবরের পাশাপাশি সে নিজের রাজনীতি নিয়ে খুব ব্যাস্ত সময় পার করছে।পুতুলকে তেমন সময় দিতে পারে না।তারা নিজেদের ক্যারিয়ারে ফোকাস করছে।বাকি দুনিয়া যত যাই হোক সেসব দেখার সময় তাদের নেই।এইদিকে অর্পণ রাজনীতিতে এতটা ব্যাস্ত হয়েছে।যে অনেক রাত করে বাড়িতে ফিরে।তার ইচ্ছে করে বউয়ের সাথে দুটো মিষ্টি কথা বলতে।কিন্তু সময় তাদের অনুকূলের বাহিরে চলছে।এত রাতে পুতুলকে বিরক্ত করার চেষ্টা অর্পণ করে না।কারণ সে জানে তার বিবি অনেক রাত অবধি পড়ে।তাই নিজের মতো খাবার নিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়ে।কিন্তু দুইজন একই ছাদের নিচে থেকেও আলাদা রুমে থাকছে।তাদের কাগজ কলমে এবং ইসলামিক মতে বিয়ে হলেও এখন তাদের নিজেদের সংসার নিয়ে মাতামাতি নেই।সংসার করার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে।তার বিবি স্বপ্ন পূরণ হলেই তাদের সংসার,একটা ভালোবাসার ঘর হবে।যে ঘরের মধ্যে একটা সুন্দর পরিবার থাকবে।মা,বাবা,স্ত্রী,ভাই,বোন,এবং বাকিদের নিয়ে তার দুনিয়ায় হবে।তার ঘরটা হবে খুশির মহল।তার রাজপ্রাসাদ।যেখানে অর্পণ তালুকদার রাজা এবং তার রানী তার বিবি।তার পুতুলজান।আর তাদের ভালোবাসা বন্ধন বা সেতু হবে তাদের সন্তান পারিসা তালুকদার।অর্পণ তালুকদার খুব করে চায়।তার প্রথম সন্তান কন্যা সন্তান হোক।তার নাম ভেবে রেখেছে।সে যেনো তার মায়ের মতো সাহসী,বুদ্ধিমতি মেয়ে হয়।যার মা এমন বাস্তববাধি।তার মেয়েরও সে রকম হওয়া উচিত।

ফজরের আজানের সময় মুয়াজ্জিন ডাকছেন।“আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম” (ঘুম থেকে সালাত উত্তম)।
আজানের প্রথম ডাকেই পুতুলের ঘুম ভেঙে গেছে।পড়ার টেবিল থেকে মাথা তুলতেই মনে পড়ে।কাল রাতে পড়তে পড়তে সে এখানেই ঘুমিয়ে যায়।বিছানায় সে ঘুমাইনি।জানালা খুলতেই দেখতে পায় বাহিরে আলো ফুটছে। আঁধার কালো সরে আলোটা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে লাগল।আম গাছ,জাম গাছের ধারে কাকপক্ষী ডাকছিল।ওইদিকটায় ওড়াউড়ি করছে শালিক,দোয়েল,মাছরাঙা পাখি।আস্তে ধীরে জেগে উঠছে দুনিয়াদারি।মানুষ তার জীবিকার তাগিদেই শহরে অলিগলিতে কাজের জন্য বেরিয়ে পড়বে একটুও পড়েই।

পুতুল ওযু করতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়ে ছিল।এমন সময় অর্পণের কথা মনে পড়তেই তার রুমের দিকে অগ্রসর হয়।কয়েক পা ফেলতেই অর্পণের দরজা সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে।কয়েক পলক তাকিয়ে দরজায় ঠকঠক শব্দ করে।রাতে দেড়ি করে ঘুমানোর জন্য অর্পণের কান সজাগ হলেও চোখ মেলে তাকিয়ে দেখা’র অবস্থায় নেই।চুপচাপ বিছানায় পড়ে রইল।এইদিকে অর্পণের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুতুল দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো।ভীরু পায়ে রুমে প্রবেশ করতেই অর্পণের ঘুমন্ত মুখটা ভেসে ওঠে।কি সুন্দর শান্ত সৃষ্ট হয়ে ঘুমিয়ে আছে?মনে হয় হচ্ছে ভদ্রলোক বহুদিন পর আরামে ঘুমিয়েছে।কিন্তু তার এই ঘুম আজ পুতুল ভাঙ্গতে বাধ্য।মামা,মামী তাকে ফোনে অনেক কিছু বুঝিয়েছে।বিয়ে হয়েছে।অর্পণ তালুকদার তার স্বামী।এই বিয়ে নামক সম্পর্কে আগানোর জন্য কাউকে না কাউকে আগাতেই হবে।সে যদি দুই পা আগাতে পারে।তার ভালোর জন্য সব করতে পারে।তাহলে পুতুল কেন পারবেনা?তার অন্তত এক পা আগানো উচিত।আর এগিয়ে চলার পথে একদিন সবই বদলাবে।এখন এই সংসারটা তার খেলাঘর হলেও পরবর্তী ভালোবাসার ঘর হয়ে উঠবে।এটা তার বিশ্বাস।পুতুল একটা নিশ্বাস ফেলে অর্পণকে ডাকতে লাগল।তার গায়ে হাত বুলিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে।অথচ এই কুমুরোকদু লোকটা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।তার তোও কোনো হেলদোল নেই।পুতুল কি করবে ভাবচ্ছে?ট্রি টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে অর্পণের মুখে ছুড়ে মারে।হঠাৎ চোখে,মুখে পানি পড়ায় অর্পণের মুখটা কুঁচকে গেলো।বিরবির করে কি যেনো বলতে লাগল?পুতুল নিচু হয়ে কান পাততেই অর্পণ তালুকদার তাঁকে পেচিয়ে ধরে কম্বলের নিচে টেনে নিলো।পুতুল হতভম্ব।নিজের হুশ হতেই অর্পণের থেকে পালাতে চাইলো।কিন্তু অর্পণ তালুকদার আজ তাকে ছাড়ছে না।
পুতুলের শরীর তরতরিয়ে কাঁপছে।এ কেমন নতুন অদ্ভুত অনুভূতি।পুতুল ঢোক গিলো।নিজেকে ছাড়াতে অর্পণের পেটে জোরে চিমটি কাটে।এত জোরে কাটছে।অর্পণ ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে।পেট ধরে তার বিবির দিকে তাকিয়ে রয়।

এইদিকে অর্পণের কৃতি কল্পাপে পুতুল হেঁসে উঠে।পুতুলকে হাসতে দেখে অর্পণ হা করে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধ হয়ে নিজের প্রিয়তমাকে দেখছে।এই দেখায় আলাদা সুখ হচ্ছে।এক অন্য রকম শান্তি পাচ্ছে।বুকের ভেতর ছোট্ট হার্টটা ধুকপুক করছে।পুতুলকে অবাক করে দিয়ে অর্পণ পুতুলের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল।সময় নষ্ট করে দৌড়ে ওয়াশরুমে ছুটে গেলো।আর পুতুল হা হয়ে স্বামীর পালিয়ে যাওয়া দেখলো।

১৩২.
ফজরের নামাজ পড়তে দাঁড়িয়েছে।অর্পণ আগে পুতুল পিছনে।ফজরের চার রাকাআত সালাত আদায় করে নিচ্ছে।প্রথমে দুই রাকআত সুন্নত এবং দুই রাকাআত ফরজ।
পাখি ডাকা ভোরে কিছুটা আঁধার থাকতেই এই নামাজ পড়া উওম।অথ্যাৎ সকালের আভা ছড়িয়ে পড়ার আগেই এই নামাজ আদায় করে নেওয়া ভালো।আজ দেড়ি হওয়া মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারিনি।অবশ্য এই বিয়ের একমাস হওয়া পর তার এইদিকটা পরিবর্তন হয়েছে।আগে নামাজের প্রতি টান ছিলো কম।এখন বউয়ের ছোঁয়া তার ঘর,এবং দুটোই কন্টোলে আসছে।আজ বাড়িতেই তার প্রিয়তমাকে সাথে নিয়ে নামাজ আদায় করলো।পুতুলের মাথায় সাদা ওড়না তিন পেচঁ দিয়ে রাখা।সকালের সূর্যের আলোয় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।এমন সময় অর্পণ গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ নিয়ে আসে।পুতুল মাথা নাড়িয়ে বলল,এত সকালে সে চা খাবে না।কিন্তু অর্পণ জোর করে দেওয়ায়।বাধ্য হয়ে নিলো।এক চুমুক মুখে দিতেই মনটা সতেজে ভরে গেলো।স্বামীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসল।যার মানে চা টা দারুণ হয়েছে।প্রিয়তমার হাসিতেই অর্পণ খুশি।

সকালের দৃশ্য দেখতে দেখতে বেলকনিতে বসেই চা টা শেষ করে নিলো।সময় গড়াতেই পুতুলকে গাড়িতে করে মেডিকেল কলেজে দিয়ে আসে।পুতুল কে পৌছে দিয়ে নিজের অফিসে ছুটে।

জার্মান….

তন্নী পায়ের ওপর পা তুলে বসে থেকে আপেল খাচ্ছে।আর এইদিকে অন্তর সাহেব বউয়ের কথা মতো থালাবাসন ধুয়ে ট্রে তে রাখছে।ছেলের এই করুণ পরিনতি জেফিন রওয়্যার্ড দেখে রাগে কটমট করছে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে